প্রিয়োসিনী পর্ব ৯
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_৯
দিনটা ছিলো শুক্রবার।ইসরাক অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরছে।কদিন বাদে সেটাও শেষ হয়ে যাবে।ইসরাক সব বন্ধুদের সাথে ছোট্ট একটা ট্যুর দেওয়ার জন্য পাড়ি জমায় কক্সবাজার।সাথে অবশ্য নোহাও ছিলো।ইসরাক নোহাকে নিতে চাইনি তবে নোহা জিদ দেখিয়ে ইসরাকের গলায় ঝুলে পড়ে।বাধ্য হয়ে আনতে হয়।সন্ধ্যার পর পর যখন গোটা আকাশটা লাল আভায় ছেয়ে আছে তখন ইসরাক ক্যামেরাহাতে বেরিয়ে পরে সী বিচের উদ্দেশ্যে।এ সময় খুব ভালো ছবি উঠে….
নোহাও পেছন পেছন আসছিলো
-দাভাই দাড়াও আমাকেও নিয়ে যাও।
-তুই না ক্লান্ত।রেস্ট নে।
-ঘুরতে এসে রেস্ট নেবো এতোটাও অলস আমি না।তুমি আমাকে ছাড়া কোথাও যাবে না।
ইসরাক হাসে।
দূর থেকে একটা মেয়ের চেচামেচি শোনা যাচ্ছিলো।
“প্লিজ হেল্প।সাহায্য করুন কেউ”
বিচের ঐ পাশটায় তেমন লোক জন নেই।ঐপাশটা লোকাল লোকজনের ভীড় বেশি থাকে। ইসরাক ছুট লাগায় সেদিকে।চোখে পড়ে,
কতগুলো ছেলেপুলে একটা মেয়েকে ঘিরে রেখেছে আর মেয়েটি দুই হাত বাড়িয়ে পেছনে কেউকে আড়াল করার চেষ্টা করছে….
ইসরাক সেদিকে এগিয়ে যায়।
ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই দেখে।মেয়েটির পেছনে একটা বাচ্চা মেয়ে লুকিয়ে আছে।দু হাত দিয়ে মেয়েটির কামিজ খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে।ভয়ে থর থর করে কাঁপছে বাচ্চাটি।
ইসরাক বোঝার চেষ্টা করে ঘটনাটা কি।এদিকে নোহা সাইডে সরে এসে ইসরাকের বন্ধুদের খবর দেয়।যদি কোনো ঝামেলা হয় এতলোকের সাথে ইসরাক একা পেরে উঠবে না।বন্ধুরা কাছেই ছিলো।
লোকজন মেয়েদুটিকে গাল মন্দ করছে।কয়েকজন মারার জন্য তেড়ে আসছে।ইসরাক এসে তাদের থামানোর চেষ্টা করে….
-কি হয়েছে।মেয়েদুটোর সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেন?
তাদের মাঝ থেকে একজন বলে উঠে,
-ছডু মেয়েটা পকেটমার আমার কাস্টমারের টাকার ব্যাগ (ওয়ালেট) নিয়া ভাগছে। আমরা হাতে নাতে ধরছি। চুন্নির পুত চুন্নি।এই চোরের প্রতি মাইয়াডার কি দরদ।কেমনে ধরে রাখছে দেখেন।
ইসরাক চোখ তুলে তাকায়।বড় মেয়েটা বাচ্চা মেয়েটিকে জাপটে ধরে রাখছে।মেয়েটি চোখমুখ শক্ত করে রেখেছে।যেন সে সব কিছুর জন্য প্রস্তুত।এতোজন লোক প্রস্তুত তাদের ছিড়ে খাওয়ার জন্য কিন্তু মেয়েটির মুখে ভয়ের লেসমাত্র নেই
লোকটি কথা বলতে বলতে তেড়ে আসতে থাকে।
ইসরাক থামায়
–আপনারা শান্ত হন।পুলিশে খরব দিন।পুলিশ যা করার করবে।আপনারা কেন এভাবে,
একটা লোক ইসরাককে থামিয়ে দেয়।
-পিটায়ে ছালচামড়া তুলে দিলে আর এমন কাজ করবে না।
এরই মাঝে ইসরাকের বন্ধুরা পুলিশ নিয়ে হাজির হয়।পুলিশ ঘটনাটা সামলে নেয়।
বাচ্চা মেয়েটিকে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাচ্চা মেয়েটি ভয়ে সেখান থেকে ছুটে পালায়।
এবার নোহা সেই মেয়েটির দিকে তাকায় যে বাচ্চা মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য এতোক্ষণ এতোগুলো লোকের সাথে যুদ্ধ করছিলো।মেয়েটির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।খুব গরম না হলেও টেনশনে ঘেমে গেছে..।
নোহা প্রশ্ন করে,
-কেন কর এইসব?
