গরুর কালো ভুনা দিয়ে রুটি খাচ্ছেন এ এস পি রবিন সাহেব। পাশে বসা ওসি কামাল। রুটিটা খুব ভালো হয়েছে। চালের গরম গরম রুটি। মাংসটা রান্নাও ভালো হয়েছে। একেবারে রুটি দিয়ে খাওয়ার মতো রান্না। রুটি দিয়ে মুখে দেওয়ার সাথে সাথে গলে যাচ্ছে।
ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, “নেন খাওয়া শুরু করেন।”
ওসি সাহেব একটু ইতস্তত করে খেতে বসল। একটা রুটি নিয়ে মাংস দিয়ে মুখে পুরল। সত্যি অসাধারণ স্বাদ! এমন রুটি মাংস বহুদিন খাওয়া হয় না। এম পির বাড়ির রান্না বলে কথা।
এ সময় এ এস পি সাহেবের মোবাইলটা বেজে উঠল। মোবাই ওসি সাহেবের পাশে রাখাছিল। উনি স্ক্রিন দেখে বললেন, “এম পি সাহেব কল দিয়েছেন স্যার।”
এ এস পি ইশারায় মোবাইলটা দিতে বললেন। ওসি সাহেব মোবাইলটা এ এস পি কে দিলো।
“হ্যালো স্যার।”
“কি খবর রবিন সাহেব? “
“খবর ভালো স্যার।”
“আমার ছেলে কে ছেড়ে দাও এখনি।”
এখন তো ছাড়া যাবে না স্যার। দিনেরবেলা থানা থেকে একজন ধর্ষণের আসামি বেরিয়ে যাচ্ছে, এটা জানাজানি হলে বিপদে পড়ে যাব স্যার।
“কখন ছাড়বা?”
“রাতে ছেড়ে দিবো স্যার। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। রাতে আপনার ছেলে বাসায় থাকবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। “
মোবাইলটা পাশে রেখে বললেন, “এম পি সাহেবের ছেলে কে ছেড়ে দিতে হবে! একজন কাজের মহিলার মেয়ে কে ধর্ষণ করার জন্য এম পি র ছেলে কে তো ধরে রাখা যায় না তাই না? “
“জি স্যার। সমস্যা নাই স্যার আমি সব ব্যবস্থা করব।”
“মেয়েটা কোন হাসপাতালে আছে আপনি জানেন?”
“জি স্যার। আমি নিজে দেখা করে এসেছি স্যার। খুবই দূর্বল মনের মেয়ে। খুব একটা ঝামেলা হবে বলে মনে হয় না। এ নিয়ে চিন্তা করবেন না স্যার।”
রবিন সাহেব ওসি কামালের দিকে তাকিয়ে বললেন,” মেয়েটার মা কে চিনেন?”
“না স্যার। শুনেছি মানুষের বাড়িতে কাজ করে।”
“হ্যা,মানুষের বাড়িতে কাজ করে। আম্বিয়া খালা। কার বাড়ি কাজ করে জানেন?”
ওসি কামাল বেশ অবাক হলেন। এ এস পি সাহেব কী করে মেয়ের মার নাম জানল?” না, স্যার জানি না।”
“আমার দাদার বাড়িতে। গত ত্রিশ বছর ধরে আম্বিয়া খালা আমাদের বাড়িতে আছেন। “
ওসি কামাল খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছে। রুটি খেতে এখন আর ভালো লাগছে না। সে বুঝতে পারছে না। ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে।
“আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমার মা স্ট্রোক করল! মা আগের মতো চাল করতে পারে না! তখন থেকে আম্বিয়া খালা আমাকে মানুষ করেছেন। সে যাই হোক উনি তো একজন কাজের মহিলাই তাই না?”
ওসি কোনো জবাব দিলো না। উনি বুঝতে পারছে না কি জবাব দিবে। স্যার নিজেই আসামী কে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এখন আবার কী সব আবেগী কথাবার্তা বলছেন!
“সায়মা মেয়েটা কে তো দেখেছেন?”
মাথা দুলিয়ে জবাব দেয় ওসি সাহেব।
“ছোটোবেলা থেকে ভালো ছাত্রী ছিলো। বাবা সায়মা কে পড়াশোনা করাল। ও সুযোগ পেয়ে ভালো রেজাল্ট করল। এ বছর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।”
খাওয়া শেষ করে ওসি সাহেব উঠে পড়লেন।
“উঠে পড়লেন কেন! নেন আরেকটা রুটি নেন। “
“অনেক খেয়েছি স্যার।”
রবিন সাহেব থানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। ওসি কামাল দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে। রবিন সাহেব বললেন, “সময় তো ছেড়ে দিবেন। আমি একটু সায়মা মেয়েটা কে দেখতে যাব। এ কয়দিন ঝামেলার জন্য যেতে পারিনি। এখনকার ঝামেলা তো শেষ হলো।”
“জি স্যার। আমি আসব আপনার সাথে? “
“না, না দরকার নেই। আপনি এ দিকটা দেখেন।”
রবিন সাহেব হাসপাতালের কাছাকাছি চলে এসেছেন। গাড়ি থেকে নামার পরপরই এম,পি সাহেবের কল আসল।
“হ্যালো স্যার।”
“অনেক ধন্যবাদ রবিন। জুয়েলের সাথে আমার কথা হয়েছে। ও ছাড়া পেয়ে গেছে। তোমার দিকটা আমি দেখব।”
“সব আপনার দয়া স্যার।”
মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখল রবিন সাহেব। সায়মার সাথে এখন দেখা করা যাবে কি-না কে জানে।
ডাক্তার সাহেব বললেন, ” দেখুন মেয়েটার অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। কিন্তু কোনোরকম প্রেশার দেয়া যাবে না। বুঝতেই পারছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি?”
“আমি কোনো স্টেটমেন্ট নিতে আসেনি। এমনই শুধু দেখব।”
ডাক্তার সাহেব রবিন কে একটা কেবিনে নিয়ে গেল। ধবধবে সাদা একটা চাদর গায়ে শুয়ে আছে মেয়েটা। মুখের কয়েক জায়গায় ক্ষতচিহ্ন দেখা যাচ্ছে!
রবিন বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। “সায়মা। “
ডাক শুনে চোখমেলে তাকাল সায়মা। রবিনের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। রবিনের বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল। এই মেয়েটা তাকে ভাইয়া বলে ডাকত। বড়ো ভাই হয়ে সে পারেনি বোন কে রক্ষা করতে!
রবিনা সায়মার পাশে গিয়ে বসল। সায়মা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রবিন পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল। সায়মার চোখের সামনে ধরল। সায়মা অনেকটা সময় ধরে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল। ঘুরে রবিনের দিকে তাকাল।
রবিনের এখন কিছুটা ভালো লাগছে!
নিউজটা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এম পি সাহেবের ছেলে জুয়েল কিছুক্ষণ আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে!
© Nabil Mahmud