#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২০
#Writer_Mousumi_Akter
নিজের রুমে পালঙ্কে পিঠ লাগিয়ে পান চিবোচ্ছে ইসহাক হাসান।ইরিনা হাসান ইসহাক হাসানের পায়ের কাছে বসে চোখের পানি ফেলছে।ইসহাক হাসান ইরিনা হাসানের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে বারবার। কিছু বলে স্বন্ত্বনা দিবে ভাবছে কিন্তু মুখে কোনো ভাষা আসছে না।কারণ তার চোখ দিয়ে পানি না পড়লেও যন্ত্রণা তো এক ই।
আরিফা চা নিয়ে এসছে দুজনের জন্য।ইসহাক হাসান বললো,
‘এখন চা এনেছিস মা,তোর চাচাজান আর আগের মতো চা খায় না।’
কথাটার মাঝে ভীষণ হাহাকার আর যন্ত্রণা প্রকাশ পেলো।আরিফার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।ইসহাক হাসান দীর্ঘ লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বললো,
‘নিরা আর মৃথিলা কে একটু ডেকে দে তো আরিফা।বল আমি ডাকছি।’
‘আচ্ছা চাচাজান এক্ষুনি দিচ্ছি।’
কিছুক্ষণ পরেই নিরা আর মৃথিলা দুজনে ইসহাক হাসানের রুমে প্রবেশ করলো।মৃথিলা মিহি কন্ঠে বললো,
‘বাবা ডেকেছেন।’
‘হ্যাঁ মা,তোমার শরীর কেমন আছে এখন।’
‘ভালো আছি বাবা এখন।’
ইসহাক হাসান নিরাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো,
‘নিরা মা আজ তোমার জন্মদিন। ‘
নিরা বাবার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
‘এসব বাদ দাও না বাবা।আমার এসব ভালো লাগছে না।’
‘আমার নিরা আমার লক্ষি,এত বড় হলে কবে তুমি মা।’
‘আমি তো বড় ই বাবা।খালি তোমার কাছেই মনে হয়না।’
‘প্রতিবছর এ দিনে আমার নিরা এসে কত বায়না করে জানো মৃথিলা।এবার দেখো কেমন বড়দের মতো কথা বলছে।’
মৃথিলার ঠোঁটে মৃদু হাসি,বাবা মেয়ের কথা বেশ লাগছে তার কাছে।সে ইরিনা হাসান কে শ্বান্তনা দিচ্ছে।ইরিনা হাসান নীলাভ এর মৃত্যুর পর মৃথিলাকে চোখে হারায়।সারাক্ষণ সে মৃথিলার খেয়াল রাখে।নীলাভ এর শেষ চিহ্ন মৃথিলার গর্ভে এটা ভেবেই সব সময় মৃথিলার খেয়াল রাখে।ইরিনা হাসান মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
ইসহাক হাসান বললো,
‘মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলে মেয়েটা অসুস্থ হয়ে যাবে।মেয়েটার কি তোমার থেকে দুঃখ কম শুধু প্রকাশ করতে পারে না তাই।কথায় আছেনা অল্প শোকে কাতর আর গভীর শোকে পাথর।মৃথিলার ও সে অবস্থা। ‘
নিরা বললো,
‘আজ দাদাভাই আছে বলেই ভাবি স্বাভাবিক হতে পেরেছে।দাদাভাই না থাকলে ভাবির কি হতো কে জানে।’
ইরিনা হাসান বললো,
‘আমার নিরব ঠিক ই ওই জালেমদের খুজে বের করবে।আর ভয়ানক শাস্তি দিবে।’
‘মা সত্য কথা তো এটাই।নীলাভ ভাইয়ার পাপের কোনো শেষ ছিলোনা।আমার তো মনে হয় বন্ধু বা অন্য কারো সাথে ঝামেলা ছিলো বিয়েতে তারাও অতিথি হয়ে এসেছিলো।সিওর কোনো টাকা পয়সার ঝামেলায় এ অঘটন টা ঘটেছে।’
‘এইজন্য তোর বাপ কে বলতাম এত টাকা দিওনা।ছেলে মেয়ে খারাপ হয়ে যায়।বিপথে গেলে সে আর বাঁচতে পারেনা।’
ইসহাক হাসান বললো,
‘এখন সব দোষ আমার।তুমি কেমন মা কোনদিন ছেলেকে কন্ট্রোল করতে পারলে না।’
‘ছেলে বড় হলে কি মায়েরা শাষণ করতে পারে।’
‘ছোট বেলায় ও তো পারোনি।’
‘কই আমার নিরা আর নিরব তো বিপথে যায়নি।’
‘তাহলে মন কে স্বান্তনা দাও পাপ বাপকেও ছাড়ে না।তাই তোমার ছোট ছেলেকেও ছাড়ে নি।’
ইসহাক হাসান বললো,
‘মৃথিলা মা আমার কাছে এসো তো।’
মৃথিলা ইসহাক হাসানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইসহাক হাসান বললো,
‘নিরার মা যা দেওয়ার দাও।’
