#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ২৯
#writer_Mousumi_Akter
এক বছর পর।বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।অনেক গুলো জীবন প্রাণ হারিয়েছে।আপণ জন হারিয়ে মানুষ গুলো কেমন নিথর, পাথরের মূর্তির ন্যায় হয়ে গিয়েছে।শান্তির নীড়ে এখন আর কেউ থাকে না।বিগত এক বছর সেখানে মানুষের বসতি নেই।এই বাড়িটাকে ইসহাক হাসান অভিশপ্ত বাড়ি বলে পরিত্যাগ করেছেন।
মাগরিবের আজান ভেষে আসছে চারদিক থেকে,ভর সন্ধ্যা। মৃথিলা ওজু করে নামাজ আদায় করতে নামাজের পাটি বিছালো।নামাজ শেষ হবার আগেই নিরব বাইরে থেকে এলো, এসেই বিছানার উপর ফাইল গুলো ফেলল।দুই কানে হাত চেপে ধরে বিছানার উপর বসল।মৃথিলা সালাম ফিরিয়ে নিরবের দিকে তাকালো।নিরব গভীর দুঃচিন্তায় আছে।মৃথিলার নফল নামাজ বাকি এখনো।সেটুকু আদায় করে নিয়ে নামাজের পাটি গুটিয়ে নিরবের পাশে বসল।নিরবের কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘কি হয়েছে আপনার,আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?’
নিরব র*ক্তবর্ণ চক্ষুদ্বয় নিয়ে মৃথিলার দিকে তাকালো।কিছু না বলেই মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরল।একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল, ‘আমার ভীষণ ক্লান্ত লাগছে মৃথিলা।ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। আমি কেমন যেনো হাঁপিয়ে উঠেছি,আমার এ চাকরি ছেড়ে দেওয়া উচিত। ‘
মৃথিলা নিরব কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিরবের কপালে চুমু দিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে আপনি এমন করছেন কেনো?’
‘বিগত এক বছরে আমার আদরের বোনটার খু*নে*র কোনো কারণ আমি খুজে বের করতে পারলাম না।আমার ভাই এর খু*নে*র রহস্য জানতে পারলাম না।ওই মেয়ে দুইটা শহরের সমস্ত মেয়ে খালি করে ফেলেছে।রানীগঞ্জে এখন কোনো মেয়ে অবশিষ্ট নেই।৫০০ মেয়ে দুই বছর আগে গুম হয়েছিলো।তাদের আজ ও কোনো খোজ আমি বের করতে পারিনি।রানীগঞ্জের নাবিলা কে একটা কঠিন ওয়াদা করেছিলাম সেই ওয়াদা আজ ও রক্ষা করতে পারিনি।বারবার তোমার উপর এট্যাক হয় আমি কিছুই করতে পারিনা।আমি রিয়েলি একটা লুজার।’
‘সত্য একদিন সামনে আসবেই,আর সেটা অচিরেই আপনি ভাববেন না আর এসব নিয়ে।’
‘কেনো ভাবব না,আমার প্লান গুলো ওই মেয়ে দুইটা কিভাবে জেনে যায় এটাই বুঝতে পারি না।’
‘হয়ত আপনার আশেপাশের ই কেউ,নয়ত খুব চালাক কেউ।’
‘আমি কিছুই জানিনা মৃথিলা,আমি পুলিশ হয়ে যা করতে পারিনি একটা মেয়ে সে কাজ করেছে।ওই মেয়ে দুইটার হাত থেকে এক’শ মেয়েকে রক্ষা করেছে।মেয়েটা কে জানিনা সে সম্পূর্ণ আড়ালে থেকেই কাজ টা করেছে।মেয়েটা কে হতে পারে?আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর কোনো গোয়েন্দা ও না সে।তাহলে মেয়েটা এত রিস্ক নিয়ে কেনো এসব করল।’
‘হয়ত মেয়েটা নিজে থেকে চেষ্টা করেছে,যে কাজ পুলিশ পারে নি সে কাজ সে করেছে।’
‘আমার চারদিকে সব ই রহস্য, এই রহস্যর জালে পড়ে আমি পা*গ*ল হয়ে যাবো।’
‘চলুন না একটু পাহাড় বা সমুদ্র থেকে ঘুরে আসি।’
‘আগামি সপ্তাহে ছুটি নিয়ে যাবো চলো।
পরের দিন দুপুর একটা বাজে।সুপ্তি পার্কে বসে আছে রিফাতের জন্য।কিছুক্ষণের মাঝেই রিফাত এসে সুপ্তির সামনে বসল।সুপ্তি রিফাতের দিকে বলল, ‘কি ব্যাপার অফিসার।এইভাবে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে আমাকে ডাকা হয়েছে কেনো?’
