প্রিয়োসিনী পর্ব ২৩
নীরা_আক্তার
গোটা আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘগুলো ছুটাছুটি করছে,নীড় হারা পাখির মতো।যেন আকাশ তাদের নিজের বুকে ঠায় দিতে চাইছে না।তাড়িয়ে দিচ্ছে।তবে মেঘগুলো নাছড় বান্দা।জায়গা তার চাই ই চাই!
নওরিন বারান্দায় গ্রীল ধরে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ডান হাতে এককাপ গরম গরম ধোঁয়া উঠা কফি,
অতীত থেকে বর্তমান…..তার জীবনটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।সেখানে না আছে কোনো সুখ না আছে কোনো স্বাচ্ছন্দ। না আছে ভালোবাসা…
আসলেই কি ভালোবাসা নেই?মেজো ভাই তো তাকে ভালোবাসে,বাবা ভালোবাসে,বড়দা ভালোবাসে তবে একটু কম…আর মা….মা তাকে ভালোবাসে?
যদি মা সত্যিই তাকে ভালোবাসতো তাহলে বার বার তাকে দোষী বানিয়ে কেন তার সমস্ত আত্নবিশ্বাস ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো?এটায় কি তার প্রতি মায়ের ভালোবাসা ছিলো।
আর ওনি?স্বামী নামক সেই বহুরূপী মানুষটা কি তাকে ভালোবাসে?কি জানি!এই সম্পর্ক আদও কি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক?ভালোবাসা কি আদও আছে তাদের মধ্যে?তার কি থাকা উচিত এই সম্পর্কে? নাকি সব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও পালিয়ে যাওয়া উচিৎ?
নওরিন ভিষন রকম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।সম্পর্কের জটিলতা তাকে একটু একটু করে ভেতর থেকে খাচ্ছে…
প্রচুন্ড জোরে বাজ পরে।বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে উঠে নওরিন…সাথে সাথে সব জায়গার ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়।আশপাশটা অন্ধকারে ঢেকে যায়।নওরিন হালকা করে চেঁচিয়ে উঠে,
পেছন থেকে নওরিনের মা ছুটে আসে,ঘরে আলো জ্বালিয়ে দেয়,
-ভয় নেই আমি আছি তো!
নওরিন মায়ের দিকে মুখ তুলে তাকায়।চোখ ছল ছল করছে তার।
নওরিনের মা নওরিনের মাথায় হাত রাখে,
-খুব ভয় পেয়েছিস?বারান্দায় আর দাড়াস না ঘরে চল।ঝড় উঠবে মনে হয়
–আমি আছি তো!! কথাটা শেষ কবে বলেছিলে আম্মা?
মূহুর্তেই নওরিনের মায়ের মুখটা ফ্যাক্যাশে হয়ে যায়,
–আমি বার বার বলেছিলাম আমি কিছু করি নি..তুমি শুনো নি!বলেছিলাম আমায় একটু সাপোর্ট করো আমি দোষীকে শাস্তি দিতে চাই…. তুমি করোনি।বলেছিলাম আমি সিকদার বাড়ির কারোর মুখ দেখতে চাই না…তুমি আমাকে না জানিয়েই বিয়ে দিয়ে দিলে….বার বার সমাজের দোহাই দিয়েছো,লোকের দোহাই দিয়েছো তোমার সো কল্ড আত্মীদের দোহাই দিয়েছো।আমাকে ভর্সা দাও নি।মেজো খালা যখন প্রথমবার আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললো তুমি তো কোনো উওর দাও নি!কেনো দাও নি?তুমি বলতে পারোনি এখানে কোথাও আমার দোষ ছিলো না।
নওরিনের মা মুখ কালো করে উওর দেয়,
–আমি শুধু চেয়েছিলাম তুই ভালো থাক।
–আমিই সত্যিই ভালো থাকতাম আম্মা।যদি তুমি আমায় একটু সাপোর্ট করতে।যদি একটু সাহস দিতে।জানো আম্মা আমি না কথা বলতে পারি না।সাহস হয় না।নিজের প্রতি লজ্জা লাগে।আমি জানি আমি কোনো দোষ করিনি তাও মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারি না।মনের জোড় পাই না।প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাই না
নওরিনে মা নওরিনের মাথায় হাত রাখে,
-সমাজের ভয়ে লোকের ভয়ে তোর গলা আমি দুহাতে চেপে বন্ধ করে দিয়েছি।কথা বলবি কি করে….!পারলে ক্ষমা করে দিস।
-সিকদার বাড়ির বউ আমি হতে চাই নি আম্মা।
-জানি।তবুও জেনে শুনে তোর সাথে ছলনা করেছি।ভেবেছিলাম বিয়েটা দিয়ে দিলে তোর মাথা থেকে কলঙ্কের দাগ মুছে যাবে।তুই সুখি হবি। আমি ভুল ছিলাম।স্বামীর ভালোবাসা থাকলে কলঙ্ক নিয়েও সুখে থাকা যায়।
কথাগুলো বলেই তিনি নওরিনের হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে নেয়।
-ঠান্ডা হয়ে গেছে।গরম এককাপ কফি বানিয়ে দেই?