ইরিনা হাসান চোখের পানি মুছতে মুছতে উঠে গেলো।আলমারি থেকে
দুইটা লাল শাড়ি বের করে দিয়ে বললো,
‘তোমাদের দুজনের জন্য তোমাদের বাবা এনেছে।দুজনেই এক রঙের শাড়ি পরো।’
ইসহাক হাসান বললো,
‘জানো মৃথিলা নিরা আমাকে বলেছে সে এখন থেকে ভাবির সাথে ম্যাচিং করে সব পোশাক পরবে।’
মৃথিলা নিরার মুখের দিকে তাকালো।সরলতার প্রতিমায় ভরা নিরার মুখটা।মৃথিলার প্রথম থেকেই নিরাকে খুব মনে লেগেছে।
ইসহাক হাসান বললো,
‘নিরা তোমার বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে দাও।সন্ধ্যায় আসার জন্য।নিজেরা একটু খাওয়া দাওয়া করো সমস্যা নেই।’
‘এসবের কি দরকার বাবা।আমি কাউকে বলবো না।’
‘যত দুঃখ ই আমার জীবনে আসুক।আমার নিরার আনন্দের কম হবেনা।’
নিরা ইসহাক হাসান কে জড়িয়ে ধরলো।
নিরব সুপ্তিকে ফোন করে জানালো,
‘সুপ্তি আজ নিরার জন্মদিন তুমি না এলে হবে না কিন্তু।’
সুপ্তি আমতা আমতা করে বললো,
‘কিন্তু মা যেতে দিবে না ভাইয়া।আসলে চারদিকে এত মেয়ে খু*ন হচ্ছে।এত মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।এসব ভ*য়েই মা রাজি হবেনা।’
‘আচ্ছা আন্টিকে ফোনটা দাও তো।’
সুপ্তি ফিসফিস করে বলছে,
‘মা মৃথিলার জামাই কথা বলবে।পুলিশের এস আই। ফোনে আস্তে হ্যালো বলবে।না আগে সালাম দিবে।খালাদের যেভাবে জোরে হ্যালো বলো ওভাবে না।’
‘আমাকে অপমান করছিস সুপ্তি।আমি কি জোরে কথা বলি।’
‘ফোনের ওপাশ থেকে সব শোনা যায় কিন্তু।এত জোরে বলেছো শুনেই নিয়েছে।’
‘তাহলে বললি কেনো আমি জোরে কথা বলি।’
‘না আস্তে বলো।নাও ফোন টা নাও।’
‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।’
‘আন্টি আমি নিজেই একজন পুলিশ।সুপ্তি আমার বোনের মতো।ওর সুরক্ষার দায়িত্ব আমার।আপনি একটুও চিন্তা করবেন না।আমার বাড়িতে সুপ্তির কোনো সমস্যা হবেনা।’
“চিন্তা তো একটু হয় বাবা।’
‘চিন্তার কারণ নেই।আপনাদের সব সমস্যায় আমাকে পাশে পাবেন।’
‘ঠিক আছে বাবা সুপ্তি যাবে।’
পরণে নীল একটা শাড়ি সুপ্তির।চুল খুলে রাখা।মুখে মেকাপ নেই তবে চোখে কাজল আছে।রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।
ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে গিয়েছে সুপ্তি।গলা বেয়ে ঘাম পড়ছে।এমন সময় রিফাত সুপ্তির পাশে এসে বাইক থামালো আর জোরে হর্ণ বাজালো।হর্ণের শব্দে সুপ্তি ঘুরে দাঁড়ালো বাইকে হেলমেট মাথায় একটা ছেলে।প্রথমে একটু চমকে যায় সুপ্তি।রিফাত হেলমেট খুললো আর হাত দিয়ে চুল আচড়ে এলোমেলো চুল ঠিক করলো বাইকের আয়নায়।রিফাত হেলমেট খুললে সুপ্তি স্বস্তি ফিরে পেলো।।বুকে ফুঁ দিয়ে বললো,
‘স্যার আপনি।আমি ভ*য় পেয়ে গেছিলাম।’
‘দিন দুপুরে ভয় পেলে হবে।’
‘আমি ভাবছি আমাকে আবার পাচারকারী তুলতে আসেনিতো।’
‘ইমাজিন আমি পাচারকারী দলের লিডার।এটা জানতে পারলে কেমন ফিলিংস হবে তোমার।’
সুপ্তির মুখ চুপসে যায়।সন্দিহান ভাবে রিফাতের দিকে তাকায়।রিফাতের বুঝতে বাকি নেই সুপ্তি তার কথাটা সিরিয়াস ভাবে নিয়েছে।রিফাত হেসে দিয়ে বললো,
‘আরে ভ*য় পেওনা।পাচারদলের লিডার দুইটা মেয়ে।আমাকে দেখে সিরয়াসলি এমন মনে হয় তোমার।’
সুপ্তির জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে।রিফাতের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে।
রিফাত জানে সুপ্তি কোথায় যাচ্ছে।রিফাত সুপ্তির জন্যই এখানে এসেছে।মনে মনে রিফাত সুপ্তিকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেনা।একটু ভাব নিয়ে বললো,
‘কোথাও যাচ্ছো?’