রিফাত সুপ্তির হাতের উপর হাত রেখে বলল, ‘উইল ইউ ম্যারি মি সুপ্তি!’
সুপ্তি বিস্ময়কর ভাবে তাকালো আর বলল, ‘এই কথা আর কতবার বলবেন শুনি।’
‘আমি তো বলেই আসছি কিন্তু তুমি তো এক্সেপ্ট করো না।’
‘সময় হোক করব,এখন বিয়ের সময় হয়নি।’
‘প্লিজ সুপ্তি হ্যাঁ বলে দাও না প্লিজ।আই ওয়ান্ট ইউ ইন মাই লাইফ।’
‘এভাবে কাতর কন্ঠে বলার কারণ কি?আপনি জানেন না এভাবে বললে আমার খারাপ লাগে।’
‘এভাবে না বললে তোমার মায়া হয়না আমার প্রতি।’
‘মায়া এত খারাপ কেনো?আপনার মায়ায় জড়িয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি।’
‘চিন্তায় থাকো কেনো?’
‘আমার জীবনের অজানা অনেক কিছুই আছে,যেটা আপনার জানা নেই।জানলে আমায় ঘৃনা ছাড়া ভালবাসতে পারবেন না কখনো।’
‘তোমাকে আকাশ সমান ভালবাসি,ভালবাসা কখনো ঘৃণা তে পরিণত পরিণত হবে না।’
‘আমার ভয়ানক অতীত জানলে আমাকে ভালবাসতে ইচ্ছা করবে না তোমার।’
‘তাহলে সে অতীত জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই।’
‘আপনাকে যে জানতেই হবে।’
‘বললাম তো জানতে চাই না।’
‘আমি রেপড হয়েছিলাম,খুব খারাপ ভাবে।একজনের কাছে নয় কতগুলো মানুষের কাছে রেপড হয়েছিলাম।’
সুপ্তির কথায় রিফাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।মাথা চক্কর মেরে উঠল। সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো।সুপ্তির মলিন মুখের দিকে রিফাত তাকালো।কি বলবে বুঝতে পারছে না।সুপ্তি ও উঠে দাঁড়ালো। চোখ থেকে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল সুপ্তির।এক চাপা আর্তনাদ নিয়ে বলল, ‘নিশ্চয় এখন আর ভালবাসার কথা বলবেন না।’
রিফাত এদিক সেদিক তাকালো। আশে পাশে মানুষ আছে কিনা খেয়াল করে দেখল।আশে পাশে কেউ নেই।সুপ্তির দুই বাহু ধরে বলল, ‘ভালবাসা মানে এই বুঝলে তুমি।কেউ তোমার রেপড করলে আমি ছেড়ে যাবো।আরো বেশী ভালবাসব তোমাকে সুপ্তি,আরো বেশী ভালবাসব।শুধু একবার বলো ওরা কারা।আমি পু*তে ফেলব।’
‘কেনো এত ভালবাসেন আমাকে,আপনার ভালবাসার যোগ্য আমি না।’
‘আমি কখনো যেনো তোমাকে এসব আর বলতে না সুনি।শুধু বলো কে বা কারা।’
‘তখন আমি মাত্র কলেজে পা রেখেছি।রানীগঞ্জে একটা বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলাম বিয়েতে।সেদিন রাতে ছিলাম বান্ধবীর বাড়ি।বান্ধবী সহ আমি সহ অনেক মেয়েকে পাচারকারী রা তুলে নিয়ে গেছিলো।ওই পাচারটিমের কত গুলো জা*নো*য়া*র আমাকে। ‘
‘হোয়াট তুমি রানীগঞ্জে গেছিলে?রানীগঞ্জ চিনো তুমি?’রিফাত অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে কথাটা বলল।
‘চিনিনা,তবে বান্ধবীর বিয়েতে গেছিলাম।’
‘ওই গ্রাম নিয়ে আমাদের পুলিশ টিমের দুঃচিন্তার শেষ নেই।হাজারো প্রশ্ন ওই গ্রাম নিয়ে,অনেক রহস্য।’
‘ওহ আমি তো এসব জানিনা কিছু।’
‘এক মিনিট এক মিনিট
তুমি কিভাবে পাচারকারীদের হাত থেকে পালালে।’
‘আমার এসব নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে না।’
‘প্লিজ সুপ্তি আমাকে জানতেই হবে।যে প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘদিন খুজে বেড়াচ্ছি হতেও পারে তুমিই তার সমাধান দিতে পারো।’
‘রানীগঞ্জের একটা মেয়ে পালানোর সময় আমাকে নিয়েই পালিয়েছিলো।’
‘রানীগঞ্জের একটা মেয়ে মানে?’
