- রাজনৈতিক শিক্ষনীয় গল্প নেতা কে মানতে শেখা
- রাজনৈতিক শিক্ষনীয় গল্প একটি প্রচলিত পুরোনো জোক
রাজনৈতিক শিক্ষনীয় গল্প নেতা কে মানতে শেখা
japanKahini নেতা কে মানতে শেখা
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার এক জাপানি বন্ধু ছিল। একটু পাগলা টাইপের। প্রচণ্ড বুদ্ধিমান। কোন একটা কিছু মাথায় ঢুকলে সেটার সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত থামতে পারেনা। মাথায় লেগেই থাকে।
২০০১ সালের কথা। রাজনীতি নিয়ে কথা উঠলো ছাত্রাবাসের লবি তে। এখানকার রাজনীতির আলাপ গুলো একটু ভিন্ন জাতের। ছাত্রদের কমেন্ট শুনে বোঝার উপায় নেই সে আসলে কোন দলকে সাপোর্ট করে কথা বলছে।
বাংলাদেশে ও ছাত্রাবাসের হলগুলোতে, চায়ের দোকানে, ট্রেনে-লঞ্চে রাজনীতি নিয়ে তর্ক বিতর্ক শুনেছি। কে কোন দলকে সাপোর্ট করছেন তা দুই-তিন বাক্য শুনলেই বলে দেয়া যায়।
রাজনীতি নিয়ে কথা ওঠার কারন হল জার্মানির প্রেসিডেন্ট একটু গোস্বার স্বরে টিভিতে একটা স্টেইটমেন্ট দিয়েছেন- “আচ্ছা রে দেশ জাপান, তোদের প্রাইম মিনিস্টার গুলোকে আরও কয়েকদিন গদিতে থাকতে দে, একটা নাম মুখস্ত করতে করতে আরেকজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়। নাম মনে রাখতে পারছিনা ”।
এই কথার জের ধরে আমি আমার জাপানি বন্ধুটিকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করলাম। বললাম – আমি জাপানে এসেছি ১৯৮৮ সালে। এখন ২০০১ সাল। এই ১৩ বছরে ১০ জন প্রধান মন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। তোদের ছাত্রজীবন এতো মরা কেন? মিছিল নেই, কোন আন্দোলন নেই, হরতাল নেই- কেমন রসকষহীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
সপ্তাহ দুই পর সে আমাকে লবিতে পেয়ে ব্যাগ থেকে কাগজ কলম বের করলো। প্রথমেই একটা বাণী দিল- তোদের দেশের মানুষ নেতাদের মানতে শেখেনি।
মানে কি ?
নেতার মত নেতা হলে অবশ্যই মেনে নেব।
সে চোথা বের করলো। পরে জেনেছি, সে লাইব্রেরির এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে নানান কাহিনি কপি করে নিয়ে এসেছে। অনেকটা ঝাড়ির মত করেই বলল-
(১) তোরা তোদের জাতির পিতা রহমান সানকে হত্যা করেছিস। এবং সেই হত্যার পর তোদের দেশের মানুষ আনন্দ মিছিল বের করেছে।
(২) তারপর আরেক রহমান সান যিনি একটা বিশৃঙ্খল দেশকে শৃঙ্খলতায় ফিরিয়ে এনেছে তাকে ও হত্যা করেছিস।
(৩) তারপর যিনি দেশের অবকাঠামোর তুমুল পরিবর্তন এনে দিলেন সেই হুসাইন সানকে ও গদি থেকে নামিয়ে আবার আনন্দ মিছিল করেছিস।
আমাদের দেশের মানুষ বেশ সচেতন। একটু এদিক সেদিক হলেই চিল্লাচিল্লি করি। মনের মধ্যে কিছু রাখিনা। কষ্ট চেপে ধরে আত্মহত্যা করিনা। আমি আত্মপক্ষ রক্ষার দিকে নজর দিলাম।
সে থেমে নেই। চোথা থেকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
(৪) এখন কি সুখে আছিস? থাকলে বছরের অধিকাংশ দিন হরতাল ডাকিস কেন?
(৫) তোদের নেতাদের এমন অবস্থা কেন? একজনের কাছে আজ নায়ক, আরেকজনের কাছে কালই খলনায়ক?
