#প্রণয়ের আসক্তি পর্ব ১০
#writer_Mousumi_Akter
১০
পার্লার থেকে লোক এসছে মৃথিলাকে সাজাতে।মৃথিলার চারপাশে মৃথিলাকে ঘিরে রয়েছে নিরা,সুপ্তি,নবনিতা,আরিফা,নিরার কয়েকজন বান্ধবী।মৃথিলাকে লাল টুকটুকে বেনারসি পরানো হয়েছে।গা ভর্তি গহনা পরানো হয়েছে।গায়ে কত ভরী গহনা হবে তার হিসাব নেই।রাজকুমারীর মতো দেখাচ্ছে মৃথিলাকে।আগের কার যুগের রাণিরা বোধহয় এমন ই সাজগোজ করতো।মৃথিলাকে দেখে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাচ্ছে।কেউ চোখ ফেরাতে পারছে না মৃথিলার থেকে।নিরা,সুপ্তি,নবনিতা, আরিফা সহ সাবাই আজ সেজেছে।বিয়ে উপলক্ষে সবার জন্য আলাদা আলাদা ড্রেস আনা হয়েছে।
মেয়েদের সাজগোজ দেখে বোঝা যাচ্ছে তারা বিয়ে বাড়িতেই আছে।বিয়ে হবে আর বাড়ির মেয়েরা আনলিমিটেড সাজবে না তাই কখোনো হয়।মৃথিলার টানা টানা কাজল কালো চোখ,টানা নাক ভূবনভোলানো সুন্দরী দেখাচ্ছে।ইরিনা হাসান এর মুখ থমথমে হয়ে আছে কেনো সেটা বোঝা যাচ্ছেনা।ফোন নিয়ে এ কোনায় সে কোনায় গিয়ে চুপিচুপি কথা বলছে।ইরিনা হাসানের ভাই ইরাণ এসছে ভাগনের বিয়ে উপলক্ষে।সে ও বোনের পিছ পিছ ফিসফিস করে বেড়াচ্ছে।গন্ডগোল কিছু একটা হয়েছে কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চাইছে না।তাদের খুব ই অস্হির দেখাচ্ছে।নিরব ও সেই সাথে ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে।
ইসহাক হাসান তার কিছু ব্যবসায়ী বন্ধুদের নিয়ে তার রেস্ট রুমে বসে কথা বলছেন।বিয়ে উপলক্ষে তার কিছু ফ্রেন্ড রা এসছে।সুপ্তি ওয়াশ রুমে যাবে বলে উঠে এসছে।কাজী চলে এসছে এক্ষুণি বিয়ে পড়ানো হবে।বিয়ের আগে ওয়াশরুমের কাজটা সারার জন্য বেরিয়েছে সুপ্তি।এত বড় বাড়িতে কোথায় কোথায় ওয়াশরুম সুপ্তির পুরাটায় অজানা।সুপ্তি ভুলে দো-তলার একটা রুমে প্রবেশ করলো।
রুমে প্রবেশ করেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো।দরজা খোলা দেখেই প্রবেশ করলো।রিফাত পাজামার ফিতা বাঁধছিলো।সুপ্তি এমন লজ্জাকর পরিস্হিতিতে পড়বে ভাবতেই পারেনি। দেখেই চোখ বন্ধ করলো।রিফাত দ্রুত অন্যদিকে ঘুরলো,ফিতা বেঁধে পেছন ঘুরে দেখলো সুপ্তি নেই।রিফাত দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে এলো।দেখলো সুপ্তি দ্রুত ছুটে যাচ্ছে।রিফাত বুঝতে পারলো সুপ্তি সাংঘাতিক লজ্জা পেয়েছে।রিফাত দ্রুত পায়ে হেঁটে সুপ্তির সামনে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ালো।সুপ্তি লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।সুপ্তির পরণে মেরুণ কালারে লেহেঙ্গা, মাথায় লাল গোলাপের গাজরা,চোখে কাজল,ঠোঁটে খয়েরী লিপিস্টিক বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।রিফাত তার জীবনে কোনো মেয়েকে এইভাবে দেখে নি।
