#প্রণয়ের আসক্তি
#writer_Mousumi_Akter
৬.
পরের দিন কেউ আর ঘুম থেকে উঠতে পারে নি।সবার কি হয়েছে কেউ বলতে পারেনা।শুধু নিরব উঠেছে ঘুম থেকে।সকাল এগারো টা বাজে সবাই অস্বাভাবিক ভাবে ঘুমোচ্ছে।বাড়িতে আটজন কাজের লোক তারা ও সবাই ঘুমোচ্ছে।মৃথিলা,আরিফা আর রাহিলার সাথেই ঘুমিয়েছে।মৃথিলা,আরিফা,রাহিলা সবাই এগারোটা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে।নবনিতাও ঘুমে বিভোর।বাড়ির বাইরে মানুষের প্রচন্ড ভীড়।হই হুল্লোড় চলছে।ধীরে ধীরে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙলো।সবার মাথায় ঝিম ধরেছে ঘুমে ঢুলছে সবাই।বাড়ির বাইরে মানুষের এত কোলাহল শুনে বাড়ির সবাই বাইরে বেরিয়ে এলো।সবাই বেরিয়ে এসে এমন দৃশ্য দেখবে কল্পনা করতেও পারে নি কেউ।
একটা লা*শ পড়ে আছে কোমর থেকে দ্বিখন্ডিত করা।হাত -পা সব আলাদা করে রাখা।এমন ভয়ানক মৃ*ত্যু কেউ কাউকে কিভাবে দিতে পারে।শান্তির নীড়ের পাশেই লা*শ টি পাওয়া গিয়েছে।শান্তির নীড়ের পাশে ফয়েজ এর চায়ের দোকান।সকালে দোকান খুলতে এসে ফয়েজ এই ভয়ংকর লা*শ টি দেখে ভয়ে চিৎকার করে।তারপর ধীরে ধীরে মানুষজন ক্রমাগত জড় হতে থাকে।জড় হতে হতে বিশাল এক জনগোষ্টির সৃষ্টি হয়।এই লা*শ টি দেখে সবাই চমকে যায়।কারণ এটা রকির লা*শ।নীলাভ সহ তার বাকি তিনজন বন্ধু ভয়ার্ত চোখে নিরবের দিকে তাকাচ্ছে।গতকাল রাতের ঘটনা তাদের মনে পড়ে গেলো।গত রাতে নিরব রকিকে হু*ম*কি দিয়েছিলো কিন্তু নিরব এর খু**ন করার কথা নয়।শহরে এর আগেও একশ নয়টা লা*শ পাওয়া গিয়েছে ছেলে মেয়ে দিয়ে তাদের সবার ই লা*শে*র এমন ভয়াবহ অবস্হা ছিলো।আবার একটি নতুন খু*ন,নতুন লা*শ।
নবনিতা নিরবের পাশে গিয়ে চিমটি কেটে বলছে,
‘তুমি সামান্য একটা মেয়ের জন্য একে খু**ন করে দিলে।’
নিরব দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
‘জাস্ট সাট আপ।কে বলেছে তোমাকে আমি খু*ন করেছি।’
‘তাহলে কে মা*র*বে একে।কাল রাতে শত্রুতা কার সাথে হয়েছিলো।’
‘এমন ঝামেলা আমার রোজ ই কারো না কারো সাথে হয়ে থাকে তাই বলে কি আমি সবাই কে খু**ন করি আশ্চর্যজনক কথা।’
‘তাহলে রকিকে মা*র*লো টা কে?’
