অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৩১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৩১.
ফেনী। বিলাশবহুল এক হোটেলের বারে বসে আছে পলাশ। একের পর এক মদের বোতল খালি করে চলেছে। আজ বেশ খুশি দেখাচ্ছে ওকে। এতোদিন কলিজাটা একপ্রকার হাতে নিয়ে নিয়ে ঘুরছিল বেচারা। এই বুঝি বেঘোরে প্রাণটা গেল। কিন্তু আজ মোটামুটি নিশ্চিন্ত সে। দুবাই যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কালকেই ফ্লাইট। এরপর আর ওর টিকিটাও খুঁজে পাবেনা কেউ। না পুলিশ, আর না ঐ খুনি। শুধু আজকের রাতটা দরজা-জানালা সব লাগিয়ে নিরাপদে কাটিয়ে দিতে পারলেই হলো। ফোন বেজে উঠতেই ভীষণ বিরক্ত হলো পলাশ। শান্তিতে একটু নেশা করতেও দেবেনা এরা। ফোন রিসিভ করে মাতাল কন্ঠে বলল, ‘ হ্যাঁ বলো ভাই।’
ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে কেউ বলে উঠল, ‘কোথায় তুই?’
‘ফেনীতে। কাল দুবাই চলে আসছি। চিন্তা করোনা।’
‘ তোর আশেপাশে এতো আওয়াজ কেন? ঐ তুই বারে নেশা করছিস?’ ধমকে উঠল ফোনের ওপাশের ব্যক্তি।
হকচকিয়ে গেল পলাশ। কোনরকম ইতস্তত করে বলল, ‘কই নাতো!’
ওপর পাশের ব্যক্তি রাগে ঝলসে উঠল। বিশ্রী এক গালি ছেড়ে বলল, ‘তোকে না বলেছি বের হবিনা রুম থেকে। দরজা-জানালা সব লাগিয়ে বসে থাকবি। সেইজন্য দিনের বেলায় ফ্লাইটের ব্যবস্থা করলাম। একদিন মদ না গিললে মরে যেতি? শু*র!’
‘ আরে আমিতো_’
‘ চুপ! একদম চুপ! এক্ষুনি রুমে যাবি। এমনিতেই ছেলেটার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা। কোথায় গিয়ে ম’র’ছে কে জানে। এই আরেক আপদও ঘাড় জ্বালাচ্ছে। সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা তিনজনই বেঁচে আছি কেবল। আমি দুবাই আর ঐ হারামখোর নিখোঁজ। পরে আছিস শুধু তুই। বুঝতে পারছিস ঘাড়ে কতবড় খাড়া ঝুলে আছে? তাড়াতাড়ি রুমে যা!’ তিক্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে কল কাটল ওপাশের ব্যক্তি।
মনের সুখে কিছুক্ষণ মদপান করে বার থেকে বেরিয়ে এলো পলাশ। লিফট দিয়ে উঠে এলো পাঁচ তলায়। টলতে টলতে নিজের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দরজায় চাবি লাগাতে গিয়ে থমকে গেল। লক খোলাই আছে। খুলে রেখেই গিয়েছিল না-কি? অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে করতে পারল না বারে যাওয়ার আগে দরজা লক করেছিল কি-না। অজানা এক আতঙ্কে শিরশির করে উঠল পলাশের শরীর। মাথা ঝাকিয়ে মাতাল ভাবটা দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ছুটে পালানোর প্রবল এক ইচ্ছা জাগল পলাশের মনে। কিন্তু কথায় আছে, মৃ’ত্যু থেকে কেউ পালাতে পারেনা। ঠিক তাই হল। বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি হানা দিল ওর মস্তিষ্কে। জোরপূর্বক সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলল মাথা থেকে। নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিল যে, ও নিজেই লক করতে ভুলে গেছে হয়তো। আর খু’নিই বা এতো তাড়াতাড়ি জানবে কীকরে ও কোথায়। ভাই অযথাই ভয় দেখাচ্ছে ওকে। নিজেকে মারাত্মক সাহসী খেতাব দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল পলাশ। দরজাটা ভালোকরে লক করে নিল যাতে কেউ ঢুকতে না পারে। টলতে টলতে এগিয়ে গিয়ে সুইচটা অন করে পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠল। বিষ্ফোরিত হয়ে গেল চোখদুটো। হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার জোগাড় হল। তীব্র আতঙ্কে জমে গেছে বেচারা। ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে কোনরকমে বলল, ‘তু-তুমি_’
আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা ওকে সেই আগন্তুক। এক মুঠো সাদা পাউডার জাতীয় কিছু চেপে ধরল পলাশের নাকে-মুখে। শরীরের সব শক্তি প্রয়োগ করেও সুঠাম দেহি লোকটার থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারল না পলাশ। ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ল ওর শরীর। বসে পড়ল ফ্লোরে। সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে, ডাবল ভিশন হচ্ছে, গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছে পলাশের। ফুঁপিয়ে উঠল পরপর দু’বার। নিঃশব্দ, নিষ্ঠুর হাসি হাসল আগন্তুক। কারো নাম্বারে কল লাগালো। ফোনটা লাউড স্পিকারে দিয়ে রেখে দিল পাশে। এরপর হোটেল রুমের এই চার দেয়াল সাক্ষী হল এক নিষ্ঠুর, ভয়ানক হ’ত্যা’কা’ণ্ডের। পলাশের একেকটা মৃত্যু চিৎকারে দ্বিগুন আওয়াজে চেঁচিয়ে উঠছে ফোনের ওপাশের ব্যক্তি। অসহায়ত্ত্বের চিৎকার, কিছুই করতে না পারার আর্তনাদ। কিন্তু কোন চিৎকারই গলাতে পারল না নিষ্ঠুর এই আগন্তুকের হৃদয়। বরং এই আর্তনাদ অমৃতের স্বাদ দিচ্ছে তাকে। ঠান্ডা করে দিচ্ছে ভেতরে জ্বলতে থাকা ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডকে। যেন ন্যায় করছে নিজের কানে শোনা এমনই এক হৃদয় বিদারক চিৎকারের সঙ্গে।
*
‘গতকাল রাতে ঠান্ডাটা একটু বেশিই পরেছিল তাইনা স্যার? দু পেগ হলে একদম জমে যেতো!’
কথাটা বলে নিজেই চমকে গেল তমাল। কোথায় কী বলল! মাথা তুলে দেখল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তুহিন ওর দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুহিন আবার ল্যাপটপে চোখ দিয়ে বলল, ‘ রোজ খাও নাকি?’
‘ না না স্যার। মাসে দু এক বারই হয়। এর বেশি না।’ এক নিঃশ্বাসে বলে থামল তমাল। পারলে এক্ষুনি ছুটে পালায়।
তুহিনও এ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন করল না। কাল রাত থেকে তিনটে গ্রুপের সমস্ত রিপোর্ট দেখছে তুহিন। তমালও ছিল সাথে। বাড়ি ফেরেনি দুজনের কেউই। তমালকে তিনটের দিকে গেস্ট রুমে শুতে পাঠিয়ে দিলেও নিজে যায়নি তুহিন। ভোরবেলায় টেবিলের ওপরেই মাথা এলিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিয়েছিল। এইটুকুই ছিল বিশ্রাম। একের পর এক কফির মগ খালি করেছে কেবল। একদম শুরু থেকে সবগুলো ফাইল লাইন বাই লাইন চেক করছে তুহিন। যার ফলে এতো সময় লাগছে। কিন্তু এখনকার রিপোর্টগুলো পড়ে যা জানল তাতে মনটা খারাপ হয়ে গেল তুহিনের। কী মর্মান্তিক! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুহিন আরেকটা ফোল্ডার ওপেন করল। সেই ফোল্ডারের কয়েকটা ফাইল পড়তেই চমকে উঠল। এতক্ষণের ক্লান্তি কেটে গেল নিমেষেই। সোজা হয়ে বসে আবারও ভালোকরে পড়ল ফাইলটা। অস্ফুট স্বরে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, ‘গড!’
তমাল খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘ কী হয়েছে স্যার?’
দুই হাত একত্রিত করে থুতনির নিচে রাখল তুহিন। চোখ দুটো ল্যাপটপের মনিটরে স্হির হয়ে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুহিন বলল, ‘আমি বলেছিলাম না তমাল সাতটা লা’শ আমাদের হাতে এসেছে তার মানে এটা নয় যে খু’নও সাতটাই হয়েছে। সি।’
বলে ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে দিল তমালের দিকে। তমাল দ্রুত চোখ বুলালো ফাইলটাতে। অবাক কন্ঠে বলল, ‘আট থেকে দশদিন আগে হয়েছে স্যার খু’নটা। চট্টগ্রাম!’
‘ কারেক্ট! মার্ডারটা কার হয়েছে দেখেছো?’
‘ হ্যাঁ স্যার!’ হতভম্ব গলায় বলল তমাল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, ‘কিন্তু স্যার! আপনি কীকরে বুঝেছিলেন যে আরও খুন হয়েছে?’