সেদিন পার্কে সুপ্তির খোলা চুল,সরল মুখ দেখে যেনো ন্যাচারাল কিছু দেখেছিলো।প্রথম দেখাতে কিছু ফিল হয়নি, তবে বাইকে এক সাথে দীর্ঘ পথভ্রমনে একটা সুপ্ত অনূভুতি মনের ভেতরে প্রবেশ করে ফেলেছে।আজ আবার ও দেখা অন্যরূপে।আসলে কারো সাথে ঘনঘন কয়েকবার দেখা হওয়া বোধহয় তাদের মাঝে কিছু একটা হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।রিফাত এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পড়েছে সুপ্তির দিকে। সুপ্তি ডান দিকে সরলে রিফাত ও ডান সাইডে সরে সুপ্তির সামনে দাঁড়ায়, বামে গেলে ও বামে গিয়ে সামনে দাঁড়ায়।সুপ্তি রিফাত কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আরেকবার ও করলো।রিফাত আবার ও পথ আটকায়।সুপ্তি আর বৃথা চেষ্টা না করে শান্ত মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
রিফাত পথ আটকে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,
‘এভাবে ছুটছো কেনো বালিকা।আর কোথায় যাচ্ছিলে।’
‘আমি আসলে এ বাড়ির কিছুই চিনিনা।ভুলে আপনার রুমে চলে গিয়েছিলাম স্যার।’
‘তুমি এ বাড়ির কিছুই চিনোনা সেটা আমি জানি।ভুল হতেই পারে।বাট কি খুজছিলে।’
‘ওয়াশ রুম স্যার।’
‘আচ্ছা তুমি কিছু দেখোনিতো।’
‘কি দেখবো।’
‘তখন যে আমি ফিতা বাঁধছিলাম।’
সুপ্তির লজ্জায় এই পাঁচতলা ভবন থেকে লা*ফ দিতে মন চাচ্ছে।পুলিশ রা কি এত বেসরম হয় ছিঃ।আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি আর সে কিভাবে সেই ঘটনার পুনঃরাবৃত্তি করছে।লজ্জায় কান মুখ সব গরম হয়ে যাচ্ছে সুপ্তির।সুপ্তি লজ্জা মাখা চোখ মুখ নিয়ে তাকিয়ে দেখলো রিফাতের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।জীবনে প্রথমবার কারো হাসি দেখে মুগ্ধ হলো সুপ্তি।সুপ্তি এই সিসুয়েশন থেকে রক্ষা পেতে বললো,
‘স্যার ওয়াশ রুম টা।’
‘এসো আমার সাথে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।’
‘সরি স্যার আমি ভুল করে আপনার রুমে।’
‘এতবার সরি বলা লাগবেনা।আমি তো মাইন্ড করিনি।আমার তো ভালো লাগছিলো তোমার উপস্হিতি।সময় টা ভুলভাল হলেও ইনজয় করার মতো ছিলো। ‘
সুপ্তি আবার লজ্জা পেলো।রিফাত সুপ্তিকে আর লজ্জা না দিয়ে বললো চলো।দুজনে হাঁটতে হাঁটতে দো-তলার কমন বাথরুমের সামনে গেলো।সুপ্তি ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলো।ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে চারদিকে সোরগোল শুনে বললো,
‘এত চিৎকার চেচামেচি কিসের।’
‘সেটাই তো বুঝছি না।গিয়ে দেখতে হবে।’
সুপ্তি মৃথিলার পাশে গিয়ে বসলো।মৃথিলার পাশে এখন কেউ নেই।বিয়েতে যারা এসছিলো তাদের খাইয়ে বিদায় করে দিলো আগে।ঘনিষ্ট কিছু আত্মীয় আছে শুধু বাড়িতে।
