- ফুলসজ্জা পর্ব ১।
- খুব রোমান্টিক গল্প।
- বড়দের রোমান্টিক গল্প।
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প।
- স্বামী স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্কের গল্প
১.ফুলসজ্জা পর্ব ১
লেখা- অনামিকা_ইসলাম “অন্তরা”
আমি আবির।
মাহমুদুল হাসান ‘আবির’। পেশায় একজন শিক্ষক। ঢাকার কোনো এক স্বনামধন্য ভার্সিটির বাংলার প্রভাষক। বাবার ইচ্ছে লেখােড়া শেষ করে ওনার ব্যবসায়ে যোগ দিতে, কিন্তু বরাবরের মতই মুক্তমনা আমি কিছুতেই যেন মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বাবার ব্যবসায়ে জয়েন করতে পারি নি।ব্যবসায়ে ফাঁকি দিয়ে কাঁধে একটা গিটার নিয়ে বন্ধুদের অবাধে দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়াতাম। বাবা বোধ হয় বুঝে গিয়েছিল স্বাধীন ও মুক্তমননের অধিকারী এই আমি’কে কিছুতেই ব্যবসায়ের কাজে লাগানো যাবে না। আর সে জন্যই বাবা আমায় ঢাকায় মামার বাসায় পাঠিয়ে দেয়। মামা যে ভার্সিটির সভাপতি সেই ভার্সিটিতেই বাংলার লেকচারার হিসেবে জয়েন করি। শুরু হয় আমার শিক্ষকতার জীবন। আজ ৫বছর অতিবাহিত হলো আমার শিক্ষকতার জীবনের।
সে বার পরিবারবর্গ সহ ২মামাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম নরসিংদীর একটি ছোট্ট অজপাড়া গায়ে। যাকে নিয়ে কিংবা যার কথা শেয়ার করার জন্য এই লিখা সেই নীলিমার সাথে এই গ্রামেই প্রথম দেখা।
নীলিমা এ গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্র। নীলিমা এ গল্পের নায়িকা। নীলিমার পদচারণা গল্পের শুরু থেকে শেষ অবধি।
নীলিমা পল্লীগাঁ’য়ের এক সহজ-সরল ও অত্যন্ত শান্তশিষ্ট একটি মেয়ে। পড়াশুনা এসএসসি পর্যন্ত’ই। এস.এস.এসি পাসের পর মেধাবী নীলিমার আর কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি। যদিও অন্য ৮/১০টা মেয়ের মত তারও দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল….
স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে অনেক বড় হওয়ার,
স্বপ্ন ছিল জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করার,
স্বপ্ন ছিল অসহায় বাবা-মায়ের মুখে জয়ের হাসি অঙ্কন করার,
স্বপ্ন ছিল ছোট্ট বোন’টিকে ঈদে নতুন জামা-জুতো আর স্নেহের ভাইটিকে একটা ল্যাপটপ কিনে দেয়ার।
নীলিমার স্বপ্ন কিন্তু খুব বেশী বড় ছিল না,
ওর স্বপ্নগুলো ছিল ছোট ছোট। তবুও সেসব কিছু’ই যেন নীলিমার করা হয়ে উঠেনি।
পাড়া প্রতিবেশীর নিন্দার আগুনে দগ্ধ হতে হতে একটা সময় নীলিমার লেখাপড়ায় ইতি টেনে দেয় নীলিমার গরিব ও অসহায় বাবা। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কলেজ প্রাঙ্গনে যেতে পারে নি নীলিমা। নীলিমার ছোট্ট থেকে দেখে আসা স্বপ্নগুলো একটু একটু করে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায় নিন্দুকের কথার আঘাতে। নীলিমাকে জর্জরিত হতে হতো প্রতিনিয়ত, নিন্দুকের কথার আঘাতে।
,
নীলিমার অপরাধ__
নীলিমা কালো। নীলিমার গায়ের রং কালো, ভিষন রকম কালো….
তরুন শিক্ষক আবির এবং তার পরিবার আজ সেই বাড়িতেই যাচ্ছে। আবিরের বাবার বাল্যকালের বন্ধু ‘ছমির’….আর তারই মেয়ে নীলিমা। আবিরের বাবার ইচ্ছে বাল্যবন্ধু ছমিরের মেয়েকে ওনার পুত্রবধূ হিসেবে বাড়িতে তুলে নেওয়ার। প্রসঙ্গ আবিরের বাবা ঠিক তখন’ই তুলে যখন আবিরসহ ওর মামারা সবাই ঐ বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে নেয়।
আবিরের মা’তো অন্ধকার রাত্রেই হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরে রাগে। আবিরের ছোট মামাও বোনের পক্ষ নিয়ে রাতের আঁধারে বেরিয়ে আসতে চায় বাড়ি থেকে। ওদের একটাই কথা আর সেটা হলো_
“এমন কালো মেয়েকে নিয়ে গেলে সোসাইটিতে মুখ দেখানো যাবে না।ওরা হাসাহাসি করবে।”
আবিরের বড় বোন আদিবার ভাষ্যমতে__
“মামা শুনো!
কালো’রাও মানুষ। ওরাও আমাদের মত এক’ই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। আর সবচেয়ে বড় সত্য হলো ওরাও আমাদের মতই এক আল্লাহর সৃষ্টি। তাই দয়া করে বন্ধ করেন বাজে কথা আর দেখেন আবির কি চাই? এ ব্যপারে ওর মতামত কি???
ঠিক তাই।
এই মুহূর্তে আবিরের মতামতটি নেওয়া সবচেয়ে জরুরী। তাই চলুন বন্ধুরা ঘুরে আসি আবিরের প্রোফাইল থেকে। দেখে আসি গল্পের নায়ক আবির কি বলে???
আবিরের ভাষ্য__
বাবা! মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। আর আমি জানি, আমি এই মেয়েকে নিয়ে অনেক সুখী হবো যদি তোমার/তোমাদের সবার দোয়া থাকে। তাই আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করতে চাই।
আমার কথা শুনে বাবা,মা আপু আর ডাক্তার দুলাভাই সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।
ডিসেম্বরের তেইশ তারিখ আমি আমার ঘরের লক্ষ্মীকে নিয়ে বাসায় ফিরি। এইদিনেই ওকে আমি বিয়ে করি। বিয়েটা খুব সাদাসিধে ভাবেই হয়েছে। তার একমাত্র কারন আমার মা এবং এক মামার বিরোধ।
বিয়েটা সাদাসিধে ভাবে হলেও বাসর ঘর’টা সাজানো হয় আমার ইচ্ছে মত’ই। বাসর ঘরে প্রবেশ করে দেখি বউ আমার গুটিসুটি মেরে বিছানায় বসে আছে। আমাকে দেখে’ই খাট থেকে উঠে সালাম করে আবার খাটে গিয়ে বসল ইয়া লম্বা ঘোমটা দিয়ে।
মাথা থেকে পাগড়ীটা খুলে ধীরপায়ে হেঁটে গিয়ে আমি আমার সদ্য বিয়ে করা বউয়ের পাশে গিয়ে বসলাম।বেশ কিছুক্ষণ কাশি দেওয়ার পরও বউয়ের কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না।বউ আমার পূর্বের ন্যায় মাথায় আধহাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। কি আর করার???
এভাবে বসে থাকলে যে পুরো রাত চলে যাবে। আর তাই কালবিলম্ব না করে আমি আমার বউয়ের একটা হাত আলতো করে ছুঁয়ে দিলাম।
মনে হচ্ছে নীলিমা আমার পরশে একটু কেঁপে উঠেছে কিন্তু তার বেশী কিছু নয়।আমার হাতের মুঠো থেকে হাত ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা না করে ও বসে আছে। চুপটি করে আছে। ওর এই মৌনতা যেন আমায় জানান দিচ্ছিল ও সর্বপ্রকার পরাজয় স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু আমি তো এটা চাই না।
আমি চাই আমার বউ আমায় প্রথমে চিনুক, জানুক, ভালোবাসুক তারপর অন্যকিছু। কিন্তু ও কি না..???
– বিয়ের পর একজন স্বামী শুধু স্ত্রীর সাথে শারীরিক বন্ধনে নয়, ভালোবাসার বন্ধনেও আবদ্ধ হয়। কেবল শারীরিক সম্পর্ক নয়, বৈবাহিক সম্পর্কের আরেক নাম স্বামী-স্ত্রীর অপার প্রেমের এক বন্ধন। আর সেই বৈধ প্রেম’টা শুরু হয় ফুলশয্যার রাত থেকে’ই….
যায় হোক…
ফুলশয্যার রাত্রে আমি আমার বউকে প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলাম__
” নীলিমা! ফুলশয্যার রাত তো প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ রাত, তাই না?”
