#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৪৫.
সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ন’টার দিকে প্রিয়তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেছে রুদ্র। সোজা আমের ফাউন্ডেশনে এসেছে। রাশেদ আমেরের সঙ্গে গোপন কিছু আলাপ ছিল। আলোচনা শেষে ঠিক সাড়ে দশটার দিকে নিচে নেমে এলো রুদ্র। বাইরে আসতেই পা থেমে গেল ওর। পুলিশের জিপ থেমেছে আমের ফাউন্ডেশনের সামনে। ইন্সপেক্টর আজিজ নেমে এলেন জিপ থেকে। রুদ্রও এগিয়ে গেল। আজিজের সামনে গিয়ে দুটো পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল, ‘কেমন আছেন, স্যার? সব ভালো?’
আজিজ হেসে বলল, ‘ভালো। তোমার কী খবর?’
রুদ্রও হেসে বলল, ‘ চলে যাচ্ছে। হঠাৎ দর্শন দিলেন যে? ঐ মেইডের খুন বা পারভেজের নিখোঁজ হওয়ার ব্যপারে নতুন কোন খবর?’
‘ দুর্ভাগ্যজনকভাবে না। কিন্তু একটা থিওরি ভেবেছি।’
‘ থিওরি?’
‘ পারভেজ নিজেই তোমাদের সাথে বিট্রে করছিল। তোমাদের মেইডকে মেরেছিল পারভেজ। আর পারভেজকে তুমি। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি।’
রুদ্র দু আঙ্গুলে নাক চুলকে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে বলল, ‘ভালো থিওরি। আপনি আপনার থিওরি প্রুভ করুন। আমি ততদিনে একটা টুর দিয়ে আসি।’ এরপর নিজের হাতঘড়ির দেখে বলল, ‘ দেরী হচ্ছে। যেতে হবে আমায়। আপনার আমাকে আর কিছু বলার আছে?’
ইন্সপেক্টর শান্ত গলায় বলল, ‘ না। তোমার বাবার সঙ্গে কথা ছিল।’
রুদ্র ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘ভেতরেই আছেন। যান। আমি চলি। দেখা হবে আবার।’
কথাটা বলে অপেক্ষা করল না রুদ্র। নিজের জিপে উঠে বেরিয়ে গেল। ইন্সপেক্টর আজিজ স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন। তার এতবছরের ক্যারিয়ারে এমন আত্মবিশ্বাসী ক্রিমিনাল সে দুটো দেখেনি। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে ভয় হচ্ছে। সে জানে যে পাহাড় যত বেশি শক্ত, তাকে ধ্বংস করতে তত শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়। আর যত শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, ধ্বংস তত বেশি প্রলয়ঙ্করী হয়।
*
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। রোদের দর্শন মেলেনি আজ। বৃষ্টি থামার নাম-ই নিচ্ছে না। একটা দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে উচ্ছ্বাস। দৃষ্টি ইউনাইটেড হসপিটালের গেইটের দিকে। ওর জানামতে আজ নাজিফার এখনই বের হওয়ার কথা। হাতে ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে এসেছে। নাজিফাকে একটাবার দেখেই ফিরে যাবে। অনেকক্ষণ হলো গেইটের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাজিফার বের হওয়ার আশায়। হঠাৎই ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিল কেউ। উচ্ছ্বাস তাকিয়ে দেখল নাজিফা। নাজিফাকে এখানে দেখে হকচকিয়ে গেল উচ্ছ্বাস। কী বলবে, কী করবে বুঝতে পারল না। নাজিফা হাত ভাঁজ করে বলল, ‘এখনও বলবে তুমি আমাকে দেখতে আসোনা?’
উচ্ছ্বাস শুকনো এক ঢোক গিলল। দৃষ্টি স্হির রাখতে পারছে না। জড়ানো গলায় বলল, ‘ আ-আমি সিগারেট কিনতে এসেছিলাম।’
‘ আচ্ছা? সিগারেটের প্যাকেটটা বুঝি হসপিটালের গেইট থেকে কেউ ছুড়ে দেয়?’
উচ্ছ্বাস কিছু না বলে চোখ নামিয়ে নিল। নাজিফা তাকিয়ে আছে উচ্ছ্বাসের দিকে। অবস্থা বেগতিক দেখে চলে যেতে নিচ্ছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু পারল না। নাজিফা তার হাত ধরে নিয়েছে। উচ্ছ্বাস হতভম্ব হয়ে চারপাশে তাকাল। ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ কী করছো?’
