#প্রণয়ের আসক্তি পর্ব ২
#writer_Mousumi_Akter
২.
নিরবের সমস্ত শরীর দুঃচিন্তায় কাঁপছে থরথর করে।ফোন কেটে ধপ করে বেঞ্চের উপর বসে পড়লো।গলা শুকিয়ে গিয়েছে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে।জিভ দিয়ে শুষ্ক দুই ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।
রিফাত আলেয়া কে বললো,
‘এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো কুইক।’
আলেয়া ফিল্টার থেকে এক গ্লাস পানি এনে নিরবের সামনে ধরে বললো,
‘স্যার পানি।’
নিরব ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।এক ঢোক পানি নিয়ে গলা ভিজিয়ে পানির গ্লাস রেখে দিলো।রিফাত দ্রুত ইনহেলার বের করলো নিরবের ড্রয়ার থেকে।ইনহেলার না নিতে পারলে হয়তো এখনি নিরবের প্রা★ণ বেরিয়ে যাবে।নিরব নাকে ইনহেলার নিয়ে ঘন ঘন ওষুধ টেনে ভেতরে নিলো।এবার বেশ খানিকটা স্বাভাবিক হলো নিরব।আলেয়া আবার গিয়ে মৃথিলার মাথায় পানি ঢালছে।
রিফাত জিজ্ঞেস করলো,
‘কার ফোন ছিলো নিরব?এত টেনশন করছিস কেনো?’
নিরব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘না তেমন কেউ না।রং নাম্বার মেবি।’
একটা ফোন কল নিরবের জীবনের সব কিছু এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।ফোনের ওপাস থেকে ভেষে আসা মেয়ের কন্ঠস্বর নিয়ে ভীষণ কৌতুহল কাজ করছে নিরবের।এই অজ্ঞাত মেয়েটা কে?অজ্ঞাত একটা মেয়েলি ভয়েস নিরব কে মানসিক অশান্তি দিয়ে চলেছে অবিরত।অথচ এর কোনো কূল কিনারা খুজে বের করতে পারছে না সে।বেশীর ভাগ এই কল টা আসে গভীর রাতে।ঠিক রাত ২ঃ৪৫ মিনিটের একটা ফোন কল নিরবের রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে।রেগুলার ই রাত ২ঃ৪৫ মিনিটে এই কল টা আসে।কে এই মেয়ে আর নিরব কেই বা ফোন করে এসব বলছে কেনো?ফোনের কল টাইম ১৫ সেকেন্ডের বেশী থাকে না।আজ প্রথম এই কল টা দুপুর টাইমে এসছে।শত্রুপক্ষের কেউ নিরব কে বিভ্রান্ত করতেই এমন করছে এমন টাই ধারণা নিরবের।নিরব এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলে নি এখনো।নিরব চিন্তা থেকে বেরিয়ে মৃথিলার দিকে তাকালো।মায়া ভরা মুখ টা অসহায় এর মতো অচেতন হয়ে পড়ে আছে।মাথার খোপা খুলে চুল গুলো বেঞ্চ থেকে ফ্লোরে পড়েছে আর এক হাত ফ্লোরের দিকে ঝুলে আছে।এটা মেয়ে না সাক্ষাত কোনো প*রী হবে।আজ ও নিরব এমন ইনোসেন্ট ফেস এর কোনো মেয়ে দেখে নি।মেয়েটার মুখ ভরা মায়া।দেখতেই খুব শান্ত শিষ্ট মনে হচ্ছে।এই মেয়ে মিথ্যা বলতে পারে না।নিরব তার জীবনে অনেক মানুষ দেখেছে তাই মানুষ চিনতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।হঠাত নিরব এক নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখলো। না চাইতেও সেদিকে চোখ গেলো।মৃথিলার ধবধবে সাদা পেটে কালো তিল।পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।নিরব দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।