#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২৫
৩৪.
#writer_Mousumi_Akter
লোডশেডিং হয়েছে মাত্রই রুমজুড়ে নিকষকালো অন্ধকার।প্রচন্ড গরমের উত্তাপে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।নিরব ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গায়ের শার্ট খুলে বিছানায় ফেলে দিলো।পাঁচ মিনিট আগেই মৃথিলা শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিয়েছিলো।শার্ট খোলার সময় বোতামে হাত দিয়ে যেনো মৃথিলাকে অনুভব করতে পেরেছে। এখনো টাওয়াল পরেই দাঁড়িয়ে আছে নিরব প্যান্ট পরবে কিন্তু তার আগেই কারেন্ট চলে গিয়েছে।বেলকনিতে সিগারেট ধরাতে এসেছিলো।
মৃথিলা আরিফাকে সাহায্য করতে গিয়েছে।কারেন্ট চলে যাওয়ায় রান্নাঘরে চার্জার দিয়ে পা টিপে টিপে হাতড়ে হাতড়ে রুমের দিকে আসছে মৃথিলা।দরজায় মৃথিলার হাত পড়তেই দরজার কড়া নড়ার শব্দে নিরব বুঝতে পারলো মৃথিলা প্রবেশ করেছে।নিরব দ্রুত হাতের জ্বলন্ত সিগারেট নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো আর হাত দিয়ে হাওয়া দিয়ে ধোয়া সরানোর চেষ্টা করলো।
হাতে একটা এলাচ নিয়ে এসছিলো সিগারেট শেষ করে খাওয়ার জন্য।সিগারেট এক টান দিয়ে ফেলে দিয়েছে তবুও এলাচ ট মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে রুমের মধ্য প্রবেশ করলো।অন্ধকার হলেও মৃথিলার অবয়ব বুঝতে পারলো নিরব।নিরব গ্যাস লাইট জ্বালিয়ে মৃথিলার মুখের সামনে ধরলো।হলদেটে আলোয় মৃথিলার মুখ অগ্নির মতো জ্বলজ্বল করছে।মৃথিলা টানা টানা চোখে নিরবের দিকে তাকালো।বেশ কিছুক্ষণ লাইট জালিয়ে রাখায় নিরবের হাতে আগুনের আঁচ লাগল।নিরব লাইট অফ করে আউচ শব্দ করে উঠলো।মৃথিলা সাথে সাথে নিরবের হাত ধরে বলল,’কি হলো লেগেছে।’
‘হুম খুব লেগেছে।’
‘আইস নিয়ে আসি এক মিনিট।’
‘তুমি একটু ভালবাসলেই ঠিক হয়ে যাবে,আইস লাগবে না।’
মৃথিলা নিরবের বুকে আস্তে করে কিল দিলো।নিরব মৃথিলাকে টেনে ধরে বুকের সাথে আগলে ধরলো।নিরবের ঘামে ভেজা বুকে মৃথিলা মাথা গুজলো।নিরবচ্ছিন্ন ঘরের পরিবেশে দুজন মানব-মানবী পৃথিবীর আর কোনো কিছু অনুভব করতে পারছে না। দুজন শুধু দুজনের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করতে পারছে।ভাবনার অতলে তলিয়ে গিয়েছে দুজন।দুজনের হৃদয়ের স্পন্দন এক সাথেই রেসপন্স করছে।নিরবের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে মৃথিলা চুপটি কর পড়ে রয়েছে।এই অনুভূতি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। কারো বুকে মাথা গোজার ঠাই এর মতো ভীষণ ভালো অনুভূতি আর কিছুতেই নেই।নিরবের ভেতরের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে,শরীরে ভিন্ন অনুভূতি জেগে উঠছে।শরীরে প্রতিটা লোমকূপে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।