#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩২
#writer_Mousumi_Akter
ভোররাত প্রকৃতি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।পাখি পঙখী সহ পৃথিবীর সমস্ত জীব ই ঘুমোচ্ছে।শুধু ঘুম নেই দু’টো মানুষের চোখে নিরব আর মৃথিলা।ঘুম নামক আরাম দুজনের জীবন থেকেই বিলীন হয়ে গিয়েছে।সারারাত নিদ্রাহীন থেকে হঠাত মৃথিলার মনে হলো নিরব কি খেয়েছে,নিশ্চয়ই খায় নি।সে না খাইয়ে দিলে তো নিরব খায় না।সারাদিন ডিউটি থেকে এসে ক্লান্ত শরীরে মানুষ টা কি করছে।নিশ্চয়ই সিগারেট টানছে।মৃথিলা নিমিষেই ভুলে গেলো তার প্রতিহিংসার কথা।দরজা খুলতেই দু’চোখ আটকে গেলে ডায়নিং এ।ডায়নিং এর চার দেওয়ালে লেখা ‘ভালবাসি প্রিয়দর্শিনী, ভীষণ ভালবাসি,।’ চার দেওয়াল জুড়ে লাখবার প্রিয়দর্শিনী লেখা।মৃথিলা সমস্তা ওয়ালে চোখ বোলালো।ফ্লোর ভরে লেখা আছে নিরব + মৃথিলা। একটা ত্রিশ বছর বয়সী ছেলের এত আবেগ?এতটা বয়স পেরোনোর পরেও এত আবেগ থাকে।এটা কি আবেগ নাকি গভীর ভালবাসা।ডায়নিং টেবিলে গ্লাসের নিচে চাপা দেওয়া একটা কাগজ।মৃথিলার চোখ সেদিকে যেতেই সাথে সাথেই গ্লাস সরিয়ে গ্লাস সরিয়ে কাগল টা হাতে নিলো। সেখানে লেখা আছে,
‘আমার প্রিয়দর্শিনী,
ভালবাসার প্রিয়দর্শিনী,আমার এক জীবনের চাওয়া পাওয়া আকাঙ্ক্ষার নাম তুমি।ক্ষমা করো প্রিয়দর্শিনী আমাকে, আমি তোমার মনের ক্ষত বুঝতে পারিনি।আমি তোমার যন্ত্রণা অনুভব করতে পারিনি।তোমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো বলেই মিসবিহেভিয়ার করে ফেলেছো আমি সেটাও বুঝতে পারিনি।এই নির্বোধ স্বমিকে ক্ষমা করে দাও।তোমার মন ভালো করতে এই পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে তোমার জীবন খুশি আর আনন্দে ভরিয়ে দিবো।জানো কালো রঙের মোহে ভীষণ পা*গ*ল ছিলাম আমি।আমার দু’চোখ ধাঁধানো ছিলো শুধুই কালো রং।ওই কালো রঙের নেশায় এত মুগ্ধ ছিলাম কোনো ফর্সা মেয়ে আমায় মুগ্ধ করতে পারত না।কিন্তু কি হলো দেখো, শেষ মেষ কিনা এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়লাম, তার রূপে পুড়লাম,তাকে ঘিরেই শুরু হলো নতুন পৃথিবী।তার শরীরে কালো রং জড়িয়ে মুগ্ধ হলাম।তার ফর্সা শরীর আমার এতই প্রিয় যে প্রিয় শরীরে প্রিয় রং জড়িয়ে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর কিছু দেখতাম।আজ ও তাই চেয়েছিলাম, মার্কেট থেকে কয়েক’শ শাড়ি রিজেক্ট করে একটায় শাড়ি পছন্দ করে এনেছিলাম।তাকে দেখার নেশায় পড়েছি আমি।এই নেশা মাদকতার মতো আমাকে পা*গ*ল করে তুলছে।আজ জীবনে প্রথমবার বিষাদের তীব্র যন্ত্রণা পেলাম।পৃথিবীতে এত ভয়ংকর যন্ত্রণা ও বুঝি আছে।যে ঠোঁট অসংখ্যবার তোমার নরম গাল স্পর্শ করেছে সেই ঠোঁটে সিগারেট স্পর্শ না করার প্রতিজ্ঞা করেও পারলাম।ক্ষমা করো আমায় আজ ও সিগারেট খেয়েছি।’
