#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২১
#writer_Mousumi_Akter
মৃথিলার চিৎকারে সবাই কেঁপে উঠলো।মৃথিলার কন্ঠে ছিলো ভয়ানক আর্তনাদ আর যন্ত্রণা।সবাই মৃথিলার চিৎকারে আচমকাই মৃথিলার দিকে তাকালো।সবার কাছে এটা ছিলো ভীষণ বড় ধাক্কার মতো।মৃথিলার সেন্স আছে কিনা তার ঠিক নেই।নিরবের কানে মৃথিলার চিৎকার যেতেই নিরব নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে তুফানের গতিবেগে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো।হুমড়ি খেয়ে পড়েও গেলো উপুর হয়ে।কপালের কোনা কেটে র*ক্ত বেরোলো সাথে সাথে।নিরবের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
নিজের ব্যাথার কোনো অনুভূতি ই হচ্ছে না নিরবের।ভ*য় ডর ব্যাথা সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে নিরব আবার উঠে দাঁড়ালো দ্রুত গতিবেগে।আবার ও বিদ্যুতের গতিতে ছুটে গেলো মৃথিলার কাছে।মৃথিলা র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেন্সলেস হয়ে দুই তলার সিঁড়িতে।মাথা ফেটে খুব ই ভয়ানক অবস্থা মৃথিলার।ঠোঁট কপাল কেটে গিয়েছে, মাথার পেছনে আঘাত খেয়ে মাথা ফেটে র*ক্ত বেরোচ্ছে।পুরো মুখশ্রী র*ক্তা*ক্ত।নিরবের বুকে যেনো কেউ ধারালো অস্ত্র বসিয়ে দিয়েছে তেমন ই বিষাক্ত তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে নিরবের।সুপ্তি মৃথিলার নাম ধরে চিৎকার দিয়ে নিচে নামলো।
শাড়ির আঁচল সিঁড়ি দিয়ে টানতে টানতে যচ্ছে।মৃথিলাকে এভাবে দেখে সুপ্তির মাথা ঠিক নেই।মৃথিলার ভালো থাকার জন্য ছায়ার মতো মৃথিলার পাশে পাশে থেকেছে সুপ্তি।মৃথিলা শুধুই তার বেষ্ট ফ্রেন্ড না নিজের বোন।মৃথিলা মানেই সুপ্তির কাছে এক আকাশ ভালবাসা।মৃথিলার সুখের জন্য নিজের জীবনের সব কিছু ত্যাগ করতেও দু’বার ভাববে না সুপ্তি।মৃথিলা সুপ্তির জীবনের অনেক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।মৃথিলার জন্য পৃথিবীর সবার সাথে যু*দ্ধ করতে পারে সুপ্তি।
আজ সেই মৃথিলার এমন অবস্থা দেখে সুপ্তি নিজেই প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে।দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো আর মৃথিলার কাছে গিয়ে ধপ করে বসে পড়লো।নিরব মৃথিলার মাথার পেছনে হাত রাখলো।নিরবের হাত র*ক্তে ভরে গিয়েছে।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে নিরব আরো চমকে গেলো।এত র*ক্ত বেরোচ্ছে দেখে নিরব আরো বেশী ভয় পেয়ে গেলো।মৃথিলার কিছু হবেনাতো এই একটা ভয় হঠাত করে নিরবের ভেতরে আতঙ্কের সৃষ্টি করলো।মৃথিলাকে তার অনেক কিছু বলার বাকি আছে।না বলা অনেক কথা জমিয়ে রেখেছে মৃথিলার জন্য।নিরব মাথা ঝাড়া দিয়ে ভাবে এসব সে কি অনুক্ষণে কথা ভাবছে।মৃথিলার কি হবে,কিছুই হবেনা।নিরব আলতো করে মৃথিলার মুখে হাত রাখলো।কোনো রেসপন্স নেই মৃথিলার।নিরব মৃথিলার মুখ ধরে ঝাঁকি দিয়ে মৃথিলাকে ডাকছে বারবার।