‘এমনিতে আমি বুঝতে পারছিনা কি হলো।তার মাঝে তুমি উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করো না।।’
নিরবের ফোন কলে এক গাড়ি পুলিশ অলরেডি চলে এসেছে।লা*শ পোস্ট মর্টেম এর জন্য পাঠানো হলো।শহরের মানুষ খুব একটা অবাক নয় এই ব্যাপারে।কেননা রোজ ই চারদিক কেউ না কেউ এভাবেই খু**ন হচ্ছে।কিন্তু পুলিশ এর কোনো সারাহা করতে পারছে না।কোনো ক্লু পাচ্ছে না। এই খু**নী কারা।
মৃথিলা ভয়ে কাঁপছে।গতকাল রাতের ঘটনা সে ভেবে চলেছে।আর এখনের ঘটনা মেলাতে পারছে না।এখানে বিষয় টা খুব ই জটিল।এই হুবহু সেইম ভাবে শহরে অনেক গুলো ছেলে মেয়ে খু**ন হয়েছে।নিরব সেই কেস নিয়েই ইনভেজটিগেশন চালাচ্ছে।নিরবের তো খু*ন করার কথাও নয়।তাছাড়া নিরব কে দেখে তো মনে হয়না সে এতটা ভয়ংকর হতে পারে।মৃথিলা নিরবের দিকে তাকিয়ে ভেবেই যাচ্ছে।মানুষ টার উপরে যা ভেতরে কি তা নয়।নারীর সম্মান নিয়ে যে মানুষ টা এতটা ইমোশনাল এতটা উদ্বেগী তার ভেতর টা এত খারাপ কিভাবে হবে।মৃথিলার মন দোটানায় আছে,অস্হিরতা কাজ করছে।নিরব মৃথিলার দিকে এক পলক তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে মৃথিলা তাকে নিয়ে নেগেটিভ কিছু ভাবছে।নিরবের অভিজ্ঞ চোখ বুঝতে ভুল করলোনা মৃথিলা তাকে নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা করছে।
এরই মাঝে মজনু নামের পা*গ*ল টি এসে মৃথিলাকে বললো,
‘কি বলেছিলাম না ওই শান্তীর নীড়ে মানুষের র**ক্ত খায়। এর ও র**ক্ত খেয়েছে।কাল তোমার ও র**ক্ত খাবে হিহিহিহি।তুমি বুঝতেও পারবে না।তোমাকে আপন করে নিয়ে র**ক্ত খেয়ে ফেলবে।’
মৃথিলা আরো ভয় পেয়ে গেলো।ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকলো।এমনিতেই অত্যান্ত ভীতু টাইপ মেয়ে সে।এসব দৃশ্য দেখে মাথার মাঝে চক্কর দিচ্ছে তার।
নিরব মজনুকে খুব জোরে ধমক দিলো।মজনু নিরবের ধমক শুনে পালালো।নীলাভ সহ বাকি তিনজনের দিকে নিরব তাকালো আর বুঝতে চেষ্টা করলো কাল রাতে মৃথিলাকে বাজে কথা বলার জন্য নীলাভ এদের নিয়ে রকিকে মা*রে নিতো।নিরব সন্দিহান ভাবে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।কোনো হিসাব ই মিললো না।
নিরব নীলাভ সহ বাকিদের বললো কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবেনা।এ বাড়ি খুব ভালো ভাবে সার্চ করা হবে।ভেতরে যাও সবাই।বাবা -মা দুপুরে বাড়িতে আসছে নীলাভ আর মৃথিলার বিয়ে নিয়ে কথা হবে।বাড়ি সাজানোর জন্য ক্যাটারিং এর লোকজন আসবে।খুব রাজকীয় ভাবে বাড়িটা সাজানো হবে।হলুদ সহ বিয়ে সব জাকজমক ভাবে করা হবে।আর হ্যাঁ তোমাদের সবার জন্য নতুন পোশাক আসবে।
মৃথিলার থেকে সুপ্তির ফোন নং নিয়ে নিরব রিফাত কে পাঠালো সুপ্তির সাথে দেখা করার জন্য।
———————————————————–