ইসহাক হাসান,ইরানি হাসান,নিরব সহ তাদের কিছু আত্মীয় পাঁচতলার ডায়নিং রুমে আলাপআলোচনা করছে।
কাজী, উকিল সব রেডি কিন্তু নীলাভ নেই।নীলাভ কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা।ঘটনা টা শুধু ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসান জানতেন আর কেউ জানতো না।ভেবেছিলো বিয়ের আগে যেভাবেই হোক খুজে নিয়ে আসবে।সারারাত বাড়িতে পাহারা চলেছে।মেইন গেট ছাড়া বেরোনোর কোনো পথ নেই।এ বাড়িতে সে সিস্টেম নেই।তাহলে নীলাভ কোথায় গেলো।ইসহাক হাসানের মাথায় ঢুকছে না কিভাবে নীলাভ বাড়ির বাইরে বেরোলো।ইসহাক হাসান সোফায় বসে আছেন হাতলে শক্ত করে নখ দিয়ে চেপে রেখেছেন।রাগে ফুঁসছেন কিছুই করার নেই।মৃথিলা থানায় কেস দিলে নিরবের সম্মান যাবে।তাছাড়া সমাজে ইসহাক হাসানের একটা সম্মান আছে।এই নিউজ যদি বাইরে পাব্লিশড হয়ে যায় তার ছোট ছেলের জন্য একটা মেয়ে প্রেগন্যান্ট এখন বিয়ের আগে পালিয়েছে তাহলে তার ব্যবসা বানিজ্য ইজ্জত সব এক নিমিষে শেষ হয়ে যাবে।যে ভাবেই হোক এই ঘটনা বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া যাবেনা।কি করা যায় ভেবে পাচ্ছেন না।নীলাভ এর বন্ধুরা বাড়িতে আছে।তারাও জানেনা নীলাভ কোথায়?নীলাভ তার ফোন ও রেখে গিয়েছে যাওয়ার সময়।
নিরব রাগে ইসহাক হাসান কে বললো,
‘আজ তোমার ছেলেকে পেলে আমি গু*লি করে মে* রে ফেলবো বাবা।ওর বেঁ*চে থাকার অধিকার নেই।’
‘পেলে তো মা*র*বি।কিন্তু পাবি কোথায় জা*নো*য়া*রে*র বা*চ্চা টাকে।আমার এ বাড়ির ত্রিসীমানায় আমি আর ওকে প্রবেশ করতে দিবোনা।আমার সম্মান নিলামে উঠিয়ে এখন পালিয়েছে।’
ইরিনা হাসান বলছেন,
‘এখন কি করবো নিরব।’
‘আমি জানিনা মা শুধু জানি,মেয়েটিকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।মেয়েটি অত্যান্ত অসহায়।’
‘নীলাভ তো নেই,বিয়ে তো সম্ভব নয়।এখন কি করবো তাহলে?’
‘কিন্তু মৃথিলার বিয়ে আজ ই দিতে হবে মা।মেয়েটা বউ সেজে অপেক্ষা করছে।আজ বিয়ে ভেঙে গেলে মেয়েটার কাছে মৃ**ত্যু ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।ওর যাওয়ার মতো জায়গা নেই।’
‘দেখ কোথাও কোনো ছেলে পাওয়া যায় কিনা।আমরা বাড়ি গাড়ি সব দিয়ে দিবো।শুধু এই মেয়েটিকে বিয়ে করে বাচ্চার দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সম্মান টা রক্ষা করুক।’
‘তোমার বংশধর ওর পেটে।আর তুমি তাকে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে চাইছো মা।আমি জাস্ট ভাবতে পারছিনা তুমি কিভাবে এটা ভাবলে।’
‘তাহলে কি করবো বাবা।আমাকে ভুল বুঝিস না আমার মাথায় তো আর কিছুই আসছে না।’
এরই মাঝে নিরা আর রিফাত উপস্হিত।নিরা বললো,
