এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৩
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
রাতেরদিকে সাফোয়ানের সেই কাঙ্খিত ব্যাক্তির আগমন ঘটলো। সানা আগুন্তকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি এসে সোজা সাফোয়ানের দিকে হাত বারায়। মানে হ্যান্ডশেক করার জন্য। জ্বর নিয়ে অইদিকেই বাকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশ্চর্যজনক ভাবে এই বাসায় সারাদিনে সাফোয়ানের রুমে কেউ আসে নাই। খাওয়া দাওয়ার খোঁজ খবর নেয় নাই। ইভেন ওর মামু আর মামির তো খবর নাই।
– কি ব্যাপার এতো আর্জেন্ট আসতে বললি আবার বার্থ কান্ট্রোল পি** আনতে বলছিস কাহিনী কি?
মেয়েটি এতোক্ষন সানার দিকে তাকায় নাই। কথার মধ্যে সাফোয়ান কে সানার দিকে তাকাতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
– পরে বলবো আগে সানার চেকাপ করে দেখ সকাল থেকে অড় প্রচন্ড জ্বর কমছেই নাই।
মেয়েটি সানার গায়ে হাত দিয়ে দেখলো গরম কেমন। তারাহুরো করে আসত্ব গিয়ে সে ভুলে থার্মোমিটার আনতে ভুলে গেছে।
– তোমার নাম কি, আর বয়স কত?
– আমার নান সানা,আর বয়স ১৫.।
– ১৫?
– হ্যাঁ।
মেয়েটি ভালোভাবে সানার দিকে লক্ষ করছে,এভাবে তাকাতে দেখে সানার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। মেয়েটিকে সানা একদম সহ্য করতে পারছেনা।
– মেয়েটা কে সাফু?
– আহ কতবার বলবো আমাকে সাফু বলে ডাকবি না? আমার নাম সাফোয়ান সাইদ।
– রেগে যাচ্ছিস কেন এই পিচ্চি কি হয় তোর।
সাফোয়ানের সাফু নাম শুনে এতোক্ষন সানার মনে খুব আনন্দ হচ্ছিলো। সানাকে পিচ্চি বলায় মুখ গোমড়া করে ফেলে সে।
– এতো কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন তুই? তুই চেকাপ করতে আসছিস চেকাপ কর।
– ডাক্তার আপু শুনুন উনি না আমার একমাত্র জামাই লাগে। এই আপনি চুপ করে আছেন কেন এতোক্ষন ধরে জিজ্ঞেস করছে আপু আপনাকে উত্তর দিবেন না?
মেয়েটি অবাক হয়ে একবার সাফোয়ান কে দেখছে তো আরেকবার সানা কে দেখছে। সাফোয়ানের কাছে মেয়েটির দৃষ্টি উপেক্ষা করত্ব পারছেনা।
– মিথীলার বিয়ে হইতে না হইতে মামা তুই বিয়ে করে নিলি তাও এই বাচ্চা মেয়েটারে।
– মজা নিস না হাবিবা। মেডিছিন লিখে দে আগে তুই।
– মজা সাইডে রেখে এবার সিরিয়াস কথায় আসি? সবঠিক আছে কিন্তু তোর মাথায় রাখা উচিত ছিলো মেয়েটা ছোট। হ্যাঁ অতোটা ছোট না তবে। শুন নেক্সট টাইম খেয়াল রাখিস এক্সট্রা কিছু ভালো না। যেখানে বড় মানুষের কর সমস্যা হয় আর ও ১৫ বছরের। বয়ঃসন্ধিকার এখোনো ওর শেষ নাই ওর শরীরের আরো গ্রথ বাকি আছে মাথায় রাখিস৷ আর পি*ল টা টাইমলি খাইয়ে দিস। বাকি মেডিছিন লিখে দিচ্ছি নিয়ে এসে খাইয়ে দিস টাইমলি।
– আচ্ছা তোর ফিস আমি বিকাশ করে দিবো নে। চল এগিয়ে দিয়ে আসি।
– হ্যাঁ আচ্ছা চল আমরো তোর সাথে আরো অনেক আলোচনা আছে ।
সাফোয়ান কে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে হাবিবা। সানা যাওয়ার পানে তাকিয়ে রাগে ফুসছে। তার বরের সাথে সে কিভাবে অন্যমেয়েকে মেনে নিবে। ছোট মনের মধ্যে অভিমান বাসা বাধতেছে তার। আসুক আজকে অই লোকের সাথে কথা বলবেনা সে।
সাফোয়ান রুমে ফিরে আসে ঘন্টাখানেক পর। এক ঘন্টা ধরে সানা কম্বোল মুরি দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছে। একা একা থাকতে অনেক ভয় পায় সানা। বাড়িতে আপুর সাথে এক রুমে থাকে সে। গ্রামের দিকে বাড়ি হওয়ায় ভুত-, জ্বীন কে সে খুব বিশ্বাস করে আর ভয় পায়। সাফোয়ান রুমে এসে সানাকে কম্বোলের মধ্যে আল্লাহ আল্লাহ করতে দেখে হেসে ফেলে। সানা হাসির আওয়াজ পেয়ে বুঝে যায় সাফোয়ান হাসছে।সাফোয়ান কে হাসতে দেখে রাগি কন্ঠে বলে।
– এই আপনি এভাবে হাসছেন কেন?
– সব কিছুর উত্তর তোমাকে দিতে বাধ্য নই মেয়ে। সাহানাজ আপাকে বলেছি সে তোমাকে খাবার খাইয়ে দিবে। এই মেডিছিন টা আগে খেয়ে নেও।
ছোট একটা সাদা রঙের টেবলেট এগিয়ে দিয়ে বলে সাফোয়ান। এইটুকু পিদ্দুসা মেডিছিন দেখে সাফোয়ানের দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকায় সানা।
– এটা কিসের মেডিছিন?