সুপ্তি শহরের মেইন রোডে ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পরণে আসমানি কালারের থ্রি পিছ।সে রিফাতের জন্য অপেক্ষা করছে।কিছুটা ভয় ও পাচ্ছে।একজন পুলিশ অফিসার তার সাথে দেখা করতে আসছে এটা তার জন্য খুব ভয় এর ই ব্যাপার।এই মৃথিলার চক্করে আবার সে ফেসে না যায়। যদি থানায় নিয়ে যায় একদিন আটকে রাখে তাহলে সুপ্তির মা-বাবা সুপ্তিকে মে*রে*ই ফেলবে।গ্রামে ছড়িয়ে যাবে নিশ্চয়ই কোনো অকাজ করেছে তা না হলে পুলিশ নিয়ে গেলো কেনো?তার মা বাবা আর গ্রামে মুখ দেখাতে পারবেনা।তাছাড়া একটা মেয়েকে থানায় নিয়ে আটকানো কম কথা নয়।এতে কেলেঙ্কারির শেষ নেই।কিছুক্ষণের মাঝেই রিফাত বাইক নিয়ে সুপ্তির কাছে এসে দাঁড়ালো।রিফাত সিওর নয় এটাই সুপ্তি। তাই সুপ্তির নাম্বারে আরেকবার কল করলো,সাথে সাথে সুপ্তির ফোন বেজে উঠলো।সুপ্তি ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে হ্যালো বললো।রিফাত ফোন কানে নিয়েই বললো,আপনার সামনে একটা ঠেলাগাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন কানে ছেলেটি আপনাকে কল দিয়েছে।আমার নাম রিফাত, যার জন্য আপনি অপেক্ষা করছেন।সুপ্তি সামনে তাকিয়েই দেখে বাইকে একটা স্লিমছেলে ফোন কানে বসে আছে।সুপ্তি স্বভাবসুলভ হেসে সালাম দিলো।রিফাত সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
‘আপনিই সুপ্তি তো।’
‘জ্বী স্যার।’
‘তো চলুন পাশের পার্কে বসি,এভাবে রোদে দাঁড়ানো ঠিক হবেনা।’
পার্কে যেতে কেমন যেনো লাগছে সুপ্তির।শুনেছে পুলিশ দের চরিত্র খুব একটা ভালো হয় না।যদি নিয়ে কিছু করে।বিভিন্ন চিন্তা সুপ্তির মাথায়।এখন সে কি করবে।না গেলে যদি এরেস্ট করে নিয়ে যায়।চিন্তামাখা মুখ নিয়ে তাকালো রিফাতের দিকে।রিফাত সুপ্তির মুখের অদলে বেশ বুঝতে পারলো সুপ্তি ভয় পাচ্ছে।
রিফাত সুপ্তিকে অভয় দিতেই বললো,
‘আমি নীলাভ নয়।আপনার কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হবেনা।আমি আপনাদের হেল্প করতেই এগিয়ে এসছি।আপনি কিছু তথ্য দিলে আপনাদের হেল্প করতেই সুবিধা হতো।’
সুপ্তি রিফাতের কথায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়ে বললো,
‘জ্বী চলুন স্যার।’
‘কিভাবে যাবেন,বাইকে বসুন।’
বাইকে বস তে বেশ অস্বস্তি লাগছে সুপ্তির।মিনমিন করে বললো,
‘ইয়ে স্যার।’
‘নো প্রব্লেম বসুন।’
সুপ্তি বাইকে উঠলো রিফাতের।
দুই মিনিটের মাঝেই পাশেই একটা পার্কে গিয়ে বসলো তারা দুজনে।একটু কর্ণারের দিকে বসলো দুজনে।রিফাত হেলমেট খুলে এলোমেলো চুল ঠিক করলো হাত দিয়ে।তারপর সুপ্তির দিকে তাকালো।সুপ্তির মাঝে মৃথিলার অনেক গুলো গুন দেখতে পাচ্ছে রিফাত।বিশেষ করে ইনোসেন্ট লুক দুজনের।সুপ্তির কাজল কালো চোখে, কপালে ছোট্ট কালো তিল, খোলা চুল প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়েছে যেনো।সুপ্তির নিজের কাছে বেশ আনইজি লাগছে হাত দিয়ে বাতাস নিচ্ছে।রিফাত বুঝতে পারছে সুপ্তি টেনশনে এমন করছদ।বারবার দুই ঠোঁট একজায়ভা করে চেপে ধরছে।
চলবে…