– নীলিমা ঘোম’টার ভেতর থেকে মাথা নাড়ে। হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই বুঝিনি আমি। তবুও ওর এই মাথা নাড়ানো হ্যাঁ বোধক মনে করে ওর দিকে আরো একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। আর সেটা ছিল__
” তাহলে নিশ্চয় এ রাত সম্পর্কে তুমি জানো?”
নীলিমা এবারো মাথা নাড়লো। আমি নীলিমাকে উদ্দেশ্য করে বললাম__
“নীলিমা! আমি সাংকেতিক ভাষা বুঝিনা, তুমি যা বলার মুখে বলো। তুমি শুধু এটুকুই বলো এ রাত সম্পর্কে তুমি কিছু জানো কি না…???
নীলিমা এবার মুখ খুলল…
কাঁপা গলায় জবাব দিল_
” জি, জানি…”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কি জানো???
ও লজ্জানত হয়ে নিচুগলায় বলল__
” ভাবিরা যা শিখিয়ে দিয়েছে।”
ওর দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম__
তা তোমার ভাবিরা কি শিখিয়ে দিয়েছে? আমায় কি বলা যাবে???
নীলিমা ক্ষাণিক’টা কেঁপে উঠল। তারপর নিচু স্বরে জবাব দিল_
” আপনি যা বলেন তাই করতে।”
___ আচ্ছা, তাই নাকি???
নীলিমা মাথা নেড়ে বলল হুম। আমি নীলিমাকে আবারো প্রশ্ন করলাম__
” আচ্ছা, আমি তোমাকে কি বলতে পারি???”
__ বউ আমার লজ্জায় বলল, জানিনা! **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আমি দু’হাত দিয়ে বউয়ের ঘোমটা সরিয়ে বললাম-
“তোমার ভাবি এতকিছু শিখিয়ে দিল, তো এটা বলেনি আমি কি বলব/করব???”
লজ্জাবতী আমার লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে চুপসে গেল লজ্জাবতী পাতার মত’ই…..
নীলিমার মাথা থেকে ঘোমটা’টা সরিয়ে দিলে নীলিমা লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। আমি মুগ্ধ নয়নে আমার পরি’টাকে দেখছি। ওর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে অজান্তে’ই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে মাশাআল্লাহ।
যেন এক স্বর্গের পরি আমার সামনে বসে আছে।
যত দেখি তৃষ্ণা মেটে না…
নীলিমা তখনও চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। প্রশ্ন করলাম__
~নীলিমা, তুমি কি জানো একটি মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর কাছে কিসের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হয়?
নীলিমা চোখ খুলে বলল, আমি জানি না।
তখন আমি তাকে বললাম একটি মেয়ে যত সুন্দরীই হোক না কেন, বিয়ের পর তার সৌন্দর্যের দাম স্বামীর কাছে থাকে না। কারণ আমরা অনেক সময় অনেক পছন্দ করে মার্কেট থেকে কোনো পোশাক কিনলে প্রথমে সেটি খুবই যত্ন করি এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে পরি। কিন্তু কিছুদিন পর ঐ পোষাকটি যখন পুরনো হয়ে যায় তখন সেটি আমরা সাধারণ ভাবে ব্যবহার করি। তেমনি একজন স্বামীর কাছে স্ত্রী এবং স্ত্রীর কাছে স্বামীর দেহের সৌন্দর্য প্রতিনিয়ত পাঠ করা হয়। তখন তাদের মধ্যে দেহের সৌন্দর্যের আর কোণো আকর্ষণ থাকে না। বরং তখন একে অপরের বিভিন্ন গুন দ্বারা প্রভাবিত হয়। তখন দেহের সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে যায় একের প্রতি অপরের টান, ভালোবাসা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুনাবলি।
কথা বলা শেষ করে দেখলাম নীলিমা আমার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। রাত প্রায় শেষের দিকে। এর’ই মাঝে বার কয়েক লক্ষ্য করলাম নীলিমা চোখ কচলাচ্ছে। বোধ হয় ঘুম পাচ্ছে খুব।
আমি নীলিমাকে বললাম__
“নীলিমা! রাত অনেক হয়েছে। তুমি বরং ঘুমিয়ে পরো।”
নীলিমা বলল__
” না, না! আপনি বলেন। আমি শুনতেছি…”
আমি হেসে বললাম__
তোমার ভাবিরা কি শিখিয়ে দিয়েছে রাত জেগে আমার গল্প শুনতে? যদি শিখিয়ে দেয়, তাহলে শুনো। নাহলে ঘুমিয়ে পরো। নীলিমা চুপ করে রইল। ঘুমে ঢুলুঢুলু নীলিমা আমার সামনে শুইতে ইতস্তত বোধ করছিল। আমি বিছানা’টা ছেড়ে নীলিমা’কে বললাম__
” এই নাও তোমার বিছানা। এবার তুমি দরজা’টা লাগিয়ে শুয়ে পরো। কথা’টা বলে আমি অন্যরুমে ঘুমানোর জন্য বেরিয়ে আসছিলাম, ঠিক তখন’ই নীলিমা পিছন থেকে ডাক দেয় আমায়। বলে__
” আপনি ঘুমাবেন না?”
আমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললাম__
” ঘুমাবো। পাশেই একটা রুম আছে, ঐখানে’ই ঘুমাবো। তুমি ঘুমিয়ে পরো।”
আমার কথা শুনে নীলিমার মুখ’টা ইষৎ অন্ধকার হয়ে যায়। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সে আবারো ডেকে বলে__
” আপনি এ রুমে বিছানায় ঘুমান, আমি না হয় ফ্লোরে ঘুমাবো।”
নীলিমার কথা শুনে আমি ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকালাম। নীলিমা নিচের দিকের দিকে তাকিয়ে বলল__
” ঠিক আছে! আপনার যা ইচ্ছে।”
আমি গম্ভীর ভাব নিয়ে বললাম__
” কেন তোমার কি ইচ্ছে?”
আমি এ রুমে ঘুমাই, সেটা?”
নীলিমা কোনো কথা না বলে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল। আমি ধমকের স্বরে বললাম__
” কি হলো? কথা’তো বলো?”
নীলিমা মাথা নেড়ে বলল হুম। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম__
কিসের হুম???
নীলিমা ধীর গলায় বলল__
” আপনি এ রুমে ঘুমান। আমার অসুবিধা হবে না কোনো।”
কন্ঠে গাম্ভীয্যের ভাব এনে আমি নীলিমাকে জবাব দিলাম___
” তোমার অসুবিধা হবে না, কিন্তু আমার হবে। আমি আবার অচেনা কারো সাথে ঘুমোতে পারি না। আর সেই জায়গায় তুমি তো ঘোর অচেনা। তোমায় না জানি, না চিনি না মানি…
নীলিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলল__
” মানেন না মানে?”
আমি সহাস্যে জবাব দিলাম_
” মানে অতি সহজ। তোমায় বিয়ে করেছি ঠিক কিন্তু আমি তোমায় আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি।”
নীলিমা মুখটা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের মত করে বলল__
” আমি জানি…”
চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করলাম__
” কি জানো? “
নীলিমা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল__
” এই যে আপনি আমায় স্ত্রী হিসেবে মানতে পারেন নি আর পারবেন না কখনো।
আমি নীলিমাকে আবারো প্রশ্ন করলাম__
” তোমার এমন ধারনার কারন?”
নীলিমার জবাব_
” আমি কালো। ভীষণ কালো। কালো মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায় না। আর সে জায়গায় আপনি অনেক সুন্দর। রাজপুত্রের মত যার চেহেরা, সে কি না বিয়ে করবে কালিতারাকে? আমি আগেই জানতাম__
আমি কারো স্ত্রী হবার যোগ্য না। আমি সাগরে ভাসা কচুরিপনার….(….)…..???
নীলিমার কথা শুনে কেমন যেন বুকের ভেতরটা মুচর দিয়ে উঠল। ভিষণ রাগ হলো ওর প্রতি। আর তাই ওর কথার মাঝখানে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলাম। তারপর__
” একটা কথাও হবে না।চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো। আমি সোফায় ঘুমোচ্ছি। আর জীবনেও যাতে এমন কথা না শুনি।”
নীলিমা আর একটা কথাও বলে নি। আমি দরজা বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পরলে কিছুক্ষণ পর দেখি লাইট’টাও অফ। তার মানে ও শুয়ে পরেছে।
সোফায় শুয়ে আছি মাথার নিচে একটা হাত দিয়ে। ঘুম যেন চিরতরে বিদায় নিয়েছিল আমার চোখের পাতা থেকে। মনের কোণে হাজারো ভাবনা এসে জড়ো হচ্ছে। আনমনে’ই বলে যাচ্ছি__
” নীলি! তুমি কালো হতে পারো কিন্তু তোমার মন’টা অনেক ভালো। আমি তোমার শরীর নয়, সেই ভালো মনটা পেতে চায়। সে মনের ভালোবাসা পেতে চায়। আমি চাই তুমি আমায় ভালো ভাবে চিনো, বুঝো, জানো। ব্যস, এটুকুই।
নীলি! তুমি জানো???
