#নুসাইবা_রেহমান_আদর_লেখনীতে
#পর্ব_৩
সকাল শুরু হলো শিকদার ভিলায় একটা আজ সানার। সকাল কটা বাজে জানা নাই। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় উঠে বসে। উঠতে গিয়ে টের পায় তার পরনে শাড়ি নাই। শাড়ি নাই কথাটি উপলব্ধি করা মাত্রই চোখ যেন বড় বড় হয়ে যায় সানার । নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি তার গায়ে শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট। পাশে তাকিয়ে দেখে উপর হয়ে ঘুমাচ্ছে সাফোয়ান। মুহূর্তেই চিল্লানি দিয়ে উঠলো সানা।
~ এই মিষ্টার সাফোয়ান শিকদার সাহস কিভাবে হয় আপনার? লজ্জা করেনা কারো পারমিশন ছাড়া এসব করেন?
প্রথমে সাফোয়ান সানার কথা বুঝতে পারেনি, সদ্য ঘুম থেকে উঠে যদি এসব কথা বার্তা কেউ শোনে তাহলে বুঝবে না। তাই তো সেও বুঝে নি। এরপর যখন ভালোভাবে সানা কে দেখলো তখন তার মাথায় আসলো। তাই সানাকে আরেকটু রাগাতে সে বলে উঠলো।
~ আমার কি দোষ বলবেন? নিজে যদি এভাবে একজন পুরুষ মানুষ কে আকৃষ্ট করেন। তাহলে একজন সুস্থ সবল পুরুষ কিভাবে নিজেকে কান্ট্রোল করবে? আবার তানাহলে ভাবতেন আপনার স্বামীর হয়তো কোনো সমস্যা আছে। তাই সেইসব রিস্ক নিতে চাইনি বিধায়।
~ ছিহঃ ছিহঃ কি নির্লজ্জ লোক। এতো কথা বলতে লজ্জা লাগেনা? মুখে আপনার কিছু আটকায় না?
সাফোয়ানের মুখের হাসি হাসি ভাব পালটে গেলো। মুখটা গম্ভির করে শান্ত গলায় বলে উঠলো।
~ শুনেনে আপনার প্রতি এখন আমার আগ্রোহ জন্মায় নাই। তাই আপনাকে স্পর্শ করার ও ইচ্ছা নাই। তাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। আর রাতে আপনার অবস্থা চুলকিয়ে বাজে হয়েছিলো। আর এতো ঘুমালে তা খেয়াল কিভাবে থাকবে? গায়ে শাড়ি জরিয়ে নেন। ডাকতে আসবে বাড়ির মানুষ তখন এই অবস্থায় আপনাকে দেখলে সবাই উলটা পালটা ভাববে।
সানা নিজের অতিরিক্ত ভাবনার জন্য লজ্জা পেলো। লজ্জায় চুপচাপ শাড়ি নিয়ে প্যাচাতে লাগলো । সানার অস্বস্তি ভাব বুঝতে পেরে সাফোয়ান ওয়াসরুমে চলে যায়। সাফোয়ান যাওয়ার পর সানা নিজের শাড়ি ঠিকঠাক করে প্রে নেয়। আর মাত্র কিছুদিন পর ১৮ বছরে পা দিবে সানা। আর তার আগেই বিয়ে হয়ে গেলো। যদিও সানার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই। তবুও বিয়ে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিলো সেই হিসেবে না হওয়ায় সানার মনক্ষুন্ন হয়েছে। সাফোয়ান কে মেনে নিতে সময় লাগবে তার। এতো বড় বাড়ির বৌ হওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না তার। তবুও আল্লাহ যখন ভাগ্যে লিখে রেখেছেন তাহলে কি আর করার। আজ ফজরের নামাজ মিস হয়ে গেলো তার। সাফোয়ান ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সানাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো।
~এভাবে বসে আছেন কেনো? ফ্রেশ হবেন না?
~ চেঞ্জ করা লাগবে আমার। জামাকাপড় কি আমার সাথে নিয়ে আসছি? কি পড়বো আমি?
~ ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবেন সাথে গোসল সেরে নিবেন। আপনার গোসল শেষ হওয়ার আগে আপনার ড্রেস চলে আসবে । সো কুইক।
সাফোয়ান চলে যেতেই সানাও বিছানায় রাখা সাফোয়ানের তাওয়াল নিয়েই চলে যায়। সাফোয়ান সোজা গিয়ে সাইফের রুমে নক করলো।
সাইফ আর রাফিয়া এখোনো ঘুম থেকে উঠেনি। দরজায় নক করক্র আওয়াজ পেয়ে উঠে দরজা খুলে দেয় সাইফ। সাইফ এতো সকালে সাফোয়ান কে নিজের দরজায় দেখে অবাক হয়ে যায়।
~ এতো সকালে ভাইয়া তুমি?
~ তোর বউ কে ডেকে বল তার থেকে আপদতো একটা ড্রেস দিতে। সানার সব কিছু আশা অব্দি।
~আচ্ছা তুমি রুমের ভিতরে আসো?
~ লাগবে না যা বললাম দ্রুত নিয়ে আয় ।
সাইফ গিয়ে রাফিয়া কে ডেকে তুললো। রাফিয়া উঠে নিজের ব্যাগ থেকে জামা বের করে দেয়। সাফোয়ান তা নিয়ে নিজের রুমে ফিরে যায়।
~ এতো সকালে তোমার ভাই জামাকাপড় নিয়ে করবে?
~ বোকার মতো প্রশ্ন করো কেনো রাফিয়া? নিজেও গিয়ে ফ্রেশ হও।
সাইফের ধমক খেয়ে রাফিয়া ভেবে পায়না বকা খাওয়ার মতো কি এমন বললো সে?
সানা গোসল করে অপেক্ষা করছে কখন নিয়ে আসবে।
~ এইযে আপনার ড্রেস নিয়ে নেন।
সানা দরজা হাল্কা একটু খুলে ড্রেস নিয়ে নেয়। সাফোয়ান রুমে বসে অপেক্ষা করছে সানার বের হয়ে আসার। সানা বের হয়ে আসতেই।
~ চলুন নাস্তার টেবিলে সবাই অপেক্ষায় আছে আমাদের।
~ চুল আচরাতে তো দিবেন আমাকে? ভিজা চুলে সবার সামনে যাবো?
~ তাড়াতাড়ি করুন আমাকে পার্লামেন্টে যেতে হবে।
~ যেইনা নেতাসাহেব রে আমার। তা নিয়ে কি ঢং।
~কিছু কি বলেছেন?
~ না আমার হয়েছে চলুন।
সানার হাত ধরে নিয়ে গেলো সাফোয়ান। সানা অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে।
~ এভাবে তাকাবেন না আমার দিকে।শরিয়ত মোতাবেক আপনি আমার স্ত্রী। সেই হিসেবে আপনাকে ছোয়ার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাই আপনার হাত ধরতে আমার পারমিশ নেওয়ার প্রয়োজন নাই। নায়িকাদের মতো এসব নিয়ে একদম ন্যাকামি করবেন না।
কি থেকে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো সাফোয়ান কে সানা। সানা আহম্মকের মতো শুনেই গেলো। খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে সানা সাফোয়ানের জন্য। সাইফ,রাফিয়া এবং মিসেস শিকদার সাইফা খাবার শুরু করেন না। সাফোয়ানের ছোট কাকা মিস্টার রাহিল শিকদার ও তার স্ত্রী লামিয়া ও সেখানে উপ্সথিত। রাহিল শিকদার লামিয়া কে মাস আটেক আগে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করেছেন। প্রথম ভালোবাসা কিনা।
সানাকে নিজের পাশের টেবিলে বসিয়ে সাফোয়ান নিজেও বসতে বসতে বলে তার কাকাকে।
~ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নিন আমাদের পার্লামেন্টে যেতে হবে। শুনা গেছে বিরোধী দলের লোক এসে আমাদের দলে যোগ দিয়েছে।
~ হ্যাঁ আমিও শুনেছি এই কথা।
মিসেস শিকদার সবাইকে উদ্দেশ্য করে ব লেন।
~ যেভাবেই হোক বিয়ে হয়ে গেছে তাই আমি চাচ্ছি বড় করে রিসেপশনের আয়োজন করে সবার সাথে অফিশিয়ালি ওদের দুজনের পরিচয় করিয়ে দিতে।।
