#পুকুর রহস্য পর্ব ১
আমাদের বাড়ির সর্বদক্ষিণে যে দীঘিসম বিশাল পুকুর, তা খনন করেছিলেন আমার দাদার আব্বা সরদার মোত্তালিব খাঁ। তিনি নাকি একরাতে স্বপ্নে দেখলেন, এক বিশাল দেহের শ্বেতশুভ্র একজন ব্যক্তি তাকে আদেশ দিচ্ছেন বাড়ির দক্ষিণে একটি পুকুর খননের। কিন্তু বেশ কিছু শর্তজুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তারমধ্যে প্রথম ছিলো একশত একজন খননকারী দিয়ে পুকুর কাটতে হবে।
তাদের অবশ্যই পুকুর কাটার আগে সম্পূর্ণভাবে পাকপবিত্র হয়ে আসতে হবে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পুকুর খননের কাজ শেষ করতে হবে। আর কাজ শেষ করার পর পিছনে তাকানো যাবে না। সোজা হেঁটে চলে যেতে হবে। আমার দাদার আব্বা ছিলেন তখনকার সময়ে অত্র গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন যুবক। তাঁর সৌন্দর্যের জন্য তাঁকে আর কেউ মোত্তালিব বলে ডাকতো না।
তাঁর ডাকনাম হয়ে গিয়েছিলো চন্দ্র। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভীষণ দুরন্ত স্বভাবের ছিলেন। তাঁর আম্মাজান নাকি ছেলেকে সামলাতে না পেরে দরজার খুটির সাথে তাঁকে বেঁধে রাখতেন। তাও তিনি বাঁধন ছুটিয়ে বেরিয়ে চলে যেতেন।বারো বছর বয়সে একদিন তিনি মাগরীবের আজানের কিছু সময় আগে দক্ষিণের বাঁশঝাড়ের দিকে যান ব্যাঙ ধরতে। তারপর অনেকক্ষণ পর্যন্ত ফিরে না আসার তাঁর আম্মাজানের অনেক দুশ্চিন্তা হয়। কারণ যতই দুরন্তপনায় তিনি মেতে থাকুন না কেনো, মাগরীবের আজানের আগেই তিনি বাড়িতে ফিরে আসতেন। এক ওয়াক্ত নামাজও তিনি কখনো কাজা করতেন না বোধ হওয়ার পর থেকে।
নামাজ পড়েই উনার আম্মাজান চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন অস্থির হয়ে। খুঁজতে খুঁজতে বাঁশঝাড়ের দিকে এগিয়ে যান তিনি। জংলা জায়গা। কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ তিনি এমন একটা দৃশ্য দেখলেন অন্য কেউ দেখলে হয়তো সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যেতেন। কিন্তু উনি ছিলেন ভীষণ শক্তসমর্থ মনের বিদুষী মহিলা। তিনি দেখলেন, তাঁর ছেলের চারপাশ জুড়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মতো আলো বিরাজ করছে। সেই আলোর মাঝে তাঁর ছেলেকে মনে হচ্ছে বেহেশত থেকে আসা কোনো গেলমান। তিনি কেঁপে ওঠেন।
দাদাজানের আব্বা তখন অন্যদিকে তাকিয়ে অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলছেন আর উত্তরগুলো আসছে গায়েবী একটা আওয়াজে। উনার আম্মাজান যে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, কোনো খেয়ালই নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর উনার আম্মাজান নূরজাহান বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় ছেলেকে ডাকলেন,”আব্বাজান, আপনি কি করেন এখানে?”
