#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ১৭
#writer_Mousumi_Akter
.
নিরব ফোন কানে রাখা অবস্থায় তার পিস্তল নিয়ে বেখায়ালি ভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজায় মৃথিলার সাথে ধাক্কা খেলো।নিরবের গতিবেগ ছিলো অনেক বেশী যার ফলে ধাক্কায় মৃথিলা পড়ে যায় প্রায়। নিরব হাত থেকে ফোন ফেলে দিয়ে আগে মৃথিলাকে ধরে ফেললো।মৃথিলার বুক ধড়ফড় করছে।কিছুক্ষণ আগেও নিরবের যে তেজস্রী মুখের অদল ছিলো সেটা কোথায় যেনো বিলীন হয়ে গিয়েছে।চেহারায় এখন তার শান্তশিষ্ট অবয়ব।মৃথিলা তার সামনে আসলে পৃথিবীর কোনো কিছুর ই হুঁশ থাকে।সে ভুলে যায় পৃথিবীতে তার আরো অনেক দায়িত্ব আছে তার সুধু মনে হয় পৃথিবীটা তার আর মৃথিলার।
মৃথিলা আবার ও লজ্জা পেলো।
আজ আবার সেই পরিস্হিতিতে তাকে পড়তে হলো।নিরবের স্পর্শ তাকে খুব লজ্জা দেয়।মৃথিলা ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।
নিরব তাকে ধরে সোজা করিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
‘স’সরি।কোথাও লাগে নিতো।’
‘না কিন্তু আপনি এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছেন?’
‘শহরে নারী পাচারকারীরা আজ অনেক মেয়েকে পাচার করেছে।তিনজন কে খু**ন ও করেছে।’
‘আচ্ছা ওরা কারা।আর তাদের ধরা যায় না কেনো?’
‘ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কি জানো তারা দুইটা মেয়ে।’
‘কিহ মেয়ে।মেয়েরা এত ডেঞ্জারাস ও হয়।’
‘পৃথিবীতে নারীর চেয়ে নরম কিছু নেই আবার নারীর চেয়ে ভয়ংকর কিছু নেই বুঝলে।’
‘আপনি কি এখন তাদের ধরতে যচ্ছেন।’
‘হ্যাঁ। ‘
‘যারা নারী পাচারকারী তাদের কি ধরা এত সহজ হবে। তারা কি আর এখন আপনার জন্য ওয়েট করছে।তারা অনেক ধূর্ত।’
‘যেদিন ধরতো পারবো,মেয়ে দুটোর কি অবস্থা হবে তা তাদের কল্পনাতেও নেই।নিরবের টার্গেট বড়ই ভয়াবহ।’
‘যদি আপনার কোনো আপনজন হয় তারা তাহলে কি করবেন।’
নিরব ফোন তুলতে তুলতে বললো,
‘নিজের মাথায় নিজেই গু*লি করে দিবো যদি আপনজনের মাথায় পিস্তল ধরতে না পারি।তবুও পরাজয় মেনে নিবোনা।’
মৃথিলা নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিরব খুব সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে।নিরব তার দায়িত্ব পালনে কতটা সিরিয়াস মৃথিলা সেটা ভালো ভাবে বুঝতে পারলো।নিরব বললো,
‘নিরার পাশে ঘুমিও।একা ঘুমিও না কিন্তু।আমার আসতে লেট হয়ে যাবে।খুব সাবধানে থাকবে কিন্তু।টেক কেয়ার।’
‘আপনি আমার এত কেয়ার করেন কেনো?’
‘সময় হলে সবই বুঝবে তুমি।’
‘আচ্ছা আপনার প্রিয়দর্শিনী কেমন আছে?’
‘প্রিয়দর্শিনীর গল্প পরে হবে।আপাতত সে ভালো আছে।এখন আমি যায় টেক কেয়ার।’
নিরব তর তর করে তিনতলার সিঁড়িবেয়ে নেমে গেলো।মৃথিলার হাতে একটা লাল গোলাপ।সে নিরবের জন্য ই এনেছিলো।গোলাপ টা তার এখন ই নিরব কে দিতে ইচ্ছে করছে।সে তিনতলা থেকে ঝুঁকে ডাকলো,
‘শুনছেন?’
