#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২৪
#writer_Mousumi_Akter
নিরবের জামা কাপড় ভাজ করে করে ড্রায়ারে রাখছে মৃথিলা।এক কুড়ি শার্ট আর গেঞ্জির মাঝে কালো ছাড়া কোনো শার্ট বা গেঞ্জি মৃথিলার চোখে পড়লো না।এত কালো কাপড় দেখে মৃথিলা বাকরুদ্ধ।মানে একটা ছেলে এত একঘেয়েমি পোশাক কিভাবে পরতে পারে।নিরা কানে হেডফোন দিয়ে নাচতে নাচতে মৃথিলার রুমে প্রবেশ করলো।মৃথিলাকে কাপড় ভাজ করতে দেখে নিরা বললো,
‘ভাবি তুমি কাজ করছো?’
মৃথিলা মৃদু হেসে বললো,
‘এ আর কি কাজ, এটুকু আমি পারি করতে।’
নিরা ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে বললো,
‘হুম’
‘নিরা তোমার দাদা ভাই বলছে সে নাকি বাসা নিবে।তুমি বলোতো আমি কি তোমাদের ছেড়ে বাসায় থাকতে পারি কখনো।’
‘হুম।’
‘শোনো গেলে সবাই যাবো বুঝলে।’
‘হুম।’
‘তোমার দাদাভাই আমার জন্য দুইটা শাড়ি এনেছে দেখোতো কেমন হয়েছে।’
‘হুম।’
মৃথিলা ভ্রু কুচকে নিরার দিকে তাকালো।মৃথিলা খেয়াল করলো নিরা তার একটা কথাও না শুনে শুধু হুম হুম বলে গিয়েছে।মৃথিলা খেয়াল করলো নিরার ঠোঁটের কোনে অন্যরকম হাসি।যে হাসিতে আছে কিছুটা লজ্জা,কিছুটা অনুভূতি। নিরবের কথা একাকি ভেবে মৃথিলা যেভাবে হাসে নিরার ঠোঁটের কোনেও হুবহু সেইম হাসি।মৃথিলার বুঝতে বাকি রইলো না নিরা কারো প্রেমে পড়েছে।আর তার সাথেই মেসেজে মনোযোগ রেখে মৃথিলার কথার উত্তর দিচ্ছে।মৃথিলা গুটি গুটি পায়ে নিরার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে দৌড় দিলো।মিনিটের মাঝে রোমান্টিক মেসেজ গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলো মৃথিলা।নিরা তীব্র গতিতে মৃথিলার পিছু ছুটলো।মৃথিলা এক লাফে বিছানায় উঠলো।নিরা ও সাথে সাথে বিছানায় উঠলো।মৃথিলা ফোন উঁচু করে ধরে রেখেছে আর নিরা ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে।খাটের উপর দুজনে লাফালাফি করাতে শব্দ হচ্ছে। শব্দ শুনে নিরব বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করলো।ঘরে প্রবেশ করে দেখলো নিরা আর মৃথিলা দুজনে লাফালাফি করছে।নিরব তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘আরে কি হয়েছে দুজনের হাডুডু খেলা নাকি।’
মৃথিলা নিরবের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
‘এই আপনার এখানে কি হ্যাঁ। আমাদের ননদ ভাবির সিক্রেট ম্যাটারে আপনি কেনো?যান এখান থেকে আগে। ‘
নিরব হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নিরা লাজুক কন্ঠে বললো,
‘ভাবি দাও না প্লিজ ফোনটা।’
‘আগে বলো ছেলেটা কে?’