‘দাদা ভাই একটা কথা বলি,তুমি ভাবিকে বিয়ে করো।প্লিজ দাদা ভাই।ভাবিকে হারাতে চাইনা।আর নীলাভ ভাইয়া এমনিতেও ভাবিকে ভালো রাখতো না।ভাবিকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।প্রথম দেখাতেই আমার তোমার জন্য পছন্দ হয়েছিলো।’
‘এসব কি বলছিস নিরা।’
রিফাত বললো,
‘নিরব মৃথিলা গ্রামের মেয়ে হলেও ওর একটা সম্মান আছে।আমরা যে কারো সাথে
বিয়ে দিতে চাইলেই কি ও রাজি হবে।ভেবে দেখেছিস ও রাজি হবে কিনা।ওর জন্য বাইরের ছেলে খুজেও লাভ নেই।এত কিছুর পরে নিজেকে শে*ষ করে দিবে এই ছাড়া আর কিছুই করবেনা।’
ইরিনা হাসান বললেন,
‘নিরা এসব কি বলছো।নবনিতার সাথে নিরবের বিয়ে।নবনিতা তোমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধুর মেয়ে।’
‘মা নীলাভ ভাই ফিরে এলে নবনিতার সাথে বিয়ে দিও।তোমার ছেলে যেমন ওই নবনিতা ও তেমন।এক বারেই যা তা।’
ইসহাক হাসান বললেন,
‘নিরা ঠিক ই বলছে বাবা।বাইরে জানাজানি হলে আমাদের মান সম্মান থাকবেনা।নবনিতার ব্যাপার টা পরে দেখা যাবে।তাছাড়া আমাদের বংশধর রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।এটা একমাত্র তুমি পারবে।তুমি আমার শেষ ভরসা বাবা।’
নিরব তার বাবার কথায় না বলতে পারলোনা।
ইসহাক হাসান হার্টের রুগি।বুকে ব্যাথা শুরু হলো।বাড়ি ভর্তি মানুষ বিভিন্ন আলোচনা শুরু হয়েছে।ইসহাক হাসান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।বুকে হাত দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।সাথে সাথে ডাক্তার কে কল করা হলো।ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ইসহাক হাসান কে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হলো।
সুপ্তি প্রচন্ড মন খারাপ করে বললো,
‘মৃথিলা নীলাভ পালিয়েছে।আমি জানতাম নীলাভ এমন।ও তোকে বিয়ে করতে চায় না।কেনো মিথু যে চায়না তার সাথে কেনো?’
মৃথিলা দু’চোখের পানি ছেড়ে দিলো।কোনো কথা বলার ভাষা নেই তার কাছে।এত কিছুর পরে ভেবেছিলো সবটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু কিছুই ঠিক হলোনা।মানুষ বেশী শোকে পাথর হয়ে যায়। মৃথিলার ও সেইম অবস্থা। নিশ্চুপ চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।মৃথিলার শেষ ভরসা ছিলো এই বিয়ে।এই বিয়েটা হলে সে তার সন্তানের পরিচয় দিতে পারতো।বাকরুদ্ধ হয়ে মৃথিলা গলার তাজা ফুলের মালাটা ছিড়ে ফেললো।মুখ দিয়ে ঘণ ঘণ নিঃশ্বাস নিচ্ছে।এই নিশ্বাস ভীষণ কষ্টের নিঃশ্বাস।দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কষ্টে। হয়তো পৃথিবীর মায়া এখনি তাকে ছেড়ে দিতে হবে।
সুপ্তি আবার ও বললো,
‘মিথু এই বাচ্চার হি হবে।সারাজীবন কি কলঙ্ক নিয়েই থাকবি।বাচ্চাটা নষ্ট করে দে মিথু।এই ছাড়া উপায় নেই।নতুন করে সব শুরু কর প্লিজ।’
