অনির কলমে আদ্রিয়ান পর্ব ৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
ইংরেজি বর্ষের প্রথম দিন। পহেলা জানুয়ারি। কিন্তু ভেতরে সামান্যতম উত্তেজনা অনুভব করছিনা। প্রত্যেকটা স্বাভাবিক দিনের মতই আজকের দিনটাও প্রচন্ড বোরিং লাগছে। বাইরেও প্রচন্ড শীত। সদ্য জানুয়ারিতে পা রেখে শীতও যেন তরতরিয়ে বেড়ে গেল। আমিও লেপের নিচে আরাম করে গুটিয়ে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে কিন্তু আপাতত ওঠার ইচ্ছে বা সম্ভাবনা কোনটাই নেই। এমনিতেও পরীক্ষা-টরিক্ষার পাঠ চুকিয়ে এখন একদম বেকার আছি। শুধু শুধু এই শীতের মধ্যে উঠতে যাবো কেন? প্রায় আধঘন্টা এভাবেই শুয়ে থাকার পর হঠাৎ আম্মুর ডাক পরল। আম্মু চিৎকার করে বলছে,
‘ অনি, ওঠ! দেখ ফরহাদ এসেছে। তোর সাথে কী কথা আছে নাকি।’
আম্মুর ডাক শুনে বিরক্ত হওয়ার সাথে সাথে বেশ অবাকও হলাম। ফরহাদ ভাই আমাদের প্রতিবেশি। যদিও অনেকটা দূরে থাকে কিন্তু এলাকা একই। ওনাকে আগে চিনতাম না সেভাবে। আদ্রিয়ান ভাইয়ের বন্ধু হিসেবেই যেটুকু চেনাজানা। কিন্তু উনি আমার কাছে কেন আসবেন? লম্বা একটা হাই তুলে বেরিয়ে গেলাম। আম্মু কিচেনে খাবার বানাতে ব্যস্ত। বসার ঘরে শুধু ফরহাদ ভাইয়া আছেন। আমি ওনার সামনে গিয়ে কিছু বলব তার আগেই ফরহাদ ভাই আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
” আন্টিকে দেখিও না। চুপচাপ রুমে গিয়ে তারপর খুলবে।”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘ এটা কী?’
‘ খুললেই বুঝে যাবে। আন্টি আসার আগে লুকিয়ে ফেলো আমি গেলাম।’
আমি কিছু বলার আগেই ফরহাদ ভাই চলে গেল। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু কী দিয়ে গেলেন উনি? হঠাৎ আম্মুর আসার আওয়াজ পেয়ে দ্রুত রুমে এসে এদিকে ওদিকে দেখে অবশেষে টেবিলের নিচে লুকিয়ে ফেললাম প্যাকেটটা। এরমধ্যেই আম্মু হাত মুছতে মুছতে আমার রুমে আসল। সারারুমে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,
” ফরহাদ কী বই নিতে এসেছিল? ওর বোন নাকি এবার এইচএসসি দেবে। কী বই নিল? তোর লাগবেনা?”
আমি গোলগোল চোখে আম্মু’কে দেখছি। কিসের বই কিসের কী কিছুই তো জানিনা। মা আরেকবার জিজ্ঞেস করতেই কোনরকমে বললাম,
‘ না লাগবেনা। লাগলে কী আর দিতাম নাকি?’
