অনির কলমে আদ্রিয়ান পর্ব ১৪
.
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
বিয়ে জিনিসটাই যেন একরাশ আনন্দ নিয়ে আসে। পরিবারের সকলের এক জায়গায় হওয়া, দূরে থাকা আত্মীয়দেরও দেখা পাওয়া, সকলের হৈ হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে সকলেই তখন খুব খুশি থাকে। আজ মামাবাড়িতে সবাই একইভাবে আনন্দে মেতে উঠেছে। আজ আপির হলুদ সন্ধ্যা বলে কথা। কিন্তু আমি এখনো নিজের বাড়িতে বসে আছি। মন মেজাজ ভীষণ খারাপ। প্রথমত ইচ্ছে থাকলেও সারাদিনে এখনো ঐ বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আম্মুর কড়া নির্দেশ আছে রাত আটটার আগে যাওয়া যাবেনা ওখানে। তার যথেষ্ট কারণও আছে। দু-দিন পরেই আমার পরীক্ষা। আম্মু বলেছে আটটা পর্যন্ত পড়াশোনা করে এরপর একেবারে রেডি হয়ে ও বাড়ি যেতে। যেহুতু নানুবাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ তাই সমস্যা হওয়ার কথা না। আপির বিয়েটা ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে সেটা অক্টোবর মাসের পনেরো তারিখে এগিয়ে আনা হল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার পরীক্ষাও অক্টোবর মাসের সতেরো তারিখে গিয়ে পড়ল। আর আমার মাথায় এসে পড়ল একগাদা বইয়ের বোঝা। কিন্তু আমায় বাড়িতে বসিয়ে রেখে গিয়ে তেমন কোন লাভ হয়নি। বই সামনে নিয়ে শুধু নাড়াচাড়াই করে যাচ্ছি কিন্তু একটা শব্দও পড়া হয়নি। মন আমার ঐ বাড়িতেই পড়ে আছে। সবাই কী করছে কে জানে? বাড়িতে অনুষ্ঠান থাকলে পড়াশোনা হয়? সেটা আম্মুকে কে বোঝাবে?
দ্বিতীয় কারণটা হল অক্টোবর আমার জন্মমাস। উনিশ অক্টোবর আমার জন্মদিন। অথচ জন্মদিনের দুদিন আগেই পরীক্ষা। শুধু তাইনা জন্মদিনের তিনদিন পরে আবার আরেকটা পরীক্ষা আছে। এতো প্রেশার নিয়ে জন্মদিন আর জন্মদিন মনে হয়?
তৃতীয় কারণটা হয়তো আদ্রিয়ান নামক ঐ মানুষটা। ইউকে যাওয়ার পর ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল সে। স্বাভাবিক। কাজেই গেছে, ঘুরতে তো আর যায়নি। সেটা সমস্যা না। সমস্যাটা হলো এতোবার তাকে জিজ্ঞেস করেছি যে আপির বিয়ের আগে চলে আসবে কি-না? কিন্তু মহাশয় কোন জবাব দেয়নি। বারবার একটা প্রশ্ন করেও যদি উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে কেমন লাগে? আমারও ভীষণ বিরক্ত লেগেছে। তাইতো কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছি কদিন যাবত। আসতে পারবে না বলেই কিছু বলছেনা হয়তো। যা ইচ্ছে হয় করুক। আমি তাকে নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছি না।
বিকেল দিকে হঠাৎই ছোট মামির ফোন এলো। ফোন করার পরেই প্রথম কথা ছিল, ‘অনি তাড়াতাড়ি আয়। চোখে সব অন্ধকার দেখি।’ ফোনটা মামির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে রুমানা ভাবিও একই কথা বলল। একটা ওড়না গায়ে জড়িয়ে ছুটলাম ঐ বাড়ির দিকে। গিয়ে ছোট মামার ঘরে ঢুকলাম সবার আগে। গিয়ে দেখি একগাদা ফুল জড়ো করে বসে আছে ছোট মামি। আপির জন্যে কাঁচা ফুলের গহনা বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু স্টেজ সাজানোর জন্যে কীভাবে কী করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। রুমানা ভাবিও হতাশ মুখ করে বসে আছে। ওনারা স্টেজ সাজাতে পারেনা ঠিক তা-না। কিন্তু ইউনিক আইডিয়া নাকি সব আমার মাথা থেকেই বের হয়। অগত্যা সেই কাজটা আমাকেই করতে হল। এরমধ্যেই রুমানা ভাবি জিজ্ঞেস করে বসল,
‘ অনি, আদ্রিয়ান আসেনি রে? এখনো ইউকে নাকি?’
