#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩১
#Writer_Mousumi_Akter
মৃথিলা মহাপ্রলয়ের মতো ভুবন কাঁপানো এক ভয়ংকর আত্মচিৎকার দিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।দুই হাত দিয়ে মাটি খামচে ধরে নিচু দিকে তাকিয়ে বেসামাল কাঁন্নায় ভেঙে পড়ল।দীর্ঘদিন সে মন খুলে কাঁদতে পারে নি, অনেকবার কাঁদতে ইচ্ছা হয়েছে,কাঁন্না পেয়েছে তবুও সে বুকে পাথর চাপা দিয়ে থেকেছে,চাপা কাঁন্নার আর্তনাদে জর্জরিত হয়েছে বহুবার।মৃথিলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তার মা বাবাকে ডাকছে আর কাঁদছে,
‘মা, বাবা, আপু আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা।আমি কিভাবে পারলাম তোমাদের খু*নিকে ভালবাসতে? কিভাবে এত জঘন্য একটা মানুষের সংস্পর্শে গেলাম।কিভাবে তার ই সন্তান নিজের পেটে ধারণ করলাম।নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হচ্ছে বাবা।ভীষণ ঘৃণা করতে ইচ্ছা করছে নিজেকে।আই হেট মি বাবা, আই হেট মি!তোমাদের মেয়ে এত খারাপ হয়ে গেলো কিভাবে? কিভাবে নিজের উদ্দেশ্য ভুলে প্রেম ভালবাসার মতো পবিত্র জিনিস একটা অপবিত্র মানুষের জন্য নিজের মধ্য ধারণ করল।যার হাতে তোমাদের র*ক্তে*র ঘ্রাণ লেগে আছে সে হাত থেকে কিভাবে আমি ভালবাসার ঘ্রাণ নিলাম।আমি এখন কি করব বাবা,এখন আমার কি করা উচিত মা।নিজের মা বাবার হত্যাকারীকে কেউ ভালবাসে,কেউ কোনদিন পারবেও না। বহুবার শরীর রি-রি করেছে ওই খু*নি*র সংস্পর্শে গেলে।বহুবার ঘৃনায় অসহ্য ফিলিং হয়েছে।তবুও প্রতিশোধের আগুনে পুড়তে পুড়তে আমি তার স্পর্শ সহ্য করেছি। নিঁখুত অভিনয়ে নিরব কে ধ্বংস করতে চেয়ে আমি নিজেই দুর্বল হয়ে পড়েছি কখন বুঝতে পারিনি।নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে আমার।আমার জীবন এখন এমন একটা জায়গা দাঁড়িয়ে আছে আমার জীবনের সব হাসি আনন্দ কেড়ে নেওয়া মানুষ টা আমার হাসি আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমি নিরবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি,এমন আসক্তি যা জীবন মরণের উর্দ্ধে চলে গিয়েছে।নিরব আমার সামনে এলে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আমি আমার শত্রুকে খু*ন করতে চেয়ে এখন আমার ভালবাসাকে খুন করতে হচ্ছে।নিরব আমার জীবনের একমাত্র শত্রু আমার সমস্ত ভালবাসা কেড়ে নিয়েছিলো আর আজ সেই নিরব কেই আমি ভালবেসে ফেলেছি।আমার জীবন টা এমন হলো কেনো বাবা।নিয়তি কেনো এই ভয়ংকর পরিস্হিতিতে ফেলল।’