আমি তোমাকে দেখা অবধি কাউকে এতটা অনুভব করিনি, তোমাকে দেখার পর থেকে বুকের ভিতর কেমন যেন অচেনা অনুভূতি নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। নীলি!
আমি তোমার শরীর নয়, তোমায় ভালোবাসতে চাই। তোমায় আমি স্ত্রী নয় আমার প্রেয়সী করতে চায় প্রথমে।
নীলি! আমি তোমার পাশে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চাই। আমি তোমার দুঃখ-সুখ দুটোরই সাথী হতে চাই। বলো নীলি!
এটুকু কি আমার খুব বেশী চাওয়া হবে???
নীলি! এটুকু কি আমি পেতে পারি না???”
অবচেতন মন নিজেকে নিজে’ই শান্তনা দিল___
” কেন নয় আবির?!!! তুই তো কোনো অন্যায় কিছু আবদার করিসনি! তবে কেন পাইবি না এটুকু। তুই অবশ্যই পাবি। তুই দেখে নিস, তুই জয়ী হইবি। তুই পারবি তোর নীলির মন উজাড় করা ভালোবাসা পেতে। সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধর, ধৈর্যের ফল সবসময় সুমিষ্ট’ই হয়।”
পরদিন রাত্রিবেলা__
” নীলিমা! একটা কথা বলব?”
নীলিমা ধীর গলায় বলল, জি বলেন!
আমি নীলিমাকে প্রশ্ন করলাম__
” তোমার এত্ত বড় নাম’টা কে রেখেছে???”
নীলিমা আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখটা ফিরিয়ে নিল।অন্যদিকে তাকিয়ে বলল__
” দাদা…”
আমি দুষ্টুমি করে বললাম__
” ঐ শালা কি দুনিয়াতে আর কোনো নাম খুঁজে পাননি? শালা, এত্ত নাম থাকতে এত বড় নাম রাখছে…”
নীলি আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল__
” ওনার নাম শালা নয়। রমজান। রমজান আলী ওনার নাম…”
আমি হেসে বললাম এই হলো আর কি….
আচ্ছা, তুমি কি অন্য নামে ডাকতে পারি না???!!!
– কি নামে???
___ অন্য নামে। এই যেমন ধরো নীলিমার মা’টা কেঞ্চি দিয়ে কেটে খাটো করে দিলাম। নীলিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলল__
” মানে নীলি?!!!”
আমি হেসে বললাম, জি! নীলি…..
কেন? পছন্দ হয়নি???
নীলিমা জোর গলায় বলল,
না, না! হয়েছে। আপনি আমায় নীলি বলে’ই ডাকবেন। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
___ আমি হেসে বললাম, ওকে! এখন থেকে আমি তোমায় নীলি বলে’ই ডাকব। তুমি নীলি। শুধু আমার নীলি….
স্যরি, অন্য কিছু ভেব না। আমি আমার নীলি বলতে বোঝাতে চাচ্ছি যে-
” এই নামে অন্য কেউ তোমায় ডাকতে পারবে না।”
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
নীলিমা চুপটি করে বসে রইল। আমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললাম__
” নীলিমা! আমার মা যে তোমার সাথে এমন করল আজকে, তোমার কষ্ট হয়নি? সত্যি বলবা, মিথ্যে বলো না…”
নীলিমা হেসে বলল,
কি যে বলেন না! কষ্ট পাবো কেন? ওনি তো আমার গুরুজন। কতকিছু’ই তো বলতে পারে, তাই বলে আমরা সব কথা কি মনে রেখে দিব??? আমি কিচ্ছু মনে করিনি।”
__ নীলিমা তুমি কি জানো তোমার বয়স কত???
~নীলিমা আমার কথায় জবাব দিল__
হ্যাঁ, জানি….
— কত???
নীলিমা কাঁপা গলায় জবাব দিল,
খুব কম।
আমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললাম__
” এই এত ছোট্ট হয়েও তুমি কিভাবে এত গুছিয়ে, সুন্দর করে কথা বলতে পারো???”
প্রশ্নোত্তরে নীলিমা কোনো জবাব দেয়নি….
দেখতে দেখতে ১৫টা দিন চলে যায়। দু’দিন পর পহেলা জানুযারি। আমার ভার্সিটির ছুটির দিন শেষ। আজকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে। ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে রেখেছি আগে থেকেই। আমি চলে যাব, সেটা নীলিমা জানে।তারপরও যাইবার কালে আবার বলার জন্য রুমে এলাম। নীলিমা বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আমার ডাক শুনে বিছানায় উঠে বসে। এই কয়দিনে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে নীলিমা। দু’জন অনেকটা বন্ধুর মত হয়ে গেছি। নীলিমা বিছানায় উঠে বসতে’ই আমি নীলিমাকে বললাম__
” আসি….”
নীলিমা আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করল। তারপর বলল__
” আচ্ছা “
আমি নীলিমাকে বলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিলাম। ট্রেনে বসে আছি। রাস্তা প্রায় অর্ধেক অতিক্রম করে ফেললাম। হঠাৎ মনে হলো ফোন’টা বেজে উঠল।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ঢাকা থেকে স্যার কল দিয়েছে। কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো জামাল স্যারের কন্ঠ।
– আবির স্যার! আপনার জন্য সুখবর আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আপনার কাজে খুশি হয়ে আপনাকে একমাসের ছুটি দিয়েছে। আপনি বেতন পাবেন, কিন্তু এই একমাস আপনার ভার্সিটিতে আসতে হবে না। আপনি আরাম করে হানিমুন করেন…..
স্যারের কথা শুনে আমার খুশি আর দেখে কে?
তাড়াতাড়ি করে ট্রেন থেকে একটা স্টেশনে নেমে গেলাম। আমি কখনো বাস দিয়ে যাতায়াত করিনি, কিন্তু আজ করলাম। ট্রেন আসতে দেরী হবে শুনে আর বসে থাকিনি। নিকটস্থ বাস স্টপে গিয়ে বাসে উঠে পরলাম। চিটাগাংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। এই কয়দিনে নীলিমার মায়ায় পরে গিয়েছিলাম। ওকে ছেড়ে আসার পর থেকে বুকের ভেতরটাই অদ্ভত এক শূন্যতা অনুভব করছি। ভাবতেই অবাক লাগছে ওকে আরো একটা মাস কাছে পাব। দেখতে পারব।
বাসায় পৌঁছলাম পরদিন দুপুরে। বাসায় প্রবেশ করে দেখি বাসায় কেমন যেন থমথমে ভাব।অদ্ভুত এক নিরবতা….
দৌঁড়ে উপরে উঠলাম।
মা ঘুমোচ্ছে জানতাম, তাই মায়ের কাছে না গিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। দরজার সামনে যেতে’ই শিউরে উঠলাম।
– আমার প্রাণপাখি নীলি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছে। গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে আর তার পাশে’ই বসে আছে বাসার কাজের মেয়ে’টি। মেয়েটি বার বার বলছে__
” ভাবি! কাঁদবেন না। কাঁদলে আপনার শাশুড়ি শুনতে পাবে যে, তখন ওনি আবার আপনাকে….
এটুকু বলে দরজার সামনে তাকিয়ে আমাকে দেখে থমকে গেল মেয়েটি। কোনো কথায় যেন ওর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। ইশারায় আমি মেয়েটিকে ডাকলাম। রুম থেকে একটু দুরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম__
” ও হয়েছে তোর ভাবির?”
মেয়েটি চুপ হয়ে আছে।
আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম__
কি হলো বল? নীলি কাঁদছে কেন? কে কি বলছে ওকে???
এবারো কাজের মেয়েটি চুপ। আমি এবার ওকে ধমক দিয়ে বললে ও যা বলল তাতে আমার সারা শরীর শিহরণ দিয়ে উঠল।
– কি?!!!
আমার মা ওকে মেরেছে?
ওর পিঠে গরম হাতা দিয়ে মেরেছে???
আমি যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দৌঁড়ে গেলাম আমার নীলির কাছে। ও আগের মতই উপুড় হয়ে আছে। আর ওর ঘাড়ের কাছে কিছুটা চামড়া উঠে গিয়ে লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ গরম জাতীয় কিছু এ স্থানে ফেলেছে। নীলি তখনও উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে। নীলির এ অবস্থা আমি যেন মেনে নিতে পারছিলাম না। ওকে আস্তে করে ডাক দিলাম।
– নীলি…..
ও হকচকিয়ে উঠে বসল। আমাকে দেখে আঁচল দিয়ে পিঠ’টা যথাসম্ভব ঢাকার চেষ্টা করল।
আমি নীলিকে প্রশ্ন করলাম__
” কি ঢাকতেছ?”
নীলিমা যেন আঁতকে উঠে আমার দিকে তাকালো….
আমি ভেঁজা কন্ঠে বললাম__
” বলো…
কি ঢাকতেছ আঁচল দিয়ে?”
