#প্রণয়ের আসক্তি
পর্ব ৩৮
#writer_Mousumi_Akter
মৃথিলার মনে তুফান উঠেছে,মহা প্রলয়ের মতো তছনছ হয়ে যাচ্ছে হৃদয়রাজ্যর সব কিছু।আজ তার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।আজ তার জীবনের সব থেকে বড় বিজয় আর আনন্দের দিন।কিন্তু এসব তাকে শান্তি দিচ্ছেনা।আজ সে নিরব কে মে’ রে ফেলবে ভেবেই বার বার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠছে।এই মানুষ টাকে মেরে এই পৃথিবীতে কিভাবে বেঁচে থাকবে।কিভাবে নিরবের বুকে অস্ত্র চালাবে।নিরবের মৃত্যু যন্ত্রণা কিভাবে সহ্য করবে।সব কিছুর মাঝে নিরব আর তার ভালবাসাটা সত্য,চন্দ্র আর সূর্যর মতো সত্য।এই ভালবাসা ছাড়া কিভাবে বাঁচবে মৃথিলা।বেঁচে থাকা এমনিতেও তার হবেনা তার জন্য একটাই শাস্তি ফাঁ’ সি।তার সন্তানের কি হবে।আজ সুপ্তি ও বেঁচে নেই।পেটে হাত দিয়ে নিজের সন্তান কে বলল,
‘তোমার বাবার খু’নি তোমার মা।এই সত্য টা জেনে আমাকে খুব ঘৃণা করবে তাইনা সোনা।কিন্তু তোমার হয়ত জানেনা এই ঘৃণার চেয়েও লক্ষগুন বেশী ভালবাসে তোমার মা তোমার বাবাকে।’
চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে মৃথিলার।ইচ্ছা করছে এ সব ভুলে নিরব কে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে।এই ঘৃণার জগত ছেড়ে ভালবাসার জগতে গিয়ে জীবনযাপন করতে।যে জীবনে কোনো ভয়ংকর অতীত নেই। মিথ্যা অভিনয়ে যে দিন গুলো পার করে এসেছে সেই দিন গুলো মিথ্যা হলেও কতইনা মধুর ছিলো।নিরবের ঘামের গন্ধে মাতোয়ারা থাকত মৃথিলা,নিরবের উষ্ণ ছোঁয়াতে ভালবাসা অনুভব করত,নিরবের বুকে মাথা গুজে ঘুমোনো যেনো রোজকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো।মৃথিলার সব অভিনয়ের মাঝেও এগুলো ছিলো জীবন্ত অনুভূতি। রোজ নিরবের হাতে ঘড়ি বেঁধে দেওয়া,শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেওয়া,পায়ের জুতা পরিয়ে দেওয়া,গালে তুলে খাবার খাইয়ে দেওয়া এসব কিছুই অভিনয় করে হলেও কখন যেনো সত্য হয়ে গিয়েছে মৃথিলার মনে গাড় এক অনুভূতি প্রতিস্থাপন করেছে।নিরবের মতো কেয়ারিং ছেলের ভালবাসা মৃথিলা ইগনোর করতে পারেনি।প্রেগন্যান্ট জেনেও মৃথিলাকে বিয়ে করেছে, রোজ নিয়ম করে মৃথিলার জন্য একটা টকটকে তাজা গোলাপ আনতে ভুলত না নিরব।বাসায় ফিরে মৃথিলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলত, ‘প্রিয় দর্শিনী তোমার জন্য ভালবাসা কিনতে আমি ভুলি না কখনো।’
কত শত বার দুজনে বৃষ্টিতে ভিজেছে,চাঁদনি রাতে হেঁটেছে,বাইরে ঘুরেছে,মৃথিলার শাড়ির কুচি ধরেছে অজস্র স্মৃতি জড়ানো রয়েছে দুজনের মাঝে।মৃথিলার আজ ইচ্ছা করছে নিরবকে জড়িয়ে ধরতে।জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছা করছে ভালবাসি আপনাকে,আপনার বাম বাজরের অস্তিত্ব আমি।আপনাকে আমি মৃ’ ত্যু উপহার দিতে পারব না।ইহকাল পরকাল সব জায়গা আপনাকেই চাই।
এমন সময় নিরব এসে মৃথিলার পাশে দাঁড়ালো পরণে লাল পাঞ্জাবী।নিরব এই প্রথম বার কালো বাদে ভিন্ন জোনো কালার পরল।এটা মৃথিলাই কিনে দিয়েছিলো।মৃথিলা মুগ্ধ হয়ে দেখছে নিরব কে।নিরব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘প্রতিশোধ নেওয়ার উত্তম মাধ্যম যে বিচ্ছেদ সেটা যদি পৃথিবীর সবাই জেনে যেতো তাহলে কেউ আর মানুষ খু’ ন করত না।তাকে বাঁচিয়ে রেখে এমন বিচ্ছেদ উপহার দিতো।’
‘এখনো ভালবাসেন আমাকে?’