হঠাৎ করে উনার চারপাশের আলো নিভে যায় আস্তে আস্তে দাদাজানের আব্বা অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়েন।
সেই ঘটনার পর থেকে দাদাজানের আব্বার অনেক পরিবর্তন আসে। হঠাৎ হঠাৎ গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে উনার। তখন উনি অদৃশ্য কারো সাথে কথা বলতে থাকেন আরবী ভাষায়। উনার আব্বাজান তো কবিরাজ,ওঝা কিছু বাদ রাখেন না। কিন্তু কোনোভাবেই উনি সুস্থ হন না। বরং কবিরাজ,ওঝা আসার পরে তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।শেষ মুহুর্তে নূরজাহান বেগম তাঁর স্বামীকে বললেন,”এসব বন্ধ করেন। আমার ছেলের কপালে ভালো কিছুই আছে।”
তারপর থেকে উনি একদম সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এমন অবস্থাতেই চলছিলো। হঠাৎ একরাতে দাদাজানের আব্বা সেই পুকুর খননের স্বপ্ন দেখলেন। তাঁর তখন চব্বিশ বছর বয়স। টগবগে যুবক। মাত্র কিছুদিন হয়েছে বিয়ে হয়েছে। দাদাজানের আম্মাও ছিলেন হুরপরীর মতো সুন্দরী। যাই হোক, ওই স্বপ্ন দেখার পর দাদাজানের আব্বা অস্থির হয়ে পড়েন পুকুর খননের জন্য। একশত একজন পুকুর খননকারী তিনি যোগাড় করেন। তাদের সবাইকে পাকপবিত্র হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু যখনই তারা শুনতে পান যে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে তারা বেঁকে বসলেন। এতো বড় কাজ কোনোভাবেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হতে পারে না। দাদাজানের আব্বা হুংকার ছেড়ে আদেশ দিলেন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পুকুর খননের কাজ শেষ করতেই হবে। তারা ভয় পেয়ে কাজ শুরু করে দেয়। রাত বারোটা থেকে তারা কাজ শুরু করে দেয়। পুরো একটা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা বিশাল এক পুকুর কাটে। কলকল করে জমিন থেকে পানি উঠতে থাকে। যে দেখে সেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এমন পুকুর তারা আগে কখনো দেখেনি। টলটলে পানি দেখেই চোখ জুড়ে যায়। পরের দিন ঠিক রাত বারোটায় কাজ শেষ হয়। সবাই অবাক, এতোবড় পুকুরের কাজ কীভাবে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টায় শেষ হতে পারে। সরদার মোত্তালিব খাঁ সবাইকে নির্দেশ দেন, পুকুর থেকে সোজা উঠে আসতে। কেউ যেনো ভুলেও পুকুরের দিকে না তাকায় পিছন ফিরে। উনার আদেশ মতো সবাই উঠে চলে আসতে থাকেন। কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের মধ্যে খুব কৌতুহল হয়। কি হবে পিছনে তাকালে? সবাই যখন একে একে চলে যেতে থাকলো, সে ইচ্ছা করে পিছনে পড়ে গেলো। সবাই চলে গেলে সে অনেক ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকায়। কিন্তু তৎক্ষনাৎ সে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সরদার মোত্তালিব খাঁ অনেকবার জানতে চেয়েছেন সেই লোকের কাছে কি এমন দেখেছে সে। কিন্তু ততদিনে তার চোখ অন্ধ হয়ে যায়। বিছানায় পড়ে যায়। ওই রাতের কথা কিছু জিজ্ঞেস করা হলে তার মুখ থেকে ফেনা বেরিয়ে যায়, গোঁ গোঁ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় সে। এরপর দাদাজানের আব্বা যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি ওই লোকের সংসারের সমস্ত ব্যয় নিজে বহন করতেন। ওই ঘটনার মাত্র বছর খানিকের মাথায় ওই লোকের মৃত্যু হয়। তারপরেও তার সংসারের ভার সরদার মোত্তালিব খাঁ-ই বহন করে যান।
এসব গল্প আমার দাদীর মুখ থেকে শোনা। ছোটবেলা থেকে এসব গল্প শুনে শুনেই বড় হয়েছি আমরা। এই গল্প কখনো পুরোনো হতো না আমাদের কাছে। আমার আব্বারা তিন ভাই এক বোন। আমার আব্বা ছিলেন সবার ছোট। দাদাজানের আব্বার সেই সৌন্দর্য আমরা ছিঁটেফোঁটা না পেলেও পেয়েছিলেন আমার বড় চাচা সরদার কালাম খাঁ। তার থেকে সেই সৌন্দর্য পেয়েছিলো আমার বড় চাচার একমাত্র মেয়ে রূপালী আপা। গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী সে। কি তার গায়ের রঙ! দুধে আলতা। সরু নাক, পাতলা গোলাপি ঠোঁট, হাঁটু ছাড়ানো ঢেউ খেলানো চুল। দেখলেই যেনো মনে হয় অপ্সরী বুঝি কোনো। ছোট থেকে বড্ড আফসোস ছিলো আমার, কেনো বড় আপার মতো সুন্দরী হলাম না!
