অন্তর্হিত কালকূট পর্ব ৪০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৪০.
পুলিশের দুজন লোক বাড়ির সকলের হাতের ছাপ নিলেন। গেস্টদের হাতের ছাপও আজকের মধ্যে কালেক্ট করা হবে। ইন্সপেক্টর আজিজ চলে যেতে নিলে জ্যোতি বলে উঠল, ‘ওখানে রাখা একটা ছু’রি দিয়ে কিন্তু আমি ফল কেটেছিলাম। এটাই সেই ছু’রি হলে আমার হাতের ছাপও পাওয়া যাবে। আপনি জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। দুজন মহিলার সামনেই কেটেছিলাম আমি।’
আজিজ ঘুরে তাকালেন জ্যোতির দিকে। মুচকি হেসে বললেন, ‘তার দরকার হবেনা হয়তো।’
দুপুরবেলা পরিবেশটা আবার গমগমে হয়ে উঠল আমের ভিলায়। বিয়ের অনুষ্ঠান রাশেদ আমের করেছেন। তাই আলাদা করে কোন রিসিপশনের আয়োজন করা হয়নি। তবে বাড়ির সব সার্ভেন্ট, আমের ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বিয়ে আর অনুষ্ঠানে আমের ভিলার কর্মচারী থেকে শুরু করে গার্ড সকলেই খুব খুশি। রুদ্রকে ওরা সকলেই ভীষণ ভয় পায়, কিন্তু তারসাথে প্রচন্ড ভালোও বাসে। সকলেই মনে মনে চাইতো তাদের গম্ভীর, রাগী ছোট সাহেব একটা মিষ্টি মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসুক। এতোদিনের আশা অবশেষে পূরণ হলো। প্রিয়তাকেও মনে ধরেছে সকলেরই। সুন্দরী, দেখতেও যথেষ্ট শান্ত। অপছন্দ করার কারণ নেই। বরং রুদ্র-প্রিয়তাকে রাজযোটক বলে দিয়েছে অনেকে। নার্গিস বেগম তো প্রিয়তার থুতনি ধরে বলেই ফেলেছে, ‘ আগেতো ভেবেছিলাম ছোটবাবার জন্যে জ্যোতির চেয়ে সুন্দরী মেয়ে পাবোই না। কিন্তু নতুন বউতো একদম ওকেও ছাপিয়ে যায়। একদম রাজা-রাণীর জুটি।’
কথাটা পছন্দ হয়নি প্রিয়তার। তুলনা জিনিসটা পছন্দ না ওর। তাছাড়া জ্যোতিও উপস্থিত ছিল সেখানে। কোন আক্কেলে মহিলা এমন কথা বলল সেটাই বুঝল না প্রিয়তা। নববধূ বলেই চুপ থাকল। তবে জ্যোতির মুখ কালো করে বেরিয়ে যাওয়া দেখে খারাপ লেগেছে ওর। হয়তো কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।
আমের ভিলার ছাদে সকলের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রিয়তাকে নিজের হাতে রান্না করতে হয়েছে সবার জন্যে। যদিও ওকে সাহায্য করার জন্যে জ্যোতি, নার্গিস, আরও মেইডরা ছিল। তবুও এতো মানুষের রান্না করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে বেচারি। অপরদিকে রুদ্রও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিল সকাল থেকে। এতসব ব্যস্ততার মাঝে রুদ্র আর প্রিয়তার দেখা হয়নি সকাল থেকে।
ছাদে গিয়ে খাওয়ার জায়গায় নিরবকে দেখে অবাক হল কুহু। বোকার মতো তাকিয়ে রইল সেদিকে। নিরবের চোখ কুহুর ওপর পড়তেই নিরব ভ্রু নাচাল। কুহুর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে নিরব নিজের ফোনটা তুলে দেখাল। কুহুও দ্রুত নিজের ফোন বের করল। নিরব মেসেজ পাঠিয়েছে, ‘অবাক হয়েছো?’
