#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২৭
#writer_Mousumi_Akter
নিচতলার বারান্দায় মোটা ফ্রেমের চশমা পরে কাঠের চেয়ারের দুই হাতলে হাত রেখে বসে আছে ইসহাক হাসান।পরনে লুঙ্গি আর ফতুয়া।সকালে প্রকৃতির ফুরফুরে হাওয়া খেতে রোজ সকালে তিনি নিচে নেমে আসেন।ইরিনা হাসান এক বাটি মুড়ি আর এক কাপ চা নিয়ে এলো।ইসহাক হাসান চা এর সাথে মুড়ি খেতে পছন্দ করে।চায়ের কাপে কতগুলো মুড়ি দিচ্ছে, মুড়ি ভিজলে চামচ দিয়ে তুলে গালে নিচ্ছে আর এক চুমুক করে চা নিচ্ছে।এরই মাঝে রহমত বাজার নিয়ে এলো।উঠানে ভ্যানে করে নয় কেজি ওজনের একটা রুই মাছ ফেললো।পাশের এলাকার খুব পুরণো একটা ঘের থেকে জেলেরা মাছ ধরেছে।রহমত মাছ এনে ডাকছে ইসহাক ভাই আসেন দেখে যান কত বড় মাছ এনেছি।রাহিলা, কুতুবের মা এইদিকে আসো, দুপুরে এই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট রান্না হবে।ইরিনা হাসান,ইসহাক হাসান,ইরাণ সহ বাকিরা সবাই উপস্হিত হলো।এত বড় মাছ দেখে সবাই খুশী।
ইরিনা হাসান বললো,
‘মাছের লেজ আমার নিরব খুব পছন্দ করে।লেজটা কাটার সময় বড় রেখো।’
ইসহাক হাসান বললো, ‘তুমি কি আজ যাচ্ছো নাকি ওদের বাসায়।’
‘তা যাবোনা,এত বড় মাছ ছেলে বৌমাকে রেখে খাবো নাকি।’
‘তা যেও আর গাছ থেকে আমগুলো পেড়ে নিয়ে যেও।ওরা তো চলে গেলো।আম খাবে কে?’
‘আচ্ছা নিয়ে যাবো।রাহিলা আর কুতুবের মা আজ একটার মাঝে রান্না শেষ করো তোমরা।’
রহমত এর হাতে বড় ছুরি সাথে ইরাণ মাছ কাটার প্রস্তুতি নিতেই ইসহাক হাসান বললো,
‘অপেক্ষা করো।এত বড় মাছ আমার নিরা দেখবে তার পর কাটবা।নিরা মাছ দেখলে ভীষণ খুশি হবে।’
ইরিনা হাসান বলল,
‘তুমি যা করো মেয়ে নিয়ে আর কেউ করে না।আরো তো মানুষের মেয়ে আছে।’
‘আমার নিরার সাথে সবার তুলনা নয়।যাও আমার নিরাকে ডাকো তুমি।’
বাড়ির সব কাজের মানুষের মাঝে রহমত এর সাথে ইসহাক হাসানের ভালো খাতির।বাজার ঘাট রহমত ই করে।
ইরিনা হাসানের ডাকাডাকির পর নিরা হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে এলো।গায়ে গেঞ্জি আর প্লাজু পরা নিরার।ঘুম থেকে আড়মোড়া দিতেই নিরার চোখ গেলো বাইরে।রেগুলার ঘুম থেকে উঠেই নিরা তার বেলকনির দরজা দিয়ে বাইরে তাকায়।নিরার রুমের সোজা পাচিলের একটা দরজা আছে নিরা তার চাবি নিলয় কে দিয়েছে।বাড়িটা অনেক জায়গা জুড়ে তাই এদিকে তেমন কেউ আসে না।যে দরজা নিরা খুলে রেখেছে সেখান দিয়ে নিলয় বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে প্রবেশ করে নিরা কে দেখে চলে যায়।নিলয় দাঁড়িয়ে আছে সাদা শার্ট আর কালো গ্যাবাডিং পরে।নিরা বাইরের দিকে উঁকি দিতে দিতে নিলয় কে আস্তে চাপা কন্ঠে বলল,
‘এত সকালে তুমি কেনো?’