প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মৃথিলার,তীব্র যন্ত্রণায় জ্বলে যাচ্ছে হৃদয়,ছটফট করছে ব্যাথায়। বেদনার নীল রঙে আহত হচ্ছে,ক্ষণে ক্ষণে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে আত্মা।মৃথিলার জীবনে রয়েছে ভয়ানক এক অতীত।নৃসংস ভাবে খু*ন হয়েছিলো তার ফ্যামিলি।শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য তার মা -বাবাকে জীবন দিতে হয়েছিলো।
সুপ্তি মাটিতে বসল, মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘প্রেম -ভালবাসা আমাদের জন্য নয় মিথু। তাহলে তো জীবন টা এমন হতো না।আমরাও স্বাভাবিক একটা জীবন পেতাম।সে জীবনে কাউকে ভালবেসে জীবন পাড়ি দিতে পারতাম।আমাদের ফিউচার ফাঁ*সি মিথু । আমাদের এই চারহাতে কত মানুষের প্রা *ণ নিয়েছি তার হিসাব নেই।তাছাড়া ভালবাসা টা যদি অন্য কারো সাথে হতো দু’দিন হলেও প্রাণ খুলে তার হাত ধরে এই ধরণীতে প্রাণখুলে বাঁচতে পারতি।কিন্তু নিরব সেই ছেলে যে তোর অস্তিত্বের খু*নি।নিজের প্রতিহিংসা মেটাতে যাকে মৃত্যু উপহার দেওয়া যায় কিন্তু তাকে ভালবাসা উপহার দেওয়া যায় না।তোর সমস্ত কিছু ধ্বংস করেছে ওরা।ওই নিরবের জন্যই একটা শান্ত শিষ্ট মেয়ে থেকে তুই আজ খু*নি।যে মেয়ে ভু*তে *র ভয়ে ওয়াশ রুম যেতে পারত না সে মেয়ে আজ রাতের অন্ধকারে মানুষ খু*ন করে।যে মেয়েকে একটা ধমক দিলে কেঁদে দিতো সে মেয়ের আজ রণমুর্তির ন্যায় রুপ।যে মেয়ে ছিল অত্যান্ত মেধাবী হাতে কলম থেকেছে সেই মেয়ের হাতে আজ ধারালো অস্ত্র থাকে।যে মেয়ের সরল মুখে তাকিয়ে কোনো ছেলের মন হারানোর কথা সেই মেয়ে আজ র*ক্ত নিয়ে খেলা করে।এসব কিছুর জন্য কে দায়ী মিথু? নিরব দায়ী নিরব।নিরব তোর আপনজনদের কেড়ে নিয়েছে নিরব কে সেইসব কষ্ট দিতে তোকেও ওর সব আপণ জন কেড়ে নিতে হবে।মা বাবাকে শেষ দেখাও তুই দেখতে পারিস নি।সেই ভয়ংকর কালরাত্রীর কথা ভুলে গিয়েছিস।নিরব যে তোর বাবার বুকে অস্ত্র চালিয়েছিলো ভুলে গিয়েছিস।’
সুপ্তির কথাগুলো মৃথিলার রক্তবর্ণকে আগুন করে তুলল।চোখের সামনে ভেষে উঠল সেই ভয়ানক অতীত।নিমিষেই মৃথিলার শরীর দাউ দাউ করে উঠল।চোখ দিয়ে রাগের ঝাঝালো আগুন বের হচ্ছে।এখনি নিরব সহ পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস করে ফেলতে পারলে প্রশান্তি মিলত।
দাঁতে দাঁত চেপে মৃথিলা বলল,
‘আমি কিছুই ভুলি নি সুপ্তি। নিরব কে আমি ছা*ড়*ব না কিছুতেই না।’
‘এত বড় ভুল কিভাবে হলো মিথু।এমন তো হবার কথা ছিলোনা।কত প্লান করে কত পরিশ্রম করে আমরা এত দূর এসেছি।নীলাভের মিথ্যা বাচ্চার নাটক করতে গিয়ে আজ নিরবের বাচ্চার মা হয়ে গেলি কিভাবে?’