আমি ফুলের মালা বানাতে বানাতে বললাম,
‘ আমি কীকরে জানব বলো? এলে দেখতেই পাবে।’
ওখানকার কাজ সেরে আপির সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি রায়হান ভাইয়ার সাথে কথা বলছে ভিডিও কলে। আমি দুজনের সাথেই অল্প কথা বলে চলে গেলাম মেঝ মামার সেই দোকানে। যেটার মধ্যে স্টেজ সাজানো হচ্ছে। গিয়ে দেখি কাব্য বেলুন ফোলাচ্ছে। হিমু এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।
এরমধ্যে বিরক্তিকর ব্যপারটা হল সোহেল ভাই, সজীব ভাইয়া, সৃষ্টি ভাবি যার সাথেই দেখা হচ্ছে একটাই কথা জিজ্ঞেস করছে, ‘আদ্রিয়ান আসবেনা?’ মানে কী? আমি কী ওনাদের আদ্রিয়ানের পার্সোনাল এসিস্টেন্ট? আমি জানবো কীকরে? দোকানে ঢুকতেই সামনে অর্ণব ভাইয়া পড়ল। আমি ওখানে যেতেই অর্ণব ভাইয়া বলল,
‘ অনি? আদ্রিয়ান ভাই আসবেনা? দেশে আসেনি এখনো?’
আমি এবার কটমটে চোখে তাকালাম অর্ণব ভাইয়ার দিকে। নিজের ওড়নার কোণটা হাতে নিয়ে বললাম,
‘ হ্যাঁ এইতো আমি আমার আঁচলে বেঁধে রেখেছি তোমার আদ্রিয়ান ভাইকে। নাও নিয়ে নাও।’
অর্ণব ভাইয়া গলা ঝেড়ে বলল,
‘ বাবা ডাকছে। আমি যাই হ্যাঁ? তোরা থাক।’
বলে ভেতরে চলে গেল। আমি বিরক্তিমিশ্রিত দৃষ্টিতে একবার তাকালাম সেদিকে। এরপর ওখানে রাখা চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা গোলাপের তোড়াগুলো বাঁধছি। কাব্য অপর সাইডে বেলুন ফোলাচ্ছে। ভাবি আর মলি আপু গাঁদা ফুলের মালাগুলো বাঁধছে , মিলি আপু আর ছোট মামি রঙিন কাপড়গুলো রোল করছে। অর্পা আপু আর ঋতু আপু এলো আমাকে সাহায্য করতে। তোড়া বাঁধা প্রায় শেষের দিকে তখনই অর্পা আপু নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠল,
‘ হায় আল্লাহ্। এই পোলা এত্তো কিউট ক্যান? ক্যান? আল্লাহ্ কেন? উফফ!’
আমি ভ্রু কুচকে অর্পা আপুর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখি সাদা একটা টিশার্ট আর কালো জিন্স পরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন আদ্রিয়ান ভাই। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও থমকে গেলাম আমি। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। উনি ইউকে থেকে চলে এলো? কবে? সবাই হেসে ফেলল অর্পা আপুর কথায়। সেইসাথে আমারও হুশ এলো। আদ্রিয়ান ভাইও কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন। আমার দিকে একপলক তাকিয়ে একটু কেশে নিয়ে দরজার কাছ থেকে সরে দূরে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলেন উনি। ঋতু আপু চাপা আওয়াজে অর্পা আপুকে বলল,
‘ এই সবসময় এতো ওভার এক্সাইটেড হস কেন তুই? সিনেমা পাইছস? কী ভাবল ভাইয়া?’
অর্পা আপু মিনমিনে গলায় বলল,
‘ বুঝতে পারিনি এতো জোরে বলে ফেলব। আমারও লজ্জা লাগছে এখন। কী করলাম এটা?’