‘ওর নাম নিলয়।’
‘হসপিটালের নিলয়,যে আমাকে রোজ দেখতে যেতো।’
‘হুম ভাবি।’
‘আমি হসপিটাল থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম।তবে শোনো নিরা কাউকে হুট করে বিশ্বাস করে ভুল করো না কিন্তু আমার মতো।’
‘ভাবি সমস্যা এখানেই আমরা খারাপের জন্য ভালোকে চিনতে পারিনা।নিলয় খুব ভালো ভাবি।’
‘ভালো হলে কোনো চিন্তা ই নেই।তবে আমি আগে কথা বলবো কিন্তু।আর শোনো তুমি কিন্তু খুব ছোট এখন তাই আগে লেখাপড়া।’
‘প্রেম আর ঘুম বলে কয়ে আসেনা ভাবি।’
নিরা আর মৃথিলা দুজনেই হাসছে আর নিলয় কে নিয়ে গল্প করছে।
মৃথিলা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। মৃথিলাকে শান্তির নীড়ে আনা হয়েছে।হসপিটালে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকে নিরব মৃথিলাকে এক বিন্দু ও চোখের সামনে থেকে সরতে দিচ্ছেনা।কেটে গিয়েছে আরো সাতটা দিন।সকাল ছয়টা বাজে মৃথিলা ঘুম থেকে উঠেই দেখলো নিরব বিছানায় নেই
,বেলকনিতে ফোনে কথা বলছে।ঘরের মধ্য যেনো পিনঃপতন নিরবতা ফ্যান ও অফ আছে।নিরব বেলকনি থেকে উঁকি মেরে দেখলো মৃথিলা উঠে পড়েছে।নিরব রুমে প্রবেশ করে মৃথিলা ফোলা চোখ আত এলোমেলো চুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘শুভ সকাল।’
মৃথিলা মৃদু হেসে নিরবের দিকে তাকালো।নিরব ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে মৃথিলার হাতে দিয়ে বললো,
‘তোমাকে কিছু বলতে চাই আজ।’
‘কি কথা বলুন।’
‘এখন না রাতে।’
‘গত রাতে বললেন না কেনো?’
‘চেষ্টা করে পারিনি বলতে।’
‘আচ্ছা সেই স্পেশাল কথাটা কি ছিলো’
‘তুমি যদি বুঝে নিতে খুব ভালো হতো।’
‘কি বুঝে নিবো।’
‘না বলা অনুভূতি গুলো।’
‘আপনার মনের কথা আমি কিভাবে বুঝবো বলুন তো।’
‘আমি বললে বুঝবে তো।’
‘কেনো বুঝবো না।’
মৃথিলার খুব রাগ হচ্ছে মনে মনে।কেনো নিরব তাকে স্পষ্ট করে বলছে না সে মৃথিলাকে ভালবাসে।এটা বলতে এত টাইম লাগে বুঝি।এর ই মাঝে নিরবের ফোন বেজে উঠলো।নিরবের কাছে বার বার ফোন আসছে।নিরব ফোন নিয়ে বার বার বেলকনিতে যাচ্ছে আর আসছে।মৃথিলা বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।কিন্তু কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছেনা।মৃথিলা ধীর পায়ে বেলকনিতে গিয়ে নিরব কে বললো,
‘অফিসে যাবেন না।’
‘না।’
‘আজ ডিউটি নেই।’
‘আছে?’
‘যাবেন না কেনো?’
‘তোমাকে একা রেখে যাবো না আমি।’
‘এমন হলে কি চাকরি থাকবে আপনার?’
‘না থাকুক কোনো সমস্যা নেই।আমি তোমাকে রেখে কোথাও যেতে পারবো না।’
‘তাহলে কি করবেন?এভাবে ঘরে বসে থাকবেন।’
‘বাসা নিয়েছি, তোমাকে নিয়ে বাসায় চলে যাবো।’
‘মানে আমি ফ্যামিলি রেখে আপনার কাছে গিয়ে থাকবো।ছিঃছি এ আমি পারবো না।’
‘তোমার ফ্যামিলি মানেই আমি, আর আমি তোমাকে যেখানে নিয়ে যাবো তোমাকে সেখানেই যেতে হবে।’
‘মা বাবা কি ভাববেন?’
‘কিছুই ভাববেন না।’
‘আমি একা থাকতে পারবো না। ‘
‘তাহলে কি বাচ্চা লাগবে?’
