#দ্বাত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
জীবনটা কতটা সুন্দর হতে পারে যদি পাশে নিজের প্রিয় মানুষটা থাকে, যার কাছে আমিও সমান তালে অতটাই প্রিয় যতটা সে আমার কাছে। আগে এই জিনিসটা কোনোদিন রুহি আর ইরাদ বুঝে নি, কারণ জীবনে আল্লাহ পাক তো তাদের আগে এই রকম কোনো মুহুর্ত উপহার দেয় নি। তবে হ্যাঁ বর্তমানে ঠিকি এমন কিছু তাদের সাথে হচ্ছে আর এটা রুহি আর ইরাদ উপভোগ করছে বেশ। বিকেলে রুহি আর ইরাদ পাহাড় দেখতে বেড় হলো, পাহাড় দেখতে দেখতে তারা বাজারে ঢুকে গেলো সেখানে বেশ কিছু কেনাকাটা করে ফেললো শুধা চাকমাদের জন্য তবে ইরাদ চুপ করে রুহির জন্য খুব সুন্দর একটা শাড়ি নিলো। লাল শাড়ি, দেখতে খুবই চমৎকার দেখে নজর কাড়া লাগছে আর রুহিকে এই শাড়িতে কতটা মানাবে এটা ইরাদ ভেবেই মুচকি হাসছে। কেননা রুহি আসলেই অনেক বেশি রূপবতি। যেতো একটা রূপকথার রাজকন্যা যার মনে আল্লাহ পাক অসীম মায়া দিয়ে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। বাচ্চাদের মতো চঞ্চল মেয়েটা এই কয়টা বছর মনের কষ্ট নিয়ে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলো, একদম ঝিমিয়ে গিয়েছিলো । আর কিছু ঘন্টা ধরে সে আবারো আগের মতো করে হাসতে শুরু করেছে। রুহির খিলখিল হাসির শব্দ যেন ইরাদের মনটা রঙিন করে তুলছে বার বার।আর একটা কথাই মাথায় আসছে
” আমি বারবার হাজার বার তোমাকে চাই”
রুহি হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে আর গুন-গুন করে গাইছে,
“চলতি সময়, থমকে দাঁড়ায়
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়।
কি মায়ার কোন, সে নেশায়
বারে বার মন ছুঁতে চায়
চেনা মুখ ঘুরপাক খায় চোখের পাতায়।
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই।
তুমি আমি আর নিরবতা,
শুনতে কি পাও এই মনে কথা
ভোর আঁধারেও তোমায় দেখি,
তুমি কবিতা, তুমি কবি।
আজকাল মন ডুবে যায়
অনুভবে তুমি ভাসো তাই
এই আমি না চিনি আমায়,
চেনা আয়নায়।
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই।
চলতি সময়, থমকে দাড়ায়
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়।
কি মায়ার কোন সে নেশায়
বারে বার মন ছুটতে চায়
চেনা মুখ ঘুরপাক খায়
চোখের পাতায়।
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই।”
মেয়েটা ইরাদকে অতটাই চায় যতটা ইরাদ ওকে চায় আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেভাবে ইরাদ ওকে চায় রুহিও যেনো ওভাবেই ইরাদকে চায়।
সেই তখন থেকেই রুহির চোখে মুখে খুশির ঝলক যখন ইরাদ ওকে কাচের চুড়ি কিনে দিলো। ইরাদের কাছ থেকে কিছু পেলে মেয়েটা অনেক অল্পতেই খুশি হয়। কারণ ভালোবাসাতে রুহি শুধু ইরাদকেই চায়, ওর হয়ে নিজের জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায়। কোনোদিন রুহি অভাব দেখেনি। দেখেনি কোনো কষ্ট রুহির কাছে প্রেম মানে সিনেমায় যেমনটা দেখায় ঠিক তেমনি। ওর কাছে ভালোবাসার মানেই হলো ইরাদ আর রুহির এক হওয়া। জীবনটা সুখি করতে রুহির মনে হয় না ভালোবাসার চাইতে জরুরি আর কিছু হবে পারে৷ আর রুহির এই প্রেমটা ইরাদ খুঁজে বেড়াতো নিজের মনের অজান্তেই। কাছে থাকার পরেও নিজ হাতে রুহিকে দূরে দিয়ে ইরাদের মন যেমন বিষন্নতায় ছিলো ঠিক এখন রুহিকে কাছে পেয়ে ততটাই উৎফুল্ল হয়ে গেছে।
