মেয়েরা পরকীয়া করে কেন ?
“পরকীয়া করতে চাই”
ফেসবুকে আমার স্ত্রীর এমন স্ট্যাটাসে আমি ধপ করে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলাম। মানে কি? কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। ছন্দা, মানে আমার স্ত্রী হঠাৎ এমন স্ট্যাটাস কেন দিল? ও তো এই ধরনের মেয়েই নয়। পৃথিবীতে যদি একটা ভালো মেয়ে, একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, একজন মমতাময়ী ও ত্যাগী মা থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো ছন্দা, আমার স্ত্রী। যে কিনা শুধু প্রকৃতির মতো নিজেকে উৎসর্গ করতেই জানে। আমাদের বারো বছরের বিবাহিত জীবনে ছন্দা আমার কাছে কখনই এমন কিছু চায় নি যা দিতে আমার সামান্যতম কষ্ট হয়েছে। বরং সেই অকৃপণ হাতে আমাকেই একতরফা ভাবে বিলিয়ে গেছে। আমাকে ভালোবাসা দিয়েছে, সুখ দিয়েছে, একটা চমৎকার ছন্দময় জীবন দিয়েছে। একটা ছন্নছাড়া আপাদমস্তক বাউন্ডুলে ছেলে আজ একজন দায়িত্ববান সন্তান, পিতা, স্বামী শুধুমাত্র ওরই জন্য। আমি আজ পর্যন্ত ছন্দার চোখে মুখে কোন বিতৃষ্ণা খুঁজে পাই নি যার কারণে সে এভাবে ভাবতে পারে। রোজকার মতো আজ সকালেও তো সে হাসিমুখে সংসারের যাবতীয় কাজ করলো, আমার অফিসের কাপড়গুলো ঠিকঠাক করে দিয়ে লাঞ্চ বক্সটা সাজিয়ে দিল, বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়ে স্কুলের জন্য রেডি করিয়ে দিল। তারপর যথারীতি সেও কলেজে যাবার জন্য তৈরি হলো। ছন্দা একটা আধাসরকারী কলেজে বাংলা পড়ায়। দারুণ বই পাগল মেয়ে আর লেখার হাতও নাকি চমৎকার। আমি গল্প কবিতা খুব একটা বুঝি না তবে অন্যদের মুখে শুনেছি ছন্দার লেখায় নাকি ভিন্ন গন্ধ রয়েছে, চৌম্বকত্ব রয়েছে। ছন্দার গাম্ভীর্য এবং চমৎকার ব্যক্তিত্বের কাছে অন্য সবকিছু ম্রিয়মাণ। আমার ছন্দা ঠিক যেনো অধরা কোন নক্ষত্র কিংবা গভীর রহস্যময় সমুদ্র যে কিনা দূর থেকেও নিজেকে আকর্ষণীয় করে রাখতে পারে। আমাদের যুগল পথচলার একযুগ পার হলেও ছন্দা কখনও সেই সম্পর্কে একঘেয়েমি বা বিরক্তি আসতে দেয়নি। সে প্রতিনিয়ত নতুন করে সবকিছু ঢেলে সাজায়, ঠিক তার লেখার মতো। একহাতে সংসার, সন্তান, আমার বৃদ্ধ মা বাবা, চাকুরী এমনকি আমার মত একটা অলস ও সুবিধাভোগী মানুষকেও সে খুব যত্ন করে সামলে রাখে। প্রতিটি দায়িত্ব সে অত্যন্ত পরিপাটি ও মনযোগ দিয়ে পালন করে। এইতো খানিক আগেও ছন্দা আমার সেলফোনে কল করে জানতে চাইল আমি খেয়েছি কী না, ঠিক আছি কী না। যে মেয়ে তার হাসবেন্ডের প্রতি এতো কেয়ারফুল সে কি করে পরকীয়ার মতো একটা নোংরা এবং অসামাজিক বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে, নিজেকে এতো নিচে নামাতে চায়! না,না, এটা অসম্ভব। নিশ্চয়ই একটা কিছু গন্ডগোল আছে। তবে কী ছন্দার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে! চিন্তাটা মাথায় আসতেই ওর সেলফোনে কল করলাম।
– ছন্দা, তুমি ঠিক আছ তো?
