#নুসাইবা_রেহমান_আদর_লেখনীতে
#পর্ব_২
নতুন দুই বউ কে বরণ করে শিকদার ভিলায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে শিকদার ভিলায় অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। এসেছিলো শিকদার বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে খেতে। আসার পর দেখলো বড় বউ যার সাথে পালিয়ে গেছে আর সেইটা বের হলো সাইফ শিকদার। শিকদার বাড়ির ছোট ছেলে। অন্যদিকে বাড়ির বড় বউ হওয়ার কথা ছিলো যেই মেয়ের সে হলো ছোট বউ। আর ছোট বউয়ের ছোট বোন হলো বাড়ির বড় বউ। কিছু কিছু মহিলাদের কথার বিষয় হচ্ছে এটা।
বড় বোনের দিকে একবারো তাকায়নি সানা। সানার মনের মধ্যে অনেক অভিমান জমেছে। সানার শ্যামবর্ন মুখ খানায় বেদনার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। এই বিয়ে টা যে এখোনো মানতে পারে নি সে। রাফিয়া বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে মনেমনে অনেক অনুতপ্ত হচ্ছে। আজ তার জন্য তার ছোট বোন কে এই পরস্থিতিতে পরতে হলো।
~ সাইফ তোর বউ কে নিয়ে তুই রুমে যা। আর সাইফা তুমি সানা কে তোমার বড় ভাইজানের রুমে দিয়ে আসো। বাকি কথা কাল হবে আজ এমনিতেও অনেক রাত হয়েছে। মানুষের সামনে অনেক তামাশা করেছো আর করিও না। বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছো নিশ্চিত সে কি পরিমান রেগে আছেন তোমার উপর?
মায়ের কথায় সাইফ এবার কি বলবে সে জানেনা। সত্যি তার দ্বারা ভুল হয়েছে।
~আমার ভুল হয়েছে আম্মু। আমি জানি তোমাদের এই বিষয়ে আগে জানানো উচিত ছিলো। কিন্তু তোমরা বুঝতে পারছো না যে পরিস্থিতি উল্টো ছিলো।
রাফিয়া চুপচাপ বসে আছে। কি বলবে সে একে তো বাজে পরিস্থিতিতে এসে উঠেছে এখানে। এর উপর আবার সে হচ্ছে নতুন বউ। নুরজাহান শিকদার সাইফের কথার কোনো উত্তর দিলেন না। দিতে আগ্রহ নন। নুরজাহান শিকদার ছোট ছেলের উপর অভিমান করে আছেন। সানার সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে।
~ তোমার বয়স কম, কিন্তু আশা করি মানুষের কথা মন মর্যি বোঝার মতো অবুঝ না। তোমাদের পরিবার আর আমাদের পরিবারের বিরাট পার্থক্য আছে। তোমার বোন অনেক শান্ত আর তুমি অনেক চঞ্চল সানা। তোমাদের আমি চিনি বলেই এক কথায় রাফিয়া কে এই বাড়ির বউ করে আনার সিদ্ধান্ত নেই। তোমার বোন যে ভুল করেছে আশা করছি এমন ভুল তুমি করবে না।আর এই ভুল তোমার বোনের ও যেনো আর না হয়। সাফোয়ান কেমন তা জানোই। ওর কথা মেনে চলবে। আজ আর কিছু বলবো না ধীরে ধীরে সব শিখে যাবা।
সানাকে দিয়ে আসে সাইফা সাফোয়ানের রুমে। সেই সময়টাতে রুমে ছিলো না সাফোয়ান। এই সুযোগে সাইফা সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছে। রুমের চারোদিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে সানা। একা বসে বসে বোরিং লাগছে তার। সাফোয়ানের রুমে তেমন আসবাব পত্র না দেখে সানা নিজের সাথেই বলে উঠলো।
~ শুনেছি শিকদার দের টাকার অভাব নাই? অথচ এরা এতো কিপ্টে? সারারুমে আলমারি,খাট আর সাইড টেবিল ছাড়া আর কিছু নাই। সামান্য বেলকনি টাও দেয় নাই। আমার কি? আমি তো সুযোগ পেলে এখান থেকে চলেই যাবো।
কারো আসার শব্দ পেয়ে চুপ করে যায় সানা। এই সময় বাথরুম থেকে কে বের হচ্ছে। সানাকে খাটের উপর চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সাফোয়ানের কোনো ভাবান্তর নেই। সাফোয়ান নিজের মতো আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে ব্যাস্ত। সানা হা করে সাফোয়ান কেই দেখে যাচ্ছে। রুমের মধ্যে এই লোকের সাথে তার থাকতে হবে ভাবতেই হাত – পা ঘেমে একাকার অবস্থা হয়ে যাচ্ছে।
~ এইভাবে সং সেজে বসে আছেন কেনো আপনি? ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসে ঘুমিয়ে পড়ুন। আজ আমি প্রচুর টায়ার্ড তাই আমার দ্বারা বাসর করা সম্ভব হবেনা। আর আমার ইচ্ছাও নাই তাই ঘুমিয়ে থাকুন।
সানার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো সাফোয়ানের মুখে এইরকম নির্লজ্জ কথাবার্তা শুনে। এই লোকের মুখে কি কোনো কথা আটকায় না নাকি? সানার প্রচন্ড পরিমাণে লজ্জা লাগছে।
~আপনি আমার সাথে কোন রকম কথা বলবেন না। আপনার সাথে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। ঢং করে বলা হচ্ছে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসুন। আমি কি চেঞ্জ করে আপনাকে পরবো?
