#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩০
৪০.
#Writer_Mousumi_Akter
মৃথিলা প্রচন্ড বমি করছে,বমি করতে করতে একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।নিরব রিফাতের ফোন কল পেয়ে বারান্দায় গিয়ে ফোনে কথা বলছে।বেসিং এর সামনে মৃথিলার ওয়াক এর শব্দ শুনে রিফাত কে বলল, ‘মৃথিলা বমি করছে কল ব্যাক করছি ওয়েট।’
নিরব ফোনটা বিছানায় ফেলে দিলো।দ্রুত গতিতে এসে মৃথিলার মাথা ধরল।মৃথিলা ক্লান্তিতে নিরবের কাঁধে মাথা রাখল।প্রায় অচেতন এর মতো অবস্হা।নিরব পানি ছেটালো মৃথিলার চোখে মুখে।মৃথিলা ক্লান্ত কন্ঠে খুব স্লোলি বলল, ‘আমাকে একটু সুইয়ে দিবেন।মাথাটা ভীষণ ঘুরছে।’
নিরব পাজা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলো।হঠাত কি হলো মৃথিলার।নিরব দুঃচিন্তায় অস্হির হয়ে পড়েছে।উঠে এসে ডাক্তার কে ফোন দিতে যাবে তখন ই মৃথিলা নিরবের হাত টেনে ধরে বলল, ‘প্লিজ কোথায় যাবেন না।’ নিরব সাথে সাথে বসে পড়ল।মৃথিলার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ‘তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি প্রিয়দর্শিনী।ভ★য় পেও না।আমি আছি তোমার পাশে।তোমার কিছুই হবেন।’
আধাঘন্টা পর মৃথিলা ঘুমিয়ে পড়েছে।নিরব ফোনটা হাতে নিয়ে ইসহাক হাসানের নাম্বারে কল করল।রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পরে ইসহাক হাসান দীর্ঘনিঃশ্বাস টেনে বলল, ‘বাবা নিরব বলো।’
‘বাবা তুমি আর মা কি আসতে পারবে।মৃথিলার ইদানিং হুট হুট শরীর খারাপ হয়।সারাক্ষণ ভ*য়ে থাকে। ‘
‘আমার আর শহরের রং চং ভালো লাগেনা বাবা।তুমি বরং মৃথিলাকে এখানে রেখে যাও।ছুটি নিয়ে দুজনে ঘুরে যাও।দেখবে মৃথিলার ও মন ভালো হবে।’
‘বাবা তাহলে তাই করব,দেখি আজ ছুটির জন্য বলব।মা কোথায়?মায়ের শরীর কেমন।’
‘আগের মতোই আছে এখন।’
‘দুজনেই সাবধানে থেকো।’
‘আর সাবধান।’
প্রাণের টুকরো মেয়েকে হারিয়ে ইসহাক হাসান ফিরে গিয়েছেন তার দাদার ভিটায়।সাথে ইরিনা হাসান কেও নিয়েছেন।
‘পাহাড় তলী এলাকায় তার দাদার একটা পুরণো মাটির ঘর আছে সেখানেই গিয়ে জীবনের শেষ ক’দিন কাটাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।শান্তির নীড়ে যারা কাজ করত তারাও এখন আর ভয়ে থাকেনা।সবাই যে যার মতো পালিয়েছে।মৃথিলা ঘুমিয়ে আছে।নিরব তাকিয়ে আছে মৃথিলার ঘুমন্ত মুখের দিকে।গত এক বছরে হাজারো স্মৃতি তাদের।রোজ অফিসে যাবার সময় হাতের ঘড়ি বেঁধে দেওয়া,শার্টের বোতাম লাগানো,গালে তুলে খাইয়ে দেওয়া এসব যেনো এখন নিরবের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।ঘন্টা খানিক পর মৃথিলার জ্ঞান ফিরল।নিরব কাছে গিয়ে বলল, ‘এখন কেমন লাগছে।’
‘ভালো।’
‘কিছু খাবে?’