মা আবার নিজের মতো একা একাই কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে গেল। মা চলে যেতেই আমি কোনরকমে দরজাটা লাগিয়ে নিয়ে প্যাকেটটা খুললাম। প্যাকেট থেকে একটা গাঢ় লাল রঙের শাড়ি বেড়িয়ে এলো। গাঢ় লালের মধ্যে সোনালী নকশা। দেখে মনে হচ্ছে সদ্য কেনা শাড়ি নয় এটা, বহু পুরোনো শাড়ি। কিন্তু খুব যত্ন করে রাখা ছিল হয়তো। আমি অবাক হলাম। ফরহাদ ভাইয়া এটা কেন দিল? প্যাকেটের ভেতরে আরও ভালোভাবে হাত ঢুকিয়ে একটা কাগজ পেলাম। কাগজটা দেখে কেন যেন মনে হল এটা আদ্রিয়ান ভাই-ই দিয়েছেন। আমার সেই ধারণা সঠিক প্রমাণ হল কাগজটা খোলার পর। লেখাগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আদ্রিয়ান ভাইয়েরই লেখা। যেখানে লেখা আছে,
‘ শ্যামাঙ্গী! তুমি জানো তোমার অভিমানগুলো আমার কত প্রিয়? অকারণেই তোমায় অভিমান করাতে আমার ভালো লাগে। তাইতো কখনও যেচে তোমার অভিমান ভাঙাই না। ইচ্ছে করেনা। কিছু অভিমান যত্নে পড়ে থাক না। ক্ষতি কী? আমার জীবনে সবচেয়ে স্পেশাল মানুষটা কে জানো? আমার মা। তোমার আগে ঐ একজন নারীর কাছেই আমি ভীষণ দুর্বল। আমার মায়ের ছুঁয়ে রাখা প্রত্যেকটা বস্তু আমার ভীষণ প্রিয়। এই লাল শাড়িটা বিয়ের পর আমার মায়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে পাওয়া প্রথম শাড়ি। অনেক পুরোনো। মা এখন আর তেমন শাড়ি পড়েনা। তবুও খুব যত্ন করেই রেখে দিয়েছে বিয়ের সময়কার কয়েকটা শাড়ি। তারমধ্যে এই শাড়িটা আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের। যখন ইউকে গিয়েছিলাম তখন মায়ের স্মৃতি হিসেবে এই শাড়িটাই নিয়ে গিয়েছিলাম। মায়ের গায়ের সুগন্ধ মিশে আছে এটাতে। দীর্ঘ চারবছর আমার কাছেই ছিল। নতুন বছরের এই আদরমাখা ভালোবাসা তোমার হাতে তুলে দিলাম। মায়ের পর এটা তোমার গায়ে দেখার ইচ্ছেটা প্রবল। নতুন বছরের প্রথম উপহারটা না হয় তোমার জীবনের সবচেয়ে অসহ্যকর মানুষটির পক্ষ থেকেই থাক।
তোমার প্রেমিকপুরুষ “
লেখাটা শেষ হতেই মন ভার হয়ে উঠলো। শেষ! আরেকটু লিখলে কী হতো? শাড়িটার দিকে চোখ পড়তেই মৃদু হাসলাম। শাড়িটাতে নাক ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ নিলাম। সত্যি একটা মা মা গন্ধ আসছে শাড়িটা থেকে। যদিও সেই ভালোবাসামাখা গন্ধটা আমার চেয়ে আদ্রিয়ান ভাই বেশি পাবেন। হঠাৎই মনের মধ্যে সামান্য ভয় নাড়া দিল। কতটা স্মৃতি, ভালোবাসা মাখা আছে এই শাড়িটাতে। এতো বছর ধরে যত্নে রেখে দেওয়া শাড়িটা কতটা স্পেশাল! আর যার কাছ থেকে উপহারটা পেয়েছি তার কাছে আমি কতটা স্পেশাল! কিন্তু আমিতো বড্ড অগোছালো। নিজের জিনিসের সামান্যতম যত্নও করতে জানিনা। এতো অমূল্য জিনিসের মর্যাদা রাখতে পারবোতো আমি? কী দরকার ছিল এতো বড় দায়িত্ব আমার কাঁধে দিয়ে দেওয়ার? আমি এই উপহারের যোগ্য তো? এর আগেও আদ্রিয়ান ভাই আমাকে উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আজকের উপহারটা পেয়ে আমার ভয় হচ্ছে। উপহার পেয়ে এরকম ভয় এর আগে আমার কোনদিন হয়নি, কোনদিন না।