আর এদিকে ইরাদের সাথে কাটানো এই মুহুর্ত গুলো রুহির ইচ্ছে করছে বাক্সবন্দী করে রেখে দিতে। ইরাদ যখন ওর হাতটা আলতো করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে পাহাড়ের এলোপাতাড়ি রাস্তা গুলো হাটতে সাহায্য করে তখন রুহি মুষ্টিবদ্ধ করে ইরাদের হাতটা ধরে। কারো হাতের স্পর্শ ও যে পুরো মনের ভেতরটার ধুকপুক আর কাপনি বাড়িয়ে দিতে পারে এটা ইরাদ যদি রুহির জীবনে না আসতো তবে রুহি জানতেই পারতো না। অনুভূতি গুলো শ্রেষ্ঠ, অনুভূতি গুলো সুন্দর। যা কাউকে বলে হয়তো কোনোদিন বোঝানোটা সম্ভব না তবে হ্যাঁ যে অনুভব করতে পারবে সে এই চিত্র গুলো নিজের প্রিয় মানুষের মাঝেই পেয়ে যাবে। তার নামটাও প্রকাশ করতে হবে না আপনা আপনি তার চেহারাটা একদম ভেসে উঠবে চোখের সামনে।
প্রায় রাত ঘনিয়ে এলো রুহি ইরাদ বাসায় এসেছে অনেকক্ষন আগেই এসে সবাই একসাথে খেয়েদেয়ে রেস্ট নিচ্ছে, আর ঘরের একটু দূরে কিছু পাহাড়ের স্বামী স্ত্রীরা একসাথে বসে আগুন পোহাচ্ছে আর বাচ্চারা খেলাধুলা করছে তাই এদিকে এসে ওরা বসেছিলো।
বেশকিছুক্ষন পরে,
ইরাদ- এখন ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত চলুন মায়াবতী
রুহি কিছু বললো না, কি যেনো ভাবছে ও। অনেকক্ষন ধরেই চুপ করে পাহাড়ের এক কোণে বসে ছিলো ইরাদ ভেবেছে বাড়ির সবার কথা মনে করছে। বা এতোক্ষণ হাটাহাটি করার ফলে পায়ে ব্যাথা করছে। রুহির কোনো উত্তর না পেয়ে ইরাদ ওকে ঝট করে কোলে তুলে ফেলে। রুহি ইরাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– চলুন না আজকেই বিয়ে করে ফেলি?
ইরাদ অবাক চোখে রুহির দিকে তাকায়,
– এখানে কিভাবে?
– কেনো কাজী আছে তো কোথাও না কোথাও
– এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?
– আমি জানিনা আমার ভয় করছে, কিসের ভয় কেমন ভয় তাও জানিনা। তবে বেশ অস্থির লাগছে।
ইরাদ ভাবে এতোদিন রুহিকে কষ্ট দেওয়ার ফলেই ওর এমন অনুভূতি কাজ করছে।
ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
– সবার সামনেই বিয়েটা হোক জান। আর কিছুদিনের ব্যাপার। আপনি যদি বলেন আমরা কালই আপনার বাসায় চলে যাবো তারপর আমি কথা বলবো তোমার পরিবার আমাকে জানুক বুঝুক, আমি তাদের মেয়ের জন্য কতটা পার্রফেক্ট বা কতটা ইমপার্ফেক্ট এটা তাদের আগে বুঝতে হবে। পরিবারের মুরুব্বি ছাড়া আসলে বিয়ে হওয়া ঠিক না।
রুহি কিছু না বলে ইরাদের বুকে মুখ গুজে দেয়, কারণ ইরাদের কথা গুলো ঠিক। বাড়িতে ওকে সবাই অনেক ভালোবাসে আর তাই তো সবার আগে জানতে হবে এরপরই নাহয় বিয়েটা হোক। আর ইরাদকে না করার তো কোনো চান্সই রুহি দেখে আর আর তারপর ও যদি কোনো ঝামেলা হয় তাহলে মেঘা আপু তো আছেই। সেই ছোট থেকে রুহির সব কিছুকে চোখ বন্ধ করে মেঘা সাপোর্ট দিতো আর এখনো দিয়েই আসছে।
রুহি ঘরে এসেও মন খারাপ করে বসে থাকে, ইরাদ দরজাটা দিয়ে রুহির কাছে এসে বসে হাতে একটা বাটি নিয়ে রুহি তাকিয়ে দেখে ইরাদ একটা মলম নিয়ে এসেছে, এটা নাকি এই এলাকার বড় চিকিৎসক দিয়ে বানানো কিছুটা দেখতে ভ্যাসলিনের মতো যেটাএ কথা শুধা বলছিলো রাতে খাওয়ার সময়। ইরাদ রুহিকে রেখে তাহলে এই মলম আনতেই গিয়েছিলো এখন।
-এটা কেনো আবার?