~ আমি আপাদত কিছু করতে চাচ্ছি না। আগামি ১০ দিন পর ভোট আর তাই এর আগে অন্যকোনো ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না আমি।তাই আমার আর সানার রিসেপশন এখন হবে না। আপনি আপনার ছেলের টা করতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নাই।
~ এটা কোন ধরনের কথা সাফোয়ান? তোমার আর সাইফের রিসেপশন একদিনেই হবে। এবার তুমি যেদিন বলবে সদিন ই হবে।
সানা,রাফিয়া,আর লামিয়া মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শুনছে। এইসব পারিবারিক আলোচনায় তাদের কিছ্য বলার নাই। রাফিয়া বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ সানা সে তো মাথা নিচু করে খেয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে তাকাচ্ছেনা।
টিভি অন ছিলো পাশে আর তখন সবাই শুনতে পেলো। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আব্দুল রওফ সাহেব তার নিজ বাড়িতে মারা যান। সবার ধারনা তাকে বিষ পান করানো হয়েছে। গতকাল তার বাসায় তার ভাগ্নির বিয়ে ছিলো তরুন নেতা সাফোয়ান শিকদারের সাথে। আর তাদের বিয়ের দিন রাতেই তার রুমে মৃত লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারনা আব্দুল রওফ সাহেবের স্ত্রী তার স্বামীকে খুন করেছেন। তবে এই বিষয়ে এখোনো সঠিক প্রমান পাওয়া যায় নাই। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আশা অব্দি কিছু বলা যাবেনা বলে জানিয়েছেন ও,সি সাহেব। বাকি নিউজ জানতে জমুনা টেলিভিশনের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।
রাফিয়া আর সানার খাবার গলায় আটকে গেলো।দুবোন বিশ্বাস করতে পারছেন না তার মামা আর এই দুনিয়ায় নাই। রাফিয়া রিতীমত কান্না শুরু করে দিয়েছে। সাফোয়ান সানার দিকে খেয়াল করে দেখলো যে সানা স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।সানাকে দেখে সাফোয়ান বুঝতে পারছেনা ওর মনের মধ্যে কি বয়ে চলেছে।
~ রাফিয়া শান্ত হও আর কান্না করিও না। সাইফ তোমার ভাবি আর স্ত্রী কে নিয়ে যাও তার বাবার বাড়ি।একমুহূর্তে অই বাসায় তাদের প্রয়োজন আছে।
মিসেস শিকদারের কথা শেষ হওয়ার আগেই সানা বলে উঠলো।
~ মিসেস রাফিয়া শিকদার গেলে যাক। আমি কোথাও যাচ্ছি না। এই মুহুর্তে আমার কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা নাইম
~ মামার জন্য কি তোর একটুও কষ্ট হচ্ছেনা মিষ্টি? এতো টা পাষান তো তুই না। আমার উপর রাগে কেনো মামাকে শেষবারের মতো দেখতে যাবিনা?
~ আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না মিসেস রাফিয়া শিকদার। তাই অপ্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না।
সানা খাবার রেখে নিজের রুমের দিকে হাটা দিলো। সানার ব্যাবহারে সবাই অবাক হয়ে আছেন। হবেই বা না কেন? সানাকে অল্প বেশ সবাই জানে। সানা অনেক চঞ্চল কিন্তু কারো কষ্ট সয্য করতে পারেনা। আর সেখানে তার মামার মৃত্যুর কথা শুনেও এতো স্বাভাবিক কিভাবে? সাফোয়ানের ও খারাপ লাগলো সানার এইরকম ব্যাবহারে। সেও উঠে চলে গেলো সানার পিছু পিছু।
#to_be_continued