‘হ্যাঁ স্যার নিরার জন্মদিন দাওয়াত দিছে।ওখানেই যাচ্ছি।’
‘রিয়েলি।আমাদের ভাগ্য দেখো কিভাবে দেখা হলো।আমিও ওখানেই যাচ্ছি।তুমি তাহলে আমার বাইকে উঠে পড়ো।’
‘স্যার এটা গ্রাম।কেউ দেখলে বদনাম করবে।আজেবাজে কথা বলবে।’
রিফাত একটা হেলমেট সুপ্তির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘হেলমেট টা মাথায় দাও।আমার কাছে দুইটা হেলমেট থাকে।তুমি একটা মাথায় দাও আর আমি একটা মাথায় দিচ্ছি।কেউ আর চিনবে না।বদনাম ও হবেনা।’
থাক না স্যার আপনি চলে যান।
একটু ধমকের সুরে রিফাত বললো,
‘দাও কেউ চিনবে না।’
সুপ্তি রিফাতের হাত থেকে হেলমেট ট নিতে গেলেই রিফাত বললো,
‘এক মিনিট আমি পরিয়ে দিচ্ছি।’
রিফাত সুপ্তির মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিলো।হেলমেট মাথায় দেওয়াতে সুপ্তিকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।সুপ্তির এই ন্যাচারাল লুক রিফাতের সব সময় ভালো লাগে।মেয়েটাকে খুব মনে ধরেছে তার।চু*রি করে সুপ্তির কত গুলো ছবি তুলে রেখেছে।সময়ে অসময়ে ছবি গুলোর সাথে কথা বলে রিফাত।মেয়েটাকে তার লাগবেই।না হলে এই রেস্ট টাইমে সে অত দূর থেকে আসতো না সুপ্তিকে লিফট দেওয়ার জন্য।রিফাতের বাইকের পেছনে সুপ্তি।রিফাতের ঘাড়ে হাত রাখতে বেশ অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।কিন্তু পড়ে যাবার ভয়ে শক্তভাবে ঘাড়ে হাত রাখতে হলো।সুপ্তির এই স্পর্শ তে রিফাতের মাঝে তোলপাড় হচ্ছে।চমৎকার এক অনুভূতি হচ্ছে।এই পথ যদি না শেষ হয়,তবে কেমন হবে তুমি বলোতো গান টা গুন গুন করে গাইছে রিফাত।বাইক যখন শহরে প্রবেশ করলো ফুলের দোকানের সামনে আসতেই সুপ্তি বললো,
‘স্যার দাঁড়ান।আমি গিফট কিনবো।’
রিফাত বাইকে থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘মেয়েদের কি পছন্দ সুপ্তি।’
‘ফুল স্যার,আর চুড়ি,নূপুর, ঝুমকা।’
‘আচ্ছা!আমি কোনো মেয়েকে কিভাবে প্রপোজ করলে রাজি হবে।বলতে পারো।’
‘আমিতো জানিনা স্যার।তবে ফুল,ঝুমকা এসব মেয়েদের পছন্দ।’
‘আচ্ছা তোমাকে কেউ কিভাবে প্রপোজ করলে রাজি হবে।’
‘আমিতো রাজি ই হবোনা।’
‘কেনো?’
‘আমি জীবনেও প্রেম করবো না।’
‘তাহলে বিয়ে করবে।’
‘তাও করবো না।বিয়ে কেনো করতেই হবে।আমি চিরকুমারী থাকবো।’
‘এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কি? বাড়িতে জানে।’
‘বাড়িতে রোজ ঘটক আসছে।এমন কথা মা শুনলে স্যান্ডেল দিয়ে মা★র★বে।’
‘তোমার এমন সিদ্ধান্ত কেনো?’