কুহু একবার দূরে বসে থাকা নিরবের দিকে তাকিয়ে দ্রুত লিখল, ‘আপনি এখানে কীকরে?’
‘ বিয়েতেও এসেছিলাম। তুমি খেয়াল করোনি। থাকিনি বেশিক্ষণ। তোমার বাবার সাথে আমার বাবার আলাপ আছে। ব্যবসা সূত্রে। আমিও আগে জানতাম না। কালই জেনেছি। আজও আমাদের ডেকেছে তোমার বাবা। তাই আসা।’
মেসেজটা পড়ে কুহু বোকা দৃষ্টিতে তাকাল নিরবের দিকে। নিরব মুচকি হেসে ইশারা করল, রাতে কথা হবে।
উচ্ছ্বাস রুদ্রর সঙ্গে ব্যস্ত থাকলেও বারবার তাকাচ্ছিল চারপাশে। আশা করেছিল আজও হয়তো নাজিফার দেখা পাবে। কিন্তু নাজিফার বাবার দেখা পেলেও নাজিফার দেখা পায়নি বেচারা। অবশেষে হতাশ হয়েই কাজে মন দিতে হয়েছে।
*
যেহেতু গতকাল বাসর হয়নি, তাই আজকেই রুদ্রের বাসরের আয়োজন করা হয়েছে। জ্যোতি, কুহু, মীরা তিনজন মিলেই রুদ্রের ঘর আর প্রিয়তাকে সাজিয়ে দিয়েছে।
রাত এগারোটার দিকে ওপরে এলো রুদ্র। সারাদিন বেশ ব্যস্ত ছিল। প্রিয়তার সঙ্গে দু একবার দেখা হলেও কথা বলার সুযোগ হয়নি। উচ্ছ্বাসকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তবেই এখন ওপরে এলো। করিডর ধরে এগোতেই সামনে পড়ল জ্যোতি। দুজনেই থেমে গেল। জ্যোতি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল রুদ্রের দিকে। রুদ্র দু সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। জ্যোতিকে দেখলে ইদানিং খানিকটা অস্বস্তি হয় রুদ্রর। কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে!
জ্যোতি রিক্ত চোখে তাকিয়ে রইল রুদ্রের যাওয়ার দিকে। হঠাৎ জ্বালা করে উঠল চোখজোড়া। নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠল। বুকের মধ্যে যেন কেউ পাথর চেপে রেখেছে। কষ্ট হচ্ছে। আফসোস হচ্ছে। কেন এমন একজনকে ভালোবাসলো যে ওর ভাগ্যে ছিলোনা। প্রণয়ের এই তীব্র দহন কেন ওর ভাগ্যেই লেখা ছিল? জ্যোতি আপনমনে ভাবল, একসময় কী বলেছিল রুদ্র? ওর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্যে নাকি ঐসব মেয়েদের মতোই আসতে হবে। বৈধভাবে কখনও রুদ্রের সান্নিধ্য পাওয়া যাবেনা। তাহলে আজকে কেন নিজের কথার খেলাপ করতে চলেছে সে। প্রিয়তাকে তো বৈধ অধিকার দিয়েছে। রাশেদ বাবাও তো জ্যোতির মন বোঝেনি। কিংবা বুঝে থাকলেও গুরুত্ব দেয়নি জ্যোতির অনুভূতিকে। নিজের ছেলের পছন্দকেই গুরুত্ব দিয়েছে। সবাই স্বার্থপর। তাহলে ও কেন নিঃস্বার্থ হবে?