হঠাত নিরবের মুখে এমন কথা শুনে মৃথিলা চোখ বড় বড় করে নিরবের দিকে তাকালো।কেমন যেনো থমকে গেলো।
লজ্জায় নাকের ডগা লালচে হয়ে গেলো।ঠোঁট দিয়ে বারবার জিভ ভেজাচ্ছে।এদিক সেদিক তাকাচ্ছে বারবার।কিন্তু চোখ বারবার নিরবের দিকে চলে যাচ্ছে।নিরবের দিকে চোখ যেতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো। সাংঘাতিক লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো দ্রুত পায়ে।নিরব ও তাল সামলাতে না পেরে বলে ফেলেছে।এখন নিরবের ই লজ্জা লাগছে।নিরব মাথার পেছনের চুলে হাত দিয়ে চুলকাচ্ছে নিচু হয়ে আর মৃথিলার লজ্জামিশ্রিত মুখের কথা ভাবছে।
ডায়নিং এ সকালের নাস্তা খেতে বাড়ির সবাই উপস্হিত।নিরব খাবার টেবিলে কথা তুললো,
‘আমি মৃথিলাকে নিয়ে বাসায় চলে যাবো।মৃথিলার এখানে লাইফ রিস্ক।’
ইসহাক হাসান বলল,
‘সেটাই ভালো হবে বাবা।আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে মৃথিলাকে দেখে আসবো।’
নিরা বলল,
‘আমিও ভাবির সাথে গিয়ে থাকব।’
ইরিনা হাসান বলল,
‘না নিরা ওদের নিজেদের একটু সময় কাটানোর প্রয়োজন।তুমি লেখাপড়া রেখে ওদের মাঝে গিয়ে বিরক্ত করবে কেনো?’
মৃথিলা বললো,
‘নিরা না গেলে আমিও যাবো না মা।’
ইসহাক হাসান বললো,
‘নিরা কিছুদিন পরে যাবে মা।তোমরা যাও।
আরিফা ব্যাগ গুছিয়ে রাখবি তুই ও যাবি ওদের সাথে।মৃথিলার কাজে সাহায্য করবি।’
‘জ্বী আইচ্ছা। ‘
বিকালেই নিরব মৃথিলাকে নিয়ে তার অফিসের পাশে নেওয়া বাসাতে পৌছে গেলো।এখন নিরবের রিল্যাক্স লাগছে।চারদিকে পুলিশ এরিয়া এখানে মৃথিলার আশে পাশেও কেউ আসতে পারবেনা।
–সুপ্তি বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে হাঁটছে। আলুর পরিমান একটু বেশী কেনায় ব্যাগ টা একটু বেশী ভারী হয়ে গিয়েছে।ব্যাগ টা ক্যারি করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার।কয়েক পা যাচ্ছে আবার ব্যাগ টা রেখে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে।ঘেমে মুখটা কেমন একাকার হয়ে গিয়েছে।ওড়না দিয়ে মুখ মুছে রাস্তার পাশে থাকা টিউবওয়েল থেকে পানি খাচ্ছে সুপ্তি।কল টা বেশ শক্ত চাপতেও কষ্ট হচ্ছে।এমন সময় হেলমেট মাথায় রিফাত এসে কলের হাতল ধরলো।সুপ্তি ক্লান্ত চোখে রিফাতের দিকে তাকালো।হেলমেট পরা থাকলেও রিফাত কে চিনতে সুপ্তির ভুল হলোনা।যে কয়দিনের পরিচয় তাতে অসংখ্যবার সুপ্তি রিফাত কে এই রাস্তায় এই একই বেশে দেখেছে।সুপ্তির এলাকায় যেকোনো বাহানায় রিফাত প্রবেশ করে আর সুপ্তির সাথে দেখা হলেই বলে এইদিকে পাচারকারীদের খুজতে এসছি।এসব ই বাহানা মাত্রা সব ই সুপ্তি কে দেখার অজুহাত।রিফাতের দু’চোখ সুপ্তি এখন পড়তে পারে।কিন্তু সুপ্তি ভীষণ সাবধনতায় রিফাত কে এড়িয়ে যায়।
রিফাত কল চাপ দিতেই কলকল করে পানি বের হলো।সুপ্তি তাকিয়ে আছে রিফাতের দিকে।রিফাত চোখ ইশারা দিয়ে বললো,
‘নাও পানি খাও।’
সুপ্তি পানি না খেয়ে আগে প্রশ্ন করলো, ‘স্যার আপনি এখানে?’
