#প্রণয়ের আসক্তি
#writer_Mousumi_Akter
৮.
দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল।ঘড়িতে সময় তিনটা বেজে বত্রিশ মিনিট।বাড়িতে ইসহাক হাসান আর তার স্ত্রী ইরানি হাসান প্রবেশ করলেন সাথে তাদের মেয়ে নিরা হাসান।ইসহাক হাসান খুব শান্ত শিষ্ট স্বভাবের মানুষ তেমন ই দেখা যায় তবে ইরানি হাসান শান্তশিষ্ট নন তার মেজাজ সব সময় গরম থাকে।ছেলে নীলাভ এর কর্মকান্ড শুনে সারারাস্তা ইসহাক হাসানের সাথে ঝগড়া করতে করতে এসেছে।ইরানি হাসানের কথা হলো ইসহাক হাসান সারাজীবন ব্যবসা ব্যবসা করেই জীবন পার করেছেন সন্তানদের সঠিকভাবে শাষন করতে পারেননি।সারারাস্তা রাগে কিড়মিড় করতে করতে এসেছেন।ইসহাক হাসান গম্ভীর হয়ে আছেন মুখে একটা কথাও উচ্চারণ করেন নি।ইসহাক হাসানের মাথা ফেটে যাচ্ছে দুঃচিন্তায়।সমাজে তার একটা সম্মান আছে।মানুষ তার মুখে থু থু ফেলবে ভেবেই ইসহাক হাসান ম*রে যাচ্ছেন।তাদের একমাত্র মেয়ে নিরা মায়ের কথার বিপক্ষে।নিরা কিছুতেই তার বাবার দোষ মেনে নিবে না।নিরা তার বাবাকে সব থেকে বেশী ভালবাসে।মা তার বাবার বিরুদ্ধে কিছু বললে নিরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।নিরা হলো সব থেকে মিষ্টি মেয়ে ফ্যামিলির।গোলগাল ফর্সা মুখ খুব একটা লম্বা নয়।তবে ভারী মিষ্টি দেখতে।তার প্রতিটা কথার মাঝে রয়েছে মিষ্টতা।খুব ফ্রেশ আর ভালো মনের মেয়ে নিরা।নিরা সারারাস্তা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে এসেছে।আর মায়ের বিপক্ষে কথা বলেছে।
‘মা-কে বলেছে তুমি একটুও বাবার দোষ দিতে পারোনা।খারাপ হলে বড় দাদা ও হতে পারতো।বড় দাদা তো খারাপ হয়নি।তোমার এই ছোট ছেলে সব সময় খারাপ। এতে বাবার কোনো দোষ নেই।’
ইরানি হাসান মেয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
‘একদম বাপের হয়ে উকিলাতি করবি না।থা*প্প*ড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো।সব সময় কথার মাঝে কথা তোমার।’
ইসহাক হাসান এবার ভয়ানক রাগি মুডে ইরানি হাসানের দিকে তাকালো।চোখ জ্বলছে তার রাগে।ঘাড়ের শিরা ফুলে উঠেছে।এক্ষুনি চোখ দিয়ে গি*লে ফেলবে ইরানি হালদার কে।প্রচন্ড রাগে গাড়ির সিট খামচে ধরে আঙুল তুলে ইরানি হালদার এর দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো,
‘খবরদার! তোমাকে সাবধান করছি।আমার মেয়েকে ছুঁয়েও কথা বলার সাহস দেখাবে না তুমি।আমাকে যা খুশি বলো কিন্তু আমার নিরার দিকে আঙুল তুললে ভালো হবেনা।আমার মেয়ে আমার প্রাণের থেকে প্রিয়।আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকালে আমি আমার মা-কে দেখতে পাই।’
বাবার প্রশ্রয়ে নিরা মায়ের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।এই বাবা আর বড় দাদার ভালবাসার পাত্রীটি হচ্ছে নিরা।তার সকল আবদার পূরণ হয়ে যায় না চাইতেও।বাবার হাতে খাওয়া,বাবার ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া,চুল বিনুনি করে দেওয়া,ড্রেস পছন্দ করে দেওয়া সবটায় তার বাবা করে থাকে।নিরার মন খারাপে ইসহাক হাসান এর দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায়।ইসহাক হাসান বলেছেন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রেখে দিবেন না হলে নিজে গিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থাকবেন।মেয়ে ছাড়া সে থাকতে পারবেনা।ইসহাক, ইরানি আর নিরা শান্তির নীড়ে প্রবেশ করলো।বাড়িতে ঢুকেই নিচ তলার বসার ঘরে প্রবেশ করলো।নিচ তলার সোফায় বসলো তিনজনে।রাহিলা আর আরিফা দুজনে দৌড়ে আসলো।ইসহাক বললো,