আমি একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে নিজের কাজে মন দিলাম। ছোট মামি, ভাবি নানান কথা জিজ্ঞেস করছে আদ্রিয়ান ভাইকে। কতদিন থাকল ইউকে তে,আবার যাবে কি-না,ভালোই হয়েছে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এসব কথা শুনে ওনার প্রতি আমার অভিমান আরও বাড়তেই থাকল। এরমধ্যে সোহেল ভাই, সজীব ভাইও চলে এলো। তিনজন মিলে নিজেদের আলাপ শুরু করল। কিন্তু আমি এরমধ্যে তাকাইও নি ওনার দিকে। তাকাবোও না। ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার, সাথে তীব্র অভিমান। কতবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আসবে কি-না। বললে কী আমি ওনার প্লেনের টিকিট ধ্বংস করে দিতাম? যাই হোক আমি আর ওনার সাথে কোন কথা বলছিনা। থাক সে নিজের মতো। এখানকার কাজ শেষ করে আমি, রুমানা ভাবি আর ছোট মামি গেলাম স্টেজ রোল করা কাপড়গুলো দিয়ে সাজাতে। স্টেজে উঠে সেই অনুযায়ী কাজেও লেগে গেলাম। কিন্তু অর্ধেক কাজ করার পর সেফটিপিন ফুরিয়ে গেল। হিমুকে ভেতরে পাঠালাম আপি বা সৃষ্টি আপুর কাছে আছে কি-না জানার জন্যে। কিন্তু পাওয়া গেলোনা। অর্ণব ভাই বা শান্ত, সাম্য ভাইও আশেপাশে নেই। আমি স্টেজে দাঁড়িয়েই হতাশ কন্ঠে সজীব ভাইকে বললাম,
‘ সজীব ভাই। সেফটিপিন লাগবে। বসেই তো আছো। গিয়ে নিয়ে আসোনা?’
সজীব ভাই আদ্রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ চল হেঁটে আসি।’
আদ্রিয়ান ভাই পকেটে হাত রেখে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এসে বলল,
‘ বড়গুলো লাগবে না ছোটগুলো?’
আমি কিছু না বলে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্টেজের কাপড় ঠিক করায় মনোযোগ দিলাম। বলব না কথা ওনার সাথে। ছোট মামি একপলক আমার দিকে তাকিয়ে ওনাকে বলল,
‘ বড়গুলোই আনো।’
উনি আর সজীব ভাই চলে যাওয়ার পর আমি ছোট মামিকে বললাম,
‘ মামি অর্ধেকতো আমি করে দিয়েছি। বাকি অর্ধেক তোমরা সামলাও। লাল ফুলগুলো সব ওপরের দিকে দিও। গ্যাপ না রেখে। আমি যাই হ্যাঁ? পড়া আছে। দুদিন পরেই এক্সাম।’
রুমানা ভাবি বলল,
‘ ওমা, চলে যাচ্ছো? আসবে কখন?’
আমি স্টেজ থেকে নেমে গিয়ে বললাম,
‘ আটটার পরে চলে আসব। যাই হ্যাঁ?’
সতেরো তারিখ পরীক্ষা বলে ওরা আর কেউ জোর করল না আমাকে। আমি বাড়ি চলে এলাম। আসলে আরও কিছুক্ষণ থাকতাম কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইকে দেখে আর থাকলাম না। ওনার আশেপাশে থাকতেই ইচ্ছে করছেনা এখন আর। অসহ্য মানুষ একটা!
