#প্রণয়ের আসক্তি পর্ব ৪
#writer_Mousumi_Akter
৪.
নিরব মৃথিলাকে নিয়ে সোজা তিন তলায় তার বাবার রেস্ট নেওয়া রুমে গিয়ে হাজির হয়েছে।এ রুমে অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ।কেউ সচারাচর প্রবেশ করেও না।এ রুমে কোনো খাট নেই।ফ্লোরে গদি রাখা আছে সেখানে নিরিবিলি রেস্ট নেন।তিনতলার সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে মৃথিলার বেশ ক্লান্ত লাগছে।হাঁপাচ্ছে মৃথিলা।নিরব মৃথিলাকে গদিতে বসতে বললো।মৃথিলা গদির উপর বসে বার বার ঢোক গিলছে।নিরব তাকিয়ে বুঝলো মৃথিলার পানির প্রয়োজন।সাথে সাথে আরিফাকে ফোন দিয়ে বললো,
‘আরিফা এক জগ পানি নিয়ে ১৮ নং রুমে আয়তো এক্ষুনি সাথে গ্লাস ও নিয়ে আসিস।যে গ্লাস এখনো কেউ ব্যবহার করেনি সে গ্লাস নিয়ে আয়।নতুন গ্লাস রাখা আছে দেখ নিয়ে আয়।’
নবনিতা হন্য হয়ে খুজে চলেছে নিরব কে।পাঁচ তলা বিল্ডিং এর ৩০ টা রুম।কোন রুমে আছে আর কোথায় আছে এটা খুজে বের করা সহজ কাজ নয়।নিরব দো’তলায় থাকে।নিরবের রুমে গিয়ে নবনিতা ফিরে আসে সেখানে নিরব নেই।নবনিতা নিচতলার ফ্লোরে এসে দেখে ডায়নিং এ রিফাত পায়ের উপর পা তুলে চা খাচ্ছে।রাহিলা চা দিয়ে গিয়েছে রিফাত কে।নবনিতা রিফাত কে জিজ্ঞেস করলো,
‘আচ্ছা নিরব কোথায় জানো তুমি?’
রিফাত ইয়ার্কি মেরে বললো,
‘তোমার হবু বর তুমি ভালো জানো আমি কিভাবে জানবো।’
এসব ইয়ার্কি মারার সময় নেই এখন নবনিতার।এখন সে সোজা উত্তর পেলেই খুশি।রাগ হচ্ছে তবুও রাগ কন্ট্রোল করে বললো,
‘প্লিজ রিফাত একটু বলো।আমার খুব প্রয়োজন তাকে।’
‘রিফাত চায়ে চুমুক দিয়ে নবনিতার দিকে তাকিয়ে বললো ছাদে দেখতে পারো।’
নবনিতা মহারাণীর মতো।মানুষ কে খাটানো হচ্ছে ওর মেইন কাজ।এক গ্লাস পানি ও ঢেলে খায় না।রিফাত সুযোগ বুঝে একটু দৌড় করাচ্ছে আর মনে মনে বলছে কি চিজ চয়েজ করলি রে ভাই জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে তোর।এমন মেয়ে কেউ বিয়ে করে।রিফাত ভ্রু কুচকালো।
আরিফা পানি নিয়ে দ্রুত তিনতলার রুমে প্রবেশ করলো পানি নিয়ে।নিরব স্হির হয়েই দাঁড়িয়ে আছে রুমের মধ্য।আরিফা মৃথিলা কে পানি দিলে পানি খেতে লাগলো মৃথিলা।যেনো তার প্রাণ টা বাঁচলো।এতক্ষণ চৈত্রের খরার মতো শুকিয়ে ছিলো বুক।নিরব আরিফা কে বললো,
ওর কাছেই থাক,আমি আসছি।
নিরব বেরিয়ে গেলে আরিফা মৃথিলার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,
আল্লাহ গো তুমি কত্ত সুন্দর গো আফা।তুমি না শাবনূর,পূর্ণিমার,মৌসুমি ওদের থেকেও সুন্দর। আমার খালি তোমার দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে।
মৃথিলার আরিফার কথা ভীষণ চমৎকার লাগলো।মেয়েটা একদম ফ্রেশ মনের।তবে অতি প্রশংসায় বেশ লজ্জা পাচ্ছে মৃথিলা।কেউ মুখের উপর এইভাবে প্রশংসা করে।মৃথিলা আরিফার সব কথাতে হেসে সম্মতি জানালো।এর ই মাঝে আরিফা বললো,
‘আফা আপনের কপাল ডা ভারী ভালো।’
কথাটা বলেই হাসছে আরিফা।আরিফার কথার ভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে সে মৃথিলার সাথে কথা বলতে গিয়ে ভীষণ খুশি।
মৃথিলা শান্ত চোখে তাকালো আরিফা দিকে।আর বললো,
‘কপাল ভালো কেনো?’
