এক মুঠো রোদ .
# writer :নৌশিন আহমেদ রোদেলা
# পর্ব -১৫
২৮.
ছাঁদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে রোজা। প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ। একদম গা জ্বালানো গরম। রাত প্রায় ১ টা, রোজা ছাদে এসেছিলো শরীরটাকে একটু ঠান্ডা করবে বলে কিন্তু দরজা পর্যন্ত এসেই দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছে তাকে। ছাঁদের এককোণে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। এতো রাতে ছাঁদে কে দাঁড়াতে পারে বুঝে উঠতে পারছে না রোজা। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে সামনের দিকে এগুলো সে। চাঁদের আবছা আলো পড়ছে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির ঝাঁকড়া চুলে। কুকরানো মাথাভরা চুলগুলো দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো রোজার। চুপচাপ পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,
— কিরে? মিষ্টার আইনস্টাইনের আজ মুড অফ? কি মারাত্মক ব্যাপার।
রোজার কথায় মুচকি হাসলো রিদ। রোজার সব কথাতেই প্রচন্ড হাসি পায় রিদের। রিদের ধারনা রোজার কাছে মন ভালো করার ম্যাজিক আছে। রোজা মুখ খুললেই সেই ম্যাজিকটা চট করে কাজে লেগে যায় আর সব মন খারাপ ভাবকে এক চুটকিতে উধাও করে দেয়। রিদকে চুপ করে থাকতে দেখে ঘুরে দাঁড়ালো রোজা। লাফিয়ে রেলিং এর উপর পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো সে। রিদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— কাহিনী কি রে? গার্লফ্রেন্ড ভেগে গেছে নাকি? আরে! গার্লফ্রেন্ড তো ভাগার জন্যই তার জন্য মন খারাপ করতে হয় নাকি? বউ ভেগে গেলে নাহয় একটা কথা ছিলো…বাট গার্লফ্রেন্ড!
রোজার কথায় হেসে উঠলো রিদ। মাথার ঘন ঝাঁকড়া চুলগুলো খানিকটা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— ধুর আপু! কি যে বলো না। মোটেও আমার গার্লফ্রেন্ড ভেগে যায় নি। তাছাড়া আমার কোনো গার্লফ্রেন্ডই নেই।
রিদের কথায় কিছুটা অবাক হলো রোজা। বিস্ময় মাখা মুখ নিয়ে বলে উঠলো-
— সত্যি নেই? নাকি ঢপ মারছিস?
— সত্যিই নেই আপু।
— আচ্ছা বেশ! বিশ্বাস করলাম। তাহলে বল মন খারাপ কেনো?
— কই? মন খারাপ ছিলো না তো।
— মিথ্যুক! বল কি হয়েছে? নয়তো মা’কে গিয়ে বলবো তোর গার্লফ্রেন্ড ভেগে গেছে।
— বাবা ছবিগুলো ফেলে দিয়েছে আপু।
রোজা ভ্রু কুঁচকালো।
— কোন ছবি?
— ওইযে, রাফিন চৌধুরীর মারামারির ছবিগুলো। আমি বাবাকে দিলাম আর বাবা উল্টো আমাকেই বকে দিলো। একটা চড়ও মেরেছে,জানিস?
— চড় মারলো কেন?
— ক্লাস বাম্প করে মার্কেটে গিয়েছিলাম বলে। হি ডাজেন্ট লাভ মি আপু। বাবা সবসময় রেগে রেগে কথা বলে। তোমার সাথে তো ওমন করে না।
রোজা হাসলো। রিদকে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে রিদের হাতটা নিজের হাতে নিলো। ডানহাতে ওর ঝাঁকড়া চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— তোর চুলগুলোও বেশ আইনস্টাইনের মতো হয়েছে রে। তোকে স্যুট করে। কাটিস না।(একটু থেমে) আচ্ছা,রিদ? তোকে কিছু কথা বলি খুব মন দিয়ে শুনবি,ওকে?
রিদ মাথা নাড়লো। রোজা মনোযোগী হতে না বললেও সে মনোযোগ দিয়েই শুনতো। রোজার সবকথায় ওর ভালো লাগে। রোজা যদি রিদকে বকেও তবু রিদের মোটেও মন খারাপ লাগে না বরং আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তার। রিদ প্রতিবারই ভাবে এবার আপুকে জড়িয়ে ধরে বলবে “আপু তোমায় এত্তগুলো ভালোবাসি। ” কিন্তু কখনো বলা হয়ে উঠে না। মূলত বলতেই পারে না, খুব লজ্জা লাগে ওর। রোজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— আচ্ছা? তোর ক্রিকেট খেলার ব্যাটটার দাম কতো রে?