তুহিন ল্যাপটপটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। আবার গভীর মনোযোগ দিয়ে মনিটরে তাকিয়ে বলল, ‘একটা জিনিস খেয়াল করেছো? বাকি খু’নগুলোর মধ্যে ডিসটেন্স একদিন কিংবা বেশি হলে দু’দিন। কিন্তু কিশোরগঞ্জ আর বনানীতে হওয়া খুন দুটোর মধ্যে ডিসটেন্স ছিল এক সপ্তাহ মানে সাত দিনের।’
তমাল মনে মনে একটা হিসেব কষল। চোখ বড় বড় করে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আর হিসেব মতো এই চট্টগ্রামের খু’নটাও ঐ সাতদিনের মধ্যেই পড়ছে, স্যার।’
‘আর আমি যদি খুব ভুল না হই ঐ সাতদিনে শুধু এই একটা খু’ন হয়নি আরও খুন হয়েছে। যেহুতু কোন রিপোর্টে সেই খু’ন বা খুনগুলোর কথা উল্লেখ নেই। তার মানে একটাই। লাশ এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায় নি। আর আমার সিক্সথ সেন্স বলছে আজকের মধ্যেই আমরা নবম খু’নের খবর পাবো।’
ভাষাহীন চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে রইল তমাল। কম্পিত কন্ঠে বলল, ‘আটকানোর কোন উপায় নেই, স্যার?’
নিজের চেয়ারে হেলান দিল তুহিন। সিলিং এর দিকে দৃষ্টি ফেলে বলল, ‘বোধ হয় দেরী হয়ে গেছে। কিন্তু_’
বাক্যটা শেষ না করেই সোজা হয়ে বসল তুহিন। ল্যাপটপে নিয়ে আরও আধঘন্টার মতো ঘাটাঘাটি করল। কিন্তু এমন কিছুই পেলোনা যেটা থেকে বোঝা যায় পরবর্তী খু’ন কোথায় বা কার হতে চলেছে। যতটা জানতে পেরেছে ভিক্টিম অনেকেই হতে পারে। তিনটে গ্রুপেরই সদস্য সংখ্যার অভাব ছিলোনা। যারা যারা মারা গেছে সবাইকে বাদ দিলেও লোকসংখ্যার অভাব নেই। বিরক্তিতে মাথা ধরে আসছে ওর। এরকম অসহায় অবস্থায় এর আগে পড়েনি ও। ও জানে খু’ন হচ্ছে বা হবে। অথচ আটকানোর কোন উপায় ওর হাতে নেই। কীকরে থাকবে? কার খু’ন হবে, কোথায় খু’ন হবে কিচ্ছু জানেনা ও। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল তুহিন। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ডার্ক নাইট গ্রুপের লিডার শওকত মীর্জা কোথায় আছে খোঁজ নাও। হয় ম’র’বে নয় মা’র’ছে লোকটা। আমি ডিজি স্যারের কাছে রিপোর্ট করে আসছি। তুমি এই ফাঁকে ব্রেকফাস্ট করে নাও।’
তমালকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে বেরিয়ে গেল তুহিন। হতাশ এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘খেয়েও গেলোনা লোকটা। মনে হয়না দুপুরের আগে কিছু খাওয়ার চিন্তাভাবনা আছে। সারারাত জেগে খাবারেও এমন অনিয়ম করলে চলে?’
কথাটা বলতে বলতে কারো নাম্বারে কল লাগাল তমাল। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই ইতস্তত কন্ঠে বলল, ‘হ্যালো ম্যাডাম?’
ডিজির রুম থেকে বের হয়ে ফোনটা পকেট থেকে বের করল তুহিন। শাফায়াত এর সাথে কথা বলার সময় ফোন ভাইব্রেট করে উঠেছিল একবার। কেউ মেসেজ করেছে। মেসেজটা ওপেন করে দেখল ইরার মেসেজ। লিখেছে, ‘আমি তোমার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। তাড়াতাড়ি এসো।’
ভ্রু কুঁচকে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল তুহিন। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবল, মেয়েটা আবার এখানে কী করছে? দ্রুত পায়ে নিজের কেবিনে গেল তুহিন। তমালকে বলল, ‘ মীর্জা কোথায় আছে তার খোঁজ করতে থাকো। আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।’
তমাল অতি ব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘ কোন সমস্যা নেই স্যার। আপনি নিশ্চিন্তে যান। ধীরেসুস্হে আসুন।’
চোখ ছোট ছোট করে তমালের দিকে তাকিয়ে রইল তুহিন। সন্দিহান কন্ঠে বলল, ‘তুমি ডেকেছো ওকে, তাইনা?’