সব থেকে বেশী নজর কেড়েছে মৃথিলার ঠোঁটের একটু উপরেই কালো মিচমিচে তিল।হুবহু সেইম জায়গাতে নিরবের ও তিল।এই কালো তিলটায় মৃথিলার সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।ফোনটা পকেটে রেখে বেঞ্চে মৃথিলার পাশে বসেই মৃথিলার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টায় আছে নিরব। মৃথিলার মুখে হাত দিয়ে বার বার ঝাকি দিয়ে ডাকছে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।ওদিকে রিফাত নীলাভ কে জেরা করছে।
কিছুক্ষণ পরে মৃথিলা বিড় বিড় করে উচ্চারণ করছে,
‘ প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।তুমি ছাড়া কেউ নেই আমার।’মৃথিলা মায়াভরা করুণ কন্ঠে অসহায় এর মতো কথাটা বললো।
এই কথাটা যেনো নিরবের বুকে তীরের মতো বিঁধলো।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার নিজের ভাই এর প্রতি।তার ভাই কি সত্যি স্টুপিড। এমন মেয়ে যে তার ভাই এর মতো ভাদাইমাকে ভালবেসেছে সেটাই তো ভাগ্যর ব্যাপার।এমন মেয়ে কোনো ছেলে রিজেক্ট করে কিভাবে।নিরব কড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।সে নীলাভ এর সাথে মৃথিলার বিয়ে দিয়ে ছাড়বে।নিরব মৃথিলার হাত ধরলো দুই হাতের মুঠোয় মৃথিলার হাত নিয়ে বললো,
‘কেউ তোমাকে ছেড়ে যাবেনা চিন্তা করোনা।আমি আছি তোমার পাশে।কেউ ছেড়ে যাওয়ার দুঃসাহস ও দেখাতে পারবে না।’
বেঞ্চে সুইয়ে দেওয়ার সময় মৃথিলার পেটের শাড়ি কিছুটা সরে যাওয়ায় তিল দেখা যাচ্ছে।নিরব শাড়ি টা টেনে ঠিক করে দিয়ে
আলেয়া কে বললো,
‘তুমি মেয়েটির খেয়াল রাখো।এ পাশে বেঞ্চে এসে বসো।জ্ঞান ফিরলেই আমাকে ফোন দিবে।’
‘ঠিক আছে স্যার।’
‘ঠিক আছে না।খুব কেয়ারফুলি খেয়াল রাখবে।এটা আমার ফ্যামিলি ইস্যু।’
নিরব উঠে যাওয়ার সময় মৃথিলার শাড়ির আঁচলের সুতা নিরবের ঘড়িতে আটকে গেলো।নিরব একটু ব্যাস্ততার সাথে সেটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু এমন ভাবে সুতা পেচিয়েছে যে খুলছেই না।নিরব একটু জোরে টান দিতেই শাঁড়ির সুতা সহ সামান্য একটু আঁচলের কোনা ছিড়ে ঘড়ির সাথে থেকে গেলো।
নিরব চিন্তিত ভাবে উচ্চারণ করলো,
‘ওহ শীট!মেয়েটি এমনিতেই অসহায়।তাতে শাড়ির আঁচল টা ছিড়ে ফেললাম।’
রিফাত পেছনে হাত বেঁধে এত সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলো ব্যাপার টা।নীলাভ এর থেকে পুরা ঘটনা টা শুনে রিফাত নিজেও চিন্তিত।রিফাত জানে নিরব কোনো কেস হাতে নিলে সেটার সমাধান না করে বাসায় ও যায় না।যতদিন না সমাধান হয় সে কেসটার তদন্ত নিজে করতে থাকে।এখন নিজের ভাই জড়িত নিরব এই ব্যাপার টা আরো সিরিয়াসলি নিবে।নিরব এই মুহুর্তে কতটা সিরিয়াস হয়ে পড়েছে সেটা রিফাত অনুমান করতে পারছে।