নাজিফা নির্বিকারভাবে বলল, ‘আমার সাথে চলো। কথা আছে।’
‘ তোমার সঙ্গে সব কথা সম্ভবত সেদিনই শেষ হয়ে গেছে। হাত ছাড়ো। আমি কোথাও যাবোনা। ‘
‘ তাহলে আমিও ছাড়ছিনা।’
উচ্ছ্বাস একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, ‘নাজিফা সবাই দেখছে। যা-তা ভেবে নেবে। তোমাকে রোজ এখান দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বোঝ প্লিজ।’
নাজিফা নাছোড়বান্দা। সে জেদ ধরে বলল, ‘ ধৈর্যের বাদ ভেঙ্গে গেছে আমার উচ্ছ্বাস। লোকজনের পরোয়া আমি কোনদিনও করিনা। তুমি যদি না আসো, আমি রাস্তার মধ্যেই সিনক্রিয়েট করব।’
‘ নাজিফা_’
‘ আসবে?’
অসহায় দৃষ্টিতে নাজিফার দিকে তাকাল উচ্ছ্বাস। এই মেয়ে শুনবেনা ওর কথা। বাধ্য হয়ে নাজিফার সঙ্গে পা বাড়াল উচ্ছ্বাস। নাজিফা সিএনজি দাঁড় করিয়েই রেখেছিল। দুজনেই উঠে বসল। পথে কোন কথা হলোনা ওদের মধ্যে। একটা পার্কের সামনে সিএনজি থামল। বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। নাজিফা নামতেই উচ্ছ্বাস বলল, ‘কী করছো নাজিফা? ভিজে যাচ্ছো।’
নাজিফা শক্ত কন্ঠে বলল, ‘ নেমে এসো।’
হনহনে পায়ে চলে গেল নাজিফা। উচ্ছ্বাস বোকা বনে গেল। হতভম্ব হয়ে কোনমতে ভাড়া মিটিয়ে ছুটলো নাজিফার পেছনে।
পার্কের পাশে বিশাল এক মাঠ আছে। বৃষ্টির মাত্রা বেড়েছে তাই রাস্তাটা ফাঁকা। ওখানে পৌঁছতে পৌঁছতে দুজনেই ভিজে চুবচুবে হয়ে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় মাঠের মাঝখানে চলে গেল ওরা। তখনই দাঁড়িয়ে গেল নাজিফা। উচ্ছ্বাসও দাঁড়াল। অধৈর্য হয়ে বলল, ‘নাজিফা কী করছো তুমি? নিজেও ভিজছো, আমাকেও ভেজাচ্ছো। কী বলবে?’
নাজিফা উচ্ছ্বাসের চোখে চোখ রেখে বলল, ‘তুমি সত্যিই জানোনা আমি কী বলবো? দুইমাস, দুইমাস যাবত একটা কথাও বলোনি আমার সঙ্গে। ফোন রিসিভ করোনি। দেখা দিতে চাওনি। কোনভাবে আমার চোখে পড়ে গেলেও এরিয়ে চলে যাচ্ছো। আর এখন জিজ্ঞেস করছো কী বলব?’
‘ আমাদের সব কথা দুই মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে নাজিফা। তোমার প্রতি খানিকটা অ্যাট্রাকশন ছিলো আমার। কিন্তু ইদানিং তোমাকে আমার ভালো লাগছেনা। তাই কথা বলতে চাইনা তোমার সাথে। বলেছিতো ক্লিয়ার করে। আর কী শুনতে চাও?’
‘ সবটা যদি ক্লিয়ার করতে পারতে তাহলে আমি আর আসতাম না। কিন্তু তুমি সবটা ক্লিয়ার করতে পারোনি। অ্যাট্রাকশন! ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকোএকটাবার আমাকে চোখের দেখা দেখার জন্যে। সেটা অ্যাট্রাকশন? বিভিন্ন সিম দিয়ে আমাকে কল করো একবার আমার কন্ঠস্বর শোনার জন্যে। অ্যাট্রাকশন বলে? গাধী মনে হয় আমাকে? কপালে সিল দেওয়া আছে?’
চোখ বন্ধ করে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলল উচ্ছ্বাস। হাত দিয়ে ভিজতে থাকা চুলগুলো উল্টে ধরে বলল, ‘এসব নিয়ে আলোচনা আর ভালো লাগছেনা নাজিফা। প্লিজ। বাদ দাও। ভিজে যাচ্ছো। ঠান্ডা লেগে যাবে, চলো।’
বলে নাজিফার হাত ধরে যেতে নিলে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল নাজিফা। উচ্ছ্বাস হতাশভাবে ঘুরে দাঁড়াল। নাজিফা কঠিন গলায় বলল, ‘ভালোবাসো?’