– হ্যাঁ। কেন কি হয়েছে?
– না কিছু না। কি করছিলে?
– কিছু না, আমার বন্ধু নীরা ফেইসবুকে বেশ কিছু ছবি আপলোড করেছে ওদের সিলেট ট্যুরের তাই দেখছিলাম।
– ও আচ্ছা, ঠিক আছে।
তারমানে আইডি হ্যাক হয়নি, অন্য কোন ব্যাপার। কিন্তু কি? এবার টেনশনে আমার বমি বমি ভাব শুরু হয়ে গেলো। কি চলছে ছন্দার মনে? সে কী আমার অলক্ষ্যে অন্য কারও সাথে……। নাহ! এটা অসম্ভব। যে মেয়ে একটা সামান্য চকলেট পেলে কিংবা একটা লালগোলাপ পেলে খুশিতে কেঁদে ফেলে কিংবা কখনও কখনও ছটফট করে, সে আর যাই হোক এমন নোংরামো করতে পারে না। অবশ্য অনেকদিন আমি ছন্দাকে চকলেট দেই না, ফুলও শেষ কবে দিয়েছি মনে নেই। ছন্দাও আজকাল এসব নিয়ে কিছু বলে না। বাচ্চাদের জন্য যখন এটা ওটা নিয়ে যাই তখন অবশ্য খুব আগ্রহ নিয়ে আমার হাতে থাকা ব্যাগটার দিকে তাকায়, নিশ্চয়ই বাচ্চাদের জন্য কি এনেছি তাই দেখে। তখন ওর চোখে একটা কৌতুহল, একটা অনুসন্ধিৎসু ভাব থাকে, খানিক পরে আবার মিলিয়েও যায়। আমি তো এটা নিয়ে কখনও ভেবে দেখিনি। তবে কী আমার ব্যস্ততা, অনাগ্রহ ছন্দাকে এভাবে ভাবতে শেখাচ্ছে? কিন্তু ছন্দা তো জানে আমি ওকে আমার সবটা উজাড় করে ভালোবাসি। এই রহস্যের উদঘাটন আমাকে করতেই হবে। কিন্তু কি করে? আচ্ছা পরকীয়া তো একটা গোপন এবং নিষিদ্ধ ব্যাপার। এটা কী কেউ এভাবে ঢোল পিটিয়ে, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে করে? তাও আবার ছন্দার মতো মেয়ে! কি জানি কি মনে হলো আবার ফেইসবুকে ঢুকে ছন্দার আইডিতে ঢুঁ মারলাম। না, এবার তো কোন স্ট্যাটাস দেখলাম না। মানে টা কি? কি হচ্ছে এসব? তাহলে কী ছন্দা আমাকে কিছু বোঝানোর জন্য এমন করলো? আমি দেখেছি এটা নিশ্চিত হওয়া মাত্র আবার রিমুভ করে দিল? কিন্তু কেন? নাকি সত্যি সত্যিই ছন্দার মনে আমার অগোচরে অন্য কেউ ডালপালা মেলে দিয়েছে? আমাকে জানতেই হবে, জানতেই হবে।
ছন্দার বেশ কিছু ডায়েরি আছে লেখালেখি করার জন্য। তারমধ্যে হালকা নীল রঙের একটাতে সে ইদানীং বেশি করে লিখছে। আমি কখনও ওর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করি না। কিন্তু আজ রাতে ছন্দা ঘুমিয়ে পড়া মাত্র আমি ডায়েরিটা নিয়ে বসার ঘরে চলে এলাম। আমি জানি সারাদিন প্রচুর খাটাখাটুনি করে বলে ছন্দা গভীর ঘুম ঘুমায়। এসময় ঝড়,তুফান কিংবা ভূমিকম্প কোনকিছুতেই তার ঘুম ভাঙে না। কাজেই নিশ্চিন্ত মনে আমি আমার কাজ করে যেতে পারবো। ডায়েরিটা খোলা মাত্রই একটা সুন্দর গন্ধ মূহুর্তে আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। বিয়ের প্রথম দিকে ছন্দার কাছে গেলে একটা অদ্ভুত গন্ধ পেতাম, কেমন যেনো নেশা নেশা লাগতো। আজ অনেকদিন পর আবার সেই অনুভূতিটা ফিরে পেলাম। ইস! কর্মময় জীবনের ব্যস্ততা আমার কতো অনুভূতি ভোঁতা করে দিয়েছে! ডায়েরিটা খুলেই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এখানে একটাও গল্প বা কবিতা লেখা নেই, সব ছন্দার মনের কথা, কষ্ট, অভিমান, ক্ষোভে ভরা। ওর মনে এতো কষ্ট আর আমি জানতেও পারি নি! ছন্দা একজায়গায় লিখেছে,
” কতো সহজেই আমার জন্মদিনটা হারিয়ে গেল! পাঁচ বছর হলো শাহেদ ভুলে গেছে!”