এসব কথা ভাবতে ভাবতে সোজা নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ল জ্যোতি। কোন কথা বলল না কুহুর সঙ্গে। কুহু বুঝেও চুপ থাকল। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। কিন্তু এখানে তো কারো কিছু করার নেই। কারো কোন হাত নেই। ভালোবাসা জিনিসটাই হয়তো এমন। এখানে ভাগ্য ছাড়া কাকে দোষ দেবে? কার কী করার আছে? ‘ভালোবাসা’ শব্দটা মাথায় ঘুরতেই নিরবের কথাই মনে পড়ল কুহুর। নিরবের কথা ভাবতে ভাবতে আনমনেই মেসেজ পাঠিয়ে দিল নিরবের নাম্বারে।
রুদ্র ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই প্রিয়তা আড়ষ্ট হয়ে বসল। হাঁটুর ওপর রাখা হাত দুটো দিয়ে শাড়ি খামচে ধরল। আধঘন্টা আগে মীরা, কুহু, জ্যোতি সাজিয়ে বসিয়ে রেখে গেছে ওকে। কী দুষ্টুমি করছিল! তবে রুদ্রের সাথে হাসি-তামাশা করার সাহস আমের ভিলার কারো নেই। তাই সেই ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে সকলেই।
ঘরজুড়ে হরেক রকম ফুল আর মোমবাতির মিষ্টি সুগন্ধ। লাইট সব অফ করা। কেবল মোমবাতির আলোতেই আলোকিত ঘরটা। রুদ্র তাকাল প্রিয়তার দিকে। মাথা নিচু করে শক্ত হয়ে বসে আছে। রুদ্র মুচকি হাসল। ধীরপায়ে গিয়ে বসল বিছানায়। তাতে আরেকটু গুটিয়ে গেল প্রিয়তা। রুদ্র হাত বাড়িয়ে হলদে রঙের একটা মোমবাতি নিল। আরেক হাতে আলতো করে ধরল প্রিয়তার চিবুক। প্রিয়তা চোখ বুজে ফেলল। রুদ্র ওর নিচু মাথাটা উঁচু করে ধরল। মোমবাতিটা সামনে ধরে দেখল প্রিয়তাকে। প্রিয়তা চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। ঠোঁট কাঁপছে। খয়েরী রঙের শাড়ি, ভারী গহনা, চুলের খোঁপায় গাঁজরা। সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে ওকে। রুদ্র মন্ত্রমুগ্ধের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল, ‘মাশাআল্লাহ! স্বয়ং চাঁদ নেমে এসেছে আমার ঘরে।’
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। আরও শক্ত হয়ে বসল। রুদ্র মৃদু হেসে মোমবাতিটা জায়গায় রাখল। প্রিয়তার চিবুক ছেড়ে বলল, ‘ভয় পাচ্ছো নাকি আমাকে?’
প্রিয়তা তাকাল রুদ্রর দিকে। চোখে চোখ পড়তেই সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি নামিয়ে নিল। জবাব দিলোনা। রুদ্র বলল, ‘আচ্ছা প্রিয়, আমাদের বিয়েটা কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে? লাভ ম্যারেজ নাকি এরেঞ্জ ম্যারেজ? নাকি দুটোই?’
প্রিয়তা এবারও উত্তর দিলোনা। রুদ্র বুঝল মেয়েটার অভিমান কমেনি এখনো। তারওপর বাসর রাতে নাকি এমনিতেই চুপ থাকে মেয়েরা। রুদ্র উঠে দাঁড়াল। হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বলল, ‘গয়নাগুলো খুলে ফেলো। গরম পড়েছে আজ।’
রুদ্রের নির্দেশ শুনে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল প্রিয়তা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসল। আয়না দিয়ে তাকিয়ে রইল রুদ্রের প্রতিবিম্বের দিকে। রুদ্র তাকাতেই হকচিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। রুদ্র পাঞ্জাবীর বোতাম খুলছিল। কী একটা ভেবে থেমে গেল। এগিয়ে গেল প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা তখন চুড়ি খুলছে। গলায় কারো হাতের ছোঁয়া পেয়েই চমকে উঠল। তাকিয়ে দেখল রুদ্র ওর হার খুলে দিচ্ছে। প্রিয়তা চট করে উঠে দাঁড়াল। ইতস্তত করে বলল, ‘আমি পারব।’
কিন্তু রুদ্র শুনলো না। কাঁধ ধরে আবার টুলে বসিয়ে দিল প্রিয়তাকে। শাসনের ভঙ্গিতে বলল, ‘চুপচাপ বসে থাকো।’
প্রিয়তা আর বাঁধা দেওয়ার সাহস পেলোনা। মাথা নুইয়ে বসে রইল। কিন্তু মনে এখনো অভিমান পুষে রেখেছে সে। রুদ্র খুব যত্ন নিয়ে একটা একটা করে ভারী গহনাগুলো খুলে দিলো। এরপর প্রিয়তার দু কাঁধে হাত রেখে বেশ অনেকটা ঝুঁকে আয়নায় নিজেদের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাল। প্রিয়তা এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। স্হির পুতুলের মতো। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে রুদ্র মৃদু গলায় ডাকল, ‘প্রিয়?’