নিরব নিচতলায় চলে গিয়েছে।সেখান থেকে জোরে বললো,
‘কিছু বলবে?’
‘হ্যাঁ আসছি এক মিনিট।’
মৃথিলা তিনতলা থেকে দৌড়ে নামছে।নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ হচ্ছে।নিরব নিচ তলা থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে।রুমের কৃত্তিম আলোয় মৃথিলা বড্ড বেশী মোহনীয় লাগছে।মৃথিলা নেমে গিয়ে নিরব কে বললো,
‘হাত টা দিন না। ‘
নিরব দু’ হাত মৃথিলার সামনে মেলে ধরলো।
এক হাতে পিস্তল অপর হাত খালি।মৃথিলা খালি হাতে একটা লাল গোলাপ দিয়ে বললো,
‘একহাতে ধ্বংস আর অন্যহাতে ভালবাসা।’
বলেই মৃথিলা হাসলো।
নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ভালবাসার জন্য পৃথিবীর সব ধ্বংস করতে আমি।’
‘আসার সময় আপনার জন্য নিয়ে এসছি।’
‘জীবনের শ্রেষ্ট উপহার পেয়েছি।নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে আজ আমার।’
নিরব বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফুলের দিকে তাকালো
প্রতিটা পাপড়িতে যেনো মৃথিলার মুখ ভেষে উঠছে।নিরব ফুলে চারটা চুমু খেলো আর বুকের সাথে চেপে ধরলো স্বযত্নে।রাস্তার মোড়ে রিফাত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।নিরব গেলেই রফাত নিরবের বাইকের পেছনে উঠে পড়লো।
রিফাত বললো,
‘নিরব এই মেয়ে দুইটা কে হতে পারে?এই শহরেই আছে আমরা তাদের হয়তো দেখলেও চিনতে পারছি না।’
‘হ্যাঁ ভাই এরা খুব ধূর্ত।নাবিলা যদি আজ খু**ন না হতো।আজ তারা আমাদের হাতের মুঠোয় থাকতো।’
‘আচ্ছা সেদিন নাবিলার ব্যাপারে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেছিলি।নাবিলার কাহিনী টা কি?আর রাণিগঞ্জের প্রতি তুই কেনো এতটা সিরিয়াস।’
‘নাবিলা আমার আপণ চাচাতো বোন।’
‘হোয়াট?নাবিলা তোর আপন চাচাতো বোন।এটা কিভাবে সম্ভব।’
‘অবাক হচ্ছিস তাইনা?আমিও অবাক হয়েছিলাম।কয়েকদিন ডিপ্রেশন এ ভুগেছিলাম।’
‘অহ নো!নাবিলার মা-বাবা খু**ন মানে তোর চাচা চাচী ও খুন।’
‘হ্যাঁ’
‘কিন্তু ওরা তোর বাবার সাথে থাকেনা কেনো?তাছাড়া আমরা খোজ নিয়ে যতটুকু জেনেছি যে নাবিলার বাবা হত দরিদ্র একজন মানুষ। কৃষক ছিলেন তিনি।এলাকার চেয়ারম্যান এর বাড়িতে স্বামি স্ত্রী কাজ করে খেতেন।’
‘বাবার সাথে ঝামেলা হওয়ায় উনি চলে গেছিলেন।কখনো কোনো সম্পত্তি নেন নি।অনেক বড় হিস্ট্রি আছে আজ তোকে সব টা জানাবো আমি।’
রাতের খাবার খাওয়ার জন্য সবাই নিচ তলায় উপস্হিত।ডায়নিং এ ইসহাক হাসান,ইরিনা হাসান,মৃথিলা আর নিরা বসেছে।আরিফা আর রাহিলা সবাইকে খাবার দিচ্ছে।
ইসহাক হাসান নিরার গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন।মৃথিলার সেদিকে তাকিয়ে খারাপ লাগলো।আজ তার বাবাও তো তাকে এভাবে খাইয়ে দিতে পারতো।বাবা নামক জিনিস টায় তার জীবনে নেই।মৃথিলা চুপচাপ খাচ্ছে।
