#প্রণয়ের আসক্তি পর্ব ১৯
#writer_Mousumi_Akter
সময় এগিয়ে গিয়েছে খানিক টা কেটে গেছে দু’মাস।আজ নীরার জন্মদিন।কিন্তু বাড়িতে কারো মনে কোনো সুখ,শান্তি নেই।দু’মাস আগেই যে বাড়িতে একটা ছেলেকে মর্মান্তিক ভাবে খু*ন করা হয়েছে সে বাড়িতে হাসি আনন্দের কথা কল্পনাও করা যায় না।ইসহাক হাসান দীর্ঘদিন হাসেন না,ইরিনা হাসান ও তাই।বাড়িটা কেমন প্রাণহীন হয়ে আছে।চারদিকে শুধুই আতঙ্ক।নীলাভ এর খু*নি কে সেটা আন্দাজ ও করা যাচ্ছে না।তবে নীলাভ এর বাকি দু’জন ফ্রেন্ড নিঁখোজ।তাদের কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।পুলিশের ধারণা নীলাভ এর ফ্রেন্ডরাই কিছু একটা ঝামেলার জন্য নীলাভ কে মে*রে পলাতক।
সকাল সাতটা বাজে মৃথিলা সুয়ে আছে এখনো ঘুম ভাঙে নি মৃথিলার।নিরবের ঘুম ভেঙেছে আরো খানিক আগেই।সকাল থেকেই আকাশে মেঘ করেছে।আজ বোধ হয় খুব সকালেই বৃষ্টি হবে।চারদিক দুরুম দুরুম আওয়াজ হচ্ছে মেঘের।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।ঠান্ডা বাতাস ছেড়েছে।মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙে গেলো মৃথিলার।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে চারদিক অন্ধকার।কারেন্ট নেই।ক্রামাগত ফোন বেজে চলেছে নিরবের।মৃথিলা কখনো নিরবের ফোন রিসিভ করেনা।এতবার ফোন বাজছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফোন ই হয়তো হবে।অন্ধকারে ফোনের আলোতে কিছুটা আলোকিত হয়েছে রুম।ফোন ফ্লোরে চার্জে রাখা আছে।মৃথিলা দেখলো একটা আননাউন নাম্বার এর ফোন।মৃথিলা ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাস থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো,
‘হাই হ্যান্ডসাম!দীর্ঘদিন ফোন করা হয়না।কি ভাবছো ভুলে গিয়েছি।কেমন লাগছে ভাইয়ের টুকরো টুকরো মাংশ দেখতে।ওকে মারার সময় ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম।কি সুন্দর ভাবে যে উপভোগ করেছিলাম সেই দৃশ্য। খুব যন্ত্রণা হয় তাইনা ভাই এর কথা ভাবতে।প্রতিশোধের আগুনে র*ক্ত টগবগ করছে তাইনা?করুক তোমার এই যন্ত্রণা ভীষণ ভালো লাগছে আমার।’
ফোনের ওপাসের আট্টহাসি ভেষে আসছে।মৃথিলা ফোন ফেলে দিয়ে চিৎকার মারলো।আচমকা এমন ফোন কলে মৃথিলা ভয় পেয়েছে।ঘর থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই শাড়িতে পাড়া লেগে পড়ে গেলো ফ্লোরে।মৃথিলা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো।নিরব বারান্দায় ই ছিলো।মৃথিলার চিৎকারে রুমের মধ্য প্রবেশ করলো।রুমে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।নিরব হাতড়ে জানালা খুলে দিলো।জানালা দিয়ে সরু আলো রুমের ভেতর প্রবেশ করলো।আলোয় মৃথিলাকে স্পষ্ট দেখা গেলো মৃথিলা ফ্লোরে পড়ে আছে।নিরব দ্রুত এসে মৃথিলার সামনে বসলো। মৃথিলা ভয়ে কাঁপছে।
নিরব কৌতুহলী ভাবে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে মৃথিলা তুমি কি ভয় পেয়েছো।কোনো স্বপ্ন দেখেছো।খারাপ কিছু দেখেছো।’
মৃথিলা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
‘নীলাভ।’
‘কোথায় নীলাভ।স্বপ্ন দেখেছো।’
‘ফো ফোনের মধ্য নীলাভ।একটা মেয়ে ফোন করে বললো,সে নীলাভ কে মে*রে*ছে।ওই মেয়েটায় নীলাভ এর খু*নী।’