আমি তর্কে যেতে পারলাম না। আজগুবি কিছু ঝাড়ি দিয়ে সেই দিনের বিতর্কের আসর থেকে নিজকে সরিয়ে নিলাম।
“নেতা কে মানতে শেখা” – এই বাক্যটা রিন রিন করে বাজতে লাগলো। এখনো বাজে।
নেতা মানে ক্ষমতা নয়
নেতা মানে দায়িত্ব
জাপানে এই দায়িত্ববোধ এর বীজ বপন করে সেই কিন্ডারগার্টেন থেকে। প্রত্যেক ছাত্রকে কোন না কোন ইভেন্টে লিডার হতে হয়। এমন কি ৪ বছরের বাচ্চাকে টিফিন লিডার হয়ে কয়েকটি দায়িত্ব পালন করতে হয়- খাবার আনা, একই সঙ্গে দুই হাত জোড় করে “ইতাদাকিমাস” বলে খেতে শুরু করা, লিডার এর নির্দেশে খাওয়া শেষে প্লেট গোছানোর কাজ করা। এবং আশ্চর্যের ব্যাপারটি হচ্ছে আপনার বাচ্চাটি বাসায় এসব মেনে চলছে না কিন্তু স্কুলে এই ক্লাসমেটের লিডারশিপের আন্ডারে ঠিকই সব কাজ করছে।
লিডার সবার মতামত নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা সবাইকে মেনে নিতে হবে। নিজ মতের বিরুদ্ধে গেলে ও। সিদ্ধান্ত ভুল হলে সেই দায় নিবে লিডার। এটাই শিক্ষা।
দুটো কাহিনি বলছি –
(১)
ফুকুওকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন ছাত্র মিলে পর্বত আরোহণ করতে গেল হোক্কাইদো অঞ্চলের এক পাহাড়ে। উচ্চতা ১৯৭৯ মিটার। রাতের বেলা তাঁবু টাঙিয়ে শুতে যাবে এমন সময় এক ভাল্লুক এসে তার উপস্থিতি জানিয়ে দিয়ে গেল। ভাল্লুকের আক্রমণ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় তার সূত্র জানা ছিল। চেষ্টা ও করেছে। কিন্তু ক্ষুধার্ত ভাল্লুক খাবারের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল। তার মানে হল সে আবার আসবে। সব কটা জানালা খুলে রাখলে চলবে না। পালানোর পথ খুঁজতে হবে।
৫ জনের মধ্যে একজনকে নেতা বানানো হল। নেতা সবার মতামত নিলেন। পরিকল্পনা করলেন। পথিমধ্যে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা টিমের সাথে দেখা হয়েছিল। উদ্দেশ্য হল ওদের কে নিয়ে একসঙ্গে থাকলে ভাল্লুক কাছে আসবে না। দুজনকে পাঠানো হলো খবর দেয়ার জন্য। তখন মোবাইল ফোন আবিষ্কার হয়নি। খবর দিতে গিয়ে দেখে কেউ নেই। ভাল্লুকের ভয়ে পাহাড় থেকে নেমে গেছে।
ফিরে এসে ৫ জন আবার একত্রিত হল। ভাল্লুক সাহেব এলেন। একজন ভাল্লুকের পেটে চলে গেল। পরদিন প্রাণের ভয়ে এদিক সেদিক পালাতে গেল। আরো একজন ভাল্লুকের খাবারে পরিণত হল। লিডার সহ বাকি ৩ জনের মধ্যে একজন অসুস্থ ছিল। সমান তালে দৌড়াতে পারছিল না। লিডার সাহেব ধরে নিলেন তার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। প্রথম দিন সবাই নেমে পড়লেই হতো। অন্তত ২ জন রক্ষা পাওয়া চাই।
লিডার সাহেব বাকি দুইজনকে পালানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়ে নিজের শরীর ভাল্লুক কে উপহার দিলেন। ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভাল্লুকের ওপর। ভাল্লুক লিডার সাহেবকে খেতে খেতে বাকি দুজন প্রাণ নিয়ে বাঁচলেন। সেই দুজন এখনো বেঁচে আছেন। লিডারের কথা অশ্রু সহ স্মরণ করেন। এই কাহিনি ১৯৭০ সালের।
(২)
