#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৪৭ (১)
বারো তলা বিল্ডিং এর ছাদে বেতের চেয়ারে গা ছেড়ে বসে আছে শান। এক হাতে মদের গ্লাস, অন্য হাতের আঙ্গুলের মাঝে জ্বলন্ত সিগারেট ধরা আছে। জীবনের সবচেয়ে অসহ্যকর সময় পাড় করছে সে এখন। একটু আগে শওকত মীর্জা ফোন করেছিল। বারবার বলে দিয়েছে ফ্ল্যাট থেকে বের না হতে। দরজা জানালা সব বন্ধ করে রাখতে। সঙ্গে দিয়েছে তার কাকা পলাশ মীর্জার মৃত্যু সংবাদ। কাকার মৃত্যু নিয়ে শোক নেই তার। কোথাকার কে, তারজন্যে তাকে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। এটাই তার সমস্ত বিরক্তির কারণ। ও শান মীর্জা। ও কেন কারো ভয়ে লুকিয়ে থাকবে। নিজের অপার সাহস প্রদর্শনের জন্যেই বাবার আদেশ অমান্য করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে এসেছে। এটাই প্রমাণ করতে যে সে কারো ধার ধারেনা। তাকে মারার ক্ষমতা কারো নেই। তবে বিল্ডিং থেকে বের হয়নি। শান স্বীকার না করলেও পলাশ মীর্জার খু’ন ওর মনে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। যখন শুনেছে খু’নি শওকতকে কল করে পলাশের আর্তনাদ শুনিয়েছে, তখন ভয়ের মাত্রা আরও বেড়েছে। চোখের সামনে নৃশংস অতীত ভেসে আসছে। এরকম নৃশংসতাতো তারাও করেছিল কারো সাথে। এক নিঃশ্বাসে গ্লাসে পড়ে থাকা বাকি মদটুকু গিলে নিলো শান। তখনই গম্ভীর কন্ঠে কেউ বলে উঠল, ‘জীবন কতো সুখের তাইনা?’
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে থমকে গেল শান। নড়ার শক্তি পেলোনা কয়েক সেকেন্ডের জন্যে। কিন্তু শক্ত নার্ভের কারণে মুহুর্তেই সামলে নিল নিজেকে। অবাক কন্ঠে বলল, ‘ তুমি!’
আর কিছু বলার আগেই কাঁচের বোতলের তীব্র আঘাত পড়ল শানের মাথায়। আকস্মিক আঘাতে হতভম্ব হয়ে গেল শান। চোখে সর্ষে ফুল দেখল। চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো।
উত্তরা থেকে সাভারে পৌঁছেই উত্তেজনা বেড়ে গেল তুহিনের। গাড়ির জানালা দিয়ে একবার তাকাল বাইরে। রাত অনেক হয়েছে। তাই গাড়ি কম। তুহিন রাস্তায় নজর বুলিয়ে অন্যমনস্ক গলায় ড্রাইভারকে বলল, ‘তাড়াতাড়ি চালাও।’
তমাল ফ্রন্ট সিট থেকে পেছন ঘুরে বলল, ‘স্যার চিন্তা করবেন না। পুলিশের গাড়ি পৌঁছে গেছে এতক্ষণে।’
‘কিন্তু আমি এখনো পৌঁছতে পারিনি।’ রাস্তার দিকে ব্যস্ত চোখে তাকিয়ে বলল তুহিন।
তমাল নিজেও একবার রাস্তাটা দেখে নিলো। সত্যিই কী আজ খুনি ধরা পড়বে? পড়লেও কীভাবে পড়বে? কে হবে খুনি? রুদ্র? নাকি অন্যকেউ? এতোগুলো রহস্যময় খুনের কারণ জানা যাবে আজ। ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত রোমাঞ্চ বোধ করছে তমাল। উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করল, ‘স্যার? আপনার সত্যিই মনে হয় খু’নি কে আমরা জানতে পারব আজ?’
‘ জানিনা। তবে আমি এইটুকু মোটামুটি নিশ্চিত যে খু’নি আজ সাভারের ঐ ফ্ল্যাটে যাবে। শান মীর্জার কাছে।’
‘ ওসির কলটাও আসছেনা এখনো। আশ্চর্য! আমরা ধরতে পারব তো ওকে?’
‘পারা উচিত। না পারলে সেটা আমাদের ব্যর্থতা হবে। তবে আজ কিছুতো একটা হবে। এইটুকু নিশ্চিত। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।’
তুহিন কৌতূহলী হয়ে বলল, ‘ কী কথা স্যার?’
‘ শান মীর্জাকে আদোও জীবিত পাবোতো?’
তুহিনের কথা শুনে লোম দাঁড়িয়ে গেল তমালের। মাঘের রাত, কনকনে শীত, তারসাথে এরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি। কী হতে চলেছে আজ? শান মীর্জাকে বাঁচাতে পারবে? খুনিকে ধরতে পারবে ওরা? তমালের এসব ভাবনার মাঝেই তুহিনের ফোন বেজে উঠল। ইষৎ চমকে উঠল তমাল। তুহিনও চমকেছে। ফোনটা হাতেই ছিলো দ্রুত রিসিভ করে বলল, ‘হ্যালো?’
ওপাশ থেকে কেউ কিছু একটা বলল। যা শুনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গের তুহিনের। ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘একটা পোকাও যেন বিল্ডিং থেকে বের হতে না পারে। আমি আসছি।’
কথাটা বলে কল কেটে দিল তুহিন। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ড্যাম ইট!’
তমাল ঘাবড়ে গেল। উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘ কী হয়েছে স্যার?’
‘ তাড়াতাড়ি চল।’ অদ্ভুত ঠান্ডা কিন্তু কঠোর শোনালো তুহিনের গলা।
শানে মীর্জার ফ্ল্যাটের বিল্ডিং এর নিচে এসে থামল তুহিনের গাড়ি। দ্রুত নামল গাড়ি থেকে। পুলিশের গাড়ি দাঁড় করানো আছে নিচে। সঙ্গে একটা অ্যাম্বুলেন্স। দেখে বোঝা যাচ্ছে এইমাত্রই এসেছে। তুহিন আর তমাল দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিল তখন আবারও তুহিনের ফোন বেজে ওঠে। ইরা ফোন করছে তখন থেকে। কিন্তু তুহিন রিসিভ করেনি এতক্ষণ। এইমুহূর্তে ঝগড়া করার ইচ্ছা ওর নেই। ফ্রী হয়ে, ঠান্ডা মাথায় কথা বলে ব্যপারটা ঠিক করতে হবে। কিন্তু ইরা কল করেই যাচ্ছে। তুহিন তমালকে ভেতরে ঢোকার ইশারা করে একটু সাইডে চলে এলো। ফোনটা রিসিভ করে বলল, ‘ আমি ব্যস্ত আছি এখন। আই’ল কল ইউ ব্যাক।’
‘ জাস্ট এক মি..’