-কি করি?
-এই যে এইসব চুরি ডাকাতি।কাজ করেও তো খেতে পারো
মেয়েটি হোহো করে হেসে উঠে,
–আমি করিনি।আমার সাথে ঐ বাচ্চা মেয়েটি ছিলো ও করেছে।
-তাহলে তুমি?
-আমি তো অনলি টুরিস্ট।পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। আমার সামনেই লোকগুলো মেয়েটির দিকে তেড়ে আসছিলো মনে হচ্ছিলো কাচা চিবিয়ে খাবে।তাই বাধ্য হয়…..
-বাচাতে ছুটলে?আমরা না এলে কি হতো?লোকাল লোকজন কতো ভয়ংকর হয় জানো?
-মেয়েটি ছোট্ট করে উওর দেয়।এতো ভাবতে গেলে এতোক্ষণ হয়তো লোকগুলো মেয়েটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলতো।ভালো কাজ করতে এতো চিন্তা ভাবনা করতে নেই।
-তোমার ভয় লাগলো না।
–আমি ভীষন ভীতু কিন্তু আজকে কি করে এতো সাহস খুজে পেলাম সেটাই ভাবছি।
মেয়েটি এতো টুকু বলেই সামনের দিকে হাটতে থাকে।
-তোমার নামটা তো বলো
-নওরিন!
পাশে দাড়িয়ে ইসরাক সব শুনছিলো।সে ভেবেছিলো হয়তো এই মেয়েটিই চোর।বাচ্চা মেয়েটি তার সাগরেত।কিন্তু কি ভাবলো আর কি হলো।এই জন্যই কথায় আছে।
“Don’t judge a book by it’s cover”
নওরিন সেখান থেকে ছুট লাগায়।
অনেক সময় হয়ে গিয়েছে।এতোক্ষনে হয়তো সবাই নওরিনকে খোজাখুজি করতে শুরু করে দিয়েছে।
নওরিনের মেজো ভাই নওরিনকে খুজতে খুজতে এদিকে চলে এসেছে।নওরিন ভাইকে দেখে সেদিকে ছুট লাগায়।বড় রাস্তায় উঠে থেমে যায় নওরিন।জিহবায় কাময় দেয়।
“ইস্ ধন্যবাদ দেওয়া হয় নি।”
নওরিন পেছন ফিরে তাকায়।হাত নাড়িয়ে তাদের বিদায় জানায়।
ততোক্ষণ অন্ধকার নেমে গিয়েছে।নওরিন রোড সাইডের ল্যাম্পপোস্টের নিচে থাকায় তাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও বাকিদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।আলো অন্ধকারের মাঝে সবাইকে একাকটা অবয়ব মনে হচ্ছে।বাকিরাও তাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়।
নওরিন মেজো ভাইয়ের সাথে চলে যায় সেখান থেকে।ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।
কি অদ্ভুত অথচ মায়াবী। কি চন্ঞ্চল অথচ কি শান্ত ধীর স্থীর তার চলন বলন।রূপকথার নায়িকাদের মতো ধবধবে সাদা না হলেও হালকা উজ্জ্বল রং এই রূপ যেন উপচে পড়ছে।মুখশ্রী কতো কঠোর অথচ কতো দরদ তার হৃদয়ে।
ইসরাকের বুক কাঁপছে।হৃৎস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রততর হয়ে উঠছে।ফোনের দিকে তাকায়।নীলাঞ্জনা ফোন করেছে।
ইসরাক ফোন রিসিভ করে ওপাশে থেকে নীলাঞ্জনা উদ্বীগ্ন কন্ঠে বলে উঠে
-তোমাদের ঐখানে নাকি কিসব ঝামেলা হয়েছে?এখন সব ঠিক আছে?