রোজার প্রশ্নে অবাক হলো রিদ। সে ভেবেছিলো রোজা হয়তো ইম্পোর্টেন্ট কিছু বলবে কিন্তু ক্রিকেট ব্যাটের দাম? আশ্চর্য! আপু কি জার্নালিজম ছেড়ে মাঠে ক্রিকেট খেলার পরিকল্পনা করছে নাকি? কথাগুলো ভেবে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে একঝাঁক কনফিউশান নিয়ে বলে উঠলো,
— সাত হাজার। বাবা তো সাত /সাড়ে সাতের মাঝেই কিনে দিয়েছিলো। কেন বলো তো? তুমি কিনবে নাকি?
রোজা হাত ঝাড়লো। একটা গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
— নাহ। কিনবো না। আচ্ছা তোর ওই ক্রিকেট ব্যাটটা সামনের ওই পাঁচতলা থেকে নিচে ফেললে কেমন হয়? একদম চলন্ত ট্রাকের নিচে ফললে?
রোজার কথায় আবারও অবাক হলো রিদ। বিস্মিত কন্ঠে বললো,
— ওখান থেকে ফেললে তো ব্যাটটা ভেঙে যাবে আপু।
— গেলে গেলো। নতুন একটা কিনে নিবি।
— কি বলছো আপু? ওটা আমার প্রিয় ব্যাট। ওটা ছাড়া খেলা জমবে নাকি? দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত খেলাটায় বাদ দিতে হবে আমায়। ওই ব্যাট ছাড়া সিক্স আসেই না আমার। তাছাড়া আই লাভ দিস ব্যাট….ওটা এভাবে ভেঙে যেতে দিতে পারি না।
— আচ্ছা! ভাই? তোর এই ব্যাটটা মাত্র পাঁচবছর ধরে ইউজ করছিস তুই। তবু এতো ভালোবাসা। সামান্য একটা কাঠের টুকরোই তো? তার জন্য এতো ভালোবাসা কেন? আমরা মানুষেরা তুচ্ছ বিষয়গুলো নিয়ে এতোটাই মাতামাতি করি যে বিশাল বিশাল ব্যাপারগুলো আমাদের চোখেই পড়ে না। এই দেখ না? তোকে শুধু ব্যাটটা ভেঙে ফেলতে বলেছি তাই বুক কাঁপছে তোর অথচ তুই হলি বাবার শরীরের একটা অংশ। তোর বয়স হলো ১৫। অর্থাৎ তুই তোর নিজেকে চিনতে শিখেছিস, নিজের প্রতি তোর ভালোবাসা জমেছে এই ১৫ বছর ধরে অথচ বাবা-মা এই ১৫ বছর আগে থেকেই তোকে ভালোবাসে। তোর অস্তিত্বের কথা জানার পর থেকেই তারা তোকে ভালোবাসে। অর্থাৎ তোর থেকে তারা তোকে বেশিদিন থেকে ভালোবাসে। তাহলে তোকে হারানোর ভয় তাদের কতোটা মারাত্মক ভাবতে পারছিস? তুই যেমন সিউর পাঁচ তলা থেকে পড়লো ব্যাটটা ভেঙে যাবে ঠিক তেমনি বাবাও সিউর এই বয়সে এসবে জড়ালে বাবার ভালোবাসার টুকরোটা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবো। তুই একটা সামান্য ব্যাট নষ্ট করতে পারছিস না তাহলে বাবা তার ছেলেকে কিভাবে শেষ হতে দিবে বল? প্রত্যেকটা বাবা-মার কাছে তার সন্তান একেকটা এঞ্জেল। মুখে হাসি ফুটানোর এঞ্জেল। তুই যেমন তোর স্পেশাল ব্যাট ছাড়া সিক্স মারতে পারিস না ঠিক তেমনি বাবা- মা তার ছেলেমেয়েকে ছাড়া হাসিমুখে বাঁচতেই জানে না। দে জাস্ট ওয়ান্ট টু সেইভ আস। বাট আমরা তাদের মনোভাবটা কখনো বুঝতে চেষ্টাই করি না।
রোজার কথাগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলো রিদ। সত্যিই তো, বাবা ওয়ান্টস্ টু সেইভ হিম। কিন্তু রিদ কতোটা বাজে ভাবলো বাবাকে! কথাটা ভেবেই ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো রিদ। ফট করে বলে উঠলো,
— তাহলে তোমাকে বকে না কেন? তুমি তো আরো কতো কিছু করো। সেগুলোর সবই তো জানে বাবা…তবুও!
রোজা এবার রেলিং থেকে নেমে দাঁড়ালো। রেলিং এ ঠেস দিয়ে একবার আকাশের দিকে তাকালো সে। অসম্ভব সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ। চারদিকে কি ঝকঝকে জোস্ন্যা! ছাদের পাশের জামরুল গাছটি সাদার মাঝে লাল বাহারী জামরুলে ছেয়ে আছে। চাঁদের আলোয় জামরুল, বাহ! কি চমৎকার দৃশ্য। আচ্ছা?এই ফলের নাম জামরুলই কেন হলো? এটা কি জামের মতো দেখতে? মোটেও না। এমন অগোছালো কিছু চিন্তা নিয়ে রিদের দিকে ফিরে তাকালো রোজা। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,
— তোর হাতের ফোনের দাম কতো?
— পঞ্চান্ন হাজার। কেনো?
— এই ফোনটা পানিতে ফেলে দিলে কি হবে?
— কি বলছো আপু? ফোনটা ড্যামেজ হয়ে যাবে।
— তাই নাকি? তাহলে পানির আশেপাশে গেলে তো ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। এক্সট্রা সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয়, তাই না?
রিদ মাথা নাড়লো। যার অর্থ, সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।। রিদ মাথা নাড়তেই আবারও প্রশ্ন করলো রোজা,
— কেন করিস?মানে সতর্কতা অবলম্বন কেন করিস?
— ফোনটা যেন সেইভ থাকে তাই।
— এই ফোনটার জায়গায় যদি তোকে একটা ওয়াটারপ্রুফ ফোন দেওয়া হয় তাহলে কি তুই আগের মতোই সতর্ক থাকবি? নাকি সতর্কতার মাত্রা একটু কমে যাবে?
— একটু কমবে অবিয়েসলি।(কনফিউজড হয়ে)
— গুড! আমার আর তোর ব্যাপারটা অনেকটায় সেইম। তুই এখন যে বয়সটাতে আছিস এই বয়সটাতে বাচ্চারা নেগেটিভ জিনিসে আকৃষ্ট হয় বেশি। আমি যদি বলি ছাঁদ থেকে নিচের দিকে তাকাস না সাথে সাথেই তোর মাঝে নিচের দিকে তাকানোর একটা চরম ইচ্ছে জেগে উঠবে। সেই ইচ্ছেটা একজন পূর্ণবয়স্ক ছেলের থেকে কয়েকগুণ বেশি থাকে তোর মতো বাচ্চাদের। কেন বল তো? বয়সের জন্য। এই বয়সে ছেলে-মেয়েরা ক্যারিয়ারের দিকে যেমন গ্রোথ করে ঠিক তেমনি নেগেটিভ জিনিসের দিকেও এগিয়ে যায়। দেটস হুয়াই, এই সময়টায় অন্যান্য বয়সের ছেলে-মেয়েদের তুলনায় এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের প্রোপার কেয়ারে রাখতে হয়। নয়তো তারা এই ঝড়-ঝঞ্ঝায় একদম হাওয়া হয়ে যেতে পারে। তোর এই স্টেজটা একসময় আমিও পার করেছি এন্ড আই অলরেডি পাসড্ দিস স্টেজ। এখন আমি অনেকটায় ওয়াটারপ্রুফ ফোনের মতো যার জন্য টেনশন আছে প্রচুর, সেই সাথে ভরসাও আছে যে বিপদে পড়লে সামলে উঠতে পারবো। যেমনটা ওয়াটারপ্রুফ ফোন পানিতে পড়লেও মানুষের মাঝে তেমন অস্থিরতা জাগে না কারণ তারা জানে ফোনটা ঠিক আছে। কিন্তু তোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। তুই কিন্তু ব্যাপারটাকে সহজে সল্ভ করতে পারবি না ইভেন এমনও হতে পারে কোনটা তোর জন্য বিপদজনক তাই বুঝতে পারবি না। তাই বাবা তোকে সবসময় এক্সট্রা কেয়ারে রাখে। কারণ বাবা জানে ভবিষ্যতে এই দেশের একটা অনন্য সম্পদে পরিণত হতে চলেছিস তুই, আন্ডারস্ট্যান্ড?