নীলিমা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মেয়েটির দিকে একবার তাকালো….
চলবে….
.
সকল পর্বের লিংক একসাথে
https://kobitor.com/category/uponas/phul/
২.খুব রোমান্টিক গল্প
বাসররাতে আমার স্বামী তার বুকের সাথে আমার হাতটা চেপে ধরে বললো
–” আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি? কখনো তোমার কাছে তোমার অতীত জানতে চাইবো না। শুধু তোমার ভবিষ্যৎটা সম্পূর্ণ আমার।
আমি মুচকি হেসে বললাম ঃ- হুম আপনি পারেন আমাকে বিশ্বাস করতে। আমি আপনার হক কাউকে দিবো না। আমি কি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি?
–” হুম পারো। আমি তোমার বিশ্বাসে মর্যাদা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
কথাগুলো বলার সময় আমাদের দুইজনের চোখ পানিতে ভিজে যাচ্ছিলো। সে আমার চোখ মুছে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কিছু সময় পর আমি জানতে চাইলাম আপনি চোখের পানি মুছুন।
সে হেসে বলেছিলো ঃ- এই চোখের পানি মোছার দ্বায়িত্ব তোমার।
–” আমি কখনো আপনার চোখে আমার জন্য পানি আসতে দিবো না।
–” আমিও দিবো না।
সেদিনের পর থেকে রোজ রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার স্বামী বলতো –” আমি বিশ্বাস করি তোমায়। আমিও তার কথায় মুচকি হাসি দিতাম।
একদিন খেয়াল করলাম সে কয়েকটা কাগজ নিয়ে পড়ে আর মুচকি মুচকি হাসে। কিন্তু এই মোবাইল ফোনের যুগে কি কেউ লাভলেটার দেয় নাকি? আমি আসলেই কাগজগুলো লুকিয়ে ফেলে। কেমন একটা সন্দেহ তৈরী হলো। তাহলে কি এখন চিঠির মাধ্যমে প্রেম করেন উনি। তাই যদি না হয় তাহলে আমায় দেখলেই কেন সে কাগজগুলো লুকিয়ে রাখবে। লুকিয়ে খেয়াল করে দেখলাম সে কাগজগুলো ম্যানিব্যাগে রেখে দেয়৷
গোসল করতে বাথরুমে গেলে লুকিয়ে কাগজগুলো বের করতেই আমার চোখ কপালে উঠলো। কি সুন্দর প্রেমের বানী লিখে রেখেছে। রাগের থেকে কষ্টই বেশি হচ্ছিল। হঠাৎ খেয়াল করলাম হাতের লেখাটা আমার৷ একমিনিট এইগুলো তো আমার ডাইরির পেজ। তার মানে উনি আমার ডাইরি থেকে সব পেজ ছিড়ে নিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে ডাইরি বের করে দেখলাম তাতে একটা লেখা পেজও আর নেই। সব ছিড়ে নিয়ে গেছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে সে এই অবস্থা দেখে কি করবে বুঝতে পারছিলো না। আমি ততো সময় রেগে ফুলে বেলুন হয়ে গেছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো
–” আসলে এতো সুন্দর কথা আমাকে নিয়ে লেখেছো যে সবসময় পড়তে ইচ্ছে করে তাই ছিড়ে নিয়েছি তুমি রাগ করো না৷ সবসময় তো তোমার সাথেই থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারি না তাই নিয়েছি তুমি রাগ করো না সোনাবউ আমার৷
আমি রাগ দেখিয়ে চলে গেছিলাম। বিকালে অফিস থেকে ফেরার সময় ফুচকা চটপটি আইসক্রিম চকলেট গোলাপফুল আর বেলিফুলের মালা নিয়ে এসেছিলো৷ বোকা হাসি দিয়ে বললো
–” তোমার কি পছন্দ তাতো জানি না তাই সব নিয়ে এলাম। তুমি আবার পছন্দ জানি না বলে রাগ করো না কিন্তু। তাহলে এখন আমি কিন্তু কান্না করবো।
তার কথাশুনে আমি ফিকফিক করে হেসে দিলাম। সে মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুদিন পর আমার ফোনে অচেনা একটা নম্বর দিয়ে কল আসলো সে পাশেই বসা ছিলো। আমি অনেক দ্বিধা নিয়ে কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে রাখলাম। ওপাশ থেকে মা কথা বলছে। কথা শেষে সে মুচকি হেসে বললো
–” আমি পাশে থাকলে লাউডস্পিকারে দিয়ে কথা বলার দরকার নেই। আমি বিশ্বাস করি তোমায়।
–” সবাই ভালোবাসি বলে আর আপনি বিশ্বাস করি বলেন কেন?
–” ভালোবাসার রং বদলে যেতে পারে কিন্তু বিশ্বাস বদলায় না হয়তো ভেঙে যায় নয়তো অক্ষত থাকে। আর ভালোবাসি কথাটা প্রমাণ করা অনেক কষ্টের আর বিশ্বাস করা প্রমাণ করা কিছুটা সহজ। ভালোবাসার প্রথম স্তর হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস না থাকলে কখনো ভালোবাসা থাকে না৷ তোমাকে যদি অন্য ছেলে বলে ভালোবাসে তোমায় তখন তোমার মনে হবে আমি বিশ্বাস করি তোমায়। কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে গেলেও এটা মনে পড়বে।
আমি তার কথা শুনে আবেগে চোখের পানি ফেলেছিলাম। সে ব্যস্ত হয়ে পানি মুছতে লাগলো আর বলতে লাগলো তোমাকে কি কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি? আমি মাথ নেড়ে না বলে তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম।
সময়ের সাথে আমার সুখের সংসার পর হচ্ছিল। কিন্তু সুখ সবার কপালে সহ্য হয় না। একদিন দুইজনে ঘুরতে গিয়ে একটা গাড়ি আমাকে চাপা দিতে এগিয়ে এলো আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মানুষটা গাড়ির নিচে পড়ে গেলো। আমি তার মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো
–” আল্লাহ চাইলে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে আর তুমি আমার জন্য দোয়া করো। একটা কথা বলবো আমি অনেক হিংসুটে তোমার ভাগ কাউকে দিতে চাই না। আমি সত্যিই চাই না ওপারে কেউ তোমাকে দাবী করুক। আমি বিশ্বাস করি তোমায়।
–” তোমার কিছু হবে না। ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি সবাই চলে আসলো বলে।
লোকটা সেদিন আর কথা বলেনি। বিদায় নিয়ে চলে গেছে দুনিয়া থেকে। সেদিনের পর আরো পনেরোটা বছর পর পার হয়ে গেছে। আমার মা বাবা শশুর শাশুড়ী সকলে আমার জন্য পাত্র খোঁজে। আশেপাশের লোকজন বলে তোমার বয়সই বা কত আর একটা বিয়ে করে নেও। কিন্তু কাউকে নিয়ে কিছু ভাবতে গেলে আমার কানে একটাই কথা বাজে–” আমি বিশ্বাস করি তোমায় “
#আমি_বিশ্বাস_করি_তোমায়
#ফারহানা_কবীর_মানাল
৩.বড়দের রোমান্টিক গল্প
ফুপাতো ভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
গত সপ্তাহে বাসায় ঢুকতেই বড় ফুপি হাত টেনে সাইডে নিয়ে গেলো। গলার স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করলো – তোর ভাইয়ের কি পছন্দের কোন মেয়ে আছে? আমরা যেসব মেয়ে দেখাই কাউকেই তার পছন্দ হয় না। ঘটনা কি?
ফুপির কথা শুনে আমার মাথায় দুষ্ট-বুদ্ধি খেলে গেলো।
‘আছে তো। এই দেখো’ – বলেই ফুপিকে বলিউড নায়িকা সারা আলী খানের ছবি দেখালাম।
‘ফুপি, মেয়েটার নাম, ঠিকানা জানি না। তবে ভাইয়া এই মেয়েটাকেই পছন্দ করে। মেয়েটা কিন্তু অত্যাধিক সুন্দর। ভাইয়ার পাশে ভালো মানাবে’
ফুপি খানিকটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, নাম টাম জানোস না? আচ্ছা সমস্যা নেই। ঘটক তোতা ভাইকে ছবি দিলেই হবে। খোঁজাখুঁজির জন্য ঝানু পাবলিক। দু’দিনের ভেতর বের করে ফেলবে। দাঁড়া তোতা ভাইয়ের নাম্বারটা বের করি…
আজ শুনলাম, ঘটক তোতা ভাই ছবির ওই মেয়েকে নাকি খুঁজে পেয়েছেন। মেয়ের বাড়ি বংশালে। নাজিরা-বাজারে তাদের দু’টো বিরিয়ানির দোকান আছে। পুরাই নবাবী অবস্থা।
ভাবছি, ঘটক তোতা মোতা ভাইকে একটু হাত করে রাখা দরকার। আজকাল আমার আবার দীপিকা পাড়ূকোনকে ভালো লাগতাসে খুব।
লেখা: Nahid Ashraf Uday
৩.প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গল্প
(১৮+ এলার্ট: এই গল্পে ধর্ষণ পরবর্তী সামাজিক জটিলতা এবং কিছু স্ল্যাং আছে, প্রাসঙ্গিক অবশ্যই। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে)
“আরে কীসের রেইপ? আমি তো শুনলাম মেয়ের বয়ফ্রেন্ডই ছিলো। বয়ফ্রেন্ডের সাথে নাকি বেড়াতে গেসিলো। বেড়ানো আবার কী? ফষ্টিনষ্টি করতে গিয়ে ধরা পড়লে সবাই এইরকমই বলে ভাবী!”