ঈদ-উল-আজহার ঠিক আগের দিনের কথা। তারিখটা সম্ভবত ১৯ বা ২০ জুলাই। আগামীকাল ঈদ তাই মা সকাল থেকেই বাড়ি পরিস্কার করতে ব্যস্ত। বাবা আর কাব্য সেই ভোরবেলা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে হাটে। প্রতিবার হাটের দায়িত্বে বাবারও একটা অংশ থাকে। তাই থাকতেই হচ্ছে। বরং আজ বাবা-ছেলে কেউই সন্ধ্যার আগে বাড়ি আসার সময় পাবেনা। বেলা তখন এগারো কী বারোটা হবে ঠিক মনে নেই। হঠাৎই রিপন ভাই এলেন। রিপন ভাই পেশায় রাজ মিস্ত্রি। একটু দূরে থাকলেও বাবার পরিচিত। আম্মুকে ডেকে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
” আবরার ভাই পাঠিয়েছে অনির জন্যে।”
আমি বা আম্মু কেউই তেমন অবাক হলাম না। কারণ ঈদে প্রায় সবসময়ই মানিক আঙ্কেল পোশাক পাঠায়। কিন্তু এবারতো আমায় একটা লকেট দিয়েছিল আবার কেন? মা আমার ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে চলে গেলেন। আমি ব্যাগটা ওখানে রেখেই রুমে চলে এলাম। কেন জানিনা ঐদিন আদ্রিয়ান ভাইয়ের বিয়ের আলোচনার হওয়ার পর থেকে ওনাদের আগের মতো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারিনা আমি। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ রুমে বসে বসে ভাবার পর উঠে গেলাম আবার পাশের রুমে ব্যাগটা নিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম। শপিং ব্যাগটা থেকে বেড়িয়ে এলো একটা হালকা গোলাপি রঙের ওয়ান পিস ড্রেস, সাথে একই রঙের ওড়না। কিন্তু ভেতরে আরও কিছু জিনিস আছে। হ্যাঁ, একমুঠো সিলভার কালার চিকন চুড়ি সাথে গোল আকার সিলভার রঙের কানের দুল। তার সাথে বের হয়ে এলো একটা হলুদ রঙের ভাঁজ করা কাগজ। এটা দেখার সাথেসাথেই বুঝে ফেললাম। উপহারগুলো আর কেউ নয় বরং আদ্রিয়ান ভাই পাঠিয়েছে। সত্যিই সবগুলোই সুন্দর। কিন্তু এতোদিন তো ঠিকভাবে কথাও বলেনি। কাল রাতে তিনবার কল দিয়ে ভুলে চলে এসেছে বলে কেটে দিল। এখন আবার গিফ্ট? এই এক মানুষ কত রঙ দেখাবে আমায়? ঐসময় ফোনে একজনের সাথে চ্যাটিং করছিলাম। তখন সিমে একটা আনসিন মেসেজ আছে দেখলাম। মেসেজটা ওপেন করতেই দেখলাম লেখা আছে, ‘সন্ধ্যার আগে লেটার পড়বি না।’ ধুর! সন্ধ্যা অবধি এখন অপেক্ষা করতে হবে?
অনেক কষ্টে সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করলাম। সন্ধ্যার আগে থেকেই ছাদে দাঁড়িয়ে আছি চাঁদ দেখার অপেক্ষায়। চাঁদ চোখে পড়ার সাথেসাথেই দৌড়ে নিচে চলে এলাম। দরজাটা বন্ধ করে বইয়ের মধ্যে থেকে চিঠিটা বের করে খুললাম। লম্বা লম্বা দুটো শ্বাস নিয়ে পড়া শুরু করলাম। চিঠিতে কী লেখা ছিল সেটা না হয় না জানাই থাক। সবকিছুই জানতে হবে তার কী মানে? তবে চিঠিটা পড়ে মনটা এমনিই ভালো হয়ে গেল। এটাইতো অদ্ভুত ব্যাপার। আমার মন খারাপের কারণ যদি ঐ লোকটা হয় আমার মন ভালো করার ঔষধও হয়তো ঐ লোকটাই।