‘কাল সারারাত তোমায় দেখিনি নিরুপাখি।প্রচন্ড দেখতে ইচ্ছা করছিলো।দেখতে না পেলে মা*রা*ই যেতাম।’
‘কখন এসেছো তুমি।?’
‘ভোর চারটায়।’
‘হোয়াট?তখন তো রাত ই থাকে।অত রাতে কেনো এসেছো।যদি চো* র ভেবে মারতো কেউ তোমায়।’
‘তাও স্বার্থক হতাম আমি।তোমায় দেখার জন্য এটুকু আমি করতেই পারি।’
‘রাতে ঘুমোও নি তুমি।’
‘কিভাবে ঘুমোবো।তোমার সাথে ঠিক ভাবে কথা হয় নি।ঘুমোবো কিভাবে বলো।’
‘সেটা তো তোমার দোষ ছিলো।’
‘ফোনের চার্য থাকেনা।এই দোষ ও আমাকেই দিবা।তুমি কি জানো কারেন্ট থাকলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চ্যাটিং করি সারারাত তোমার সাথে।’
‘এখন যাও, বিকালে দেখা হবে।’
‘নিরা তাকাও।’
‘আবার কি?’
‘ফ্লায়িং কিস টা গ্রহন করো।’বলেই নিরার দিকে কিস ছুড়ে দিলো।
নিরা বিড়বিড় করে বলছে, ‘ছেলেটার কি সাহস যে বেড়েছে এইভাবে কেউ সোজা রুমের কাছে আসে।তাও এত ভোরে।আজ এর শায়েস্তা করতে হবে।’
নিরা গেঞ্জি চেঞ্জ করে নিচে গিয়ে বলল,
‘বাবা আমায় ডেকেছো।’
‘হ্যাঁ মা দেখো কত বড় মাছ।রাহিলা এ মাছের মাথা আমার নিরা খাবে।’
‘রহমত ভাই কইলো মুড়িঘন্ট।’
‘রহমত এর মাথা দিয়ে রাঁধ তাইলে।’সবাই হোহো করে হেসে দিলো।
‘অত বড় মাথা আমি খেতে পারবো না বাবা।’
‘যা পারবে তাই খাবে বুঝেছো মা।’
‘বাবা সবাইকে একটু বলোনা আজ এই মাছ এর সাথে পোলাও, মাংশ রান্না করতে।’
‘তুমি যখন বলেছো তাহলে তাই হবে মা।’
ইরিনা হাসান নিরাকে বলল,
‘এমন বাপ কপালে মেয়ে দুনিয়ায় দেখি নি।’
‘কেনো মা তোমার বাবা কি ভালবাসতো না
‘আমার কেনো কারোর বাবা ই এত ভালবাসে না।’
দুপুরের আগেই রান্না শেষ হয়ে গিয়েছে।নিরা টিফিনবক্সে খাবার নিয়ে বাসা থেকে বের হলো চুপিচুপি।নিলয় কে সে আজ নিজ হাতে খাওয়াবে।নিলয়ের পারিবারিক অবস্হা খুব একটা ভালো নয়।কি খেতে কি খায় তার ও ঠিক নেই।তাছাড়া একটা ফোন ও নেই।ব্যাটারি নেই সারারাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চ্যাটিং করে।নিলয় তাকে ঠিক কতটা ভালবাসলে ফোন চার্যে লাগিয়ে সারারাত চ্যাটিং করতে পারে।নিরা তার জমানো টাকা নিয়ে বের হয়েছে বাসা থেকে। মার্কেট গিয়ে নিলয়ের জন্য দামি একটা ফোন কিনলো আর সাথে সাথে একটা সেল্ফি তুলে নিলয়ের ফোনের ডিস্পলে তে দিয়ে রাখলো।তারপর একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নিলয় কে ফোন করলো।নিলয় ও অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে নিরার জন্য।নিরার ফোন পেয়েই নিলয় দশ মিনিটের মাঝে উপস্হিত হলো।নিলয় একটা তাজা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো।নিরার হাতে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘যখন বড়লোক হবো দামি দামি গিফট দিবো। এখন ভালবাসা ছাড়া কিছুই নেই দেওয়ার।’