বাড়িতে পড়ার কথা বলে চলে এলেও তেমন কিছুই পড়া হয়ে উঠল না আর। এসবের মধ্যে হওয়াটাও অসম্ভব। আটটার দিকে শাড়ি পরে তৈরী হয়ে নিলাম আমি। হলুদ শাড়ি, লাল আর সিলভার পাড় দেওয়া। সিলভার রঙের টিকলি কানের দুল আর গলার হার পড়েছি। এই সেটটা একজন উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলো। ডান হাতে লাল চুড়ি পরেছি আর বা হাতে আছে সবসময়ের মতোই সেই ব্রেসলেটটা। খুব বেশি মেকাপ করিনি। নানুবাড়ি গিয়ে দেখি চারপাশে লাইটিং এ ভরপুর। মুখে হাসি ফুটল আমার। কী সুন্দর লাগছে দেখতে। আপিকে সাজানো শেষ কিন্তু স্টেজে নেয়নি। আমার জন্যেই অপেক্ষা করছে। আমি যাওয়ার পরে আপিকে স্টেজে নিলাম। দোকানে ঢুকে দেখি ভাইয়ারা সব দাঁড়িয়ে আছে এক সাইডে। আদ্রিয়ান ভাইও আছে আকাশি রঙের পাঞ্জাবী পরা। আমি দ্বিতীয়বার ওদিকে তাকালাম না। আপিকে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে একবার মানিক আঙ্কেলকে দেখলাম। যদিও হিসেবমতো ওনার কাল আসার কথা। আসলে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও উনি আমাদের এই দুই বাড়ির সাথে খুব কানেক্টেড। বড় মামা আর বাবার সাথে মানিক আঙ্কেলের সম্পর্কটা এতোটাই গভীর যে রক্তের সম্পর্কের চেয়ে কম বলা যায়না। আপি স্টেজে বসে আছে আর হিমু ওর কোলে। আপির হলুদ এখনো শুরু হয়নি। রায়হান ভাইয়ার বাড়ি থেকে কয়েকজন আসবে তাদের জন্যেই অপেক্ষা করা হচ্ছে।
রায়হান ভাইয়ার বাড়ি থেকে লোকজন আসতে আসতে রাত সাড়ে ন’টা বাজলো। আপির তিন দেবর, দুই ননদ, এক ফুপি শাশুড়ী আর দুই কাকা শ্বশুর এসছে। একয়দিনে সবার সাথেই মোটামুটি পরিচয় হয়ে গেছে আমাদের। রায়হান ভাইয়ার আপন বড় কাকার দুই ছেলের নাম হল আনভীর আর আবির। ছোট কাকার ছেলের নাম রাজীব। এখানে আসা দুই ননদের নাম হল, ঝুমুর আর তামান্না। বাকিদের নাম ঠিক মনে নেই। সবাই মিলে বেশ হাসি আনন্দ করে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করলাম। দোকানে সবাই একসঙ্গে চেয়ারে বসেছি বিরিয়ানি খেতে খেতে আড্ডা দেব তাই। আমার ডান পাশের চেয়ারে আপি বসেছে আর বা পাশে আনভীর ভাইয়া। সোহেল ভাইয়া, সজীব ভাইয়া মিলে সবাইকে বিরিয়ানির প্লেট দিয়ে নিজেরাও বসল খেতে। আর আমার সরাসরি অপরপাশের চেয়ারে আদ্রিয়ান ভাই বসা। খেতে খেতে আনভীর ভাইয়া আপি আর আমার সাথে কথা বলছে। তখন কথায় কথায় আনভীর ভাইয়া আদ্রিয়ান ভাইকে দেখিয়ে বলল,
‘ ভাবি আদ্রিয়ান কে হয় তোমাদের?’
আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম উনি চেনে আদ্রিয়ান ভাইকে? আপি বলল,
‘ ওরা আমাদের ফ্যামেলি ফ্রেন্ড। কেনো বলোতো?’
‘ না, এনগেইজমেন্টের সময়ও দেখলাম। আর এখনো। তাই আরকি। আমরা নটরডেমে একসাথেই ছিলাম। যদিও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল ওর সাথে। আমিও কেমব্রিজে স্কলারশীপের এপ্লাই করেছিলাম। ওর হয়ে গেলেও আমার চান্স হয়নি। সেই দুঃখে আর ইঞ্জিনিয়ারিং করলামই না। মেডিকেলেই ট্রায় মারলাম। হয়েও গেল।’
‘ ওও। এইজন্যই তখন দুজনকে একসঙ্গে কথা বলতে দেখলাম? তোমরা পূর্ব পরিচিত তাহলে!’
‘ হ্যাঁ কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি। আত্মীয়তা নেই তবুও সব প্রোগ্রামে একেবারে বাড়ির ছেলের মতো এসে সবটা সামলায়। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করেনা। অতিরিক্ত না ব্যপারটা?’