যদিও সুপ্তি জানে রিফাতের উত্তর টা কি হবে।এই উত্তর টা তার মুখস্থ। সুপ্তি রিফাতের উত্তরের অপেক্ষায় আছে।কিন্তু আজ সুপ্তিকে অবাক করে দিয়ে বললো,
‘উত্তর টা তো তোমার জানা ই আছে মিস ন্যাচারাল সুন্দরী। ‘
সুপ্তি পানি খেয়ে নিয়ে মুখে পানি দিয়ে বললো,
‘ওহ!পাচারকারীদের সন্ধানে এসছেন।’
রিফাত হেলমেট খুলে এলোমেলো চুলে হাত চালিয়ে বললো,
‘না। ‘
‘তাহলে?’
‘অন্য কারণ।আর সেটাও তুমি জানো।’
‘কি কারণ স্যার।’
‘আমি তোমার জন্য এসছি।আর এখনো পর্যন্ত যতবার এসছি ততবার ই তোমার জন্য ই এসছি।’
‘স্যার এসব কি বলছেন।’
‘একটুও নাটক করবেনা তুমি।কি লাভ পাচ্ছো আমাকে কষ্ট দিয়ে সুপ্তি।তুমি সব বোঝো।তুমি প্রথম থেকেই বোঝো আমি তোমাকে পছন্দ করি কিন্তু সাবধানতার সাথে এড়িয়ে যাচ্ছো।মেয়েদের কেউ ফলো করলে বুঝতে পারে না এটা অন্তত বোলো না।’
রিফাত এর বুক ধড়ফড় করছে।খুব ব্যাস্ততার সাথে কাল রাতে ভেবে রাখা কথা গুলো গড়গড় করে বলে দিলো।অনেকদিন ধরে বলবে বলবে করে বলা হয়ে ওঠে নি কথাটা।এতদিন বলতে না পেরে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলো রিফাত আজ বলে দিয়েও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে।কেননা সুপ্তির উত্তর টা কি হবে সেটা নিয়ে চিন্তিত রিফাত।
সুপ্তি চারদিকে তাকিয়ে বললো,
‘স্যার এসব কি বলছেন?মানুষ শুনতে পাবে তো।পা*গ*ল এর মতো কিসব বলছেন।’
‘ওকে তাহলে নির্জনে চলো।’
‘মানে?’
‘মানে যেখানে গেলে কেউ শুনবে না সেখানে চলো।বাইকের পেছনে ওঠো।’
‘মানুষ দেখবে, আমি যেতে পারবো না স্যার।’
‘হেলমেট টা নাও।এটা নিরব নয় তোমার জন্য কিনে রেখেছি।মাথায় পরে নাও।’
‘না স্যার আজ আমি কোথাও যেতে পারবো না।’
‘দেখো সুপ্তি কাল রাত থেকে আমি কিছুই খায় নি।না খেয়ে খুব অসুস্থ লাগছে।এখন যদি তুমি না যাও আমি এখানেই দাঁড়িয়েই থাকবো’
‘আমার কাছে বাজার রয়েছে স্যার।কিভাবে যাবো।’
‘বাজার আমি দেখছি আগে চলো আমার সঙ্গে।’
সুপ্তির বাজারের ব্যাগ সহ রিফাত সুপ্তিকে বাইকে উঠিয়ে পাশের এক নদীর পাড়ে গেলো।নদীর পাড় টা বেশ নিরিবিলি তবে খেয়াঘাট আছে।লোকজন খেয়া পার হচ্ছে।আশে পাশে দুই একজন কাপল বসে বসে গল্প করছে।
সুপ্তি মাথার হেলমেট টা খুলে বললো,
‘স্যার যা বলার দ্রুত বলুন।মা বাজার নিয়ে দ্রুত বাড়ি যেতে বলেছে।’
রিফাত বেশ চিন্তিত।মাথার হেলমেট টা খুলে নদীর পাড়ে পা ঝুলিয়ে বসে সুপ্তিকে বলল,’বসো।’
সুপ্তি ও রিফাতের পাশে গিয়ে বসলো।রিফাত কিছুই বলছে না তার খুব নার্ভাস লাগছে।জীবনের এই একটা ক্ষেত্রে ছেলেরা বোধহয় খুব নার্ভাস হয়ে যায়।সুপ্তি জানে রিফাত তাকে কি বলবে।সুপ্তির মন শুনতে আগ্রহী।সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রিফাতের কথা শোনার জন্য।সুপ্তি রিফাতের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
‘কিছু বলবেন না।’