মৃথিলার চোখ ভরা পানি।এমন একটা হৃদয়বিদারক মুহুর্তে একটা মেয়ের কতটা কষ্ট হয় সেটা আন্দাজ করাও সম্ভব নয়।খোলা চুলে ভরা সন্ধ্যায় বুকে হাত বেঁধে নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে মৃথিলা একদম চুপচপ।চারদিক পিনঃপতন নিরবতা।মাঝে মাঝে শুকনো পাতার মড়মড়ে আওয়াজ হচ্ছে।নদীর ওপারে জঙ্গল ওখান থেকে শিয়ালের ডাক ভেষে আসছে।চারদিকে জোনাক পোকা উড়ছে, ঝি ঝি পোকার ডাক ও শোনা যাচ্ছে।নদীর স্রোত নিরিবিলি বয়ে চলেছে।মাথার উপর এক ফালি চাঁদ সোনালি কিড়ণ ছড়াচ্ছে।আনমনে নিজের অতীত জীবনের কথা ভেবে চলেছে মৃথিলা।রানীগঞ্জের একটা হাসি খুশি হত দরিদ্র ফ্যামিলতে জন্ম তার।ঠিকভাবে ভাত ও পায় নি এটা ঠিক কিন্তু সংসারে ভালবাসার অভাব ছিলো না।বাবা একজন রিক্সাচালক ছিলেন।মায়ের ভীষণ আদুরে ছিলো সে আর তার বোন।মৃথিলা একদম চুপচাপ আর শান্তশিষ্ট ছিলো বলে বাবার একটু বেশী প্রিয় ছিলো।তার মায়ের মতো একটা বোন ও ছিলো।যে ছিলো ভীষণ সাহসী, স্বপ্ন ছিলো পুলিশ অফিসার হবার।বোনের বিপরিতে মৃথিলার অবস্থান ছিলো।মৃথিলা ছিলো অত্যান্ত ভীতু আর শান্ত শিষ্ট মেয়ে।বড় হবার সাথে সাথে রানী গঞ্জে ঘটতে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা।একের পর এক মেয়ে আর মহিলা নিঁখোজ হচ্ছিলো না হলে ধ*র্ষ*ন করে খু**ন করে ফেলে যাচ্ছিলো।যতগুলো পুলিশ এই কেসের তদন্ত করতে গিয়েছে তারা সবাই মারা গিয়েছে।তখন মৃথিলাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওর মামা বাড়িতে।মামা বাড়িতে যাওয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তার পুরো ফ্যামিলি ধ্বংস হয়ে যায়।ভেঙে পড়ে মৃথিলা,একাকি নিঃস্ব হয়ে যায়।সেই শান্ত শিষ্ট মেয়েটা দূর্গের মতো শক্ত হয়ে যায়।
ফোন বাজছে মৃথিলার ফোনের ওপরে নিরবের নাম্বার ভেষে উঠছে।অন্তত দশবার ফোন বেজে চলেছে। মৃথিলার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।অনুভূতিশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, নিরবের ফোন কল যেনো ভীষণ বিরক্তির কারণ মৃথিলার কাছে।এগারো বারের মাথায় ফোন ধরে গাছের সাথে ছুড়ে মারল। সুপ্তি মৃথিলার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘এতদিন সুযোগ থাকতেও কেনো মারিস নি নিরব কে মিথু।এবার কিন্তু আমরা ধরা পড়ে যাবো।নিরব অনেক ট্যালেন্ট একটা ছেলে।নিরবের তোর প্রতি বিশ্বাস অগাধ,আর ভালবাসে অন্ধের মতো তাই তোকে ও সন্দেহের তালিকাতেই আনেনি।রিফাত কে নিয়ে ঝামেলা ছিলো।নিরব সন্দেহ না করলেও রিফাত করতে পারত।তাইতো অনিচ্ছাসত্ত্বেও রিফাতের সাথে রিলেশন এ জড়িয়েছি।যেনো কোনো ভাবেই সন্দেহ করার সুযোগ না পায়।কিন্তু সামনে যে মিশন আছে সেখানে কিন্তু নিরবের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে।তখন কিন্তু নিরব সব সত্য জেনে যাবে।তোর প্রতিশোধ অপূর্ণই থেকে যাবে।নিরব আমাদের ছাড়বে না।’
