#ষষ্ঠবিংশ
#Yasira_Abisha (#Fatha)
১৩ বছরে ব্যাবধানে দু’জনের মাঝে, এই জিনিসটা সবসময় ইরাদকে আটকে রেখেছে রুহির কাছে আসার থেকে। আগে একটা বিয়ে হওয়াও বড় একটা কারণ ছিলো সবসময়। এসব কিছু মিলেই ইরাদ যতটা পেরেছে দূরে থেকেছে রুহির থেকে। তবে আজ তিন বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও যেহেতু রুহি একটা আছে, এইটুকু ইরাদ বুঝে গেছে রুহির সেদিনের কথা গুলো সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলছে। আর এভাবে রুহির অল্প বয়সের আবেগ ভেবে তাকে এতটা কষ্ট দিয়ে তিনিটা বছর নিজের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত রেখে ইরাদের আজকে কলিজাটা একদম ফেটে যাচ্ছে। ইরাদের ইচ্ছে করছে রুহিকে কলিজার সাথে মিশিয়ে নিজের কাছে নিয়ে রেখে দিতে। মেয়েটা কতটা ভালোবাসে বলেই তো এভাবে ওর জন্য অপেক্ষা করে চলেছে। বিয়ে প্রেম নিয়ে মনের মধ্যে ইরাদের যে ভীতি আছে সবটা ও রুহিকে বুঝিয়ে বলবে, ওর কাছে ক্ষমা চাইবে। যতটা কষ্ট রুহিকে ও দিয়েছে সবটা চেষ্টা করবে মুছে দিতে। এর জন্য যাই করা দরকার ইরাদ করবে, রুহিকে ও জানাবে কতটা রুহিকে ছাড়া ইরাদ অসহায়, কতটা একা। সবটা জানার পূর্ণ অধিকার আছে রুহির।
দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো,
ইরাদ রুহি আর পুরো টিম চলে এলো ভূমিধসের এলাকায়। সবাই কাজে লেগে গেলো, ঢুকতে দক্ষিণের দিকটায় তেমন ক্ষতি হয় নি, বিকেলের মধ্যে সবাইকে চিকিৎসা দিয়ে দেওয়া হলো। এদিকের অবস্থা ভালো ভেবে কেউ আর পশ্চিমের দিকে যায় নি তবে রুহি বারবার তানিয়াকে বলছিলো,
– আমার মনে হচ্ছে ওইদিকে যাওয়া দরকার পুরো টিমের মিলে।
ইরাদ ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো আর ওদিকটায় যেতে রাজি হলো। একটু ভেতরের দিকে যেতেই সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো কারণ এদিকে বেশিরভাগ মানুষই আহত অবস্থায়, সবাই মিলে গভীর রাত হয়ে গেলো সবাইকে চিকিৎসা দিতে দিতে, এভাবে প্রায় দু’দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো।
এদিকটায় ও আল্লাহ পাকের রহমতে এখন সবটাই ঠিকঠাক আর মূলত কিছু ডাক্তার চিটাগং থেকেও এসেছিলো ওদের সাহায্য করতে যার ফলে সবটা মুটামুটি ওরা কভার করে ফেলতে পেরেছিলো।
এরই মাঝে ৩য় দিন রুহি বায়না ধরেছে সন্ধ্যার দিকে পাহাড়ের অপর দিকে যাবে। কেউ আছে কি না তা খুজতে, তবে টিমের বাকি কেউই সে সময় যেতে রাজি ছিলো না কারণ রাত হয়ে গেছে আর রুহির কথা হচ্ছে এমন তেই ২-৩দিন শেষ যদি কারো সাহায্যের দরকার পরে? তখন কি করবো আমরা?
রুহির কথায় যুক্তি আছে তখন সবার মাঝে ইরাদ বলে উঠে
– চলেন ডক্টর রুহি।
রুহি বেশ চমকে উঠে, তবে ইরাদ ওকে সমর্থন করায় খুশিও হয় অনেক।
-জ্বি চলুন
এই দু’দিন রুহি যতটা পেরেছে ইরাদের থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে, দূরে রাখার চেষ্টা করে গেছে। এখন রুহি আর ইরাদ ছাড়া কেউই যাচ্ছে না ওইদিকটায়। সামনে কি আছে তা কেউই জানে না।
.
এদিকে ৩-৪দিন হলো মেঘার সাথে সাহিলের কোনো যোগাযোগ নেই, মেঘার এখন সাহিলকে বিরক্ত লাগে। কারণ সাহিলের সাথে এতো বছরে মেঘা বুঝে গেছে ও কোনোদিন মেঘাকে বুঝবেনা। সাহিলের কথা বার্তা কিছুই মেঘার ভালো লাগেনা দিন দিন ওদের দূরত্ব বেড়েই চলেছে। মায়ের অসুখের কারণে সাহিল ও আজকে সিংগাপোর যাবে তবে এতে মেঘা বিন্দু পরিমাণ ও খুশি না। সর্বপরি মেঘার অহংকার এখন খিটখিটে মেজাজে পরিনত হয়ে গেছে। সবকিছুই এখন অসহ্য লাগে, কথায় আছে মন মতো স্বামী বা স্ত্রী নাহলে নাকি মনে শান্তি আসে না। আগে মেঘা ভাবতো মনে আর শান্তি না থাকলে কিই বা হবে? তবে এখন মেঘা এটা এখন বুঝে শান্তি না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না।
.
এখন সিংগাপোরে সকাল, সোবহান সাহেব আজকে তার স্ত্রীকে একটু সময় নিয়ে ফোন করেছে।
– আসসালামু আলাইকুম কেমন আছো?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
– আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ছোট মেয়েকে নিয়ে কিছু কথা আছে।
– হ্যাঁ বলো কি কথা?
– মেয়ে তো বড় হলো নাকি?
– হুম তা তো অবশ্যই
– আমি একটা বড় ডাক্তার দেখেছি ওর জন্য। আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে, তুমি এলে সরাসরি দেখা করাবো।
– মেয়ে কি রাজি? ছেলে দেখতে কেমন? কিসের ডাক্তার?
– ছেলে তো কার্ডিয়াক সার্জন। দেখতেও মাশাল্লাহ আর ব্যাবহার এতো ভালো।
– আচ্ছা আমি আসি তারপর আমরা দেখবো। ভালো ছেলে হলে ক্ষতি নেই।
(চলবে…)