অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৭.
‘আমের ভিলা’। বিশাল বড় এক দোতলা বাংলো। গুলশানের সবচেয়ে বড় বাংলো এই আমের ভিলা। দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশের বড় রুমটা হচ্ছে রাশেদ আমেরের ব্যক্তিগত বৈঠক ঘর। ওদিকে দলের কয়েকজন বিশেষ মানুষ ছাড়া কারো যাওয়ার অনুমতি নেই। এমনকি বাড়ির বাকি সদস্যদেরও না। তারজন্যে কড়া পাহারার ব্যবস্থাও রয়েছে। বাড়িতে থাকাকালীন দলীয় পরিকল্পনা ও আলোচনা সবকিছু ঐ ঘরেই হয়। বড় এই ঘরটার মাঝখানে রয়েছে বেশ বড় আকারের একটা টেবিল। টেবিলের চারপাশে মোট দশটা চেয়ার রাখা। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়াল ঘেষে সারিতে সোফা রেখে দেওয়া হয়েছে। আর পশ্চিম পাশের পুরো দেয়ালটা জুড়ে রয়েছে বুকশেলফ। তারমধ্যে বিভিন্ন বই আর ফাইল ভর্তি। ভোর বেলায় চা খেয়েই সেই ঘরে এসে নিজের জন্যে বরাদ্দ চেয়ারে বসে আছে রাশেদ। গভীর কোন এক চিন্তায় মগ্ন সে। পাশেই জাফর বসে বসে কিছু কাগজপত্র দেখছে খুব মনোযোগ দিয়ে। ঘন্টাখানেক আগেই এসে বসেছে। এসে কথা বলতে গেলেই রাশেদ হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়েছিল। অর্থাৎ সে এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। জাফর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আর কিছু বলেনি। ঘন্টাখানেক যাবতই ঘরটাতে চলছে এই নিরবতা।
আমের ভিলার কড়া পাহারাসম্পন্ন গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ডানদিকে তৈরী গ্যারেজে জিপটা থামাল রুদ্র। চারফুট প্রশস্ত ইটের রাস্তাটা দিয়ে ছোট্ট বাগান পেরিয়ে প্রবেশ করল বাংলোতে। বড় হল রুমটা পার করে সোজা দোতলায় উঠল। তার পেছন পেছন উচ্ছ্বাসও আসছে। দোতলার করিডর দিয়ে সোজা পূর্ব দিকের সেই ঘরটার দিকে পা বাড়ালো দুজন। করিডরে পাহারায় থাকা দুজন প্রহরী সালাম দিলো রুদ্রকে। রুদ্র আরও এগিয়ে গিয়ে পৌঁছালো সেই বৈঠক ঘরে। ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা হালকা ঠেলে দিয়ে বলল,
‘ বাবা?’
দীর্ঘ সময় পর ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো রাশেদ আমের। হাতের জ্বলন্ত সিগারেট থেকে ছাইটুকু ঝেড়ে তার দৃঢ় শক্তিশালী কন্ঠে বলল,
‘ ভেতরে আয়।’
রুদ্র ভেতরে এসে ঢুকলো, সাথে উচ্ছ্বাসও এসে এক কোণে দাঁড়াল। রুদ্র একবার তাকাল নিজের সুঠাম দেহি পিতার দিকে। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেও মুখভর্তি তেজ একটুও কমেনি তার। কী অদ্ভুত সেই জ্যোতি। সর্বাঙ্গজুড়ে নেতৃত্বের কঠোর তেজ। দেখা মাত্রই শ্রদ্ধায় মাথা নতো হয়ে আসতে চায়। তাই হয়তো সবাই ‘রাশেদ বাবা’ বলে ডাকে তাকে। আর রুদ্র নামক এই অবাধ্য যুবক একমাত্র তারই বাধ্য থাকে। রুদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাশেদ সোজা হয়ে বসে বলল,
‘ বস।’
বাবার অনুমতি পেয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল রুদ্র। রাশেদ সিগারেটটা নিভিয়ে অ্যাশট্রেতে রাখতে রাখতে বলল,
‘ কাল রাতে কোথায় ছিলি?’
