এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১১
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
অনেকদিন পর একরুমে সাফোয়ান আর সানা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। সাফোয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর সানা সাফোয়ানের দিকে। নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে সাফোয়ান সানাকে বললো।
– মম এন্ড আংকেলরা যতোদিন আছে এখানে তুমি আমার রুমে ঘুমিও।
– আজ এতো ভাবনা কোথা থেকে আসে আপনার?আমি রেহানা আপার সাথে ওনার রুমে ঘুমাবো।
– দেখো সানা কথা বাড়াবে না। আমি চাই না মম কষ্ট পাক আমার জন্য।
– বাহ আপনার মম কষ্ট ও পায়?
– তোমার কথার মানে কি সানা এতো ঘুরিয়ে পেচিয়দ না বলে সোজা বলো।
– আপনার মম এটা জানলে আরো অনেক বেশি খুশি হবে।
– সানায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া৷
– আমার সাথে ভুলেও চিল্লাবেন না, আমি ভুল কিছু বলি নাই।
রাগে কাপছে সাফোয়ান। তার এই মূহুর্তে সব কিছু তছনছ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। সানা তার মা কে নিয়ে এইভাবে কিভাবে বলতে পারলো?
– সমস্যা কি তোমার আমার মম কে নিয়ে? তার সম্পর্কে এভাবে কথা বলছো কেন?
– আপনার মম কে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নাই। আসার পর থেকে কম কথা আমাকে শুনায় নাই তখন সেসব আপনার চোখের সামনে আসলো না। আর আমি কিছু তেমন না বলতেই আপনার গায়ে লেগে গেলো?
আর কথা বাড়ানোর আগেই সানার মোবাইল ফোনে রিং বেজে উঠলো। সাফোয়ানের দিকে তাকিতে সাইডে চেপে কল রিসিভ করলো সে। সানার কাজে সাফোয়ান একটু অপমানিত ফিল করলো। সাফোয়ানের ভাবনার বিষয় এই সময় রানা কেনো সানাকে ফোন করেছে।
– আসসালামু আলাইকুম।
-……
– না আজ আমি বেরোতে পারবো না রানা,কাল ক্যাম্পাসে থেকো সেখানে মিট করবো।
-……….
– আচ্ছা আচ্ছা,আরে না আসলে আমাদের বাসায় মেহমান আসছে,মেহমান বলতে আমার মামা, মামি,মামাতো বোন। আর ভাইয়া মেবি রাতের ফ্লাইটে আসবে।
-…
– ফ্রি হয়ে রাতে কল দিবো বাই।
সাফোয়ানের চোখ মুখ রাগে অস্বাভাবিক হয়ে আছে। একেতো তার কথা শেষ হওয়ার আগে সানা অন্যের কল রিসিভ করলো। আবার রাতে ফ্রি হয়ে কল করবে।
– আপনার যদি কথা শেষ হয়ে থাকে তাহলে প্লিজ এখানে এসে আমার কথা শুনুন।
সাফোয়ানের ককন্ঠস্বরে রাগ প্রকাশ পারছে। সানা মনেমনে ভয় পেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।
– কি বলার তাড়াতাড়ি বলুন,আবার রান্না করতে হবে নাহলে আবার কে কখন কথা শুনায় আমাকে কে জানে।
– তোমার সাহস দিন দিন বেড়েই চলছে তাই না সানা? ভুলে যাও আমি কে? এই সাফোয়ান সিকদার কে রাগাতে হয়না জানো না। ভুলে যাবানা আমার ভিক্ষায় তোমার অই ফকিন্নি বাপ- মা এখোনো বেচে আছে। তাদের শ্বাস কেরে নিতে আমার হাত একটু ও কাপবে না।
– তারা আপনার থেকে বয়সে অনেক বড় ভুলে যাইয়েন না। সম্মান দিয়ে অন্তত কথা বলতে পারতেন। খু**ন করা ছাড়া পারবেন টা কি আপনি? ব্লা*ডি ক্রিমিনাল।
সাফোয়ান আর নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারলো না। কিভাবে করবে সানা তো তার রাগ সবসময় খুচিয়ে বারিয়েই দিবে যাতে সে মুক্তি পায়। সাফোয়ান সানার উপর হাত তুলয়ে গিয়েও পারলো না।
– বেচে গেলি তুই আমার হাত থেকে। আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না সানা। এর পরিনাম অনেক খারাপ হবে সানা রেডি থাকিস।
সাফোয়ান রুমের দরজায় লাত্থি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সানা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কখোনো এই লোক কে সে বুঝতে পারেনা। রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে রেহানার রুমে।যাওয়ার সময় নিচে মামা আর মামির কথার আওয়াজ তার কানে আসে।
– লিমা এখানে আমরা যেই উদ্দেশ্যে এসেছি তা কিন্তু এবার আমাদের পূর্ণ করতেই হবে।
– জানি শিহাব এছাড়া আর কোনো উপায় আমাদের হাতে নাই। তোমার ভাগ্নির জন্য আমাদের এতো বছরের প্ল্যান নষ্ট হওয়ার পথে।
– লিমা আমি কি এতো কিছু ভেবেছি? আমি ভেবেছি সানা ছোট মানুষ আমরা যেভাবে বুঝাবো সে সেভাবে চলবে। আমরা কি জানতাম ও ইচ্ছাকৃতভাবে বাচ্চা নষ্ট করর ফেলবে।
– অই ঘটনার এতোগুলো দিন চলে গেছে শিহাব এখোনো আমরা আর কোনো খবর পেলাম না। এই মেয়েকে এই সংসারে রেখে আমাদের লাভ কি?
