এক প্রহর ভালোবাসা পর্ব ১৪
নুসাইবা_রেহমান_আদর
চতুর্দশ_পর্ব
সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সাফোয়ানের মুখের দিকে।
-এরপর কি হলো ভাই?
– সানা মা-বাবা রাফিয়া কে পেয়ে তো বেজায় খুশি। মা যখন যেভাবে যা বলতো সেভাবেই চলতো বোকা সানাটা। আমি অফিসে রাফিয়া তার কোচিং ছিলো। সানার মা সানাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সেদিন পাকা পেপে খাওয়ায় যাতে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায়। সানা জানতো না যে পাকা পেপে খেলে বাচ্চার ক্ষতি হবে সেও মায়ের কথায় খেয়ে নেয়। সানার বাবাও কিসব মেডিছিন এনে দেয় সানার মা কে তারা মিলে সেসব মেডিছিন সানাকে খাওয়ায়। হঠাৎ সানা ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে। সানাকে সেদিন তারা হসপিটালে নিয়ে যায়। কুদ্দুস আর রেহানা মিলে। সানার মা আমাকে ফোন দিয়ে জানায় সানার অবস্থা কোন হস্পিটালে নিয়েছে এবং এটাও বলে যে সানা ইচ্ছাকৃত ভাবে পেপে খেয়েছে সে বাচ্চা চায় না এই বয়সে। সব শুনে আমার মাথা প্রচন্ড খারাপ হয়ে যায়। হস্পিটালে গিয়ে শুনি সানার অবস্থা খারাপ বাচ্চাকে বাচানো যায়নি। তখন আমার নিজের কাছে নিজেকে অনেক অপরাধি লাগে। আজ আমি নিজের প্রতি সংযোত থাকলে এই দিন আমাকে দেখতে হতোনা। জানোস তোরা নার্স যখন তোয়ালের মধ্যে সেই ছোট্ট দেহটা আমার হাতে দিয়েছে আম আবেগহীন হয়ে গিয়েছিলাম। আমার সন্তান আমার অংশ অথচ দুনিয়া দেখতে পেলো না। ছোট ছোট হা- পা হয়েছিল। হয়তো আর কয়েকমাস গেলেই সে দুনিয়ে দেখতো। কিন্তু তখন মনে হচ্ছিলো সানার জন্য আমার বাচ্চা মারা গেছে। অন্যকিছু মাথায় আসে নাই আর। বাচ্চাটার কথাই শুধু আমার মাথায় ছিলো। আমি খুব কেদেছিলাম অসহায়ের মতো চিৎকার করে কেদেছিলাম। সানাকে বেচে থাকতে হবে তাকে হিসাব দিতে হবে আমার ছেলেকে মারার। সানাকে একা হাসপাতালে ফেলে রেখে আমি বাসায় চলে আসি। নিজের হাতে সেই দেহটা কে গোসল করিয়ে সাদা কাপড়ে পেচিয়ে আমার রুমের বেলকনিতে দাড়ালে দেখা যায় এমন যায়গায় কবর দেই। এই অব্দি আমি সানাকে জানাই নি সেই ছোট্ট ছেলেটা কে আমি কি করেছি।
সবার চোখ দিয়ে পানি পরছে। সবাই কাদছে, কাদবেই বা না কেন এতো কিছ্য হয়ে গেল কেউ টের ও পেলো না। সাফোয়ানের চোখের পানি দেখে সবাই নিজেকে সামলে নিলো। এই শক্তপোক্ত ছেলেটাও নিজেকে সামলাতে পারেনা।
-এরপর কি হলো ভাইয়া?
আদিল সাফোয়ান কে প্রশ্ন করলো। সাফোয়ানে নিজের চোখের পানি মুছে আবরো বলতে শুরু করলো।
– সানা সুস্থ হয়, সানার সাথে আমার রুম আলাদা হয়। সানার অবস্থা অনেক খারাপ থাকে তখন। একে তো সন্তান হারিয়েছে তার উপর অসুস্থ। এই অবস্থায় আমি তাকে সাপোর্ট না দিয়ে উলটো দোষারোপ করতাম বকতাম কথা শুনাতাম। সানার মা ও সাথে ও কে অনেক কথা শুনাতো। দিন কে দিন যেতে যেতে সানার মানসিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। এতো মানসিক চাপ সহ্য করতে পারে না মেয়েটি। এক পর্যায় সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। সবাই আমরা যখন সানাকে নিয়ে ব্যাস্ত তখন সানার মা-বাবা আমার ক্যাশ টাকা স্বর্ন সব নিয়ে পালিয়ে যায়। অনেক খুজেও আর তাদের খোঁজ পাওয়া গেলোনা। রেহানা থেকে জানতে পারি আমি সব ঘটনা। এরপর সানা একটু সুস্থ হতেই আমরা তাকে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাই। সেখান থেকে জানতে পারি যে সানার মা সানাকে জোর করে পেপে আর কিছু মেডিছিন খাওয়ার পরেই তার শরীর খারাপ হয়। এরমধ্যে আমার গার্ড কুদ্দুস ভাই ও লাপাত্তা হয়ে যায় যার খোজ আজ ও পাই নি। সানা ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগলো আর কেমন পালটে গেলো। তার মধ্যে সেই বাচ্চাসুলভ আচরণ হারিয়ে গেলো। সব পালটে গেলো নিজ থেকেই আমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিলো। আমি বাসায় থাকলে রুম থেকে বের হতো না।আর আমিও আমার গিল্ট থেকে সানার সামনে যেতাম না। যেই সময়ে সানার আমাকে দরকার ছিলো সেই সময়ে ভুল বুঝে আমিও তাকে দূরে সরিয়ে দেই। এইতাও এইভাবেই দিন গেলো তারপর বছর।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,এতোগুলো দিন ধরে কেউ ভালো নেই। একবাসায় থেকেও কারো সাথে কারো যোগাযোগ নাই।