আপি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
‘ অতিরিক্ত কেন হতে যাবে? আদ্রিয়ান ভাই সেই ছোটবেলা থেকেই এই বাড়িতে আসা যাওয়া করে। এই বাড়ির সাথে ওনার কানেকশনটাই আলাদা রকমের। এই বাড়ির সবার কাছে উনি এ বাড়িরই ছেলে। কাছের হতে গেলে সবসময় ফ্যামেলি মেম্বার হতে হবে কেন?’
আমি একবার আদ্রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি খাচ্ছেন আর সোহেল ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন। আমি আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। হঠাৎ আনভীর ভাইয়া আমার বা হাতটা তুলে ধরে বলে উঠলেন।
‘ A ওয়ার্ড লেখা ব্রেসলেটে? ওয়াও! নিশ্চয়ই নিজের নামের সাথে মিলিয়ে কিনেছো? আমার নামটাও কিন্তু A দিয়েই। দারুণ না? এটা লেডিস ব্রেসলেট তাই। না হলে আমিই নিয়ে নিতাম তোমার কাছ থেকে।’
আমি হাসলাম ওনার বাচ্চা বাচ্চা টাইপ কথা শুনে। এরপর আদ্রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি একমনে খাচ্ছেন যেন কিছু শুনতেই পাননি।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর সবারই গা ছেড়ে দিয়েছে। মোটামুটি সবাই এখন ক্লান্ত। সবকিছু গোছগাছের কাজ চলছে এখন। ভাইয়ারা অনেকে ইতিমধ্যে রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। আমি হাঁটতে হাঁটতে গেইটের কাছে এসে দেখলাম জায়গাটার লাইটিং বেশ সুন্দর। এখানে কয়েকটা সেলফি তোলাই যায়। এমনিতেও বিয়ে বাড়ির এসব লাইটিং আমার অসাধারণ লাগে। আমি গিয়ে দুটো ছবি তোলার পরেই হঠাৎ পেছন থেকে আনভীর ভাই বলে উঠল,
‘ একা একা ছবি তুলছো?আমি তুলে দেই?’
আমি হেসে ওনার হাতে নিজের ফোন তুলে দিয়ে বললাম,
‘ সুন্দর না হলে কিন্তু জরিমানা হবে বেয়াই সাহেব।’
আনভীর ভাইয়া হেসে বলল,
‘ বেয়াইন সাহেবা নিজেই এতো সুন্দরী হলে ছবি সুন্দর হতে বাধ্য।’
আমি হেসে উঠলাম তার ঠাট্টাতে। আনভীর ভাইয়াকে দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলিয়ে নিয়ে ওনার সাথেই বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকতেই মেঝ মামা ডাকল আমাকে। আনভীর ভাইয়াকে বাই বলে আমি গিয়ে দেখি মামা বক্সে করে বিরিয়ানি একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছে। আমি যেতেই বলল,
‘ তোর মানিক আঙ্কেল আরো আগেই চলে গেছে। রিমা ভাবি, জাবিন, সারা ওরা আসতে পারেনি। বিরিয়ানি আর ছানা মিষ্টি প্যাক করে দিলাম ওদের জন্যে। আদ্রিয়ানকে একটু দিয়ে আয় মা।’
আমি মনে মনে বিরক্ত হলাম। আমিই কেন? সমসময় আমাকেই কেন বলা হয় বুঝিনা আমি। কিন্তু সেটাতো আর মামাকে বলা যাবেনা। তাই মাথা নেড়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওনাকে খুঁজতে শুরু করলাম। খুঁজতে গিয়ে দেখি আনভীর ভাইয়ার সাথেই কথা বলছে। যাই ওনার আশেপাশে লোক থাকতে থাকতেই দিয়ে আসি। একা থাকলেই বিপদ। আমি ওনার কাছে গিয়ে ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললাম,
‘ মেঝ মামা এটা নিয়ে যেতে বলেছে আপনাকে।’
দীর্ঘ দিনের নিরবতা ভেঙ্গে অবশেষে কথা বলতেই হল ওনার সাথে। উনি ভ্রু কুঁচকে একবার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ সারাদিন খালি খাস আর ঘুমাস। কাজ করিস কোন? বাইক অবধি নিয়ে আয়।’