‘কারণ হলো নিরব ভাইজান।নিরব ভাইজান এর মতো স্বামী পাওন ও ভাগ্যর ব্যাপার।এমন ভালো মানুষ আমার জীবনে দু চোক্ষে দেহি নাই।আপনে না ভীষণ সুখি হবেন।আমি নিজেই তো সব সময় ভাবি আমার যেনো নিরব ভাইজানের মতো একটা বর হয়।আপনাগো না ভীষণ মানাবো আফা।’
মৃথিলা এবার কেশে উঠলো নিরবের কথা শুনে।সম্পর্কে যে কিনা ভাসুর হয় তাকেই উল্টা বর বানিয়ে দিচ্ছে।কি সাংঘাতিক লজ্জার ব্যাপার এটা।মেয়েটা কি ভুলভাল ভেবেছে।
আরিফা আবার ও বলে উঠলো,
‘ওইযে নীলাভ ভাইজান আছেনা।আপনার কপাল ভালা খুব।নীলাভ ভাই এর খপ্পরে পড়েন নাই।নীলাভ ভাইজান এর দৃষ্টিভঙ্গিতেও একটু সমস্যা আছে।’
মৃথিলার চোখ সাথে সাথে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো।সে কিভাবে এমন খারাপ একটা মানুষ কে ভালবাসতে পারলো।আজ যদি গর্বে বাচ্চাটা না থাকতো এমন নিকৃষ্ট মানুষ কে এক্ষুনি ছেড়ে চলে যেতো সে।আজ আর কিছুই করার নেই।নিজের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য হলেও তাকে নীলাভ এর সাথেই থাকতে হবে।
এরই মাঝে নবনিতা প্রবেশ করলো রুমে।নবনিতার একটা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা।পোশাক টা হাঁটু পর্যন্ত মাত্র।নবনিতাকে দেখে মৃথিলা পা থেকে মাথা পর্যস্ত তাকালো।নবনিতাকে এমন পোশাকে দেখে মৃথিলা যেনো নিজেই লজ্জায় ম*রে যাচ্ছে।তার গ্রামের মেয়ে একটু টাইট সালোয়ার তাই পরতো না।এ বাড়িতে প্রবেশ করেই মৃথিলা তার জগতেই বাইরের কিছু দেখতে পেলো।নবনিতা নিজেও মৃথিলার মুখ দেখে ভীষণ অবাক হলো।মৃথিলা যে সত্যি খুব সুন্দর সেটা দেখে মনে মনে বললো নবনিতা।
নবনিতা মৃথিলার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এমন গেয়ো মেয়ে কোথা থেকে এসছে।দেখতে তো আরিফা তোর মতোই দেখাচ্ছে।কাজের বেডি টাইপ মেয়ে।’
আরিফা মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।এ বাড়িতে এমন বাজে কথা রোজ ই তাদের শোনা লাগে।মৃথিলা নিজের দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো সে সত্যি গ্রামের গেয়ো ভূত।এসব মডার্ণ মানুষের থেকে বেমানান।মৃথিলার মন ছোট হয়ে গেলো সে চুপ করে বসে রইলো।
নবনিতা আবার বললো,
‘আরিফা নিরব একে সাথে করে নিয়ে এসছে।’
‘হ আফা।’
‘তুই বুঝলি কিভাবে নিরব বিয়ে করতে নিয়ে এসছে।’
‘ভাইজান বলছে এই আফা রে ভাবি ডাকতে।’
নবনিতা মৃথিলার সামনে বসে পড়লো।রাগে রক্ত বিন্দু জ্বলছে নবনিতার।সমস্ত শক্তি দিয়ে মৃথিলার মুখ চেপে ধরে বললো,
‘ভাবি হওয়ার খুব শখ তাইনা তোর।আমার নিরবের পিছু নিয়েছিস।এমন অবস্থা করবো মাটির নিচে গিয়ে নিরবের বউ হতে পারবি।একদম পুঁ**তে ফেলবো তোকে আমি।নিরবের জন্য হাজার টা খু**ন করতে পারি আমি।সেখানে তুই তো একটা পিঁপড়া।এক্ষুনি জাস্ট এক্ষুনি বেরিয়ে যা এ বাড়ি থেকে।আমি যেনো তোকে আর এক মিনিট ও এ বাড়িতে না দেখি।নিরব আমার বুঝেছিস।’