উচ্ছ্বাস কিছু বলতেই যাচ্ছিল। কিন্তু নাজিফা ওর কলার ধরে কাছে টেনে নিয়ে এলো। চোখে চোখ রেখে বলল, ‘সত্যিটা বলবে। ডু ইউ লাভ মি?’
উচ্ছ্বাস কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, ‘বড্ড বেশি জেদি তুমি।’
কিন্তু নাজিফা আওয়াজ আরও বাড়িয়ে বলল, ‘ ডু ইউ?’
উচ্ছ্বাস তাকিয়ে রইল নাজিফার চোখের দিকে। বৃষ্টির প্রকোপে নাজিফার চোখের পাতা, ঠোঁট বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। উচ্ছ্বাসের পক্ষে আর সম্ভব হলোনা। অস্হির গলায় বলল, ‘ ইয়েস আই ডু। ভালোবাসি তোমাকে।’
নাজিফা ধীর গতিতে চোখ বন্ধ করল। উচ্ছ্বাস বলল, ‘ কিন্তু নাজিফ_’
আর কিছু বলতে পারল না উচ্ছ্বাস। তার আগেই নাজিফা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল উচ্ছ্বাসকে। উচ্ছ্বাস হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নাজিফা বিরক্ত হয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘জড়িয়ে ধরবে নাকি ধাক্কা দিয়ে কাদায় ফেলে দেব?’
উচ্ছ্বাসের ঘোর কাটল। আস্তে করে জড়িয়ে ধরল নাজিফাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাতের বাঁধন শক্ত হলো। বৃষ্টির প্রতিটা শীতল ফোঁটা যেন পুষ্প হয়ে ওদের ওপর বর্ষিত হচ্ছে। জগতের সব ভুলে গেছে ওরা। মিশে যাচ্ছে একে অপরের সঙ্গে। নাজিফা মোলায়েম গলায় বলল, ‘আমিও ভালোবাসি।’
মাথা তুলে একবার মেঘলা আকাশ দেখে নিল উচ্ছ্বাস। তারপর হেসে বলল, ‘তোমার এই জেদ সামলাতে সামলাতেই আমার জীবন পাড় হয়ে যাবে।’
*
চারদিন পরের কথা। প্রিয়তার কাছে মোটেও সহজ ছিলোনা চারটা দিন। একটা রাতও শান্তিতে ঘুমোতে পারেনি সে। রুদ্র এখনো ফেরেনি। প্রথম দুদিন ফোনে কথা হলেও এরপর থেকে ফোন বন্ধ। রাশেদ, জাফর, উচ্ছ্বাস কারো কাছেই কোন খবর নেই। যদিও ওরা বলেছে, এরকম মাঝেমাঝেই হয়। চিন্তা না করতে। কিন্তু তাতেও প্রিয়তার অস্হিরতা একফোঁটাও কমেনি।
রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়তা শসা কাটছে। কাটতে কাটতে গভীরভাবে ভাবছে কিছু একটা। অসাবধানতাবশত হাতে লেগে গেল। মৃদু আর্তনাদ করে উঠল প্রিয়তা। পাশেই জ্যোতি বড় পাত্রে মাংসের তারকারি রাখছিল। প্রিয়তা আওয়াজ শুনে চমকে তাকিয়ে দেখল ওর তর্জনী আঙুল কেটে রক্ত বের হচ্ছে। জ্যোতি দ্রুত ওর হাত ধরে বলল, ‘তোমাকে বললাম আজ এসব রাখো। ঘরে অনেকে আছে করে দেবে। অন্যমনস্ক থেকে এসব করা যায়?’
বলে একটা টুল টেনে এনে প্রিয়তাকে বসিয়ে দিলে। এরপর গিয়ে ড্রয়ার খুলে ফার্স্ট এইড বক্সটা বের করল। নিজেও একটা টুল টেনে বসল প্রিয়তার পাশে। আঙুলে ঔষধ লাগিয়ে দিতে দিতে কঠোর গলায় বলল, ‘এখন আর কিছু করতে হবেনা। সোফায় গিয়ে বসবে চুপচাপ। বাড়ির বউ তুমি মানলাম। তাই বলে সবসময় পাকামো করতে হবে কেন?’
জ্যোতির বকা শুনে প্রিয়তা মুখ কালো করে বসে রইল। প্রিয়তার কালো মুখটা দেখে জ্যোতি গলা ঝেড়ে বলল, ‘এতো চিন্তা করার কিছু নেই। দেখবে হুট করে এসে হাজির হবে।’
প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল, ‘তোমরা সবাই এতো নিশ্চিন্ত কীকরে? দুদিন যাবত কল ধরছেনা। তোমাদের চিন্তা হচ্ছে না?’