বিকাশের দোকানে বিদ্যুৎ বিল দিতে এসেছি। আমাকে দেখেই বোধহয় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আন্টি দুইজনের ফিসফাস শুরু হয়েছে। ফিসফাসটা উনারা এমনভাবে করছেন, যাতে কানে তুলা দিয়ে থাকলেও আমার কানে সেইটা এসে পৌঁছাতে পারে। আমি কানে তুলা গুঁজে আসিনি অবশ্য। আমি রেইপ ভিকটিমের ভাই। কানে তুলা গুঁজে থাকলেও আমার রেহাই নেই। তাই শান্তভাবে বিলটা দিলাম। বের হওয়ার সময় দুইজন আন্টির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম, “আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন আপনারা?”
আন্টি দুইজন গলে গিয়ে মাখনের মতো মোলায়েম গলায় বললেন, “ওয়া আলাইকুম আসসালাম। এইতো আছি বাবা। তোমরা কেমন আছো? তান্নির কী খবর? একটু ভালো আছে আগের চেয়ে?”
“জ্বী আন্টি, আপু ভালো আছে। বাসার সবাইও ভালোই আছে। নীলিমা আপু ভালো আছে আন্টি?”
নীলিমা আপুর মা যে আন্টি, তিনি উত্তর দিলেন, “আছে আর কী। দিনকাল যা পড়সে বাবা, খুব ভয় হয় মেয়েটাকে নিয়ে।”
আমি বললাম, “ভয় তো হওয়ারই কথা আন্টি। সেদিনও দেখলাম আবির ভাইয়ার সাথে এক রিকশায় গায়ে গা লাগিয়ে ঘুরছে। বলা তো যায় না, ফষ্টিনষ্টি করে ধরা পড়ে গিয়ে তারপর যদি আবার আমার আপুর মতো অভিযোগ তুলতে হয় নীলিমা আপুকে? খেয়াল রাখবেন আন্টি!”
মানুষের মুখ যে স্বাভাবিক রঙ থেকে ছাই রঙের হয়ে যায়, এটার প্রমাণ আমি পেয়ে গেলাম নীলিমা আপুর মা আন্টির চেহারা দেখে। পাশের আন্টি কী করবেন বা বলবেন বুঝতে না পেরে দোকানদার আংকেলের কাছে এসে বললেন, “এই বিকাশ থেকে কি বিদেশে টাকা পাঠানো যায়?”
আমি আরেকবার মিষ্টি হেসে সালাম দিয়ে বললাম, “আসি আন্টি। ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।”
পরশুদিনও একই রকম আরেকটা ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি আমি। বাসায় কাঁচাবাজার নেই। বাজারে গেছি সবজি কিনতে। হঠাৎ করে পিঠে কে যেন হাত রাখলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি হেদায়েত আংকেল; আমাদের পাশের বাসাতেই থাকেন। তিনিও এই আন্টির মতোই সুন্দর করে হেসে কুশল জিজ্ঞাসা করে এরপর বললেন, “ইয়ে, ওইযে তান্নির ব্যাপারটা, তোমরা তো মামলাটামলা করসো শুনলাম।”
হেদায়েত আংকেল এলাকার মুরুব্বীগোছের মানুষ। এলাকার মানুষজন বিপদে-আপদে তাঁর সাথে পরামর্শ করে নেয়। আমরা করিনি। আপু বলামাত্র আমরা থানায় গিয়ে জিডি করেছি। হেদায়েত আংকেল এই কারণে আমাদের ওপর নারাজ। আমি বললাম, “জ্বী আংকেল, মামলা করেছি। সামনের সপ্তাহেই কোর্টে কেইস উঠবে।”
হেদায়েত আংকেল ঘ্যাসঘ্যাস করে তাঁর দাঁড়ি চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “মামলা কইরা আর কী হবে বাবা? এরচেয়ে আমারে জানাইতা! আমি আরো দুই একজনকে নিয়া বইসা ছেলের গার্জিয়ানের সাথে কথা বলতাম। একটা মিলমিশ কইরা বিয়ের ব্যবস্থা করা যাইতো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “যে ছেলে আপুকে রেইপ করলো, তার সাথে আপুর বিয়ে হবে ক্যান?”
“বাবারে, তোমার বয়স অল্প, রক্ত গরম। তোমরা বুঝো না বাস্তবতা কী। এই মেয়েটার জীবন তো নষ্ট হয়া গেলো। এরপরে যতবার এর বিয়ের কথা উঠবে, ততবার এর এই দুর্ঘটনার কথা উঠবে। বিয়ে ভাঙবে। যে তার সাথে এইটা করলো, তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়াটাই তো এখন উচিত। তাইলে আর পরে মেয়েটারে লজ্জা পাইতে হয় না। আর যতদূর জানি, ছেলে আর মেয়ে তো অপরিচিত না। তাদের মধ্যে নাকি লাইন ছিলো?”
আপু আর সাদমান ভাই, এখন আর ভাই বলতে ইচ্ছা করে না আমার; আপু আর সাদমান প্রেম করতো। কিন্তু প্রেম করতো বলে আপু তো সাদমানকে ধর্ষণ করার অধিকার দিয়ে দেয়নি। এটা এদেরকে কে বোঝাবে? আর লাইন আবার কেমন শব্দ? শুনলেই মনে হয় দুইজন মিলে অশ্লীল একটা কাজ করছে!
আমি প্রাণপণে মাথা ঠান্ডা রেখে বললাম, “না আংকেল। আমরা সমঝোতায় যাচ্ছি না। দুইজন ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম আছে তার মানে এই না যে ছেলেটা মেয়েটাকে রেইপ করে দিবে। সাদমান অপরাধী এবং এইটার শাস্তি সে পাবে। আমার আপু শেষ পর্যন্ত লড়বে।”
হেদায়েত আংকেল আরো জোরে জোরে দাঁড়ি চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “দেখো, তোমরা যা ভালো বুঝো। তবে এলাকারও তো একটা মানসম্মান আছে, নাকি?”
আমি শক্ত গলায় বললাম, “এলাকার একটা মেয়েকে একজন রেইপ করে দিলো, তার সাথে সমঝোতা করে সেই মেয়েকে তার কাছেই বিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে যাবেন, তখন এলাকার মানসম্মান থাকে আংকেল?” বলে আর দাঁড়ালাম না। এই লোকটাকে দেখলেই ঘেন্না লাগছে।
সাদমানের সাথে যে আপু ঘুরতে যাবে এটা বাসার সবাই জানতাম। ওদের সম্পর্কের কথা বাসায় জানিয়েছে বছরখানেক আগে। সকালবেলা নতুন জামাকাপড় পরে বের হলো বেড়াতে যাওয়ার জন্য। বিকালবেলা বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরলো। জামাকাপড় ছেঁড়া। ঠোঁটের একপাশ ফুলে আছে নীল হয়ে। গলার কাছে লালচে দাগ। বাবা দেখে চমকে উঠলেন। মা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। আমি শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখি এই অবস্থা। আমার আপু শক্ত ধরণের মেয়ে। সে ঠাণ্ডা গলায় বললো, “তমাল, মা’কে তুলে বিছানায় নিয়ে শোয়া। চোখেমুখে পানি দিয়ে দে। একটু পানি খাওয়া। বাবা, আমার সাথে থানায় চলো। হাসান ভাইকে আসতে বলো।”
বাবা হতভম্ব হয়ে বললেন, “জামাকাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে যা মা।”
আপু শুধু বললো, “প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে। চলো।”
আপু আর বাবাকে হাসান ভাইয়া পৌঁছে দিলো অনেক রাতে। প্রায় দেড়টার সময়। হাসান ভাইয়া আমার মামাতো ভাই। ভাইয়ার অনেকদিকে অনেক চেনাশোনা আছে। আইনি প্রক্রিয়াগুলিও ভালো বোঝে। ওরা একবারে ল-ইয়ারের সাথে কথা বলে এসেছে। তিনি বলেছেন, তাঁর ঘরেও মেয়ে আছে। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
আপুকে মা একা থাকতে দেয়নি সেই রাতে। বাবার প্রেশারটেশার বেড়ে ভয়ংকর অবস্থা। সারা রাত বাসার কারো চোখে ঘুম নেই। এইরকম ভয়াবহ রাত আমাদের বাসায় আর আসেনি। ফেসবুকে, সোশাল মিডিয়াতে, অনলাইন পোর্টালে সয়লাব হয়ে গেছে চটকদার শিরোণামে, “প্রেমিকের সাথে ডেটে গিয়ে তরুণী ধর্ষিত” কিংবা “ধর্ষক ছিলো তরুণীর প্রেমিক!” কিংবা “ডেট করাটাই কাল হলো তরুণীর”। বন্যার পানির মতো মেসেজে ভরে যাচ্ছে আমার ফোনের ইনবক্স। সবার জানার খুব আগ্রহ, আসলেই আমার বোন প্রেমিকের কাছে ধর্ষিত হয়েছে কিনা। কেউ কেউ আকারে ইঙ্গিতে বলে যাচ্ছে, আসলেই ধর্ষণ, নাকি পারস্পরিক সম্মতি! পাবলিক পোস্ট বা পোর্টালের কমেন্টগুলিতে আপুকে সমানে গালিগালাজ করে যাচ্ছে লোকজন।
“মাগী, গেসিলি ক্যান রুমডেট করতে?”