‘বাচ্চা খু*ন করে নিজে বেঁচে থেকে কি হবে।কি মূল্য আছে এই জীবনের সুপ্তি।আমাকে ক্ষমা করে দিস সুপ্তি।আমি আর পারছি না।’
‘কি আজে বাজে কথা বলছিস।আমার সাথে থানায় যাবি চল।নীলাভ কে এইবার দেখে নিবো।’
‘কাউকে দেখতে হবেনা।ভুল মানুষকে ভালবাসার শাস্তিতো আমাকে পেতেই হবে।’
রিফাত, নিরা,নিরব সবাই এতক্ষণ সুপ্তি আর মৃথিলার কথা শুনছিলো।মৃথিলার সিসুয়েশন টা সবাই বুঝতে পারছে।
রিফাত সুপ্তিকে বললো,
‘কোথাও যেতে হবেনা।মৃথিলা আর ওর বাচ্চা কারো কিছুই হবেনা।’
‘কেনো আপনি নিবেন ওর বাচ্চার দায়িত্ব স্যার।নিবেন তো না।কি করবেন জানি আপনাদের টাকা আছে টাকা দিয়ে একটা ছেলে কিনে এনে ওর ঘাড়ে উঠিয়ে দিবেন।পারলে আপনি নিন না ওর দায়িত্ব। বুঝবো মনুষ্যত্ত্ব বেঁচে আছে আপনারা সত্যি মহান।’
‘আমার থেকেও যদি বেষ্ট কেউ মৃথিলার দায়িত্ব নেয় তোমার কি আপত্তি আছে।’
‘কে নিবে দায়িত্ব দেখান এমন কাউকে।’
নিরা বললো,
‘আমার বড় দাদাভাই নিবে দায়িত্ব। আমার বড় দাদাভাই এর মতো এমন ভালো ছেলে দুনিয়াতে নেই।প্লিজ ভাবি তুমি কিন্তু আপত্তি করবেনা। ‘
মৃথিলা ছলছল চোখে নিরার দিকে তাকালো।তার কিছুই বলার ভাষা নেই।মৃ*ত্যু ছাড়া সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।
নিরব বেশ শান্ত কন্ঠে বললো,
‘তোমার কি আমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে মৃথিলা।তোমার বাচ্চার দায়িত্ব আমি নিতে চাই মৃথিলা।কথা দিচ্ছি কখনো বুঝতে দিবো না তোমার সন্তান আমার সন্তান নয়।তোমার অতীত নিয়ে আমি কোনদিন প্রশ্ন তুলবো না।একটা স্বাভাবিক জীবন পাবে তুমি।যে জীবনে অতীতের কোনো ছায়া খুজে পাবেনা।আমি পড়তে দিবোনা।তোমাকে তোমার মতো করে বাঁচতে সাহায্য করবো।’
‘কেনো নিবেন আমার কলঙ্ক আপনার ঘাড়ে।আমি পারবো না নীলাভ এর বড় ভাই কে নিজের স্বামি রূপে দেখতে।’
‘নিজের বাচ্চার জন্য হলেও ভেবে দেখো মৃথিলা।বাচ্চার জন্য অন্তত ভেবে দেখো।’
‘আপনার মতো মহান একজন মানুষের জীবনে কিভাবে এতবড় কলঙ্ক আমি চাপিয়ে দেই বলেন।আপনার সুন্দর গোছানো জীবন আমার নষ্ট করার অধিকার নেই।’
‘তোমার গর্ভে আমার ই ভাইয়ের অস্তিত্ব। সে আমার থেকে আলাদা নয়।আমি তাকে পৃথিবীতে আনতে চাই।আমার ভাই এর ভুল আমি শুধরে নিতে চাই।যে ভুলে তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেই ভুল আমি শোধরাতে চাই।’
সুপ্তি বললো,
মৃথিলা শুধুই কাঁদছে।তাকে বেঁচে থাকতে হলে নিরব কে বিয়ে করতে হবে।না হলে ম*রে যেতে হবে এই ছাড়া উপায় নেই।সুপ্তির কখনোই নীলাভ কে পছন্দ ছিলোনা।নিরব কে তার পছন্দ।নিরব মহান সে শুনেছে কিন্তু এতটা মহান সে আগে বুঝে উঠতে পারেনি।সুপ্তি,নিরা,রিফাত সবাই বুঝিয়ে মৃথিলাকে রাজি করালো।