সন্ধ্যার পর বাবা এলেন বাড়িতে। শুধু বাবা একা এলেন না সাথে এলেন মানিক আঙ্কেলও। উনিও নাকি আজ জাজিরার হাট দেখতে এসেছিলেন। মা ওনাদের দুজনকেই চা নাস্তা দিলেন। আমিও এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখছি। কথায় কথায় মানিক আঙ্কেল বলে উঠল,
‘ কী একটা অবস্থা। প্রতিবার দেই কিন্তু এবার অনিমা-কাব্যকে কোন জামা-কাপড় দিতে পারলাম না। এমনিই লকডাউন। বাজার হাটে যাওয়ার সময়ই হয়নি।”
কথাটা শোনার সাথেসাথে আম্মু আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। আম্মুর এই দৃষ্টি দেখে আমি খানিকটা দমে গেলাম। শুকনো ঢোক গিলে গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ওখানেই। কিছুক্ষণ থেকে মানিক আঙ্কেল চলে গেলেন। বাবাও চলে গেলেন নিজের কাজে। আম্মুও কিছু না বলে সব গোছাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি। যাক আম্মু কিছু ভাবেনি। কিন্তু স্বস্তি জিনিসটা আমার কপালে ঠিক বেশিক্ষণ সইল না। রাতে খেতে বসার সময় যখন আম্মু মাছটা আমার পাতে রেখে দিল তখন বুঝতে পারলাম যে মানিক আঙ্কেলের তখনকার কথাটার এফেক্ট পড়েছে। তাইতো আম্মু সন্ধ্যা থেকে এখনো আমার সাথে কথাও বলেনি। আর ছোট মাছ আমি কখনও নিজে বেছে খাইনা আম্মুই বেছে দেয় আমায়। কিন্তু আজ মাছটাও পাতে রেখে দিল। আমি চুপচাপ খাচ্ছি। আম্মু জিজ্ঞেস না করলে আমি নিজে থেকে কিছু বলতেও পারব না। আম্মু নিজে নিজে কী ভেবে বসে আছে সেটাও তো বুঝতে পারছিনা। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ছোট একটা কাঁটা আমার হাতের বৃদ্ধা আঙুলে গেঁথে গেল। ভীষণ ব্যথা পেলেও মুখ দিয়ে আওয়াজ করলাম না। যার কারণে কেউ দেখতেও পায়নি। দেখানোর ইচ্ছেটাও কেন জানি হলোনা। কিন্তু অনুভব করলাম আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কান্না আটকে কোনরকমে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে এলাম।
ঈদের দিন বাড়িতে সকাল থেকেই সবার আনাগোনা চলেই আসছে। সবাই ব্যস্ত। কাল সন্ধ্যা থেকে আম্মুর সাথে কথা হয়নি আমার। আমার মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই। ঈদ যাক পরে দেখা যাবে। তবে আম্মুর এরকম চুপ থাকাটা আমার কীরকম একটা ঝড়ের আগের শান্তির মতো লাগল। হয়তো সেও ঈদ যাওয়ার অপেক্ষা করছে। বেলা যখন বারোটা বাজে তখন বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান নামক মানুষটির আজ এই বাড়িতে আসার সম্ভাবনা নেই। থাকার কথাও না। মানিক আঙ্কেলদের বাড়িতেও কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং ওখানেও সে ভীষণ ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জাজিরা আসার পর ওনার দেওয়া ঐ ড্রেসটা পরেই যেন ওনার সামনে যাই। এমন কথাই লেখা ছিল চিঠির একটা লাইনে। তো আজ পরব আবার কালও একই জামা পরব? কেমন একটা লাগবে। তাই তখন আর ঐ জামাটাই পরলাম না। কোরবানি, মাংস বাছা, মেহমান আরও বিভিন্ন কাজ দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যায় মা একবার চা দিয়ে গিয়েছিল রুমে কিন্তু তেমন কোন কথা বলে নি। ঐদিন গোসলটাও করা হয়নি। রাত তখন আটটা নয়টা হবে। প্রচন্ড গরমও পড়েছে। ভাবলাম শাওয়ার নিয়ে আসি। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ভাই এসেছেন। এটা দেখার সাথে সাথেই থমকে গেলাম আমি। উনি কাব্যর সাথে কী নিয়ে যেন কথা বলছিলেন আর হাসছিলেন। কথা বলতে বলতে আমার দিকে চোখ পড়তেই ওনার হাসি মিলিয়ে গেল। মুখ হয়ে উঠল গম্ভীর। ওনার গম্ভীর মুখ হওয়ার কারণ বোঝার আগেই উনি চোখ সরিয়ে আবার কথা বলায় মনোযোগ দিলেন। পরিস্থিতি আর কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম সে মাংস দিতে এসেছে। একাই মাংস নিয়ে বাইক টেনে চলে এসেছে।একটা প্যাকেট কাব্যর হাতে দিয়ে আম্মুকে বললেন,
‘ এবার ঈদে বাবা মার্কেটেই যেতে পারেননি তাই ওদের দুজনের জন্য কিছু কেনা হয়নি। আমি পরশু মার্কেটে গিয়েছিলাম একটু তখন আমিই কিনেছি। অনির টা পেলেও সদরে কাব্যর প্যান্ট মিলিয়ে পাচ্ছিলাম না। তাই কাল নড়িয়া এক ফ্রেন্ডের সাথে গিয়ে প্যান্ট আনলাম। তাই কাব্যরটা দিতে একদিন লেট হয়ে গেল। ‘
আমি অবাক হয়ে শুনছি। কীভাবে কৌশল করে আমায় বাঁচিয়ে দিল। ভাবা যায়! এরমধ্যেই উনি বলে উঠল,
‘মামনী আজ যাই। অনেক রাত হয়ে যাবে নাহলে।’
আম্মু আপত্তি জানিয়ে বলল,
‘ যাবি মানে? না খেয়ে যেতে দিচ্ছিনা আমি। বিরিয়ানি রান্না করেছি চুপচাপ খেয়ে যা।’
আদ্রিয়ান ভাই অসহায় মুখ করে হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
‘ মামনী অন্য একদিন খাবো পাক্কা। আজ সত্যিই ক্ষুধা নেই। রাত কাজ আছে আরও।’
কিন্তু আম্মু রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ চুপচাপ বসতো। খেতে কতক্ষণ লাগে?’
আম্মু এক প্লেট বিরিয়ানি এনে ওনাকে দিল। কিন্তু আম্মুর সম্মান রেখে মাত্র দু চামচ খেয়েই বিদায় নিলেন উনি। আমার দিকে আর ফিরেও তাকালেন না। আমি শুধু বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম ওনার যাওয়ার দিকে। এরমধ্যেই আম্মু ডেকে খেতে বসালো আমাকে। নিজেই বিরিয়ানি প্লেটে নিয়ে আমায় খাইয়ে দেওয়া শুরু করল। আমি একটু অবাক চোখেই আম্মুকে দেখছি আর খাচ্ছি। কাল থেকেতো কথাই বলছিল না আমার সাথে। আর আজ খাইয়ে দিচ্ছে? খুশিতে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল আম্মুকে। মনে মনে অনেকগুলো ধন্যবাদ দিলাম আদ্রিয়ান ভাইকে। উনি কাব্যর জন্যেও পোশাক এনে ব্যাপারটা এভাবে ঘুরিয়ে না দিলে ঈদের পরেই না জানি কী হতো। কিন্তু হঠাৎ এভাবে গম্ভীর হয়ে গেল কেন? এসেও তো দেখছিলাম হাসছিল। তাহলে হলোটা কী? বিরিয়ানি এতো পছন্দ হওয়ার পরেও খেলোনা! তখনই মনে পড়ল, শিট! আমি ওনার দেওয়া ড্রেসটা পরিনি। এই জন্যই রাগ করেছে? কিন্তু আমিতো উনি আসবেন না ভেবেই পরিনি। কে জানতো এভাবে চলে আসবে? আচ্ছা, লোকটা কী খুব বেশি রাগ করেছে? কিন্তু এতো রাগ করার কী আছে? শুধু একটা ড্রেসইতো। অদ্ভুত!
.৭
[ রি-চেক করা হয়নি। যাদের কাছে পোস্ট পৌঁছাবে সকলেই কষ্ট করে রেসপন্স করবেন। কমেন্টে আগের পর্বগুলোর লিংক দেওয়া আছে।]