ইসরাক ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
-কে বললো?
-কে আবার তোমার বোন।সব ঠিক আছে।আমি আসবো?
ইসরাক বারণ করে।
একটু বিরক্ত হয় নোহার উপর এত অল্প সময়ে আর কাকে কাকে জানিয়েছে কে জানে।
নওরিনের মেজোভাইয়ের চাকরি হয়েছে।সেই খুশিতে মেজোভাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছে।যদিও নওরিনের মেজোখালার শ্বশুর বাড়ি এখানেই তবে তারা এখানে থাকে না।শহরে থাকে।মাঝে মাঝে আসে।সেই সুবাধে নওরিনও বেশ কয়েকবার এসেছে এখানে।তখন নওরিনের ক্লাস নাইনে হাল্ফ ইয়ারলি এক্সামটাও শেষ হয়েছে সবে সবে।ছোট্ট একটা ছুটিও পেয়েছে।তাই ঘুরতে আসতে অসুবিধা হয় নি।
ইসরাক তখনো জানতো না নওরিন তারই বোনের বেস্ট ফ্রেন্ড।নওরিন তার কাছে কেবল একটা আগুন্তক মাত্র।যে কি না হুট করেই তার সহজ সরল জীবনের গল্পটাকে জটিল করতে এসেছে।।ইসরাক বেশির ভাগ সময় শহরেরই কাটাতো।খুব কম বাড়ি এলেও তেমন একটা বার হতোনা ঘর থেকে । না চেনাটাই স্বাভাবিক।
রাতে ইসরাকের পুরা গ্রুপের সবাই রিসোর্টের পাশে একটা খোলা জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে গান বাজনা করছিলো।নওরিনরাও সেই রিসোর্টেই উঠেছিলো।
নওরিন বারান্দা থেকে দেখে কতোগুলো ছেলে মেয়ে আগুনের চারপাশে বসে আনন্দ করছে।নওরিন মাথায় ওরনা পেচিয়ে নেয় তারপর দরজা খুলে গুটি গুটি পায়ে নিচে নেমে আসে।
নিচে নামতেই ইসরাকের গ্রুপের একটা মেয়ে নওরিনকে ইশারা করে তাদের কাছে ডাকে।নওরিন একটু দূরে দাড়িয়ে ছিলো।কি মনে হতেই নওরিন তাদের কাছে যায়।
-কি যেন নাম তোমার
-নওরিন।
-বসো।গান জানো?আসো আমাদের সাথে গান গাবা।
সবাই গান গাইছিলো নওরিনও তাদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে গান গাইছে।নওরিনের গানের গলা বেশ ছিলো।ইসরাক আর নোহা গ্রুপের থেকে একটু দূরে বসে বাড়িতে ভিডিও কলে কথা বলছিলো।তাই সবার সাথে পরিচয় হলেও নওরিনের সাথে তেমনভাবে তাদের পরিচয় হয় নি।তবে নোহা আর ইসরাকের মনে নওরিনের প্রতিচ্ছবিটা নিদিষ্ট ভাবে ছাপা হয়ে গিয়েছিলো।
কি যেন ছিলো মেয়েটির মাঝে।
তারা সেখানে বসে বসেই নওরিনকে লক্ষ করতে থাকে।
এরপর থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই বার বার নওরিন ইসরাকের চোখের সামনে চলে আসতো।কখনো বিভোর হয়ে দেখতো নওরিনকে।কখনো চোখ ফিরিয়ে নিতো।কখনো আবাদ্ধ মনের আকুতি মেটানোর জন্য দূর থেকেই অপেক্ষা করতো একবার তার মুখশ্রী দেখার জন্য।একেমন নেশা লাগলো তার।ঘোরে বিভোর হয়ে যেতো সে।
নওরিন অবশ্য কখনো চোখ তুলে তাকায়নি তার দিকে।নওরিনে জীবনের তরী কোন পথে বাহমান হবে তা নওরিন বহু কাল আগেই নির্ধারণ করে রেখেছে।অন্যদিকে তাকানোর সময় কোথায় ।ইসরাকও নিজে থেকে যায় নি তার দিকে।হাজার হোক…সে অন্য কারো প্রেমিক।অন্যকারো প্রেমের কাছে দায় বদ্ধ সে। এইসব ক্ষনিকের মোহে গা ভাসালে চলবে না।