চেষ্টা করছে নিজের অনুভূতিগুলোকে তালাবদ্ধ করতে কিন্তু প্রকৃতির ডাকের বাইরে কেউ যেতে পারে না।নিরবের খালি গায়ে ফর্সা বুকে মাথা গোজা প্রেমিকাটি নিজেই মুগ্ধ তার প্রেমিকের মুগ্ধতায়।নিরবের শরীর দিয়ে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ বেরোচ্ছে।মৃথিলা নিরবের শরীর থেকে সেই ঘ্রাণ নিচ্ছে নিরবের বুকে নাক ডুবিয়ে ডুবিয়ে।যার ফলে মৃথিলার উষ্ণ নিঃশ্বাস নিরবের বুকে আঁচড়ে আঁচড়ে পড়ছে।যা নিরবের অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে বারেবার।নিরব মৃথিলার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,’প্রিয়দর্শিনী এই মুহুর্ত টা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মুহুর্ত। আমি জানি এখন তোমাকে শ্রেষ্ট সুন্দরী লাগছে।লাজুকতা,মায়া আর সরলতা মিলেমিশে একাকার হয়ে তোমাকে ভিন্ন এক রুপ দিয়েছে।মাথা তোলো আমি তোমার সেই মুখ দেখে ধন্য হতে চাই।তোমার সেই লাজুকতা, মায়া,আর সরলতা মিশ্রিত মুখটা দেখতে না পেলে বরবাদ হয়ে যাবো আমি।’
মৃথিলা এবার আরো লজ্জা পায়।এবার আরো গভীরতম ভাবে নিরবের উন্মুক্ত বুকে নাক ঘষে।নিরবের ফিলিংসের দফারফা হয়ে যাচ্ছে।নিরব তার বুক থেকে মৃথিলার মুখটা তুলে ধরে।কি ভয়ানক লজ্জা সে মুখে।নাক লালচে আবরণ ধারণ করেছে।গাল টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে।নিরব প্রচন্ড নেশাক্ত হয়ে যায় মৃথিলাকে এমন রুপে দেখে।নিরব আস্তে করে চোখ বন্ধ করতে করতে ওষ্ট নিয়ে মৃথিলার দিকে এগিয়ে যায়।মৃথিলা বুঝতে পারে নিরব কি করতে চাইছে কিন্তু মৃথিলা বাঁধা দেয় না।নিরব তার ওষ্ট মৃথিলার গালে গভীর ভাবে ডুবিয়ে দেয়।সাথে সাথে মৃথিলার ভেতরের সমস্ত ইন্দ্রিয় গুলো কেঁপে ওঠে শিহরণে।মৃথিলা চোখ বন্ধ করে দেয় অটোমেটিক।নিরব সহস্রবার মৃথিলার দুই গালে ওষ্ট ডুবালো।নিরব কে চেষ্টা করেও মৃথিলা দূরে সরাতে পারছে না।কি করবে ভেবে না পেয়ে আঙুলে ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে নিরবের কানে ঠোঁট ছুইয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘বাইরে আরিফা আছে।’
‘থাকুক এখানে আসবে না।’
‘একবার এসে ফিরে গিয়েছে।’
‘তুমি মিথ্যা বলছো।আরিফার এত সাহস নেই আমার রুমের সামনে পারমিশন ছাড়া আসার।’
‘সত্যি এসেছিলো।আমাদের এভাবে দেখে লজ্জায় ফিরে গিয়েছে।’
‘তুমি সিওর ও এসেছিলো।’
‘হ্যাঁ এসেছিলো।’
‘ওর চাকরি ক্যান্সেল।এক্ষুনি বলছি ব্যাগ গুছিয়ে চলে যেতে।ননসেন্স টাইপ মেয়ে আমার বাসায় রাখবো না।আমার বউ কে আদর করার সময় এসে উঁকি মেরে ডিস্টার্ব করে।’
‘ননসেন্স আরিফা নয় আপনি।দরজা খোলা রেখে এসব কি।তাও আবার খালি খায়ে টাওয়াল পরে দাঁড়ানো ছিঃ।’
‘আই এম লুকিং সো হট তাইনা?’