নীলাভ এর চোখে মুখে ভয়ানক চিন্তা।এখন সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।সারাজীবন মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করা তার অভ্যাস।কত মেয়ের সাথে এমন করেছে তার হিসাব নেই।কিন্তু তার ফ্যামিলির মানুষ এসব কিছুই জানেনা।নীলাভ এর ফ্যামিলির সবাই জানে নীলাভ মেয়েদের সাথে হয়তো কথা ই বলে না।অথচ নীলাভ এ পর্যন্ত অনেক মেয়ের সাথে রুম ডেট ও করেছে।নীলাভ এর টার্গেট থাকে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করে রুম পর্যন্ত নেওয়া।উদ্দেশ্য সফল হলে সে আর সেসব মেয়েদের দিকে ফিরেও তাকায় না।বাবা -মা দুজনেই ব্যাবসায়ী।নীলাভ এর মায়ের হাত ধরেই বাবার ব্যাবসা।নীলাভ ও ব্যবসায়ে জড়িত।কিন্তু নিরব এ পথে যায় নি।নিরব এর ইচ্ছা ছিলো দেশের জন্য কিছু করা।দেশের ক্রিমিনাল এর শায়েস্তা করার উদ্দেশ্য সে এ পেশায় এসেছে।
রিফাত নিরবের ঘাড়ে হাত রেখে ফিসফিস করে বললো,
‘কুল নিরব।এত উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই।আমি নীলাভ এর থেকে সব টা শুনেছি।আর নীলাভ এর দ্বারা এটা অসম্ভব কোনো ব্যাপার নাহ।কেননা আজ এই মেয়ে নিয়ে ঘুরে তো কাল অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে। নীলাভ এর অভ্যাস জামা -কাপড়ের থেকে বেশী মেয়ে পাল্টানো।নীলাভ এর হয়তো খেয়াল ই নেই কবে এই মেয়েটির সাথে মেলামেশা করেছে।তোর ফ্যামিলির কেউ এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা।আর আঙ্কেল আন্টি কষ্ট পাবে বলে আমিও কিছুই বলিনি।’
নিরবের মাথা ফেটে যাচ্ছে দুঃচিন্তা আর রাগে।নীলাভ এর দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘এখান থেকে এক পা ও নাড়াবে না তুমি।’
নীলাভ ভাইয়ের রাগি দৃষ্টির সামনে কিছুই বলতে সাহস পেলো না।টেনশনে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।
নিরব রিফাত কে ডেকে নিয়ে বাইরে গেলো।পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট বের করলো। সাথে সাথে একটা সিগারেট ধরালো।ঘন ঘন তিন চার টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিয়ে আরেক টা সিগারেট ধরালো।দ্রুত সিগারেট টানছে নাক আর মুখ দিয়ে ধোয়া বেরোচ্ছে নিরবের।ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আবার কখনো চাপ দাঁড়িও রাখে নিরব।জটিল কেস নিয়ে টেনশন করলে নিরব ক্রমাগত সিগারেট টানতে থাকে।প্যাকেটে তিনটা সিগারেট ছিলো।লাস্ট সিগারেট টা ধরাতে গিয়ে গ্যাস লাইটে হাতে স্যাক লাগলো।জ্বলন্ত সিগারেট মুখে রেখেই হাত ঝাড়লো থাকলো।রিফাত বললো,সাবধানে ভাই
হাত পুড়িয়ে ফেললি।নিরব লাস্ট সিগারেট টাও দ্রুত টেনে শেষ করলো।তিন মিনিটে শেষ হয়ে গেলো তিনটা সিগারেট।থানার পাশেই দোকান আছে।নিরব রিফাত কে সাথে নিয়ে আরেক প্যাকেট ব্যানসন কিনলো আর দুইটা স্পীড কিনলো।স্পিড খেয়ে নিরব আবার সিগারেট ধরালো।নিরব কে সঙ্গ দিতে রিফাত ও সিগারেট ধরালো।
নিরব রিফাত কে বললো,
‘রিফাত তুই কি এইজন্য ই আমাকে বলতি নীলাভ কে দেখে শুনে রাখতে।’
‘হ্যাঁ ভাই।”