বাধ্য হয়েই মৃথিলা রাজি হয়ে গেলো বিয়েতে।মৃথিলা রাজি হওয়ার সাথেই রিফাত কাজিকে ডাকলো।রিফাত বললো,দ্রুত বিয়েটা পড়িয়ে দিন।মৃথিলার সাথেই দশ মিনিটের মাঝেই নিরবের বিয়ে হয়ে গেলো।নিরা সব থেকে খুশি হলো এই বিয়েতে।নিরার সাথে আরিফা আর রাহিলাও খুব খুশি হলো।
নিরব একজন মহান, আদর্শ ছেলে।বিয়ে একটা মানুষ এর জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।বিয়েটা অস্বাভাবিক ভাবে হলেও নিরব স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহন করলো।মৃথিলার হাতটা সুপ্তি আর নিরা নিরবের হাতে ধরিয়ে দিলো।নিজের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নারীর হাতের প্রথম স্পর্শ নিরব অনুভব করলো।দেহ, মন,আত্মাকে এক জায়গা করে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এই নারীর জীবনে কোনো কষ্ট সে আসতে দিবেনা।নিজের জীবন দিয়ে আগলে রাখবে।
ইসহাক হাসান কে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ার পরেও ঘুম আসছে না তার।ইরিনা হাসান স্বামির হাত ধরেই বসে আছে।ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসান এবার একটু স্বস্তি পেলো।
নিরব-আর মৃথিলা দুজনে ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসান এর রুমে গিয়ে দুজন কে সালাম করলো।ইসহাক হাসান বললো,
‘মা তুমি সুখি হবে দেখে নিও।নিজের অতীত মুছে ফেলো।আমার নিরব তোমাকে ভালো রাখবে।’
ধীরে ধীরে বাড়ি ফাঁকা হতে শুরু করেছে।মৃথিলাকে নিচতলায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।মৃথিলার পাশে শুধু নিরা আছে।সুপ্তি ও পাশে রিফাত আর নিরব এর সাথে কথা বলছে।এতক্ষণ পরে নবনিতা তার বান্ধবীদের নিয়ে ছাদ থেকে ফিরে এলো।মাত্র ১৫-২০ মিনিটের ব্যাবধানে এত কিছু ঘটে যাবে নবনিতা ভাবতেও পারেনি।নবনিতা জাস্ট ভাবতে পারছে না তার স্বপ্নের নায়কের সাথে মৃথিলার বিয়ে হয়ে যাবে।নবনিতার মৃথিলাকে খু*ন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।মৃথিলার দিকে প্রচন্ড রাগি নজরে তাকিয়ে মৃথিলার গলা চেপে ধরে বললো,
‘কাল**নাগিনী তোর এত বড় সাহস।তুই তোর এই অবৈধ পাপ নিরবের ঘাড়ে চাপিয়ে আমার জীবন টা নষ্ট করলি।তোকে আমি খু**ন করে ফেলবো।’
মৃথিলার জিভ বের হয়ে এসছে।শুকনো কাশি হচ্ছে।নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে এসছে।হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে।নিরা দেখেই খুব জোরে ডাকলো,
‘ দাদাভাই ভাবিকে মে*রে ফেললো তাড়াতাড়ি এসো।’
নিরার চিৎকারে ছুটে এলো নিরব।মৃথিলার এমন অবস্থা দেখে দ্রুত নবনিতার হাত ছড়িয়ে নবনিতার গালে থাপ্পড় মারলো নিরব।মৃথিলার গলায় নখ বসে গিয়েছে র**ক্ত বেরোচ্ছে।ফর্সা গলায় দাগ হয়ে গিয়েছে আঙুলের।মৃথিলা কেমন নেতিয়ে পড়েছে।নিরবের কোলে ঢলে পড়েছে।নিরব নিজের অজান্তেই মৃথিলার এমন অবস্থা দেখে উত্তেজিত হয়ে মৃথিলার মাথা বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,