নিরবের বুঝতে বাকি নেই এটা সেই ফোন কল।কে এই মেয়েটা।কেনো নিরব কে এইভবে ফোন করে বিরক্ত করছে।
মৃথিলাকে কাঁপতে দেখে আর কাঁদতে দেখে নিরব মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরলো।এর আগে নিরব এমন করেনি কখনো।মৃথিলার চোখের পানি দেখলে নিরবের সমস্ত পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায়।মৃথিলাকে বুকের মাঝে স্বযত্নে তুলে রাখতে ইচ্ছা করে।এই হঠাত জড়িয়ে ধরার কারণ ও খুজে পেলো না।মৃথিলার মাঝেও কোনো প্রতিকৃয়া নেই।নিরবের বুকে মাথা গুজে সে চুপ করে পড়ে রইলো।রুমের সাইডেই নারকেল গাছে বজ্রপাত হলো।প্রচন্ড জোরে শব্দ হলো।মৃথিলার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো।সে কেঁপে উঠে নিরব কে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো।নিরবের বুকের শার্ট শক্তভাবে খামচে ধরে রেখেছে।নিরব আর মৃথিলা দুজনের ই চোখ বন্ধ।দুজন ই দুজন কে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।দুজনের মাঝেই আলাদা এক অনুভূতি। ভালো লাগছে দুজনের ই।আলাদা এক নতুন অনুভূতির অনুভব হলো দুজনের।এই অনুভূতি একমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়।বেশ কিছুক্ষণ পরে নিরব কিছুটা স্বাভাবিক হলো সে এক ঝটকায় মৃথিলাকে কোলে তুললো।মৃথিলাকে ব্যাথা পেতে দেখলে ব্যাথার সম্পূর্ণ অনুভব যেনো নিরবের হয়।
নিরব বললো,
‘আমার কাছে এমন হাজার ও উড়ো কল আসে।আমি এমন একট প্রফেশন এ আছি।আর এমন কিছুই ক্রিমিনাল এর পিছনে আছি আমার শ*ত্রু*র অভব নেই।এসব ফোন কল কে পাত্তা দিও না।’
‘আমি ভেবেছি সত্যি কেউ বলছে।’
‘হয়তো সত্যি বলছে।কিন্তু তুমি এইভাবে ভ*য় পাবেনা।বা কাঁদবে না।তোমার কাঁন্না দেখলে আমি ক্রিমিনাল ধরতে তো পারবোই না।বরং হিরো থেকে ভিলেন মানে শহরের বড় ক্রিমিনাল হয়ে যাবো।’
‘কেনো?’
‘কারণ যার জন্য তোমার চোখে পানি আসবে সে ই আর বাঁচবে না।তোমার জন্য সহস্র খু*ন করতেও হাত কাঁপবেনা।’
‘কেনো আপনি আমার জন্য এমন করবেন।’
‘কারণ তোমার দায়িত্ব নিয়েছি আমি তাই।’
‘আর কোনো কারণ নেই।’
‘দায়িত্ত্ব কি মানুষ এমনি এমনি নেয় কারো।’
‘তাহলে কেনো নেয়।’
‘দু’দিন পরে বাচ্চার মা হবে এখনো এটা বুঝতে পারোনা।’
‘বুঝলে যদি ভুল হয়।’
‘নারীর অনুমান ভুল হয় না।তাই তোমার অনুমান ভুল হবেনা।’
‘নারীর মাঝে কি বিশেষ কোনো শক্তি আছে।’
‘ হ্যা আছে তো।নারী সৃষ্টি আবার নারীই ধ্বংস।’
‘আমাকে এবার নামিয়ে দিন।’
নিরব মৃথিলাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
‘কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?’
‘পায়ে।মনে হয় আমি আর কোনদিন হাঁটতে পারবো না।’
‘এতটুক ব্যাথায় কিছুই হবেনা।আর যদি হাঁটতে না ই পারো আমিও আমার পা কে*টে ফেলবো।দুজনেই উইল চেয়ারে বসে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো। এভাবে অনন্তকাল কেটে যাবে দেখবে বুঝতেও পারবে না পা আছে কি নেই।’
‘এভাবেও বুঝি সময় কেটে যায় ম্যাজিকের মতো।’
‘ভালবাসা নিজেই তো একটা ম্যজিক।সব কিছু ম্যাজিকের মতো করে দেয়।’
হঠাত এ ভালবাসার কথা শুনে মৃথিলা অবাক হয়ে নিরবের দিকে তাকালো আর বললো,
‘ভালবাসা কোথা থেকে এলো এর মাঝে।’
‘আকাশ থেকে টুপ করে এলো।দেখছো না বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। ‘