কিন্তু কষ্টের কথা এটাই যে, এতো সুন্দরী হওয়া সত্ত্বেও বয়স বেড়ে যাচ্ছিলো আপার,কিন্তু বিয়ে হচ্ছিলো না। কতো ভালো ভালো জায়গা থেকে প্রস্তাব আসতো। তারা এসে দেখে যেতো আপাকে। আমাদের পাঁচমহলা বিশাল বাড়ি, আপার সৌন্দর্য সবকিছু দেখে তারা পাগল হয়ে যায়। কিন্তু পরেরদিনই তারা খবর পাঠান, পরে জানাবেন তারা। এভাবেই আপার বয়সটা বেড়ে যাচ্ছিলো,কিন্তু বিয়ে হচ্ছিলো না। বড় চাচা তো দুশ্চিন্তায় শেষ। আপার পরে আমাদের বাড়ির আরো দুই মেয়ে আছে। মেজো চাচার মেয়ে সোনালী আপা আর আমি পালকী। বড় মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না দেখে আমাদের বিয়ের জন্যেও আগাতে পারছে না পরিবার। তাতে আমার আব্বা আম্মার কোনো সমস্যা না হলেও মেজো চাচা প্রায়ই আকার ইঙ্গিতে বড় চাচাকে ছোটবড় কথা শুনাতেন। বড় চাচা আরো বিমর্ষ হয়ে পড়েন এসব শুনে। এমন না যে, আমার বড় আপার চরিত্রে কোনো সমস্যা। তার মতো এমন মেয়ে গ্রামে দুইটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রেম করা দূরে থাক কোনো ছেলেদের সাথেও কখনো কথা বলতে দেখা যায়নি তাকে।সবসময় সম্পূর্ণ পর্দার মধ্যে থাকতো। এভাবেই আমাদের দিনগুলো চলছিলো। এরই মধ্যে একদিন বড় আপাকে দেখতে ঢাকা থেকে এক পাত্রপক্ষ এলো। এমন রাজপুত্র দেখে সবার তো মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা। যেমন তার চেহারা তেমনি তাদের পারিবারিক অবস্থা। ছেলে একজন হার্টের ডাক্তার। এক বাবার এক ছেলে। বাড়ির অবস্থা বেশ ভালো। ছেলের বাবা মা দুইবোনসহ ছেলে এসেছিলো আপাকে দেখতে। বড় চাচা এমন কোনো আয়োজন বাকি রাখেননি পাত্রপক্ষের আপ্যায়নে। পুকুর থেকে বিশাল ওজনের মাছ তোলা হয়। গরু জবেহ দেওয়া হয়। বাইরের উঠোনে বিশাল ডেগে রান্না চড়ানো হয়। মেজো চাচা মুচকি মুচকি হাসেন আর বড় চাচাকে বলেন,”এতো করে কি হবে ভাইজান? সেই তো ফিরে যেয়ে বিয়ে ভেঙে দেবে। তারচেয়ে মেয়েকে আজীবন কুমারীই রেখে দেন।”
বড় চাচা সাথে সাথে মুখ কালো করে ফেলেন। মেজো চাচা সবসময় এভাবে কথা বলেন। বড্ড খারাপ লাগে আমাদের সবার।
আপাকে খুব পছন্দ করেন পাত্রপক্ষ। বড় চাচা খুব করে চাচ্ছিলেন সেদিনই যেনো কাজী ডেকে কলমা পড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পাত্রপক্ষ এভাবে হুট করে বিয়েতে রাজি নয়। আমার দাদী বেঁচে আছেন তখন, দাদা বেশ কিছু বছর আগেই মারা গিয়েছেন।
আমার দাদী অনেক অনুরোধ করেন পাত্রপক্ষকে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই রাজি হন না। সেদিনের মতো পাত্রপক্ষ চলে যায়। বড় চাচা আশায় বুক বেঁধে বসে থাকেন। যদিও সবার ধারণা এবারও পাত্রপক্ষ না করেই দিবেন। তবুও বাবার মন তো! বলে রাখা ভালো আমার বড় চাচী আমার বড়দা মানে বড় চাচার ছেলে রায়হানকে জন্ম দিতে যেয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। মা মরা মেয়ের বাবাই যেনো সব।