রুদ্র বাধ্য ছেলের মতো জবাব দিল,
‘ শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। কিছু কাজ ছিল।’
রাশেদ আর জিজ্ঞেস করল না কী কাজ। জিজ্ঞেস করার বিশেষ কোন প্রয়োজন বোধ করল না সে। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
‘ রিপন গ্রুপ টাকা দেবেনা বলছে। আর কালকের মধ্যে টাকা না পেলে আমাদের প্রজেক্টের কাজটা শুরু করা আর সম্ভব হবেনা।’
রুদ্র ভ্রু কোঁচকালো। কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বলল,
‘ হঠাৎ না করলো কেন? মানে হঠাৎ বেঁকে বসল? জানতোনা টাকাটা কারা চাইছে?’
‘ জানতো, কিন্তু সে নাকি স্পষ্ট বলে দিয়েছে এসব অবৈধ দলের চাপে পড়ে একটা টাকাও দেবেনা। সে এসব ভয় পায়না তাই চাঁদাও দেবেনা।’
অবশেষে মুখ খুলে কথাটা বলল জাফর। কথাটা শুনে সশব্দে হেসে ফেলল উচ্ছ্বাস। কিন্তু রাশেদের উপস্থিতি মনে পড়তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলল। ঠোঁট চেপে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নিজের জায়গায়। রুদ্র নিজেও হাসল কথাটা শুনে, তবে নিঃশব্দে। জাফর রুদ্রের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিল যেখানে এই ব্যবসায়ীর সমস্ত তথ্য রয়েছে। ফাইল নিজের দিকে টেনে নিয়ে প্রতিটা পৃষ্ঠা দেখল রুদ্র। দেখা শেষে
বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে নাক ঘষে জাফরের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ নতুন নাকি, কাকা?’
মাথা ঝাঁকালো জাফর। অর্থাৎ ঠিক ধরেছো। রুদ্র ঠোঁট বাঁকালো। চোখে সামান্য বিদ্রূপের হাসি খেলে গেল তার। এরপর রাশেদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তুমি চিন্তা করোনা বাবা। আজ রাতের মধ্যেই মহাশয়কে বৈধ-অবৈধের পাট মুখস্হ করিয়ে দিয়ে আসব। কালকের মধ্যে পরীক্ষা দিতে বসে যাবে।’
একদম মৃদুভাবে হাসল রাশেদ। সে জানতো রুদ্রের কাছ থেকে এরকম কোন একটা জবাবই সে পাবে। রুদ্রকে রাশেদ কোন আদেশ করার আগেই সে বুঝে যায় তাকে কী করতে হবে। এটা রুদ্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাশেদ বলল,
‘ সারারাত জেগে ছিলি নিশ্চয়ই? এখন গিয়ে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। দুপুরের আগে কোথাও বেরোতে হবে না। যা।’
রুদ্র কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল। রাশেদ আর জাফরের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। উচ্ছ্বাসও পেছন পেছন বেরোতে নিলে রাশেদ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
‘ তুই সারারাত কোথায় ছিলি?’
চমকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল উচ্ছ্বাস। এতক্ষণ এই ভয়েই ছিল। রুদ্রের কাছেতো গিয়েছিল শেষ রাতের দিকে। কিন্তু এর আগেতো_। কিন্তু রাশেদকে ও কোনদিন মিথ্যা বলতে পারবেনা। কোনদিন পারেও নি। এরকম মনে হয় এই মানুষটার কাছে বিন্দুমাত্র মিথ্যা বললে সঙ্গে সঙ্গে ওর সর্বাঙ্গ ভস্ম হয়ে যাবে। তাছাড়াও সেই দশ বছর বয়স থেকেই অনাথ উচ্ছ্বাসের বাবা-মা সবই তো এই রাশেদ আমের। হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে উচ্ছ্বাস বলল,
‘ রাশেদ বাবা, আমি আসলে_’
এইটুকু বলে থেমে গেল উচ্ছ্বাস। বাক্যটা সম্পূর্ণ করার সাহস হয়ে উঠল না আর। রাশেদ উচ্ছ্বাসের দিকে না তাকিয়েই বলল,
‘ বারে যেতে নিষেধ করিনি তোকে আমি। কিন্তু সারারাত পড়ে থাকবি না ওখানে। পরেরবার আমি বুঝতে পারলে এক সপ্তাহ রুমে আটকে রাখব। মনে থাকবে?’