‘মৃথিলা চোখ খোলো প্লিজ।এ, এই মেয়ে এভাবে চোখ বন্ধ করে আছো কেনো?এই মৃথিলা তুমি শুনতে পাচ্ছো।আ আমি তোমাকে ডাকছি।মৃথিলা তুমি কি শুনতে পাচ্ছো আমার কথা।প্লিজ ওঠো,তোমাকে উঠতেই হবে আমার জন্য।’
নিরবের চোখ অশ্রুসিক্ত।উন্মা*দের মতো মৃথিলাকে ডেকে চলেছে।
সুপ্তি কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।সুপ্তির হাউমাউ করে কাঁন্না পাচ্ছে।হাউমাউ করে কাঁদছে আর মৃথিলাকে ডাকছে,
‘এই মিথু ওঠ না প্লিজ।তোর কি হলো।কিভাবে হলো।মি’মিথু তোর কিছু হলে আমি কি করবো।আমার কি হবে।মিথু আমি কেনো এই আঘাত টা পেলাম না। আমি তো সব সময় আল্লাহর কাছে বলি সব কষ্ট আমার দিও আল্লাহ তবুও মিথুকে তুমি ভালো রেখো।কেনো তোর সাথেই বারবার এমন হয়।সব বিপদ কেনো তোর হয়।আমি কেনো চেষ্টা করেও তোকে ভালো রাখতে পারছি না।আর কতবার হেরে যাবো আমি।’
রিফাত সুপ্তির অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।একটা মেয়ে কতটা ভালো হলে নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড এর জন্য এতটা পা*গ*লা*মো করতে পারে।সারাজীবন মেয়েদের হিংসুটে রূপ দেখেছে রিফাত।কিন্তু এই প্রথম কোনো মেয়েকে অন্য একটা মেয়েকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে দেখছে।নিরবের প্রতি তার যেমন ভালবাসা মৃথিলার প্রতি সুপ্তির ও তেমন ই ভালবাসা।বরং সুপ্তির ভালবাসা যেনো একটু বেশী পিওর।রিফাতের মনে হচ্ছে নিরব আর সুপ্তির ভালো থাকার জন্য হলেও তাকে মৃথিলাকে বাঁচাতে হবে।রিফাত বুঝে গিয়েছে একমাত্র মৃথিলা ভালো থাকলেই সুপ্তি আর নিরব ভালো থাকবে।সুপ্তি আর নিরব তার দুটো কিডনীর সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মাথা ঠিক নেই নিরবের কি করবে বুঝতে পারছে না।চিৎকার দিয়ে দিয়ে মৃথিলাকে ডাকছে। এর ই মাঝে মৃথিলার নিঃশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে।সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।উপর থেকে নিরা, নবনিতা,রিফাত,ইসহাক হাসান,ইরিনা হাসান সবাই নেমে এসেছে।সবাই মৃথিলাকে ডাকাডাকি করছে।কিন্তু মৃথিলার কোনো হুঁশ নেই।চারদিকে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।কে কি ভাববে সেসব ভাবার সময় নেই নিরবের।তার এখন মৃথিলাকে বাঁচাতেই হবে।মৃথিলার মুখে মুখ লাগিয়ে ফু দিচ্ছে নিরব।যাতে একটু অক্সিজেন পায় মৃথিলা।নিরব ক্রমাগত ফু দিয়েই যাচ্ছে।কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না।আধম*রা অবস্থা মৃথিলার।
ইরিনা হাসান বলে উঠলো,
‘মৃথিলার বাচ্চার কিছু হবেনাতো।বাচ্চা ঠিক থাকবেতো।যেভাবেই হোক বাচ্চাটাকে বাঁচা নিরব।’
নিরব মায়ের দিকে তাকালো আর বিরক্ত হয়েই বললো,
‘মৃথিলাকে না বাঁচিয়েই কি বাচ্চাকে বাঁচাবো মা?’