‘ছেলেদের খুব ভয় করে।ছেলেরা খুব বেঈমান।’
‘কে বেঈমানি করলো।’
‘নীলাভ।’
‘পৃথিবীতে নীলাভ এর মতো ছেলের যেমন অভাব নেই নিরবের মতো ছেলের ও অভাব নেই বুঝলে ন্যাচারাল সুন্দরী। ‘
‘ন্যাচারাল সুন্দরী। ‘
‘তোমাকে দেখে আমার এটাই মনে হয়।তাই এ নামেই ডাকবো।’
সুপ্তি একটু লজ্জা পেলো।লজ্জামিশ্রিত হলো মুখ।ফুল কেনায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।ফুল কেনা শেষ হলে ফুলের দোকান দার বললো,
‘ম্যাম আপনি এই ফুলের ব্যাড় টা নিন।অনেক বানাইছিলাম সব শেষ। আপনাকে মানাবে ভালো।’
‘আমার কাছে এক্সট্রা টাকা নেই কেনার মতো।’
‘যারা কিনেছে সবাইকে তার প্রেমিক কিনে দিছে।আপনার সাথেও তো আছে উনাকে বলুন।’
সুপ্তি এবার আরো দ্বিগুন লজ্জা পেলো।ছেলেটা রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘স্যার ভাবিকে একটা কিনে দিন।’
রিফাত এবার কেশে উঠে বললো,
‘উনি আপনাদের ভাবি সেটা মুখে স্বীকার করুক।এই দোকানের সব ফুল কিনে নিবো।’
সুপ্তি রিফাতের কাছে এগিয়ে গিয়েবিড়বিড় করে বললো,
‘স্যার এসব কি বলছেন।’
রিফাত ফিসফিস করে বললো,
‘বলছি ওদের ভাবি হবে তুমি।’
‘স্যার আপনার কি হলো।এসব কি বলছেন আপনি।
”প্রপোজ করলাম?কেনো ভালো ভাবে বলা হয় নি তাইনা?এই শহরের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে বললে রাজি হবে।মানে ওদের ভাবি হবে।’
‘শুনেছি মানুষ বলে আমার বউ হবে।আর আপনি বলছেন ওদের ভাবি হবে।’
‘রিজেক্ট তো করবাই তাই ওভাবেই বললাম।এক্সেপ্ট করে নিলেই এই শহরের মানুষ সাক্ষি রেখে প্রপোজ করবো।’
সপ্তি বুঝতে পারছে না রিফাত কি সত্যি সত্যি বলছে নাকি প্রাঙ্ক করছে তার সাথে।সুপ্তি বিষয় টা এড়িয়ে যেতে বললো,
‘স্যার চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
রিফাত দোকানদারের থেকে ফুলের ব্যাড় টা নিয়ে হেলমেট খুলে সুপ্তির মাথায় পরিয়ে দিলো আর বললো,
‘অপরূপা লাগছে তোমাকে ন্যাচারাল সুন্দরী। ‘
সন্ধ্যার আগে আগেই পাঁচতলা ভবন টা বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হলো।বাইরের কেউ আসে নি।নবনিতা এসছে আর নিরার কয়েকজন ফ্রেন্ড এসছে।কিছুক্ষণের মাঝেই কেক কাটা হবে।
মৃথিলাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে।নিরবের চোখে মৃথিলা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর নারী।নিরব কালো পাব্জাবী আর কালো জিন্স পরেছে।দূর থেকে মৃথিলাকে দেখছে।ফ্যানের বাতাসে মৃথিলার চুল উড়ছে কি সুন্দর সে দৃশ্য নিরবের মন কাড়ার মতো।নিরব অপলক হয়ে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।রিফাত নিরবেশ পাশে দাঁড়িয়ে নিরব কে একটা খোঁচা দিয়ে বললো,
‘কি দেখছিস।’
‘তাকে।’
‘আর কত দেখবি।সারাক্ষণ ই তো দেখিস।’
‘তাকে দেখার তৃষ্ণা এ জন্মে মিটবে না।যতদিন বেঁচে আছি তাকেই দেখবো।আর মরে গেলে পরজন্মেও সুযোগ পেলে তাকেই দেখবো।’
‘মৃথিলা জানে এই গভীর ভালবাসার কথা।’
‘জানেনা তবে অনুভব করতে পারে।মৃথিলা সিওর আমার ভালবাসা আঁচ করতে পারে।’
‘তোর কিন্তু মৃথিলাকে জানানো উচিত নিরব।এমন তো হতে পারে মৃথিল এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা।’