বলে চলে গেলেন গেইটের বাইরে। আমি ভ্রু কুঁচকে একবার আনভীর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনিও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। হয়তো কী হল বোঝেননি। বোঝার কথাও না। আমার আর আদ্রিয়ান ভাইয়ের মধ্যকার এসব ঘটনার আগামাথা দুনিয়ার কেউই কোনদিন বোঝেনা। আমরা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারিনা বাকিদের কথাতো বাদই দিলাম।
বাইরে গিয়ে দেখি উনি বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি সোজা গিয়ে খাবারের ব্যাগটা ওনার বাইকের ওপর রেখে চলে আসতে নিলেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন। আমি পেছনে তাকাতেই উনি বাইকে ঝুলিয়ে রাখা একটা শপিং ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ কাল এটাই পড়নে দেখতে চাই।’
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি ওনার হাত ছাড়ার অপেক্ষায়। এভাবে ধরে রাখার মানে কী? হঠাৎই বেশ জোরে চাপ দিয়ে ধরলেন হাতটা। আমি ‘আহ’ করে উঠলাম। উনি ঠান্ডা গলায় বললেন,
‘ A তে আদ্রিয়ানও হয়। সেটা ঐ ডাফারকে বুঝিয়ে দিস, নয়তো আমাকে বোঝাতে হবে।’
আমার কাছ থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে কয়েকসেকেন্ড পর হাত ছেড়ে দিলেন উনি। হাত ছাড়তেই আমি ওনার দিকে না তাকিয়েই সোজা ভেতরে চলে এলাম। ভেতরে আসার পর মাথায় এলো প্যাকেটটা আমি নিলাম কেন? খুবতো ভাব দেখাচ্ছিল এ কয়েকদিন। আমারও উচিত ছিল ভাব দেখিয়ে এটা ফেরত দিয়ে দেওয়া। কেন দিলাম না। ধুর! এখন এগুলো পড়ে কাল আসতে হবে? না পড়লে যদি ঠাটিয়ে চড় মারে? এখনই তো রেগে গেছে মনে হল। আগুনে ঘি ঢালা ঠিক হবে? কিন্তু আমিওতো এখনো রেগে আছি। আমার রাগ এখনো ভাঙেনি। আমার রেগে যাওয়ার না হয় কারণ আছে কিন্তু উনি রাগ করল কেন? আনভীর ভাইয়া শুধুমাত্র ব্রেসলেটে থাকা লেটারের সাথে ওনার নাম মেলে এটুকুই তো বলেছে। মজা করে বলেছে। সামান্য একটা ব্যাপারেও এরকম রেগে যাওয়াটা নিতান্তই বাচ্চামো। ওনার আঙ্গুলের ছাপ পড়ে যাওয়া হাতটা ডলতে ডলতে এটাই ভাবছিলাম আমি।
আদ্রিয়ান ভাই কালোর মধ্যে গোল্ডেন ডিজাইনের একটা ওয়ান পিস দিয়েছিল সাথে কানের দুল কালো রঙের। পরেরদিন ওগুলো পড়বো কী পড়বো না ভাবার যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে কী ভেবে পড়েই নিলাম। বিয়ের দিনে তেমন দেখা পাওয়া যায়নি ওনার। সার্ভ করার কাজে পুরোটা সময়ই সে ভীষণ ব্যস্ত মানুষ ছিল। তবে আজ সেও কালো পাঞ্জাবী পড়েছে। যতবার দেখা গেছিল আমিতো শুধু তাকিয়েই ছিলাম হালকা ঘামে ভেজা ফর্সা মুখটার দিকে। বরযাত্রী আসার পর বেশ মজাই হয়েছে। রায়হান ভাইয়ের হাত ধুয়ে দিতে আমি সৃষ্টি ভাবি আর রুমানা ভাবি যাই। হাত ধোয়ার সময় আনভীর ভাইয়া আর রাজীব ভাইয়া বলল ওনাদেরও হাত ধুইয়ে দিতে আমি দুষ্টুমি করে দুজনের হাতেই কেবল সাবান মাখিয়ে বসে রইলাম। পানি দিলাম না ধোয়ার জন্যে। এ নিয়ে আরও কিছুক্ষণ হাসাহাসিও হল। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান ভাই জগে করে পানি নিয়ে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ তাড়াতাড়ি সব শেষ করতে হবে। বিয়ে পড়ানো শুরু হবে একটু পরেই।’
বলে নিজের আনভীর ভাইয়া আর রাজীব ভাইয়ার হাতে পানি ঢেলে দিলেন। আমি একপলক ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠে ভাবিদের সাথে চলে এলাম ওখান থেকে। আমার কোন আনন্দ এর সহ্যই হয়না। সব জায়গায় এসে ঝামেলা পাকায়। বদ লোক!