জ্যোতি হাসল। ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের জন্যে এটা নতুন কিছু না। এরকম প্রায়ই হয়। তোমাকে তো তাও দুদিন কল করেছে, ধরেছে। ও তো কখনও আমার কলই ধরতোনা। আমি অনেক বেশি দিলে বাধ্য হয়ে মাঝেমাঝে ধরে হাই-হ্যালো বলে রেখে দিতো। আর ফিরে আসতো হাতে-পায়ে ছোট-বড় ইঞ্জুরি নিয়ে। এসবে এখন আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’
প্রিয়তা এতক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল জ্যোতির কথা। জ্যোতি কথা থামাতেই বলল, ‘ খুব ভালোবাসো ওনাকে?’
জ্যোতি চমকে তাকাল প্রিয়তার দিকে। দু চোখে বিস্ময়। প্রিয়তা মলিন হাসি দিল। নিচের দিকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ আমিও একজন মেয়ে আপু। অন্য একটা মেয়ের অনুভূতি বুঝব না? আর সেই অনুভূতিটা যখন আমার স্বামীর জন্যে হয়।’
জ্যোতি হাঁসফাঁস করল কয়েকসেকেন্ড। কী বলবে, কী প্রতিক্রিয়া দেবে বুঝতে পারল না। জ্যোতির উত্তর না পেয়ে প্রিয়তা আবার বলল, ‘আমার ওপর রাগ হয় জ্যোতি আপু? এরকম মনে হয়, আমি তোমার সঙ্গে অন্যায় করেছি?’
জ্যোতি কোন উত্তর দিলোনা। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল। টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়ে বলল, ‘দেরী হয়ে যাচ্ছে প্রিয়তা। একটু পরে রাশেদ বাবা চলে আসবে। তুমি গিয়ে বসো। আমি আসছি।’
প্রিয়তা আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ উঠে চলে গেল হল রুমের দিকে।
গভীর রাত। ঘুমের মধ্যে প্রিয়তার মনে হলো ঘুমের মধ্যে কিছু একটা পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে ওকে। নড়তে পারছেনা। কিন্তু সেই উষ্ণ আলিঙ্গনে উপভোগ করতে মন চাইল ওর। বেশ আরামবোধ করল। তাই আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে চাইছিল। হঠাৎ টনক নড়ল প্রিয়তার। ওতো ঘরে একা শুয়ে ছিল। রুদ্রর কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাহলে ঘরে কে? ঝট করে চোখ খুলে তাকাল প্রিয়তা। নাকে এসে বাড়ি খেল খুব পরিচিত ঘ্রাণ। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো দুহাতে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে এক সুঠামদেহী পুরুষ। রুদ্র আমের। বিস্ময়ে কয়েক সেকেন্ড নড়তে পারল না প্রিয়তা। এরপর ঝট করেই উঠে বসল। হঠাৎই উঠে বসায় রুদ্রও চমকে উঠল। এখনো ঘুমোয়নি ও। ফ্রেশ হয়ে, প্রিয়তাকে জড়িয়ে চোখ বুজে ছিল কেবল। প্রিয়তাকে অবাক হতে দেখে হাসল রুদ্র। হাত বাড়িয়ে টেনে প্রিয়তাকে নিজের বুকে এনে ফেলল। আয়েশ করে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তো মিসেস! কেমন কাটলো চারটা দিন?’
প্রিয়তা উত্তর দিলোনা। কিছুক্ষণ পর রুদ্র অনুভব করল রুদ্রর বুক ভিজে যাচ্ছে। কাঁদছে প্রিয়তা। রুদ্র গম্ভীর হয়ে উঠল। গম্ভীর গলায় বলল, ‘কান্না থামাও প্রিয়। আমি চলে এসেছিতো।’
প্রিয়তা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, ‘তাই বলে দুটো দিন কোন যোগাযোগ করবেন না? জানেন কত টেনশন করছিলাম আমি।’
‘ আসলে ফোন ধরা বা করার মতো অবস্থায় ছিলাম না আমি। বিশ্বাস করো। আর এরকমটাতো প্রায়ই হয়। কেউ বলেনি তোমাকে?’
