#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২৬
#writer_Mousumi_Akter
পুলিশ হেড কোয়ার্টার এ পুলিশের সমস্ত কর্মকর্তারা উপস্হিত।পুলিশের একজন গোয়েন্দার দ্বারা জানা গিয়েছে রানীগঞ্জের পাশে যে মধুমতির তীর তার উপকূলেই বিশাল এক বাগান আছে।আর ওই বাগানের মাঝেই মাটির নিচে একটা পাতাল ঘর আছে।মেয়েদের তুলে এনে ওই পাতালঘরে রাখা হয়, তারপর ওখান থেকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বিক্রির আগে অনেক মেয়ে ধর্ষিত ও হয়।তিন দিন আগে শহর থেকে তিনটা মেয়ে নিঁখোজ এর ভেতর থেকে একজন কে পাওয়া গিয়েছে।মেয়েটিকে ধ*র্ষ*ণ করার পর মা*রা গিয়েছে ভেবে নদীতে ফেলে দেয়।আর এক জেলে মেয়েটির লাশ পেয়ে জীবীত দেখে সাথে সাথে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে।মেয়েটির মুখের তথ্য অনুযায়ী ওই বাগানের ঘরে তার দুই বান্ধবীসহ আরো অনেক মেয়েকেই রাখা আছে।খোঁজ নিতে পুলিশের এক গোয়েন্দা কে পাঠানো হয়।আর সমস্ত তথ্য সঠিক বলেও জানা যায়।আজ রাতে সেই বাগানবাড়ির পাতালপুরি থেকে মেয়েগুলোকে উদ্ধারসহ আসল অপরাধীদের ধরা হবে।
নিরব, রিফাত সহ পুলিশের সমস্ত বড় কর্মকর্তারা রেডি।তবে এ মিশনের দায়িত্ব নিরব কে দেওয়া হয়েছে।নিরবের মতো বুদ্ধিমান ডিপার্টমেন্ট এ আর কেউ নেই।নিরব না পারলে এ কাজ আর কেউ পারবে না।নিরব বিচক্ষণ,বুদ্ধিমান,সাহসী।এর আগে বড় বড় সব ক্রিমিনাল নিরবের হাতেই ধরা পড়েছে।নিরব তার টিম নিয়ে খুব সাবধনতার সাথে বেরিয়ে পড়েছে।পুলিশের গাড়ি মধুমতি নদী হতে আরো খানিক টা দূরে রাখলো।নিরব আর রিফাত বাইকে করে এসেছে।বাইক খানিক টা দূরে রেখে পিস্তল হাতে বেরিয়ে পড়েছে।সোজা বাগানের ভেতরে ঢুকে পড়লো।
এমন গহীন জঙ্গল আগে দেখে নি নিরব।বাগানে ঢুকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে নদী পাড়ের কাছাকাছি শুকনো পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা।এই পাতার নিচেই সিঁড়ি।নিরব পাতা গুলো সরিয়ে দেখলো একটা চাটাই এর উপর পাতা গুলো রাখা।চাটাই টান দিয়ে ফেলে দিয়ে দেখলো সিঁড়ি।নিরব ইশারায় বাকিদের ডাকলো।আস্তে করে সবাই সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে প্রবেশ করলো।ভেতরে লাইটিং করা প্রচুর।কয়েকজন বিবস্ত্র মেয়ে শরীরের অত্যাচারের দাগ।কত গুলো নেশাখোর ছেলে হাতে মদের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছে আর মেয়েদের বিশ্রি কথা বলছে।এর মাঝেই নিরবের চোখে পড়লো সেই দুজন মেয়ে।জিন্স পরা আর কালো গেঞ্জি পরা মাথায় ক্যাপ মুখে মাস্ক চেনার উপায় নেই।
