এক প্রহর ভালোবাসার সিজন ২ পর্ব ৮
#নুসাইবা_রেহমান_আদর_লেখনীতে
#পর্ব_৮
সানা অনেক্ষন ধরে বসে আছে সাফোয়ানের সামনে। মূলত আজ সে কোথাও যেতে চায়। বাড়ি থেকে না বলে গেলে খারাপ দেখা যাবে। এই জন্য কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে সাফোয়ানের সাথে অথচ সাফোয়ান তাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
~ এই যে শুনছেন? আমি একটু বাহিরে যেতে চাই।
~ কোথায় যাবেন? বাহিরে কি কাজ আপনার?
~ যাওয়ার দরকার আছে একটু পার্সোনাল কেনাকাটা আছে। আমি যাই?
~ আমি নিয়ে যাবো। আমার পারমিশন ছাড়া এই বাড়ি থেকে তুমি বের হবা না।
~ সমস্যা কি? আমি একা যেতে পারবো। আপনার আসার প্রয়োজন নাই।
~ আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। আমার এক কথা।যাও রেডি হয়ে এসো।
আজ যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে তার একা যেতে হবে। এখন যদি সে সাফোয়ানের সাথে বের হয় তাহলে তো যেতে পারবে না । বের হয় তাহলে সানা কি করবে? দূর এখানে আসার পর কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না উল্টোপাল্টা কাজ করে যাচ্ছে।
~দেখেন মিস্টার সাফোয়ান শিকদার আমিও বেশি কথা বলা পছন্দ করি না। তাই বলছি আমার যা যা প্রয়োজন সেসব জিনিসপত্র আমি নিজেই নিয়ে আসতে পারবো। আমাকে বলেছেন এই জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
~দেখুন সানা আপনি এখন সাফোয়ান শিকদার। আপনাকে এখন একা চলাচল করা মানায় না।সামনে ভোট কখন শত্রুপক্ষ থেকে আক্রমণ হয় আমরা নিজেরাও বলতে পারব না। আপনাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। আর আমি আমার দায়িত্ব কে কখনো হেলাফেলা করি না। তাই বললাম, যা নিতে যাবেন আমার সাথে চলুন নাহলে বাসায় বসে থাকুন।
সাফোয়ান যে নাছরবান্দা মানুষ তা সানা ভালোভাবে জানে তাই সাফোয়ানকে রেখে সে যেতে পারবে না বুঝতে পেরেছে।
~আচ্ছা তাহলে চলুন। আমি রেডি হয়ে আসতেছি আপনি বসুন।
~তাহলে শুরুতেই চলে যেতেন এত তর্ক করার কি ছিল আমার সাথে?
~তর্ক আমি না আমি আপনি করেন আমার সাথে।
কাল রাতের পর থেকে সাইফ ঠিকমতো কথা বলছে না রাফিয়ার সাথে। রাফিয়া বুঝতে পেরেছে যে কাল রাতের কথার কারনে সাইফ তার সাথে এরকম ব্যাবহার করছে। সাইফ যেভাবেই হোক মানাতে হবে তার। তাই শুধু শুধু তার উপর রাগ করে বসে আছে।
~সাইফ?
~হ্যাঁ কিছু বলবে তুমি আমাকে? তাহলে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো আমার কাজ আছে।
~সামান্য কথা শুনতে তুমি এত তারা দেখাচ্ছ, কি এমন কাজ আছে তোমার এই সময়?
~পার্টি যেতে হবে এখন আমাদের। সেখানে অনেক আর জমে আছে যা গিয়ে দেখতে হবে আমার।
~ওখানে না গিয়ে তুমি তো তোমাদের অফিসে যেতে পারো সাইফ?সাফোয়ান তো আর অফিসে যাচ্ছে না। ওই দিকটা তুমি সামলাও মায়ের এত বয়স হচ্ছে তাই না? তাকে তো একটু রেস্টে থাকতে দিবে তোমরা দুই ভাই। এই বয়সে যদি সে অফিস সামলায় আবার বাড়িও সামলায় তাহলে কিভাবে চলবে?
~এই বিষয়ে কাল রাতে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে তোমার সাথে আমি তার বাড়াতে চাই না। আপা আপাতত তুমি চুপ থাকো আমাকে আমার কাজ করতে দাও। তুমি তোমার কাজগুলো দেখে নাও আমি এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না এবার আমাকে যেতে দাও।
সাইফ রাফিয়াকে আর কিছু না বলতে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল না খেয়ে।রাফিয়া মানে কত অসন্তুষ্ট হলো সাইফ এর ব্যবহার। সাইট যে তার সাথে এরকম ব্যবহার করবে সে ভেবেও পায়নি। কারণ সাইট সব সময় তার সাথে নমনীয় আচরণ করে এসেছে।সাফওয়ান এর উপর এই মুহূর্তে প্রচুর রাগ হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে সাফার নামক মানুষের জন্য তার বোন আর স্বামী তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
সাইফ আর রাফিয়ার ঝগড়া আর সানা আর সাফোয়ান দুর্ঘটনাক্রমে দেখতে পেয়েছে।রাফিয়া কাউকে খেয়াল করেনি সে নিজের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সানা সাফোয়ান কে বলে।
~আপনি এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের!