‘ বলেছে। কিন্তু আমারতো চিন্তা হয়। আর আগে যা হতো এখনও সেটাই হবে না-কি? ভুলে যাবেন না এখন আপনি বিবাহিত। এখন আগের মতো সব হবেনা। পরবর্তীতে এমন করলে আমি ঘরে ঢুকতে দেবোনা বলে দিলাম।’
নাক টানতে টানতে শাসনের ভঙ্গিতে কথাগুলো বলছিল প্রিয়তা। রুদ্র হাসল। মজার ছলে বলল, ‘ঘরে ঢুকতে না দিলে আর কী করব? অন্য কোথাও গিয়ে অন্যকারো সাথে_’
কথা সম্পূর্ণ করতে পারল না রুদ্র। বুকের ওপর দারুণ এক কিল পড়ল। প্রিয়তা জেদ করে বলল, ‘খবরদার বলছি। বিয়ের আগে যা করেছেন আমি ভুলে গেছি। কারণ সেটা অতীত ছিল। এখন সেসব কিছু চিন্তা করলে খু’ন করে ফেলব আপনাকে আমি।’
‘মজা করছিলাম, প্রিয়। আমি লুকিয়ে কিছু করিনা। তোমার কাছে বরাবরই আমি খোলা বইয়ের মতো। শুধু একটা সিক্রেট অধ্যায় আছে। সেটা তোমার না জানাই ভালো। তোমার পরে অন্যকোন নারীকে ছোঁয়ার দুঃসাহস হবেনা আমার। এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।’
প্রিয়তা মুচকি হাসল। হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করল রুদ্রর গাল, ঠোঁট, গলা। মুখে বলল, ‘খেয়েছেন রাতে? নাকি আনবো?
‘ রাস্তায় খেয়ে নিয়েছি। আর হ্যাঁ, এরপর আর কখনও সবজি কাটতে যাবেনা তুমি। কতখানি কে’টে ফেলেছো আঙুলটা।’ চোখ বুজে প্রিয়তার ছোঁয়াকে উপভোগ করে বলল রুদ্র।
রুদ্রর কাঁধে হাত যেতেই প্রিয়তা থেমে গেল। কাগজ জাতীয় কিছু একটা অনুভব করল কাঁধে। একটু ভালোভাবে ছুঁয়েই বুঝে ফেলল এটা ব্যান্ডেজ। নিশ্চিত হতে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখল। সেটা দেখে প্রিয়তা ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘ব্যান্ডেজ কেন? কী হয়েছে?’
রুদ্র প্রিয়তাকে শান্ত করে বলল, ‘কিছুই না। একটু চোট লেগেছে।’
প্রিয়তার বুঝতে বাকি রইল না কিছু। ব্যান্ডেজটা অনেকটা জায়গা নিয়ে করা। নিশ্চয়ই কেউ আঘাত করেছে। আবার সেই খু’ন-খারাবি, অ’স্ত্র, র’ক্ত। হতাশ এক নিঃশ্বাস ফেলল প্রিয়তা। বেদনাত্মক স্বরে বলল, ‘এগুলো ছেড়ে দেওয়া যায়না? আপনাদেরতো ব্যবসা আছেই। কী দরকার এসবে থাকার। ফিরে আসুন না।’
রুদ্র এই বিষয়ে ভালো-মন্দ কিছুই বলল না। শুধু বলল, ‘অনেক রাত হয়েছে। আমিও ক্লান্ত। ঘুমিয়ে পড়ো। কাল কথা হবে।’
প্রিয়তা পেয়ে গেল নিজের উত্তর। অস্হির লাগছে ওর। রুদ্র ঠিক বলেছিল, যতটা সহজ প্রিয়তা ভেবেছিল ততটা সহজ হবেনা সবকিছু। হচ্ছেনা। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে প্রতি মুহূর্তে মৃ’ত্যুর দিকে এগোতে দেখা যন্ত্রণার। ভয়ানক যন্ত্রণার। প্রিয়তার অস্হিরতা টের পেল রুদ্র। মেয়েটাকে স্হির করতে হবে। নয়তো সারারাত ঘুমোবেনা। বুকের ওপর থেকে সরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল রুদ্র ওকে। ভেজা চোখদুটো আলতো হাতে মুছে দিল। ড্রিম লাইটের আলোয় সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিয়তার চোখে।
*
পরেরদিনটা ছিল কুহুর জন্যে অবাক হওয়ার দিন। আমের ভিলার সকলে সবে সকালের খাবার খেয়েছে। তখনই রাশেদ আমের ঘোষণা দিলেন, আজ কারো বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। সবাই বাড়িতেই থাকবে। রাশেদের হঠাৎ এমন ঘোষণায় সকলে অবাক হলেও কিছু বললেন না।
বৈঠকঘরে না ডেকে রুদ্র, উচ্ছ্বাস আর জাফরকে নিজের ঘরে ডেকে নিলেন রাশেদ। রাশেদ নিজের ইজি চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে অভ্যাসবশত সিগারেট ধরালেন। দু-তিনটে টান দিয়ে গুছিয়ে নিলেন নিজের কথাগুলো। তারপর রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘কাজ শেষ হয়েছে?’