অবাধ্য মন কি মস্তিষ্কের কথা শুনে।তবুও ইসরাক নিজেকে সামলে রাখে।সে নীলাঞ্জনাকে ভালোবাসে।ভালোবাসে মানে ভালোবাসে। কারো ভালোবাসাকে ঠকানোর কথা ইসরাক স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।ইসরাক মনে প্রানে ঘৃনা করে তাদের, যারা ভালোবাসাকে খেলা হিসেবে নেয়।ইসরাক ছলনা পছন্দ করে না।ইসরাক ভালোবাসাকে ভালোবাসে।
একদিন ইসরাক ভিডিও কলে নীলাঞ্জনাকে বিচের লোকেশনগুলো দেখাচ্ছে।হটাৎই ফোনের স্ক্রীনের সামনে চলে আসে নওরিন।
সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটি নওরিনের কানে একটা টকটকে জবা ফুল গুজে দিচ্ছিলো।
ইসরাক শান্ত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
একটু পর চোখ ফিরিয়ে নেয় সেদিক থেকে।
প্রথম দেখায় প্রেম বলে যদি কিছু হয়ে থাকে তবে সেটা হয়েছে। হয়েছে শুধু মাত্র নীলাঞ্জনার সাথে।বাকি সব মোহ,আবেগ,মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়।ইসরাক ফোনটা কেটে দেয়।জোরে নিঃশ্বাস নেয়।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
ট্যুর থেকে ফিরেই সে সোজা নীলাঞ্জনার কাছ চলে যায়।বাড়ির নিচে গিয়ে ফোন করে।প্রায় সন্ধ্যে হতে চললো।নীলাঞ্জনা বিছানায় আধ শোয়া হয়ে চ্যাট করছিলো সজলের সাথে।ইসরাকের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
-একটু নিচে আসবে?আমি তোমার বাড়ির নিচে দাড়ানো।দেখা করবো।কথা আছে।
ইসরাকের এমন আকুতি শুনে নীলান্জনা একটু ভড়কে যায়।ইসরাক কিছু জেনে গেলো না তো!
ইসরাক তার বাড়ির নিচে শুনে নীলাঞ্জনা অবাক হয়।ধরপর করে বিছানা থেকে উঠে কোনো রকমে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিচে নেমে আসে।
নীলাঞ্জনাকে দেখে ইসরাক মাথা নিচু করে নেয়।নীলাঞ্জনা হাত দিয়ে ইসরাকের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়।
–আমি ভুল করেছি?
নীলাঞ্জনা শুকনা ঢোক গিলে,
-কি করেছো?
–একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগেছে।ভীষণ ভালো….আমি সরি নীলা।আমার এমন করা উচিত হয় নি।আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না পাক্কা প্রমিজ।প্লিজ রাগ করো না।তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?
অদ্ভুত ভাবে নীলাঞ্জনা কোনো রিয়াক্ট ই করে না।ইসরাক ভেবেছিলো সে হয়তো।কান্নাকাটি করবে।গাল মন্দ করবে…কিন্তু ইসরাককে অবাক করে দিয়ে সে মিষ্টি হেসে উওর দেয়
-ইট’স ওকে আমি জানি তুমি আমায় ঠকাবে না।
ইসরাক একটু হেসে সেখান থেকে চলে যায়।অপরাধবোধ কিছুটা কমেছে।কিন্তু নীলাঞ্জনা শেষ প্রশ্নের উওর দিলো না কেন?