এরা দুজন ই যে এখানকার মেইন লিডার দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মেয়েদের বিক্রি করার জন্য টাকা পয়সার হিসাব করছে দুজনে।নিরবের টার্গেট মেয়ে দুইটাকে ধরা।নিরব যেভাবেই হোক আজ এই মেয়ে দুটোকে ধরে ফেলবে।এরই মাঝে মদ হাতে একটা ছেলের নজর পড়ে নিরবের দিকে।সে মেয়ে দুইটার দিকে তাকিয়ে বলে ম্যাম এখানে পুলিশ প্রবেশ করেছে।নিরব সবাইকে কুইক বলতেই নিরবের টিমের সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো।নিরব সোজা মেয়ে দুইটার কাছে গেলো।
এরা কোনো সাধারণ মেয়ে নয়।এদের কাছে অনেক টেকনিক আছে।আসার সময় মৃথিলা সতর্ক করেছে বারবার।নিরব টার্গেট নিয়ে মেয়ে দুইটার কাছে গেলো।লম্বা মেয়েটা অন্য দিকে চলে গেলো।ওয়াল থেকে ছুরি নিয়ে ফাইট করছে।একেক করে কয়েকজন পুলিশ যখম হলো।পুলিশ ডিরেক্ট একশন নিতে পারছে না কেননা নিরীহ মেয়েগুলোর প্রাণ যাবে। নিরব সোজা খাটো মেয়েটার কাছে গেলো।মেয়েটা বারবার নিরব কে এড়িয়ে চলে যাচ্ছে।নিরব কোনোভাবেই আঘাত করতে পারছে না আবার নিরব কেও আঘাত করছে না।
নিরব বার বার টার্গেট করছে কিন্তু ফেইল হয়ে যাচ্ছে।কিভাবে যেনো আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে।নিরব এবার সোজা খাটো মেয়েটার মাথায় পিস্তল ধরলো।মেয়েটা নিরব কে ধাক্কা মেরে পালালো।রিফাত কয়েকজন মেয়ের হাত খুলে দেয় কিন্তু তাদের পালানোর শক্তি নেই।এতদিন শারিরীক আঘাতে তার জর্জরিত।খুব অবাক করা ব্যাপার দুইটা মেয়ে ই নিরব কে আঘাত করছে না।বাকি পুলিশ দের আঘাত করছে।বরং বাকিদের বলে দিয়েছে ইশারায় তারা যেনো নিরবের গায়ে হাত না দেয়।পাচারকারী দলের সাথে সংঘর্ষ হয়ে পাঁচজন পুলিশ নিহত।পাচারদলের ও দশ জন নিহত।
বাগানের আশেপাশে কোথায় এত লোক লুকিয়ে ছিলো নিরবের আইডিয়া ও ছিলো।পুলিশের থেকে তিনগুন বেশী ছিলো পাচারকারী দলের মানুষ। সমস্ত পুলিশ যেখানে আহত নিহত নিরব সেখানে থেমে নেই।নিরব আর রিফাত চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে মেয়ে দুইটাকে ধরার জন্য।রিফাত আর নিরবের সামনে পিস্তল ঠেকিয়ে মেয়ে দুইটা পেছনের দরজা থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।নিরব একজনের হাতের পিস্তল ধরে ফেলতেই অন্য জন সোজা গু*লি চালিয়ে দেয়।
গুলিটা ইচ্ছা করেই হাত বরাবর করে।বুকে করলে হৃদপিন্ড ছিদ্র হয়ে যেতো।হাতের মাংস ভেদ করে গুলিটা বেরিয়ে যায়।নিরব সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায়।পেছনের লোহার দরজা লাগিয়ে মেয়ে দুইটা সহ বাকি যারা আছে তারা পালিয়ে যায়।রিফাত দ্রুত নিজের গায়ের শার্ট ছিড়ে নিরবের হাত বেঁধে দেয়।হেড অফিসে খবর দেওয়া হয়।দ্রুত এম্বুলেন্স পাঠানো হয় কয়েক টা।এম্বুলেন্স এমন রাস্তায় ঢুকতে পারছে না।যারা ঠিক আছে তারা আহত আর নিহত দের ধরে ধরে মেইন রাস্তায় এনে এম্বুলেন্স এ তুলছে।মেইন রাস্তা প্রায় ৩ কিঃমি মতো পথ।