এটুকু পড়েই মৃথিলা চিঠিটা বুকের সাথে চেপে ধরল।চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।এদিক ওদিক খুজে কোথাও নিরব কে পেলো না।বেলকনিতে সিগারেট এর ছাই পড়ে আছে।নিরবের ভালবাসার কাছে তার প্রতিশোধের আগুন পুড়ে ছাই হচ্ছে।নিরবের ভালবাসা এতটাই নিঁখুত মৃথিলা ঘৃণা করেও নিরব কে ভালবেসে ফেলছে।একটা কথা আছে তুমি যাকে ভালবাসবে হাজার অপরাধের পরেও তুমি তাকে ক্ষমা করে দিবে।মৃথিলার সাথেও কি এমন হবে।
শাড়িটা ফ্লোরেই পড়ে আছে।মৃথিলা শাড়িটা তুলল,শাড়িতে হাত বুলালো পরম মায়ায়,চোখের কয়েক ফোঁটা পানি শাড়িতেও পড়ল।মুহুর্তের মাঝে নিরবের আনা ফুল গুলোর কথা মনে পড়ল।দরজার দিকে তাকালো মৃথিলা। দরজা খোলায় আছে নিরব যাওয়ার সময় হয়ত দরজা খুলে রেখে চলে গিয়েছে।মৃথিলা বাইরে বের হয়ে নিচে গেলো।হন্য হয়ে খুজছে গোলাপের তোড়াটা।মনে হচ্ছে জীবনের সব থেকে দামি জিনিস হারিয়ে গিয়েছে মৃথিলার জীবন থেকে।খুজতে খুজতে হঠাত চোখ গেলো গোলাপের দিকে।গোলাপ গুলো সবুজ ঘাসের উপর অযত্নে পড়ে আছে,শিশির কনায় ভিজে তাজা ফুল গুলো আরো তাজা হয়ে আছে।ভালবাসার জিনিস বোধহয় নিজের যত্ন নিজেই নেয়।না হলে এতটা তুচ্ছ করে ফেলে দেওয়ার পরেও ফুল গুলো না শুকিয়ে বরং আরো তাজা হয়ে গিয়েছে।নিরবের ভালবাসা মৃথিলা তুচ্ছ করেও হেরে যাচ্ছে।মৃথিলার মুখে হাসি ফুটল।ফুল গুলো তুলে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পেটে হাত রাখল।নিজের সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করল।এক ভীষণ ভাল লাগার অনুভূতি কাজ করল মৃথিলার মাঝে।মেয়েদের বোধহয় জীবনের সব থেকে বড় আনন্দের সময় এই মা হওয়ার সময় টা।একটা মেয়ের দারুণ অনুভূতি সময় এই প্রেগ্ন্যাসির টাইম টা।
ভোর হয়ে এসেছে বাইরে টা ফর্সা হয়ে গিয়েছে।মৃথিলা খুব ভোরেই রান্না চড়ালো।অসহ্য এক অনুভূতিতে ভুগছে সে।ঘৃণা আর ভালবাসা মুখোমুখি হয়ে যুদ্ধ করছে।যে মানুষ টার মৃত্যুর জন্য প্রার্থণা করছে মৃথিলা সেই মানুষ টা না খেয়ে আছে বলে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।নিরবের ভালবাসায় মৃথিলা কখনো কোনো ভুল ধরতে পারেনি
।এতদিন নিরবের সাথে থেকে কখনোই তার মনে হয়নি নিরব এমন কিছু করতে পারে।খারাপ মানুষ দের অভিনয় কি এতটায় নিঁখুত।এমন সময় কলিংবেল চাপছে কেউ।মৃথিলার মনে হলো নিরব এসেছে।এক পশলা ভাল লাগা কাজ করলো মনের মাঝে।ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।সাজ সকালে রিফাত কে দেখে বেশ অবাক হলো মৃথিলা।রিফাত অমায়িক হাসি দিয়ে বলল, ‘কনগ্রাচুলেশন মৃথিলা।’
মৃথিলার মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি।মৃথিলা বলার আগেই রিফাত সোফায় গিয়ে বসল পায়ের উপর পা তুলে।মৃথিলা শাড়ির আঁচল কচলাচ্ছে দুইহাতের মুঠোয় নিয়ে।রিফাত মৃথিলা কে বলল, ‘ওয়ালের ছবিটা একদম জীবন্ত দেখাচ্ছে।’