‘ জ্বি।’
মাথা নিচু করে ভদ্র ছেলের মতো বলল উচ্ছ্বাস। রাশেদ পুনরায় আদেশের সুরে বলল,
‘ তুইও কিছু খেয়ে বিশ্রাম কর। দুপুরের আগে তোরও বের হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।’
উচ্ছ্বাস মাথা নেড়ে চলে গেল সে ঘর থেকে। ও যেতেই জাফর মাথা দুলিয়ে হেসে ফেলল। রাশেদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ দুটো ছেলেই পাগল। দুজন দুরকমের পাগল।’
ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে রুদ্র আর উচ্ছ্বাসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল রাশেদ। রুদ্র তো তার কলিজা। আর উচ্ছ্বাস? দশ বছর বয়স থেকে এখানে থাকতে থাকতে কবে ও রাশেদের আরেক সন্তান হয়ে উঠেছে সেটা উচ্ছ্বাস নিজেও জানেনা। জাফর সব গুছিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ ভাইজান, আজ বাইরে যাবেন না?’
রাশেদ নিজের চাপ দাড়িতে একবার হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ যেতে হবে।’
রাশেদ আর জাফর বেরিয়ে পড়ল তাদের নিজস্ব ডেরায়। পরবর্তী প্রজেক্টের পরিকল্পনা শুরু করে দিতে হবে। কারণ রুদ্র যখন একবার বলে দিয়েছে কালকের মধ্যেই টাকা চলে আসবে তখন আর কোন চিন্তার প্রয়োজন নেই।
*
নিজের শোবার ঘরের বিছানায় মাঝখানে বসে ছবি আঁকছে কুহু। পরনে আকাশি রঙের একটা চুড়িদার, চুলগুলো রিবন করে বেঁধে রাখা। একপাশে প্যাস্টেল রঙের বড় বড় দুটো বক্স; 2B, 2H আর 4B পেন্সিল সাথে একটা রাবার রাখা। খুব মনোযোগ দিয়ে প্যাস্টেল পেপারটায় রঙ ঘষে চলেছে ও। বিছানার ওপর কারো বসার আভাস পেলেও মাথা তুলল না কুহু। এখন সে ছবি আঁকায় ব্যস্ত। আশেপাশে দেখার সময় নেই এখন তার। মিনিট খানেক পর কেউ ওর মাথায় টোকা মেরে বলল,
‘ কী আঁকছিস এসব? ভার্সিটি নেই আজ?’
নিজের মাথা হালকা ঘষে মুখ ফুলিয়ে তাকালো কুহু। তাকিয়ে দেখে রুদ্র বিছানায় বসে একহাতে ভর দিয়ে ঝুঁকে ওর আঁকা দেখছে। কুহু সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে বোঝালো,
‘এখন ক্লাস নেই, বিকেলে ক্লাস। তুমি কাল রাতে আসোনি কেন?’
রুদ্র সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝে। এ বাড়িতে রাশেদের পরে এই ভাষা বোঝা দ্বিতীয় ব্যক্তি ও। রুদ্র হাত দিয়ে কুহুর আঁকা ছবি উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে বলল,
‘ কাজ ছিল তাই আসিনি। তোর জ্যোতি আপু কই? এসে এখনো দেখলাম না?’
কুহু হাত উঠিয়ে কিছু বোঝাতে যাচ্ছিল এরমধ্যেই ঘরের দরজার কাছ থেকে মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো,
‘ বাপরে! সূর্য কোন দিকে উঠেছে? রুদ্র আমের আজ নিজে থেকে জ্যোতির খোঁজ করছে? কী ব্যাপার?’