– আজ ভাইয়া না থাকলে আমি কোথায় থাকতাম জানিনা। বাবা-মা আমার কিংবা সানার কারো কথা ভাবে নাই। তারা কিভানে নিজেদের সন্তানের সাথে এতো অন্যায় করলো সেই প্রশ্নের উত্ত র আমার কাছে নাই। আমাকে এখানে রেখে গেলো ভাবলো ও না আমি৷ কি করবো। সাফোয়ান ভাই আমাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করলো। বাবা মায়ের করা কাযে গিলটি ফিল করতাম লজ্জাবোধ হতো তাও হোষ্টেলে চলে গেলাম। কেন জানিনা সানার দিকে তাকাতে পারতাম না।
রাফিয়া কাদছে। নিজের ইমোশন সে চেপে রাখতে পারলো না। শ্যামবর্নের মেয়েটিকে কাদতে দেখে সাইফের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। রাফিয়াকে কাদতে দেখে কেনো জানি সাইফের অনেক কষ্ট হলো।সিন্থীয়া সাইফের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
– আপনারক কাদছেন আর আপনাদের বোন নিশ্চিন্তে ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
আদিলের কথায় সবার নজর যায় এবার সিনথীয়ার দিকে আসলেই মেয়েটক ঘুমাচ্ছে। এটা সিনথীয়ার ছোটবেলার অভ্যাস।
– সাইফ তুই গিয়ে সিনথীয়াকে ওর রুমে দিয়ে আয় যা। আর তোমরাও ঘুমাতে যাও সকালে আবার সবার কাজ আছে।
সাফোয়ান্ব্র অনুমতি পেতেই সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সাইফ সিনথীয়াকে তার রুমে দিতে গেলো। রাফিয়া ও তার পিছু পিছু যাচ্ছে। আদিল সাইফের রুমে চলে গেলো। সিনথীয়া কে খাটে শুইয়ে দিয়ে সাইফ দাড়ালো। রাফিয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে রাফিয়ার গাল থেকে অশ্রুফোটা মুছিয়ে দিলো।
– বি ষ্ট্রং তোকে কান্না করলে দেখতে ক্রীম আপার মতো লাগে। বিলিভ মি রাফু তুই ক্রিম আপার লাইট ভার্ষন।
এইটুকুই কথা যথেষ্ট ছিলো রাফিয়া কে রাগিয়ে দিতে। এতোক্ষণ যে সে কান্না করছে তা নিমিষেই ভুলে গেলো সে। তেরে গেলো সাইফের দিকে।
– এই আপনার সমস্যা কি সবসময় আমার পিছে এভাবে লেগে থাকেন কেন? আপনার কাজের অভাব পরছে। আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি শুনি?
– এই মেয়ে তুই এতো ঝগরুটে মহিলাদের মতো ঝগড়া করতে তেরে আসছিস কেন? আমি তোর পিছে কখন লাগ লাম। আমি দি গ্রেট সাইফ সিকদার যার তার পিছে লাগিনা।
– দেখাই যায় কে কি করে নিজের মুখে নিজের প্রশংসা সবাই করে। আর সবাই জানে আপনি কি করেন। আপনি হলে ঝগরুটে বেডা।
– রাফিয়া চুপ।
– কেনো চুপ করবো আপনি করেছেন কখোনো। সুযোগ পেলেই আমাকে কথা শুনাতে চলে আসেন।যান বিদেয় হোন আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।।
সাইফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাফিয়া সাইফ কে ধাক্কিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পরে। বাহিরে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছে সাইফ।
সকাল ৮ টায় ঘুম ভাঙ্গে সানার। চোখ কচলে তাকাতেই নিজেকে কারো বুকে দেখতে পায়। ঘার উচু করে দেখে এটা সাফোয়ান। সাফোয়ানের বুকে নিজেকে দেখে অবাক হয়ে যায় সানা। সে যে সাফোয়ানের বুকের উপর সারারাত ঘাপটি মেরে শুয়ে ছিলো। সাফোয়ান এখোনো ঘুমাচ্ছে। কাল কত রাতে যেগেছিলো সে। তাই সকালে ঘুম ভাঙ্হছে না তারম ওয়াসরুমে যাওয়াও জরুরি আবার সাফোয়ান কে বিরক্ত করতে ইচ্ছা করছে না।।অনেক ভাবার অর সানা নিচে নামার সিদ্ধান্ত নিলো।।এক পা সুন্দর মতো ফ্লোরে পা রাখলো। আরেক পা রাখার চেষ্টা করেই ব্যাথ্যা যায়গায় পরে যেতে নেয়। ফ্লীরে পা চেপে ধরে ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে। কিছু পরার আওয়াজে সাফোয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
চলবে..