‘মরে গেলে তো ওর চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে যাবে সুপ্তি।ওকে মা*র*ব। তার আগে আমি ওর সমস্ত দূর্বলতা জেনেছি জানার চেষ্টা করেছি।আমি ওকে প্রথমত প্রিয়জন বেঈমানি করলে কি যন্ত্রণা হয় সেই আঘাত দিবো তারপর ও ভালবাসা হারিয়ে একাকিত্ব আর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগবে।ওর ভাই – বোন কে হারিয়েছে।তবে নিরার জন্য আমার ভীষণ যন্ত্রণা হয় মনের মাঝে।এবার ওর মা -বাবাকে ওর সামনে খু*ন করব।এই ভয়ানক যন্ত্রণা গুলো দিবো তারপর ই ওকে মারব আমি।’
‘মিথু সময় কিন্তু অনেক কম হাতে।নীলাভ সহ ওর বন্ধুদের খু**ন করেছি আমরাই।নীলাভ নিজেকে অনেক চালাক ভাবত।মেয়েদের শরীরের গন্ধে নীলাভ এর আসক্তি ছিলো।সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নীলাভ কে ঘেরের পাড়ে ডাকলাম আর নীলাভ চলে গেলো।নারীর ছলনা ছাড়া পুরুষের সর্বনাশ করা যায় না।’
‘নীলাভ আমার আপুর রেপড করেছিলো বন্ধুদের নিয়ে। এর সাথে নিরব জড়িত কিনা আমি জানিনা।তবে ভাইকে বাঁচাতে আমার আপুর কেসটা ধামা চাপা দিয়েছে।ওর আইন ওর ভাইকে শাস্তি দিবে বলে বাঁচিয়ে নিয়েছে।কিন্তু আমার আইনে ওর একটাই শাস্তি ছিলো ভয়ানক যন্ত্রণা দিয়ে মৃ*ত্যু।সেই যন্ত্রণাদায়ক মৃ*ত্যু আমি নীলাভ কে দিয়েছি।সে রাতে আমি শুধু আমার আপুর একটায় আত্মচিৎকার শুনেছিলাম।আপু কেমন যেনো উত্তেজিত ছিলো।চাপা কন্ঠে লুকিয়ে কথা বলছিলো।
‘মিথু মা-বাবার খু*নি&দের পুলিশ হয়ে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আমি পারলাম না।আমার হাতে সময় কম মিথু।নীলাভ আর ওর বন্ধুরা মিলে আমাকে ধ*র্ষ*ন করেছে।নিরব কে নিয়ে অনেক কথা আছে মিথু।আমি একটা চিঠি লিখে এ বাড়ির পাঁচতলার চিলেকোঠায় একটা ছোট্ট লাল রঙের টিনের বাক্সে লুকিয়ে রেখেছি।’
সাথে সাথে আমি আপুর আত্মচিৎকার শুনতে পাই।ওটা ছিলো আমার আর আমার আপুর শেষ কথা।ফোনটা কেটে গিয়েছিলো।ফোনের ওপাসে গোঙাচ্ছিলাম আমি।আপু আপু বলে চিৎকার করছিলাম।সেই চিৎকার আর কারো কাছে পৌছায় নি।ওই শান্তির নীড় আমি অশান্তির আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছি।ওই শান্তির নীড় আমি জনমানবশূণ্য করে ছেড়েছি।ওই শান্তির নীড়েই বাকিদের মারব।’
শহরেই সুপ্তির গোপন একটা বাড়ি আছে।সেখানে গিয়ে মৃথিলা চেঞ্জ করে নিয়ে আবার বাসায় ফিরে গেলো।বাসায় ফিরে বিছানায় জানালার দিকে কাত হয়ে সুয়ে আছে।জানালার পর্দা গ্রিলে গুজে রাখা যার জন্য বাইরের সব কিছু দেখা যাচ্ছে।দূরে একটা নারকেলে গাছে দুটো পাখি বসে আছে।চাঁদের আলোয় তাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।রাতেও কি পাখি গাছের ডালে বসে থাকে?মৃথিলা অবাক দৃষ্টিতে তাদের দেখছে।মৃথিলা বাসায় ফেরার ঘন্টা খানিক পরে নিরব বাসায় ফিরল।নিরব আজ ভীষণ খুশি হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ, একটা লাল শাড়ি।