‘আপাতত ভালবাসা হলেই হচ্ছে।পরে শাড়ি চুড়ি দিও।’
নিলয় নিরার নাক টেনে ধরলো।নিরা বক্স টা নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘খোলো তো।’
নিলয় বেশ বিস্ময়ের সাথে বক্স টা খুললো।খুলে দেখলো একটা ফোন।নিলয় সন্দিহান ভাবে নিরার দিকে তাকালো।নিরা নিলয়ের হাত দুটো ধরে বলল,
‘প্লিজ নিলয় না করো না।তোমার ফোন এ সমস্যা আমার খুব খারাপ লাগে।এটা আমি তোমার জন্য কিনেছি না করোনা প্লিজ।’
‘ছিঃনিরা। আমার খুব খারাপ লাগবে।আমার তোমাকে কিছু দেওয়া উচিত সেখানে আমি তোমার থেকে কিভাবে নিবো বলো।’
‘দিয়েছো তো!তোমাকেই তো লিখে দিয়েছো আমাকে।আর কি চাই আমার।এই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমাকে সুন্দর ভাবে উপহার দিচ্ছো আর কি চাই আমার।’
দুপুরের খাওয়া শেষ করে ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসান বসে টিভি দেখছে।টিভির হেড লাইনে লেখা ব্রেকিং নিউজঃনারী পাচারকারী টিম কে ধরতে গিয়ে পুলিশের পাঁচ সদস্য নিহত সাথে একজন গুলিবিদ্ধ।ইরিনা হাসান আর ইসহাক হাসান দুজন ই দুজনের দিকে তাকালো।নিরব ঠিক আছে তো।সাথে সাথে মাথায় একটায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।ইসহাক হাসান নিরবের নাম্বার ডায়াল করলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।দুঃচিন্তা ভর করেছে ইসহাক হাসান আর ইরিনার হাসানের মাথায়।ইসহাক হাসান রহমত কে ডেকে তড়িঘরি করে বাইরে বেরিয়ে গেলো।ইরিনা হাসান নিরা কে ফোন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।সন্ধ্যার আগে আগে নিরবের বাসায় পৌছালো ইরিনা হাসান এবং নিরা।কলিং বেল চাপতেই আরিফা দরজা খুলে দিলো।ইরিনা হাসান এবং নিরা কে দেখে বলল,
‘ আপনারা আইছেন খুব ভালো করছেন।’
ইরিনা হাসান চিন্তিত কন্ঠে বলল,
‘নিরব কি বাসায়।’
‘না খালাম্মা।এইজন্য ভাবি সারাদিন রুমের ফ্লোরে বসে কাঁন্নাকাটি করছে।খাওয়া গোসল কিছুই করে নি।আমি যে এতবার ডাকতাছি কিছুই শোনেনা।’
নিরা আর ইরিনা হাসান ছুটে গেলো রুমের মধ্য।মৃথিলা অন্যমনস্ক হয়ে এলোনেলো চুলে বসে আছে তার ফোনের দিকে তাকিয়ে।এই বুঝি ফোনটা বেজে উঠবে সেই অপেক্ষায় আছে সে।নিরা মৃথিলার পাশে বসে মৃথিলার কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ভাবি কি হয়েছে বলোতো।এমন বিষন্ন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?’
মৃথিলা বিষন্ন মনে উত্তর দিলো,
‘সে ছাড়া চারদিকের সব কিছুই বিষন্ন আমার।’
‘দাদাভাই বাসায় আসছে তুমি ওঠো তো।দাদাভাই এসে দেখলে কি ভাববে বলোতো।তোমাকে কি এমন দেখলে ভালো লাগবে?’
‘ওর সাথে কথা হয়েছে তোমার।’
‘হ্যাঁ হয়েছে রিফাত ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে।’
‘ওর ফোন অফ কেনো তাহলে?’