‘ জ্বি বাবা। প্যাকেটগুলো নিয়ে এসছি আমি।’
‘ দলের প্রধান কেউ ছিল? না-কি সব চ্যালা?’
‘ সম্রাট ছিলো।’
উচ্ছ্বাস আর জাফর দুজনেই চমকেছে। রাশেদ নির্বিকারভাবে বললেন, ‘বেঁচে আছে?’
‘আছে। কিন্তু ঘায়েল। আপনি বলেছিলেন বলে প্রাণে মারিনি।’
রাশেদ কোন উত্তর দিলেন না। চোখ বন্ধ করে মনে পরপর কয়েকটা টান দিলেন সিগারেটে। মনে পড়ে গেল করিম তাজওয়ারের বলা সেই কথা, ‘ভবিষ্যতে এমন আদেশ কোনদিন রুদ্রকে দেবেন না। কারণ ভবিষ্যতে কোনদিন যদি শত্রুকে প্রাণ ভিক্ষা দেওয়ার ভুলটা ও করে। সেটাই ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হবে। যার মাশুল গোটা সোলার সিস্টেমকে দিতে হবে। আফসোস করার সময়টুকুও পাবেনা কেউ। সব শেষ হয়ে যাবে।’ কিন্তু প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘নাঈমুর রহমানের কথা মনে আছে?’
‘ বিজনেস পার্টনার?’
‘ হ্যাঁ। তার ছেলে, নীরব। কুহুর ভার্সিটিতেই ছিল। এবছর মাস্টার্স পাশ করেছে। কুহুর সঙ্গে ওনার ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিল। আমি এখনো কিছু বলিনি। তোমার আসার অপেক্ষা করছিলাম। উচ্ছ্বাস আর জাফর জানে সবটা। ওদের কোন সমস্যা নেই।
রুদ্র চুপচাপ সব কথা শুনলো। এরপর বলল, ‘আসলে বাবা আমিও আপনার সঙ্গে এ বিষয়েই কথা বলতাম। কুহু এ ব্যাপারে আপনার প্রিয়তার সঙ্গে কথা বলেছিল। ও আমাকে বলেছে ব্যপারটা। নীরব আর কুহু একে অপরকে পছন্দ করে। আমি ওর সম্পর্কে যতটা জানি, ছেলে ভালো। ভেবেছিলাম এসে রিল্যাক্সে আপনার সঙ্গে আলোচনা করব।’
উচ্ছ্বাস বলল, ‘ আর আমি খোঁজ নিয়েছি। সত্যিই ছেলেটা ভালো।’
রাশেদ বললেন, ‘বছর দুয়েকের জন্যে ইন্ডিয়া যাচ্ছে ও। নাঈমুর চাইছে ও যাওয়ার আগে বাগদান হয়ে থাক।’
জাফর প্রসন্ন গলায় বলল, ‘ছেলে-মেয়ে দুজনেই যখন একে অপরকে পছন্দ করেছে তখন আর সমস্যা কোথায়?’
রাশেদ আরেকটু ভাবলেন। অ্যাশট্রেতে সিগারেট ফেলে দিয়ে বললেন, ‘কালকে ফ্লাইট আছে নীরবের। তাই বাগদানটা আজ বিকেলের মধ্যেই হয়ে যাওয়া ভালো। রুদ্র, তুমি প্রিয়তাকে বলো কুহুর সঙ্গে আরও একবার কথা বলে নিতে।’
রুদ্র মাথা নাড়ল। রাশেদ জাফরকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘সিঙ্গাপুর কর করে জানিয়ে দিস। রুদ্রর বিয়েতো ওরা এলোনা।’
জাফর খানিকটা ইতস্তত করল। লজ্জিত গলায়, ‘আপনিতো জানেনই ভাইজান ওরা এ বাড়িতে আসতে পছন্দ করেনা। আমাদের কাজটাকেই পছন্দ করেনা। তাই_’
রাশেদ জাফরকে আর কিছু বলল না। রুদ্রকে বলল, ‘কাঁধের ইঞ্জুরিটা দেখেশুনে রেখো। ইনফেকশন যাতে না হয়। অনেক কাজ আছে।
রুদ্র উত্তর দিলোনা। মৃদু হাসল কেবল।
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় পারিবারিকভাবে, খুব ছোট করে নীরব আর কুহুর বাগদান হয়ে গেল। কুহুর সে কী লজ্জা। প্রিয়তা যখন কুহুকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল, কুহু একদম আকাশ থেকে পড়েছিল। এতো তাড়াতাড়ি এসব হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি ও। নীরবকে বারবার মেসেজ করছিল। শেষে নীরবের শুধু একটাই রিপ্লে ছিল, ‘ কামিং সুইটহার্ট।’ মেসেজটা দেখে হেসে ফেলেছিল কুহু। লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছিল চোখ-মুখ।
বাগদান শেষে করিডরের বারান্দায় ওদের দুজনকে কথা বলার জন্যে পাঠানো হলো। করিডরে পৌঁছেই কুহু এগিয়ে গিয়ে পরপর তিন-চারটা কিল বসালো নীরবের বুকে। নীরব ওর দু হাত ধরে আটকে দিয়ে বলল, ‘এগুলো কী হ্যাঁ? হবু বরকে মারতে হয়?’
