#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ১৫
#writer_Mousumi_Akter
ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে প্রকৃতি।চারদিক খা খা করছে রোদের উত্তাপে। মানবজীবন হাঁপিয়ে উঠেছে কড়া রোদে।ক্লান্ত যেনো সব কিছু।গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ছে না চারদিকে।এ যেনো প্রকৃতির গজব।নিরব টেবিল ফ্যান নিয়ে বেলকনিতে বসে আছে।ল্যাপটপ এ একটা মিটিং এ এটেন্ড করেছে একটা ইমারজেন্সি কেস নিয়ে।বিয়ের জন্য অফিসে মেইল পাঠিয়েছে পনেরো দিনের ছুটি মঞ্জুর হয়েছে।
আপাতত পনেরো দিন সে বাড়িতেই থাকবে।মৃথিলা ওষুধ খেয়ে এতসময় ঘুমিয়ে ছিলো।এক ঘন্টা মতো ঘুমিয়েছে গরমে খুব একটা খুব হয়নি তার। মাত্রই তার ঘুম ভাঙলো।কালকের বাঁধা চুল এখনো খোলা হয়নি।বিয়ের জন্য করা চুলের খোপা খোলা খুব ইজি কাজ না।চুল পেচিয়ে পেচিয়ে অন্তত একশ কালো ক্লিপ মারা হয়েছে।এসব খুলে এখন তাকে গোসল করতে হবে।বিছানা ছেড়ে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়ালো মৃথিলা।
সকালের ঘটনা মনে পড়তেই তার মুখে হাসি ফুটলো।মৃথিলার দুই ঠোঁটের কোনায় বিশ্বজয়ের হাসি।নিরবের সেই রাগ তাকে প্রটেক্ট করার জন্য যুদ্ধ তার প্রতি যে ভীষণ কেয়ারিং ভাব ছিলো সেটাই হঠাত মৃথিলার ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটানোর কারণ।মৃথিলার কেনো ভালো লাগছে সে তা জানেনা।তবে তার ভালো লাগছে, ভীষণ ভালো লাগছে।সকাল থেকে অজস্রবার তার সকালের ঘটনা মনে পড়েছে।ঘুমের মাঝে প্রতিটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার সকালের ঘটনা মনে পড়েছে।নিরবের সেই অগ্নি চোখ তার বলা কিছু কথা ও আমার ওয়াইফ এই কথাটা যেনো মৃথিলার বুকে সোজা হৃদয়ে গিয়ে স্পর্শ করেছে।
যেনো হৃদয়ের বন্ধ দরজা নিমিষেই খুলে গিয়েছে।মৃথিলা আনমমে ভেবে চলেছে কারো অগ্নিরুপ চেহারাতেও বুঝি মানুষ ঘায়েল হয়।অস্হিরতায় ঘুম হয়নি মৃথিলার।এ যেনো এক অজানা অস্হিরতা কিছুতেই মস্তিষ্ক থেকে এই অস্হিরতা বের করতে পারছে না সে।র*ক্তে*র কনিকায় কনিকায় সেই মুহূর্ত টা ঢেউ খেলে যাচ্ছে।মানুষ টা তার সামনে একদম পানির মতো অথচ বাইরে সম্পূর্ণ ভীন্ন আগুণের মতো। নিরবের সকালের বলা কথা গুলো কিছুতেই ভুলতে পারছে না মৃথিলা বারবার তাকে নিরবের কথা ভাবাতে বাধ্য করছে।
ভাললাগা থেকে ভালবাসার শুরু বুঝি এভাবেই হয়।কি অদ্ভুত তাইনা?যার ভাই কে সবটা দিয়ে ভালবেসে ভেবেছিলো তার জীবনে আর কোনদিন কেউ হাসির কারণ হতে পারবেনা।কিন্তু তার ভাবনা মুহুর্তের মাঝে ভুল প্রমাণিত হলো।মৃথিলা সোজা বেলকনির দিকে তাকালো।নিরব কে দেখা যাচ্ছে রুম থেকে।ফ্যানের বাতাসে পর্দা উড়ছে আর তার ফাঁকেই নিরব কে দেখা যাচ্ছে।নিরব এর পরণে কালো শার্ট,শার্টের হাতা গোটানো,বুকের বোতাম সব গুলো খোলা।গরমে শার্টের বোতাম খোলা রেখেছে।কফির মগ টি -টেবিলে রাখা।বাতাসে নিরবের সামনের সিল্কি চুল গুলো উড়ছে।ভীষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে নিরব কে।