মৃথিলা ওয়ালের দিকে তাকালো।নিরবের গায়ে কালো গেঞ্জি,গেঞ্জির হাতা গোটানো মুখে দারূণ হাসি।মৃথিলার কাধে হাত রেখে ঝুকে আছে থুতনি মৃথিলার কাধে রেখে।কতশত স্মৃতি নিরব আর মৃথিলার।মৃথিলা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল।রিফাত ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৃথিলার দিকে।
‘ মৃথিলা বসো তোমার সাথে কথা আছে।’
‘কি কথা রিফাত ভাইয়া বলুন।’
‘নিরব আর তোমার মাঝে কোনো মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।’
‘কই নাতো।’
‘নিরবের চোখে আজ পানি দেখেছি আমি।সেটা লুকায়িত পানি।নিরব আমাকে দেখে লুকাতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি।তবে আমি এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি।মৃথিলা জানো নিরব আমার আদর্শ।নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় নিরবের মতো মানুষের বন্ধু হতে পেরে।তুমি ওর ওয়াইফ তোমাকে কত বেশী ভালবাসে তোমার কল্পনার ও বাহিরে।আমি নিজ চোখে দেখেছি মানুষের বিপদে নিরব কিভাবে এগিয়ে যায়।একটা অচেনা মেয়েকে খুজে বেড়াচ্ছে বহুদিন।কেননা নিরব কাউকে কথা দিয়েছিলো সেই মেয়েটাকে রক্ষা করবে বলে।এসব নিয়ে প্রায় নিরব দুঃচিন্তায় থাকে।মেয়েটিকে আজ ও নিরব খুজে পায়নি।তুমি ওর এই বিপদের সময় ওকে কষ্ট দিও না।তুমি ওর শক্তি।তুমি যদি নিরব কে ভুল বোঝো বা রাগ করো নিরব একদম শেষ হয়ে যাবে।’
‘উনি কোথায়?’
‘সুপ্তির সাথে বাস স্ট্যান্ড এ অপেক্ষা করছে।আমি তোমাকে নিতে এসেছি।চলো চারজনে গিয়ে ঘুরে আসি ভাল লাগবে।দীর্ঘদিন একজায়গা থাকলে মানুষের এমনি মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।নিরবের বাবার শরীর ও ভাল নয়।ঘুরে এলে ভাল লাগবে।’
‘নিরবের মা বাবার ওখানে যাবে।’
‘হ্যাঁ। ‘
‘মৃথিলা একটা আর্জি ছিলো
‘
‘কি ভাইয়া।’
রিফাত এর চোখে মুখে লজ্জা।মাথা নিচু হয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।ভীষণ লজ্জায় মিহিয়ে গিয়ে বলল,
‘সুপ্তিকে আমি বিয়ে করতে চাই মৃথিলা।আমি বিয়ের সব বন্দোবস্ত করেই যাচ্ছি।তুমি শুধু সুপ্তিকে রাজি বানাবা।পরে ওর ফ্যামিলিতে জানাবো।প্লিজ মৃথিলা।’
‘এতো খুশির খবর ভাইয়া।আমি রেডি হয়ে আসছি।আর আপনি খেয়ে যাবেন রান্না হয়ে এসছে।’
‘আমি অনেক এক্সসাইটেড মৃথিলা।খাবার সব ফ্রিজে তোলো।আগে বের হও।’
বাসস্ট্যান্ডে বসে সুপ্তি আর নিরব বসে চা খাচ্ছে।এমন সময় নিরবের আনা কালো শাড়ি পরা মৃথিলাকে দেখে নিরবের চোখ জোড়ালো।গরম চা য়ে চুমুক দিয়ে জিব্হা পুড়লো নিরবের।রিফাত নিরবকে বলল মৃথিলাকে দেখতে গিয়ে তো গরম চা খেয়ে ফেলছিস এখন তো আগুন দিলেও খেয়ে ফেলবি।নিরব মৃদু হেসে মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শুভ সকাল প্রিয়দর্শিনী।’
মৃথিলা অবাক হলো।রাতে এত কিছু হবার পরেও নিরব যেচে যেচে তার সাথে কথা বলছে।