আপির বিয়েটা অবশেষে হয়েই গেল। অবশেষে নিজের পরিবারেরই দুজন লাভবার্ডসকে এক হতে দেখে মনে মনে শান্তি পেলাম। কিন্তু তারসাথে এলো একটা কঠিন সময়। আপিকে বিদায় দেওয়ার সময়। সারাদিন খুশি থাকলেও ঐ সময় খুব কান্না পেলো আমার। মেঝ মামার মতো শক্ত মানুষটাকেও কেঁদে ফেলতে দেখলাম। এতোক্ষণ শক্ত হাতে সব সামলানো সেই মানুষটা চেয়ারে বসে পড়লেন। মামি বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মেয়ের যাওয়ার দিকে। এতক্ষণ হাসিখুশি বাড়ির পরিবেশ নিমেষেই বিষন্ন হয়ে গেল। আমি আপিকে সামলাতে সামলাতে নিয়ে গাড়ির গেটের কাছে যেতেই আপি কেঁদে দিয়ে জড়িয়ে ধরল আমাকে। আমার পক্ষে আর সম্ভব হলোনা। এতক্ষণ না কান্না আটকে রাখলেও কেঁদে ফেললাম। বড় মামা তাড়া দিতেই রায়হান ভাইয়া বলল,
‘ থাক তাড়াহুড়োর দরকার নেই।’
আম্মুও কাঁদল। কারণ আম্মুর কাছে আপিও ছিল তার আরেক মেয়ে। আপিকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার পর রায়হান ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ কান্না করিস না। পরীক্ষা টরিক্ষা সব শেষ হোক। তোকে নিয়ে যাব আমার সাথে।’
আমি রায়হান ভাইয়ার হাতের ওপর মাথা ঠেকিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এরপর ভাইয়া গিয়ে গাড়িতে ওঠার একটু পরেই গাড়ি ছেড়ে দিল। গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই আমি আর দাঁড়ালাম না সেখানে। চুপচাপ চলে গেলাম সেই জায়গায় যেখানে আমি মন খুব ভালো থাকলেও যাই আবার খারাপ থাকলেও যাই। কাঠবাগান! ওখানে গিয়ে সেই পুকুরপাড়ে বসে পড়লাম আমি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি পুকুরে। এতোদিন আপির ভার্সিটি ছুটি পড়লে যতবার দেশে আসতো আমার কাছে এসে থাকতো, হুটহাট চলে আসতে পারতো, কত কথা বলতাম, কতকিছু শেয়ার করতাম। কিন্তু এখন চাইলেও আপি আর হুটহাট চলে আসতে পারবেনা? আগের এতো কথা বলার সুযোগটাও পাবোনা। আমার আপি আর আগের মতো আমার আপি থাকবেনা। এসব ভেবে ঠোঁট ভেঙ্গে এলো আমার। এতক্ষণ নিরবে কাঁদলেও এবার শব্দ করে কেঁদে ফেললাম। কান্নার মাঝেই হঠাৎ কেউ আমার পাশে এসে বসল বলে টের পেলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ভাই। তার দৃষ্টি পুকুরের দিকে। আমি কান্না থামিয়ে চোখ মুখে নাক টানতে লাগলাম। হঠাৎ উনি আমার হাতের বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আমার মাথাটা ওনার বুকে লাগিয়ে ধরলেন। আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ ডোন্ট ক্রাই। বিয়েই তো হয়েছে। আগে হিয়া হোস্টেলে যেতো না? ভেবে নাও এখন হোস্টেলেই গেছে। কাঁদার মতো কিচ্ছু হয়নি। কাম ডাউন।’
আমি আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললাম। উনি গালে হাত ছুঁইয়ে বলল,
‘ আবার কাঁদে। এগুলো কেমন বাচ্চামো অনি?’