‘ ইরা বললাম পরে কল করব আমি। প্লিজ!’
‘ আমি..’
কিন্তু ইরার কথা শোনার সময় হলোনা তুহিনের। নিজের কথাটুকু বলেই ফোনটা রেখে দিল। পেছন ঘুরে দেখল রাস্তা দিয়ে একটা বাইক চলে গেল। কালো রঙের। বাইকচালকও কালো জ্যাকেট পড়া ছিল। দু সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে রইল তুহিন। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হলো ওর। ভেতর ভেতর শিরশির করে উঠল যেন। সেদিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে প্রায় দৌড়ে চলে গেল ভেতরে। গেইটের কাছে দুজন হাবিলদারকে গার্ড দিতে দেখে সন্তুষ্ট হলো। কেউ বের হতে পারেনি তাহলে।
শান মীর্জার রক্তাক্ত শরীরটা স্ট্রেচারে তুলে নিচে নিয়ে গেল পুলিশ। ছাদের চারপাশটা ভালোভাবে লক্ষ্য করল তুহিন। হেঁটে হেঁটে সবটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝল, ছাদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোন চান্স নেই। খু’নিকে সিঁড়ি দিয়েই নামতে হয়েছে এবং বিল্ডিং এর গেইট দিয়েই বের হতে হয়েছে। তুহিন চারপাশে তাকাতে তাকাতে ডাকল, ‘ওসি সাহেব।’
দ্রুত তুহিনের কাছে এগিয়ে এলো ওসি। বলল, ‘ইয়েস স্যার?’
‘ এখানে যখন পৌঁছলেন তখন শান এখানে একা ছিলেন?’
‘ জ্বি, স্যার।’
শান মীর্জা জীবিত। তারমানে পুলিশ চলে আসায় খু’নির পক্ষে মা’র্ডা’র করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ তখনও খু’নি বিল্ডিং এর ভেতরেই ছিল। তুহিন বলল, ‘গোটা বিল্ডিং চেক করেছেন?’
‘ চেকিং চলছে স্যার। এখনো অবধি পাওয়া যায়নি।’
এরমধ্যেই একজন হাবিলদার এসে হাজির হলো। হাপাতে হাপাতে বলল, ‘ স্যার পেছনের গেইটের একজন হাবিলদারকে অজ্ঞান অবস্থায় গাছের পেছনে পাওয়া গেছে।’
আঁতকে উঠলেন ওসি। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বললেন, ‘ কী বলছো? তুমি কী করছিলে?’
‘ আমিতো একটু..’ কনিষ্ঠা আঙুল তুলে দেখাল লোকটা। বলল, ‘ফিরে এসে দেখি ও নেই। তারপর একটু খুঁজতেই অজ্ঞান অবস্থায় পেছনে..’
কথাটা শেষ করতে পারল না হাবিলদার। তার আগেই ওসি ধমক দিয়ে বলল, ‘কাজের সময়ই তোমাদের ‘ইয়ে’ পায় ননসেন্স! এখন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার চেহারা না দেখে ওটার জ্ঞান ফেরাও। পেছনের গেইটে আরও দুজন পাঠাচ্ছি আমি।’
তুহিন গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘তার আর দরকার নেই। পালিয়ে গেছে ও।’
ওসি তাকিয়ে রইলেন তমালের দিকে। কিন্তু কিছু বললেন না। তুহিনের মেজাজ ভয়ানক খারাপ হচ্ছে। পরপর ন’জনকে খু’ন করেছে। এরকম একজন সিরিয়াল কিলারকে আটকাতে এতো দুর্বল লোক কারা রাখে? মজা করছে এরা সবাই ওর সাথে? কিন্তু মুখে কিছু বলল না। তমালকে বলল, ‘কালো বাইকে করে কালো জ্যাকেট পড়া একজনকে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেছি আমি। আই থিংক পেছনের গেইট দিয়ে বেরিয়ে বাইক নিয়ে সামনের রোড দিয়ে চলে গেছে। বুঝতেই পারিনি এই বিল্ডিং থেকে বেরিয়েছে।’
একটুর জন্যে! জাস্ট একটুর জন্যে খুনি হাতছাড়া হয়ে গেল ভেবে নিজেরই মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হলো তুহিনের। তুহিনের কথা শুনে তমাল কিছু একটা ভাবল। ভেবে চমকে গিয়ে বলল, ‘স্যার, আমি সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় কালো পোশাক পড়া একজনকে নামতে দেখেছিলাম।’
চমকে উঠল তুহিন। তমালের দিকে ঘুরে বলল, ‘কাকে?’
‘ আনফরচুনেটলি আমি চেহারাটা দেখতে পাইনি। তার আগেই নেমে গেছে।’
‘ থামাও নি কেন?’ ধমকে উঠল তুহিন।
‘ আমি ভেবেছিলাম নিচের ফ্লোরের কেউ। আর বাইরে গার্ডও দেখে এসছিলাম। ভেবেছিলাম বাইরে নিশ্চয়ই যাচ্ছেনা। ছাদে আসাটা বেশি ইম্পর্টেন্ট মনে হয়েছিল। তাই_’
তুহিন চোখ-মুখ খিচে দাঁড়িয়ে রইল। নিজেকে বিরত রাখল এদের কড়া কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেওয়া থেকে। জাস্ট একটুর জন্যে কেসটা সলভ হতে গিয়েও হলোনা। তখন যদি ইরার সঙ্গে কথা বলতে না যেতো তাহলে হয়তো এতো বড় ব্লান্ডারটা হতো না। ও নিজেই দেখতে পেতো খু’নিকে। তুহিন ওসিকে জিজ্ঞেস করল, ‘শওকত মীর্জাকে খবর দেওয়া হয়েছে?’