‘ছিঃকিসব বিশ্রি কথা বলছেন।একটুও লজ্জা নেই।’
‘তোমার কাছে আমার কিসের লজ্জা। ‘
‘এখন চেঞ্জ করে নিন।’
‘নো আগে আরিফাকে বাসা থেকে তাড়াবো।তারপর দরজা লাগাবো।তারপর রোমান্সের সেকেন্ড পার্ট শেষ করবো দেন দুনিয়ার বাকি কাজ।’
‘আরিফা আসেনি এখানে।আমি মিথ্যা বলেছি।’
‘আমি জানতাম আসেনি।আমার সবগুলো ইন্দ্রিয় সবসময় সজাগ থাকে।কেউ আসলে তাৎক্ষণিক বুঝতে পারতাম।আর সাথে সাথে তাকে দুই খ*ন্ড করে ফেলতাম।তোমার আর আমার মাঝে যে আসবে তাকেই দ্বি*খ*ন্ডিত করে ফেলবো বুঝলে প্রিয়দর্শিনী।’
‘যদি আমি কারো সাথে প্রেম করি তাহলে কি করবেন।আমাকেও মা*র*বেন।’
‘প্রশ্নই আসেনা।তুমি আমাকে ছাড়া পৃথিবীর কোনো পুরুষ কে ভাবতেই পারবেনা।আর যদি তেমন কিছু ঘটেও তুমি আমার ই থাকবে যে তোমার লাইফে আসবে তাকে জ্যান্ত পু*ড়ি*য়ে দিবো।’
‘এত ভয়ংকর কেনো আপনি?’
‘প্রেম এক ভয়ংকর খেলা।যেখানে মানুষ এতটায় ভয়ংকর হয়ে যায় সামনে পেছনে কিছুই ভাবতে পারেনা।’
‘শেষে কিনা এমন একজন ভয়ংকর মানুষ কে ভালবাসলাম আমি।’
‘ভয়ংকর মানুষের ভালবাসাটা পিওর হয়।তারা ঠকাতে জানেনা।’
‘এবার রেডি হয়ে নিনতো।’
‘কি ভেবেছিলে অন্য টপিক্স এ গিয়ে আমার ফিলিংস বদলে দিবে।ফিলিংস তোমার প্রতি কখনো বদলাবে না।’
নিরব মৃথিলাকে এক ঝটকায় পাজা কোলে তুলে নিলো।আস্তে করে দরজার কাছে গিয়ে দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিলো।মৃথিলা ছোটার জন্য পা ঝাপটাচ্ছে। কিন্তু পুরুষের হাতের শক্ত বাঁধন থেকে কি আর ছোট সহজ হয়।নিরব মৃথিলাকে নিয়ে দুষ্টুমিতে মাতলো
ভালবাসার গভীরতায় হারালো দুজন।
আরিফার রান্না শেষ হয়েছে।ডায়নিং এ খাবার রেডি করে আরিফা নিরব আর মৃথিলাকে ডাকছে।রাত সাড়ে এগারোটা বাজে ডায়নিং আরিফা মৃথিলা আর নিরব খাবার খাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে।নিরব আরিফার সামনে আবদার করে বসলো,
‘আমাকে খাইয়ে না দিলে খাবো না।’
মৃথিলা নিরবের এমন প্রস্তাবে আরিফার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় নাজেহাল অবস্থা। কি বলবে বুঝতে পারছে না।নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে আছে মৃথিলা আরিফার দিকে তাকিয়ে আছে।আরিফা হেসে দিয়ে ডায়নিং থেকে বেরিয়ে গেলো।আরিফা বেরিয়ে গেলে মৃথিলা বললো,’ছিঃআরিফার সামনে এটা কি হলো।’
‘আমাকেও বা বলে দিতে হলো কেনো?তুমি বোঝোনা আমি তোমার হাতে খেতে চাই।’
‘কিভাবে বুঝবো?আমাকে কি আগে বলেছেন।’
‘এসব কি বলে দিতে হয় বুঝে নিতে হয়।দ্রুত খাইয়ে দাও বেরোতে হবে।’
মৃথিলা ভাত মাখিয়ে নিরবের গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।নিরব তৃপ্তির সাথে খাবার খাচ্ছে।খাওয়ার সময় চোখের পলক এদিক সেদিক করেনি।সারাক্ষণ মৃথিলার দিকেই ছিলো।খাওয়া শেষে নিরব রেডি হয়ে নিলো বেরোনোর জন্য।দরজা পর্যন্ত মৃথিলা এগিয়ে দিলো।বেরোনোর সময় নিরব মৃথিলার কপালে চুমু দিয়ে বললো,’আজ যেনো ওদের ধরতে পারি।দোয়া করো।’
‘নিশ্চয় ই পারবেন।আর হ্যাঁ সাবধান কিন্তু।ওরা কিন্তু খুব ভয়ানক। আপনাকে আঘাত করতে পারে।’
‘আমার কিচ্ছু করতে পারবেনা।সকালের আগেই ফিরে আসবো প্রিয়দর্শীনি।’
চলবে…….