নওরিন মাথা নেড়ে না বলে।তিনি কফির মগটা নিয়ে রান্না ঘরে চলে যান।
“আমার স্বামী নামক লোকটা কি আমায় ভালোবাসে না?”
নওরিনের কাছে প্রশ্ন আছে তবে উওরটা জানা নেই।সব উওর গুলো যে ইসরাক নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছে।উওর গুলো উদ্ধার করা প্রয়োজন।
নওরিন টেবিলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।মনটা বড্ড উতলা হয়ে আচ্ছে।কিছুই ভালো লাগছে না তার।
দুই মিনিট ওভাবে থাকার পর সে আবার বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।বাহিরে ঝড়ো হাওয়া দিচ্ছে।নওরিনে ফোন বেজে উঠে।নওরিন ঘর থেকে ফোন নিয়ে আবার বারান্দায় এসে দাড়ায়।
ইসরাক ফোন করেছে….
নওরিন ফোন তুলবে কি তুলবে না ভাবতে ভাবতেই কেটে যায় আবার ফোন বেজে উঠে,এবার নওরিন ফোন তুলে।
-হ্যালো
-খোলা চুলে আমায় আর কতো মুগ্ধ করবে?
-কিহ?
-হু।ঘরে যাও আচল দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখো।
নওরিন এদিক সেদিক তাকায় রাস্তায় সোলার লাইটগুলো জ্বলছে।সেই সোলারের হালকা আলো তার বারান্দায় এসেছে।এতো মৃদু আলোয় কাউকে দেখা যায় নাকি?
-কাকে খুঁজছো?আমি তো তোমার হৃদয়ে আছি দেখো না?
-ধুর।কি সব বলেন?কোথায় আপনি?
–যদি প্রশ্ন করো আমি কোথায় উওর দেবো জানি না যদি প্রশ্ন করো তুমি কথায় উওর দেবো আমার মাঝে।এখনো দাড়িয়ে কেন?ঝড় উঠবে ঘরে যাও।কি হলো যাও
ইসরাক ধমক দেয়….
–আমার ছোট্ট হৃদয় আপনার ধমকে বার বার কেঁপে উঠে।এই ধমকে কখন যেন হৃদয় কাজ করা বন্ধ করে দেবে।
নওরিন একটু থেমে আবার বলে উঠে
–আপনি কি আমায় দেখতে পাচ্ছেন?
ইসরাক হেসে দেয়,
–আমি সবসময় তোমায় দেখি নওরিন।
-কি?
-আমি হৃদয়ে পাতিয়া কান
শুনিয়াছি তোমারই নাম
আমি তোমারে রাখিয়াছি গোপনে
যেন কেউ না শোনে
আমি আকাশে বাড়ায়ে হাত
আমি তোমারে চাহিয়াছি বরংবার
আমি তোমারে রাখিয়াছি লুকায়ে
যেন আর কেউ না যানে…..