“মারাইতে চাইলে আমার কাছেই আসতি!”
“রাজি তো ছিলাই, এখন আর ধর্ষণ বইলা কী লাভ? মজা তো তুমিও পাইসিলো বোন!”
“কীরকম বাবা-মা, মেয়েকে একা ছেড়ে দেয়?”
“সবই আধুনিকতার ফল! আজকে ধর্মীয় অনুশাসন থাকলে এই দিন দেখতে হতো না। নারীর সবসময়ই পর্দায় থাকা উচিত।”
আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে রাগে। আমার বোনটা, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা নিজের প্রেমিকের কাছে এইভাবে ঠকে আসলো; এতো বড় একটা এক্সিডেন্টের মধ্য দিয়ে গেলো, যার ভার সারাজীবন সে বয়ে বেড়াবে; আর এই মানুষগুলি! আমি আমার ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললাম।
আমি বারবার চোখ কচলাচ্ছি, এই আশায় যে, হয়তো দেখবো এটা একটা দুঃস্বপ্ন। আসলে এইরকম কিছু হয়নি। আপু সন্ধ্যাবেলা হাতে একটা গোলাপের তোড়া হাতে বাসায় ঢুকেছে। সাথে তিন পিস কেক। সাদমান ভাই বাসার জন্য কিনে দিয়েছে ফেরার পথে। হাতে গোলাপের তোড়া হাতে নিয়ে আপু পড়েছে বাবার সামনে। বাবা গম্ভীর স্বরে বলছেন, “খালি ঘোরাঘুরি করলেই তো হবে না। সামনের পরীক্ষাটা ঠিকমতো দাও দুজনে, এরপরে বাসায় প্রস্তাবটস্তাব পাঠাতে বলো!” আপু লজ্জায় লাল হয়ে ঘরে চলে যাচ্ছে।
অথচ ঘটনা এইরকম হয়নি। আমার চোখ জ্বালা করে পানিতে ভরে আসে। ভোরের নরম আলো বাসার মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে। দুঃস্বপ্নের রাত শেষ হয়ে ভোর হচ্ছে। অথচ সামনে কী অসীম অন্ধকার!
আমি বারান্দায় এসে চমকে উঠলাম। বারান্দার মেঝেতে আপু হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছে। সারা রাত সেও ঘুমায়নি। আর কি কখনো শান্তিতে ঘুমাতে পারবে মেয়েটা?
আমি পাশে বসে আলতো করে তার কাঁধে হাত রাখলাম। ধড়মড় করে উঠে বসলো আপু। আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বললো, “আমি ওকে অনেকবার না করসিলাম তমাল। ও জোর করে…”
আমি শুধু আপুকে শক্ত করে ধরে বসে রইলাম। আমার বুকের ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলতে থাকলো।
সকালবেলা আমরা বুঝতে পারলাম জীবন আমাদের জন্য কতোটা কঠিন হয়ে গেছে। সকাল থেকে আত্মীয়স্বজন বাবা-মায়ের ফোনে ফোন করে আহাজারি শুরু করেছেন। একজনের পর একজন ফোন করছেন। প্রথমে শুরু করেন, “ও ভাই গো, ও আপা গো, কী সর্বনাশ হয়ে গেলো গো!” দিয়ে, আর শেষ করেন “তাহলে মেয়েটাকে নিয়ে এখন কী করবেন! এক কাজ করেন, ছেলেটার ফ্যামিলির সাথে কথা বলেন। দেখেন কথাবার্তা বলে বিয়েশাদির ব্যবস্থা করা যায় কি না।”
বাবা-মা পাথর হয়ে সব শুনে যাচ্ছেন। যে যা বলছে, এক কথায় তার উত্তর দিচ্ছেন। একটু পরপর বাসার কলিংবেল বাজে। “কে?” জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাওয়া যায়, “আমি অমুক পত্রিকা বা টিভি থেকে আসছি। আপনাদের সাথে একটু কথা বলা যাবে?” বাবা-মা বোধহয় দরজা খুলে দিতেন। কিন্তু আপু ভেতর থেকে দৌড়ে এসে বললো, “আমার যা বলার কোর্টে বলবো। ভিকটিমের ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন কেন? রেপিস্টেরটা নেন পারলে।”
আমি জানি, অপদার্থ অনলাইন পোর্টালের নিউজ রিপোর্টাররা আপুর কথা শুনে এখন লিখবে, “পড়ুন, সাংবাদিকদের এ কী বললেন ধর্ষিতা!”
সাদমান ভেবেছিলো আপু বোধহয় বিষয়টা চুপচাপ হজম করে যাবে। দীর্ঘ আড়াই বছর আপুর সাথে প্রেম করেও সে এটা বুঝতে পারেনি যে, আমার আপু এখন লুতুপুতু প্রেমটা বাঁচানোর জন্য ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাবে না। সে ভেবেছিলো, এই মেয়ে আজকে হোক কালকে হোক তারই বউ হবে; তাকে একটু জোর করে রেইপ করলেই কী! কিন্তু এটা সে ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে, আপু এই আঘাত সামলে নিয়ে মামলা করতে যাবে। জিডি হবে এটাই সে আন্দাজ করতে পারেনি। আপু যখন বাসায় এসে থানার দিকে রওয়ানা হয়েছে, সে সম্ভবত তখন বাসায় গিয়ে ভরপেট খাওয়াদাওয়া করে ফেসবুক ব্রাউজ করছিলো। কিছুক্ষণ পর ফেসবুকেই সে দেখে তার প্রেমিকা তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছে। সে এক কাপড়ে বাসা ছেড়ে পালায় ওই রাতেই। আপুর কাছে সে ফোন করলো পরদিন বিকালবেলা। ফোন করেই সে আপুর কাছে কাকুতিমিনতি শুরু করলো, “তান্নি, প্লিজ, দেখো, যা হইসে হইসে। কিন্তু অ্যাট দ্য এন্ড কি ম্যাটার করে বলো? তুমি আমি একসাথে আছি, এটাই তো? না? তুমি আমার এগেইন্সটে গেলে কীভাবে সম্ভব বলো?”
আপু কঠিন গলায় বললো, “সাদমান, তোমার কী মনে হচ্ছে? তুমি কী করসো?”
“মানলাম আমি একটা ভুল করসি। আমার ভুল হইসে। আমাকে মাফ করো। প্লিজ কেইসটা তুলে নাও বাবু। জাস্ট গিয়ে বলবা যে তোমার কনসেন্ট ছিলো। আমরা তো কাপল এটা সবাই জানে। কনসেন্টে এটা হইতেই পারে, না? কেইসের ঝামেলা শেষ হলেই আমরা বিয়ে করে ফেলবো। সারাজীবন রানীর মতো রাখবো তোমাকে। প্লিজ!”
“আমি তোমাকে এইসব জিজ্ঞেস করি নাই। তোমাকে জিজ্ঞেস করসি তুমি কী করসো কালকে।”
“তুমি চাও নাই, কিন্তু আমি জোর করসি।”
“জোর করে কী করসো নিজের মুখ দিয়ে বলো।”
“কী করসি এটা বলাটা খুব দরকার?”
“হ্যাঁ দরকার। তোমার নিজের মুখে একবার উচ্চারণ করে দেখো জঘন্যতম কাজটার কথা। দেখো কেমন লাগে। নইলে তোমার অনুতাপ হবে না।”
“তুমি মানা করা সত্ত্বেও সেক্স করসি তোমার সাথে।”
“আমি শুধু মানা করি নাই। আমি প্রাণপণে বাধা দিচ্ছিলাম তোমাকে। ঠিক কিনা?”
“ঠিক।”
“এটাকে সেক্স করা বলে?”