উন্মুক্ত ফর্সা বুকের দিকে নজর যেতেই লজ্জা পেলো মৃথিলা।হঠাত মৃথিলা নিরবের সৌন্দর্যের দিকে খেয়াল করলো।নিরব সত্যি সুপুরুষ। মৃথিলা চাইলেও দৃষ্টি সংযত করতে পারছেনা।বার বার তার দৃষ্টি নিরবের দিকে না চাইতেও চলে যাচ্ছে।বাতাসে তার উড়া চুলে তার কপাল টা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।হঠাত মৃথিলার কাছে নিরবের সব কিছুই আলাদাভাবে ভালো লাগছে।তার চোখ কে অন্য সবার থেকে আলাদা মনে হচ্ছে,তার বাতাসে উড়া চুল কে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর তম দৃশ্য বলে মনে হচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মৃথিলার হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেলো আর সাথে সাথে একটা শব্দ হলো।নিরব পর্দা সরিয়ে রুমের দিকে তাকালো।দেখলো মৃথিলা দাঁড়িয়ে আছে তার হাত থেকে চিরুনি পড়ে গিয়েছে।নিরব কফির মগ হাতে নিয়ে মৃথিলার সামনে এসে দাঁড়ালো।সদ্য ঘুম থেকে উঠা মৃথিলার ফোলা ফোলা চোখ ফোলা ফোলা গালে যেনো আরেকদফা ভালো লাগা বেড়ে গেলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ আছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।মিনিট খানিক কেটে গেলো।
দুজন ই লজ্জা পাচ্ছে। নিরব কফির মগে ঠোঁট মিশিয়ে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।কফিতে চুমুক দেওয়ার থেকে বেশী জরুরী যেনো মৃথিলার সৌন্দর্য উপভোগ করা।মৃথিলা ড্যাব ড্যাব চোখে নিরবের বুকের দিকে তাকালো।নিরব এবার নিজের দিকে তাকালো তার উন্মুক্ত বুকের দিকে মৃথিলা তাকিয়ে আছে ভেবেই লজ্জা পেলো নিরব।নিরব শুকনো কাশি দিয়ে এক হাত দিয়ে শার্টের বোতাম লাগাতে শুরু করলো।মাত্র একটা বোতাম লাগানো হয়েছে তখন ই মৃথিলা নিচু হয়ে চিরুনি তুলতে যেতেই নিরব মৃথিলার হাত ধরে মৃথিলাকে থামিয়ে দিলো।তারপর নিজেই নিচু দিকে ঝুঁকে চিরুনি তুললো।
তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বোতাম সব গুলা লাগিয়ে এক চুমুক কফি নিলো।মৃথিলার লজ্জা আর অস্বস্তি দুটোই হচ্ছে।সে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।নিরব ইচ্ছা করেই মৃথিলাকে এমন সিসুয়েশন এ রেখেছে।মৃথিলার এ রুপ তার ভালো লাগছে।নিরব কফি খাচ্ছে আর মৃদু হাসছে।হালকা স্পষ্ট হাসি তার ঠোঁটের কোনায়।ঠোঁট হাসলে বোধহয় সবাই কে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগে।
মৃথিলা মিহি কন্ঠে বললো,
‘চিরুনি টা। ‘
নিরব মৃথিলার মুখের দিকে তাকিয়েই চিরুনি মৃথিলার সামনে ধরে বললো,
‘নিচু হয়ে তুলছিলে কেনো?জানোনা এসময়ে ঝুঁকতে নেই।এতে তোমার কোনো ক্ষতি হতে পারে।’
‘পড়ে গেছিলো তো।’
‘আমি তো এখানেই আছি।আমাকে বললে না ক্যানো?’