সুপ্তির চোখ মুখ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে।ভ*য়ের অদল স্পষ্ট ক্লিয়ার।অন্য মনস্ক হয়ে আছে।মৃথিলা বার বার সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে।বিষয় টা মৃথিলা খেয়াল করল।বাস ছাড়ার টাইম হয়ে গিয়েছে।মৃথিলার ইচ্ছে সে সুপ্তির পাশে বসবে।কিন্তু রিফাত জোর করে তাকে নিরবের পাশে বসিয়ে দিলো।জানালার সিটে বসে আছে সুপ্তি,খোলা চুল গুলো উড়ছে।রিফাতের দারূণ লাগছে সুপ্তিকে দেখতে।রিফাত সুপ্তির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল, ‘তোমাকে না ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে।তুমি সত্যি খুব সুন্দরী। ‘
সুপ্তি মলিন মুখে তাকালো রিফাতের দিকে।সুপ্তির জীবনের সবটা জানলে এই সহজ সরল ছেলেটা কিভাবে মেনে নিবে।এত বড় ধোকা আর বেঈমানি কি রিফাত সহ্য করতে পারবে।আজ বা কাল দু’দিনের মাঝে রিফাতের সামনে সব সত্য চলে আসবে।সুপ্তির ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,কাউকে ভালবেসে ঠকানোর যন্ত্রণা কত তীব্র সুপ্তি আজ তা বুঝতে পারছে।বারবার রিফাতেদ মায়াবী চোখের দিকে তাকাচ্ছে সুপ্তি।রিফাত একটু দুষ্টু প্রকৃতির, কিন্তু মনটা ভীষণ ফ্রেশ,শুধু ভালবাসতে জানে। সুপ্তির জীবনের ভীষণ পূন্যর ফল রিফাতের ভালবাসা পাওয়া।সুপ্তির আজ বড্ড ক্লান্ত লাগছে।রিফাতের কাধে মাথা রেখে হুহু করে কেঁদে উঠল।নিজের অপরাধবোধ সুপ্তিকে কাঁদাচ্ছে।রিফাত সুপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে সুপ্তি।,’
‘ভ*য় করছে।’
‘কিসের ভ*য়।’
‘আপনাকে হারানোর ভয়।আপনাকে আমি ভীষণ ভালবাসি রিফাত।খুব ইচ্ছা করছে এখান থেকে পালিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে আপনার সাথে একটা জীবন কাটিয়ে দিতে।’
‘তুমি চাইলে আমি তাই করব।তোমাকে নিয়ে নতুন একটা পৃথিবী গড়ব।’
‘এই পৃথিবীতে আমাদের এক সাথে বাঁচা হবে কিনা জানিনা,আমাদের দুজনের যদি আলাদা কোনো পৃথিবী হয় সেখানেই হয়ত একসাথে বাঁচতে পারব।’
‘তুমি কিন্তু এসব অদ্ভুত কথা বলে আমাকে টেনশন দিচ্ছো।যদি আমি আর তুমি দুজনেই বেঁচে থাকি তুমি ভেবোনা আমি তোমার পিছু ছাড়ব না।এইপারেও না ওইপারেও না।তোমার পিছু আমি ছাড়ছিনা বুঝলে।’
‘আমায় বিয়ে করবেন?’
‘করব মানে?এটাও জিজ্ঞেস করা লাগে।তুমি রাজি হওনা বলে এত লেট।শোনো মৃথিলা কে বলেছি আমরা নীলগিরি পৌছে বিয়ে করব। ‘
ছয় ঘন্টা জার্নির পর ওর গন্তব্য পৌছালো।
পাহাড়ি অঞ্চল টা সত্যি দারূণ দেখতে।মৃথিলার চোখ জুড়ালো চারদিক তাকিয়ে।
নিরবের দাদাবাড়ি বেশী একটা দূরে নয় এখান থেকে।মাটির ওয়ালের একটা পুরণো বাড়ি।বাড়িতে পৌছানোর সাথে ইরিনা হাসান খুশিতে মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরল।অনেক দিন পর দেখা।ইসহাক হাসান হঠাত অসুস্থ বিছানায় পড়ে গিয়েছেন।নিরব আর রিফাত ইরিনা হাসান আর ইসহাক হাসানের সাথে গল্প করছে।সবার আড়ালে মৃথিলা সুপ্তিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল,
‘কি হয়েছে সুপ্তি?’
‘নিরব সব জেনে গিয়েছে ও আমাকে মে*রে ফেলবে মিথু।’
‘কি জেনেছে?’
‘ফোনকল আমি করতাম।’
‘অহ নো কিভাবে জানলো।’
‘আমি ভুল করে এক মিনিটের বেশী টাইম কথা বলে ফেলেছি।’
‘কিছু বলেছে?’
‘বাসস্ট্যান্ড থেকে বলেছে তোমার সাথে কথা আছে আমার।এখন নয় আজ রাতে বলব।কোনো মিথ্যা বলবে না কিন্তু।’
‘সুপ্তি নিরবের সাথে আর এই বউ বউ খেলার নাটক করলে হবে না।ডিরেক্ট একশান নিতে হবে।’
‘রিফাতের জন্য কষ্ট হচ্ছেরে।’
‘ভালবাসিস তাইনা খুব?’
‘ভালবেসে ফেলেছি।তাছাড়া রিফাত খুব সরল মনের।বারবার বিয়ের কথা বলছে।কি করব এখন।আমার এই জীবনের সাথে ওই নিষ্পাপ জীবন কে জড়াতে চাইনা।’
‘তুই ও নিষ্পাপ! তোর কোনো পাপ নেই।রিফাত ভাইয়ার সাথেই তোর বিয়ে হবে।বিয়ের পর দূরে কোথাও চলে যাস।আমার সন্তানের দায়িত্ব তো তোকেই নিতে হবে।এই এত এত অপরাধের পর আমার ভবিষ্যত ফাঁসি।’
‘প্লিজ মিথু এভাবে বলিস না।’
নিরব ইসহাক হাসানের হাত ধরে বসে আছে।মৃথিলা ঘরের বাইরে দিয়ে কান পেতেছে।নিরব ইসহাক হাসানের হাত ধরে বলছে, ‘বাবা একটাই পাপ করেছি জীবনে।হয়ত সেই পাপের জন্য আজ তোমার এই অবস্থা। ইরফান চাচার খু*ন। ওই একটা অভিশাপেই কি আমাদের সুখের সংসার টা তছনছ হয়ে গেলো।ইরফান চাচার খু*ন করে সেদিন কি আমি ভুল করেছিলাম বাবা।সেই অভিশাপে কি আজ তোমার এই অবস্থা।ওই পাপ আমি এত দিন লুকিয়ে রেখেছি।ইরফান চাচার মেয়ে নাবিলার দায়িত্ব নিয়ে বাঁচাতে পারলাম না।নাবিলার ছোট বোন এর খোঁজ ও পেলাম না।’
মৃথিলার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে।এখনি নিরব কে তার খু*ন করতে মন চাইছে।শুধুমাত্র সম্পত্তি বুঝে নিতে চেয়েছিলো বলে নিরব তার বাবাকে খু*ন করেছিলো।
রিফাত সুপ্তির জন্য লাল টুকটুকে শাড়ি কিনে নিয়ে আসল।নিজের জন্য ও সেরওয়ানি কিনে আনল।রিফাত আজ ভীষণ খুশি।অনেক বার বোঝানোর পর সুপ্তি আজ বিয়েতে রাজি হয়েছে।নিরবের প্রতি মৃথিলার যতটা ঘৃণা হচ্ছে ততটায় ভাল লাগছে রিফাত আর সুপ্তির বিয়ের জন্য।মৃথিলা নিজ হাতে সুপ্তিকে সাজালো।ভীষণ সুন্দর করে সাজালো।সুপ্তিকে আজ অন্য রকম সুন্দর লাগছে।রিফাত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে সুপ্তিকে।ইরিনা হাসান পোলাও মাংস রান্না করছে।বিয়ে বলে কথা।কাজী ও চলে এলো।মৃথিলা আর নিরব ওদের বিয়ের সাক্ষি হলো।
নিরব খেয়াল করছে মৃথিলার মন ভারী হয়ে আছে।অজানা কারণে হঠাত নিরব কে ইগনোর করছে।রিফাতের ইচ্ছা হয়েছে চাঁদনি রাতে নববধু নিয়ে পাহাড় দিয়ে হেঁটে বেড়াবে।মৃথিলা তাদের জন্য ফুলসজ্জার খাট ও সাজিয়ে রেখেছে।সবাইকে লুকিয়ে রিফাত আর সুপ্তি হাঁটতে বের হলো।
রিফাত সুপ্তির হাত ধরে বলল, ‘এভাবে বিয়ে হবে ভাবতেই পারিনি মিস ন্যাচারাল সুন্দরী আপনি এখন আমার বউ।আমার দারূণ অনুভূতি হচ্ছে।’
‘কি অনুভূতি। ‘
‘তোমাকে জড়িয়ে ধরার কিন্তু লজ্জায় তা পারছি না।’
‘আর?’