‘ইয়েস স্যার। উনি বলে দিয়েছেন তার ছেলের চিকিৎসার যাতে কোন ত্রুটি না হয়। উনি সব টাকা পাঠাবেন। আর শীঘ্রই বাংলাদেশ আসার চেষ্টা করবেন।’
ওখানকার সব কাজ সেরে নিয়ে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এলো তুহিন। এতক্ষণ একটু একটু লুকিয়ে রাখা ক্লান্তি যেন একঝাঁকে তীব্রবেগে হানা দিল শরীরে। গাড়ির ব্যাকসিটে বসে গা ছেড়ে দিল একদম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবার কল এলো তুহিনের। যন্ত্রণায় মাথা যেন ধরে এলো তার। রিংটোনটা যেনো গা জ্বালিয়ে দিল একেবারে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সোজা হয়ে বসল তুহিন। ফোনটা বের করে দেখল স্ক্রিনে ‘ইরাবতী’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু আজ নিজের ইরাবতীর নামটা দেখে খুশি হতে পারল না তুহিন। বরং রেগে গেল। হঠাৎই মেয়েটার ওপর ভীষণই মেজাজ খারাপ হলো ওর। ফোনটা রিসিভ করে ইরা কিছু বলার আগেই ধমকে বলে উঠল, ‘বলেছিলাম না আমি কল ব্যাক করব? ব্যস্ত আছি? বলেছিলাম? এইটুকু অপেক্ষা সহ্য হয়না? কী চাইছোটা কী তুমি? আমার জব, প্রফেশন ফেলে আমি ঘরে বসে থাকি? এরপর তোমাকে ঘরে ডেকে এনে হা করে বসে বসে তোমার ফাল্তু বকবকানি শুনি? হ্যাঁ?’
ওপাশ থেকে ইরার বলল, ‘এভাবে কথা বলছো কেন?’
‘ ভুলতো কিছু বলিনি। আমি জানি আমি তোমাকে সময় দিতে পারিনা। তাই বলে তুমি যখন-তখন ফোন করবে? আরে তুমিতো আমার প্রফেশন সম্পর্কে জেনেই আমার সঙ্গে রিলেশনে জড়িয়েছিলে রাইট? তাহলে এখন এতো অভিযোগ কেন? কীসের? সময় অসময়ে কল করে খেয়েছি কি-না, ঘুমিয়েছি কি-না, বেঁচে আছি কিনা। বাচ্চা আমি? তোমার কোন ধারণা আছে এসবে কতোটা ডিস্টার্ব হয় আমার? বিরক্ত লাগছে এখন আমার। জাস্ট বিরক্ত। একটু শান্তি দাও। প্লিজ?’
কয়েক সেকেন্ড কোন কথা বলল না ইরা। এরপর কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, ‘সরি। তোমাকে ডিসটার্ব করার জন্যে। শান্তি উপভোগ করো।’
বলে ইরা কল কেটে দিল। তুহিন একপ্রকার ছুড়েই ফোনটা ফেলে রাখল একপাশে। এরপর আবার গা এলিয়ে দিলো গাড়ির সিটে গা ছেড়ে দিল। কী বলল, কাকে বলল জানেনা ও। জানতে চায়ও না। সবকিছুই বিরক্ত লাগছে। একমিনিটের মধ্যে তমাল এলো। তুহিনকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বলল, ‘স্যার? ঠিক আছেন?’
তুহিন চোখ খুলল না। ক্লান্ত গলায় বলল, ‘গাড়ি চালাতে বলো।’
*
সকাল সাড়ে দশটার দিকে অফিসে পৌঁছলো তুহিন। রাত থেকেই মন-মেজাজ ভালো নেই ওর। সাথে আবহাওয়াও ভালো নেই। অর্ধেক দিন পাড় হতে চলল। কুয়াশা কাটছেই না। বের হতে একদমই ইচ্ছে করছিল না আজ ওর। কিন্তু কাজতো করতেই হবে। অফিসে পৌঁছতেই তমাল ওকে সেই জাল ইনফরমেশ তৈরীকারী তিনজনের কাছে নিয়ে গেল। ধরে নিয়ে আসা হয়েছে ওদের। তিনজনকেই ভালভাবে লক্ষ্য করল তুহিন। তারপর বলল, ‘কতদিন ধরে চলছে এই ধান্দা?’
একজন বলল ছয় মাস, বাকি দুজন বলল দেড় বছর। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এতোদিন ধরে জালিয়াতি করছে অথচ কেউ ধরতেই পারেনি। এদের সাহায্যে না জানি কোথায়, আরও কতরকম ক্রাইম করেছে কতলোক। নীতি নৈতিকতার কথা ছেড়ে কাজের কথায় পাড়ল তুহিন। ফেনীর সেই হোটেলে পাওয়া জ্বাল ইনফরমেশনের ডিটেইলস বের করে তিনজনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এটা তোমাদের মধ্যে কে বানিয়েছে? মিথ্যা বলবেনা। সত্যি বের করার অনেক সুন্দর সুন্দর উপায় জানা আছে আমাদের। আমরা চাইনা সেটা ব্যবহার করতে।’
ডান পাশে বসে থাকা লোকটা শুকনো এক ঢোক গিলে তুতলে বলল, ‘ আ-আমি বানিয়েছি।’
তুহিন পকেট থেকে রুদ্রর ছবি বের করে ধরল লোকটার সামনে। প্রশ্ন করল, ‘ এই লোকটাই বানাতে বলেছিলো তাইনা?’
লোকটা ছবিটা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই বলল, ‘ জ্বি স্যার। রুদ্র ভাই। ‘
তুহিন তমালের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তমাল দুজনকে বলল ওদের নিয়ে যেতে। ওরা চলে যেতেই তুহিন রুদ্রর ছবিটা তুলে ধরল নিজের চোখের সামনে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল, ‘শুনেছিলাম যতো বড় ক্রি’মি’না’লই হোক না কেন একদিন না একদিন তাকে পেছলাতেই হয়। তোমার ক্ষেত্রেও সেটাই হলো রুদ্র। প্রমাণ, সাক্ষী সব আমার হাতেই আছে। আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। এরপর তোমাকে অ্যারেস্ট করার অফিশিয়াল ওয়ারেন্ট আমার হাতে থাকবে।’
এরপর তমালকে বলল, ‘ শান মীর্জার কী খবর?’
‘ আউট অফ ডেঞ্জার, স্যার। তবে জ্ঞান ফেরেনি।’
‘ মিসেস শায়লাকে খুঁজে পেয়েছো?’
‘ চাঁদপুর আছে স্যার। খোঁজ নেওয়া হয়েছে। লোক গেছে।কালকের মধ্যে ধরে নিয়ে আসবে।’
‘ আমের ভিলা, নীরব, মীরা কারো কোন খবর?’