‘না।’
‘তাহলে রেডি হয়ে নাও আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো।’
‘না না আমি যাবো না।’
‘কোনো কথা হবেনা,যেতেই হবে।তুমি ঠিক তো আমার দুনিয়া ঠিক,তুমি বেঠিক তো আমার দুনিয়া অন্ধকার।তোমার এই মায়াবী মুখের দিকে তাকালে আমি এমন সুখ অনুভব করি নিজেকে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ বলে মনে হয়।ভালবাসি প্রিয়দর্শিনী।’
‘আচ্ছা ভালবাসার মানুষ ঘৃণা করলে কেমন লাগে,কাছে এসে দূরে সরে গেলে কেমন লাগে।’
‘তাহলে সেই মানুষ এর মৃত্যুর প্রয়োজন হবেনা আর।বেঁচে থেকেও জিন্দা লাশ হয়ে যাবে।’
‘রিয়েলি।’
‘কি ব্যাপার বলোতো।’
‘না’কিছু না।’
নিরব আলমারি থেকে একটা সোনালি পাড়ের কালো শাড়ি বের করে মৃথিলাকে বলল, ‘আসো পরিয়ে দেই।’
‘না আপনি তাকিয়ে থাকেন শুধু।’
‘না দেখে কি করব,তুমি এতটাই সুন্দর আমি চোখ ফেরাতে পারিনা।ওই চোখের মায়া আমি এ জীবনে কাটাতে পারব না।’
নিরব মৃথিলাকে শাড়ি পরিয়ে দিলো।কালো শাড়িতে মৃথিলাকে নিরবের চোখে ভয়ানক সুন্দরী মনে হয়।নিরব মৃথিলার কপালে চুমু দিয়ে বলল, ‘আমি সত্যি খুব ভাগ্যবান পুরুষ, আমার বউ এর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা পেয়েছি।’
দু’জনে ডাক্তারের কাছে রওনা হলো।মৃথিলাকে কেমন বিষন্ন দেখাচ্ছে,ভীষণ উদাসীন। নিরব অভিজ্ঞ নয়নে সেটা খেয়াল করে দেখছে।নিরব মৃথিলার হাতের উপর হাত রেখে বলল, ‘কি নিয়ে মন খারাপ প্রিয়দর্শিনী।’
মৃথিলা কোনো উত্তর দিলো না।গাড়ির সামনে একটা ছেলে বেলী ফুলের গাজরা ধরে বলছে আপা নিবেন?
মৃথিলার সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই।নিরব একটা গাজরা কিনে মৃথিলার খোপায় পরিয়ে দিলো।ঘারে হাতের স্পর্শ লাগতেই ভাবনা থেকে বের হলো মৃথিলা।নিরব আবার বলল, ‘বলবে না কি হয়েছে?’
‘আজ মায়ের মৃত্যুর দিন।’মৃথিলা চাপা এক কষ্ট নিয়ে কথাটা বলল।নিরব পৃথিবীর সব সহ্য করতে পারলেও মৃথিলার মলিন মুখ দেখে সহ্য করতে পারেনা।মৃথিলা হাসলেই তার পৃথিবী হাসে।এখন কোনো কিছু বলেই মৃথিলার মন ভালো করা সম্ভব নয়।সে চেষ্টা করেও লাভ নেই।নিরব ক্ষণে ক্ষণে মৃথিলার কষ্ট অনুভব করছে।ডাক্তারের কাছে গেলে ব্লাড টেস্ট দিলো।টেস্টের রেজাল্ট ডাক্তারের হাতে।নিরব অস্হির হয়ে বলছে, ‘স্যার কোনো প্রব্লেম?’
ডাক্তার মৃদু মৃদু হাসছে আর বলছে, ‘প্রব্লেম তো বটেই যান আগে মিষ্টি নিয়ে আসুন।’
মৃথিলা সাথে সাথে চোখ তুলে তাকালো।দুঃচিন্তা এমনিতেও তার ছিলো।সে যা মনে মনে ভাবছে তা সত্য হবে নাতো।দুঃচিন্তা বুক কাঁপছে। নিরব বিস্ময়ের সাথে বলল,
‘মিষ্টি মানে?’