বাইরে প্রচন্ড ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ হচ্ছে শুধু।বৃষ্টি মৃথিলাকে টানছে খুব।খুব আবদারের সুরে নিরব কে বললো,
‘আমি না বহুকাল বৃষ্টি দেখিনি।আমাকে একটু বৃষ্টি দেখাতে নিবেন।’
‘রুম থেকেই তো দেখা যাচ্ছে।’
‘না আমি খুব কাছ থেকে দেখতে চাই।আমি ছুঁতে চাই বৃষ্টি। বৃষ্টি মাখতে চাই শরীর জুড়ে।বৃষ্টির খুব কাছাকাছি যেতে চাই।মিশে যেতে চাই বৃষ্টির সাথে।ধুয়ে যাক মনের সব গ্লানি বৃষ্টির সাথে।’
নিরব উঠে দাঁড়ালো।হাত দিয়ে চুক আচড়ে নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘শহর জুড়ে আজ ঝুম বৃষ্টি হোক।তুমি ঠাই খুজে নিও মেঘেদের ভিড়ে।গুন শুন শব্দে প্রতিটা বৃষ্টিকণা তোমার কানে কানে বলে যাক ভালবাসি বড্ড।’
মৃথিলা উঠে দাঁড়ালো।নিরব মৃথিলার হাত ধরলো।দুজনে ছাদের দিকে যাচ্ছে।চারতলায় যেতেই মৃথিলার পায়ে ব্যাথা করছে।ধপ করে সিঁড়িতে বসে পড়লো।নিরব কোনো কিছু না বলেই মৃথিলাকে কোলে তুলে নিলো।অধিকারবোধ টা যেনো এক সাথে থাকতে থাকতে আপনা আপনি তৈরি হয়ে গিয়েছে।কিছু জিনিস বোধহয় নিজ থেকেই তৈরি হয়ে যায়।এই যে হুট করে জড়িয়ে ধরা, কোলে তুলে নেওয়া এগুলোতে কোনো দ্বিধা বাঁধা কোনোটায় কাজ করছে না।নিরব মৃথিলাকে নিয়ে ছাদে গেলো।বৃষ্টি যেনো গুনগুনিয়ে কেঁদে চলেছে।মৃথিলা ছাদের রেলিং ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে।নিরব মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে দৃশ্য। মৃথিলা কি সত্যি কোনো মেয়ে নাকি প*রী সন্দেহ হয় নিরবের।কখনো রৌদ্রময়ী তো কখনো বৃষ্টিবিলাসী। আধাঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজলো দুজন।শরীরে শীত চলে এসেছে।মৃথিলার ঠোঁট কাপছে ঠান্ডায়।মৃথিলার কম্পিত ঠোঁট এর দিকে তাকালে নিরবের শরীরে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে।সম্ভবত প্রিয়দর্শিনী কে খুব কাছে পেতে মন চাইছে।নিরবের খুব ইচ্ছা করছে মৃথিলাকে একটু ছুঁয়ে দিতে।মৃথিলার বুকে কান পেতে হৃদস্পন্দন শুনতে।মৃথিলা আকাশের পানে দু’হাত মেলে ভিজছে।মাঝে মাজে নিরবের গায়ে পানি ছুড়ে মারছে।ছাদের এদিক থেকে ছুটে ওদিক যাচ্ছে।প্রান খুলে হাসছে মৃথিলা।নিরব আজ প্রথম মৃথিলাকে এত প্রানবন্ত দেখলো।প্রায় এক ঘন্টা পর দুজনে রুমে এসে চেঞ্জ করে নিলো।
নিরব রুমের মধ্য টাওয়াল পরে দাঁড়িয়ে আছে।গায়ে লোশন মাখছে।মৃথিলা লজ্জামিশ্রিত চোখে নিরবের দিকে তাকাচ্ছে।খালি গায়ে কেউ এইভাবে রুমের মধ্য দাঁড়িয়ে থাকে। এর ই মাঝে ফোন বেজে উঠলো নিরবের।ফোনের স্ক্রিনে রিফাতের নাম্বার।মৃথিলা ফোন টা এগিয়ে দিলো নিরবের দিকে।কিন্তু লজ্জায় তাকাচ্ছে না।নিরব ফোন টা মৃথিলার হাত থেকে নেওয়ার সময় বাকাচোখে তাকালো।মৃথিলার দিকে তাকিয়েই ফোন রিসিভ করে বললো,
‘হ্যাঁ রিফাত বল।’
‘আজ না নিরার জন্মদিন।’
‘হ্যাঁ ‘
‘আঙ্কেল আন্টির মন খারাপ।আজ নিরার জন্য বাড়িতে একটা অনুষ্টান করলে সবাই আসবে আঙ্কেল আর আন্টির ভালো লাগবে।’
‘ঠিক আছে সন্ধ্যায় একটা অনুষ্টান করবো ঘরোয়া ভাবে।আগেই ভেবে রেখেছি।তুই চলে আসিস সময় মতো।’
‘ওকে কেক কিন্তু আমি নিয়ে আসবো।আর হ্যাঁ মৃথিলার ফ্রেন্ড সুপ্তি কেও বলিস কিন্তু।’
রিফাত কথাটা একটু টেনে বললো।
নিরব বললো,
‘শা*লা তোর মনে মনে এই তাইনা’
চলবে?….