কুহু মুখ ফুলিয়ে, হাত ভাঁজ করে, উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে রইল। নীরব কুহুকে নিজের দিকে ঘোরালো। কাছে টেনে বলল, ‘বলেছিলাম না সারপ্রাইজ আছে। জানো কতকিছু করতে হয়েছে এর জন্যে আমাকে? প্রথমে আমার বাবাকে মানাতে হয়েছে। এরপর আমার বাবাকে দিয়ে তোমার বাবাকে মানাতে হয়েছে। তোমার বাবার আবার তোমার ভাইকে মানাতে হয়েছে। বিয়েতো না যেনো যুদ্ধ!’
কুহু হেসে না বোধক মাথা নাড়াল। নীরব ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কী না?
কুহু ফোন বের করে মেসেজ লিখল, ‘আমার আবার ভাবিকে মানাতে হয়েছে। ভাবি মানিয়েছে ভাইয়াকে।’
সেন্ট করে হেসে ফেলল কুহু। মেসেজ দেখে নীরবও শব্দ করে হেসে ফেলল। হঠাৎ কিছু একটা চিন্তা করে কুহুর হাসি থেমে গেল। ফোনে কিছু লিখতে গেলে নীরব হাত ধরে ফেলল। বলল, ‘আমি জানি তুমি কী ভাবছো। বাড়ির সবাই রাজি হলো কীকরে? তাইতো?’ একটু থেমে, ‘সত্যিটি বলবো?’
কুহু মাথা ঝাঁকালো। নীরব সযত্নে কুহুর চুল ঠিক করে দিতে দিতে বলল, ‘আমার খুশিটাই আমার বাবা মায়ের কাছে সব। যদিও মা প্রথমে একটু হিঁচকিচ করছিল। কিন্তু বাবার কোন আপত্তি ছিলোনা। বাবাই মা-কে মানিয়ে নিয়েছে। এন্ড ইউ নো হোয়াট? তোমাকে দেখে মায়ের মনের হিঁচকিচও দূর হয়ে গেছে। সত্যি বলছি।’
কুহু মাথা নিচু করে হাসল। নীরব বলল, ‘আর দ্বিতীয় প্রশ্ন। আমি এতো তাড়াহুড়ো করে এনগেইজমেন্ট কেন করলাম? এটাই বলবে তো?’
কুহু তাকাল নীরবের দিকে। নীরব কুহুর দু গালে হাত রেখে বলল, ‘ আমি দুবছরের জন্যে বাইরে চলে যাচ্ছি। রিস্ক নিতে পারব না। এতোদিনে যদি অন্যকেউ তোমাকে বুক করে নেয় তো? আমার কী হবে?’
কুহু আবার হেসে ফেলল। নীরব কুহুর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘খুব মিস করব তোমাকে। আমার নীরবতাকে।’
.
নীরব রা একেবারে রাতের খাবার খেয়ে গেল। প্রিয়তা দুটো প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে আসছিল। এসে শুনতে পেল এঁটো বাসন গোছাতে গোছাতে কথা বলছে নার্গিস আর আরেকজন মহিলা। নার্গিস বলছে, ‘এ বিয়ে টিকবে বলে মনে হয়? আজ আছে কাল নেই। অমন বোবা মেয়েকে কদিন ঘরে রাখে দেখো। এখন আল্লাদ করে নিচ্ছে। দুদিন পর লাথি দিয়ে বের করে দেবে। কত দেখলাম।’
অপর মহিলা রেগে গিয়ে বলল, ‘ কীসব বলছো? মুখ ভালো হলোনা তোমার। কুহু মার মতো মেয়ে কটা হয়? আমার ঘরে এমন মেয়ে এলেতো আমি মাথায় তুলে রাখতাম।’
প্রিয়তা শব্দ করে পা ফেলে ভেতরে ঢুকল। ওকে দেখে থেমে গেল দুজন। প্রিয়তা প্লেট দুটো নার্গিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ সবাই মনে আবর্জনা নিয়ে ঘোরেনা আন্টি। চাঁদে কালো দাগ থাকে, গোলাপেও কাঁটা থাকে। যাদের আত্মায় সিগ্ধতা আর সৌন্দর্য থাকে তারা চাঁদে সিগ্ধ আলো আর গোলাপে সৌন্দর্য দেখতে পায়। কিন্তু আত্মা দূষিত হলে, দাগ আর কাঁটা ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনা।’
কথাটা বলে প্রিয়তা আর দাঁড়াল না। হনহনে পায়ে বেরিয়ে গেল। নার্গিস মুখ কালো করে কাজে হাত লাগালো। অপর মহিলাটি নার্গিসের এমন হেনস্তা দেখে মনে মনে ভীষণ আনন্দ পেলো। ভাবল, একদম উচিত কথা শুনিয়ে দিয়েছে নতুন বউ।
*
রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। রুদ্র ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে দেখল প্রিয়তা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শরীরে লোশন লাগাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্লান্ত ও। প্রিয়তা গলায় লোশন লাগাচ্ছিল এমন সময় পেছন থেকে ওর পেট জড়িয়ে ধরল রুদ্র। প্রিয়তা বলল, ‘লোশন লাগাচ্ছি দেখছেন না? ছাড়ুন। এখন কাঁধের ব্যথা চলে গেছে আপনার?’