রুদ্র বিরক্তি নিয়ে তাকাল দরজার দিকে। দরজার দুপাশে দু হাত রেখে এক সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। পরনে গাঢ় নীল রঙের জরজেটের শাড়িটা গায়ে ফুটে উঠেছে। পিঠের মাঝামাঝি পড়া চুলগুলো মাঝে সিঁথি করে ছেড়ে দিয়েছে। রুদ্র ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
‘ কাল সারারাত ঘুম হয়নি। খেয়ে ঘুমাবো, খেতে দে।’
মেয়েটা দরজা ছেড়ে এগিয়ে এসে বলল,
‘ বললে না যে? আজ এসেই আমার খোঁজ নিলে? মিস করছিলে?’
কুহু আড়চোখে একবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসল। রুদ্র চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘ জ্যোতি!’
জ্যোতি কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেল। কিছুটা ভয় পেয়েছে। গলা ঝেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
‘ রুমে নিয়ে যাব? নাকি ডাইনিং এ খাবে?’
‘ রুমে নিয়ে আয়। আর উচ্ছ্বাসের ঘরেও খাবার পাঠিয়ে দিস।’
গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রুদ্র। জ্যোতি সেদিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বিছানায় বসল। এরপর কুহুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ আমায় নিয়ে আর কিছু বলেছে? নাকি যেটুকু শুনেছি সেটুকুই?’
কুহু ঠোঁটে চাঁপা হাসি রেখে না বোধক মাথা দোলালো। অর্থাৎ যেটুকু শুনেছো ঐটুকুই। আর কিছু বলেনি। জ্যোতি হতাশ হয়ে কুহুর ওপর গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তোর ভাইটা বড্ড হার্টলেসরে কুহু। এর দ্বারা প্রেম হবেনা। কোনদিন না।’
কুহু হাত দিয়ে ঠেলে জ্যোতিকে সোজা করে বসিয়ে দিয়ে হাতের ইশারায় বলল,
‘ তাড়াতাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে এসো। নইলে আজও বকা খাবে।’
জ্যোতি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে পারা এ বাড়ির তৃতীয় এবং শেষ ব্যক্তি। কুহুর কথাটা বুঝতে পেরে জ্যোতি দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ ঠিক বলেছিস। যাই মহারাজকে গিয়ে খাবারটা দিয়ে আসি।’
কথাটা বলে জ্যোতি দৌড়ে চলে গেল ঘর থেকে। কুহু সেদিকে তাকিয়ে হালকা হেসে আবার ছবি আঁকায় মনোযোগ দিল। নিজের অবসর সময়টা ছবি এঁকেই পার করে কুহু। নিজের না বলতে পারা প্রতিটা শব্দ, আবেগ, অনুভূতিগুলো নিজের আঁকা ছবিগুলোর প্রতিটা রেখায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে হয়তো। মেয়েটা নিজের জীবনে খুশি, ভীষণ খুশি।
*
ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসলটা সেরে নিতেই দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল রুদ্রের। তবে এবার চোখে হালকা ঘুম ধরা দিয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে পরপর দুটো খুন করেছে, তারওপর গোটা রাত নির্ঘুম কেটেছে, পেটেও দীর্ঘসময় যাবত কিছু পড়েনি। কাজেই মাথা ভীষণ গরম হয়ে আছে। খেয়েই এখন শুয়ে পড়তে হবে। মস্তিষ্কের কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন।বিকেলের পর অনেক কাজ। শুধু একটা ট্রাউজার পরে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো রুদ্র। দেখতে পেলো জ্যোতি ইতিমধ্যে খাবার নিয়ে চলে এসছে। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ পার্মিশন না নিয়েই ঘরে ঢুকে পড়িস কেন?’