‘তোমার কিছু হবেনা।আমি হতে দিবো না।’
নিরা মৃথিলার হাত -পায়ের তালু ঘষে দিচ্ছে।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মৃথিলার।নিরা চোখে মুখে পানি ছেটালো।প্রায় দশ মিনিট পরে স্বাভাবিক হলো মৃথিলা।
নবনিতা চিৎকার দিয়ে বললো,
‘নিরব তুমি ওই মেয়েটার জন্য আমার গায়ে হাত তুললে।কে ওই মেয়েটা।’
নিরব দাঁত কিড়মিড় করে কর্কষ কন্ঠে বললো,
‘আমার অর্ধাঙ্গিনী, বউ হয় আমার।’
‘কবুল বলার পাঁচ মিনিটে এত দরদ তোমার।’
‘কবুল বলার সাথে সাথে সেকেন্ডের মাঝে আল্লাহর আরশ থেকে ভালবাসা এমনি এমনি তৈরি হয়ে যায়।সেখানে পাঁচ মিনিট অনেক সময় হয়ে গেলো না।’
‘তাহলে আমার কি হবে?আমি তোমাকে ভাগ করতে পারবোনা কারো সাথে।’
‘তাই বলে কারো জীবন নিয়ে নিবে তুমি।’
‘ওই মেয়েটার জন্য আমার জীবন ছার খার হয়ে গিয়েছে।আমি ওকে ছা*ড়*বোনা।’
‘কারো জন্য কারো জীবন ছারখার হয়না।পরিস্হিতির চাপে আমাদের বিয়ে হয়েছে।’
‘কিসের পরিস্হিতি।এই বিয়ে কোনো বিয়ে হতে পারেনা।’
‘ট্রাই টু আন্ডার স্ট্যান্ড আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে নবনিতা।’
‘আমি মানিনা।তোমার আমাকেই বিয়ে করতে হবে।’
‘তুমি আল্লাহর সিদ্ধান্ত মানবে না।’
‘এটা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ছিলোনা।তোমার সিদ্ধান্ত ছিলো।’
‘আল্লাহর ইশারা ছাড়া বিয়ে হয়না।কপালে লেখা ছিলো বলেই কোন না কোন ভাবে হয়েছে।’
‘তুমি নীলাভ এর জন্য এই মেয়েকে বিয়ে করেছো।নিজ ইচ্ছায় তো করোনি।তাহলে এই বিয়ে নিয়ে এত সিরিয়াস হচ্ছো কেনো তুমি।’
‘আমি মন থেকে ওকে গ্রহন করেছি।তাই আমি সিরিয়াস।’
‘আমার সাথে কমিটেড থেকে কিভাবে অন্যকে নিয়ে সিরিয়াস হতে পারো।’
‘আমি কমিটেড ছিলাম।কখনোই না।তুমি বারবার সু*ই*সা*ই*ড করতে গিয়েছো দেখে তোমার বাবা এসে আমার বাবার কাছে অনুরোধ করেছিলো।আমি বলেছিলাম ভেবে দেখবো এতটুকুই।’
‘আজ বুঝছি তুমি এই মেয়ের রুপ দেখে ভুলে গিয়েছো।নীলাভ কে নিশ্চয়ই তুমি সরিয়ে দিয়েছো।প্লান করে এই মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য তাইনা নিরব।’
‘জাস্ট সাট আপ।’
‘তোমার পক্ষে সবই সম্ভব নিরব।এই নষ্ট মেয়ের জন্য আমাকে কষ্ট দিলে।’
‘মৃথিলাকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা বলবেনা। তাহলে ভালো হবেনা।’
‘বাহ ওয়াইফ এর প্রতি এত দরদ।’
‘মাই ওয়াইফ মাই লাইফ মাথায় ঢুকিয়ে রাখো কথাটা।’
চলবে?
(খুব দ্রুত টাইপ করেছি।চেক করতে পারিনি।হযবরল হয়েছে কিনা জানিনা।অনেক ব্যাস্ততায় লিখেছি।প্রায় ২৫০০ শব্দে লেখা।)