তমাল চুপ হয়ে গেল। তুহিন ভ্রু কুঁচকে তাকতেই বলল, ‘আমের ভিলার কারো খোঁজ নেই স্যার। না নীরবের। জাফর আমেরের বউ বাচ্চা সিঙ্গাপুর থাকতো। ওখানে খোঁজ করছি স্যার। রিপোর্ট চলে আসবে। কিন্তু..’
‘ কিন্তু?’
তমাল আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘ মীরা বেঁচে নেই স্যার। বছরখানেক আগেই মারা গেছে। ডিটেইল চলে আসবে শীঘ্রই।’
তুহিন থম মেরে তাকিয়ে রইল তমালের দিকে। অর্থাৎ আমের ভিলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন সবার সঙ্গেই কিছু না কিছু হয়েছে। কেউ রেহাই পায়নি। কেউ না!
*
সন্ধ্যার পর জ্ঞান ফিরল শানের। বেশ গুরুতর কয়েকটা আঘাত পেয়েছিল। কিন্তু কোন আঘাতেই ইন্টারনাল কোন ক্ষতি হয়নি। তাই এখন মোটামুটি সুস্থ সে। তবে দুদিন হসপিটালের বেডে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ারই পরামর্শ দিয়েছেন ডক্টর। খবর পেয়েই হাসপাতালে পৌঁছলো তুহিন। কাল এতো প্রেশারে ক্যাচ করতে না পারলেও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই বুঝতে পেরেছে ব্যপারটা। শান যেহেতু বেঁচে আছে। নিশ্চয়ই ওর ওপর হা’ম’লাকারীকে দেখেছে। আর শানের কাছ থেকেই হয়তো খু’নির খোঁজ পাবে। কিন্তু ওর মনে হচ্ছে শান সত্যি বলবেনা। নিজেকে বাঁচানোর জন্যে হলেও না।
শানের কেবিনে গিয়ে বসল একটা টুল টেনে। শান বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ। শানের চেহারা দেখে কেমন চেনা চেনা লাগল তুহিনের। আগেও কোথাও একটা দেখেছে বলে মনে হলো। সেসব ভাবনা বাদ দিয়ে তুহিন মুচকি হেসে বলল, ‘কেমন আছেন?’
শান গম্ভীর গলায় বলল, ‘ ভালো।’
‘ আপনার ওপর কে হামলা করেছিল? আর কেন?’
‘ আমার মনে হয় সেটা খুঁজে বের করা আপনার কাজ।’
শানের কঠোর, ত্যাড়া জবাবে ভ্রু কুঁচকে গেল তুহিনের। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল, ‘আমি জানি আমার কাজ কী। আর আমার কাজটাই আমি করছি মিস্টার মীর্জা। প্লিজ কোঅপারেট।’
‘ বলুন।’ শানের কন্ঠে বিরক্তি স্পষ্ট।
তুহিন শানের দিকে হালকা ঝুকে মৃদু গলায় বলল, ‘রুদ্রই আপনাকে খু’ন করতে এসেছিল। তাইনা?’
চমকে উঠল শান। কিন্তু নিজেকে সামলে নিতে সেকেন্ডের বেশি সময় নিলোনা। অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘কে রুদ্র?’
তুহিন হাসল। শানের ঐ সেকেন্ডের চমকে ওঠা ওর নজর এরায় নি। আঙুল দিয়ে নাক চুলকে বলল, ‘খুব অপরিচিত নাম। জীবনেও শোনেন নি। তাইনা?’
‘ না। শুনেছি। কিন্তু এই নামের কাউকে পার্সোনালি চিনিনা।’
‘ আচ্ছা। মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যে আপনার ওপর হামলা করেছে তার চেহারার একটা ডেসক্রিপশনতো দিতেই পারেন তাইনা?’
শান তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ না পারিনা। কারণ ওর মুখ দেখিনি আমি। মাস্ক পড়া ছিল। পরনে একটা কালো জ্যাকেট ছিল। এইটুকু ছাড়া ওর সম্পর্কে আর কিছুই জানানোর নেই আমার।’
‘ আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?’
‘ আপাতত না। মনে হলে জানাতাম। এখন রেস্ট করতে দিন আমাকে। আপনি আসতে পারেন।’
তুহিন ঠোঁটে মুচকি হাসিটা ধরে রেখেই বলল, ‘ যাব তো বটেই। তবে মিথ্যা বলে আপনার বিশেষ কোন লাভ হচ্ছেনা মিস্টার মীর্জা। বরং নিজের বিপদ বাড়াচ্ছেন। সত্যি অবধিতো আমি পৌঁছেই ছাড়ব। কিন্তু ততদিন আপনি থাকবেন কি-না সেটা ভাববার বিষয়। যদিও এখন থেকে কড়া পাহাড়ায় থাকবেন আপনি। তুবুও, নিজের খেয়াল রাখবেন।’
কথাটা বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল তুহিন। শানের চুপ থাকার কারণটা বুঝে গেছে ও। এ কয়েকদিনের রিসার্চে অনেক অজানা তথ্য ওর জানা হয়ে গেছে। অনেক সত্যি সম্পর্কে ও অবগত হয়েছে। তাই অনেক কিছুই পরিষ্কার তুহিনের কাছে।
*
কোনমতে ঐ দিনটা কেটে গেল। তুহিন কেইসের কাজটা নিয়েই যথেষ্ট ব্যস্ত ছিল। একা একাই কীসব করছিল যা সম্পর্কে তমালের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলোনা। তবে এইটুকু বুঝতে পারছিল যে তুহিন আলাদাভাবে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। অবসর সময়টা হঠাৎ হঠাৎ ইরার কথা মনে পড়েছে তুহিনের। ভীষণ ইচ্ছা হয়েছে একটা কল করতে। কিন্তু ইগো নামক বস্তুটা বাঁধা দিচ্ছিল মাঝপথে এসে। মনে মনে আশা করেছিল ইরা নিজেই হয়তো একটা কল করবে। কিন্তু ইরাও ওকে কোন ফোন করেনি।
চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে শায়লা। ওর সামনেই তুহিন বসে আছে। শায়লাকে ঘামতে দেখে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল তুহিন। শায়লা কাঁপাকাঁপ হাতে গ্লাসটা নিল। তিন ঢোকে শেষ করে ফেলল পানিটা। তুহিন এবার ধীরেসুস্হে প্রশ্ন করল, ‘ আপনাকে বারবার বলেছিলাম ঢাকা ছাড়বেন না। আমাদের আপনাকে দরকার হবে। কিন্তু আপনিতো হঠাৎই গায়েব হয়ে গেলেন। আচ্ছা সেসব ছাড়ুন। আমাকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আমি জানি আপনি কিছুই করেননি। আপনি এসবের মধ্যেও নেই। কিন্তু একটা সত্যি আপনি আমাদের কাছে লুকিয়েছেন। খু’নির পরিচয়। এইটুকু আমার জানা। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো কারণ কী? কেন আড়াল করতে চাইছিলেন খু’নিকে?’