‘আমাদের বাবা একজন আদর্শবান মানুষ। বাবাকে মেইল করে জানিয়েছি নীলাভ এর বিয়ে ঠিক করেছি।বাবা হঠাত বিয়ের কারণ জানতে চাইলে আমি কিছুই বলিনি।বলেছি বাসায় গিয়ে জানাচ্ছি।নীলাভ এর মেয়েদের প্রতি ঝোঁক আছে জানি।কিন্তু কোনো মেয়ের এমন ক্ষতি করবে আগে জানা ছিলোনা।বাবা কে বললে নীলাভ কে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।এমন কি বাবা স্ট্রোক ও করতে পারে।আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে ব্যাপার টা হ্যান্ডেল করবো।এমনিতেই শহরের অবস্থা ভালোনা।পরিবার নিয়ে সারাক্ষণ দুঃচিন্তায় আছি।আমার হাতে অনেক ক্রিমিনাল এরেস্ট হয়েছে এইজন্য আমার পরিবারের প্রতি তাদের নজর আছে।রানীগঞ্জের নাবিলার কেস টা হাতে নিয়েছি।সারাদেশে নাবিলা কে নিয়ে নিউজ হচ্ছে।আর আমি একটা জিনিস বুঝলাম না।যতগুলো নারী পাচার হয়েছে রিসেন্টলি তার ৮০% রানীগঞ্জের।রানীগঞ্জের প্রতি এত অন্যায় কিভাবে হলো।যত খু**ন হয়েছে তার বেশীরভাগ ই রানীগঞ্জের।’
‘নিরব রানীগঞ্জের নিশ্চয়ই কোনো জটিল কাহিনী আছে বা কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এটা আমাদের অজানা।কেউ তো আছে, বিশেষ কোনো গ্যাঙ যারা সাধারণ সেজে রানীগঞ্জের উপর এটাক করছে।আশ্চর্যজনক ব্যাপার কেউ সেই অপরাধীদের দেখতে পায়নি।’
‘ভাই রানীগঞ্জ হুয়াই?এত জায়গা থাকতে রানীগঞ্জ কেনো?এটা ভাবতে ভাবতে পা**গ**ল হয়ে যাচ্ছি।নাবিলা কিন্তু রাণীগঞ্জের ই।নাবিলা কে হাতের মুঠোয় পেয়েও রক্ষা করতে পারলাম না।’
‘নাবিলার আগে নাবিলার মা-বাবা খু**ন হলো।’
‘রানীগঞ্জ এর প্রতি আমার বিশেষ টান রয়েছে। রানীগঞ্জের এমন ক্ষয় -ক্ষতি আমি হতে দিবোনা।’
‘রানীগঞ্জের প্রতি তোর কিসের এত উইকনেস নিরব।আচ্ছা নাবিলার কেস নিয়ে তুই যতটা সিরিয়াস। আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি নাবিলা যে কিউট ছিলো বাই এনি চান্স তোর জিএফ ছিলোনাতো।’
নিরবের মুখের অদল সাথে সাথে চেঞ্জ হয়ে গেলো।মুখ কালো হয়ে গেলো মন খারাপে।চোখ মুখের পরিবর্তন হয়ে গেলো সাথে সাথে।দৃশ্য টা রিফাতের চোখে পড়লো।রিফাত তো মজাই করছিলো।কেননা রানীগঞ্জের অসংখ্য মেয়ে গুম হয়েছে, খু**ন হয়েছে তার মাঝে নিরব নাবিলার কেস টা নিয়ে রাত দিন পড়ে আছে।রিফাত নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ভাই আমি মজা করছিলাম তো।আজকাল কি হয়েছে এত চিন্তিত কেনো?সত্যি নাবিলার কেসের পর তুই একটু বেশী চিন্তিত।’
নিরব চিন্তা থেকে বেরিয়ে প্রশ্ন করলো,
‘মৃথিলাকে কেমন মনে হলো।মেয়েটা কি সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে।’
‘সত্য বলতে যদি মেয়েটা চেহারা নিয়ে কিছু বলি তাহলে কম বলা হয়ে যাবে।সেই বিষয়ে কিছুই বলতে চাইছিনা।মেয়েটা গ্রামের এত প্যাচ নেই মনে।চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অত্যান্ত সাধাসিধা মেয়ে।এইজন্য নীলাভ এর ফাঁদে পা দিয়ে ফেঁসে গিয়েছে।মেয়েটির থেকে চোখ সরানোই মুশকিল হচ্ছিলো।’
‘হুম তবে মেয়েটার মামাবাড়ি একবার তদন্ত করতে হবে।আর হ্যাঁ ওর যে সুপ্তি বলে মেয়েটি আছে না বেষ্ট ফ্রেন্ড।’
‘কে সুপ্তি,কোন সুপ্তি?’