‘ প্রিয়র স্পর্শে রুদ্র সব ব্যথা ভুলে যায়।’
প্রিয়তা মুচকি হাসল। তবুও কৃত্রিম বিরক্তি দেখিয়ে বলল, ‘হয়েছে, ছাড়ুন এবার।’
রুদ্র প্রিয়তাকে ছেড়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রিয়তা লোশন লাগিয়ে, লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল। দুই মিনিট পর এগিয়ে গিয়ে মাথা রাখল রুদ্রর বুকে। রুদ্র প্রিয়তার চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল। প্রিয়তা বলল, ‘একটা কথা ভাবছিলাম।’
‘ কী কথা?’
‘ নীরবের সঙ্গে কুহুর বিয়েটা এখন হয়ে গেলেই ভালো হতো।’
‘ এমন কেন মনে হলো?’
‘ দুটো বছর তো অনেকটা সময় তাইনা? তাই বললাম।’
‘ এখনতো আর সম্ভব না। নীরবের ফ্লাইট কাল।’
‘ হুম।’
রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘ আজ ওকে এতোটা খুশি দেখে নিজেকে হালকা লাগছে জানো? আমার আর বাবা- ওকে নিয়েই যত চিন্তা ছিল। খুব যত্নে বড় করেছি ওকে আমরা। অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হয়েও ওর গায়ে কোন কালো ছায়া পড়তে দেইনি।’
প্রিয়তা তপ্ত এক শ্বাস ফেলে বলল, ‘সেটা আমি বুঝেছি এই কদিনে। আজ আমারও ভালো লাগছে। খুব খুশি ছিল মেয়েটা।’
পরিবেশটা কেমন ভারী হয়ে উঠল। তাই প্রসঙ্গ বদলাতে রুদ্র হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা প্রিয়, ধরো যদি হঠাৎ আমার কিছু হয়ে যায়। তখন তুমি কী করবে? বাবা কিন্তু বলেছিল তোমার বিয়ে দেবে।’
প্রিয়তা রুদ্রর বুকে আঘাত করে বলল, ‘ধ্যাত!’
রুদ্র শব্দ করে হেসে ফেলল। প্রিয়তা বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘এটা মজা করার বিষয়?’
রুদ্র প্রিয়তার গাল টেনে দিয়ে বলল, ‘যেসব কথা শুনলে মন খারাপ হয় সেগুলো খানিকটা কৌতুক করেই বলা উচিত। আর তুমি সবসময় এতো ভয় পাও কেন? আমাকে মারা এতো সহজ হবেনা। এতো ক্ষমতা আন্ডারওয়ার্ল্ডের কারো এখনো হয়নি। আমাকে মারতে হলে বুদ্ধিতে আমার মতোই তুখোড়, আর ব্যক্তিত্বে আমার বিপরীত হতে হবে।’
প্রিয়তা কিছু বলল না। রুদ্রকে জড়িয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করল। রুদ্র অন্য চিন্তায় মগ্ন হলো। শওকত মীর্জার ব্যপারটা ভাবাচ্ছে ওকে। সামনে থেকে আঘাত করা শত্রুকে প্রতিহত করা যায়। কিন্তু পেছন থেকে হামলাকারী শত্রুর মোকাবেলা সহজ হবেনা। সামনের দিনগুলো কঠিন হতে চলেছে। খুব কঠিন।
#চলবে…
[ রি-চেইক করিনি। বড় একটা পর্ব দিয়েছি কিন্তু আজ। সকলের রেসপন্স আর গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।]