ঘরে ঢুকেই বিছানায় ঝুঁকে গিয়ে মৃথিলার ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়ালো।সাথে সাথেই সমস্ত শরীর ঘৃনায় জর্জরিত হলো মৃথিলার।বিষাক্ত লাগে তার নিরবের ছোঁয়া।এক পা দিয়ে আরেক পা কচলাচ্ছে রাগে মৃথিলা।নিরব তার আরো কাছে আসতে পারে তার আগেই বিছানা ছেড়ে উঠল। তৎক্ষনিক নিরব হাঁটু গেড়ে মৃথিলার সামনে বসে পড়ল।গাল ভরা হাসি নিয়ে মৃথিলাকে বলল, ‘প্রিয়দর্শিনী আমার হৃদয় রাজ্যর রাণী, আমার প্রেম,আমার ভালবাসা মহলের রাজরাণী আজ আমি ভীষণ খুশি এই খুশি আর আনন্দ তুমি আমাকে এনে দিয়েছো।আজ আমি ভীষণ খুশি প্রিয়দর্শিনী।তোমাকে ভীষণ ভালবাসি আমি।’ বলেই মৃথিলাকে উঁচু করে তুলে ধরল।মৃথিলা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আহা! ছাড়ুন আমায়।আমার একটুও ভাল লাগছে না।’
‘না,ছাড়ব না।আজ এ শহর জুড়ে প্রেম নামুক। তোমার নামে আমার প্রেম।প্রেমে প্রেমে ছেয়ে যাক শহর।এ শহর কে জানাতে চাই প্রিয়দর্শিনী শুধু আমার।’
মৃথিলা এবার রাগে কটমট করে জোর পূর্বক নিরবের কোল থেকে নেমে বলল, ‘অনেক আনন্দ লাগছে আপনার তাইনা?কিন্তু আমার লাগছে না।আপনার মতো আমার মনে এত আনন্দ নেই।এত আনন্দের জীবন না আমার।সব সময় এসব অতি আনন্দ ভালো লাগেনা আমার।আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুণ।আপনার তো আনন্দ লাগবেই আপনার মা আছে বাবা আছে আমার মতো মা বাবাহীন হলে বুঝতেন। একজনের কষ্ট কি অন্য কেউ উপলব্ধি করতে পারে।’
বলেই ফুলের তোড়া জানালা দিয়ে ফেলে দিলো নিচে।আর বালিস নিয়ে অন্য রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
মুহুর্তের মাঝে নিরবের মন খারাপ হয়ে গেলো।ফর্সা সুন্দর মুখটা ফ্যাকাসে রুপ ধারণ করল।মৃথিলার এমন ব্যবহারের কারণ সে জানেনা।শুধুই কি মা -বাবার জন্য মন খারাপে মৃথিলা এমন করছে নাকি মৃথিলা সন্তান চায় নি।সেদিনের দুজনের ঘনিষ্ট হওয়াতে কি মৃথিলা অখুশি।প্রেগন্যান্ট শোনার পর থেকে মৃথিলার সমস্ত আচার আচরণ সব বদলে গিয়েছে।মৃথিলা নিরবের প্রাণ অধিক প্রিয়।সে মৃথিলার হাসি মুখে অভ্যস্ত,মায়াবী চোখের মায়ায় অভ্যস্ত,সরল মুখের অদলে অভ্যস্ত, মৃথিলার এমন ভয়ানক রুপ মেনে নিতে পারছে না।মৃথিলার মাঝে যেনো আজ এক অচেনা নারীকে দেখল নিরব।এই মেয়েটা যেনো সেই মেয়েটা নয় যে নিরবের বুকে মাথা গুজে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিয়েছে।নিরব তার খোপা করা চুল খুলে দিয়ে চুলে নাক ডোবাতো।শক্ত করে একদম বুকের সাথে চেপে ধরে রাখত।শাড়িটা নিরব ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসল।যন্ত্রনায় হাহাকার করছে নিরবের বুক।চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।অনেকদিন সে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।আজ সিগারেট না খেলেই নয়।কেউ একজন কে ফোন করল আর সে সিগারেট দিয়ে গেলো।নিরব বেলকনিতে বসে সারারাত সিগারেট টানছে।ভীষণ অস্হিরতায় পুড়ছে তার বুক।