ইসরাক ফোন রেখে দেয়।
নওরিন এদিক সেদিক তাকিয়ে ঘরে চলে যায়।
ইসরাক মুচকি হেসে ফোনটা বুকে চেপে ধরে।
নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।সম্পর্কের টানাপোড়েনে সে আচ্ছা করে জব্দ হচ্ছে।
মস্তিষ্ক বলছে নওরিনের থেকে দূরে থাকা উচিৎ। তাতে নওরিনের ভালো হবে।সে জীবনটাকে একটু অন্যরকম করে দেখার সুযোগ পাবে।আবার হৃদয় অন্য কথা বলছে। কখনো কখনো মস্তিষ্কের কথায় নওরনকে দূরে সড়িয়ে দিলেও মাঝে মাঝে নওরিনের মায়া মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে দাড়ায়।এটা মায়া নাকি আসক্তি। হয়তো আসক্তি নাহলে এইসময় এভাবে নওরিনে বাড়ির সামনে আসার কোনো মানেই হয় না
ইসরাক গাড়িতে গিয়ে বসে।গাড়িটা সে নওরিনের বাসা থেকে একটু দূরে পার্ক করেছিলো।যাতে নওরিন দেখতে না পায়।
_____________
ইশা আমানের ঘরের ড্রইং রুমে বসে আছে।আমান ইশার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়।
-এগুলো করে কি পাস?
-জানি না?
-বাহিরে সবাই অদ্ভুত ভাবে দেখছিলো তোকে।জানিস লোকজন কতো খারাপ ভাবছে?
-তুমি কবে থেকে লোকের কথায় কান দেওয়া শুরু করল?
-যেদিন থেকে নওরিনের প্রেমে পড়েছি।
আমান চোখ বন্ধ করে, জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠে,
-নওরিন আমায় একটু একটু করে পাল্টে দিয়েছে ইশা।সরি নওরিন নয় তুই…তবে আমি তো মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম ফোনের ওপাশের মেয়েটা আমার প্রিয়োসিনী।নওরিন……!
-তুমি নওরিনকে কখনো পাবে না।ও দাভাইয়ের স্ত্রী।
-জানি ভালোবাসলেই পেতে হবে কে বলেছে তোকে?
-নিজের ভালোবাসার মানুষকে চাই না তোমার?
-আগের আমান হলে উওর দিতাম হ্যা তবে এখন বলবো না।ও ভালো থাকুক।দাভাই ওকে ভালোরাখবে আমি বিশ্বাস করি।
ইশা কান্না করে দেয়।চোখের পানি বাঁধা মানছে না……
-দূর থেকেও ভালোবাসা যায় ইশা।জোর করে আর যাই হোক সম্পর্ক হয় না।
কিছু সময় পর ইমতিয়াজ সিকদারের আগমন ঘটে।বার কয়েক দরজা নক করার পর আমান দরজা খুলে দেয়।ইশার চোখ মুখ অন্ধকার দেখে ওনার বুক কেঁপে উঠে,
মেয়েকে যে তিনি বড্ড ভালোবাসেন।
কোনো প্রশ্ন ছাড়ায় ইমতিয়াজ সিকদার আমানের হাত চেঁপে ধরেন,
–আমি না তোর বাবা?বাবার অধিকার থেকে অনুরোধ করছি, আমার মেয়েকে বাঁচা….
বাঁচাবি না?
আমান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ইমতিয়াজ সিকদারের দিকে……
-কি চাও তুমি বড় আব্বু
-বিয়ে করে নে…দয়া কর
-আর ওর অপরাধগুলো
-ক্ষমা করে দে আমান।
–আমি কখনো ওকে ভালোবাসি নি।
-বাসবি।কদিন যেতে না যেতে ঠিক হয়ে যাবে।
-আমি ওকে কখনো গ্রহন করতে পারবো না।
-দয়া কর আমান।আমি না তোর বাবা।আমার মেয়ের কষ্ট আর যে নিতে পারি না
আমান উঠে দাড়ায়…..
-শুধু বিয়েই করতে হবে তাই তো?
চলো এক্ষুনি বিয়ে করে নেবো!
ইমতিয়াজ সিকদারের চোখ দুটো চকচক করে উঠে।
ইশার কোনো রিয়াকশন নেই।সে পূর্বের মতোই মুখ কালো করে বসে আছে।দিন দুনিয়ার কোনো ঠিক নেই তার।
ইমতিয়াজ সিকদার সেই ঝড়ের রাতেই ইশা আর আমানকে নিয়ে রওনা হয় কাজী অফিসের দিকে।
সেদিন রাতেই ইমতিয়াজ সিকদারের উপস্থিতিতে আমানের সাথে ইশার বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়।
আমান একরকম বাধ্য হয়েই বিয়েটা করে নেয়।
-করে নিয়েছি বিয়ে এখন খুশি তো?