“না রেইপ বলে।”
“দ্যাট মিনস, তুমি আমাকে রেইপ করসো, রাইট?”
কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে সাদমান বললো, “হ্যাঁ রেইপ করসি। কিন্তু আমার ভুল হইসে। প্লিজ মাফ করে দাও। কেইসটা তুলে নাও। আমার পুরা ফিউচার নষ্ট হয়ে যাবে।”
“সিরিয়াসলি? আর আমার ফিউচার?”
“তোমার ফিউচারের দায়িত্ব আমার।”
“অসম্ভব। আমি আমার রেপিস্টের কাছে আমার ফিউচারের দায়িত্ব দিবো? নেভার!”
“তুমি মামলা তুলে নিবা না তাইলে? আমার কিন্তু অনেক বড় লিংক আছে। মামলা করে কিছুই করতে পারবা না আমার।”
আপু ঠান্ডা গলায় বললো, “তোমার অনেক বড় লিংক থাকতে পারে। আসো তোমার লিংক নিয়ে। আমিও যাই আমার প্রমাণ নিয়ে। দেখা যাক কী করতে পারো তুমি!” বলে আপু ফোন রেখে দিলো।
আমি পুরোটা সময় আপুর পাশে বসে ভাবছিলাম, এই মেয়েটা, এই সাহসী মেয়েটা আমার বড় বোন? এই যোদ্ধা মেয়েটা আমার বোন? আপুকে নিয়ে আমার এতো গর্ব হলো! আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “কাঁদিস না। কনভারসেশন রেকর্ড করেছি। এই কল ভেরিফাই করলেই ও ফেঁসে যাবে।”
ঘটনার দুই দিন পর আমি বাসা থেকে প্রথম বের হয়েছি। গেটের দারোয়ান থেকে শুরু করে গলির দোকান পর্যন্ত মানুষজন আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইলো, যেন চিড়িয়াখানার জন্তু বা ফাঁসির আসামী দেখছে। আমার ইচ্ছা হলো চিৎকার করে সবাইকে বলি, “আমার আপুর কোনো দোষ নাই, আমাদের কোনো দোষ নাই। যে দোষ করেছে তার দিকে এইভাবে তাকান।” পারলাম না। এক দিন, দুই দিন করে এই দৃষ্টিও গায়ে সয়ে গেলো। এরপরেই শুরু হয়েছে এই হেদায়েত আংকেল আর পাশের বাসার আন্টিদের মন্তব্য। জানি না কোথায় গিয়ে থামবে।
আপুর মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ধর্ষণের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে বলে ডাক্তার মিডিয়াকে জানিয়েছেন। বাকি রিপোর্ট আর প্রমাণসহ সাক্ষ্য কোর্টে দেয়া হবে। চুপিচুপি তিনি বাবাকে বলেছেন, “আপনার মেয়েটা যে সাথে সাথে থানায় চলে এসে কী বুদ্ধিমতীর কাজটা করেছে! সব হাতেনাতে ধরা গেছে একদম। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টটা আসলেই এখন নিশ্চিন্ত। আপনার মেয়ে অনেক স্ট্রং। তাকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দেবেন। বাইরের লোকের কথায় কান দেয়ার দরকার নেই।” বাবার সাথে আমিও ছিলাম। চিনি না জানি না এই ডাক্তার ম্যাডামের কথায় আমার চোখে পানি এসে গেলো। এইটুকু সহানুভূতি আর কমনসেন্স কেন সব মানুষের থাকে না?
সাদমান ধরা পড়েছে। সে পালিয়ে পালিয়ে মোটামুটি পাঁচ দিন থাকতে পেরেছে। এরপরেই ধরা পড়ে যায় সে। প্রযুক্তির এই যুগে ফোন ট্র্যাক করেই একটা মানুষকে ধরে ফেলা যায়। পুলিশ এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট সাহায্য করছে আমাদের। সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। সাদমান ধরা পড়ার পর থেকেই আমাদের বাসায় তার বাবা-চাচারা ফোন করা শুরু করলো। প্রথমে অনুরোধ-উপরোধ, পরে সেটা হুমকিতে রূপান্তরিত হলো। আপুকে দেখে দেখে আমরাও এখন আগের চেয়ে শক্ত হয়েছি। বাবা তাঁর কথায় অনড় রইলেন, কোনোরকম সমঝোতায় আমরা যাবো না।
জীবনটা আমাদের জন্য একটু সহজ হতো যদি মিডিয়া আর আশেপাশের মানুষজন আপুকে ব্যবচ্ছেদ না করতো। ফেসবুকে যাই না কারণ গেলেই দেখি, কমেন্ট সেকশনে আপুকে ধর্ষণ করে যাচ্ছে এক দল মানুষ। আমি আতঙ্কিত হই, কারণ তাদের সংখ্যাটা অনেক বড়। অনেক বেশি বড়।
আগামীকাল কেইসটা কোর্টে উঠছে। আপুকে যেতে হবে। বাবা-মা আর আমিও যাবো সাথে। টিউশনি করে জমানো কিছু টাকা ছিলো আমার। আমি সেটা দিয়ে একটা নতুন জামা কিনে এনেছি আপুর জন্য। এটা পরে আপু প্রথম দিন কোর্টে যাবে। আমার বোন একটা যুদ্ধ করতে যাচ্ছে, তাকে এইটুকু সাজিয়ে তো আমি দিতেই পারি, না?
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমি টুপ করে আপুকে একটা সালাম করে ফেললাম। এমনিতে পিঠাপিঠি হওয়ায় জীবনেও আপুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার কথা ভাবিনি। আজকে করলাম কারণ এইরকম অসীম সাহসী একটা মেয়ের পায়ে হাত দিয়ে আমি এক হাজারবার সালাম করতে পারি। আপু শুধু আমার মাথায় হাত রেখে বললো, “শোন তমাল, একদিন তোর গার্লফ্রেন্ড হবে, বউ হবে। মেয়ে হবে। প্রত্যেককে ট্রিট করার আগে আজকের দিনটা শুধু মাথায় রাখবি। আজকের দিনটা কখনো ভুলে যাস না।”
আমি মাথা নাড়লাম। আজকের দিনটা আমি কোনোদিন ভুলে যাবো না।
আমি সিএনজি ডেকে এনেছি। বেশ কিছুদিন পর আপু বাসা থেকে বের হয়ে আসছে। এলাকার উৎসুক মানুষজন সিএনজির কাছে ভিড় করেছে। তাদের কানাঘুষা চলছে। সিএনজিওয়ালা অবাক হয়ে তাকাচ্ছে, এখানে ভিড়ের কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে।
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। সে ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসছে। তার দুই চোখে এতোদিন গভীর বিষাদ দেখে এসেছি। প্রেমিকের কাছে ধর্ষিত, প্রতারিত, অপমানিত হওয়ার বিষাদ। আজকে দেখতে পাচ্ছি আগুন।
শুধু সেই দুই চোখের আগুনই দুনিয়ার সব ধর্ষককে পুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
গল্প: আগুনের দিন
©তাসনিয়া আহমেদ
৫.স্বামী স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্কের গল্প
১.
আমার স্বামী আমাকে খুব ভালোবাসে। সার্বক্ষণিক সে আমার খেয়াল রাখে। কী খাচ্ছি, কী পরছি, কোথায় আছি, সব কিছুর খবর নেয়। যা আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। এবং এই আনন্দের কথা বেশ গর্ব করে অন্যদের বলি।
কিন্তু এই ভালোবাসা ছিলো ভুল। এবং কী করে এই ভুল চোখে পড়তে শুরু করলো সে কথা বলি।
ওকে নিয়ে একদিন শপিং করতে গিয়েছি। পোশাক কিনবো। লাল রঙ আমার পছন্দ। আমি একটা লাল শাড়ি পছন্দ করলে সে আমাকে বললো,”লাল রঙ তোমাকে মানাবে না। তুমি সবুজ রঙের শাড়ি কেনো।”
বললাম,”লাল রঙ আমার ভালো লাগে। সবাই বলে লাল রঙের পোশাকে আমাকে বেশ মানায়।”
সে বিরক্ত হয়ে বললো,”বললাম তো লাল রঙে তোমাকে মানাবে না।”
মন খারাপ করে সবুজ রঙের শাড়ি কিনলাম।
আরেকদিন ফোনে এক খালাত বোনের সাথে কথা বলছিলাম। স্বামী তখন অন্য রুমে ছিলো।
কথা শেষ হলে সে রুমে এসে বললো,”কার সাথে কথা বলছিলে?”