– ঠিক বলছো তুমি একদম আমরা ওদের ডিভোর্সের ব্যাবস্থা করি?
– হ্যাঁ দাড়াও আগে সাইফ আসুক আর আমি সাফোয়ানের সাথে কথা বলি।
সানার নিশ্চুপ কেদে যাচ্ছে তার করা সেই ভুলের জন্য। এখোনো সবাই তাকেই দোষী ভাবে। ডিভোর্স শব্দটা এতো ভারি কেনো লাগছে সানার কাছে। আচ্ছা আড়াই বছরের ও বেশি হবে সানা আর সাফোয়ানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারা এক বাড়িতে থেকেও কেই কারো খোঁজ নিতো না। যখন সম্পর্কের ভিত নাই সেখানে ডিভোর্স বেটার অপশন। কিন্তু তার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা সানা যতোটা কষ্ট অনুভব করছে সাফোয়ান কি আদোও ততোটা কষ্ট পাবে ডিভোর্সের কথা শুনে? নাকি সে খুশি হবে। সানার সব কিছু তালগোল পাকিয়্র যাচ্ছে। সব কিছু বিষাক্ত লাগছে তার মনে হচ্ছে সানার কেউ নাই এই দুনিয়াতে। সানার মতো এতো একা হয়তো কেউ নাই। বাবা-মা তাদের দু বোনের খোঁজ নেয়না। কোথায় গিয়ে লুকিয়ে আছে কে জানে? আপু ও তো এখন হোষ্টেলে এই বাসায় আসতেই চায়না। চোখের পানি মুছে রান্নাঘরে যায় সানা।
—অন্যদিকে—-
হোষ্টেলের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সাফোয়ান কারো জন্য। তার কাঙ্ক্ষিত মানুষ কে আসতে দেখে মুচকি হাসি উপহার দেয় সে। অপরদিকে মেয়েটিও তাকে দেখে হাসে৷
– কেমন আছেন ভাইয়া?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো,তুমি?
– আলহামদুলিল্লাহ, পুচকি কেমন আছে?
– সেও ভালো আছে৷ আচ্ছা শুনো উপরে যাও নিজের ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসো তাড়াতাড়ি ।
– কেনো ভাইয়া?
– আজ কে আমার সাথে আমার বাসায় যাবে তুমি। কতোদিন ধরে বোনের থেকে দূরে আছো তার কাছে কি যেতে ইচ্ছা করে না তোমার?
– তা করে ভাইয়া,আপনাদের সামনে গেলে অপরাধবোধে ঘিরে ধরে আমাকে। বাবা-মায়ের করা অন্যায়ের কথা মাথায় চলে আসে৷
– এতে তোমার কোনো দোষ নাই রাফিয়া।
– তাদের উ তো সন্তান আমরা ভাইয়া তাদের কাজ কর্মের ফলাফল আমাদের উপর ই তো বর্তায়।
– বাদ দেও যা গেছে তো গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে আসো আজ আমরা তোমার বোন কে সারপ্রাইজ দিবো৷
রাফিয়া আর কথা বাড়ায় না সাফোয়ানের উপর। এই মানুষ না থাকলে তার আর তার বোনের কি হতো কে জানে। বাবা-মা তো পালিয়েছে।পালানোর আগে একবার ও তাদের কথা চিন্তা করে নাই৷
সানার জিবন শেষ করেছে তার বাবা-মা। এতো অন্যায়ের পর ও সাফোয়ান তাদের পাশে আছে। সাফোয়ানের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে । সেইদিনের কিছু দৃশ্য বারবার মনে পড়ছে তার। তার ছেলের সেই ছোট্ট দেহটা তার হাতের উপর এখোনো ভাসছে। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে তার। ডান হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো। রাফিয়া আসতেই রওনা দেয় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে তারা।
– রাফিয়া আমার সাইফক্র এয়ারপোর্ট থেকে পিক করে দেন বাসায় যাবো।
সাইফের কথা শুনতেই অবাক হয়ে যায় রাফিয়া। সাইফ ভাইয়া বাংলাদেশে আসছে?
– আচ্ছা ভাইয়া!
সইফ নামক অধ্যায় আবার তার লাইফে ফিরত আসছে। আগেরবার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছিলো এবার কি করবে রাফিয়া। সবার জিবন কেনো এভাবে উলট পালট হয়ে আছে। রাফিয়াকে ঘিরে ধরলো নানান চিন্তায়। কিভাবে সবাই সব সামলাবে। আর কত সহ্য করবে রাফিয়া। রাফিয়াকে গাড়িতে রেখে সাফোয়ান গিয়ে সাইফ কে এগিয়ে আনলো। সাইফ সামনে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে পরলো। সাফোয়ান ও এসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সাইফ খেয়াল ই করলো না তারা দুজন ছাড়া গাড়িতে তৃতীয় কেউ একজন আছে। লুকিং গ্লাসে রাফিয়া সাইফকে দেখে যাচ্ছে। হঠাৎ আয়নায় রাফিয়ায় প্রতিভিম্ব দেখে চমকে উঠে সাইফ। ঘার ঘুরিয়ে পিছে রাফিয়া কে দেখে নেয় সে।
– কিরে কালি তুই এখানে?
….#চলবে.?
(কাল গল্প দেওয়ার কথা ছিলো, সারা সন্ধ্যে জুরে আমি লিখেছিলা। কিন্তু কিছু পারিবারিক কারনে আমার রাত থেকে এই অব্দি অনলাইন আসা হয় নাই। তাই লেট হওয়ায় আমি ক্ষমাপ্রার্থী।)