এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ৬
নুসাইবা_রেহমান_আদর
– দরজা খুলো সানা আমাকে দরজা ভাঙ্গতে বাধ্য করো না।
সানা চুপচাপ বসে কান্না করছে, সাফোয়ানের কথার জবাব দিচ্ছেনা। সে দরজা খুলবে না বলেই ঠিক করেছে৷ সাফোয়ান বারবার ডেকে সানাকে দিয়ে যখন দরজা খুলাতে পারলো না। রাগে সাফোয়ান দরজা বাহির থেকে আটকিয়ে দিলো।
– ঠিক আছে ফাইন তুমি দরজা খুলবে না ফাইন। আজ সারারাত একা এই রুমে তুমি থাকবে আর এটাই তোমার শাস্তি।
সাফোয়ান চলে গেলো মেইন সুইচ অফ করতে। সে কি করবে সানা যখন বুঝতেই চাচ্ছেনা। সানা সাফোয়ানের কথা সিরিয়াসলি নিলো না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর লোডশেডিং হয়ে গেলো৷ সানা কারেন্ট চলে গেছে ভাবলেও সাফোয়ান তো সত্যি সত্যি মেইন সুইচ অফ করে দিছে। এমনিতেও শীতের রাত গরম লাগার চান্স নাই। তাই আজ কারেন্ট না হলেও চলবে। টর্চ বের করে সে নিচে গেষ্টরুমে গিয়ে সুয়ে পরলো। সাফোয়ানের রুম যেহেতু সাউন্ডপ্রুফ সানার চিল্লানোর শব্দ ও কানে আসবেনা। খাটের মাঝে হাটু মুরে বসে আছে সানা। অন্ধকার রুমে তার ভয় লাগছে৷ এখন তার অনুশোচনা হচ্ছে কেনো তখন সাফোয়ান কে দরজ খুলে দিলো না। দরজা খুলে দিলে হয়তো আর এখন তাকে এই অন্ধকারে একা থাকতে হতো না। প্রচন্ডভাবে ভয় লাগছে সানার। হঠাৎ বাহিরে কারো হাটার আওয়াজ পাচ্ছে। সানা ভাবলো হয়তো সাফোয়ান আসছে।
– বাহিরে কি আপনি? শুনছেন?
কেউ কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সানার ভয় বারছে সে ডুকরে কেদে উঠে৷ সানা রুমের মধ্যে কারো উপস্থিতি অনুভব করে। শীতের মধ্যেও ভয়ের চোটে সানা ঘেমে যাচ্ছে। সানার খুব কাছে কেউ একজন আসছে। তার গরম নিশ্বাস সানার মুখের উপর পরছে। সানা জোরে চেচাতে নিলে আগুন্তক সানার মুখ চেপে ধরে।
– এই মেয়ে সারাক্ষন কি তোমার চেচাতে হবে? একটু চুপচাপ থাকবা।
সাফোয়ানের আওয়াজ পেয়ে শান্তি পায় সানা। সাফোয়ান কে জরিয়ে ধরে টাইট করে। হঠাৎ এভাবে সানা যে তাকে জরিয়ে ধরবে সাফোয়ান একটু ও ভাবে নাই।
– আপনি কোথায় ছিলেন এতোক্ষন? জানেন আমি কত ভয় পেয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন আমি আর এরকম কখোনো করবো না।
সানা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর আর সাফোয়ানের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। সানা খুব ভয় পেয়েছে। এভাবে ভয় দেখানো উচিৎ হয় নাই তার৷
– আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।
– না অন্ধকারে আমার খুব ভয় লাগে আমি আপনাকে ছাড়বো না।
সানা আরো জোরে শক্ত করে জরিয়ে ধরে সাফোয়ান কে। সানার এভাবে জরিয়ে ধরায় তাকে ছাড়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে সাফোয়ানের। অবশেষে ব্যার্থ হয়ে সানাকে জরিয়ে ধরিয়েই তার ঘুমানো লাগলো।
– সানা এভাবে ঘুমানো যায় না। আমাকে ছেড়ে দিয়ে ঘুমাও।
– বলছি না আমি আপনাকে ছাড়বো না এভাবেই ঘুমাবেন আজকে।
– বাচ্চাদের মতো জিদ কেনো করছো?
– আজকে আপনি আমাকে যতোই বকা দেন আমি ছাড়বো না কিছুতেই।
– আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও এখন।
সাফোয়ান হার মেনে নিলো। সাফোয়ান রাজি হওয়ায় সানা খুশি হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে সে ঘুমানোর চেষ্টা করে। সানা এভাবে জাপ্টে ধরে শুয়েছে যে সাফোয়ান নড়াচড়াও করতে পারছেনা। সাফোয়ান সানার চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো। এই ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। দুইজনই ঘুমিয়ে পরলো।
সকালের রোদ বেলকনি দিয়ে এসে রুমে ঢুকলো। সাফোয়ানের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলো সানা তার বুকের উপর মাথা দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। বেলকনির দিকে নজর গেলো, বেলকনির দরজা খোলা দেখে মনে পরে কাল এখান দিয়ে রুমে আসার পর দরজা আটকাতে মনে ছিলো না। সাবধানে সানাকে বালিশে সুইয়ে দিয়ে উঠে বসে সাফোয়ান। ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সানা এখোনো ঘুমাচ্ছে। ঘড়ির দিলে তাকিয়ে দেখে ১০ টা বাজে।
– এই সানা উঠো তাড়াতাড়ি সকাল হয়ে গেছে।
– দূর আব্বু আমাকে ডিস্টার্ব কইরো না ঘুমাইতে দেও।
– এই মেয়ে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমি তোমার আব্বু লাগি?