”আমার চোখে তাকাও।’
‘না আমি পারব না, আপনার চোখে তাকাতে।শুধু বলুন কেনো এখনো ভালবাসেন আমাকে?’
‘তোমাকে সেটাই দেখাতে চাইছি আমি।জাস্ট একটা ভিডিও ক্লিপ দেখেতে চাই তোমাকে।যা দেখলে তুমি বুঝতে পারবে কেনো তোমাকে আমি ভালবাসি।’
‘সব দেখাদেখি পরে হবে।দশ মিনিট পরে ঘরে আসুন।’
মৃথিলা ঘরে প্রবেশ করল,লাল বেনারসি পরে মনের মতো সাজল।চোখে কাজল,হাত ভর্তি চুড়ি,পায়ে আলতা,খোলা চুল।দেবির মতো দেখাচ্ছে মৃথিলাকে।সাজগোজ শেষে দরজা খুলে দিলো।নিরব দরজার বাইরেরি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো।দরজা খুলতেই চোখ দুটো চকচকে হয়ে গেলো নিরবের।এমন ভুবনভোলানো রুপ মৃথিলার নিরবের চোখে নেশা লেগে গেলো।নিরবের ঠোঁটে মৃদু হাসি।পাঞ্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে মৃথিলার দিকে এগোলো।মৃথিলার হাতে দুধের গ্লাস।মৃথিলা গ্লাস টা নিরবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এতে পয়জন নেই।’
নিরব দুধের গ্লাস নিয়ে হেসে বলল,
‘ এতে বিষ হলেও আমার আপত্তি নেই খেতে।আজ আমি ধন্য,আমার চোখ ধন্য তোমাকে এ রুপে দেখতে পেয়ে।’
নিরব দুধ খেয়ে দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিলো।নববধুর ন্যায় মৃথিলা দাঁড়িয়ে আছে।নিরবের চোখে তৃষ্ণা,ভীষণ তৃষ্ণা। মৃথিলার কাছে এগিয়ে গেলো।বক্সে গান চলছে, ‘আমারো পরাণো যাহা চাই, তুমি তাই তুমি তাই গো।’
মৃথিলার খোলা চুলে নিরব হাত চালালো।দারূণ এক অনুভূতি হচ্ছে।ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে গাড় চুম্বন দিলো।সাথে সাথে কেঁপে উঠল মৃথিলা।আজ ও লজ্জা লাগে মৃথিলার, ভয়ানক লজ্জা।মৃথিলার লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে নিরবের অদ্ভুত এক ভাল লাগা কাজ করছে।মৃথিজার লজ্জা মিশ্রিত গালে ওষ্ট মিশিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল নিরব।মৃথিলা নিরব কে কিছু বলবে বলে প্রস্তুতি নিলো।
মৃথিলা কিছু বলার আগেই নিরব নিজের ওষ্ট চেপে ধরল মৃথিলার ওষ্টে।মৃথিলার ভেতরে বিদ্যুতের ন্যায় কেঁপে উঠল।নিরবের তৃষ্ণার্ত ওষ্টের নেশা কাটছে না।মৃথিলা ভাল লাগছে নিরবের স্পর্শ, সে সম্পূর্ণ নিজেকে ছেড়ে দিলো নিরবের উপর।দুজন মানব-মানবী সব কিছু ভুলে মেতে উঠল প্রেমের ছন্দে।
হঠাত একটা সময় পরে নিরব সব কিছু যেনো ঝাপসা দেখছে।ঢুলে ঢুলে পড়ে যাচ্ছে।নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে।মৃথিলা পৈচাশিক এক হাসি দিয়ে বলল, ‘আপনার জন্য আজ দারুণ কিছু সারপ্রাইজ আছে অফিসার।’