অন্যদিন হলে ইসরাক নীলাঞ্জনাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরতো।আজ ইচ্ছে করছে না।অদ্ভুতভাবে নীলাঞ্জনা ও কোনো বায়না করে না।না জড়িয়ে ধারার না কপালে উষ্ঠ ছোঁয়ানোর।ভালোবাসা কি কমে গেলো!
এইসব ভাবতে ভাবতে ইসরাক চলে যায়।
ইসরাককে বিদায় দিয়ে নীলাঞ্জনা নিজের ঘরে আসে।বালিশে মুখ গুজে ভাবতে থাকে,
ছেলেটা কতোটা লয়্যাল। একটা মেয়েকে শুধু ভালো লেগেছে সেটা বলতে এতদূর ছুটে এসেছে।এদিকে কতো সুনিপুণ ভাবে ইসরাককে সে ঠকাচ্ছে।কাল সারা নীলাঞ্জনা সজলের সাথে ফোনে কথা বলেছে।সজলের সাথে যদিও কোনে সম্পর্ক এখনো গড়ে উঠে নি তবে বর্তমানে তাদের অবস্থা আগুন আর ঘি এর মতো।যেকোনো সময় জ্বলে উঠতে পারে।
ইসরাক আজকাল তাকে সময় দিচ্ছে না।পড়াশোনায় বড্ড ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
আর সজল এখন শুধু মাত্র তার বন্ধু।বন্ধু থাকলে ক্ষতি কি?এখানে ঠকানোর কি আছে!
নীলান্জনা নিজেই নিজেকে বুঝ দেয়।
ইসরাক স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।তবে মাঝে মাঝে নওরিন নামক মায়াবিনীর মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠে।ইসরাক জোর করে সেই অনুভূতিটাকে চাপা দিয়ে দেয়।
পৃথিবী উল্টে পাল্টে গেলেও…
ভালোবাসার মানুষকে ঠকানো যাবে না।
নওরিনের সাথে তার কখনো কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠবে না এটা নিশ্চিত সে।
__________
-দাভাই কি ভাবছো?
নোহার ডাকে হুস ফেরে ইসরাকেন।
-নওরিনের সাথে আমার কখনো কোনো সম্পর্ক তৈরী হবে এটা কল্পনাতেও ভাবিনি,বিয়ে তো দূরের কথা।ভালোলাগা ছিলো তবে ভালোবাসা নয়।আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম ফিরে এসে নীলাকে বিয়ে করবো।কিন্তু মানুষ ভাবে এক আল্লাহ চায় আরেক।পরিস্থিতি এমন হলো যে।
নোহা দাভাইয়কে পেছন থেকে হালকা করে জরিয়ে ধরে কাধে মাথা রাখে।
-সব কিছু ভাগ্যের লেখা।তুমি নীলান্জনা আপু তোমাকে ঠকাবে আমি সত্যিই কখনো ভাবি নি।
-বাদ দে…যা হবার হইছে!
-আমান ভাইয়া আর কখনো না ফিরলে আমি খুশি হবো।তুমি ভালো থাকো দাভাই।কেউ তোদের মাঝে আসবে না।দরকার পড়লে মরে যাবো তবুও না।
এতোটুকু বলেই নোহা হুহু করে কেঁদে দেয়।ইসরাক নোহাকে জড়িয়ে ধরে।
ঠিক কি করণে নোহা কাঁদছে তা সে বুঝে উঠতে পারেছে না।আমানের জন্য?হয়তো!
________
নওরিন ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে সে ইসরাকের বুকের উপর শুয়েছিলো।নওরিন একটু লজ্জা পায়।পরক্ষনে কিছু একটা মনে হতেই ঘড়ির দিকে তাকায়।আট টা বাজতে চললো!