‘মৃথিলা বলেছিলো ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড।আজ বিকালে মেয়েটির সাথে দেখা করবি।আর সত্য টা জানার চেষ্টা করবি।’
‘মেয়ে মানুষের চক্করে আমাকে ফেলছিস কেনো ভাই?আমাকে মৃথিলার ব্যাপারে যত দায়িত্ব আছে দে আমি নিচ্ছি।’
‘মৃথিলার দায়িত্ব তোকে নেওয়া লাগবেনা।সুপ্তির বয়ান সব রেকর্ড করে রাখবি ওকে।’
এরই মাঝে নিরবের ফোন বেজে উঠলো।আলেয়ার ফোন এসছে।মৃথিলার জ্ঞান ফিরে এসছে।রিফাত আর নিরব ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো আলেয়া মৃথিলাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।মৃথিলা বেঞ্চে হেলান দিয়ে খাবার খাচ্ছে।নিরব মৃথিলার কাছে এসে বললো,
‘শরীর কেমন লাগছে এখন মৃথিলা।’
মৃথিলা করুণ দৃষ্টিতে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘মন ভালো থাকলে একটা মানুষের সব ভালো থাকে ভাইয়া।যার মন পুড়ছে সারাক্ষণ তাকে কেমন লাগছে বলাটাও ভুল।’
মৃথিলার চোখ ভরা বেদনার অশ্রুজল।সাথে সাথে টুপ টাপ করে পানি পড়লো চোখ দিয়ে।মৃথিলা খোলা চুলে বেঞ্চে বসে ওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ছাদের দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।পৃথিবীটা যেনো গরিব অসহায় দের জন্য নয়।মৃথিলার মতো মর্মান্তিক কষ্টে থাকা মেয়েগুলোর জন্য বোধহয় এই পৃথিবীর আলোর রোশনাই,হাসি,আনন্দ সব মিথ্যা।
নিরব মৃথিলাকে আর কোনো প্রশ্ন করলোনা।সোজা নীলাভ কে প্রশ্ন করলো,
‘নীলাভ তুমি কি মেয়েটিকে এক্সেপ্ট করবে?ইয়েস অর নো।’
‘আমি তাকে চিনিই নাহ।কিভাবে এক্সেপ্ট করবো ভাইয়া।’
‘জামা কাপড়ের মতো মেয়ে পাল্টানো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তোমার তাইনা?তুমি মেয়েটিকে এক্সেপ্ট না করলে মেয়েটির জবানবন্দী নিয়ে তোমাকে এরেস্ট করতে বাধ্য হবো।আমি নিজে এই কেসের দায়িত্ব নিবো।আর বাবা তোমার মুখ ও দেখতে চাইবে না।আর হ্যাঁ ভুলেও ইনিয়ে বিনিয়ে কোনো মিথ্যা গল্প শোনানোর চেষ্টা ও করোনা।’
‘ট্রাস্ট মি ভাইয়া আমি চিনি না।’
‘চিনো নাহ বুঝলাম।বাট তোমাকে ট্রাস্ট করতে বলছো।তুমি নেশা ও করো,মদ খাও,বারে যাও।এসব কি মিথ্যা।জীবনে পাপ করলে কোন একদিন ধরা খেতে হয়।পাপ করে কেউ বাঁচতে পারেনি কখনো।’
নীলাভ বুঝে গিয়েছে এই মুহুর্তে মৃথিলাকে এক্সেপ্ট করা ছাড়া তার কাছে আর কোনো অপশন নেই।নিরব কে সে ভালো ভাবেই চিনে।মৃথিলাকে এক্সেপ্ট না করলে তার ফিউচার জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে হবে।
নিরব নীলাভ এর মুখ উঁচু করে ধরে বললো,
‘এক নারীতে আসক্ত পুরুষ সত্যি খুব সুন্দর।
আফসোস তুমি বুঝলে না।’
নিরবের এই চমৎকার কথা শুনে মৃথিলা নিরবের দিকে তাকালো।এই একটা কথাতে মুগ্ধ হলো মৃথিলা।নিরবের মনের গতি বোঝার চেষ্টা করলো।নারীকে বুঝতে আর ভাল রাখতে নিরবের কোনো জুড়ি নেই সত্যি।
চলবে?…