সানার ডাকে সাফোয়ানের ধ্যান ভাঙ্গলো। রাফিয়াও হাল্কা কেপে উঠলো,পিছু তাকিয়ে সেখানে সানা আর সাফোয়ান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।সাফোয়ান এক পলক সেদিক তাকিয়ে বললো।
~ না কিছুনা চলুন।
সানা আর সাফোয়ান বেড়িয়ে যেতেই সেদিকে তাকিয়ে নিজেকে বলে রাফিয়া।
~ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করলাম আমরা। আমরা ঝগড়া করি,আর এরা নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করে এতো হ্যাপি কিভাবে?এটাতো হওয়ার কথা ছিল না কখনো। নজর রাখতে হবে এদের দুজনের উপর ভালোভাবে। কখন তারা কি করে বসে থাকে বলা যায় না।
সাফোয়ানের সাথে সানা শপিংমলে গিয়ে রীতিমতো ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। তাদের ঝগড়ার মূল বিষয় হলো সানা একা যাবে তার৷ দরকারি জিনিশ গুলো আনতে। এইদিকে সাফোয়ান তাকে একা ছাড়বে না।
~ এইটা পাবলিক প্লেস এখানে এভাবে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া না করলে পারেন না আপনি নিশ্চয় শিকদার সাহেব?
~আপনি ঝগড়া করছেন আমার সাথে। আমি যখন বলেছি আপনার সাথে শপের মধ্যে যাব তাহলে যাবোই। তাই কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলুন আপনি।
~আরে আপনি আন্দাজ আমার সাথে কোথায় যাবেন? আমি আপনাকে আমার সাথে নিব না মানে নিবই না।
~দেখেন স্যার অনেকক্ষণ ধরে আপনার কথা আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।
~আমি আপনার সাথে কোন শপের মধ্যে ঢুকবো না। আপনি এভাবে আমাকে জোর করতে পারেন না। আর একজন ছেলে মানুষ হয়ে মেয়েদের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার শপে কেন ঢুকবেন? মিনিমাম লজ্জাবোধ তো থাকা দরকার আপনার।
~যাইহোক আমি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে চলে আসবেন। এর বেশি ছাড় দিতে পারব না আমি আপনাকে।
~ভাই এনি চান্স আপনি কি আমার উপর নজরদারি করছেন? তাহলে চুপচাপ নিজের কাজে মাথা ঘামান।
~আমি আপনার উপর কোন নজরদারি করছি না। আমার মত সবাই ভদ্র মানুষ হবে না যে শপের মধ্যে ঢুকে আপনার উপর আক্রমণ করতে পারবে না। তাই আর কথা বাড়াবেন না প্লিজ।
সানা জানে এই লোকের সাথে তর্ক করে তার কোন লাভ হবে না। যেভাবেই হোক শপের মধ্যেই তার সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
~আচ্ছা তাহলে আপনি এখানেই থাকুন আমি আসছি।
সানা শপের মধ্যে ঢুকে নিজের মোবাইল থেকে কাউকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দিল বোরকা পরে চলে আসতে শপের মধ্যে। যাতে সাফোয়ান কোনোভাবেই তাদের সন্দেহ করতে না পারে । লোকটি সানার বুদ্ধিমত পড়ে সেখানে চলে যায়। সাফানের চোখ থেকে বাচ্চা শক্তির খুব মুশকিল। কিন্তু কিছু করার নাই তাদের হাতে এভাবে লুকিয়ে এর প্ল্যান সাক্সেসফুল করতে হবে। লোকটি সানার কাছে যাওয়ার পর সানা তাকে জিজ্ঞেস করে ।
~কোন সমস্যা হয় নাই তো, সাফোয়ান কোন সন্দেহ করে নাই?
~আরে না কিভাবে সন্দেহ করবে খুব সাবধানে চলে এসেছি এখানে। এমন একজন হিটলার কে তুই কিভাবে বিয়ে করেছিস?
~চুপ থাক বেশি কথা বলিস না তুই! যার জন্য এখানে ডাকা সব আপডেট তুই পেয়েছিস তার সম্পর্কে?
~হ্যাঁ! কিন্তু আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতেছি না যে এই লোক শেষমেষ এইরকম কাজ করতে পারে সানা। এই পেনড্রাইভে তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ডিটেলস দেওয়া আছে আর তার কাজের সম্পর্কেও।
~ধন্যবাদ শ্রাবণ তুই না থাকলে যে আমি কার কাছে সাহায্য চাইতাম নিজেও জানিনা।
~এত জোরে নাম ডাক বলে ডাকছিস কেন বলোদ?আর আমাকে ধন্যবাদ বলার কি আছে আমরা আমরাই তো?
~কিন্তু আমার সব বিপদে আপদে তুই আমার পাশে থাকিস সেটা আমি কখনো ভুলতে পারবো না।কিন্তু আজকে আমি তোকে কোন ট্রিট দিতে পারতেছি না বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
~লাগবে না তুই এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা তানাহলে আমি ও বের হতে পারব না। আর কখনো আমাকে এই মেয়ে সেজে যেখানে সেখান্ব ডাক। এত বড় হাইটের কোন মেয়ে মানুষ দুনিয়াতে আছে তুই বল?
~খারাপ লাগতেছে না তোকে শ্রাবণ যে কোন ছেলে দেখলেই ফিদা হয়ে যাবে!
বলেই হেসে ফেলে সানা আর সানার হাসি দেখে রাগী চোখে তাকায় সানার দিকে শ্রাবণ।শ্রাবন কে তাকাতে দেখে সানা আরো জোড়ে হেসে ফেলে।
#to_be_continued