নিরব ঘন ঘন চোখের পলক ফেলছে,তবুও ক্লিয়ার কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।মৃথিলা নিরব কে ধরে নিয়ে শান্তির নীড়ের গুপ্ত রুমে প্রবেশ করল।সেখানে গিয়েই নিরব ভীষণ অবাক হলো।নিরবের চোখ আটকে গেলো সেখানে বন্ধি দুজন মানুষ কে দেখে।এতদিন যে মেয়ে দুটোকে সে খুজছে সেই মেয়ে দুটোই বাঁধা আছে।নিরব ভাল ভাবে নিজের চোখ ঢলে মেয়ে দুটোর কাছে গিয়ে বলল, ‘তোরা তোদের আজ বহুদিন ধরে খুজছি আমি।আজ ছাড়ব না তোদের।মৃথিলা আগুন নিয়ে এসো এদের জ্বা ‘লি’ য়ে দিবো আজ আমি। এদের জন্য আজ তুমি আমাকে ভুল বুঝে আছো।’
‘আপনি বলছেন এদের জ্বালাতে,ওকে তাই হবে।’
মৃথিলা হাসছে আর পুরো ঘরে কেরোসিন ছড়াচ্ছে।এরই মাঝে রিফাত এসে উপস্হিত হলো।মৃথিলা রিফাত কে বলল, ‘রিফাত ভাইয়া সুপ্তির খু*নি কে দেখতে চান না। এরাই সেই খু*নি।এরা আমাকে মারার পরিকল্পনা করছিলো পাহাড়ে।তখন ই সুপ্তি সেখানে উপস্হিত হয়।সুপ্তি আমাকে বাঁচাতে গিয়েই সেদিন নিজের প্রাণ দিয়েছিলো।’
রিফাত ও এই মেয়ে দুটোকে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।এই মেয়ে দুটোকে সে আর নিরব বহুবার খুজেছে কিন্তু কোথাও পায় নি।পাশের রুম থেকে দুটো ছেলে নবনিতার বাবাকেও ধরে আনল।নবনিতার বাবাকেও মেয়ে দুইটার পাশে বেঁধে দিলো।রিফাত কিছু করার আগেই রিফাত কে অন্য একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখল।নিরব কে রুমের বাইরে বেঁধে রাখল।নিরবের শরীর দূর্বল হয়ে আছে।মৃথিলা দুধের সাথে কিছু মিশিয়েছিলো।গায়ের বল প্রয়োগ করতে পারছেনা।আজ মৃথিলার দারুণ লাগছে।তার পরিবার ধ্বংস কারীকে আজ সে একই ভাবে ধ্বংস করবে।মৃথিলা নিরব কে বলল, ‘আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।’
বলেই মেয়ে দুইটার কাছে গেলো।তাদের গায়ের ড্রেস খুলে ফেলতেই নিরব জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলো।নিরবের মা আর বাবা।নিরব এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না মোটেও।নিরবের ক্লান্ত শরির, ক্লান্ত চোখ দুটো ভীষণ অসহায় দেখাচ্ছে।এমন কিছুর জন্য নিরব কোনদিন প্রস্তুত ছিলোনা।নিরব ভাবতেই পারেনি দেশের সব থেকে শীর্ষ দুজন ক্রিমিনাল এর জায়গা নিজের মা -বাবাকে দেখতে পাবে।নিস্তব্ধ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে নিরব।বার বার কাছের মানুষ দের ভিন্ন রুপ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।নিরব তার মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ছিঃতোমরা।এত নিকৃষ্ট মানুষের পেটে আমার জন্ম।তোমরা ছদ্মবেশে এসব করে বেড়িয়েছো।’
মৃথিলা দিয়াশলাই জ্বালিয়ে ফেলে দিলো ঘরের মাঝে।নিরব বলছে, ‘মৃথিলা প্লিজ ওদের শাস্তি আইন দিবে,তুমি আইন নিজের হাতে নিওনা।’
মৃথিলা নিরবের দিকে বলল, ‘আপনিও রেডি হন এই চিতায় পুড়তে।’
ইসহাক হাসান,ইরিনা হাসান কাকুতি মিনতি করছে বাঁচার জন্য।মৃথিলা বলছে এই ঘরে কত মানুষ এর গলা থেকে মাথা আলাদা করেছিস তোরা মনে করে দেখ।শান্তির নীড় দাউ দাউ করে জ্বলছে।
মৃথিলা এবার নিরবের কাছে এগিয়ে এলো।নিরব কে আগুনে ধাক্কা মারার জন্য।
চলবে…….