তাইতো! কতদিন হয় আমি ছন্দার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই না, কোন উপহার দেই না। অথচ আমার প্রতিটি জন্মদিনে ছন্দা নিজের হাতে আমার প্রিয় ফ্লেভারের কেক বানায়, প্রিয় খাবারগুলো রান্না করে, আমাকে আনন্দে আনন্দে ভরিয়ে রাখে। আর আমি?
পরের পৃষ্ঠায় লেখা,
” কোমর পর্যন্ত ছড়ানো দীঘল চুলগুলো কেটে ঘাড় অবধি নিয়ে এলাম, শাহেদের কোন বিকার নেই।”
আর এক জায়গায় লেখা,
“মাছ ভাজতে গিয়ে তেল ফুটে পড়ে চোখের ঠিক নিচে একটা কালো ফোসকা পড়েছে, বেশ যন্ত্রণা হচ্ছে। সাত আট বছর আগেও আমার কিছু হলে শাহেদ কতো অস্থির হয়ে যেতো। এখন চাঁদের কলংকের মতো আমারও সবকিছু ওর চোখে সয়ে গেছে!”
পুরো ডায়েরি জুড়ে এরকম ছোটখাট নানান অভিযোগ আর অভিমানে ভরা। আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে পড়ছি আর ভাবছি, বালুর পাহাড়ের মতো ছোট ছোট অভিমান জমতে জমতে ছন্দার মনেও তো অভিমানের পাহাড় জমে গেছে আর আমি বিন্দুমাত্রও বুঝতে পারি নি। এই পাহাড় আমি ভাঙবো কি করে? কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আমি চুরি করে গোপনে ছন্দার ব্যক্তিগত সম্পদ নাড়াচাড়া করছি তার তো কোন হদিসই পেলাম না। পরকীয়া প্রেমের বিন্দুমাত্র আভাস কোথাও পেলাম না। বরং সবটা জুড়ে শুধু আমার ছন্দার দীর্ঘশ্বাস আর অভিমান হাঁসফাঁস করছে। আমি একটা একটা করে পাতা ওল্টাচ্ছি আর ছন্দার অভিমানগুলো আমাকে একটু একটু করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। মাঝামাঝি এসে একটা চিঠি চোখে পড়ে গেলো। পাঁচ দিন আগে লেখা।
প্রিয় শাহেদ,
আমি জানতাম না আসবাবপত্রের মতো কখনও কখনও মানুষও পুরনো হয়ে যায়। তোমার বদৌলতে আমি এই অমোঘ সত্যিটা আবিষ্কার করতে পেরেছি। আমি প্রতিদিন আমাদের বাইরের বারান্দায় রাখা জুতার রেকটা দেখি আর ভাবি তোমার কাছেও আমার জায়গাটা এখন এরই মতো, শুধু প্রয়োজনের। যখন দরকার কেবল তখনই মনে পড়ে। শেষ কবে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছো তোমার মনে আছে? জানি মনে নেই, থাকার কথাও না। আমাদের বিয়ের পর প্রথম দু বছর তুমি প্রায় প্রতিদিনই অফিস ছুটির পর আমাকে নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে রিকশায় ঘুরে বেড়াতে। আমরা কখনও আইসক্রিম কখনও বা সোলেমান ভাইয়ের দোকানের গরম পিঁয়াজু খেতে খেতে রিকশায় ঘুরতাম। একদিন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে সে কি জ্বর বাঁধালাম দুজনে। তুমি জ্বরের ঘোরে সারারাত শুধু ভুলভাল বকেছিলে। আর একদিন আমরা গ্রামের দিকের কোন একটা ছবির মতো সুন্দর রাস্তায় রিক্সায় ঘুরছিলাম।