জ্যোতি খাবারের ট্রে টা বিছানার ওপর রেখে বলল,
‘ এটা আমার ন্যাচার। এ বাড়িতে আমি রাশেদ বাবা ছাড়া কারো রুমে পার্মিশন নিয়ে ঢুকিনা।’
রুদ্র কিছু না বলে টাওয়েলটা পাশে ফেলে রেখে কাবার্ড খুলতে এগোলেই জ্যোতি টিশার্ট বাড়িয়ে দিল রুদ্রর দিকে। রুদ্র জ্যোতির দিকে না তাকিয়েই টিশার্ট টা টেনে নিয়ে পরতে পরতে বলল,
‘ তোকে কতবার নিষেধ করেছি যে আমার জিনিসে হাত দিবিনা? হাতদুটো ভেঙে দিতে হবে?’
জ্যোতি মুচকি হাসি দিয়ে হাত দুটো এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ ধন্য হব আমি।’
রুদ্র রেগে গেল। জ্যোতির বাড়িয়ে দেওয়া হাত দুটো ধরে পেছনের দিকে মুচড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ একমাত্র বাবার জন্যে তোকে সহ্য করি। আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলে কিন্তু তোকে মেরে গুম করে দেব আমি। জাস্ট দু মিনিটের কাজ। কেউ লাশটাও খুঁজে পাবেনা।’
জ্যোতি রুদ্রর দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকাল। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের সুদর্শন এই যুবকের চোখদুটোতে এখন ওর প্রতি তীব্র ক্রোধ। ভেজা অগোছালো চুলগুলো নেড়ে দিতে মন চাইছে ওর। কিন্তু রুদ্র যে ওকে সেই অধিকার দেয়নি। জ্যোতি রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বলল,
‘ ভালোবাসার মানুষটার হাতে মৃত্যুর চেয়ে সুখের মরণ হয় নাকি?’
রুদ্র আরও বিরক্ত হল। আবার সেই অসহ্য প্রেমের প্যানপ্যানানি! রেগে আরও শক্ত করে হাত দুটো মুচড়ে ধরে বলল,
‘ তোর মাথা থেকে এই ভালোবাসার ভুত নামবে না?’
জ্যোতি হাতের ব্যথাকে উপেক্ষা করে ঠোঁটের হাসিটুকু বজায় রেখে বলল,
‘ ভালোবাসার ভুত কখনও নামেনা প্রিয়। এতো নিষ্ঠুর কেন তুমি? যখন থেকে ভালোবাসার মানে বুঝেছি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি। মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি। সেটা বোঝনা?’
রুদ্র রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ রুদ্র আমের ভালোবাসেনা।’
জবাবে জ্যোতি বলল,
‘ পাল্টা ভালো না হয় নাই বাসলে আপন তো করে নিতেই পারো তাইনা? এমনতো নয় যে কোন মেয়েকে স্পর্শ করো না। নিজের প্রয়োজনে অন্য মেয়েদের তো নিজের সংস্পর্শে ঠিকই আসতে দাও। সেই অধিকারটুকু আমায় বৈধভাবে দিলে ক্ষতি কী রুদ্র?’
রুদ্র কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল জ্যোতির দিকে। ওর বিরক্তি সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলছে এবার। কিছুক্ষণ জ্যোতির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ আমার সংস্পর্শে আসতে চাইলে ঐসব মেয়েদের মতো করেই আসতে হবে। যেখানে আমার সবকিছুই অবৈধ সেখানে এইটুকু বৈধ রেখে নিজেকে পবিত্র প্রমাণ করার হাস্যকর চেষ্টা আমি করবোনা। আসতে চাস? চাইলে ফেরাবোনা তোকে।’
রুদ্রের কথাগুলো শুনে চোখে নোনাজল এসে ভীড় করল জ্যোতির। টলমলে চোখে তাকিয়ে রইল রুদ্রের দিকে। সেটা দেখে রুদ্র একহাতে ওর গাল চেপে ধরে বলল,
‘ কাঁদছিস কেন? খুব শখ না তোর আমার সংস্পর্শে আসার? এখনো শখ আছে? আসবি? আমের ভিলায় তো এসব হয়না বাইরে কোথাও ব্যবস্থা করবো নাকি? এখন চুপ করে আছিস কেন বল? সবসময় তো মুখে খই ফোটে। এখন কথা বল?’
#চলবে…
[ গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই। ]