ইরিনা হাসান বললেন,
‘এত বড় মেয়েকে যদি এখনো খাইয়ে দিতে হয় বিয়ের পরে কি তুমি সাথে যাবে।’
ইসহাক হাসান হেসে বললো,
‘আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিবো সেটা কে বললো।’
‘তাহলে কি বাক্সে তুলে রাখবে।’
‘রাজকুমার কিনে এনে আমার বাড়িতে রেখে দিবো।আমার নিরা আমার চোখের সামনে না থাকলে কিছুই ভালো লাগেনা।’
বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আমার বাবা আমার সুপার হিরো।’
ইরিনা হাসান মৃথিলা কে বললো,
‘মা তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছেনাতো।’
‘না মা।’
‘কোনো অসুবিধা হলেই আমাদের জানাবে।’
ইসহাক হাসান বললো,
‘নিরব কোথায় গেলো এত রাতে।’
মৃথিলা খেতে খেতে বললো,
‘বাবা আজ নাকি এক গাড়ি মেয়ে পাচার হয়েছে সেখানে গিয়েছে উনি।’
ইসহাক হাসান এক দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
‘নিরা, মৃথিলা তোমরা আর বাড়ির বাইরে যেওনা।শহরের অবস্থা ভালো না।এখানে থাকা টাও নিরাপদ না।নিরব কবে বিপদে পড়বে তার ঠিক নেই।ছেলেটাকে নিয়ে দুঃচিন্তা হয়।’
ইরিনা হাসান বললেন,
‘এক ছেলে নিঁখোজ আরেক ছেলে সারাক্ষণ বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে থাকে।এরা কি ভাবেনা মা বাবার কষ্ট হয়।’
নিরা বললো,
‘আমার বড় দাদা হলো দেশরত্ন। দাদার কিছুই হবেনা।’
ইসহাক হাসান নিরা কে খাওয়ানোর পর বললো,
দেখি গরুর খামার দেখে আসি।রমিজ,ফারুক,আবদুল্লাহ,ফিরোজ,কুতুবের মা,আমেনা সবাই কি খাবার নিয়ে গেছে।
আরিফা বললো,
‘জ্বী নিয়ে গেছে।তয় কুতুবের মায়ের শরীর খারাপ হইছে খুব।ও পাশে নাকি কিসের গন্ধ বের হচ্ছে। সেই গন্ধ খুব বিশ্রি। নাকে গেলেই কুতুবের মায়ের বমি হচ্ছে।’
রাহিলা বললো,
‘ফারুক রা তো গরুর ওখানে টিকতেই পারছেনা।বিশ্রি গন্ধে তারা নাকি টিকতে পারে না।’
ইসহাক হাসান বললো,
‘ইদুর বাদর ম*র*ছে কিনা চেক করেনি।’
‘তাতো জানিনা ভাইজান তবে ওরা সবাই নাকে কাপড় দিয়ে আছে।খুব বাজে গন্ধ বেরোচ্ছে।ওদের কথা শুনেই তো আমি গেছিলাম। সত্যি ই খুব বাজে অবস্থা। ‘
ইসহাক হাসান বললো,
‘এইবার দশ টা গরু খামার থেকে নিয়ে কুরবানি করবো।গরুর খুব ভালো ভাবে যত্ন নেওয়া দরকার।গরু তো শুকায় গেছে আগের থেকে।আমি দেখে আসি ও পাশের কি অবস্থা। ‘
মৃথিলা অবাক হয়ে গেলো দশ টা গরুর কথা শুনে।এরা তাহলে মৃথিলার ভাবনার থেকেও বেশী বড়লোক।রাতে খাওয়া শেষে মৃথিলা গিয়ে নিরার পাশে সুয়ে পড়লো।
মৃথিলাকে চুপচাপ দেখে নিরা বললো,
‘আচ্ছা ভাবি তোমার কি মন খারাপ।’
‘কই নাতো।’
‘দাদাভাই কে মিস করছো তাইনা?’