ইমতিয়াজ সিকদার অবাক চোখে তাকায় আমানের দিকে……
-তুই খুশি নস?
-নাহ্।একবার তোমার মেয়ে আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো নিজেকে গুছানোর চেষ্টা করলাম। এবার তুমি করে দিলে। আর পারবো না।আমান সিকদারের গল্প এখানেই শেষ।।আর কখনো তোমরা আমার মুখও দেখতে পাবে না।
এই গল্পের পাতা থেকে আমান সিকদারের নাম সারাজীবনের জন্য মুছে যাবে।
আমান চলে যেতে নিলে ইশা আমানের হাত টেনে ধরে,
-শেষ বারের মতো আমায় একবার জড়িয়ে ধরবে?স্বামী হয়ে?
আমান হাত ছাড়িয়ে নেয়।ইশা ঠোঁট কামড়ে বলে উঠে,
-ধরে নাও এটাই তোমার কাছে করা আমার শেষ আবদার।
আমান কোনো কথা বলে না ইশাকে ইমতিয়াজ সিকদারের হাতে তুলে দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে যায়
ইমতিয়াজ সিকদার আমানকে আটকানোর চেষ্টা করে।কিন্তু সে যেন ঝড়ো হাওয়ার মতো বাতাসে মিলিয়ে গেলো!
ইমতিয়াজ সিকদার ইশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে দেয়।বাড়িতে আরেক দফা ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
জিনাত সিকদারের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়,কষ্টে বুক চাপড়াতে থাকে
-এ কি সর্বনায় করলেন আপনি? ছেলে মেয়ে দুটোরই জীবনটা যে একেবারে নষ্ট করে দিলেন…..
স্ত্রীর কোনো কথার উওর না দিয়েই তিনি ঘরে চলে যান,
ইশা বেশ বুঝতে পারছে সে কি ভুল করে ফেললো।
আমান কখনো তার হবে না।ঘরে গিয়ে আমানকে বার কয়েক কল করে সে।কোনো রেসপন্স নেই। ইশা একটার পর একটা কল করতেই থাকে।আমান ফোন অফ করে দেয়।
ইশা কান্না করতে কারতে মাটিতে বসে পড়ে
ইসরাক তখনো বাহিরে।জিনাত সিকদার ইসরাককে কল দেয়। তাকে সব জানায়।
–আমানকে ফিরিয়ে নিয়ে আয় বাবা।কোনো বড় ভুল করার আগে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।ও তুই ছাড়া কারো কথা শুনবে না।
ইসরাক সব শুনে গাড়ি ঘুরায়।বেরিয়ে পড়ে আমানকে খুঁজতে…….
এখন তাকে না সামলাতে পারলে হয়তো অনেকটা দেরী হয়ে যাবে।
ইসরাক হাজার খুঁজেও আমানকে পায় না।সে যেন পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
ইমতিয়াজ সিকদার একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।মেয়ের ভুল আড়াল করতে গিয়ে সে নিজেও একটা ভুল করে বসলো….।এই তিব্র অপরাধ বোধের স্রোতে ভেসে যাচ্ছিন তিনি।
রাত বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট।
ইমতিয়াজ সিকদার নিজের ঘরে শুয়ে আছে। শরীরটা খারাপ করেছে তার।।পাশেই জিনাত সিকদার বসে আছে।ইসরাক এখনো বাসায় ফিরেনি।।দাদা-দীদা গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।ইস্ তাদের মুখটা যদি একবার দেখতে পেতাম।
ইশার মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।
ইশা আলমারি থেকে তার বিয়ের লেহেঙ্গাটা বার করে।এটা পরেই তো বিয়ে করতে চেয়েছিলো সে।হলো না!
।তাতে একবার হাত বুলিয়ে আবার পূর্বের স্থানে রেখে দেয়।
ফোন হাতে চারতলার ছাদে চলে যায় ইশা।বাহিরে তখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে মেঘ অনেকটা কেটে গেছে,মাঝে মাঝে আড়াল থেকে চাঁদ উকি মারছে।
ইশা ছাদের মাঝে করে রাখা ছাওনির নিচে দাড়ায়।নওরিনকে কল করে,
কয়েকবার বাজতেই নওরিন কল রিসিভ করে,
ঘুম ঘুম কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-কে?