প্রিয়তা চোখ তুলে তাকাল। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড রুদ্রের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে ফেলল। রুদ্রের নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়ায় কেমন অদ্ভুত লাগছে ওর। প্রিয়তার মাথার চুলে রুদ্র নিজের নাক স্পর্শ করতেই প্রিয়তা নড়ে উঠল। দ্রুত উঠে সরে এলো ওখান থেকে। রুদ্র হেসে ফেলল। প্রিয়তার কাছে গিয়ে হাত ধরে ঘোরালো নিজের দিকে। প্রিয়তা আজ চেষ্টা করেও পারছেনা রুদ্রের চোখে চোখ রাখতে। লজ্জায়, অভিমানে, আড়ষ্টতায় শিউরে উঠছে ও। রুদ্র নিজের দু হাতের মুঠোয় প্রিয়তার হাত চেপে ধরে বলল, ‘জানো মেয়েদের এই জিনিসটা আমার খুব অসহ্য লাগতো। এইযে লজ্জায় মিইয়ে যাওয়া ব্যপারটা। ন্যাকামি মনে হতো। কিন্তু আজ তোমার লজ্জা পাওয়াটা মন্দ লাগছেনা। ভালো লাগছে। কেন বলোতো?’
বরাবরের মতোই প্রিয়তা জবাব দিলোনা। আস্তে করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল। এই ছেলে ওকে অভিমান করে থাকতে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। কী শুরু করেছে! প্রিয়তা কাঁপাকাঁপা হাতে টি-টেবিল থেকে দুধের গ্লাসটা নিল। ঘুরে গ্লাসটা এগিয়ে দিল রুদ্রের দিকে। রুদ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। বলল, ‘আমি এতো রাতে দুধ খাইনা।’
প্রিয়তা ইতস্তত করে বলল, ‘ নার্গিস খালা দিতে বলেছেন। আজকের রাতে নাকি দিতে হয়।’
‘কেন দিতে হয় জানো?’
প্রিয়তা বোকার মতো মাথা নাড়ল। রুদ্র হাসল। অস্বস্তি বাড়ল প্রিয়তার। ও হাসার মতো কী বলল? রুদ্র আর বাক্য ব্যয় না করে ভদ্র ছেলের মতো অর্ধেক গ্লাসের মতো দুধ খেল। খাওয়ার সময় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল প্রিয়তার দিকে। কী অদ্ভুত দৃষ্টি! প্রিয়তা মিষ্টির হাফপ্লেটটার দিকে হাত বাড়াতে গেলেই রুদ্র আঁতকে উঠল। অস্হির গলায় বলল, ‘ অ্যাই, মিষ্টি না প্লিজ। এমনিতেই আমার মিষ্টি অপছন্দ। এইসময় তো একদমই না।’
কেমন অসহায় শোনাল রুদ্রের গলা। প্রিয়তা ঠোঁট চেপে হাসল। অভিমান, অভিযোগ কখন পালিয়ে গেছে নিজেও বুঝল না। নিচু গলায় বলল, ‘আচ্ছা। যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।’
দশ মিনিটের মধ্যেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো রুদ্র। পরনে একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর টাউজার। ঘরে প্রিয়তাকে দেখতে পেলোনা। দরজা বন্ধ। বুঝলো বউ তার বারান্দায় আছে। এখনো ওর ওপর রেগে আছে কি-না কে জানে?