রোজার কথায় মুচকি হেসে মাথা নাড়লো রিদ। হাসিমুখেই বলে উঠলো,
— আপু তুমি অনেক সুন্দর করে উপদেশ দাও৷ “উপদেশ” নামক শব্দটা আস্ত চুলকানি হলেও তোমারটা শুনতে একদম মিষ্টির মতো লাগে। মনে হয়, লাইফ ইজ সো কুল।
রোজা হাসলো,
— ভাই? সবসময় একটা কথা মনে রাখবি। লাইফটা কঠিন কিছু নয় আবার খুব সহজও নয়। লাইফটা তেমন যেমন তুই তাকে বানিয়ে নিবি। অর্থাৎ, তোর লাইফটা ইজি হবে নাকি টাফ হবে এটা নির্ভর করছে তোর উপর। এবং তোর মেন্টালিটির উপর। তুই যেমনটা ভাববি তোর চারপাশটা তোর কাছে তেমনই লাগবে। যেমন, সাইকেল রেসিং-এ জনি সেদিন তোর টায়ার পান্সার করে দিয়েছিলো। প্রতিশোধ হিসেবে, তার ঠিক পরের দিন তুই ওর টায়ার পান্সার করে দিয়েছিস। এর ফলাফল হিসেবে, পরের দিন তোদের মাঝে মারামারি হয়েছে। তারফলে,তোর মন খারাপ হয়েছে। জনির বাবা-মার কাছে তুই বাজে ছেলেও হয়েছিস। তাতে লাভ কি হয়েছে? অভারঅল জিরো! তার থেকে তুই অন্য একটা ট্রিক ইউজ করতে পারতি।
রোজার কথায় চোখ চিকচিক করে উঠলো রিদের। কৌতূহলী হয়ে বলে উঠলো,
— কি ট্রিক আপু?
— তুই সাইকেলে উঠার আগে চাকাটা চেইক করে নিতে পারতি। তাহলে কিন্তু এমনটা হতো না। রেসটাও তুই জিতে যেতিস আর মারামারি লেগে কারো কাছে বেড বয়ও হতে হতো না। জনির এমন বাজে কাজের পরও তোর এই জিতে যাওয়া ওর সহ্যও হতো না। বাড়তো মানুষিক যন্ত্রণা। আর এই মানুষিক যন্ত্রণাটাই হতো ওর চরম শাস্তি। এই জ্বলাপুড়া থেকে সে কোনো না কোনো ভুল করতো এবং সবার সামনে সহজেই প্রুভ হয়ে যেতো হি ইজ দ্যা কালপ্রিট নট ইউ। রাইট?
— আমি তো এভাবে ভাবিই নি আপু।
— সেদিন ভাবিস নি এখন ভাববি। সচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তার থেকেও বড় হাতিয়ার হলো চুপ থাকা। চুপ থেকে এমন অনেক কিছু করা যেতে পারে যা চিল্লাচিল্লি করে হয় না। বুঝেছেন মিষ্টার আইনস্টাইন?
— হুমম৷
— গুড। এবার চল। ঘুমোবি না? দুটো তো প্রায় বাজতে চললো। চল চল…
কথাটা বলে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে ডেকে উঠলো রিদ,
— আপু? আমাকে কখনো একা ফেলে যাবে না তো?
রিদের কথায় ভ্রু কুঁচকালো রোজা। ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে উঠলো,
— কোথায় যাবো?
রোজা তাকাতেই মাথা নিচু করে নিলো রিদ। ধীর কন্ঠে বললো,
— জানি না। তবে কোথাও যাবে না তুমি। তোমার বরের সাথেও যাবে না। নয়তো তোমার বরকে ধরে মারবো আমি।
রিদের কথায় হেসে উঠলো রোজা। হাসতে হাসতেই নিচের দিকে হাঁটা দিলো সে। যাওয়ার সময় বললো,
— বেশ তো! আমিও তোর সাথে যোগ হবো। দুজন মিলে মারবো ওকে। রেডি থাকিস।
রোজা চলে যেতেই ঘুরে দাঁড়ালো রিদ। সত্যিই রোজার বরকে মারবে সে। ওর বোনকে নিয়ে চলে গেলে সে একা কি করে থাকবে? সব বিষয়গুলো এতো ইজিলি বুঝিয়ে দিবে কে? রোজাকে তো কিছুতেই যেতে দিবে না রিদ। কিছুতেই না।
২৯.