তখন সবে গাছে গাছে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলেরা নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করেছে। কদম ফুল আমার প্রিয় বলে তুমি আগপাছ কিছু না ভেবেই কোন এক গৃহস্থের বাড়ির একটা অপেক্ষাকৃত ছোট গাছের বড় একটা ফুলসহ ডাল ভেঙে সে কি বিপদেই না পড়েছিলাম আমরা! ভাগ্যিস সেই যাত্রায় তাদের রামধোলাই থেকে কোনমতে বেঁচে গিয়েছিলাম। এতো ভোগান্তির পরও কি সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো! তুমি হয়তো জানো না, আমার অসহায় এবং একাকী মূহুর্তের সঙ্গী এই সুন্দর স্মৃতিমাখা দিনগুলো। এরপর পরপর দুটো বাবু এলো আমাদের। ওদের সাহচর্যে এখনও আমাদের প্রতিটি দিন ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসের মতোই নির্মল, সুন্দর হয়ে থাকে। সেই নির্মলতায়, সেই সৌন্দর্যে তুমি আছ, আমি আছি, আমাদের সন্তানও আছে, আমার মাঝে তুমি আছ। কিন্তু তোমার নিত্যদিনের ছন্দে গাঁথা জীবনের কোথাও আমি নেই। ভুল বললাম, আমি আছি শুধুমাত্র তোমার প্রয়োজনে, তোমার চাহিদায়। এখন আর কষ্ট হয় না, কষ্ট হতে হতে কষ্টরাও হাঁফিয়ে উঠেছে। বরং বলা ভালো, কোন অনুভূতিই হয় না। যদি হতো তাহলে তো আমি রাগ করতাম, আশান্তি করতাম, ঝগড়াঝাটি করে তোমার সাথে একটা বড়সড় ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলতাম। কিন্তু পারি না। কারণ, আসলে এতোকিছুর পরেও দিনশেষে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, তোমার তীরেই নোঙ্গর ফেলি। মাঝে মাঝে প্রচন্ড ইচ্ছে হয় অনেক দূরে চলে যাই। তোমাকেও একটা সুযোগ দেয়া দরকার যে তুমি আসলে কেমন থাকতে পার আমাকে ছাড়াই। আমি এখন শুধু তোমার নিত্যদিনের অভ্যাস, তোমার প্রয়োজন। যা কিনা একদিন ছিলো অস্তমিত সূর্যের মতো মাধূর্য্যময় ভালোবাসা; একদম নিখাঁদ, টলটলে জলের মতো স্বচ্ছ। আমি অভিযোগ করতে জানি না। যদি পারতাম অনুযোগ করতাম। কিন্তু এই অপদার্থ আমি সেটুকুও পারি না। শুধু পারি তোমাকে নীড় হারা পাখির মতো জাপটে ধরতে, ভালোবাসতে।
ভালো থেকো তুমি, আজীবন, আমৃত্যু।
তোমার
ছন্দা।
কতক্ষণ তন্ময় হয়ে ছিলাম বলতে পারছি না। এ আমাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দিল ছন্দা? ছন্দার জীবনে যেমন শাহেদ ধ্রুবতারা তেমনি শাহেদের জীবনেও তো ছন্দা ছাড়া দ্বিতীয় কোন নারীর অস্তিত্ব নেই। তাহলে এতো অভিমান এলো কোথা থেকে? আর ছন্দার অভিযোগ, অনুযোগের প্রতিটি বাক্য,প্রতিটি শব্দ সত্যি এবং সঠিক। সত্যিই তো আমি ওর কোন যত্ন করি না, করার প্রয়োজনও মনে করি না। আমি একরকম ধরেই নিয়েছি যেমনি হোক,যাই হোক ছন্দা আমার কাছে থাকতে বাধ্য। কিন্তু তারও যে কিছু শারীরিক, মানসিক চাহিদা থাকতে পারে এটা তো ভুলেই গেছি!অথচ আমার শারীরিক মানসিক প্রয়োজনে সময়মত সবটাই ওর কাছে থেকে বুঝে নিতে কার্পণ্য করি না তো! কর্মময় জীবন, ব্যস্ততা, সংসার আমাকে এতটাই স্বার্থপর আর আত্মকেন্দ্রিক বানিয়েছে যে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি!