রিফাত সুপ্তির নরম হাত টা শক্তভাবে ধরে বলল,
‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই সুপ্তি।তোমাকে আমার লাগবেই। জানিনা তোমার উত্তর কি হবে।না বললে এই নদীতে লা*ফ দিতে হবে আমার।কারণ বেঁচে থাকতে পারবোনা তুমি ছাড়া।বাঁচতে হলে আমার তোমাকে লাগবে।’
সুপ্তি লজ্জামিশ্রিত মুখে রিফাতের দিকে তাকালো।রিফাত এতদিন তার পিছ পিছ ঘুরেছে।সুপ্তি রিফাতের দূর্বলতা বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই।নিজের মনেও রিফাতের জন্য একট জায়গা তৈরি হয়েছিলো।রিফাতের মুখ দিয়ে শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলো।কোনো মেয়েই পারে না মুখ ফুটে ভালবাসার কথা জানাতে।তাই সুপ্তিও এতদিন পারে নি।আনন্দে সুপ্তির বুক কেঁপে উঠলো।ঠোঁট লজ্জামিশ্রিত হলো।মন রঙধনুর মতো সাত রঙে ছড়িয়ে পড়লো।রিফাতের হাতের বাঁধন থেকে ছুটে খুব জোরে হাঁটা দিলো।
রিফাত পেছন থেকে ডাকলো,
‘সুপ্তি বলে যাবে না আমি কি করবো।আমাকে কি তোমার হাত ধরতে দিবে নাকি নদীতে লাফ দিয়ে নিজের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দিবো।’
সুপ্তি পেছন ফিরে লজ্জামাখা চোখে মুখে তাকিয়ে বললো,
‘নদীতে মৎস্যা কন্যার সাথে প্রেম করতে যাবেন তাইনা?হাত ধরলেই তো হতো।এত কাহিনী করার কি ছিলো।’
রিফাত এক লাফে উঠে ছোট দৌড় দিয়ে সুপ্তির পাশে এসে দাঁড়িয়ে সুপ্তির হাত ধরলো আর সুপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এই হাত আমি ছাড়া কেউ স্পর্শ করলে তার হাত ঝলসে যাক,পুড়ে যাক,।এই অধিকার শুধু আমার।’
রাত নয়টা বাজে নতুন বাসায় আরিফা রান্না করছে।মৃথিলা চারদিকে ফুলদানি সাজাচ্ছে।নিরব কেনো যেনো আজ ভীষণ ব্যাস্ত আছে।আরিফা দ্রুত রান্না করছে নিরব খেয়ে অফিসে যাবে।নিরব মাত্রই শাওয়ার শেষ করে টাওয়াল পরে বেরিয়েছে হাত দিয়ে চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে।জলের ফোটা যেনো মুক্তার মতো চিকচিক করছে তার শরীরে।মৃথিলা তার সামনে থাকা সুদর্শন যুবকের দিকে তাকিয়ে আছে।নিরব আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করছে মৃথিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিরব শার্ট গায়ে দিয়ে মৃথিলার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
‘বোতাম গুলো লাগিয়ে দিবে।’
মৃথিলা নিঃশব্দে নিরবের শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে দিচ্ছে।নিরব মৃথিলার কপালে বেয়ে পড়া চুল গুলো কানের নিচে গুজে দিতে দিতে বললো,
‘নারীর সৌন্দর্যের সবটায় চুলের মধ্য সীমাবদ্ধ মনে হয় আমার কাছে।তোমার চুল দেখলে আমার কেমন নেশা লেগে যায়।’
‘রাতে কিছু বলার কথা ছিলো।’
‘হুম বলবো প্রিয়দর্শিনী।’
‘আমাকে বললেন।’
নিরব মৃথিলার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