শায়লা কেঁদে ফেলল। অস্ফুট স্বরে বলল, ‘ আমার বাচ্চা।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তুহিন। বলল, ‘ গেস করেছিলাম। কিন্তু এটাই কী একমাত্র কারণ?’
‘ না। ঐ লোকটা আমাকে মুক্তি দিয়েছিল স্যার। ঐ নরপিশাচটা নরক বানিয়ে রেখেছিল আমার জীবনটাকে। জোর করে তুলে এনে বিয়ে করেছিল। তাও তিন নম্বর বউ করে। ওর শুধু আমাকে রাতেই প্রয়োজন পড়তো। আর অত্যাচারের কথা কী বলব স্যার। শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।’
তুহিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘ আপনার এই চুঙপ থাকার কারণে আরও দুটো মানুষের মৃ’ত্যু হয়েছে। আরেকজন ম’র’তে বসেছিল। আপনার বাচ্চার কিচ্ছু হবেনা আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। কিন্তু আপনাকে সত্যিটা বলতে হবে। আর না বললে আপনার বাচ্চার ক্ষতি কেউ আটকাতে পারবেনা। কারণ খু’নি এতক্ষণে জেনে গেছে আপনি আমাদের এখানে এসেছেন। আর আপনি কিছু না বললেও ওর মনে হবে আপনি বলে দিয়েছেন। সুতরাং আপনাদের এখন আমাদের সুরক্ষা প্রয়োজন। বুঝেছেন?’
মাথা নাড়ল শায়লা। তুহিন টেবিলে রাখা রুদ্রর ছবিটার দিকে ইশারা করে বলল, ‘এটাই সেই লোক?’
‘ হ্যাঁ। কিন্তু লোকটার দাড়ি একটু বড় ছিল। মনে হচ্ছিল টানা কয়েকদিন সেভ করেনি।’
প্রয়োজনীয় তথ্যটুকু আদায় করে শায়লাকে বিদায় দিল তুহিন। রুদ্রর ছবিটা দেখে ঠোঁটে অর্থপূর্ণ হাসি ফুটল ওর। আনমনে বলল, ‘খেলা শেষ, রুদ্র আমের।’
#চলবে…
[ রি-চেইক করিনি। ভুল হতে পারে। ৪৭(২) অংশটুকু ছোটই। কাল দেব। ফর শিওর। ]
#অন্তর্হিত কালকূট
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৪৭ (২)
সকাল সাড়ে ন’টা বাজে। ঠান্ডা পড়লেও রোদ ঝলমল করছে আকাশে। কুয়াশার বালাই নেই এখন। কফি এক্সপ্রেসের সামনে এসে দাঁড়াল তুহিন। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দু সেকেন্ড ইতস্তত করে ঢুকেই গেল। একটু ভেতরের বসে আছে ইরা। তুহিনের আসার অপেক্ষা করছে। আজ সকালে ইরা নিজেই ফোন করে ডেকেছে ওকে। তুহিন মনেমনে এটাই চাইছিল। ইরার সাথে কথা বলা প্রয়োজন ওর। কিন্তু ইগোর কারণে কয়েকবার কল করতে গিয়েও করেনি। দুটো শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে গেল তুহিন। চেয়ার টেনে বসল। ইরা তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। সেটা দেখে তুহিন চোখ সরিয়ে নিল। নিজেকে ব্যস্ত দেখাতে ওয়েটারকে ডেকে কফি অর্ডার করল।
কিছুক্ষণ কেটে গেল নীরবতার মধ্যেই। তুহিন কিছু বলছে না। শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আর ইরার চোখ সরছেনা তুহিনের থেকে। আসার পর থেকেই অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। এক দৃষ্টিতে। এরমধ্যে কফিও চলে এলো। তুহিন ইরার দিকে একবার তাকিয়ে ইতস্তত করে নিল কাপটা। দীর্ঘসময় পর তুহিনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের দিকে কাপ টেনে নিল ইরা। বলল, ‘ ধন্যবাদ। তোমার এতো ব্যস্ততার মাঝে আমার জন্যে খানিকটা সময় বের করতে পেরেছো তাই।’
তুহিন প্রথমে খানিকটা ইতস্তত করল। এরপর হালকা গলা ঝেড়ে বলল, ‘ পরশু রাতের বিহেভিয়ারের জন্যে আ’ম সরি। আই রিয়েলি ডিডেন্ট মিন হোয়াট আই সেইড।’
ইরা খানিকটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, ‘ত্রিশ ঘন্টারও বেশি সময় পড়ে তোমার সেটা রিয়ালাইজ হলো? আর সেটাও তখন যখন আমি নিজে তোমাকে ডাকলাম।’
‘ ইরা আমি ভীষণ প্রেশারে ছিলাম তখন। আর এখন চলমান কেইসটাও এতোটা ভাইটাল জায়গায় আছে, আমি এক মিনিটও স্বস্তিতে বসতে পারছিনা।’
‘তাই? এতোটাই প্রেশারে ছিলে যে গোটা একটা দিনে আমাকে কল দিয়ে এইটুকু জিজ্ঞেস করার সময় পেলেনা যে আমার কী হয়েছিল? কেন কল করেছিলাম।’
‘ সরি। আসলে আমার মাথায় ছিলোনা ঐ ব্যপারটা। এক্সট্রেইমলি সরি।’
‘ সেই! মনেতো থাকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কিন্তু আমিতো টেকেন ফর গ্যারান্টেড। তাইনা?’