‘আপনাকে আর কত জ্বালাবো।’
‘পুরুষ মানুষের জন্মই তো নারীর যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য।নারীর এ যন্ত্রণা যে পুরুষের সহ্য করার ভাগ্য হয়নি সে পুরুষ জানে জীবন কত অপরিপূর্ণ। সব যন্ত্রণা কিন্তু পোড়ায় না কিছু যন্ত্রণা আনন্দের।তোমার দায়িত্ব যখন নিয়েছি তখন তোমার হক আছে আমাকে জ্বালানোর।’
‘ছোট খাটো সব বিষয়ে যদি আপনাকে জ্বালায় তাহলে এটা অভ্যাস হয়ে যাবে।’
নিরব মনে মনে বললো,
‘আমি তো তোমার অভ্যাস হতে চাই প্রিয়দর্শিনী।’
নিরব কফির মগ অয়্যারড়্রপের উপর রেখে বললো,
‘আজ থেকে আরিফার দায়িত্ব তোমাকে সব কাজে হেল্প করা।সে সারাক্ষণ তোমার সাথেই থাকবে।’
‘না না তাহলে সবাই খারাপ কিছু ভাববে।আমি এমনিতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করেছি।আপনাদের পরিবারের সব ঝামেলার জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে।’
‘এত বেশী বুঝো না।’
মৃথিলা ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল খোলার চেষ্টা করছে।নিরব বেলকনি থেকে টুল টা এনে মৃথিলার পেছনে রেখে বললো,
‘টুলে বসো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কষ্ট হয়ে যাবে তোমার।এটা অনেক সময়ের ব্যাপার।’
মৃথিলা আবার ও মুগ্ধ নয়নে নিরবের দিকে তাকালো।তারপর টুলে বসলো।কিন্তু চুল খুলতে গেলে বারবার কাঁচা চুল ছিড়ে যাচ্ছে আর ব্যাথায় উহু শব্দ উচ্চারণ করছে।নিরব মৃথিলার পেছনেই বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে।এইভাবে চুল খুলতে দেখে বললো,
‘আমি কি হেল্প করবো তোমাকে।’
মৃথিলাও মনে মনে চাইছিলো কেউ তাকে হেল্প করুক।এমন প্রস্তাবে মনে মনে সে ভীষণ খুশি।শান্ত কন্ঠে বললো,
‘পারবেন।এটা কিন্তু মেয়েদের কাজ।’
‘সিওর পারবো। একবার সুযোগ তো দাও।’
‘আচ্ছা চেষ্টা করুণ তাহলে।’
‘এক মিনিট দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসি।’
‘কেনো?..’
‘কেউ আসলে আবার কি না কি ভাববে।’
‘দরজা দেওয়া থাকলে আরো মাইন্ড করবে।’
‘আরো ওও, ক্যানো কি ভাববে ‘
মৃথিলা লজ্জা পেয়ে বললো,
‘কিছুনা”
নিরব আস্তে আস্তে মৃথিলার চুলের ক্লিপ খুলতে শুরু করলো।মৃথিলার চুলে হাত দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছে সে।ইচ্ছা করেই খুব আস্তে আস্তে করে সময় নিয়ে খুললো।মৃথিলার ফর্সা ঘাড়ে বারবার চোখ গিয়েছে, তার এমন কি মৃথিলার ঘাড়ে ঠোঁট ডোবাতেও ইচ্ছা হয়েছে অনেকবার।আসলে কোনো মেয়ের সৌন্দর্য আর মুগ্ধতায় সে আগে বিভোর হয়নি কখনো।প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে চুল গুলো খুললো।সাথে সাথে ঘন কালো চুল গুলো কোমর ছড়িয়ে পড়লো।খোলা চুলে মেয়েদের যে এত সুন্দর দেখায় নিরব আগে এটা কখনো ভেবেই দেখে নি।
নিরব বললো,
‘আচ্ছা বিয়ের দিন চুল কেনো বাঁধতে হবে?মেয়েদের চুল থাকবে খোলা।বিয়ের দিন প্রতিটা মেয়ের ই চুল খোলা রেখে বর কে সারপ্রাইজ দেওয়া উচিত। ‘
‘তাহলে আপনার বিয়ের সময় চুল খোলা রাখবেন।’
‘আমার মনে হচ্ছে আমি বিবাহিত। আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’
‘ওটা তো এমনি বিয়ে আসল বিয়ের কথা বলছি।’
‘বিয়ে কখনো নকল হয়না।’
চলবে?..
(তাদের নিয়ে একটা পর্ব দিলাম।পুরাটায় তারা।)