-কি রে ঘুমকুমারী এতো সময় লাগে ফোন ধরতে?
নওরিন ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়।ইশার নাম্বার নওরিন মুখ কালো করে প্রশ্ন করে,
-কি চাই তোর?
-রেগে আছিস?ক্ষমা করিস নি আমায়?ওহ আমি তো নিজেই এখনো ক্ষমা চাই নি,করবি কি করে!
ইশা বেশ স্বাভাবিক হয়েই কথা বলছে।নওরিন বিরক্ত হয়
-রাখছি কথা বলতে চাই না তোর সাথে!
-প্লিজ বেস্টু ফোন রাখিস না।
-তুই এইসব ঢং করার জন্য ফোন দিছিস?আমার ঘেন্না করে তোর সাথে কথা বলতে।
-জানিস নওরিন তুই আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।কলেজে আমার এখনো কোনো বেস্টফ্রেন্ড হয় নি।তোর মতো যে কেউ না।কেউ এতো কেয়ার করে না।ভালোও বাসে না।আমি তোকে হারিয়ে ফেলেছি তাই না…
নওরিন কোনো উওর দেয় না….
–আমি বড্ড ভুল করে ফেললাম জীবনে।তোর ফ্রেন্ড হওয়ার কোনো যোগ্যতায় ছিলো না আমার।মিছে মায়ার ভালোবাসাই জড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম আমি।আমার বন্ধুত্বকে আমি নিজেই গলা টিপে শেষ করে দিলাম….
ইশা হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়
নওরিনের গলা কাঁপছে।
-কেন ফোন করেছিস?
-জানি নওরিন আমি ভিষন একা হয়ে গিয়েছি।কেউ নেই পাশে।
-প্লিজ এতো নাটক ভালো লাগছে না।রাখলাম।
–আমার গোপন কথা জানাতে কল করেছি।আজকে আমান ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।মজার ব্যাপ্যারকি জানিস আমান ভাই আমাকে আজকেই ছেড়ে চলে গেছে।তোর মনে আছে আমরা বিয়ে নিয়ে কতো প্লান করেছিলাম?
-সত্যিই?ওনি রাজি হলেন?
-হু।তবে জোর করে।ও শুধু তোকে ভালোবাসে।আমি এটা মানতে পারবো না।
-(….)
-খুব ভুল করে ফেলেছি আমি।অন্যায়ও করেছি তোর সাথে আমানের সাথে।তোরা বোধয় আমায় কখনো ক্ষমা করবি না তাই না?
–আমান সিকদারের কথা জানি না তবে আমি তো পারবো না।
ইশা আবারও কেঁদে দেয়
-পারলে ক্ষমা করে দিস তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ইশাকে…..ভালো থাকিস।দাভাইয়ের যত্ন নিস।
ইশা ফোনটা কেটে দেয়……
“সন্ধ্যে নামার মুখে বিচ্ছেদের দেয়ালে লিখা রইলো রঙ্গমহলের ডুবসাতারের খেলাঘরের অসম্পূর্ণতায় ঘিরা গল্পের নাম।প্রেমমহল নামের বাড়িটার বারান্দায় থাকা আগুনপাখিটা চন্দ্রবিলাসে সঙ্গ দিলো না আমার।অসম্পূর্নতায় ঘিরা আমাদের গল্পটার নাম হলোনা পূর্নতা”
_________
স্বামীর পাশে বসেই জিনাত সিকদার ঝিমচ্ছিলেন। চোখে তন্দ্রা। ঘুম জোর করে আটকে রেখেছেন তিনি।ইসরাক না ফেরা পর্যন্ত কিছুতেই ঘুমাবেন না তিনি।
কোনো এক প্রচুন্ড শব্দে কেঁপে উঠেন তিনি।বোধয় খুব উচু থেকে কিছু পড়েছে।
দ্রুত পায়ে জানালা কাছে যান তিনি।
মুহূর্তেই সারা শরীর কাঁপে উঠে।স্ব জোরে চিৎকার করে উঠেন তিনি!
চলবে…….
(গল্পটা সত্যিই খুব বড় করার ইচ্ছে নেই।আশা করছি দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।অপরিপক্ক হাতের লিখা।হয়তো ততোটা গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারছি না তবুও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)