‘ভাবি চার্য নেই ফোনে।’
‘ওহ তাই বলো।জানো আমার না কেমন দুঃচিন্তা হচ্ছিলো।আরেক টু হলে আমি মা*রা*ই যেতাম।’
ইরিনা হাসান মৃথিলাকে ধরে উঠিয়ে বললো,
‘চলো আগে গোসল করতে হবে মা।কি অবস্থা তোমার।’
‘আপনার ছেলে না আসলে আমি কিছুই করবো না মা।প্লিজ মা আমাকে ভুল বুঝবেন না।আমার কিছুই ভালো লাগছেনা।’
‘বুঝতে পারছি মা।নিরব এখনি চলে আসবে।আমি তোমাকে গোসল করিয়ে দিবো চলো।’
এরই মাঝে কলিংবেল বেজে উঠলো।আরিফা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।রিফাত সহ আর একজনের কাঁধে ভর দিয়ে নিরব এসছে বাসায়।হাতে ব্যান্ডেজ করা নিরবের।মৃথিলা নিরবের এমন অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।কি বলবে বুঝতে পারছে না।হৃদয় ব্যাথিত হলো।ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে যেমন হয় তেমন যন্ত্রণা হচ্ছে।মৃথিলা মহা প্রলয়ের গতিতে নিরবের কাছে ছুটে গেলো।আর্তনাদ ভরা কন্ঠে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কি হয়েছে উনার।’
রিফাত বলল, ‘তোমার এমন অবস্থা কেনো মৃথিলা। ‘
মৃথিলা কিছুই না বলে কেঁদে দিলো।নিরব কে এভাবে দেখে সহ্য করতে পারছে না।সমস্ত লজ্জা বিসর্জন দিয়ে নিরব কে জড়িয়ে ধরে বেশ জোরে কেঁদে দিলো।নিরব চারদিকে তাকিয়ে নিয়ে মৃথিলাকে ফিসফিস করে বলল,
‘আহা!এখন না।আগে রুমে তো চলো।সবাই দেখছে।’
মৃথিলা দুঃখের মাঝেও লজ্জা পেলো।আর নিরব কে ছেড়ে দিলো।এতটা আঘাতের পরেও একটা ছেলে কতটা স্ট্রং।
ইরিনা হাসান আর নিরা ছুটে এলো।ইরিনা হাসান ছেলের গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘এ চাকরি আর করতে হবেনা।যে চাকরিতে আমার ছেলের জীবনের ঝুঁকি থাকে।’
নিরা বলল,
‘দাদাভাই জানো চিন্তায় কি হচ্ছিলো আমাদের।মা ঠিক বলেছে এ চাকরি আর করতে হবেনা।গুলিটা যদি অন্য জায়গা লাগতো।’
নিরব সকলের দুঃচিন্তা দেখে বলল,
‘কিছুই হয়নি আমার।গুলিটা জাস্ট একটু শরীর ছুঁয়ে বের হয়েছে আর কিছুই না।’
ইরিনা হাসান বলল,
‘কিছু হলে কি হতো বাবা।’
‘আমার কিছু হোক মা।তবুও ওদের ছা★ড়★বো না আমি।ওদের মুঁখোশ আমি টেনে বের করবো মা।আজ হয় নি কাল তো হবে।প্রয়োজনে আমার জীবন দি★বো তবুও আমি হারবো না।’
রিফাত মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো মৃথিলার এখন নিরব কে প্রয়োজন।রিফআত নিরব কে বলল,
‘নিরব এখন রেস্ট নে। আন্টি নিরা আয় আমরা গল্প করি।এই আরিফা রান্না কর সবার জন্য।’
ডায়নিং এ নিরা আর ইরিনা হাসান কে ওখানকার সব ঘটনা খুলে বলছে রিফাত।
মৃথিলার কাঁধে ভর করে নিরব রুমে প্রবেশ করলো।রুমে প্রবেশ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো দিলো নিরব।দরজায় পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিরব।মৃথিলার কোমল দুইটা গালে হাত রাখলো।ঠোঁট ছোয়ালো কপালে।মিহি কন্ঠে বলল,
‘পৃথিবীর সব ধ্বংস হোক, তবুও তোমার মুখে হাসি চাই।তুমি আমার বাদল দিনের প্রথম কদমের মতো।যে ফুটলেই বেশী সুন্দর দেখায়।’