– এতো কেনো জানতে হবে তোমার যা দিয়েছি চুপচাপ খেয়ে নিবে। আমি এতো প্রশ্ন পছন্দ করি না৷
সাফোয়ানের হাত থেকে মেডিছিন নিয়ে চুপচাপ খেয়ে নেয় সানা। ডাক্তার টা মেবি তাকে অনেক মেডিছিন দিয়ে গেছে। আজকে এইসব অখাদ্য মেডিছিন গিলতে হবে। আল্লাহ আমাকে বাচাও এইসবের হাত থেকে আমি বাসায় যাবো। বিয়ের থেকে তো পড়াশুনা ঢের ভালো। কোন কক্ষনে যে আমি সাথির কথা শুনে বিয়ে করতে চাইলাম। ভাবছিলাম বিয়ে পড়াশুনা থেকে সহজ কাজ। একা একা একদিনেই আমি শেষ এখানে কিভাবে থাকবো।
– এই মেয়ে এতো মনযোগ দিয়ে কি ভাবছো তুমি?
– আমার একা একা এই রুমে ভাল্লাগছে না আমি বাহিরে যাবো।
– চুপচাপ বসে থাকো সাহানাজ আপা এসে তোমাকে খাইয়ে বাকি মেডিছিন খাওয়াবে। কোন ক্লাসে পড় তুমি সানা?
সাফোয়ানের স্বাভাবিক কথায় সানার ভয় কমতে শুরু ক রলো।
– আমি তো জে এস এসি দিয়েছিলাম, a গ্রেড পেয়ে পাস করছি।
– নবম শ্রেনীতে এখোনো ভর্তি হও নাই?
– না তো আমার পড়াশুনা ভালো লাগেনা,যখন আমার বান্ধবি সাথি বললো বিয়ে করলে পড়াশুনা করা লাগেনা তখন আমি ভাবলাম বিয়ে করবো। এরপর মামু যখন বাসায় বললো রাজি হয়ে গেলাম। যদি আমি জানতাম আপনার মত বক* রা*ক্ষ*সে* র সাথে আমার বিয়ে দিবে তাহলে জিবনেও রাজি হতাম না।
সানা আবেগে তার পেটের কথা সব বের করে দিলো। যখন সানার খেয়াল হলো সে কি বলেছে দুই হাত দিয়ে সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো৷ ভয়ে ঢোক গিলে মাথা তুলে সাফোয়ানের দিকে তাকালো। সাফোয়ান সানার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সানা সাফোয়ান কে এভাবে তাকাতে দেখে বোকা বোকা হাসি দিচ্ছে।
– তোমার এতো বড় সাহস কোথা থেকে আসে? আমাকে ভয় লাগেনা একটু ও তোমার?
-আপনি অনেক খারাপ লোক জানে?আই হেইট ইউ।
তখন রুমে সাহানাজের আগন ঘটে।
– ভাইজান মেডাম আপ্নারে আর ভাবিজান রে নিচে খাইতে যাইতে কইছে।
– তুমি যাও আপা আমর আসছি।
– আপু মামু ও কি নিচে আছে?
– হ্যাঁ ভাবিজান স্যার ও আছে।
সানা খুশি হয়ে যায় তার মামু নিচে আছে দেখে। সাফোয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তোমার মামু কে?
– আরে চলেন নিচে দেখাচ্ছি।
সানা সাফোয়ানের আগেই নিচে নেমে যাচ্ছে। হাল্কা হাল্কা জ্বর কমেছে সানার। মামুর কাছে গিয়ে মামুকে জরিয়ে ধরে সানা৷
– কেমন আছো মামু? আমি রাগ করছি তুমি আমাকে ভুলে গেছো?
– না মামনি আমি তোমাকে একটুও ভুলি নাই ।
সাফোয়ান সানার পিছু পিছু নিচে আসে।
– আংকেল সানা আপনার ভাগ্নি?
– হ্যাঁ তো কেন তোমার মম তোমাকে বলে নাই?
সাফোয়ান তার মায়ের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে খাবার টেবিলে বসে যায়।
– কাল তোমাকে ঢাকা ফিরে যেতে হবে সাফোয়ান মাথায় রেখোন সাথে নতুন বউ কেও নিয়ে যতে হবে। আর শুনো আমার ছেলে বাহিরের খাবার খেতে পারেনা সানা। তোমার দায়িত্ব কাল থেকে সব খেয়াল তোমার রাখতে হবে।
শাশুরি মায়ের কথা শুনে চক্ষু চরক গাছে সানার। রান্নার র ও জানেনা সে আর কোনো কাজ তো দূর। সাফোয়ানের মাথায় ও বাশ পরল। এই মেয়েকে সাথে নিলে উল্টা তাকে সব কাজ করে খাওয়াতে হবে। সে সভার ভোটেত কাজ দেখবে না এই মেয়েকে কাজ করে খাওয়াবে?
– দরকার নাই আম্মু ও এখানে তোমাদের সাথে থাকুক নাহয় ওর মায়ের বাসায় দিয়ে আসো।
– আমার শেষ কথা সাফোয়ান চাইলে ওখানে নিয়ে তুমি ওকে স্কুলে এডমিশন নিয়ে দিতে পারো।
পড়ার কথআ শুনে সানা চিৎকার দিয়ে উঠলো। সানার চিৎকারে সবাই ভয় পেয়ে গেলো।
– আমি পড়াশুনা করবো না,আমি তো রান্না-বান্না করে স্বামীর খেয়াল রাখবো।
….চলবে?.
( সবাইকে গঠনমূলক গন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলো)