#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩
#writer_Mousumi_Akter
‘মানুষের র*ক্ত খেয়েছো কখনো?কেমন লাগে জানো খেতে।আমি খেয়েছি।মানুষের র**ক্ত খাওয়ার পর নেশা হয়ে গিয়েছে।আর কোনো কিছুই ভালো লাগেনা খেতে।’
এমন ভয়ংকর কথা শুনে মৃথিলার বুক কেঁপে ওঠে আতংকে।মৃথিলার পাশে দাঁড়িয়েই একজন লোক আরেকজন মহিলাকে কথাটা বলছে।
অপরপাশের মহিলা বলছে,
‘ইয়াক থু!মানুষের র**ক্ত কেউ খায় নাকি।’
‘হুম খায় তো।নুনতা খেতে।’
‘পা*গ*লে কি না বলে।’
‘আমি পা*গ*ল না।ওইযে শান্তির নীড় দেখতে পাচ্ছো না।ওই শান্তির নীড় আর শান্তির নীড় থাকবেনা।ওই বাড়ির প্রতিটা মানুষের র**ক্ত চুষে খাওয়ার জন্য ওরা অপেক্ষা করছে।’
‘ওরা কারা?আর ওদের র**ক্ত ই বা খাবে কেনো?’
‘ওরা তারা খুব ভয়ংকর আর খুব খারাপ। যাদের শায়েস্তা করেছে এই শান্তির নীড়ের মানুষজন।এই বাড়িতে কেউ প্রবেশ করোনা। যে প্রবেশ করবে তার ও র**ক্ত চুষে খেয়ে ফেলবে।ওরা র**ক্ত নিয়ে খেলা করে।আমার সবার র**ক্ত এই শান্তির নীড়ে গেছিলাম বলে ওরা চুষে খেয়েছে।’
‘শান্তির নীড়ের মতো ভালো মানুষদের পেছনে কারা লাগলো।ওরা কারা ওদের কি কেউ কোনদিন ধরতে পারবে না।ইশহাক হাসান এর মতো মানুষ আর তার ছেলে নিরবের মতো মানুষ এর ক্ষতি কেনো কেউ করবে।’
‘হাহাহাহাহাহাহা আমি সব জানি।আমামে র**ক্ত খেতে দাও সব বলছি।’
মৃথিলা লোকটার কথা শুনে ভয়ে নীলাভ পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।থর থর করে কাঁপছে মৃথিলা।নীলাভ বিরক্ত হয়ে মৃথিলার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো আর রাগে কটমট করে বললো,
‘এটুকু শুনেই ভয় পেয়ে গেলি।একবার প্রবেশ কর এই বাড়িতে তারপর বুঝবি।তোর র**ক্ত ও নীলাভ চুষে খাবে।তোর র**ক্ত দিয়ে যদি পার্টি না দিয়েছি বন্ধুদের মাঝে তাহলে আমার নাম ও নীলাভ নয়।আর তোর এই শরীর দিয়ে কি করবো দেখে নিস।’
মৃথিলা নীলাভ এর কথা শুনে থমকে যায়।ভয়ে আর তার পা এগোচ্ছে না।নীলাভ তাকে মে**রে ফেলবে এই ভয় মৃথিলার মনে প্রাণে ঢুকে গেলো।পৃথিবীতে নিজের প্রাণের থেকে বেশী আর কিছুই নেই।মৃথিলা এই মুহুর্তে নিজের সন্তানের কথা ভাবছে না।নিজের জীবনের কথা ভাবছে।নিজের জীবন ই যদি না বাঁচে তাহলে সন্তান কে কিভাবে বাঁচাবে।মৃথিলা যে দাঁড়িয়ে গিয়েছে নিরব আর রিফাত সেটা খেয়াল করেনি।মৃথিলা আর নীলাভ কে একসাথে আসতে বলে নিরব আর রিফাত খানিক টা আগে হাঁটছে।নীলাভ ও মৃথিলাকে ফেলে খানিক টা আগে চলে গিয়েছে।হঠাত রিফাত পেছনে তাকিয়ে দেখে মৃথিলা অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
রিফাত নিরব কে বললো,
‘মৃথিলা পেছনে থেকে গিয়েছে।’
নিরব পেছনে তাকিয়ে দেখে শান্ত কিশোরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে মৃথিলা।নিরব এগিয়ে গিয়ে নীলাভ কে বললো,
‘কি ব্যাপার নীলাভ মৃথিলা পিছনে আর তুমি আগে চলে এসছো কেনো?ভুলে যেওনা তোমার হবু বউ মৃথিলা।আর ও এখন প্রেগন্যান্ট। তোমাকে অনেক কেয়ারিং হতে হবে ওর ব্যাপারে।’
নীলাভ এবার বিরক্ত গলায় বললো,
‘ভাইয়া অচেনা এক জঞ্জাল তুমি আমার ঘাড়ে উঠিয়ে দিচ্ছো।যাকে আমি চিনি নাহ।আমি তো দেখছি আমার থেকে তোমার দরদ একটু বেশী এই মেয়েটার প্রতি।আমার মনে হয় তোমার এই মেয়েটাকে বিয়ে করা উচিত।’
নিরব আবার ও নীলাভ এর গায়ে হাত তুললো।রাগে কাঁপছে নিরব।শক্ত কন্ঠে বললো,
‘নেক্সট টাইম আর একটা বাজে কথা বললে বেশী না জাস্ট একটা গু*লি ব্যাবহার করবো আমি তোমার জন্য।তুমি ভালো করেই জানো গু*লি করতে আমার হাত কাঁপে না।মাইন্ড ইট।’
নীলাভ নিরবের রাগ দেখে ভয়ে চুপ করে গেলো।নিরবের পক্ষে একটা গুলি করা কোনো ব্যাপার ই না।
নিরব এগিয়ে গেলো মৃথিলার কাছে।মৃথিলার চোখে মুখের ভয়ার্ত অবস্থা। প্রচন্ড ভয় পেলে মানুষ যা করে মৃথিলা তাই করছে।নিরব মৃথিলাকে বললো,
‘ কি ব্যাপার মৃথিলা তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছে যে।আর এত ভয় পেয়ে আছো ক্যানো?’
মৃথিলা জড়ানো কন্ঠে বললো,
‘ও ও আমাকে মে**রে ফেলবে।’
‘কে?’
‘নীলাভ।’
‘তুমি নিরবের কাছে আছো?নিরব মানেই তোমার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্হল।’
‘কিন্তু ও যে বললো।’
‘কেউ তোমাকে মা*রা তো দূরের কথা ছুঁয়ে দেখলেও আমি তাকে জীবন্ত রাখবো না।কেউ জাস্ট ছুঁয়ে দেখুক তোমায়।তার লা**শ ফেলে দিবো।’
‘ওই লোকটা এসব কি বলছে।আপনাদের বাড়িতে নাকি র**ক্ত খায়।মানুষের র**ক্ত।মৃথিলা হাতের ইশারায় লোকটাকে দেখালো।’
নিরব আড়চোখে তাকালো লোকটার দিকে।আর ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
‘মজনুর কথায় ভয় পেয়েছো?মজনু ওর লাইলির জন্য পা*গ*ল হয়ে গিয়েছে।আর এসব উল্টা পাল্টা কথা বলে।মজনু পা*গ*ল বললে এলাকার সবাই তাকে চিনে।’
‘উনার লাইলি কে?’
‘আমাদের বাড়িতেই আগে কাজ করতো।পরে কি নিয়ে মজনুর সাথে ঝামেলা হয়ে গলাই দড়ি দিয়ে মা**রা যায়।সেখান থেকেই পা**গ*ল হয়ে গিয়েছে।’
মৃথিলা এখন নিরবদের বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আছে।বাড়ির গেটে লেখা আছে শান্তির নীড়।এত সুন্দর আলিশান বাড়ি মৃথিলা আগে কখনো চোখে দেখে নি।
শান্তির নীড় নিরবের বাবার অনেক পরিশ্রমের ভবন।বাড়িটি বিদেশী সিস্টেম এ তৈরি করেছেন।সন্তান দের নিয়ে ভীষণ সুখের জীবন তার তাই এ বাড়িটির নামকরণ করেছেন শান্তির নীড়।বাড়িটি শহরে হলেও শহরের মতো অল্প জায়গায় প্রতিষ্ঠিত নয়।বিশাল জায়গা জুড়ে বাড়ি।কম করে ভেতরে আরো ত্রিশ টা বাড়ি হবে।ছোট খাটো একটা গ্রমের মতো বাড়ির জায়গা।বাড়ির ভেতরের এক সাইড থেকে আরেক সাইড পায়ে হেঁটে যেতে পা ব্যাথা করবে।নিরব মৃথিলার হাত ধরে বললো,আমার বাবার বিন্দু বিন্দু ঘামের বিনিময়ে এই শান্তির নীড় তৈরি।এখানে প্রবেশ করছো তুমি। আজ থেকে জীবনের সব অশান্তি মুছে যাবে তোমার।’মৃথিলা নিরবের হাত ধরে এক অজানা ভবনে প্রবেশ করলো।এখান থেকেই ভয়ংকর এক প্রেমের সূত্রপাত শুরু হলো।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই আরিফার সাথে দেখা।আরিফা এ বাড়িতেই কাজ করে।এ বাড়িতে মোট আটজন কাজ করে।চারজন পুরুষ চারজন মহিলা।চারজন পুরুষ রাখা গরুর খামারের জন্য।তাদের জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা আছে। চারজন মহিলা আছে রান্নাঘর সহ বাড়ির অন্যান্য কাজ করার জন্য।আরিফা আর রাহিলা রান্না করে সব সময়।
আরিফা নিরব কে দেখেই মাথার ঘোমটা টেনে নিলো।হা করে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।সে জীবনে এত সুন্দর মেয়ে দেখে নি।
ভয় ভয় মনে প্রশ্ন করলো নিরবকে,
‘ভাইজান এই সুন্দরী আফাই কেডা?ভারী সুন্দর দেখতে তো।একবারে সিনেমার নাইকাদের মতো।’
নিরব মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তোদের ভাবি হয়।’বলেই মৃদু হাসলো।
