#তানিশা সুলতানা
দারুণ একটা বিকেল উপহার দিয়েছে আরিফ অধরাকে। শেষ বার কবে এরকম প্রাণ খুলে মজা করেছে জানা নেই অধরার। মুহিত দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে অধরা প্রাণ খোলা হাসি। প্রথমে ভেবেছিলো বিরক্ত করবে। কিন্তু পরে তার হাসিমুখ খানা দেখে আর ইচ্ছে হলো না।
বহুবছর আগে এই মেয়েটার মায়া আটকেছিলো মুহিত। আস্তে আস্তে ফিল করতে পারলো মেয়েটাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। এই মেয়েটাকেই তার লাগবে।
কিন্তু কখনোই মেয়েটার মনে একটুখানিও জায়গা করে নিতে পারে নি। নারী আসলে কীসে আটকায়?
এই মুহিত। যাকে একটুখানি একটু ছুঁড়ে দেখার জন্য কতো মেয়ে পাগল। হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ সে৷ অথচ এতো সুদর্শন একটা ছেলেকেও কোনো নারী অবহেলা করে, থাপ্পড় পর্যন্ত দিয়েছে।
আর মাহিম কেমন গম্ভীর, বোরিং,মেয়েরা তার দিকে তেমন ফিরেও তাকায় না। দেখতেও তেমন আকর্ষণীয় না। মেয়েদের ক্রাশ না। তবুও তার জন্য একটা নারী পাগল। পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে।
কীসে আটকেছে অধরা? কি পেয়েছে মাহিমের মধ্যে? যা মুহিতের মধ্যে নাই?
নিজের মনে কথা গুলো ভাবতে থাকে মুহিত। উওর পায় না। এই প্রশ্নের উওর হয়ও না। তাচ্ছিল্য হাসে সে।
একটা মেয়ের জন্য ভাইয়ের সাথে লড়াই করছে? যে ভাই কি না শপিং করলে দুজনে জন্যই কিনে। একটা চকলেট কিনলেও তিনটে কিনে। চাওয়ার আগেই সব দিয়ে দেয় মুহিতকে।
সেই ভাইয়ের সাথে লড়াই করা ঠিক হচ্ছে?
অবশ্যই হচ্ছে। ভালোবাসার জন্য লড়াই করাই যায়।
রহস্যময় হাসি দেয় মুহিত। সামনে মাহিমের বার্থডে। জীবনের সব থেকে সেরা গিফটটা দিবে মাহিমকে সে।
মুহিত অধরার কিছু ছবি তুলে মাহিমকে সেন্ড করে। আর লিখে “অধরাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি”
ব্যাসস মাথা গরম হয়ে যায় মাহিমের। ইমারজেন্সি একটা রুগী এসেছে। তাকে চেকআপ করার মুড হারিয়ে ফেলেছে। নিজের রাগ কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না। এভাবে চেকআপ করা যাবে না। তাই সে অন্য একটা ডাক্তারকে কল করে দেখার জন্য।
আর সে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। মনে মনে গিল্টিফিল হচ্ছে। এভাবে রুগী না দেখা কি ঠিক হলো? রাগটা কন্ট্রোল কেনো করতে পারে না?
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে মাহিম। এখন বিকেল সাড়ে চারটা বাজে। গাড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যায় মাহিম।
মাহমুদা রান্না করছে। মিথি ড্রয়িং রুমে বসেই পড়ছে।
মাহিম রান্নাঘরে চলে যায়।
“মাম্মা কথা বলেছো?
মাহমুদা গম্ভীর মুখে তাকায় মাহিমের দিকে।
” মাহিম বড় হয়েছো। বুঝতে শিখেছো। ভুল করতে শেখায় নি তোমাদের আমি। দুহাতে মানুষ করেছি তোমাদের তিনজনকে। একটু হেল্প নেয় নি চৌধুরী বাড়ি থেকে। অধরাকে আমার পছন্দ না। ওই মেয়েকে কখনোই তোমার বা মুহিতের পাশে মানবো না আমি। যেদিন ওই মেয়ে আমার বাড়ির চৌকাঠে এসে দাঁড়াবে (মাহিমের মাথা ছুঁয়ে) সেইদিনই হবে আমার জন্য শেষ দিন।
আমার লাশের ওপর দিয়ে বউ নিয়ে ঘরে ঢুকবে। তোমায় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম।
মাহিমের গলা শুকিয়ে যায়। বুকটা কাঁপতে থাকে। অসয্য যন্ত্রণা হতে থাকে হৃদয়ে। মাথা থেকে মায়ের হাতটা নামিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে।
বাবা মায়ের মধ্যে কি হয়েছিলো জানা নেই মাহিমের। কিন্তু বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখেছে মা কতো কষ্ট করে মানুষ করেছে তাদের। আকাশের চাঁদটা চাইলেও মা কখনো না করে নি। একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেয় নি তিনটা সন্তানের গায়ে।
মুহিত কল করেছিলো। এখনো লাইনে আছে। মায়ের বলা কথা গুলো শুনেছে সে। মুহিতকে শোনানোর জন্য মাহমুদা বললো কথা গুলো। সামনাসামনি বলতে পারবে না সে।
মুহিত ঠোঁট মেলে হাসে।
দিনটাই খারাপ মাহিমের। অসয্য লাগছে সবকিছু। দুনিয়াটা বিষাক্ত লাগছে। চাপা স্বভাবের মাহিমের তেমন কাছের কোনো বন্ধু নেই। যারা আছে তাদের কাছে নিজের মনের কথা শেয়ার করতে পারবে না সে। মানুষ কখনোই অন্যের কষ্ট বোঝে না। তারা শুধু মজা উড়াতে পারে।
গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে মাহিম। অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য একজনকে দরকার। এই মুহুর্তে তাকেই লাগবে মাহিমের। তার মুখটা না দেখলে শান্তি পাবে না সে। তাকে শক্ত হাতে একটা থাপ্পড় না মারলে ভালো লাগবে না।
শহর ছাড়িয়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকতেই দেখতে পায় মানুষের জটলা পেকেছে রাস্তার পাশে। কি হয়েছে জানার ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে না পেরে গাড়ি থামিয়ে মানুষ ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। রোজিনাকে (নাম ভুলে গিয়েছিলাম তাই অন্য নাম দিয়ে ফেলেছিলাম) দেখে খারাপ থাকা মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়।
রোজিনা মাহিমকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলেছে। পা কেটে গেছে তার। কোদাল লেগেছিলো পায়ে। বেশ রক্ত পড়ছে। কেউ তাকে হাসপাতালে না নিয়ে চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে৷
“কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। এভাবে গোল করল ঘিরে ধরতে হয় না। ডিজগাস্টিং
প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে মাহিম। আশেপাশের কেউ কিছু বলে না। তারা মাহিমকে দেখছে। সবাই চেনে তাকে। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে আর শহরের মস্তবড় হাসপাতালের মস্তবড় ডাক্তার।
তাকে কাছ থেকে দেখার সামর্থ্য এই মানুষ গুলোর হবে তারা ভাবতেই পারে নি৷
মাহিম হাঁটু মুরে বসে রোজিনার পায়েহাত দিতে যায়। রোজিনা আতঙ্কে উঠে বলে
” আব্বু পায়ে হাত দিও না
ছোট বেলায় মাহিমকে আব্বু বলেই ডাকতো রোজিনা। মাহিম চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে
“ডোন্ট কল মি আব্বু
মাহিম চৌধুরী আমি। আপনার রিলেটিভিস বা কাছের কেউ নই।
লজ্জায় চোখে পানি চলে আসে রোজিনার। সে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে।
মাহিম একটা বাচ্চা ছেলেকে বলে
” বাবু আমার গাড়িতে একটা ব্যাগ আছে নিয়ে এসো তো।
বাচ্চা দৌড়ে চলে যায়। গাড়িতে ছোটখাটো প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই থাকে মাহিমের।
সে খুব যত্ন করে রোজিনা বেগমের পায়ে সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। তারপর বাচ্চাটার হাতে হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
রোজিনা তাকিয়ে থাকে যাওয়ার দিকে।
ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। মাহিম কাউকে ডাকেও না। সোজা অধরার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অধরা গোছল সেরে তোয়ালে পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিক তুলছিলো। একটু আগেই একটা মুভিতে এটা দেখেছে সে। দারুণ দেখতে লাগে তোয়ালে পড়লে।
হঠাৎ কেউ ঢুকে পড়ায় চোখ বড়বড় করে তাকায়। হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেছে। মাহিম কোনো কিছু খেয়াল না করে বড়বড় পা ফেলে অধরার কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে।
অধরা চোখ বন্ধ করে মাহিমের হার্টবিট শুনতে থাকে। একটু জোরে লাফাচ্ছে হার্ট।
মাহিম অধরাকে ছেড়ে দুই হাত রাখে অধরার গালে। অধরা এক পলক তাকায় মাহিমের দিকেম তারপর চোখ নামিয়ে নেয়। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।
মাহিম ভ্রু কুচকে ফেলে। অধরা কি পড়েছে এতোখনে তার চোখে পড়ে।
সে অধরাকে ছেড়ে দেয়। অধরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। দৌড় চলে যাবে তার আগেই মাহিম হাত ধরে ফেলে।
“ইউ আর লুকিং সো হট এন্ড
বাকিটা বলতে না দিয়ে অধরা বলে ওঠে
” আই নো দ্যাট
মাহিম অধরার হাত টেনে কাছাকাছি এসে বলে
“পাগল করার ধান্দা?
অধরা দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে মাহিমের। মুখটা মুখের কাছে নিয়ে বলে
” বিয়ে করার ধান্দা।
মাহিম শব্দ করে চুমু খায় অধরার ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে
“সামলাতে পারবি?
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। চেক করি নি
Ahmmed Kabbo (Arian)
১০-শেষ পর্ব