সে চেচিয়ে উঠে…
-না..না…না
ইসরাক লাফ দিয়ে উঠে।ভয়ে বুক কাঁপছে তার
-কি হয়েছে?এমন করছো কেন?শরীর খারাপ!
নওরিন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
–আমায় কি আপনারা পড়তে দেবেন না?বাবা যে বলেছিলো আমার লেখাপড়া নিয়ে আপনাদের কোনো সমস্যা নেই….
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়,
-কি হয়েছে?
নওরিম মুখ কাচুমাচু করে উওর দেয়,
-শ্বাশুড়ি মা বলেছে….
ইসরাক হাত উঁচিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়।-ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও…নটায় ক্লাস না তোমার?আমারও একসাথে বার হবো।
নওরিনের মুখে হাসি ফুটে উঠে….
কিন্তু মনে মনে ভয়ও হয়।সে শ্বাশুড়ি মাকে কথা দিয়েছে। সকালের ব্রেকফাস্ট রেডি করে দুপুরের একপদ রেধে তার পর যাবে।
নওরিন রেডি হয়ে ভয়ে ভয়ে নিচে নামতেই দেখে সবাই খাবার টেবিলে বসে পড়েছে।
নওরিন ভ্রু কুচকে তাকায় সবার দিকে।সবাই চুপ চাপ খাচ্ছে। নওরিন টেবিলে বসতেই ছোট চাচী এসে নওরিনকে নাস্তা এগিয়ে দেয়।
-তুমি তো বেশ রাঁধো
নওরিন শুকনো ঢোক গিলে বলে,
-জ্বী
-ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে যেই কচু শাক রেঁধেছ তা এতো মজা হয়েছে কি বলবো।এতো অল্প বয়সে এতো রান্না কেমনে শিখলা?
ইসরাকের খুব পছন্দ কচু শাক।দুদিনেই দেখছি বরের সব পছন্দ অপছন্দ জেনে গেছো।
নওরিন ভিষম খায়…
–আমি… কিন্তু
নোহা মাঝখানে বলে উঠে,
-নওরিন কচু শাক কিন্তু দাভাইয়ের সাথে সাথে আমারও পছন্দ ঠিক গত কালকের ছোট মাছের মতো!
নওরিন জোরে শ্বাস নেই।কাজগুলো তাহলে নোহাই করেছে মনে মনে নোহাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় নওরিন।
ইশা ফোড়ং কেটে বলে,
-তুই তো দেখছি ট্রিপিক্যাল বাঙ্গালী বধু হয়ে গেলি। কখনো কচু শাক রাঁধছিছ কখনো ছোট মাছ…আমি যে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড কাচ্চি ভালোবাসি কোই সেটাও তো বানাতে পারিস।
নওরিন ইশার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
নোহা হেসে বলে,
-কি নওরিন কাল বানাবে নাকি….
নোহা চোখ টিপ দেয়।নওরিন হাসে।নোহার মা নোহার মাথায় একটা চাটি দেয়।
-নাম ধরে ডাকিস কেন?সম্পর্কে ও তোর ভাবি হয়।ভাবি ডাক।
নোহা মুখ বাঁকায়…
-ভাবি টাবি ডাকতে পারবো না।ও নওরিন আমার কাছে শুধুই নওরিন!
_______
নওরিন আর ইসরাক বেরিয়ে পরে।
ইসরাক নওরিনকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে নিজে চলে যায় ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।নওরিন কলেজ গেট দিয়ে ভেতরে যেতেই দেখে মেইন গেটে সাগর দাড়ানো।
নওরিন মাথা নিচু করে নেয়,সাগর তার কাছে আসে।
-রিনি
-কি চাই
-একটু কথা বলতে চাই
-কি বলবে?আর কি বলার বাকি আছে?
-রিনি আমি সেদিন ইচ্ছে করে বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে যাই নি।আমাকে বধ্য করা হয়েছিলো যেতে।
চলবে……
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আস্তে ধীরে সব ক্লিয়ার করবো।এক পর্বে যদি সব লিখতে যাই তাহলে আর পরার মতো অবস্থায় থাকবে না)