আমি দুটো ঢোক গিলে নাক টেনে টেনে ভেজা গলায় বললাম,
‘ কালকে আমায় ঢাকা চলে যেতে হবে। আপি আসবে আর আমি দেখতেও পারব না।’
উনি আমার মাথায় থুতনি রেখে বললেন,
‘ তাতে কী হয়েছে? তুমি আসার পরে একদিন আমি নিয়ে যাবো ঐ বাড়িতে। বাইক টেনে যেতে আর কতক্ষণ লাগে?’
আমি কিছু বললাম না চুপচাপ ওনার বুকে মাথা এলিয়ে বসে রইলাম। এখনো নাক টানছি কিছুটা। উনি আরেকটু শক্ত করে ধরলেন আমায়। বেশ অনেকটা সময় পর বললেন,
‘ এইযে ম্যাডাম, কান্নাকাটি হয়ে গেছে তো। এবার চলুন। সন্ধ্যা হয়ে এসছে। এই কাঠবাগানে ভূত আছে শুনিসনি? আমিতো ছোটবেলা থেকে শুনছি।’
আমি ওনার বুক থেকে মাথা না তুলেই বললাম,
‘ আপনি থাকতে আর ভূতের কী প্রয়োজন?’
উনি হাসলেন। এরপর আস্তে করে বললেন,
‘ মামাতো বোনের বিদায়েই এই মেয়ে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছে। এরকম হলেতো আমার ঘরজামাই হওয়া কনফার্ম।’
আমি ওনার বুকের কাছ থেকে মাথা তুলে উঠে দাঁড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম,
‘ আমি বিয়েই করব না।’
উনি আলসেমি ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ সে করিস না। কে বলেছে করতে? আমিতো আমার বিয়ে আই মিন আমার ঘরজামাই হওয়ার কথা বলছি। আমার ঘরজামাই হওয়ার সাথে তোর বিয়ের কী সম্পর্ক?
বলে হাঁটা দিলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমি ওনার পেছনে হাঁটতে হাঁটতে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। বাহ ভাই বাহ! আমার অস্ত্র দিয়ে আমার ওপরেই প্রহার? সবসময় আমি যেটা করি আজ সে নিজে সেটা করল। এককথায় যাকে প্রতিশোধ নেওয়া বলে। কিন্তু আজ আমার একটুও রাগ হলোনা। আমার সামান্য মন খারাপের দিনগুলোতেও মন ভালো করে দিতে সবার আগে যে মানুষটা ছুটে আসে। তার ওপর রেগে থাকা যায়?
.
.
[ রি-চেইক করা হয়নি। এটা চেয়ে চেয়ে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলে তোমরা।
এবার একটু সিরিয়াস কথা বলি। সবাই জানেন এখন আমার নতুন উপন্যাস #অন্তর্হিত কালকূট চলছে। পাঁচটা পর্ব দিয়েছি এ পর্যন্ত। সবসময় তো আর অনি-আদ্রিয়ানকে নিয়ে উপন্যাস লেখা যাবেনা। সেই একই চরিত্র, একই কাহিনীতে সবাই বিরক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি নিজেই বিরক্ত। তাই অনি-আদ্রিয়ানকে নিয়ে কোন রেগুলার গল্প এখন অন্তত আর আসবেনা। কিন্তু তবুও যারা ওদের বেশি ভালোবাসে তাদের সাথেই মাঝেমাঝে অনির দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের কর্মকাণ্ড আর অনুভূতিকে শেয়ার করি। কিন্তু এটা কখনই নিয়মিত আসবে না। যখন আমি এক্সট্রা সময় পাই। তখন আমার ডায়েরি থেকে যতটুকু পারি নোটপ্যাডে তুলে পোস্ট করি। পরবর্তী কোন এক মুহূর্ত তখনই আসবে যখন আমি লিখতে পারব।
বর্তমানে সবাই #অন্তর্হিত কালকূট উপন্যাসটা উপভোগ করুন। উপন্যাসটার নেক্সট পার্ট আজকে সন্ধ্যার পরেই দেব ইনশাআল্লাহ। ভালোবাসা সবার জন্যে।]