ছন্দার পরকীয়া প্রেমের কোন হদিস তো কোথাও পেলামই না উপরন্তু আমিই নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা তীব্র জ্বালাময়ী অপরাধের সাগরে। এবার আরও পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে ওটা ছিল শুধুমাত্র আমাকে দেখানোর জন্য আমার উপরে তীব্র অভিমানের ফল। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আমি একটু একটু করে যেভাবে ছন্দার নির্মল, স্বচ্ছ মনটাকে বর্ষার কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছি, তা থেকে মুক্তি পাব কি করে? আমি কী আর কোনদিন আমার ছন্দাকে সেই কদম ফুলের মিষ্টি গন্ধমাখা সোনালী দিনগুলো ফিরিয়ে দিতে পারবো?
ভোর থেকেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। আজ আর কিছুতেই অফিসের কাজে মন দিতে পারছি না। এগারোটা নাগাদ জরুরী প্রয়োজন আছে বলে ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। মাথার ভেতরে এখনও ছন্দার অভিমান অভিমান গন্ধভরা চিঠিটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। যে করেই হোক আমাকে এই অভিমানের পর্বত ভাঙতেই হবে। কিন্তু কিভাবে?
শুকনো দৃষ্টিতে ছন্দা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। না, এই দৃষ্টিতে কোন অভিমান নেই, অভিযোগও নেই; কেমন যেন একটা দায়সারা ভাব। যেনো বলতে চাইছে, ” কি চাই তোমার বলো, আমি এক্ষুনি দিচ্ছি।” আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার ভেজা শরীর দেখেও ছন্দা বিচলিত হচ্ছে না! এবার আমিও মনে মনে একটু আহত হলাম। সাথে সাথেই আবার নিজেকে সামলে নিলাম। যেই আগাছা আমার অযত্নে ভয়ংকর বিষগাছ হয়ে উঠেছে, সেটা উপড়ে ফেলার দায়ও একান্ত আমার। আমি পিছনে লুকিয়ে রাখা কদমফুলভর্তি হাতদুটো সামনে এনে ছন্দার সামনে ধরলাম। ছন্দা কিছু বলছে না, শুধু তাকিয়ে আছে। ওর নিষ্প্রাণ চোখদুটো ধীরে ধীরে জলে ভেজা শাপলা ফুলের মতো হয়ে যাচ্ছে। এইতো! আমি আমার দশ বছর আগের ছন্দাকে ফিরে পেতে শুরু করেছি। এবার পকেট থেকে ওর প্রিয় ডার্কচকলেটটা হাতে দেয়া মাত্রই ছন্দা আমার বুকে আছড়ে পড়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আমি কিছু বলছি না, এবারো স্বার্থপরের মতো শুধু ওর নিষ্পাপ ভালোবাসার উষ্ণতা নিচ্ছি আর ভাবছি আমি বোকার মতো হারাতে বসেছিলাম আমার আমিত্বকে, আমার স্বত্বাকে যা কিনা একটু যত্ন আর ভালোবাসায় আমাকে প্রতিদিনই সাজাতো নতুন করে!
#আমিত্ব
রুমানা নাসরীন