– পায়ে দিতে হবে আপনি আজকে অনেক হেটেছেন মানা করার পরেও।
– হাটবো না তো কি? আপনি আমাকে এমন করছেন যেনো আমি মেডিসিন নেই নি বা ছোট কোনো বাচ্চা।
– আপনি বাচ্চাই।
– হ্যাঁ এখনো বাচ্চা?
– হুম আমার কাছে আপনি আজীবনই বাচ্চা থাকবেন। এখন ভালো বাচ্চার মতো বসেন আমি এটা দিয়ে দিচ্ছি।
– না থাক
– কোনো কথা নেই। একদম চুপ
ইরাদ রুহির শাড়িটা হাটু পর্যন্ত তুলে পায়ের হাটু থেকে নিয়ে পুরো গোড়ালি পর্যন্ত মলমটা দিয়ে দিচ্ছে আর রুহির যেনো প্রতিবার কেপে কেপে উঠছে। ইরাদের স্পর্শ গুলো এমনিতেই রুহিকে এক অদ্ভুত অনুভূতি দেয় তার ওপরে রাতের এমন একটা সময়ে ইরাদ এভাবে রুহির এতটা কাছে যা রুহিকে বারবার যেনো কম্পিত করছে।
ইরাদ রুহিকে মলম দিয়ে হাতটা ধুয়ে এসে পাশে এসে বসে,
– আপনার কি আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা করে না?
রুহির আবারো একই প্রশ্ন শুনে ইরাদ রুহিকে কোনো কিছু বলে না। এমন সময় বাইরে কালকের মতো ঝড় শুরু হয়ে যায়। ইরাদ রুহির একদম কাছে চলে আসে, কাছে এসে চোখে চোখ রাখে, ইরাদের চোখ গুলোতে যেনো একটা নেশা আছে। রুহিকে এভাবে দেখে ইরাদের ও যথেষ্ট অস্থিরতা কাজ করছে, বেশিক্ষন রুহি যেনো আর ইরাদের চোখে চোখ রাখতে পারলো না, রুহি চোখ বুঝে ফেলে।
ইরাদ একদম রুহির ঠোঁটের কাছে এসে হাত দিয়ে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করলো আর কানের কাছে গিয়ে বললো, শুধু বিয়ে না আমার অনেক ইচ্ছা করে আমার মায়াবতীকে আদর করতে, খুব করে আদর করতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছা করে সারারাত ধরে আর মায়াবতীর আদুরে মুখটা দেখতে, তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছা করে। আমার মায়াবতীর নির্ঘুম রাতের কারণ হতে ইচ্ছা করে। সারাটা সময় আমার রুহিকে নিজের করে ফেলতে খুব বেশি ইচ্ছা করে। যেমন এখন ইচ্ছে করছে রুহিকে আপনার ঠোঁট গুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে আজ সারারাত আপনাকে….. ইরাদ আর কিছু বলতে পারে না রুহি ইরাদের মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে। লজ্জায় রুহির চেহারা একদম লাল হয়ে গেছে। ইরাদ এসব কিছু বলতে পারে এমন ভাবনা রুহির মাথায় আসে নি। ইরাদ রুহিকে জড়িয়ে ধরে, খুব শক্ত করে, এবং মাথায় চুমু দেয়।
– আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন আমার মায়াবতী আপনাকে এতোটা ভালোবাসা দিবো যে আশপাশের সবাই আপনাকে দেখে হিংসা করবে দেখে নিয়েন।
রুহি লজ্জায় আর কিছুই বলতে পারে না। ইরাদ জানে মেয়েটাকে ও বললেই আজকে ওদের বিয়ে হয়ে যেতো তবে আগে যে ভুলটা ও করেছে এবার আর তা করতে চায় না তাই তো সবার সামনে রুহিকে বিয়ে করে নিজের ঘরের বউ বানাতে চায় ও। আর বৈধতার সাথে রুহিকে নিজের করে নিতে চায়।
(চলবে….)