‘জানাতে ভয় করে।যদি ভুল বোঝে।’
‘হতেও পারে মৃথিলাও অপেক্ষা করছে তোর জন্য।’
‘তাকে ছুঁয়ে দেখিনি তবুও কেনো এত অনুভব।সব সময় অনুভবে ও থাকে।’
‘বিকজ ইটস লাভ ব্রো।’
মৃথিলা আর নিরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।নবনিতা মৃথিলাকে বলছে,
‘এত সেজেছো কার জন্য।’
মৃথিলা কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছেনা।অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে নবনিতার দিকে।নবনিতা আবার ও বললো,
তোমার না আসল স্বামি খু**ন হয়েছে কিছুদিন আগে।যার বাচ্চা তোমার পেটে সে ই তো দুনিয়ায় নেই।যেখানে সাদা থানে জীবনে কাটানোর কথা সেখানে লাল শাড়ি পরে ঘুরছো।রং বলতে কিছু আছে তোমার জীবনে।যার রঙে মা হতে চলেছো সেই তো নেই।নিরব তো তোমার করুনার স্বামি।করুণা মানে বুঝো তো।ভেবোনা নিরব তোমাকে ভালবাসে।নিরব স্টিল লাভস মি।কিন্তু ওর মন অনেক বড় নিজের ফ্যামিলির কথা ভেবে তোমাকে করুণা করেছে।আজ নিরবের পাশে আমার থাকার কথা ছিলো সেখানে তুমি এসে জুড়ে বসেছো।আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি নিরবের ভালবাসা কোনদিন তুমি পাবেনা।আমার থেকেও বেশী কষ্ট তোমার জীবনে আসবে দেখে নিও।
মৃথিলা এত অপমানজনক কথা আগে শোনেনি।কি বলবে বুঝতে পারছে না শুধু কাঁদছে।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে মৃথিলার।সে কেঁদেই যাচ্ছে।দূর থেকে সুপ্তি দেখে এগিয়ে এলো।সুপ্তি মৃথিলার চোখে পানি দেখে বললো,
‘এই মিথু কাঁদছিস কেনো রে।’
মৃথিলার চোখের পানি সুপ্তি সহ্য করতে পারেনা।
মৃথিলা কিছুই বললো না।
সুপ্তি নবনিতার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি কিছু বলেছো তাইনা?আমি জানি খারাপ কথা ছাড়া তোমার মুখে আসেনা।এইজন্য ভালো কিছুও তোমার কপালে নেই।কি জ্বলে খুব নিরব ভাইয়া কে নিয়ে।পাত্তা দেয় না তাও লজ্জা করেনা।অন্যর জামাই এর দিকে নজর দিলে না জীবনে জামাই জুটবে না কপালে।’
‘হাউ ডেয়ার ইউ বস্তির মেয়ে।তোমাদের কি যোগ্যতা আছে এরকম পার্টিতে আসার।আমাদের মতো স্মার্ট মানুষের মাঝে তোমাদের কেনন বেমানান দেখেছো।’
‘স্মার্টনেস কাকে বলে জানো।নিজের স্ট্রং পারসোনালিটি কে বলে স্মার্টনেস।ভূ*ত*র মতো সেজে হাফপ্যান্ট পরে অন্যর জামাই নিয়ে টানাটানি করাকে না।আমার জামাই নিয়ে এমন করলে না এতদিন আমি ঠ্যাং ভে*ঙে দিতাম।মিথু নরম মেয়ে বলে তোমার কপাল ভালো।’
‘কি সাংঘাতিক মেয়ে তুমি।’
‘আমি কতটা সাংঘাতিক কল্পনাও করতে পারবেনা তুমি।’
এরই মাঝে কারেন্ট চলে গেলো।চারদিক অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মৃথিলার খুব জোরে চিৎকার শোনা গেলো।মৃথিলার আওয়াজ টা উপর থেকে নিচে দিকে যাচ্ছে।সাথে সাথে কারেন্ট চলে আসলো।কেউ ধাক্কা মেরেছে মৃথিলাকে।মৃথিলা গড়াতে গড়াতে দুই তলা পর্যন্ত চলে গিয়েছে।ধাক্কাটা খুব জোরের সাথেই দেওয়া হয়েছে।মাথা ফেটে র*ক্তা*ক্ত অবস্থা। মৃথিলাকে এভাবে পড়তে দেখে সবাই চমকে গেলো।
চলবে?..
(সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ।)