মৃথিলা আবার ও কেঁদে দিলো।নিরব মৃথিলা টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে বলল, ‘প্রিয়দর্শিনী এভাবে কাঁদে কেউ।তুমি জানোনা আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।তোমাকে বোঝানো ও সম্ভব নয়।তোমার চোখের পানি আমার হৃদয় কে আহত করে,রক্তাক্ত করে,ক্ষতবিক্ষত করে তুমি জানো।প্লিজ কেঁদো না।’
‘আপনার যদি কিছু হতো।’
‘কি আর হতো আমার থেকে আরো ভালো বর পেতে।’
মৃথিলা নিরবের বুকে কিল দিতে দিতে বলল,
‘আমার আপনাকেই লাগবে ভালো খারাপ বুঝিনা।’
‘সরি প্রিয়দর্শিনী। আমি রাগানোর জন্য বলেছি।’
‘আপনি আর এভাবে যাবেন না প্লিজ।আমার ভীষণ দুঃচিন্তা হচ্ছিলো।এভাবে আমার সাথে যোগাযোগ না করে আর থাকবেন না।’
‘আর এমন হবে না। ‘
‘অনেক ব্যাথা পেয়েছেন তাইনা?’
‘পেয়েছি,চুমু দাও সেরে যাবে।’
‘চুমুতে সারে কখনো?’
‘সারবে না, কিন্তু চুমু চাওয়ার বাহানা। দাও চুমু।’
মৃথিলার নিরবের বুকে চুমু দিলো।
নিরব ও মৃথিলার গালে চুমু দিলো।মৃথিলার এলমেলো চুলে হাত বোলালো নিরব আর বলল,
‘তোমাকে দেখার তৃষ্ণা মিটবে না প্রিয়দর্শিনী।যত দেখি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।তুমি ভালো থাকার একমাত্র কারণ।প্রেমিমার হাসি মুখ মানসিক শান্তির কারণ।’
মৃথিলা নিরব কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।যেনো নিরবের ভেতরে মিশে যেতে চাইছে।
দুজনে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালো এভাবে।
নিরব বলল,’যাও এবার গোসল করে এসো।’
মৃথিলা গোসলে ঢুকলো।নিরব বলল,
‘আজ কিন্তু কালো শাড়ি পরবে।আমার দেখতে ইচ্ছা করছে।হাতে কালো চুড়ি পরবে।’
মৃথিলা গোসল শেষ করর কালো শাড়ি পরে বেরোলো।চুল দিয়ে পানি পড়ছে। ভেজা চুলে শাড়ি ভিজে গিয়েছে প্রায় অনেকখানি।মৃথিলা চুড়ি গুলো নিয়ে নিরবের হাতে দিয়ে বলল,
‘চুড়ি গুলো পরিয়ে দিন।’
নিরব চুড়ি পরাতে পরাতে বলল,
‘এই ভেজা চুল,ভেজা চোখ, ভেজা চোখের পাপড়ি তোমার দিকে টানছে খুব।’
‘কিসব কথা।’বলেই মৃথিলা দূরে সরে গেলো।নিরব হাত ধরে টেনে কাছে এনে বলল,
‘কাছে এসো না।দূরে ছিলাম ছটফট করছিলে।আবার কাছে আসলে লজ্জায় দূরে দূরে থাকো।আমার তাহলে কি করা উচিত বলোতো।’
‘জানিনা।’
‘আমি জানাচ্ছি ওয়েট।তখন ওভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো।যদি মানুষের সামনে উল্টাপাল্টা করতাম।’
‘ছি ঃ মার্কা কথা সব।’
‘এখন তো কেউ নেই, ছোটাছুটি করতে চাইছো কেনো?নিড হিউজ আদর’
‘দেখুন আমার খুব লজ্জা লাগছে।’
‘কোথায় লজ্জা লাগছে।’
‘কিসব কথা!ছাড়ুন আমায়।’
নিরব মৃথিলার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে বলল,
‘বেশ কয়েকদিন ছুটি আমার।রুম থেকেই বের হবোনা আমি।ডিউটি করবো বউকে ভালবাসার ডিউটি।’
‘ঘাড় থেকে মুখ সরান সুড়সুড়ি লাগছে আমার।’
নিরব এবার ঘাড়ে চুমু দিলো।মৃথিলা লাফিয়ে উঠলো। এরই মাঝে ইরিনা হাসান দরজায় এসে ডাকলো,
‘মৃথিলা খাবার টা নিয়ে নিরব কে খাইয়ে দাও তো।আর তুমিও খেয়ে নাও।’
মৃথিলা দরজা খুলে খাবার টা নিলো।
রিফাত সুপ্তিকে কল দিয়েছে।
‘হাই হবু বউ, জানপাখি টা,পরাণ পাখিটা।’
সুপ্তি তেজস্রী কন্ঠে বলল,
‘কেনো ফোন করা হয়েছে?’