তুহিনের মেজাজ খারাপ হলো এবার। বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল, ‘ওভার রিঅ্যাক্ট হচ্ছেনা? সরি বলছিতো।’
ইরা তুহিনের চোখে চোখ রেখে হাসল। দু সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ব্যথিত কন্ঠে বলল, ‘কাল আমার জন্মদিন ছিল তুহিন।’
তুহিন কিছুক্ষণের জন্যে বোকা বনে গেল। দ্রুত ফোনটা অন করে তারিখটা ভালোভাবে দেখে বুঝল ইরা সত্যি বলছে। কাল জন্মদিন ছিল মেয়েটার। এখন আফসোস হচ্ছে তুহিনের। জন্মদিনের দিনটাতেই মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিল? হালকা গলা ঝেড়ে তুহিন কিছু বলতে গেলে ইরা থামিয়ে দিল। বলল, ‘তোমার মনে থাকবেই সেই আশা আমি করিনা তুহিন। এতো প্রেশার, কাজের মধ্যে খাওয়ার কথাও তো মনে থাকেনা। জন্মদিন কীকরে মনে থাকবে? আমি জাস্ট কাল ফোন করে তোমাকে একটু কাছে চেয়েছিলাম। ঐ মুহুর্তেই না। যখন তুমি ফ্রি হবে। আধ ঘন্টার জন্যে হলেও কালকের দিনে কিছুটা সময় তোমার সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু তোমার তো আমার একটা লাইন শোনারও সময় নেই। এতো উদাসীনতা তুহিন? এতোটাই আনইমপর্টেন্ট আমি তোমার কাছে?’
তুহিন নরম গলায় বলল, ‘ইরা আমি সত্যিই সরি। আমার মনে..’
‘তোমার আমায় তখনই মনে পরে তুহিন, যখন তোমার কোন কাজ থাকেনা। যখন তোমার কাছে করার কিছু থাকেনা। তোমার অবসরের বিনোদন আমি। তাইনা?’
বলতে বলতে কেঁদে ফেলল ইরা। তুহিন ধমক দিয়ে বলল, ‘ইরা!’
ইরা হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছে বলল, ‘ধমকালে সত্যিটা বদলে যাবেনা। তোমার কাছে সবার আগে তোমার কাজ, তুমি, তোমার কলিগস্। সবকিছুর পর যখন তুমি একা হয়ে যাও। সেই একাকিত্ব ঘোচাতেই ব্যবহার করছো তুমি আমাকে।’
তুহিনের রাগ লাগলেও অনেক কন্ঠে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, ‘ আমার লাইফ স্টাইলটাই এরকম ইরা। তুমি সব জানো।’
ইরা কঠোর গলায় বলল, ‘কিন্তু এরকম লাইফস্টাইলে আমি মানিয়ে নিতে পারছি না। নট এনি মোর। অনেক হয়েছে তুহিন। শুধুমাত্র কারো ফ্রি টাইমের রিফ্রেশমেন্ট হয়ে থাকতে পারব না আমি। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবার।’
“ফ্রি টাইমের রিফ্রেশমেন্ট” কথাটা ভীষণভাবে গায়ে লাগল তুহিনের। নিজের রাগ সামলে রাখতে পারল না আর। ইরার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি কখনই তোমাকে জোর করে আটকে রাখিনি ইরা। যখন তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম তখন শুধু বলেছিলাম “আই লাভ ইউ”। একবারও তোমাকে বলিনি আমার সঙ্গে রিলেশনে জড়াও বা সে “ইয়েস”। সেটা তোমার চয়েজ ছিল। আর এই তিনবছরেও আমি কখনও তোমাকে আটকে রাখার চেষ্টা করিনি। আজও করবোনা।’
ইরা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল তুহিনের দিকে। ও ভেবেছিল তুহিন বলবে “চলো, বিয়ে করে ফেলি। সারাদিন না হোক দিনশেষে তো একসঙ্গে থাকতে পারব।” কিন্তু ও এরকম কিছু বলবে ইরা ভাবেও নি। তারমানে তুহিন চায় আলাদা হতে। এই সম্পর্কে ও আর থাকতে চায়না। এতোদিন বলার কোন সুযোগ পাচ্ছিল না। আজ সুযোগ পেয়ে বলে দিলো। মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল ইরা। বুকে চিনচিন ব্যথা শুরু হলো। কিন্তু বাইরে দিয়ে নিজেকে শক্ত রেখে বলল, ‘ সো ইউ ওয়ান্ট টু ব্রেক আপ?’
তুহিন হতভম্ব হয়ে গেল। কত ইজিলি বলে ফেলল ব্রেক আপের কথা! ও যেতে দিতে চাইলেই যেতে হবে? নাকি সত্যি সত্যিই যাওয়ার জন্যে ছটফট করছে ইরা? কথাগুলো ভেবে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তুহিনের। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘আপ টু ইউ।’
পুরো দুনিয়াটাই যেন দুলে উঠল ইরার। ও আশা করছিল তুহিন বলবে “এক থাপ্পড় মারব আরেকবার ব্রেকআপের কথা চিন্তা করলে।” কিন্তু তুহিনের কিছুই যায় আসেনা। ভুলটা ওরই ছিল। তুহিনের উদাসীনতাকে ও তুহিনের ন্যাচার ভাবতো। ভাবতো তুহিন এক্সপ্রেস করতে না পারলেও ভালোবাসে ওকে। কিন্তু ওর ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করল তুহিন। অনেক কষ্ট নিজের চোখের জল আটকালো ইরা। ঘনঘন দুটো শ্বাস নিয়ে বলল, ‘ওকে, লেটস ডু ইট।’
তুহিন তাকিয়ে রইল ইরার দিকে। শান্ত স্বরে বলল, ‘আর ইউ শিওর?’
ইরা শক্ত গলায় বলল, ‘ ডেফিনেইটলি।’
তুহিন কিছু বলল না। ইরা বিল দেওয়ার জন্য নিজের পার্সে হাত দিতে গেলে তুহিন বাঁধা দিয়ে বলল, ‘ আমি দেখছি।’
ইরা আপত্তি জানালো না। পার্সটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। তুহিনের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল, ‘ভালো থেকো। এন্ড আই উইশ তোমার লাইফে আমার চেয়েও অনেক ভালো একটা মেয়ে আসুক। যে তোমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালো রাখবে।’
তুহিন এবারও কিছু বলল না। ইরাও আর দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে বের গেল কফি হাউজ থেকে। তুহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিল মিটিয়ে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
*
অফিসে গিয়ে সরাসরি ডিজির রুমের দিকে পা বাড়াল তুহিন। দরজার কাছে গিয়ে বলল, ‘ মেই আই কাম ইন, স্যার?’
ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলেন শাফায়াত হোসেইন। তুহিনকে দেখে সন্তুষ্টির হাসি হাসলেন। ল্যাপটপটা বন্ধ করতে করতে বললেন, ‘ কাম ইন মাই বয়।
তুহিন ভেতরে আসল। শাফায়াত হাতের ইশারায় বসতে বললেন ওকে। তুহিন বসল। শাফায়াত বললেন, ‘ ভালো হয়েছে এসেছো। তোমাকে ডেকে পাঠাতাম আমি। আমি জানতাম তুমি আমাকে নিরাশ করবে না। খু’নি অবধি তুমি পৌঁছেই ছাড়বে। এন্ড আমি ঠিক ছিলাম। ভেরী প্রাউড অফ ইউ। রুদ্রর ছবি প্রত্যেকটা নিউজ পেপারে, সংবাদ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের বাইরে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ ওর। আর দেশেও বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবেনা।’
‘ সবটা এতোটাও সহজ হবেনা স্যার। ও রুদ্র আমের।’
‘ মানে?’
তুহিন বলল, ‘ নাথিং স্যার। শান মীর্জার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। রুদ্র সম্পর্কে আমি যতটুকু জেনেছি তাকে শানকে জীবিত থাকতে দেবেনা ও।’
‘ সে বিষয়ে চিন্তা করোনা। ওর ওপর চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখা হচ্ছে।’
‘ প্রতিটা চেকপোস্ট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্টে রুদ্রর ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে স্যার।’
‘ হ্যাঁ। আমি বলেছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।’
তুহিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইতস্তত করে বলল, ‘আরেকটা কথা ছিল, স্যার।’
শাফায়াত হাসলেন। হেসে বললেন, ‘এতো ইতস্তত করছো কেন? বলে ফেলো।’
‘ স্যার, আমি জেনেছি সোলার সিস্টেম অর্থাৎ রাশেদ আমেরের প্রজেক্ট ঠিক কী ছিল। আর সে কী করতে চাইছিল।’
তুহিনের কথায় চমকে উঠলেন শাফায়াত। হতভম্ব গলায় বললেন, ‘ হোয়াট?’
‘ হ্যাঁ স্যার। ধনী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, মানি লন্ডেরিং ছাড়াও রাশেদ আমেরের প্রধান ব্যবসা ছিল অস্ত্রপাচার। বাইরের থেকে গমের বস্তায় করে বু’লে’ট আসতো আমের মিলসে। সেই বুলেটই আটার প্যাকেটে করে সারা দেশে সাপ্লাই করতো দ্য সোলার সিস্টেম। একই ভাবে বিভিন্ন পি’স্ত’ল এবং বেআইনি অ’স্ত্র’শ’স্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে বাইরে থেকে এনে বই, বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটে করে বিক্রি করা হতো। শুধু সোলার সিস্টেম নয় ডার্ক নাইট, ব্লাক হোলও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। ডার্ক নাইট কোন একসময় সোলার সিস্টেমের পার্টনার ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কিছু ঝামেলার কারণে তাদের ব্যবসায়ীক বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। আর এরপর থেকে এই তিন দলের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। সে অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন সোলার সিস্টেমের কাছে বারবার ব্লাক হোল আর ডার্ক নাইট মার খাচ্ছিল। আর সেই মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দুবছর আগে রাশেদ আমের বেশ নামিদামি কয়েকটা দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা করে। আগামী বিশ বছর ঐসব দল শুধুমাত্র সোলার সিস্টেমের কাছেই অ’স্ত্র পা’চা’র করবে। তারা রাজিও হয়েছিল কারণ রাশেদ আমেরের অফার করা এমাউন্ট ছিলো লোভনীয়। বোকা না হলে এমন অফার কেউ ছাড়বেনা। কিন্তু সেই এমাউন্ট ম্যানেজ করতেই সোলার সিস্টেমকে অনেক খাটতে হয়েছে। আর এটাই ছিল রাশেদ আমেরের সেই সিক্রেট প্রজেক্ট।’
শাফায়াত হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। তুহিন বলে চলেছে, ‘ আর এটা জেনেই মাথায় একপ্রকার বাজ পড়েছিল বাকি দুই গ্রুপের। কারণ সবচেয়ে বেস্ট কোয়ালিটি ঐসব দলই দিতো। আর ওখান থেকে সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে পেটে লাথি পড়া। সবকিছু শেষ হয়ে যেতো ওদের। আর সেটা হওয়া থেকে আটকানোর জন্যেই ওরা সব করতে পারতো। সব। হিংস্রতার চরমে যেতেও ওরা রাজী ছিল। এন্ড আই গেইস ওরা গিয়েছিল।’
শাফায়াত নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘ এগুলো তুমি কীকরে জানলে?’
‘ স্যার আমি পরপর দুবার গিয়েছিলাম আমের ভিলায়। প্রথমদিন একটা ডায়েরি ছাড়া বিশেষ কিছু না পেলেও পরেরবার গিয়ে বুকসেল্ফের পেছনে রাখা একটা ব্রিফকেস পেয়েছিলাম। লক ছিল। ফরচুনেটলি রাশেদ আমেরের ডায়েরি ঘেঁটে নাম্বার পেয়ে যাই আমি। ব্রিফকেসটা খুলে কিছু পেপারস্ পাই। সেখানে স্পষ্ট করে না হলেও এই প্রজেক্টের বিষয়ে অনেক ইনফরমেশন ছিল। এরপর আমাদের অন্যসব গোয়েন্দা আর পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট মিলিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার করে নিতে সমস্যা হয়নি আমার। আর মজার ব্যপার হলো এসব খু’নে যেসব বু’লে’ট পাওয়া গেছে ওগুলো ঐ পেপারে থাকা বেআইনি বু’লে’টের সঙ্গে মিলে গেছে।’
‘ সাপ্লাই ঠিক কারা দিতো বা রাশেদ আমেরের থেকে কারা কিনতো এ বিষয়ে কোন ধারণা?’
‘ না স্যার। তাদের ব্যপারে স্পষ্ট করে কিছুই জানা যায়নি। তবে একটা ব্যপার আমার মাথায় চলছে স্যার।’
‘ কী?’
তুহিন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মনে মনে কথাগুলো একবার গুছিয়ে নিল। এরপর বলতে শুরু করল, ‘তিনটে গ্রুপই বহুবছর ধরে এধরণের বেআইনি কারবার করে চলেছে। কিন্তু ওদের কারো বিরুদ্ধে একটা এভিডেন্স জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। দলের অনেক ছোট ছোট চুনোপুঁটিকে ধরা গেলেও দলের মাথা একদম অক্ষত ছিল। কীকরে স্যার? পেছনে বড় কোন হাত না থাকলে এটা সম্ভব?’
‘ মানে?’