নিরা বললো,
‘মা ভাবির অবস্থা ই ভালো না,এখন তুমি বাচ্চার চিন্তা করছো।আগে ভাবির জীবন পরে বাচ্চা।’
ইসহাক হাসান কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো ইরিনা হাসানের দিকে।কেননা এখন কি মৃথিলার থেকে বাচ্চার গুরুত্ব বেশী।ইরিনা হাসান বুঝতে পারলেন তার এ সময়ে এমন প্রশ্ন করা উচিত হয়নি।নিরা কেঁদেই যাচ্ছে একভাবে।মৃথিলা এ বাড়িতে আসার পর থেকে নিরা তাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছে।নিরার কাঁন্না কেউ থামাতে পারছে না।
এরই মাঝে রিফাত এম্বুলেন্স কে ফোন দিয়েছিলো।এম্বুলেন্স চলে এসছে।নিরব মৃথিলাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত এম্বুলেন্স এ উঠে গেলো।সাথে ফ্যামিলির সবাই গেলো হসপিটালে।মৃথিলার নাকে অক্সিজেন দেওয়া।এম্বুলেন্স এ বসেই সুপ্তি মৃথিলার মাথায় হাত বুলোচ্ছে আর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁদছে।
রিফাত সুপ্তির একটা হাত ধরে বললো,
‘এই ভালবাসা এইভাবে মাঝপথে থেমে যাবে না সুপ্তি।প্লিজ আর কেঁদোনা
মৃথিলার কিছু হবেনা।’
‘মিথুর কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা আমি।আমি মিথুর সারাজীবন পাশে থাকার ওয়াদা করেছি।আমার চোখের সামনে ও কিভাবে পড়ে গেলো আমি টের ই পেলাম না।’
‘মৃথিলার কিছুই হবেনা সুপ্তি দেখে নিও।’
নিরা কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
‘ভাবি আমি আর কোনদিন জন্মদিন পালন করবোনা।তোমার কিছু হলে সব দোষ আমার।আমার জন্য আজ তুমি এমন একটা বিপদে পড়েছো।’
সুপ্তি বললো,
‘নিশ্চয় ওই নবনিতা আমার মিথুকে ধাক্কা দিয়েছে।আমি নবনিতাকে খু*ন করে ফেলবো।আমার হাত থেকে নবনিতা বাঁ★চ★বে না নিরা।’
রিফাত বললো,
‘শান্ত হও সুপ্তি।আগে মৃথিলা সুস্থ হোক।কে কি করেছে বের হয়ে যাবে।’
নিরব কিছুই বলছে না।
সে শুধু মৃথিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কারো কোনো কথা নিরবের কান ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌছাচ্ছেনা।নিরব শুধু আল্লাহর কাছে মৃথিলার আয়ু ভিক্ষা চাচ্ছে।এম্বুলেন্স এর মাঝে নিরব মৃথিলার একটা হাত তার দু’হাতের মুঠোয় নিলো।মনে মনে বলছে,
‘আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মৃথিলা।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।দম যেনো আটকে আসছে।চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারছি না।আমার জীবনের একমাত্র প্রদীপ তুমি।যে প্রতিদিন ই একটু একটু করে আলো ছড়াচ্ছো আমার জীবনে।তুমি ছাড়া আলোবিহীন আন্ধকার জীবনে হারিয়ে যাবো আমি।তোমার কিছু হলে আমার কি হবে।আমি তো ভাবতেই পারছি না নেগেটিভ কিছু। ধীরে ধীরে তুমি আমার জীবনে বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে গিয়েছো।তাই একটা কথা মাথায় রেখো তুমি ছাড়া একটা সেকেন্ড ও বাঁচা সম্ভব নয়।তুমি কে?তোমার ঠিকানা কি?তোমার ফ্যামিলি,কিছুই জানতে চাইনি কখনো।আমার সেসব ইচ্ছা ও হয়নি।কারণ তোমাকে ভালবাসি আমি শুধু তুমিই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।’
এম্বুলেন্স এসে হাসপাতালের সামনে থামলো।নিরব মৃথিলাকে কোলে করে হসপিটালের ভেতর প্রবেশ করলো।রিফাত দ্রুত ডাক্তার কে ডেকে বললো মৃথিলাকে চিকিৎসা করতে।মৃথিলাকে ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।সাধারণ চিকিৎসা চলছে,ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করছেন। নিরব মুখে হাত দিয়ে চিন্তিত ভাবে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।নিরব চাইছে এক্ষুনি যেনো মৃথিলা উঠে বসে আর এক্ষুনি সেই মৃদু হাসি টা দেয়।যে হাসি দেখে নিরবের সকাল শুরু হয় আর রাতের ঘুম হয়।ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিলেন আর নার্সদের বললেন,এখনি বেডে শিফট করো কুইক ।প্রচুর রক্তক্ষরন হয়েছে।এক্ষুনি রক্ত দিতে হবে।
নিরব ডাক্তারের দিকে করুণ নয়নে তাকিয়ে বললো,
‘ও ঠিক আছে তো?’
‘আপনি?’
