এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৫
#নুসাইবা_রেহমান_আদর_লেখনীতে
#পর্ব_৫
সানা বসে বসে ভাবছে কি করবে সে এখন। এই বাড়িতে আসার পর থেকে একা একা এই রুমের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। মামা মারা গেছে আজ তিনদিন হয়েছে৷ রাফিয়া অই বাসা থেকে আজ বিকেলেই ফিরেছে। সাফোয়ানের কোনো খোঁজ নাই অইদিনের পর থেকে। মামাদের বাসা থেকে সেই যে সানা কে শিকদার বাড়িতে দিয়ে গেছে এখন অব্দি ফিরে নাই। বাড়ির কেউ ও এই ব্যাপারে বলতে পারবেনা যে সাফোয়ান শিকদার হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলো কোথায়?
সানার মাথায় ঘুরছে কি এমন গোপন কাজ শেষ করতে সে গেছে যার বিষয়ে কেউ জানেনা। সীট এতো ভুল কিভাবে করতে পারে সে? তখন সানার রুমে রাফিয়ার আগমন ঘটে।
~আমি কি আসতে পারি সানা?
~তা সিকদার বাড়ির ছোট বউয়ের কি এমন দরকার পরল যে এই সময়ে বড় জায়ের রুমে আসতে হলো?
~সানা এই বাড়ির বউ হওয়ার আগে আমি তোর বড় বোন সেটা কিভাবে ভুলে যাচ্ছিস তুই?
~আমার কোন বড় বোন নাই। তাই এই ধরনের সেন্টিমেন্টাল কথা বলে আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করবেন না। যা বলতে এসেছেন বলে চলে যান আমি এখন ঘুমাবো।
~তুই এতটা হার্টলেস কবে হয়ে গেলি সানা? এই সানাকে তো আমি চিনতে পারছি না। মামা মারা যাওয়াতে আমি তোর মধ্যে একফুটা কষ্টের ছাপ দেখতে পাই নাই। আসলেই কি তুই সেই সানা? নাকি অন্যকেউ।তুই তো স্বার্থপর দের কাতারের ও বাহিরে চলে গেলি?
সানা অনেক্ক্ষণ ধরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু রাফিয়ার এমন কথায় আর পারলো না।
~ বাহ আমাকে স্বার্থপর হওয়ার পাঠ কে পড়াতে আসছে? সুন্দর না মিসেস সাইফ রাফিয়া শিকদার? আপনি নিজে আমাকে স্বার্থপর বলছেন কিন্তু নিজেকে চোখে দেখছেন না? ও হ্যাঁ মানুষ তো আবার নিজের দোষ চোখে দেখতে পায় না।যেই অব্দি কেউ তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখিয়ে দেয়।তাহলে সেই ভালো কাজ টা নাহয় আজ আমি করলাম।
সানার কথার ভাব ভঙ্গি পুরোটাই বদলে গেছে। রাগে সানার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। এতোক্ষন চিৎকার করে কথাগুলা বলায় নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। কেমন সাইকোদের মতো লাগছে সানাকে।
~ সানা নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলছিস তুই৷ আমি তোর বড় বোন তাই এইভাবে আমার সাথে চিৎকার করতে পারিস না তুই।
~ ওয়াহ মিসেস শিকদার, দারুন! নিজের নামে কিছু শোনার আগেই গায়ে লেগে গেলো। তাহলে অন্যকাউকে খোটা দেওয়ার অধিকার কোথা থেকে আসে? লিসেন মিসেস শিকদার আমি সেই পুরানো সো কল্ড বলদ সানা নই যে আপনার এইরকম মন ভুলানো কথায় গলে যাবো। এই মুহুর্তে এখান থেকে আসুন নাহয় এর থেকেও বাজে ব্যাবহার করতে আমি বাধ্য হবো। নেক্সটে আমার আশেপাশেও যেনো আপনাকে না দেখি। বিয়ের আসর থেকে পালানোর আগে বোনের কথা মনে পরে নাই? এখন আসছে নাটক করতে৷
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাফিয়া। সানা যে তাকে এইভাবে অপমান করতে পারে এটা রাফিয়ার কল্পনার ও বাহিরে ছিলো। সানাকে সম্পূর্ণ অচেনা লাগছে তার কাছে। দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো রাফিয়া। সানাকে আর রাগানো যাবেনা। রাফিয়া যাওয়ার পরেও সানার রাগ কমলো না। টেবিলের উপর থেকে ফুলদানি নিয়ে ছুড়ে ফেললো ফ্লোরে। রাগে ওয়ালে ঘুষি মে*রে যাচ্ছে সানা। হাত ছুলে গিয়ে বাজে অবস্থা হওয়ার পরেও থামার নাম নেই সানার। সাফোয়ান রুমে ঢুকেই সানার এমন অবস্থা দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর সানার হাত ধরে ফেলে। সানা ঘুরে সাফোয়ান কে দেখে কিছু বলেনা। চুপ হয়ে যায়।
~ তুমি যে আমার জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর করলেন, জানেন এখানে কত টাকার জিনিস ছিলো?