– দূর যেই হন এখন আমাকে ঘুমাতে দেন।
– ফাইন ঘুমাও, তোমার মামি কল দিছে জলদি উঠে কথা বলো।
মামির নাম শুনতেই সানা লাফিয়ে উঠে বসে পরে।
-ককই মামি? আগে বলবেন না?
– হাহাহাহা তুমি মম কে এতো ভয় পাও কেন?
সাফোয়ানের হাসিতে বিরক্তির চরম পর্যায় চলে যায় সানা। বুঝতে বাকি রইলো না যে সাফোয়ান তাকে উঠানোর জন্য মিথ্যে বলছে।
– কাল রাতে আপনি আমাকে ইচ্ছে করে ভয় দেখাইছেন।রুম তো ভিতর থেকে লকড ছিলো তাহলে আপনি আসলেন কিভাবে?
– ম্যাজিক!
সাফোয়ান হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে সানা।
বিকেলের দিকে সানা আর রেহানা কে নিয়ে বের হয় সপিং মলের উদ্দেশ্যে। কারন সানার পরার মতো ভালো কিছু ড্রেস কিনতে হবে। আজ তো সাফোয়ান রেহানার হিজাব সানাকে বাধাইছে। রেহানা এই বাড়ির মেইড কম সাফোয়ানের কাছে নিজের বোনের মত।
– ভাইজান, আপাকে হোষ্টেল থেকে কবে নিয়ে আসবেন? অনেকদিন হলো আপা বাড়িতে আসেন না।
– তুই তো জানোস রেহানা ও এসব পছন্দ করে না। তাই আমাদের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে।
– কার কথা বলছো আপু তোমরা?
– ভাবিজান আমি তো বড় আপার কথা বলতেছি। আপনার বড় ননদ।
– উনার বড় বোন ও আছে?
– হ্যাঁ ভাবিজান।
সানা জানতো না যে তার বড় বোন আছে। সানার মামা যে মামিকে বিয়ে করছে তা তাদেত বাড়ির কেউ জানতো না। সাফোয়ান তার মামার সন্তান না তা মা থেকে জেনেছিলো। সানা ভেবে পায়না দুই সন্তানের জননীকে কেনো তার মামা বিয়ে করলো। তাদের এইসব অনেক রহস্যময়।সানা আর কিছু বললো না চুপ হয়ে গেলো। যথা সময় সপিংমলের সামনে এসে গাড়ি থামে।গাড়ি থেকে নেমে যায় সাফোয়ান। সানা আর রেহানাকে নিয়ে সপিংমলের ভিতরব যায় আর তাদের পিছে অনেক গার্ড।সানা ভেবে পায়না এত এত মানুষ সাথে নিয়ে কেনো ঘুরে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সানার জন্য লং ড্রেস সিলেক্ট করে সাফোয়ান। আর কিছু থ্রিপিস,গাউন। শাড়ি এইটুকু মেয়ের সাথে যায়না তাই কিনলো না। রেহানাকেও তার পছন্দের জামাকাপড় কিনে দিলো।
– আমার না অই ড্রেস টা ভাল্লাগছে অইটা কিনি?
– এইসব ড্রেস তোমার পরা লাগবেনা চুপ থাকো।
সানাকে ধমকে কি দোকান থেকে বের হয়ে যায় সাফোয়ান। টেডি সপের পাস দিয়ে যাওয়ার সময় সানার চোখ পরে পাশে থাকা এক বড় টেডির উপর। ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে সানা ওটা দেখে। সাফোয়ান কিছু দূর গিয়ে পিছে তাকিয়ে দেখে সানা এখোনো সেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– এই তুমি এভাবে একেক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকো কেনো? যদি হারিয়ে যাও আমাদেত কোথায় খুঁজে পাবে ইডিয়েট?
– অই টেডি বিয়ার টা অন্তত কিনে দেন আমাকে।
সাফোয়ান তাকিয়ে দেখে বিরাট এক টেডিবিয়ার। এই মেয়ে এতবড় টেডিবিয়ার দিয়ে কি করবে ভেবে পায়না সে।
– এতবড় টেডিবিয়ার আমাদের বিছানায় রাখলে তুমি কোথায় ঘুমাবে? একি তো তোমার জন্য খাটে যায়গা পাইনা তার উপর টেডি নিলে তো শেষ।
– আমি জানিনা কিছু এই টেডি টা আমার লাগবেই লাগবে।
– দেখো সানা জিদ কইরো না এটা নিলে তোমাকে আলাদা রুমে ঘুমাতে হবে।একা একা ঘুমাতে পারবে? আমার রুমে এই পুতুলের যায়গা নাই।
সানার মন খারাপ হয়ে গেলো। টেডিবিয়ার টা তার খুব পছন্দ হয়েছে। আবার সে এক একাও ঘুমাতে পারবেনা। সানা মন খারাপ করে সামনে হাটা ধরলো সাফোয়ানের সাথে। সাফোয়ান কিছুক্ষন সানাকে দেখে আবার হাটা দিলো। সানাকে নিয়ে সে জুতার দোকানে গেলো। সেখানে গিয়ে সাফোয়ান অবাক হয়ে গেলো।সাফোয়ান আর মিথীলা মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সানা সাফোয়ানেত হাত শক্ত করে ধরে হাটছিলো যাতে হারিয়ে না যায়। মিথিলা সাফোয়ানদের দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি ব্যাপার সাফু কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?
#চলবে..?
( গত পর্বে ভুলে মিথীলার নাম মারিয়া দিয়ে দিছি।)