‘ওর হাজবেন্ড।’
‘আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।প্লিজ ডোনার খুজে আনুন। ‘
সুপ্তি বললো,
‘আমি দিবো র*ক্ত।আমাদের দুজনের ই ও পজেটিভ।যত লাগে নিন।’
ডাক্তার বললো,
‘তোমরা কি দুই বোন।’
সুপ্তি এক বাক্য বললো,
‘হ্যাঁ স্যার।’
রিফাত আবার ও সুপ্তির ভালবাসা নিঁখুত ভালবাসা দেখলো।একটুও দ্বিধা ছাড়া বলে দিলো আপন বোন।এই মেয়েকেই আমার লাগবে।যে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে এতটা ভালবাসে নিশ্চয়ই আমাকেও ততটায় ভালবাসবে।রিফাতের এক্ষুনি সুপ্তিকে মনের কথা বলতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু সিসুয়েশন এখন ঠিক নেই।
মৃথিলার অবস্থা ভালো না কেবিনে শিফট করানো হয়েছে।সুপ্তির শরীর থেকে রক্ত নিয়ে মৃথিলাকে দেওয়া হচ্ছে।ক্রমশ মৃথিলার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ইরিনা হাসান বাচ্চার জন্য চিন্তা করছে।তার একটায় চিন্তা তার ছোট ছেলের অস্তিত্ব মৃথিলার পেটে।কিন্তু কাউকে বলতে সাহস পাচ্ছে না।ইসহাক হাসান ও দৌড়াদৌড়ি করছে,ডক্তারদের সাথে কথা বলছে।কিছুক্ষণের মাঝেই আই.সি.ইউ তে রাখা হলো মৃথিলাকে।কেননা অবস্থা ক্রমশ আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।ভেতরে নার্স আর ডাক্তার ছাড়া কেউ নেই।আই. সি.ইউ এর বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে।নিরব চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে কখন ডাক্তার দরজা খুলবে।কিছুক্ষণের মাঝেই ডাক্তার দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো।নিরব দরজায় ই ছিলো।ডাক্তার বেরোনোর সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে নিরব আবার ও ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
‘ও ঠিক হবেতো স্যার।’
ডাক্তার চিন্তিত ভাবে বললো,
‘এত ভয়াবহ ভাবে আঘাত টা কিভাবে পেলো।আল্লাহ কে ডাকুন।মেয়েটার অবস্থা ভালো না।মাথার পেছনের আঘাত টা অনেক বেশী মারাত্মক হয়ে গিয়েছে।প্রচুর র*ক্ত*ক্ষরণ হয়েছে।আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
নিরব ডাক্তারের হাত ধরে ভিখারীর মতো কাকুতি মিনতি করে মলিন কন্ঠে বললো,
‘প্লিজ স্যার!ওকে সুস্থ করে তুলুন। ওকে বাঁচাতেই হবে স্যার।যত টাকা লাগে যত যা লাগে আমি দিবো স্যার।যদি জীবন ট্রান্সফার করা যেতোনা স্যার আমি এক্ষনি আপনার হাতে আমার জীবন টা দি*য়ে বলতাম ওর শরীরে প্রতিস্থাপন করে দিন।’
জীবনে প্রথমবার ডাক্তার এমন কথা শুনলো।নিরবের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
‘আল্লাহ কে ডাকুন,আপনার ওয়াইফ সুস্থ হয়ে যাবে।এমন ভালবাসা দেখতেও খুব ভালো লাগে।’
ইরিনা হাসান এগিয়ে এসে বললেন,
‘বাচ্চাটা ঠিক আছেতো স্যার।ওর পেটে আমার ছেলের সন্তান ছিলো।’
‘এত বড় আঘাতের পর কিভাবে আশা করেন বাচ্চাটা থাকবে।বাচ্চাটা নেই।’
ইরিনা হাসান খুব জোরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বলেন,