তমাল অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘ আমি? কই নাতো। আমি কেন ডাকব? ম্যাডাম হয়তো নিজেই এসছে। আমি ডাকিনি!’
তুহিন বুকের ওপর হাত ভাঁজ করে বলল, ‘ আমি কখন বললাম তোমার ম্যাডাম এসছে?’
মুখ ছোট হয়ে গেল তমালের। বুঝে গেছে যে ধরা পড়ে গেছে ও। ঝাড়ি শোনার জন্যে মনে মনে প্রস্তুত করে ফেলল নিজেকে। কিন্তু তুহিন কিছু বলল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাজে মন দিল তুহিন। বাঁচা গেছে!
*
ইরাকে নিয়ে কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসেছে তুহিন। নিচে নামতেই ইরা বায়না ধরেছিল, খিদে পেয়েছে, খাবে। তারপর বাকি কথা। অগত্যা কোন কথা না বাড়িয়ে প্রেয়সীর আদেশই মান্য করল চতুর গোয়েন্দা। কর্ণারের এক প্রাইভেট এরিয়া নিয়েছে নিজেদের জন্যে।
খেতে খেতে তুহিন বলল, ‘এরকম পাগলামীর কোন মানে হয় ইরা? এতো বেলা অবধি না খেয়ে ছিলে কেন?’
ইরা মুখ ফুলিয়ে বলল, ‘ আর তুমি যে সারারাত জেগে কাটালে তার বেলা?’
‘ আজব! আমি কাজ করছিলাম। আপনি কোন রাজকার্য উদ্ধার করছিলেন ম্যাডাম?’
ইরা মুচকি হাসল। তুহিনের চোখে চোখ রেখে বলল, ‘তোমার কথা ভাবছিলাম। রাজকার্যের চেয়ে কম কী?’
ব্যস! তুহিনের এতক্ষণের বিরক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কোঁচকানো ভ্রু জোড়া সোজা হয়ে গেল। গালে হাত রেখে তাকাল ইরার দিকে। সম্মোহনী দৃষ্টিতে ইরার চোখে চোখ রেখে বলল, ‘ম্যাডাম ইদানিং বেশ রোমান্টিক রোমান্টিক কথাবার্তা বলছেন। এখন আমি যদি আপনার রোমান্টিক কথায় ইন্সপায়ার্ড হয়ে সো মাচ রোমান্টিক কিছু করে বসি, তখন কী হবে?’
ইরাও তুহিনের দিকে খানিকটা ঝুকে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘কী আর হবে? তখন আর নয়-ছয় বলে বাহানা দিতে পারবেনা। বিয়ে করে ফেলতে হবে। আমার জন্যেতো ভালোই হয়।’
হেসে ফেলল তুহিন। ইরার কপালের চুলগুলো সযত্নে গুঁজে দিল কানের পিঠে। মুখটা এগিয়ে নিচ্ছিল ইরার দিকে এমন সময় অসহ্যকর আওয়াজে বেজে উঠল ফোনটা। মুখ দিয়ে ‘চ্যাহ’ টাইপ শব্দ করে সোজা হয়ে বসল তুহিন। বিরক্তিতে তিক্ত হয়ে উঠল মনটা। তুহিনের মুখভঙ্গি দেখে হাসি পাচ্ছে ইরার। তুহিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শাফায়াত হোসেইন বলল, ‘কোথায় তুমি?’
তুহিন ইতস্তত করে একবার তাকাল ইরার দিকে। নিজের কন্ঠস্বর যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলল, ‘একটু বেরিয়েছিলাম স্যার। আশেপাশেই আছি।’
‘ ইমিডিয়েটলি আমার কেবিনে এসো। কথা আছে। আর্জেন্ট।’
‘ ওকে স্যার। আমি দশ মিনিটে আসছি।’
ফোনটা কেটে হতাশ চোখে ইরার দিকে তাকাল তুহিন। তুহিনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে নিজের মন খারাপ ভাবটা ভুল করেও প্রকাশ করল না ইরা। বরং হেসে ফেলল। হাত দিয়ে তুহিনের চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল, ‘তুমি যাও। আমি সিএনজি করে চলে যাব বাড়িতে।’
মুচকি হাসল তুহিন। এগিয়ে এসে চুমু খেলো ইরার গালে। বিল চুকিয়ে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। না জানি আবার নতুন কোন ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে।
#চলবে…
[ রি-চেইক করিনি। ]