‘ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো রাহিলা।’রাহিলা ছুটে গিয়ে পানি নিয়ে এলো।ইসহাক পানি খেয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসা গলা, বুক ভিজিয়ে নিলো।ইরানি আরিফা কে বললো,
‘নিরব,আর নীলাভ কে ডাক।বল আমরা এসছি।’
কিছুক্ষণের মাঝেই নীলাভ,আর নিরব নিচতলার বসার ঘরে প্রবেশ করলো।নিরবের পরণে কালো কলারের গেঞ্জি,পরণে কালো জিন্স,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি।পেছনে হাত বেঁধে দাঁড়িয়েছে নিরব।নীলাভ মাথা নিচু হয়ে আছে।নীলাভ কে ফোনে এমনিতেও ঝেড়েছে তার মা -বাবা।নীলাভ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।বাবাকে সে জমের মতো ভয় পায়।বাবা যদি এখন বাড়ি থেকে বের করে দেয় কি করবে সে।তার বাবা বড় ছেলের সিদ্ধান্তে অটল।বড় ছেলে মুখ দিয়ে যা সেটাই করে ইসহাক হাসান আর ইরিনা হাসান।পরিবারের সমস্ত সিদ্ধান্ত নিরব নিয়ে থাকে।যা করে নিরবের সাথে পরামর্শ করেই করে।নিরব অত্যান্ত বিচক্ষণ আর বুদ্ধিমান। নিরব এর পরামর্শে যে কাজ করে কখনো লস বা ক্ষতি হয়নি দ্বিগুন লাভ ছাড়া।নিরবের এই বুদ্ধিমত্তার প্রসাংসা সবাই করে।পাড়া প্রতিবেশী,আত্মী,ডিপার্টমেন্ট সব জায়গা।নিরব নিজ গুনে এ সুনাম অর্জন করেছে।তাছাড়া নিরব যা বলার একবার ই বলে দ্বীতীয়বার বলেনা।এইজন্য তার মা-বাবা নিরব একবার যে প্রস্তাব দেয় সেটাই মেনে নেয়।ইরানি নীলাভ এর দিকে তাকালো উঠেই ঠাস করে ইরানি নীলাভ এর গালে থাপ্পড় মেরে বললো,
‘অসভ্য বেয়াদব এইজন্য তোমাদের মানুষ করছি।আমার কাছে কেলেঙ্কারির ফোন যাবে এইজন্য।নিরব না বললে এক্ষুনি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম।’
ইসহাক গম্ভীর মুডে বললো,
‘আহ ইরানি এখন আর মেরে লাভ নেই।এই থাপ্পড় গুলো সময় মতো দিতে পারলে কাজ হতো।এখন আর থাপ্পড় দিয়ে লাভ কি।অযথা অশান্তি করোনা।’
‘তাহলে কি করবো।’
‘নিরব তো ফোনে সব বলেই দিয়েছে আমাদের।তাছাড়া আমার নিরার ও আপত্তি নেই এই বিয়ের।বিয়ের ব্যবস্থা করো।বিয়ের পর যদি শুধরে না যাও আমার ম*রা মুখ দেখবে।’
‘জাত কুল নেই এমন মেয়ে এ বাড়ির বউ হবে।’
নিরব এতক্ষণে বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়া কি তা বুঝার চেষ্টা করছিলো।মায়ের কথায় এবার নিরবতা ভেঙে বললো,
‘মা তোমার ছেলের কি কোনো জাত আছে।যার নিজের ই জাত নেই অন্যর জাত নিয়ে ভেবে লাভ কি।আগে তোমার ছেলের জাত ঠিক করো।ওর ফ্রেন্ডসার্কাল মদ পান করে,বারে যায়,মেয়ে মানুষ নিয়ে ফূর্তি করে।যার ফ্রেন্ড সার্কাল এমন সে কেমন।’
‘কিন্তু বাবা নিরব এভাবে বিয়ে দিবো।মেয়ে দেখতে কেমন?’
”সত্য বলতে মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। না হলে নীলাভ মেয়েটাকে ডিজার্ভ করে না।’
ইসহাক হাত উচু করে গম্ভীর ভাবে বললো,
‘আহা!এত কথা ভাল লাগছে না। তারে বলে দাও বিয়ের পর মেয়েটিকে নিয়ে যেনো সুখে সংসার করে।এগ্রিমেন্ট এ সাইন করে বিয়ে করতে বলো।নাহলে এক্ষুনি বাসা থেকে বের হয়ে যাক।’
নিরা বললো,’আরিফা যাতো নতুন ভাবিকে ডেকে নিয়ে আয় দেখি।’
আরিফা মৃথিলাকে ডেকে নিয়ে এলো।
মৃথিলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ইসহাক মৃথিলার দিকে তাকালো।আপাদমস্তক দেখে বললো,
‘মাসআল্লাহ।’
ইরানির ও মৃথিলাকে দেখেই পছন্দ গেলো।মৃথিলার মুখের দিকে তাকালে যে কেউ ভাল না বেসে থাকতে পারবে না।মৃথিলার মুখ এতটায় সহজ সরল আর মায়াবী দেখতে।এত সুন্দর মেয়ে ইরানি আগে সু-চোখে দেখেনি।ইরানি ও মৃথিলাকে দেখে বললো,
‘মেয়ে যে এত সুন্দর হবে আগে ভাবিনি।মাসআল্লাহ নীলাভ এর সাথে মানাবে খুব।’
ইরানির ভালো না লাগলেও ভালো বলতে হবে।নিরব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে দিবে তাই এর বাইরে যাওয়া যাবেনা।তাহলে নিরব রাগ করে হয়তো বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।ছেলের মন রাখতেও কিছুটা সায় দিলো।
নিরব একটু স্বস্তি ফিরে পেলো।তার মা বাবার পছন্দ হয়েছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।
নিরা এবার লাফিয়ে উঠে গিয়ে মৃথিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আরে এ তো ভীষণ সুন্দর দেখতে।ভাবি আই লাভ ইউ।ইস তুমি যদি আমার বড় দাদাভাই এর বউ হতে আমি বেশী খুশি হতাম।’
মৃথিলা সাথে সাথে নিরবের দিকে তাকালো।আর নিরবের চোখে চোখ পড়ে গেলো।দুজন ই লজ্জা পেলো।সাথে সাথে দুজনেই দৃষ্টি সংযত করলো।
নিরব এবার গলা ঝেড়ে নিয়ে বললো,
‘আহা! নিরা এসব কি কথা।’
নিরা এবার মৃথিলাকে ছেড়ে নিরব কে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘দাদাভাই সরি।তবে নীলাভ ভাইয়া কি মেয়েটাকে ভালো রাখতে পারবে।’
‘হুম পারবে,না পারলে তার ও ব্যবস্থা আছে।’
এরই মাঝে নবনিতা এসে কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বললো,
‘তা নিরা তোমার রুচি দিন দিন কোথায় নেমে যাচ্ছে।ওই গেয়ো ভু**ত কে তোমার দাদার পাশে মানাবে।তা আমার মাঝে কম কি আছে।’
নবনিতার নিরার প্রতি প্রচন্ড রাগ হলো।কিন্তু সে নিরব এর বোন রাগ প্রকাশ করে লাভ নেই।বিয়ের আগে বোন কে কিছু বললে ভাই সেটা মানবে না।কোনো কারণ ছাড়ায় মৃথিলা নবনিতার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালো।নবনিতা মৃথিলাকে সহ্য করতে পারছেনা।এই শত্রুতা কতদূর পৌছাবে সবার অজানা।
নিরা নিরবের দিকে তাকালো,নবনিতার কথার উত্তর সে তার ভাই এর থেকে আশা করছে।
নিরব বোনের মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
‘ননদ এর অত্যা*চার সহ্য করতে শিখো নবনিতা। ননদ রা দু’চার কথা বলবেই।’
‘তাই বলে আমাকে ওই গাইয়ার সাথে তুলনা করবে।’
‘কাউকে ছোট করে মানুষ কখন জানো,যখন মনে হয় তার অবস্থান তার থেকে অনেক নিচে।’
ইসহাক হাসান বললেন,
‘আজেবাজে কথা বন্ধ করো।নিরার মা ছোট বউমার মুখ দেখলে আশির্বাদ করবেনা।’
ইরানি হাতের চুড়ি খুলে মৃথিলার হাতে পরিয়ে দিলো।
চলবে?..
(এখান থেকে গল্পের মূল প্লটে প্রবেশ করলাম।)