‘আমার ছেলের শেষ স্মৃতি ছিলো।সেটাও আর রক্ষা হলো না।’
‘আপনি এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ।আপনার বৌমা বেঁচে থাকলে কি সন্তানের অভাব হবে।আল্লাহ দিলে আবার ও হবে।এখন ওর জন্য দোয়া করুণ।’
ইসহাক হাসানের শরীর ভালো না।নিরব এক প্রকার জোর করেই ইরিনা হাসান আর ইসহাক হাসান কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।নিরা জোর করে থেকেই গিয়েছে।মৃথিলাকে ছেড়ে সে যাবে না।
হসপিটালের বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি।র*ক্ত দিয়ে মাথার মাঝে কেমন চক্কর দিচ্ছে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে সুপ্তির।মৃথিলা ঠিক হবেতো শুধুমাত্র এই চিন্তা সুপ্তির।আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাচ্ছে সুপ্তি।পাশে গিয়ে রিফাত দাঁড়ালো।রিফাতের উপস্হিতি বুঝতে পেরে সুপ্তি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলো।
রিফাত সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘চোখের পানি মুছলেই কি মনের পানি মোছা যায়।তোমার মন কাঁদছে আমি দেখতে পাচ্ছি।’
কাঁন্নাভেজা কন্ঠে সুপ্তি বললো,
‘মৃথিলার জীবনে এমন ভয়ংকর দিন আসবে আমি ভাবতে পারি নি।আমি মৃথিলা ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছি না।’
রিফাত সুপ্তির চোখের পানি মুছে দিলো নিজ হাত দিয়ে আর বললো,
‘মৃথিলার কিচ্ছু হবেনা ন্যাচারাল সুন্দরী। তুমি আর কেঁদো না।মৃথিলা কি জানে তাকে তুমি এত ভালোবাসো।’
‘মৃথিলা না জানুক আমার দুঃখ নেই।ভালবাসা কি মাইকিং করার বিষয়। আমি যেনো সারাজীবন ওর বিপদে আপদে ওর সমস্যায় ওর পাশে থাকতে পারি।এটাই আমার প্রকাশ ভালবাসার।’
‘মৃথিলা সত্যি লাকি,তোমার এমন ভালবাসা পাওয়া ভাগ্যর ব্যাপার।’
‘আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়।ওর দুঃখ, কষ্ট বোঝার মতো ও কেউ নেই।জানেন ওর জীবন টায় একটা দুঃখের সাগর।’
‘আরো একজন আছে যে তোমার মতোই মৃথিলাকে ভালবাসে।’
‘কে নিরব ভাইয়া?’
‘হ্যাঁ নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছো?কি কঠিন ছেলেটা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।নিরবের জীবনের প্রথম নারী মৃথিলা যাকে নিরব দেখামাত্র ভালবেসে ফেলেছে।কত মেয়ে নিরবের সাথে রিলেশন করতে চাইতো কিন্তু নিরব কখনো ওসবে পাত্তা দেয় নি।নিরব সব সময় ইনোসেন্ট সরল মেয়ে পছন্দ করতো।এইজন্য মৃথিলার সরলতা নিরব কে দূর্বল করে ফেলেছে।নিরব এখন মৃথিলার জন্য হাসতে হাসতে জীবন ও দিয়ে দি*তে পারবে।’
‘আপনি কারো সাথে রিলেশন করেন নি।’
‘অনেক! গুনে রাখিনি।’
সুপ্তির বোধহয় জেলাস হলো।রিফাতের দিকে একটু রাগি চোখে তাকিয়ে হাঁটা দিলো হন হন করে।
রিফাত অবাক হয়ে গেলো সুপ্তির এমন কান্ডে। সুপ্তির পেছনে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
‘কি হলো তোমার।ওভাবে হাঁটা দিলে ক্যানো?’
বিরক্ত কন্ঠে সুপ্তি উত্তর দিলো,
‘কিছুনা এমনি।’
‘শরীর খারাপ লাগছে?’