‘না না, ওরকম কিছুই না।’
‘কেনো বললে না মিস করছি।এটা শুনলে আমি বেশী খুশী হতাম।আমি চাই আমার দাদা ভাই এর তোমার লাইলি মজনুর মতো বিশাল প্রেম ভালবাসা হোক।’
‘ছোট ভাই এর জন্য চাওনি কেনো?’
‘কেনো চাইবো বলোতো।এইযে দেখো তোমাকে রেখে কোন বারে গিয়ে উঠছে।খেয়াল আছে তোমার কথা।শোনো নীলাভ ভাই ফিরে আসলেও তুমি কিন্তু আর তার কাছে যাবেনা।আমার বড় দাদা ভাই তাহলে খুব কষ্ট পাবে।’
‘কেনো কষ্ট পাবে কেনো?’
‘আরে তোমাকে ভালবাসে। কে চাইবে নিজের ভালবাসার মানুষ অন্য কারো কাছে চলে যাক।’
‘উনি আমাকে ভালবাসে।’
‘বাসে মানে।ভীষণ ভালোবাসে তাও।’
‘তোমাকে বলেছে বুঝি।’
‘আরে বাবা বলেনি।এসব বলা লাগেনা।দাদা ভাই তুমি সামনে থাকলেই যেনো কেমন হয়ে যায়।’
‘মাত্র এক সপ্তাহ পরিচয়ে কি কেউ ভালবাসে। ‘
‘বিবাহিত সম্পর্ক এক সপ্তাহ কি কম সময়।এই এক সপ্তাহে সারাক্ষণ দুজন এক সাথে থেকেছো।ভাবি ভালবাসা এক মুহুর্তে হয়ে যায়।এক জনম লাগে না ভালবাসার জন্য।ভালবাসা হলো একটা মায়া।দাদা ভাই এর তোমার জন্য প্রচুর মায়া।আর এটাই ভালবাসা।’
‘সহানুভূতি দেখায় বুঝলে।’
‘আচ্ছা আমি তোমার ননদ হয়ে তাই তোমাকে এত ভালবেসে ফেলেছি।তোমার জন্য আমার কত মায়া জমেছে জানো।তাহলে দাদা ভাই এর বউ তুমি সে তোমাকে কত ভালবাসে বোঝো।’
‘তুমি এত মিষ্টি কেনো নিরা।আমার জীবনে এত ভালো মনের মেয়ে দেখি নি।এত বড়লোকের মেয়ে তুমি।এত কিউট তুমি দেখতে।অথচ একটুও অহংকারী না।’
‘বাবা আমাকে শিখিয়েছে।সম্পদের অহংকার করতে নেই।তাহলে ধ্বংস হয়ে যেতে হয়।’
‘তোমার বাবা তোমাকে খুব ভালবাসে তাইনা নিরা।’
‘বাবার ভালবাসা ভাবলেই আমি অবাক হয়ে যায় ভাবি।বাবা আমাকে এত ভালবাসেন কেনো?’
‘তুমি খুব লাকি তাই।’
এরই মাঝে নিচে ইসহাক হাসান চেচামেচি করছেন।বমি করতে করতে তার অবস্থা খুব খারাপ।খামারের সাইড থেকে এসে সে বমি করছে।ওপাশে নাকি সত্যি বিশ্রি গন্ধ বেরোচ্ছে।
নিরা বললো,
‘ভাবি তুমি কিন্তু ওপাশে যেওনা তাহলে।তুমি এমনি গ্রেগনেন্ট এসব গন্ধ সহ্য করতে পারবে না।’
এরই মাঝে নিরার ফোনের রিংটন বেজে উঠলো।
চলবে??
(পর্যাপ্ত রেসপন্স এর অভাবে উপন্যাস টা লিখতে ইচ্ছা করে না।কমেন্ট বক্স দেখে অবাক লাগে।)
Mousumi Aktar-মৌসুমি আক্তার