‘দুঃচিন্তার কিছুই নেই।প্রথম প্রথম ৩ মাস মেয়েদের এমন হয়ে থাকে পরে ঠিক হয়ে যাবে।আপনার ওয়াইফ দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট। ‘
নিরব এর ধারণাতেও ছিলো না সে এমন কোনো নিউজ শুনবে।মৃথিলাকে সে প্রচন্ড ভালবাসে কিন্তু শারিরীক কোনো ব্যাপারে এক বিন্দু জোর করেনি।মৃথিলার নিষেধ ছিলো।দেড় মাস আগে।সেদিন মৃথিলার প্রচন্ড জ্বর ছিলো।বাইরে ছিলো প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি। হুঁশ ছিলো না।বৃষ্টি আর ঠান্ডায় প্রতিটা মানুষ ই কাউকে ভালবাসলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়।জ্বর আর ঠান্ডায় মৃথিলা নিজেই নিরব কে আঁকড়ে ধরেছিলো।অঘটন যা ঘটার সে রাতেই ঘটে গিয়েছিলো।নিরবের জন্য ছিলো প্রিয়দর্শীর প্রথম কাছে যাওয়ার রাত।ভালবাসায় টইটুম্বুর ছিলো।কিন্তু মাত্র একটা রাতের ভুলে এমন কিছু হবে নিরব ভাবতেই পারেনি।তবে নিরব ভীষণ খুশি।এতটা খুশি পারলে এখুনি মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরত।খুব জানতে ইচ্ছা করছে ‘প্রিয়দর্শিনী তুমি কতটা খুশি আজ।’
মৃথিলাকে উঁচু করে তুলে ধরে বলতে ইচ্ছা করছে, ‘মৃথিলা আমার জীবনের শ্রেষ্ট খুশি এনে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
নিরব আনন্দে বিমোহিত হয়ে মৃথিলার দিকে তাকালো।এত আনন্দ নিরবের চোখে মুখে সে সাথে সাথে তার বাবাকে ফোন করে জানালো।মৃথিলা নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে।মৃথিলার স্হির চাহনি ফ্লোরে।চোখ দিয়ে ক্রমাগত টুপটাপ পানি পড়ছে।মৃথিলার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে তার জীবনের সব থেকে বড় কোনো বিষাদ সে ভোগ করছে।কষ্ট চেপে রাখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মৃথিলার।উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। নিরব বুঝতে পারল মৃথিলার মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে।মায়ের মৃত্যু দিনে নিজের প্রেগন্যান্সির নিউজে কষ্টটা বেশী লাগছে।নিরব মৃথিলার কাঁধে হাত রাখল শান্ত কন্ঠে বলল, ‘মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে।’
মৃথিলা এবার জোরে কেঁদে দিয়ে দৌড় মারল।নিরব ডাক্তার কে বলল, ‘স্যার ওর মায়ের মৃত্যুদিন আজ।আমি আসি পরে আবার আসব।’
‘মেয়েরা মা বাবার প্রতি ভীষণ দূর্বল থাকে।’
সারারাস্তা মৃথিলা একটা কথা ও বলে নি।থম মেরে বসে রয়েছে।নিরব একটা প্রশ্ন ও করেনি শুধু বলেছে তোমার মলিন মুখ আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।নিরব জানে মন ভাল হলে মৃথিলা নিজেই কথা বলবে তাই আর বেশী কিছু বলেনি।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে নিরব অফিসে গেলে মৃথিলা বাসা থেকে বের হলো।নির্জন একটা ফাঁকা জায়গা।সাইডে বিশাল বড় নদী।নদীর কিনারায় সুপ্তি জিন্স আর শার্ট গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।মৃথিলার পরণে বোরকা।নদীর কিনারায় পৌছে মৃথিলা বোরকা খুলে ফেলল।মৃথিলার পরণেও ব্লু জিন্স আর কালো শার্ট।সুপ্তির চোখে মুখে ভয়ানক রাগ।মৃথিলার প্রতি তীব্র রাগ সুপ্তির।রাগে ফুলছে সুপ্তির সমস্ত শরীর।মৃথিলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চোখ ভরা পানি।
সুপ্তি ভয়ানক অগ্নি চোখ মৃথিলার কাছে এগিয়ে গিয়ে মৃথিলার গালে থাপ্পড় মারে স্বজোরে।এই একটা থাপ্পড়েও যেনো সুপ্তির আয়েস মেটেনি।এবার মৃথিলার দুই বাহু ধরে জোরে ঝাঁকি মেরে বলে, ‘আর ইউ প্রেগন্যান্ট? হোয়াট ইজ দিস।কিভাবে হলো এটা।এটা হওয়ার চান্স কিভাবে দিলি তুই।আজ তোর মায়ের মৃত্যু দিন।আর এইদিনে তুই তোর মায়ের খুনির সন্তান গর্ভে ধারণ করে সেলিব্রেশন করছিস।ভুলে গিয়েছিস অতিত।তুই ওই নিরব এর জন্য আজ এতিম।তোর আমার পুরা লাইফ টা হেল করে দিয়েছে ওই বাস্টার্ড রা।আনসার মি মিথু আনসার মি!’
চলবে……