সেদিন রাতে আমরা আমাদের নিচতলার হলঘরে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম সবাই মিলে। মেজো চাচা হাসতে হাসতে বললেন,”কি গো ভাইজান, এখনো তো পাত্রপক্ষ কিছু জানালো না। এবারও ভেঙে গেলো তো?”
আমার দাদী শক্ত গলায় বললেন,”হারুন(আমার মেজো চাচা), ভুলে যেও না তোমার আম্মা এখনো বেঁচে আছেন। বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পেয়েছো কোথায় তুমি?”
আমার আব্বা,চাচা ফুপুরা আর যাই হোক তাদের আম্মাকে ভীষণ ভয় পান। মেজো চাচা মুখ অন্ধকার করে চুপ করে বসে থাকেন। হঠাৎ আমাদের বাড়িতে লোডশেডিং হয়। সেদিন ছিলো অমাবস্যার রাত।ঘুটঘুটে অন্ধকার। একহাত কাছের জিনিসও দেখতে পাচ্ছি না আমরা। আমার দাদী বললেন,”তোমরা চুপ করে বসে থাকো। আমি যেয়ে হারিকেন ধরিয়ে আনি।”
দাদী উঠে যাওয়ার ঠিক দুই মিনিটের মাথায় আমাদের জানালার কপাট সজোরে জানালার সাথে বাড়ি খেতে থাকে। বাইরে শোঁ শোঁ আওয়াজ করে ঝড়ের মতো বাতাস। আর বাতাসে কেমন যেনো একটা গন্ধ। অনেকটা আগরবাতির মতো, কিন্তু তারচেয়েও অনেক বেশি কড়া। আমার কেমন যেনো ভয় ভয় করতে লাগলো। বড় চাচা উঠে জানালা বন্ধ করতে যাবে এরমধ্যে কে যেনো বড় চাচার নাম ধরে ঠিক তিনবার ডাকলো। ডাকটা ভেসে এলো পুকুরপাড় থেকে। “কালাম কালাম কালাম।”
আমরা আঁৎকে উঠলাম। সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের পাঁচিল ঘেরা বাড়ির মূল ফটক আটকানো থাকে। বাড়ির লোক ছাড়া কোনোভাবেই কারো পুকুরপাড়ে থাকা সম্ভব নয়। আর এমন গায়েবী আওয়াজ কোনো মানুষের হওয়া সম্ভব নয়। আমি ছুটে যেয়ে আমার মা কে জাপটে ধরলাম। সবার একই অবস্থা। আমার আব্বা জোরে জোরে তাকবির দিতে লাগলেন।বড় চাচাও কালেমা পড়তে থাকলেন। সবমিলিয়ে ভয়ংকর পরিবেশ।
ঠিক দুইমিনিটের মাথায় আমার দাদী হারিকেন নিয়ে প্রবেশ করলেন। হারিকেনের আলোয় দেখলাম সবার মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে আছে। আমি আর বড় আপা আমার আম্মাকে জড়িয়ে কাঁপছি।
দাদী শক্ত গলায় বললেন,”কালাম।”
“জ্বি আম্মা।”
“যেই দৃশ্যই দেখো ভয় পাবে না। বিশ্বাস রাখবে, যাই হোক আমাদের ক্ষতি সে করবে না। আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে যাও। আর হ্যা অবশ্যই সালাম দিবে।”
দাদীর নির্দেশ পেয়ে বড় চাচা কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে গেলেন। বাইরে তখন প্রলয়ঙ্কারী ঝড় আঘাত হেনেছে।
আমার আব্বা বললেন,”ভাইজান আপনি একা যাবেন? আমি আসি সাথে?”