‘চুমু খেতে ইচ্ছা হচ্ছে তাও পারছি না।লজ্জা করছে।’
‘আপনার লজ্জা দেখে তো আমার ই লজ্জা করছে।’
‘তাহলে কি আমাদের কোনদিন জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়া হবেনা।’
‘কে বলেছে হবেনা।’
বলেই সুপ্তি রিফাত কে জড়িয়ে ধরে ওষ্টে ওষ্ট মেলালো।
রিফাত যেনো আচমকা একটা ঝড়ের সম্মুখীন হলো।এমন ভয়ানক ফিলিংস তার কখনোই হয়নি।একদম থম মেরে গেলো।সুপ্তি রিফাত কে ছেড়ে পালালো।চাঁদের আলোতে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে সুপ্তি দৌড়াচ্ছে।আলতা রাঙা পায়ে নূপুর গুলো বাজছে।আজ ই এই নুপুর জোড়া রিফাত তাকে উপহার দিয়েছি।এই পাহাড়ি রাস্তা গুলো দারুণ লাগছে সুপ্তির।রিফাত সুপ্তির পিছ পিছ দৌঁড়াচ্ছে।সুপ্তি দৌড়াতে দৌড়াতে বলল, ‘এই যে অফিসার আমার বর বাবু আমি হারিয়ে যাচ্ছি পারলে খুজে নাও।’
‘পড়ে যাবে কিন্তু পা*গ*লি টা।’
‘পড়লে পড়ব,আর কিছুক্ষণ পর আমাদের ফুলসজ্জা।আদর করতে চাইলে আমাকে ধরে কোলে তুলে নিতে হবে প্রিয়তম।’
এভাবে ছুটছে দুজন।কিন্তু একটা সময় সুপ্তি হারিয়ে গেলো।রিফাত খুজে হয়রাণ।কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না সুপ্তিকে।এক ঘন্টা কেটে গেলো।কোথাক সুপ্তি নেই।রিফাত ডেকেই যাচ্ছে।এরই মাঝে সুপ্তির কাঁচের চুড়ির ভাঙা অংশ গুলো পেলো।তার কিছুক্ষণের মাঝেই শুধু একটা চিৎকার শুনতে গেলো রিফাত।চিৎকারটা সুপ্তির।রিফাত এদিক সেদিক খুজতে খুজতে আরো বিশ মিনিট পরে খুজে পেলো সুপ্তিকে।গলায় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা।সুন্দর দেহ টা পাহাড়ের বুকে লুটিয়ে পড়ে আছে।গলা থেকে মাথা প্রায় আলাদা করা।প্রিয়তমার এমন ভয়ানক অবস্থা দেখে রিফাত নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে একটা চিৎকার দিলো।সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
‘এই সুপ্তি এটা কি হলো।কিভাবে হলো?চোখ খোলো।প্লিজ চোখ খোলো সুপ্তি।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না সুপ্তি।কিছুতেই না।তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না।আমি কিভাবে বাঁচব সুপ্তি।’
রিফাত গলা কাটা মুরগীর মতো যন্ত্রনায় ছটফট করছে।এত কষ্ট এত যন্ত্রণা কিভাবে সহ্য করবে রিফাত।মেয়েদের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে রিফাত।
‘সুপ্তি আমার জীবনের সব তুমি।আমার জীবন তুমি।আমার বেঁচে থাকার কারণ তুমি।তুমি আমাকে এভাবে ফাঁকি দিতে পারোনা।এমন ভয়ানক প্রণয় আমি চাই নি।প্লিজ সুপ্তি কাম ব্যাক।’
রিফাতের কানে একটায় কথা বাজছে আর কিছুক্ষণ পরে আমাদের ফুলসজ্জা।আপনাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে প্রিয়তম।যন্ত্রণায় মৃত্যু যন্ত্রণার থেকে বেশী যন্ত্রণায় ছটফট করছে রিফাত।সদ্য বিবাহিত প্রিয় মানুষ টার এমন অবস্হা মেনে নেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
চলবে?…
(প্রিয় কাউকে হারানোর যন্ত্রণা সত্যি ভীষণ তীব্র।)