জাপানের ফুকুশিমা প্রিফেকচার বিশ্বে পরিচিত হয়েছে ২০১১ সালের ৎসুনামির সময়। এই প্রিফেকচারে আইযু নামের একটা শহর আছে। শহরটির ঐতিহাসিক পরিচিতি আছে বিয়াক্কোতাই “সাদা বাঘের দল” নামের একটা টিনেজার সামুরাই গ্রুপের কাণ্ড দিয়ে।
১৮৬৮-১৮৬৯ সালের বো-শিন যুদ্ধ চলছে। ৩০৫ জনের বিশাল বাহিনী। তার মধ্যে ২০ জনের একটা স্কোয়াড ছিল। ১৬-১৭ বয়স। তাদের দায়িত্ব ছিল ইমোরি নামক এক পাহাড় থেকে শত্রুদের ট্রেস করা। শহর পাহারা দেয়া । হঠাত চোখে পড়লো তাদের দুর্গ খানা দাউ দাউ করে জ্বলছে।
দুর্গ দাউ দাউ করে জ্বলা মানে শত্রু পক্ষ দুর্গ দখলে নেয়া। তার মানে যুদ্ধে পরাজিত হওয়া। যুদ্ধে পরাজিত হওয়া মানে শত্রুদের কাছে আত্মসমর্পন না করে “হারাকিরি” নিজের পেট নিজে কেটে আত্মহত্যা করা। হারা মানে পেট কিরি হচ্ছে কাটা।
২০ জন টিন এজার সবাই সফল হল না। একজন দুর্ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেল।
তাদের হাইপোথেসিস ভুল ছিল। তাদের নেতা হারেনি। দুর্গ জ্বলে নি। শহরের অন্যপ্রান্ত থেকে ধোয়া উড়ছিল। তারা ভুল মেসেজটি পেয়েছে। ১৯ টি অপ্রয়োজনীয় অকাল মৃত্যু। লিডারের প্রতি আনুগত্যের প্রতীক হিসাবে আজো ইতিহাস হয়ে আছে ১৯ বালকের কাণ্ড কাহিনি।
এই হচ্ছে জাপানি নেতার দায়িত্ব আর নেতার প্রতি দলের আনুগত্যের দুই কাহিনি।
রাজনৈতিক শিক্ষনীয় গল্প একটি প্রচলিত পুরোনো জোক
একটি প্রচলিত পুরোনো জোক
রাজনীতি
ছোট্ট ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো “বাবা , আজকে ক্লাসে রাজনীতি সম্বন্ধে পড়ানো হচ্ছিল । “রাজনীতি” মানে কি ?
বাবা উত্তর দিলেন : এই ধরো আমি টাকা উপার্জন করে বাসায় নিয়ে আসি । আমি হলাম “পুঁজিবাদী” । তোমার মায়ের কাছে সব টাকা দেই । উনি সংসার চালান । উনি হলেন “সরকার” । তোমার দাদু যিনি আমাদের এখানে থাকেন আর সবকিছুতেই কমেন্ট করেন , তিনি হলেন “ট্রেড ইউনিয়ন” ।
আমাদের কাজের মেয়ে রহিমা হলো “শ্রমিক শ্রেণি ” । তুমি হলে “জনগণ” আর তোমার ছোট্ট ভাইটি যে প্যাম্পারসে নিজেকে লুকিয়ে রাখছে সে হলো “জাতির ভবিষ্যৎ ” ।
বুঝলে ?
ছোট্ট ছেলেটি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলো ওর রুমে ।
রাতে ছোট্ট ভাইটির কান্নায় ঘুম ভেঙে গেলো ।
কাছে এসে দেখলো ভাইটির বিছানা একদম ভিজে গেছে ।
মাকে ডাকতে গিয়ে দেখলো মা নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে ।
কাজের মেয়ে রহিমাকে খুঁজে পেলো না তার কক্ষে ।
বাবার কাছে এসে দেখলো রহিমা ওখানে আর দরজার ছিদ্র দিয়ে বুড়ো দাদা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
ছেলেটি হতবাক হয়ে ফিরে এলো নিজের রুমে ।
পরের দিন সকালবেলায় নাস্তার সময় বাবা আবার জিজ্ঞেস করলো ছেলেকে – তুমি বুঝতে পেরেছো রাজনীতি মানে কি ?
ছেলে উত্তর দিলো : হ্যাঁ বাবা ।
রাজনীতি মানে : পুঁজিবাদীরা শ্রমিকশ্রেণীকে শোষণ করে । ট্রেড ইউনিয়ন শুধু তাকিয়ে দেখে । সরকার ঘুমিয়ে থাকে । জনগণ নিরুপায় আর জাতির ভবিষ্যৎ ভেজা প্যাম্পারসে কাঁদে ।
তারিক হক
জার্মানি,
Tarique Huq