আমার দাদী বললেন,”না আশরাফ(আমার আব্বা)। কালামকে একা ডাকা হয়েছে। আর কেউ যাবে না।”
বেশ কিছুক্ষণ পর বড় চাচা ফিরে এলেন। ততক্ষণে ঝড় অনেকটা কমেছে। বড় চাচা ঘরে ঢোকার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে এলো। আমাদের মুখ তখন আতঙ্কে ধূ ধূ করছে। আমাদের সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি উপেক্ষা করে বড় চাচা দাদীকে বলেন,”আম্মা আমাকে একটা কাঁথা দেন। আমার বড্ড শীত করছে। আমার একটু ঘুম দরকার।”
চাচার চোখ লাল টকটকে জবাফুলের মতো হয়ে আছে।চাচার ওই মুখ দেখে আমরা কেউ কোনো কথা বলার সুযোগ পেলাম না। দাদী সেদিন চাচাকে একা ঘুমাতে যেতে দিলেন না। তার ঘরে নিয়ে রাখলেন। আমাদের কারো ঘুম হলো না সে রাতে। চাচার সে রাতে ধুম জ্বর আসে। দাদী সারারাত চাচার মাথায় পানিপট্টি দিতে থাকলেন।
ফজরের আজান হওয়ার ঠিক এক মিনিটের মাথায় চাচার শরীর ঘেমে জ্বর নেমে যায়। চাচা শোয়া থেকে উঠে বসে দাদীকে বলেন,”আম্মা আমার খিদা পেয়েছে। আমাকে চিকন করে আলু ভেজে ভাত খেতে দেন।”
দাদী সোজা রান্নাঘরে চলে গেলেন। চিকন করে আলু ভেজে, গরম ভাত করলেন। নিজে হাতে ছেলেকে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন। এরপর আমাদের সবাইকে ডাকলেন চাচা।
সবার উদ্দেশ্য বললেন,”এখন বেশি কথা বলবো না। তোমরা বিয়ের আয়োজন করো। আজই রূপালীর বিয়ে হবে। হাতে সময় কম।”
মেজো চাচার মুখ কালো হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললেন,”ভাইজান কি জ্বরের ঘোরে পাগল হয়ে গেলেন? কি প্রলাপ বকছেন? ছেলেপক্ষ এখনো কিছু জানালো না, কিসের আজই বিয়ে?”
বড় চাচা মুচকি হেসে মেজো চাচার দিকে তাকিয়ে বললেন,”শুধু জেনে রেখো একটা খারাপ ছায়া রূপালীর উপর থেকে চলে গেলো। আর কোনো কথা বলার সময় নেই। কাজ শুরু করো তোমরা।”
কি হয়েছিলো সেই ঝড়ের রাতে? কে ডেকেছিলো বড় চাচাকে? আর কি কথা হয়েছিলো তাদের মধ্যে? পরের পর্বে রহস্য উন্মোচন হবে।
চলবে………