বারান্দায় গিয়ে রুদ্র আরেকদফা থমকালো। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। চাঁদের আলো সরাসরি ওর গায়ে পড়ছে। দৈব মানবী মনে হচ্ছে ওকে। রুদ্র এগিয়ে গেল। পেছন থেকে গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল তার প্রিয়কে। প্রিয়তা চমকাল। দ্রুত হাত রাখল ওর পেটে রাখা রুদ্রের হাতে। রুদ্র প্রিয়তার কাঁধে থুতনি রেখে বলল, ‘এখনো রেগে থাকবে, প্রিয়?’
প্রিয়তা নিরুত্তর। রুদ্র বাঁধন আরও শক্ত করে বলল, ‘আজকের রাতটাতেও এতো অভিমান? এমন রাত কিন্তু রোজ আসবেনা।’
প্রিয়তা এবার রুদ্রের হাতের বাঁধন আলগা করে ঘুরল রুদ্রের দিকে। রুদ্রের হাত এখনো ওর কোমরে। প্রিয়তার চোখে জল দেখে চমকে উঠল রুদ্র। কাঁদছিল নাকি মেয়েটা? রুদ্র অস্হির গলায় বলল, ‘ কী হয়েছে প্রিয়? কাঁদছো কেন? আমি কোনভাবে হার্ট করেছি তোমাকে? আ’ম সরি। কিন্তু কেঁদোনা।’
প্রিয়তা কিছু না বলে বুকে মাথা রেখে বলল, ‘ আমাকে কখনও ছেড়ে যাবেন না তো?’
রুদ্র দুই হাতে জড়িয়ে নিল প্রিয়তাকে। একহাত প্রিয়তার মাথায় রেখে বলল, ‘কখনও না। হঠাৎ এমন অদ্ভুত ভাবনা কেনো এলো? বিশ্বাস করোনা আমাকে?’
‘ নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি।’ অকপটে বলল প্রিয়তা।
‘ তাহলে?’
প্রিয়তা কিছু বলল না। কিছুক্ষণ কেটে গেল নিরবে। রুদ্র প্রিয়তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলল, ‘ছাড়ো এসব কথা। তোমার জন্যে কিছু আছে।’
কথাটা বলে একহাতে ট্রাউজারের পকেটে হাত গলিয়ে একটা পেন্ডেন্ট বের করল রুদ্র। সোনার। সেটা প্রিয়তার গলায় পরিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘বিয়ের পর আমার দেওয়া প্রথম উপহার। কখনও খুলবেনা এটা।’
প্রিয়তা নিজের গলায় হাত রেখে মৃদু হেসে তাকাল রুদ্রের দিকে। রুদ্রের ঠোঁটেও মুচকি হাসি ঝুলে আছে। প্রিয়তা আবার মাথা রাখল রুদ্রের বুকে। পরম নিশ্চিন্তে বন্ধ করে ফেলল চোখজোড়া। রুদ্রও জড়িয়ে ধরল প্রিয়তাকে। কিন্তু এবারের আলিঙ্গনে কেঁপে উঠল প্রিয়তা। অসাড় হয়ে এলো সর্বাঙ্গ। রুদ্রের শরীরের উষ্ণতায় সব এলোমেলো হয়ে গেল। সমগ্র জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিল ওরা নিজেদের।
প্রথম রাতে বেশ গরম পড়লেও, শেষরাতে মেঘ ডাকল, বিদ্যুৎ চমকালো, দীর্ঘক্ষণ চলল ঝড়ের তান্ডব। অবশেষে শান্ত, কোমল, উজ্জ্বল ভোর দিয়েই সূচনা হল নতুন একটি দিনের।
#চলবে…
[ রি-চেইক করিনি।]