১৫ বছরের কিশোরী সানা নিজের সদ্য বিবাহিত স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে বাসর ঘরে বসে। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আছে রীতিমতো। সারাদিন গুন্ডামি করা মানুষ কে খু*ন করতে যার হাত কাপেনা সেই লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে তার পরিবার এসব তার বড় বোন থেকে শুনেছে সানা। লাল টুকটুকে শাড়ি পরে আছে মেয়েটি। এই শীতের মধ্যে রীতিমতো ঘেমে যাচ্ছে। তখন ই কারো পায়ের আলাপ পেলো সে। হাত পা আরো গুটিয়ে বসলো। দরজা আটকানোর আওয়াজ পেয়ে নিজের শাড়ি খামচে ধরে।
– এই ভাবে সং সেজে বসে আছো কেনো?
লোকটার গম্ভির পুরুষালী আওয়াজে মাথা তুলে তাকায় সানা তার দিকে। তবু্ও মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের করে না। সানাকে কোনো কথা বলতে না দেখে বিরক্ত হয়ে যায় সাফোয়ান।
– এই মেয়ে কি বলছি কথা কানে যায়না তোমার?
সাফোয়ানের চিৎকারে ভয় পেয়ে এক লাফে খাট থেকে নেমে যায় সানা।খাট থেকে এইভাবে নামতে গিয়ে পাশে থাকা টেবিলের সাথে পায়ে বাড়ি খায় সে। ব্যাথায় হাল্কা চেচিয়ে উঠে। উপর হয়ে পা ডলতে থাকে সানা আর তখন মাথার থেকে ঘোমটা খুলে যায়। শীত কালে সামান্য আঘাতেও অনেক ব্যাথা পাওয়া যায়। সাফোওয়ান সানাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সানা কান্না করছে ব্যাথা পেয়ে। একেত ভয় পেয়েছে অনেক তার উপর ব্যাথা।
– এই মেয়ে তোমার বয়স কত? উত্তর না দিকে থাপ্রাই দাত ফেলে দিবো বেয়াদপ?
– আমার বয়স ১৫ হবে ১০ তারিখে।
সানার উত্তরে হা করে তাকিয়ে আছে সানার দিকে সাফোয়ান। সানা ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷
– আই কান্ট বিলিভ তোমার বয়স ১৫। ১৫ বছরের পিচ্চি হয়্র নিজের থেকে এতবড় বয়সে এক লোককে কিভাবে বিয়ে করতে রাজি হলে? না কি আমার টাকা দেখে তোমার আর তোমার পরিবারের কাছে আমার বয়স টা ম্যাটার করেনা?
সাফোনের এই কথা সানার কানে পৌছাতেই মেয়েটা চোখ তুলে তাকায়৷ গোল গোল চোখ গুলা দিয়ে সাফোয়ান কে দেখে যাচ্ছে। এইভাবে সাফোয়ান তাকে আর তার পরিবার কে অপমান করতে পারবেন না। সাফোয়ান ও প্রচন্ড রেগে আছে। তার সাথে কিনা এইরকম পিচ্চির বিয়ে হয়েছে। নিজের মা আর বাবার উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। সব কিছু তছনছ করে দিত্ব ইচ্ছে হচ্ছে। একদিকে ওর ভালোবাস ওকে ছেড়ে অন্যকাউকে বিয়ে করলো। আর তার বাবা মা মিথ্যে বলে আরেক নাবালিকার সাথে বিয়ে দিলো। ১৫ বছরের মেয়েকে ১৯ বছরের বলে তার ঘারে চাপানো হলো?
– এইভাবে আপনি আমাকে অপমান করতে পারেন না। আপনার মত বুইরা রা*ক্ষ*স কে আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করি নাই। আমার মত পিচ্চি কি আপনাকে বিয়ে করতে চাইবে? আর আমার বিয়ের বয়স হইছে? অই রিনা খান মার্কা আন্টি আমার বাবা- মা কে ভয় দেখিয়ে আপনার সাথে আমার বিয়ে দিলো।
– এই মেয়ে এই এত কথা বলার সাহস কই পাস? চুপ থাক নাহলে তোকে যে কি করবো।
সাফোয়ান রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে। এইদিকে সানা ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার উপর এতো ভারি শাড়ি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। সানার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে সাফোয়ানের জন্য সে ঘুমাতেও পারছেনা। সাফোয়ান আবার রুমের বাহিরে চলে গেলো। সাফোয়ান চলে যাওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে।
– রা*ক্ষ*স স*য়*তান কোনহানকার।মুখে নিমপাতা ঘসা তার।
সানা সাফোয়ান কে গালি দিতে দিতে সুয়ে পড়লো। সারাদিন মেয়েটার উপর অনেক ধকল পড়েছে শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলো সানা।
সাফোয়ান ছাদে বসে ম*দ খাচ্ছে আর সিগারেট টানছে। এইটা কিভাবে মানবে যে তার বউ এক বাচ্চা মেয়ে? তার মা কেনো করলো তার সাথে এমন।