এমন গহীন আর ভয়ানক জঙ্গলে প্রবেশ করাটায় ভুল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।ধীরে ধীরে সবাইকে এম্বুলেন্স এ তোলা হলো।নিরব হাতের যন্ত্রণায় চোখ মুখ বন্ধ করে আছে।প্রচন্ড রক্ত*ক্ষরণ হচ্ছে।রিফাতের কাঁধে মাথা রেখে পড়ে রয়েছে নিরব।রাত তিনটায় হসপিটালে পৌছালো সমস্ত গাড়ি।
সকাল সাত টা বাজে।বাইরে সূর্যের নরম আলো জানালা ভেদ করে ওয়াল স্পর্শ করেছে।মৃথিলার ঘুম ভাঙলো মাত্রই।ঘুম ভাঙতেই চারদিক পরখ করে দেখলো নিরব এসছে কিনা।এদিক সেদিক ভালো ভাবে তাকালো কিন্তু নিরব নেই।মৃথিলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।বাইর ট্যাপে পানি ছাড়ার শব্দ হচ্ছে।মৃথিলা আরিফা কে ডাকলো।আরিফা ভেজা হাত পায়ে ছুটে এসে বলল,’ভাবি আপনার ঘুম ভেঙেছে।’
মৃথিলা অন্যমনস্ক হয়ে বললো,’উনি আসেন নি এখনো।’
‘না ভাবি ভাইজান তো এখনো আসে নি।’
‘ওহ যা তুই।’
‘আপনি কি খাবেন বলুন।’
‘কিছুই খাবো না, ভালো লাগছে না।’
‘ভাইজানের জন্য মন খারাপ তাইনা ভাবি।’
‘না মানে এখনো এলো না ক্যানো?কাল রাতে তো ওই ভয়ংকর নারীপাচারকারীদের ধরতে গিয়েছিলো।তাই দুঃচিন্তা হচ্ছে।’
‘একদম চিন্তা করবেন না ভাবি।ভাইজান হলো নায়ক ফিরে আসবে বীরের মতো।’
আরিফা বেরিয়ে গেলো।মৃথিলা জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে দিলো।ঘরে প্রকৃতির আলোয় আলোকিত হলো।ব্রাশ হাতে নিতেই মৃথিলার নিরবের মুখ টা ভেষে উঠলো।নিরব রেগুলার তার ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করে।ঘুম ভাঙলেই ব্রাশে পেষ্ট মাখিয়ে কখনো ব্রাশ করিয়ে দিয়েছে তো কখনো হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।তারপর চুলে চিরুনি দিয়ে চুল বেঁধে দিয়ে বলে,
‘আরো একটি নতুন ভোরের শুভেচ্ছা। ‘
জোর করে মৃথিলাকে খাইয়ে দেওয়া, মৃথিলার মন ভালো রাখতে কাজের ফাঁকে কত শত গল্প করে।আজ সব কেমন ফ্যাঁকাসে লাগছে।খালি বিছানা টা পড়ে আছে।মৃথিলা নিরবের নাম্বারে ডায়াল করলো।গতকাল ই নিরব তাকে নতুন ফোন গিফট করেছে।নিরবের নাম্বার বন্ধ।মন খারাপ করে ফোন টা অযন্তে বিছানায় ফেললো।বেলকনি দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে মৃথিলা।কখন নিরব বাসায় প্রবেশ করবে সেই অপেক্ষায়।প্রচন্ড অস্হিরতায় ভুগছে মৃথিলা।ছটফট করছে দম বন্ধ লাগছে।সুপ্তির নাম্বারে ফোন করলো মৃথিলা।সুপ্তি ফোন রিসিভ করে বলল, ‘ হ্যাঁ মিথু বল। ‘
‘রিফাত ভাইয়ার সাথে কি কোনো কনট্যাক্ট হয়েছে তোর।’
‘নারে সে তো ফোন ই তোলে না।মনে হয় আমাকে আর ভাল লাগে না তার।এউজন্য প্রেম করতে চাইনি আমি।’
‘আরে শোন না।ওরা কাল পাচারকারী দের ধরতে গেছিলো।তাই হয়তো বিজি।’
‘সেতো আমাকেও বলেছিলো।তা এক মিনিটের জন্য বুঝি ফোন ধরা যায় না।আমি আর ফোন দিবো না।ওর সাথে ব্রেকাপ।’
মৃথিলা হেসে দিলো সুপ্তির কথা।
চলবে…..