‘তুমি আমার প্রিয়দর্শিনী।আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ট সুন্দরী নারী।যে নারীতে আমি আসক্ত, নেশাক্ত।যে নারীর মায়ায় আমি মুগ্ধ।যে নারীকে পেয়ে দ্বীতীয় কোনো নারীর কথা ভাবতেও পারিনা।যে নারীর নূপূরের ছন্দ আমার হৃদয়ে অলংকারের মতো বাজে,যে নারীর হাসির শব্দে আমার ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।যে নারীকে ভাবলেই সৃষ্টিকর্তাকে বারবার কৃতজ্ঞতা জানায় এমন নারীকে আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য।সে ছাড়া আর কে আমার প্রিয়দর্শিনী হতে পারে।’
মৃথিলা মুগ্ধ হয়ে নিরবের কথা শুনছে।ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে।লজ্জায় নিরবের বুকে মাথা গুজতে ইচ্ছা করছে।এই ভয়ংকর সুন্দর শব্দ গুলো তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে ভেতর থেকে।
নিরব আবার ও বলল,
‘মৃথিলা আমার জীবনের দুইটা সাকসেস চাই আমি।এ ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার।এই দুইটা জিনিস পেলে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হবে আমার। তুমি দিবে আমায় সেই পূর্ণতা।’
‘আমি কিভাবে দিবো বলুন।’
‘একমাত্র তুমি পারো আমাকে দিতে।’
‘আমার সাধ্য থাকলে অবশ্যই দিবো।বলুন কি চায় আপনার।’
‘তোমাকে চাই।আমার শুধু তুমি হলেই হবে।’
“আমাকে?’
‘হ্যাঁ মৃথিলা,আমার তোমাকে চাই।ভালবাসি তোমাকে আমি।’
‘এর সাথে সাকসেস এর কি সম্পর্ক।’
‘তোমাকে পাওয়া একটা সাকসেস।ভালবাসার সাকসেস জীবনের সর্বোত্তম সাকসেস।’
“আর একটা।’
‘ওই মেয়ে দুইটা কে ধরা।আজ রাতে আমার প্লান মিস হবেনা।ওই মেয়ে দুইটাকে ধরার আগে আমি তোমাকে জিতে নিতে চাই।তোমাকে পেয়ে গেলে আমি সব পারবো।এই বিশ্বজয় করতে পারবো।আজ আমার দীর্ঘদিনের প্লান সাকসেস হবে।তোমাকে পাশে পেলে তোমার ভালবাসা পেলে আমি সব পারবো।এক নারী পারে এক পুরুষ কে সাফল্যর দুয়ারে পৌছাতে।’
‘আবার এক নারী পারে এক পুরুষ কে ধ্বংস করতে।’
‘ছলনাময়ী নারী সব পারে,কিন্তু তুমি সরলতার এক জলন্ত উদাহরণ।’
‘আমাকে এত বিশ্বাস করেন।’
‘অনেক।’
‘যদি প্রতারণা করি কখনো।’
‘কি নিয়ে করবে?’
‘কোনো কারণে যদি করি।’
‘কিছুই বলবো না।তুমি ভালবেসে হোক আর ছলনা করে হোক আনন্দ পেলেই আমি খুশী।’
নিরব কে পরীক্ষা করতে এতগুলো কথা বলেও মৃথিলা হেরে গেলো নিজের কাছে।চোখ ছলছল করছে মৃথিলার।কিছু না বলেই নিরব কে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো।মৃথিলার আলিঙ্গনে নিরব বুঝে নিলো মৃথিলার উত্তর। নিরব ও মৃথিলাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।
মৃথিলা নিরব কে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আমি কত ভাগ্যবতী দেখুন।আমার স্বামি আমাকে কত ভালবাসে।’
‘তোমার থেকে আমি বেশী ভাগ্যবান কারণ আমার বউ শ্রেষ্ট সুন্দরী। ‘
চলবে………