রাত ৩ টার কাছাকাছি সাফোয়ান রুমে ঢুকে গেলো। খাটের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো কি সুন্দর এক অপরুপা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা উলটা পালটা হয়ে সুয়ে থাকার কারনে শাড়ি হাটুর উপর উঠে আছে। ফরসা পা দুটো দেখা যাচ্ছে। শাড়ির আচল খাটের এক পাশে গরাগরি খাচ্ছে। সাফোয়ান দরজা আটকে দিয়ে ধীরে ধীরে সানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খাটের উপর উঠে এক হাত ভর দিয়ে সানাকে খুব কাচ থেকে দেখতে লাগলো। ঘুমন্ত সানাকে খুব সুন্দর লাগছে সাফোয়ানের কাছে। সাফোয়ান কে নে*শা খুব ভালোভাবে গ্রাস করে ফেলছে। সে ভুলে যাচ্ছে তার বউ ১৫ বছরে কিশোরী। ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় চোখ খুলে তাকায় সানা৷ নিজের উপর সাফোয়ান কে দেখে ভয় পেয়ে যায় সে। চিৎকার দিতেও পারছে না সে সাফোয়ানের জন্য। প্রায় অনেক্ষন পর সানাকে ছেরে হাপাচ্ছে সাফোয়ান। সানা এখোনো বিশ্বাস করতে পারছে না তার সাথে কি হলো।
সাফোয়ান সানার দু হাত নিজের দুহাতে আটকে নিলো।সানা ভয়ে সাফোয়ানকে বললো।
– কি কি করছেন আপনি এসব। আমাকে ছেড়ে দিন আমার ভয় লাগছে অনেক।
– হুসসস চুপ কোনো কথা না।
সাফোনের থেকে বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে মদের৷ সানা অবুঝ নয় সে বুঝতে পারছে সাফোয়ান ঠিক তার সাথে কি করতে চাইছে। তবে সানা এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত না। ভয়ে ক্নানা করতে লাগলো। সাফোয়ানের কাছে রিকুয়েষ্ট করতে লাগলো তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। সানার আওয়াজ সাফোয়ানের কানে পৌছাচ্ছে না।
অন্যদিকে সাফোয়ানের বাবা মা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
– তুমি এই কাজ টা একদম ঠিক করো নাই লিমা। এইটুকু একজন মেয়ের সাথে সাফোয়ানের বিয়ে দেওয়া একদম উচিত হয় নাই। এখন পুলিশ কেস হলে সাফোয়ানের কি হবে ভাবতে পারছো? সামনে ইলেকশন এখন যদি শুনে নেতা সাফোয়ানের স্ত্রী একজন নাবালিকা তখন কি হবে?
– দূর শিহাব তুমি চিন্তা করো না। সানার স্কুল থেকে বার্থ সার্টিফিকেটে ওর বয়স বারিয়ে ১৯ করা হয়েছে। কেউ কিছু জানবেনা।
– আর সাফোয়ান? সে সত্যি জানার পর কিভাবে রিয়েক্ট করবে আমরা জানিনা। ও কি জিনিস তুমি ভুলে গেছো কিভাবে?
– সাপের বিষদাঁত কিভাবে ভাঙ্গে তা আমি খুব ভালোভাবে জানি শিহাব। আর ও তো আমার সন্তান আমি সব ঠিক সামলাতে পারবো। সানাকে কেনো আমি সাফোয়ানের বউ বানিয়েছি এটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়?
– তোমার পরিকল্পনা তুমি ভালো জানো লিমা। আজ অব্দি আমি কি বুঝতে পেরেছি তোমাকে?
মিস্টার শিহাবের কথায় রহস্যজনক হাসি দেয় লিমা।
– গুড নাইট শিহাব কাল বাকি কথা হবে৷ এখন ঘুমাও আর তোমার আদরের ভাগ্নি তো আমার ও তাইনা৷ ওর কোনো ক্ষতি হবেনা।
– এটাই ভালো, তুমিও জানো সানা আমার জন্য কি? ওর কিছু হলে বুঝতেই পারছো৷ শুভ রাত্রী।
সাফোয়ান সানাকে ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সানার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পড়ছে। মেয়েটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে। কাদতে কাদতে এক পর্যায় সানাও ঘুমিয়ে গেলো।
সকাল বেলা ১২ টা নাগাদ সাফোয়ানের ঘুম ভাঙ্গলো। সকাল বললে ভুল হবে তার। উঠে নিজের চোখ ডলে সাইডে রাখা ড্রেসিংটেবিলের দিকে তাকায় সে। আয়নায় তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় সাফোয়ান। সাফোয়ানের শরীরে পাঞ্জাবি নাই, সারা শরীরের নখের আচরের অজশ্র দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পাশে ঘুমন্ত সানার দিকে নজর যায় তার। এরপর ধীরে ধীরে সব কিছু স্পষ্ট হতে লাগলো তার কাছে। সব কথা মনে পরতেই সাফোয়ানের ভিতর অপরাধবোধ সৃষ্টি হতে লাগলো। দুহাত দিয়ে চুল খামচে ধরে সাফোয়ান। খাট থেকে নেমে দারায় সে৷ বিছানায় অপরপাশে পরে থাকা সানার শাড়ি উঠিয়ে তা দিয়ে ঢেকে দেয় সানাকে।
..চলবে..?
এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১
নুসাইবা_রেহমান_আদর
সবগুলো পর্ব একসাথে