‘ মানে, আপনার মনে হচ্ছেনা স্যার, আমাদের কিছু গণ্যমান্য নেতা মন্ত্রীদের অর্থসম্পদ একটু বেশিই দ্রুত বাড়ছে? কাগজ বলে সবকিছু লিগাল। কিন্তু আমাদের চোখতো অন্যকিছু বলছে স্যার। ব্যপারটা অনেকটা আঙুল ফুলে গলাগাছ টাইপ না?’
নিজের চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলেন শাফায়াত। দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ আমি জানি তুমি কী বোঝাতে চাইছো। কিন্তু শুধু দেখলে, শুনলে, বুঝলেই হয়না। অন্যদেরও দেখাতে হয়, শোনাতে হয়, বোঝাতে হয়। যেটা সবচেয়ে কঠিন। তোমার কেইস মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে তুহিন। শুধু রুদ্রর ধরা পড়ার অপেক্ষা। আমার মনে হয় তোমার এখানেই থেমে যাওয়া উচিত।’
তুহিন মাথা নিচু করে হাসল। তারপর শাফায়াতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ রাস্তায় যখন হাটা শুরু করেছি রাস্তার শেষটা দেখে তবেই থামবো স্যার। অফিশিয়ালি যদি অনুমতি না পাই। আমাকে আনঅফিসিয়ালি কাজটা করতে হবে। এখন আসব স্যার?’
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিলেন শাফায়াত। তুহিন বেরিয়ে গেল। শাফায়াত তাকিয়ে রইলেন সেদিকে। এই ছেলে শান্ত কিন্তু খুব জেদি। সে জানে। কিন্তু এই জেদের কারণে বড় কিছু মাথায় কোপের মুখে না পড়তে হয় ওকে।
*
নিজের কেবিনে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসল তুহিন। মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্ত আজ ও। কেইসটা মোটামুটি সল্ভ হওয়াতে ওর রিল্যাক্স হওয়ার কথা ছিল। শান্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারে অস্হিরতার পরিমাণই বেশি। এই কেইসটা জীবনেও ভুলবে না ও। কারণ এই কেইসের কাজ করতে গিয়েই ও ওর ইরাকে হারিয়েছে। ইরার সঙ্গে কাটানো কিছু সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত মনে করার চেষ্টা করল তুহিন। একসঙ্গে কাটানো স্পেশাল খুব বেশি মুহূর্ত পেলোনা স্মৃতির পাতা ঘেঁটে। হাতে গোনা কয়েকটাই পেল। তবে সে কয়েকটাই ভীষণ সুন্দর।
‘ স্যার আসব?’
তমালের কন্ঠস্বর শুনে চোখ খুলে তাকাল তুহিন। সোজা হয়ে বসে বলল, ‘ এসো। কোন খবর? রুদ্রকে পাওয়া গেছে?’
তমাল ভেতরে ঢুকে বলল, ‘না স্যার। মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রি’মি’না’ল ও এখন। বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবে না। কিন্তু খবর আছে।’
‘ কী খবর?’
‘ সিঙ্গাপুর থেকে খবর নেওয়া হয়েছে স্যার। জাফর আমেরের বউ বাচ্চা মৃত স্যার। মা’র্ডা’র হয়েছে।’
তুহিন চমকে উঠল। তমাল বলল, ‘তারচেয়েও অবাক করার ব্যপার আছে স্যার। খু’নগুলো প্রায় আড়াই বছর আগেই হয়েছে।’
‘ হোয়াট?’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল তুহিন।
‘ আরও একটা খবর আছে, স্যার।’
তুহিন সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তমালের দিকে। তমাল বলল, ‘ জ্যোতিকে দেখা গেছে স্যার। একটা ঔষধের দোকানে। কিন্তু ধরতে পারেনি। তার আগেই ভীড়ে মিশে গেছে। ওর কোলে একটা বাচ্চা ছিল স্যার। দেখে নাকি মনে হয়েছে কয়েকদিন আগেই জন্মেছে।’
তুহিন খানিকটা চিন্তা করে বলল, ‘ঔষধ যখন ওখান কিনছিল তারমানে ও আশেপাশেই কোথাও থাকছে। তাড়াতাড়ি খোঁজ শুরু করো। প্রয়োজনে পুরো এলাকা চোষে ফেলো। আই ওয়ান্ট হার।’
‘ ওকে স্যার।’
তমাল বেরিয়ে গেল। দুই হাত মাথার ওপরে তুলে চেয়ারে হেলান দিল তুহিন। জাফর আমেরের বউ-বাচ্চা বেঁচেই নেই। কে মারল ওদের? ওর ভাবনাই তবে ঠিক? কিন্তু এও হতে পারে? আর জ্যোতি? জ্যোতি পালিয়ে কেন বেরাচ্ছে। আর কোলে ছোট বাচ্চাটা কে ছিল। কার বাচ্চা ওটা?
অন্যদিকে রুদ্র কোথাও ছদ্মবেশ নিয়েছে, কোথাও নেয়নি। আর ও চাইলেই জাল ইনফরমেশন তৈরী করতে ছদ্মবেশেই যেতে পারতো। পুলিশ যে ঐখান অবধি পৌঁছে যাবে সেটা বুঝতে না পারার মতো বোকাতো রুদ্র না। কিন্তু ও সেটা করেনি। কেন? শায়লার সামনেই ও ছদ্মবেশে যেতে পারতো। তাও যায়নি। প্রথমে না ভাবলেও এখন বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে রুদ্রকে। এগুলো কী সত্যিই রুদ্রর ভুল ছিল? নাকি ও জেনেশুনেই বিভিন্ন জায়গায় এই টুকরো টুকরো প্রমাণগুলো রেখে গেছে? কিন্তু এরকম কেন করবে রুদ্র। কী উদ্দেশ্যে? এতোগুলো প্রশ্নের কোনটারই উত্তর নেই তুহিনের কাছে। এসব প্রশ্নের উত্তর জ্যোতি আর রুদ্রই দিতে পারবে ওকে। এখন শুধু রুদ্র আর জ্যোতির ধরা পড়ার অপেক্ষা।
(প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি)
[ * শেষ হলো প্রথম অধ্যায়। জানি অনেকের কাছে অনেক কিছুই এখনো অস্পষ্ট। রুদ্র কী আদোও ধরা পড়বে? কেন করছে সে এতোগুলো খু’ন? এই বে’আইনি কারবারের মাথাদের মুখোশ খুলতে পারবে তুহিন? আমের ভিলার বাকিদের কী হলো? কোথায় এখন তারা? এগুলো সবই দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্পষ্ট হবে। শীঘ্রই দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হবে। ততক্ষণ ধৈর্য ধরুন।