“রিনির সাথে। আমার খালাত বোন।”
“এতোক্ষণ কথা বলার দরকার নেই।”
“বেশি সময় তো কথা বলি নি। আর ওর সাথে কমই কথা হয়।”
ও রেগে গিয়ে বললো,”তর্ক কোরো না। আমি পাশের রুম থেকে শুনেছি তুমি অনেকক্ষণ কথা বলেছো। ধরো, আমি যদি এখন বাইরে থাকতাম, এবং তোমাকে ফোন করতাম তাহলে কি তোমাকে পেতাম? তাই বলছি, এসব খালাত মামাত বোনদের সাথে কম কথা বলবে। কথা না বললে আরো ভালো।”
আমি আর কিছু বললাম না।
আরেকদিন পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী একটা প্রয়োজনে আমাকে তার ঘরে নিয়ে গেলেন। ভাবীর সাথে কথা বলছি, এমন সময় স্বামীর ফোন এলো।
সে বললো,”কোথায় তুমি?”
বললাম,”পাশের ফ্ল্যাটে আছি। দীপা ভাবীদের বাসায়।”
“যাওয়ার আগে আমাকে বলেছো?”
গলা নিচু করে বললাম,”পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, এখানে বলার কী আছে?”
সে ক্রুদ্ধ হয়ে বললো,”অবশ্যই বলার আছে। যেখানে যাবে আমাকে বলবে। অনুমতি দিলে তারপর যাবে।”
আর কিছু বলার ইচ্ছে হলো না।
অন্য একদিন একটা বিয়ে থেকে বাড়ি ফেরার পর সে আমাকে বললো,”কালো শার্ট পরা ছেলেটার সাথে এতো হেসে হেসে কী কথা বলছিলে?”
আশ্চর্য হয়ে বললাম,”ও আমার ছোটো ভাইয়ের বন্ধু। আমাকে আপু বলে ডাকে। ওকে ছোটো ভাইয়ের মতো দেখি।”
“তাই বলে হেসে হেসে গলে যেতে হবে? আমি সাফ বলে দিচ্ছি, কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলা যাবে না। সে যেই হোক।”
অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।
আরেকদিন একটা উপন্যাস পড়ছিলাম।
সে জিজ্ঞেস করলো,”কী পড়ছো?”
“উপন্যাস পড়ছি।”
মুহূর্তে সে বইটা আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললো,”এই সব ফালতু বই টই পড়বে না। গল্প উপন্যাস হলো বাজে জিনিস।”
সেদিন নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না।
বললাম,”আমি কী পরবো, কোথায় যাবো, কার সাথে কথা বলবো, কীভাবে কথা বলবো, কী রঙের পোশাক পরবো, কী বই পড়বো, সব তোমার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করতে হবে?”
উত্তরে সে বললো,”তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো এসব করতে বলি। তুমি কি চাওয়া না তোমাকে ভালোবাসি? তোমার খোঁজ খবর রাখি?”
“অবশ্যই চাই তুমি ভালোবাসো। কিন্তু তুমি যা করছো, তা ভালোবাসা নয়, এটা হলো আমাকে নিয়ন্ত্রণ করা।”
“চুপ থাকো। বেশি বোঝো তুমি।”
সে আমার কথা পাত্তা দিলো না। এবং যথারীতি আমার ওপর খবরদারি চালিয়ে যেতে লাগলো।
২.
এক গরমের মাঝরাতে ফ্যান অফ করে দিলাম। রুমের খোলা জানালা দুটো লাগিয়ে দিলাম। দরোজা বন্ধ করলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমার স্বামী গরমে ভিজে ঘুম থেকে জেগে উঠে হতভম্ব হয়ে বললো,”কী ব্যাপার, ফ্যান, দরোজা, জানালা সব বন্ধ কেনো?”
শান্ত গলায় বললাম,”ওগুলো আমি বন্ধ করেছি।”
“কিন্তু কেনো?”
“তোমাকে ভালোবাসি তো তাই।”
সে ক্ষেপে গিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,”কী পাগলের মতো কথা বলছো? এখানে ভালোবাসাটা কোথায়? ফ্যান চালাও, দরোজা, জানালা খোলো। দম আটকে আসছে আমার।”
তখন বললাম,”দিনের পর দিন আমার পছন্দ অপছন্দগুলোকে বাতিল করে, তোমার পছন্দ অপছন্দগুলোকে ভালোবাসার নামে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার ওপর চাপাতে চাপাতে, আমার জীবনটাকে তুমি এই আলো, বাতাসহীন বদ্ধ রুমের মতো করে তুলেছো। আমার দমও আটকে আসছে।”
তারপর বললাম,”তুমিই বলো, এখানে ভালোবাসাটা কোথায়?”
এটুকু বলে ফ্যান চালালাম। দরোজা, জানালা খুলে দিলাম। এরপর শুয়ে পড়লাম।
সে কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো।
পরদিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো। ঘুম ভেঙে দেখি স্বামী অফিসে চলে গেছে, আর বিছানার পাশের ছোট্ট টেবিলটাতে ট্রেতে নাশতা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে রয়েছে একটা সাদা কাগজ। সেখানে কী যেনো লেখা।
কাগজটি হাতে নিয়ে দেখলাম আমার স্বামী লিখেছে,”সন্ধ্যায় লাল শাড়ি পোরো। তোমাকে শহরের সবচেয়ে বড়ো বইয়ের দোকানে নিয়ে যাবো। তোমার দু হাত ভর্তি করে কিনবো তোমার পছন্দের বইগুলো।
নিচে বি:দ্র: দিয়ে লিখেছে,”আর যেতে না চাইলে যাবো না। ঘরে বসে অপলক চোখে লাল শাড়ি পরা তোমাকে দেখবো।”
চোখ দুটো হঠাৎ ঝাপসা হয়ে এলো। ঝাপসা চোখে বহুদিন পর বুক ভরে শ্বাস নিলাম।
“একটি ভোরের দৃশ্য”
– রুদ্র আজাদ
……..
………………………..
একজন বিধবা মহিলার সাথে দেখা হলো। তার মুখে শুনলাম তার স্বামীর ভালোবাসার কথা, নিজের চোখে দেখলাম তার গভীর প্রেমের নিদর্শন। ভদ্রমহিলার নাম নাইমা বেগম। তিনি একটি কলেজের ইংরেজীর প্রফেসর। তার স্বামী ২০১৭ সালে হজ্জে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেছিলেন।
নাইমা বেগমের মেয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে আমরা গিয়েছিলাম ছেলে পক্ষের আত্মীয় হিসেবে। তিনি সোনালী রঙের উপরে মেরুন রঙের কাজ করা একটা ব্রোকেট কাতান শাড়ী পরেছিলেন। শাড়ীর আঁচলটা হাতের মধ্যে একটু ভাজ করে ধরে রেখেছেন। শাড়ীটি বেশ গর্জিয়াস, আমাদের দেশে বিধবা মহিলারা ঠিক এত উজ্জল শাড়ী পরে না। একজন আত্মীয়া নাইমা বেগমকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয়ের শুরুতেই তিনি তার শাড়ী নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। আমরা অবাক হয়ে শুনছিলাম।
“আমি বিধবা তবুও আজ এ শাড়ীটা পরেছি। আমার নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে। আমার দেবরা সবাই বিয়েতে এসেছে, আমার খুব খারাপ লাগছে যে ওরা নিশ্চয়ই ভাবছে আমাদের ভাই নেই কিন্তু ভাবী এত রঙীন শাড়ী পরেছে কেন! কিন্তু শাড়ীটি আমি আজ না পরে পারলাম না। আমার স্বামী ২০১৬ সালে দিল্লী গিয়েছিলেন অফিসিয়াল কাজে এবং আমার জন্য এ শাড়িটি নিয়ে এসেছিলেন। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে শাড়িটি পরবো বলে রেখে দিয়েছিলাম। শাড়িটি কখনো খুলে দেখিনি, ঠিক যেভাবে তিনি এনেছিলেন সেভাবেই আলমারিতে ছিলো। এর কয়েক মাস পরে তিনি হজ্জে যান এবং ইন্তেকাল করেন। শাড়িটি আর কখনো আমার পরা হয়নি। মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো। শাড়িটি মেয়েকে দিয়ে দিলাম। বাবার কেনা শাড়িটি পেয়ে মেয়েও খুব খুশী। বৌভাতের আগের দিন আমার মেয়ে শাড়িটি খুলেই তুমুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে শাড়িটি আমার কাছে নিয়ে এসে বললো, বৌভাতে এ শাড়িটি তোমাকে পরতেই হবে।”
কথা শেষ করে তিনি হাতের মধ্যে যত্ন করে ধরে রাখা আঁচলটি আমাদের সামনে মেলে ধরলেন। আঁচলে সুতা দিয়ে ভরাট সেলাইয়ে সুন্দর করে বেশ বড় বড় হরফে লিখা ‘Nayma Begum’.
নাইমা বেগমের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর আমরা? .. ‘ তাজমহলের শুভ্র পাষাণে দুফোটা অশ্রু কার? একটি যেন গো শ্বেত কমল পাপড়ি মেলেছে তার।’…. চোখের সামনে আর একটি তাজমহল দেখে আমাদের চোখগুলি মুগ্ধতার জলে ছলছল করে উঠলো।