কেনো অকারণ কষ্ট পাচ্ছে সেটাও জানেনা।এমন কোনো স্বামি স্ত্রী আছে যাদের অশান্তি হয় না।মৃথিলাতো মারাত্মক কিছু ও বলেনি।তাহলে কেনো নিরবের হৃদয় পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।মন খারাপ হলে বোধহয় শরীর ও ভেঙে পড়ে মানুষের। নিরব একটা জলন্ত সিগারেট পায়ের নিচে ফেলে আগুন নেভালো এতে তার পা পুড়ল কিন্তু বোধ হলোনা।আস্তে করে মৃথিলার ঘরের দরজায় টোকা মারল, ‘প্রিয়দর্শিনী, দরজাটা খুলবে একটু প্লিজ।তুমি আমার অভ্যাস প্রিয়দর্শিনী,আমার রোজকার জীবনের ভয়ংকর অভ্যাস তুমি।তোমার খোলার যাদু মন্ত্রে আটকে গিয়েছি আমি।ওই চুলের ঘ্রান ছাড়া আমার ঘুম আসবে না।মাত্র দু’ঘন্টায় তুমি ছাড়া আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।আর কিছুক্ষণ থাকলে বোধহয় আমি ম*রে যাবো।তুমি ছাড়া বেঁচে থাকা কত কঠিন তুমি জানোনা।আজকের রাতের মতো এত যন্ত্রণাদায়ক রাত যেনো আমার জীবনে আর কখনো না আসে।একবার দরজা খোলো প্লিজ প্রিয়দর্শিনী তোমার ওই মায়া ভরা মুখ না দেখলে পৃথিবীর সব কিছু বিষাক্ত লাগে আমার কাছে।দরজার ওপাশে কি করছো তুমি। আমি জানি তুমি ঘুমোও নি।আমার সাথে রাগ করে তুমি ঘুমোতে পারবে না।এই বুকের শক্ত বাঁধন ছাড়া তুমি ঘুমোতে পারবেনা।আমি তোমাকে বুঝি,আমার প্রিয়দর্শিনী ভাল নেই আমি জানি।একবার দরজা খুলে দেখো তুমি ছাড়া কত অসহায় হয়ে পড়েছি আমি।
দরজার ওপাশে মৃথিলা দুই কানে হাত চেপে ধরে রেখেছে।নিরবের এই আবেগমিশ্রিত কথা সে শ্রবন করতে চাইছেনা।কষ্ট হচ্ছে মৃথিলার নিরবের জন্য।এই কষ্ট সে পেতে চাইছে না।কেনো নিরবের আকুতি তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে।কেনো ইচ্ছা করছে দরজা খুলে মানুষটার বুকে ঝাপিয়ে পড়তে।মৃথিলা খাটে পিঠ হেলান দিয়ে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে কাঁদছে।ঘৃণা আর ভালবাসা দুটোই একটা মানুষের প্রতি।এই দুটোর মাঝে পড়ে নিজেকে যেনো বিষাক্ত লাগছে।মৃথিলা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘আজ যদি সব মিথ্যা হতো, যদি কেউ এসে বলত নিরব নির্দোষ, জীবনের সব চেয়ে বড় পাওয়া হতো এটা।কিন্তু আমার ভাগ্য এতটাও ভালো নয়।’
মৃথিলাই বোধহয় একমাত্র মেয়ে মা -বাবার খু*নী*র বিরুদ্ধে প্রার্থনা করছে সব যেনো ভুল প্রামণিত হয়।কতটা ভালবাসার পরে মানুষ এমন করে।
এরই মাঝে নিরবের ফোন বেজে উঠল,
নিরব ফোন তুলে কানে দিতেই ওপাস থেকে বলল,
‘হাই হ্যান্ডসাম,কেমন লাগল’
‘বাস্টার্ড সাহস থাকলে সামনে আয়।’
‘ক্যানো নাবিলার মতো আমাকেও মা*র*বে বুঝি।’
‘নাবিলাকে আমি মারিনি তবে তোকে মা*র*ব।’
‘আচ্ছা তাহলে নাবিলার বাবাকে কে মেরেছিলো।’
‘আমি মেরেছিলাম।’
‘স্বীকার করছো।’
‘হ্যাঁ।’
‘তাহলে যাও তোমার আইনের কাছে গিয়ে বলো আমি এক খু*নী।’
‘বলব কিন্তু বেশী চালাকি করতে গিয়ে আজ ধরা খেয়ে গেলে না।কল টাইম এক মিনিট।’
সাথে সাথে ওপাশের ফোন কল কেটে গেলো।
চলবে?.