মৃথিলার মুখ চেপে ধরায় মৃথিলা ব্যাথায় ছটফট করছে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে।
এরই মাঝে আরিফা গিয়ে নিরব কে ডেকে আনলো।নিরব দ্রুত এসে নবনিতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নবনিতাকে দূরে সরিয়ে রাগী কন্ঠে বললো,।
‘নবনিতা তুমি কোন সাহসে মৃথিলার গায়ে হাত তুললে।’
‘তোমার কিসের এত দরদ এই মেয়ের প্রতি।আর কে এই মেয়ে।’
‘আমার কিসের দরদ সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই।একটা অসুস্থ মেয়ের গায়ে কিভাবে হাত তুললে তুমি।’
‘এই মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারছি না নিরব।প্লিজ ওকে তাড়াও।’
‘তাড়াবো বলে তো আনিনি।’
‘মেয়েটা কে নিরব।তোমার ফিওন্সি থাকতে কিভাবে অন্য মেয়েকে বিয়ের জন্য বাড়িতে আনতে পারো।’
‘জাস্ট সাট আপ।আর ফিওন্সি তুমি নিজে হয়েছো।আমি তোমাকে কখনো প্রপোজ করিনি।এই মেয়েটা নীলাভ এর প্রেমিকা।ওর বিয়ে নীলাভ এর সাথে দেওয়ার জন্য এনেছি।’
‘সো, সরি নিরব আমি ভেবেছি তোমার কিছু।’
‘মেয়েটির কাছে মাফ চাও আর এক্ষুনি মাফ চাও।ভুলেও যদি কখনো ওর সাথে খারাপ ব্যাবহার করো আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।’
‘এই মেয়ের কাছে মাফ চাইতে হবে।’
‘এই মেয়ের কাছে মাফ না চাইলে আমাকে বিয়ের চিন্তা মাথায় ও এনোনা।কোনো অন্যায় আমি সহ্য করতে পারিনা।’
নবনিতা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মৃথিলার কাছে ক্ষমা চাইলো।মৃথিলার ফর্সা গালে আঙুলের ছাপ লেগে লেগেছে।নিরবের চোখ মৃথিলার মুখের দিকে গেলো।সাথে সাথে আরিফাকে বলে মুখে আইস লাগিয়ে দিলো।
নিরব এর মা বাবা আর বোন আজ আর বাড়িতে ফিরবে না।তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।আগামিকাল ভোরে বাড়িতে ফিরবে।রাতে নিরব আরিফা কে বলেছে মৃথিলার কাছে থাকতে।অচেনা জায়গা মৃথিলার ভয় লাগতে পারে।
নিরব রুমে বসে সিগারেট টানছে আর নাবিলার কেস নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।
কিছুক্ষণ পরে নীলাভ নিরব কে গিয়ে বললো,
‘ ভাইয়া আসলে আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।আমি চাইছি মৃথিলার সাথে একটু কথা বলে ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে সবটা ঠিক করে নিতে। ‘
প্রস্তাব টা শুনে নিরব অত্যান্ত খুশি হয়ে নীলাভ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝালো,
‘যে থাকতে চাইছে তাকে রাখতে শেখ।’
‘নীলাভ বললো,ভুল করে ফেলেছি ভাইয়া আমি।তুমি মৃথিলাকে পাঁচতলায় পাঠিয়ে দাও।’
নিরব মৃথিলাকে পাঁচ তলায় পাঠিয়ে দিলো।
চলবে…….
সবার আগে পর্ব চাইলে সাবস্ক্রাইব করুন