~ এত এত টাকা দিয়ে করবেন টা কি? মাত্র একটা ফুলদানি ভেঙ্গেছি তাই খোটা দিচ্ছেন?বেশ করেছি আমি। আরো ভাঙ্গবো। আমাকে বিয়ে করে এনেছেন কেন? এটা আপনার দোষ আমার না।
সাফোয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। একজন রেগে থাকলে অপরজন কে শান্ত থেকে তাকে সামলাতে হয় নাহলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়।
~ কি ব্যাপার সানা আপনি এতো রেগে আছেন কেনো? আমাদের বাসা থেকে কি কেউ কিছু বলছে?
~ না কে কি বলবে। এমনি রেগে নাই আমি। মন চাইলো তাই ভাঙ্গলাম। আর মারামারি করার অনেকদিনে শখ ছিল আমার তাই দেওয়ালের সাথে পাঞ্চিং পাঞ্চিং খেলছিলাম। আপনি ছিলেইন না তো তাই।
সাফোয়ান জানে সানা কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এইভাবে বললো। সাফোয়ান উঠে ড্রয়্যার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে আনে। পরম যত্নে সানার হাত নিজের হাতের উপর নিয়ে নিলো। তুলাতে স্যাভলন লাগিয়ে সানার হাত পরিষ্কার করে দেয়। মলম হাতে লাগিয়ে দিয়ে বলে।
~ চুপচাপ এখানে বসে থাকো তুমি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি এরপর একসাথে খেতে যাবো।
সানা এতোক্ষন ঘোরের মাঝে ছিলো। নিজের প্রতি সাফোয়ানের এই সামান্য কেয়ার টুকু তার মন কে গলাতে শুরু করছে। এই প্রথম তার জন্য কেউ কেয়ার করলো রাফিয়া ব্যাতিত। নাহলে তো হাজার ব্যাথা পেলেও এদের কিছু যাবে আসবে না।
~ না সানা তোকে দূ্রবল হলে চলবে না৷ এখানে যেই কাযে এসেছিস তা পূর্ণ করতে হবে। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে তোর। এই দুনিয়াতে তোর নিজের বলতে কেউ নেই এটা মাথায় রাখ কেবল।
সানার প্রচন্ড অসস্থি হচ্ছে। সাফোয়ান সামনে থাকলে কেন যেনো সানার প্রচন্ড আনইজি লাগে। ভয় লাগে। সাফোয়ান কে সে ভয় পায়। মুখে স্বীকার না করলে কি হবে। এই লোক কে সে অনেক আগে থেকে ভয় পায়। সাফোয়ান কে দেখলে সে নিরাপদ দূরত্ব মেইনটেইন করে চলাফেলা করতো কিন্তু এখন প্রতিটা মূহুর্তে এই লোক সামনে থাকে। সাফোয়ান ফ্রেশ হয়ে আসে। ফ্রেশ বলতে একদম শাওয়ার নিয়ে, টাওয়াল প্যাচিয়ে৷ সানাকে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবতে দেখে সানার কাছে চলে যায়। ভাবনার মাঝে এতোটাই ডুবে ছিলো যে হঠাৎ সাফোয়ান কে এতোটা কাছে দেখে চমকে যায়। কিন্তু তাতে আমাদের সাফোয়ানের কিছু হয় না। সে তো সানা কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷
শাড়ীর ফাকে কোমড়ে সাফোয়ানেত ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে সানা। চোখ বড় বড় করে তাকায়।
~ আপনাকে আজ এই লাল শাড়িতে দেখে আমার মনে পরেছে সানা। আমাদের বাসর রাত তো এখোনো বাকি আছে তাইনা? মানা যায় বিবাহিত সাফোয়ান শিকদার নাকি এখোনো ভার্জিন। লোকে শুনলে আমার কতোটা লজ্জায় পরতে হবে বলেন তো? আর নিজের ছেলে মেয়েদের কিভাবে বলবো যে বাবা তার বিয়ের এক সপ্তাহ চলে যাচ্ছিলো তখনো সিংগেল। এগুলা মানা যায় না। মানুষ শুনলে আনার উপর ডাউট করবো যে আমার কোনো সমস্যা আছে। এটা তো আর আমি মেনে নিতে পারি না।
সানা হা করে সাফোয়ানের কথা শুনেই যাচ্ছে। সানার কান দিয়ে গরম ধোয়া বেরোচ্ছে এমন নির্লজ্জ কথা শুনে। এই লোকের মুখে কিছুই আটকায় না।
~ আপনি তো অনেক বড় ড্রামাবাজ। মানুষের সামনে নিজেকে একদম ইনোসেন্ট ভাবে প্রেজেন্ট করেন যে ভাজা মাছ উল্ট খেতে পারেন না। আর আজ এগুলা কি বলছেন?
~ বউয়ের সামনে তো আর মমহাপুরুষ সেযে থাকতে পারিনা। তাহলে তো আর এই শিকদার বাড়ির বংশ আগানো লাগবেনা।
~ চুউপ করুন অসভ্য লোক। বাজে লোক।
সানাকে রাগিয়ে দিয়ে অনেক শান্তি পাচ্ছে সাফোয়ান। সানা রেগে মেগে সাফোয়ান থেকে নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সাফোয়ান অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকায় পারছেনা ছুটতে সানা। রেগে গিয়ে সানা এবার সাফোয়ানের বুকে অনেক জোরে কামড় লাগিয়ে দিলো। আক্সমিক সানার এমন কাজে সাফোয়ান কিছুটা চমকে গেলেও, এরপর হেসে ফেলে।
#to_be_continued