ডেভিনে বসে আছে রাফিন। চোখদুটো বন্ধ করতেই আরুর চড় মারার দৃশ্যটায় ভেসে উঠছে বারবার। একটা মেয়ের এতোটা সাহস কি করে হতে পারে? কি করে? যে মেয়েটা রাস্তার দু’টাকার গুন্ডা দেখে ভয় পায় সে কিনা রাফিন চৌধুরীর গায়ে হাত দেয়? এই মেয়েকে ছেড়ে দিবে না সে। কিছুতেই না। রাফিনের গায়ে হাত দেওয়ার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে তাকে। চরমের থেকেও চরম। কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে রাফিনের। টকটকে লাল! এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। রাফিন ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। দরজায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ। রাফিনকে তাকাতে দেখেই বলে উঠলো সে,
— ভাই? বস্তি খালি করা শেষ। কাল থেকে কাজ শুরু করা যাবে কিন্তু..
রাফিন কপাল কুঁচকালো। রাগী গলায় বললো,
— কিন্তু কি?
— ভাই? বস্তীর মানুষগুলো তো ওখান থেকে সরে নাই। উল্টো আরো শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
— এতো সাহস পাচ্ছে কোথায় ওরা?
আসিফ একটা ঢোক গিললো। ভয় পাওয়া গলায় বলে উঠলো,
— আসলে ভাই, সুপারস্টার আরিয়ান মৃন্ময় বস্তীবাসীদের খাবার দিচ্ছে। জামা-কাপড়ও দিচ্ছে। তাই জীবিকার জন্যও ওদের মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই পুলিশ অফিসারকে মারার জন্য পুলিশ ফোর্সের বেশির ভাগই স্ট্রাইক করেছে এবং সরকারের বিপক্ষে গিয়ে বস্তিবাসীদের সুরক্ষা দিচ্ছে। আমাদের খবর মতে এর পেছনে জার্নালিস্ট রাদিব আহমেদের হাত আছে।
রাফিনের চোখদুটো লাল হয়ে এলো মুহূর্তেই। হুট করেই উঠে দাঁড়ালো সে। সামনে দাঁড়ানো আসিফকে জোড় একটা চড় বসিয়ে পাশের ফুলদানিটা ছুঁড়ে ফেললো দেয়ালো। মুহূর্তেই ভাঙা ফুলদানির ঝনঝন শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো প্রতিটি দেয়ালে। আসিফকে কলার ধরে ধার করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
— তোকে কি আমি শুধু প্রবলেমগুলো বলার জন্য টাকা দিচ্ছি? আই ওয়ান্ট সল্যুউশান। কিল দ্যা রাদিব বাস্টার্ড।
— ভভভাই?
রাফিন রেগে তাকাতেই।
— না মানে। সবার নজরই এখন রাদিব আহমেদের উপর। ওকে মারলে দেশের মানুষ আগুণ হয়ে যাবে। বিরোধী দলের চাপে সরকারও আমাদের সাইড চেঞ্জ করে ফেলতে পারে। ওদের কাছে টাকার চেয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাটাই আগে। তাই বলছিলাম কি….
— কি বলছিলি?
— রাদিবের একটা সুন্দরী মেয়ে আছে। আর একটা ছেলেও আছে। যদি …..
আসিফের কথায় শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো রাফিন। জানালার পাশে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ালো সে। অন্ধকার আকাশে দৃষ্টিনিবদ্ধ করে বলে উঠলো সে,
— যা ভাবছিস করে ফেল।
আসিফ মাথা নাড়লো। বিরবির করে বললো,
— আচ্ছা ভাই।
আসিফ চলে যেতেই বিয়ারের বোতলটা হাতে নিলো রাফিন। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে সুখটান দিতে দিতে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে লাগলো সে। আকাশে চাঁদটা আজ একটু বেশিই উজ্জল। হয়তো কারো সর্বনাশের বার্তা জানাতেই এতো উজ্জ্বলতা তার।
# চলবে….