‘চুমু দিতে।’
‘অসভ্য ফোন রাখুন।’
‘এত চেতো ক্যানো বউ।’
‘কার বউ।’
‘রিফাতের একমাত্র বউ।’
‘সারাদিন কোথায় থাকা হয়েছিলো।’
‘আর বলোনা, নিরবের গুলি লেগেছিলো।’
‘হায় হায় বলেন কি?বেঁচে আছে তো?’
‘মানে?এসব কি বলছো।’
‘সত্যি কি গুলি লেগেছে নাকি।আপনি জোকস করেছেন তাই আমিও করেছি।’
‘আরে সত্যি লেগেছে।’
‘কেমন আছে ভাইয়া।’
‘গুলিটা তেমন সিরিয়াস ছিলো না।কিছুটে মাংশ ভেদ করেছে।’
‘আপনি ঠিক আছেন তো।’
‘একদম পারফেক্ট আছি।উম্মম্মম্মমাহ।’
‘গরু ডাকলো কোথায়?’
‘গরু কোথায় পেলে।’
‘হাম্বা শব্দ শুনলাম।’
ওটা উম্মমাহ ছিলো।’
সুপ্তি ইচ্ছা করেই বলেছে।
কেটে গেছে আরো ছয় মাস।
কোরবানির ইদে নিরব -মৃথিলা বাসা ছেড়ে বাড়িতে এসছে ইদ করতে।
ইরিনা হাসান নিরা কে বলল,
‘নিরা তোমাকে তোমার বাবার এক বিজনেস পার্টনার এর ছেলে দেখতে আসবে।’
‘কেনো?’
‘বড় হয়েছো বিয়ে দিতে হবেনা।’
‘এই বয়সে বিয়ে?’
‘কাবিন,কালেমা করে রাখবে তারা এখন।’
‘নো মা আমি বিয়ে করবো না। ‘
‘কেনো?বাবার কথার বিরুদ্ধে যেতে চাও।’
‘বিরুদ্ধে যাবো কেনো?আমার তো পছন্দ থাকতে পারে।’
‘তোমার বাবা যেটা বলছে সেটাই হবে।’
এরই মাঝে নিরা বমি করছে।
ইরিনা হাসান বলছে,
‘এভাবে বমি করছো কেনো?’
নিরা কিছু না বলে চলে গেলো নিজের রুমে।
নিরবের ফোন বাজছে।নিরব ফোন তুলতেই ফোনের ওপাস থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ ভেষে এলো।এটা সেই মেয়ের কন্ঠ।
‘হাই হ্যান্ডসাম।আমায় কি ভুলে গিয়েছো।আমি তোমায় ভুলিনি হ্যান্ডসাম।নাবিলার ব্যাপারে কিছুই খুজে পেলে।কেস টা কি ক্লোজ করে দিলে।তাহলে নাবিলার মা বাবার কেস টাও এখন তোলা উচিত।সময় হয়ে গিয়েছে এবার মুখোমুখি হবার।নাবিলা আর নাবিলার মা বাবার কেসের মাঝখানে তুমি দাঁড়িয়ে আছো।’
চলবে…..