‘ হ্যাঁ একজন পালিয়েছিলো,অনেক সাহসী ছিলো।’
‘তুমি কি নাবিলার সাথে পালিয়েছিলে।আই মিন তুমি নাবিলার কথা বলছো।’
‘নাবিলা কে?’
‘রানীগঞ্জের নাবিলা,নিরবের আপণ চাচাতো বোন।একমাত্র নাবিলা পাচারকারীদের হাত থেকে পালাতে পেরেছিলো।নাবিলার সাথে একটা মেয়ে ও পালিয়েছিলো।নাবিলার কাছে ক্রিমিনাল দের সমস্ত প্রুভ ছিলো।নাবিলা আমাদের বলেছিলো ওর সাথে যে মেয়েটা পালিয়েছিলো তার কাছেও অনেক প্রমান আছে।’
‘নাবিলা এখন কোথায়?আর ওনার নাম নাবিলা কিনা সিওর জানিনা।’
‘মারা গিয়েছে?’
‘কিভাবে?’
‘এর উত্তর কেউ জানেনা,এইজন্য নিরব রাত দিন খুজে চলেছে নাবিলার খু*নিকে।নাবিলার খু*নিকে খুজে পেলেই সব জানা যেতো।’
‘আশ্চর্য না ব্যাপারটা!আপনারা বলছেন নাবিলা আপনাদের কাছে অনেক কিছু বলেছে।তার মানে নাবিলা আপনাদের কাছে এসছিলো।পুলিশের কাছে এসে মারা গেলো কিভাবে।’
‘একচুয়ালি নিরব নাবিলাকে নিয়ে গেছিলো।একটা নিরাপদ জায়গা রাখার জন্য।নিরব ই ভাল বলতে পারবে।নাবিলা নিরবের দায়িত্ব ছিলো।’
‘একজন এস.আই.এর হেফাজতে থেকে একটা মেয়ে কিভাবে মারা যেতে পারে।এমন তো নয় আপনারাই মেরেছেন।’
‘এসব কি বলছো তুমি।’
‘যা মনে হলো তাই বলেছি।
‘সুপ্তি অনেক বড় একটা রহস্য আছে এখানে।তুমি জানোনা তাই।’
‘তাহলে বলুন কি সেই রহস্য।’
‘নিরব তোমাকে সবটা খুলে বলবে।আর প্লিজ আমাদের হেল্প করো ওই মেয়ে দুইটা কে ধরতে।’
‘আমি চেষ্টা করব।’
আলমারিতে কাপড় রাখার সময় ড্রয়ারে একটা মেয়ের কতগুলো ছবি পাওয়া গেলো।নিরব বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।মৃথিলা ছবিটা এনে নিরবের সামনে ফেলে বলল, ‘মেয়েটা কে?’
নিরব ছবিটার দিকে চোখ দিয়ে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘কোথায় পেলে?’
‘আলমারিতে।’
‘আমার বোন হয়,ওর নাম নাবিলা।’
নামটা ফোনে বলতে অসংখ্যবার শুনেছি।কখনো জিজ্ঞেস করিনি।বা আপনার ফ্যামিলিতেও কেউ কখনো বলে নি এর নাম।’
‘অনেক বড় এক কাহিনী।’
‘আমাকে কি বলবেন কি কাহিনী।’
‘তুমি আমার বউ সব জানার রাইট আছে।’
এরই মাঝে নিরবের ফোন বেজে উঠল।রিফাতের নাম্বার ভাষছে স্ক্রিনে।নিরব মৃদু হেসে বলল, ‘এক মিনিট প্রিয়দর্শিনী।’
চলবে…..