আরিফা গাল ভরে হাসছে।নিরব খুব একটা এ বাড়িতে আসে না।নিরব মাসে দু,চার দিন আসে।নিরব একবার কথা বললে আরিফা মারাত্মক খুশি হয়।নিরব একটা উত্তর দিলে আরিফা খুশিতে নাচতে থাকে।নিরব আরিফার কাছে স্বপ্নের পুরুষ। আরিফা সব সময় ভাবে তার যেনো নিরবের মতো একটা রাজপুত্রের মতো বর হয়।আরিফা মৃথিলাকে নিরবের হবু বউ ভেবে দ্রুত রান্না ঘরে ছুটে যায়।রাহিলা রাতে রান্নার যোগাড় করছে।
আরিফা হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে বললো,
‘রাহিলা খালা জানো কি হইছে?’
রাহিলা বটিতে বসে কুমড়া কাটছিলো।আরিফার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো।কি হইছে বল।’
‘নিরব ভাইজান সিনেমার নায়কাদের মতো একটা মেয়ে নিয়ে আইছে।আমি জিগাইছিলাম এ কে ভাইজান।কইছে তোদের ভাবি।’
রাহিলা দুই গালে হাত দিয়ে বললো,
‘কি বলিস সত্যি নাকি।’
‘হ খালা সত্যি।’
‘তাহলে নবনিতার কি হবে।’
‘হুরো খালা।ও নবনিতা তো কালা।ঘষে মেজে একটু সাদা হইছে।তাও দেখোনা পায়ের থেকে মুখ কেমন বেশী সাদা বানাইছে।আর নিরব ভাইজান যে মেয়ে নিয়ে আইছে আমি মেয়ে হয়ে তাই চোখ ফিরাইতে পারছিলাম না গো খালা।কোনো গাছে বসে থাকা প*রী নিরব ভাইজান তুলে নিয়ে আইছে খালা।’
‘এই বাড়িতে বিশাল অশান্তি হবেরে আরিফা।নবনিতা যদি দেখে নিরব তারে ছাড়া অন্য একজন রে নিয়ে আইছে কি না কি কান্ড ঘটাবে।সে যা মেয়ে।’
‘হ খালা।দেখোনা আমি একটু নিরব ভাইজানের সাথে কথ কই বইলা আমারে কিভাবে অপমান করে।আমারে অপমান করা এই বার বুঝবি কাল*না*গি*নী আমার অভিশাপ কেমনে ফলে যায়।’
‘চুপ কর আরিফা নবনিতা শুনে ফেললে আমাদের কাজ চলে যাবে।’
আরিফা আবার কিছু পেটে চেপে রাখতে জানেনা।যার প্রতি ক্ষোভ তাকে কথা শোনানোর সুযোগ পেলেই সে শুনিয়ে ছাড়ে।
কিছুক্ষণের মাঝে নবনিতা রান্নাঘরে প্রবেশ করে রাহিলাকে বললো,
‘খালা শুনলাম নিরব এসেছে।ওর জন্য মুরগি,পোলাও,চাটনি রান্না করো।আর হ্যাঁ আরিফা ভুলেও নিরবের আশে পাশে যাবিনা ঘনঘন।নিরব ভাইজান নিরব ভাইজান করে ঘ্যান ঘ্যান করবিনা বিরক্তি লাগে।নিরবের আশে পাশে কাউকে আমি সহ্য করতে পারিনা।’
আরিফা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
‘আমিতো এমনি ভাইজান ভাইজান করি তাও আপনি আমারে সহ্য করতে পারেন না।এইবার বুঝবেন কেমন লাগে।এই আরিফার বদ দোয়া কামে লাগছে।নিরব ভাইজান সিনেমার নায়কাদের মতো একটি সুন্দরী আফা নিয়ে আইছে।বিয়ে করবে বলে।বুঝবেন কেমন লাগে।’
নবনিতার হাতে থাকা কাচের জগ টা ফ্লোরে পড়ে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্হা।নিরব কে সে ভীষণ ভালবাসে।আরিফার কথা সত্য কিনা যাচাই করতে এক সেকেন্ড ও না দাঁড়িয়ে নিরবের রুমের দিকে গেলো।
চলবে..