‘দেখুন এখন মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে।আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না এখন।আসলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।মানুষ এইজন্য ই বলে পুলিশদের চরিত্রের ঠিক নেই।ঘুষ খেয়ে পেট মোটা দের এইজন্য মানুষ ভালো বলেনা।’
রিফাত ভ্যাবাচেকা খেলো সুপ্তির কথা শুনে।নিজের পেটের দিকে তাকালো।তার তো পেট মোটা না।
নিরা সামনেই দাঁড়ানো ছিলো।
নিরা বললো,
‘কি হয়েছে সুপ্তি আপু, রিফাত ভাইয়া কিছু বলেছে।’
রিফাত বললো,
‘কিছুই বলিনি রে বোন।তোদের মেয়েদের মন বোঝা সোজা নয়।খাবার আনতে যাচ্ছি দুজনে খেয়ে নিস।সকাল হতে হতেই মৃথিলা সুস্থ হয়ে যাবে।’
ভোর হতে চলেছে মৃথিলার জ্ঞান ফেরে নি।সবাই জেগে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই।শুধু ঘুম নেই নিরবের দু’চোখে।নিরব সারারাত আল্লাহ কে ডেকেছে। মৃথিলার সুস্থতার জন্য দোয়া করেছে।নিরবের মন জানে মৃথিলা সুস্থ হয়ে যাবে।কিন্তু যদি এর বিপরিত হয়।মৃথিলার মায়াভরা মুখটা বারবার ভেষে উঠছে নিরবের দু’চোখের পাতায়।নিরব তাহাজ্জুদ পড়ে ডাক্তারের পারমিশন নিয়ে মৃথিলার কাছে গেলো।একটা টুল নিয়ে মৃথিলার হাত ধরলো।টপ টপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পড়লো মৃথিলার হাতের উপর।প্রিয় মানুষ টার হাত ধরে একান্তে কাঁদছে আর বলছে,
‘প্লিজ মৃথিলা ওঠো।তোমাকে উঠতেই হবে।তোমাকে অনেক কিছু বলার বাকি আমার। অনেক পথ চলার বাকি আমাদের।আমার এই না বলা কথা গুলো তোমাকে শুনতেই হবে।ভালবাসি তোমাকে আমি মৃথিলা।তোমার সামান্য কলঙ্ক আমাকে আটকাতে পারেনি তোমাকে ভালবাসতে।বরং আমার মনে হয়েছে তোমাকেই ভালবাসা উচিত আমার।যার একটু কলঙ্ক আছে, রাতের পর রাত যে মেয়েটা ঘুমোয় নি তার প্রেমিক হয়ে তার কলঙ্ক মুছে তার চোখে ঘুম এনে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে সঠিক প্রেমিক হতে চেয়েছি আমি।ভালবাসার ছোঁয়ায় তোমাকে আগলে রাখতে চেয়েছি।কিন্তু তোমাকে বলা হয়নি এখনো ভালবাসি।ভেবেছিলাম আমাদের যাত্রা দীর্ঘ হবে,দীর্ঘ যাত্রায় একদিন তোমার মন জিতে নিতে পারবো আমি আর সেদিন ই বলবো তোমাকে ভালবাসি।কিন্তু তার আগেই তো তুমি ছেড়ে যাবার ভয় দেখাচ্ছো।প্লিজ ওঠো মৃথিলা।আমি তোমার পারফেক্ট প্রেমিক হতে চাই।তোমার জীবন বসন্তের ছোঁয়ায় রঙিন করতে চাই।কিন্তু আমাদের তো প্রেমটায় হলো না।আমাদের অনেক কিছুই এখনো বাকি মৃথিলা।ফুলে সাজানো নৌকায় তোমার কোলে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাস বাকি, সমুদ্রের পাড়ে তোমার হাত ধরে সমুদ্রে পা ভিজিয়ে সমুদ্রবিলাস বাকি আমাদের,কড়া রোদে ঘাম মাখা শরীরে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া এনে ক্লান্ত শরীরে ভালবাসি বলা বাকি এখনো,বর্ষায় এক গুচ্ছ কদম হাতে নিয়ে বৃষ্টিবিলাস বাকি এখনো।ঝুম বৃষ্টিতে পাতলা কাঁথার নিচে আমার বুকে মাথা রেখে প্রেমবর্ষণ বাকি আমাদের।কারণে অকারণে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ ভালবাসি প্রিয়দর্শিনী বলা বাকি এখনো।কপালের এলোমেলো টিপ ঠিক করে দেওয়ার বাহানায় তোমাকে ছোঁয়া বাকি এখনো।মধ্যরাতে পিজঢালা রাস্তায় তোমা হাত ধরে ভালবাসার গান শোনানো বাকি আমাদের।এমন হাজারো অনুভূতি বাকি আমাদের।কিছুই তো শুরু হলো না মৃথিলা তার আগেই কেনো চুপ হয়ে গেলে। তুমি একবার ঠিক হয়ে যাও আমি প্রতিটা দিন তোমাকে এক একটি ভালবাসার দিন উপহার দিবো।তুমি আমার জীবনের প্রথম নারী যাকে আমি আমার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে ভালবেসেছি।আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি বোঝাতে পারবো না।আমার সমস্ত অনুভব জুড়ে তুমি।এই ছেলেটা তুমি ছাড়া ভীষণ অসহায়।তোমার জন্য শান্ত হয়ে যেতে পারি তোমার জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারি।মানুষ আমাকে পা*গ*ল বলুক উন্মাদ বলুক মাথা খারাপ বলুক তবুও তোমার পিছু ছাড়বোনা।
বিকজ আই লাভ ইউ।
চলবে?
(কষ্ট করে একটু রেসপন্স করবেন সবাই।)