প্রচন্ড রাগ নিয়ে সাফোয়ান কে বলে উঠল কথাটি। সানার কথা শুনে সাফোয়ানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে বলে উঠলো।
~আমি কিছু মনে করবো না। আমাকে যদি আপনি পরতে পারেন তাহলে পরে ফেলেন।
~আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।
সানা চুপচাপ সেই ভারী শাড়ি পড়ে ঘুমিয়ে পরলো। ঘুমিয়ে বলতে চুপচাপ শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। যেইভাবে সাফোয়ান সানাকে তার সাথে নিয়ে আসলো জামা কাপড় আনার কথা তো তার মাথাতেই আসে নাই। সাফোয়ান লাইট অফ করে পাশে শুয়ে পরলো। এমনি সারা দিনের কাহিনীতে সাফোয়ানের প্রচণ্ড বিরক্তি আর রাগ ধরে আছে। কিন্তু সে শান্ত স্বভাবের হওয়ায় নিজের রাগ কারো উপর বের করতে পারে না। চুপচাপ রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টায় আছে। অনেক কষ্টে সানার সাথে সে স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করল। কিন্তু কতক্ষণ সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে রাখতে পারবে? সাফোয়ান নিজেও জানে না। এতকিছু ভাবার এখন আর কোন ইচ্ছা নাই ।তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সাফোয়ান কারণ কাল তার পার্লামেন্টে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে। আর মাত্র দুই মাস বাকি আছে ইলেকশনের। এর মধ্যে নিজের ইমেজ নষ্ট করা যাবে না তার। যেভাবেই হোক এই ইলেকশন টাকে জিততে হবে। তারপরেই না খেলা জমে উঠবে।
রাফিয়া সাইফের খাটের উপর চুপচাপ বসে আছে। সাইফ রাফিয়া কে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে বলে ওঠে।
~এভাবে চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে থেকো না। সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করোনা। বাড়ির সবাই বেশি দিন আমাদের উপর রেগে থাকতে পারবে না। এটা আমি খুব ভালোভাবে জানি । আর ভাইয়ের ব্যাপারটা আমি সামলে নেব ভাই আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। হয়তো এখন রেগে আছে তবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
~আমি আমার কথা ভাবছি না সাইফ। সানার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি ওর বয়স কতটুকু তুমি বুঝতে পারছ? এই আমার উপর জিদের বসে তোমার ভাই সানাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। এখন যদি রাগের বসে কোন ক্ষতি করে দেয় তখন আমরা কি করব? সানা কে দেখে মনে হচ্ছে ওই বিয়েতে একদম খুশি না জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ওকে।
~তুমি যতটা খারাপ ভাবছো আমার বড় ভাইজানকে এতটা খারাপ না। হ্যাঁ অনেকগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হতে হয়েছে দেখে রেগে আছে। তুমি হয়তো ভুলে গেছো এবার সেই ইলেকশনে দাঁড়িয়ে তার সম্মানের জায়গা আলাদা। এখন যদি বিয়ে বাড়ি থেকে সে বিয়ে না করে ফিরে চলে আসতো তাহলে আরো বেশি অপমানিত হতে হতো। কোন কিছু না ভেবে তো আর বড় ভাইয়া সানা কে বিয়ে করেনি। তাই নিশ্চিন্ত থাকো তুমি সানার কোন ক্ষতি হবে না। আর সানা আর তুমি এই বাসায় আছো। আমরা ওকে দেখে রাখতে পারব বুঝছো?
~তবু ও মা-বাবা মারা যাবার পর আমার একমাত্র দায়িত্ব ছিল সানার প্রতি। মামা মামির কাছে বড় হয়ে ছিলাম আমরা দুজন। হয়তো তোমার ভালবাসায় অন্ধ হয়ে যখন পালিয়ে চলে এসেছি ওর কথা আমার মাথায় ছিল না। আমি এতটা সেলফিশ হয়ে গিয়েছিলাম যে আমি ছোট বোনের কথা একবারও ভাবিনি। আমি ভুল করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার ভুলের শাস্তি যদি সানা পায় তাহলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
~এসব কথা আজকে বাদ দাও রাফিয়া। তোমার বোন তো আর পানিতে পরে যায়নি? তুমি এটা ভেবে খুশি নও তোমার মামা মামীর অত্যাচার থেকে দূরে তোমার কাছে চলে এসেছে তোমার বোন? হয়তো পরিস্থিতি আলাদা কিন্তু ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। অনেক টায়ার্ড আছো আজকে অনেক ঝামেলা গিয়েছে আমাদের উপর ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ো।
মধ্যরাতে কারো নড়াচড়ার কারণে সাফোয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সানা হাত পা তার উপর তুলে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। বিরক্তি নিয়ে সানার দিকে তাকায় সাফোয়ান। কি ভেবে যে এই মুসিবত নিজের গলায় তুলে এনেছে সে নিজে আল্লাহ ভালো জানে। তাকিয়ে দেখে গরমে ঘেমে আসতেছে সানা। গয়নার কারণে তার হাত পা চুলকাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসে সাফোয়ান। ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে সানার গয়না খুলে সাইড টেবিলে রাখে সে। মেয়ে মানুষের গয়না খুঁলতে এত ঝামেলা।
#to_be_continued