রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ১৮
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা
৬.
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছি। দৃষ্টি কিছুটা দূরে বসে থাকা শুভ্র ভাইয়ের মুখে। সব-সময় হাসি-মজা নিয়ে মাতিয়ে রাখা মানুষটি আজ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। উনি যে ঈদের পরদিন থেকে আমার সাথে কথা বলছেন না তা আমি বুঝতে পারি ঈদের আরো দু’দিন পর। সবাই মিলে নদীর পাড়ে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। সবার পা খালি। হুট করেই আমার পায়ে মস্ত এক কাঁটা ফুটে গেলো। উনি আলিফ ভাইয়াদের সাথে আমাদের পেছনেই ছিলেন। আমাকে আর রাফিয়াকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে উঁকি দিয়ে নিচের দিকে তাকালেন। শুভ্র ভাইয়াকে দেখে রাফিয়া করুণ গলায় বললো,
— ভাইয়া? রোদের পায়ে কাঁটা ফুটেছে। আমি খুলতে পারছি না। ভয় লাগছে। আপনি একটু খুলে দিবেন?
শুভ্র ভাইয়া কিছু বললেন না। খুব সাবধানে কাঁটাটা খুলে চুপচাপ উঠে চলে গেলেন। আমার মুখের দিকে একবার তাকালেনও না উনি। পা থেকে খানিকটা রক্ত পড়ছিলো বলে রাফিয়া দুবলা ঘাস হাত দিয়ে পিষে লাগিয়ে দিলো। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই আমার। আমি তো ভাবছিলাম শুভ্র ভাইয়ার কথা। এতোটা নীরব কেন উনি? এতোক্ষণে তো বকাঝকা করে মাথা খেয়ে ফেলার মতো অবস্থা হওয়ার কথা ছিলো, তাহলে? সবাই নৌকায় ওঠে হৈ-হুল্লোড় শুরু করায় চিন্তাটা খুব সহজেই মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো আমার। ভাবলাম, হয়তো এমনি মুড অফ। কিন্তু উনার মুড অফের কারণটা যে আমিই তা জানতে পারি আরো দু’দিন পর। গ্রামের বাড়ির পেছনের দিকটাই হাওয়া আসে প্রচুর। তাই সবাই মিলে বসেছি পেছন দিকের পাকা দরজায়। একসময় আলিফ ভাইয়া বললেন,
— রোদ রাফিয়া? বোনেরা আমার, একটু মু্ড়ি মাখা করে এনে দে না। সবাই মিলে খাই। ঝাল ঝাল করে আনবি আড্ডাটা একদম জমে যাবে। প্লিজ যা না।
আমি আর রাফিয়া একগাদা বকা দিতে দিতে উঠে গেলাম মুড়ি মাখা আনতে। কিছুক্ষণ পর মুড়ির বাটিটা এনে সবাইকে দিয়ে শুভ্র ভাইয়ার সামনে ধরতেই হাতটা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে উঠে চলে গেলেন উনি। আমি সহ সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। কি মনে করে বাটিটা রেখে উনার পিছু পিছু উঠে গেলাম আমিও। ঘরে ঢুকতেই শুনলাম শুভ্র ভাইয়া বলছেন,
— আম্মু? আমি বাসায় যাবো এবং আজ এই মুহূর্তে যাবো।
মামানি অবাক হয়ে বললেন,
— কেন রে? হঠাৎ কি হলো?
— কিচ্ছু হয় নি। আমি জাস্ট বাসায় যাবো ব্যস। এখানের বাতাস আমার সহ্য হচ্ছে না।
— কিন্তু শুভ্র? তোর ফুপ্পি আরো দুটো দিন থাকতে বলছে আমাদের। কতোবছর পর এলাম তারপর সবাই একসাথেই চলে যাবো।
— তো? তোমরা থাকো বাট আমি থাকছি না। আমার দরকার আছে আমায় যেতে হবে।
এটাই আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে দাঁড়ালো। এমনিতেও বাসায় আসার জন্য চেঁচামেচি করছিলাম আমি কিন্তু একা বলে গ্রেন্টেট হয় নি। তাতে কি? এবার হবে। আম্মুকে গিয়ে বললাম শুভ্র ভাই ময়মনসিংহ চলে যাচ্ছে আমিও যাবো ব্যস! মা শুভ্র বলতে অন্ধ তাই রাজিও হয়ে গেলেন কিন্তু বাধ সাধলো শুভ্র ভাই। সে আমাকে সাথে নিবে না। কিছুতেই না। আমি জেদ ধরতেই মার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে উঠলেন উনি,
— ফুপ্পি? তুমিও কি ওর মতো বাচ্চা? ও একটা মেয়ে মানুষ হয়ে আমার সাথে কি করে যেতে পারে? থাকবে কই ও?
মা কিছু না ভেবেই অবাক হয়ে বললেন,
— থাকবে কই মানে? বাসায় থাকবে। এমনিতেই তিনদিন যাবৎ প্যানপ্যান করে কান খেয়ে ফেলেছে। ওকে তোর সাথেই নিয়ে যা বাবা।
শুভ্র ভাই এবার আরো রেগে গেলেন। নিজেকে শান্ত করে বলে উঠলেন,
— ফুপ্পি? বাসায় ও একা কি করে থাকবে?
এবার মামানি বললেন,
— একা কই? তুই তো আছিসই।
— হোয়াট! তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো? তোমরা এতোটা কেয়ারলেস কি করে হতে পারো? নিজেদের মেয়েকে যার তার সাথে একা পাঠিয়ে দিবে?
মা অবাক হয়ে বললেন,
— যার তার সাথে বলছিস কেন শুভ্র? তুই তো ফ্যামিলি মেম্বারের মধ্যেই পড়িস।
শুভ্র ভাইয়া ব্যাগ গোছাতে গোছাতে স্পষ্ট গলায় বললেন,
— আমি ফ্যামিলি মেম্বার হলেও ওকে আমার সাথে নিচ্ছি না। প্লিজ ফুপ্পি এডাল্টদের মতো চিন্তা করো।
আমি বুঝলাম এবারও ট্রেন ছুটে যাচ্ছে আমার। শুভ্র ভাই একবার যদি বলেন “না” তাহলে সেটাকে “হ্যা” করার ক্ষমতা স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। তাই আব্বুকে খুঁজে বের করে আব্বুর গলায় ঝুলে পড়লাম। মামু আর আব্বুকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে শুভ্র ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েও লাভ হলো না। উনার এককথা উনি আমাকে একা উনার সাথে নিবেন না, ব্যস। শেষ পর্যন্ত আব্বুই রেডি হলেন আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। তাছাড়া বাবার ১ তারিখ থেকে অফিস খোলা সো ময়মনসিংহ তো যাওয়ারই ছিলো।
এবার আর শুভ্র ভাইয়া কিছু বললেন না। শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ দু’ঘন্টার পথে উনি আমার সাথে কথা বলা তো দূরে থাক তাকিয়েও দেখলেন না। অথচ বাবার সাথে অবলীলায় গল্প করে চলেছেন উনি। মনে মনে রাগে ফেটে যাচ্ছিলাম। উনি আমার পদ্ধতি আমার উপরই এপ্লাই করছেন, হাও স্মার্ট! বাসায় ফিরে উনি নিজের বাসায় চলে যেতে চাইলেও বাবা আটকে দিলেন। বললেন যে ক’দিন মামানি না ফিরে ততদিন আমাদের সাথেই থাকতে হবে উনাকে।
প্রথমে একবার অবাধ্য হয়েছিলেন বলে এবার আর কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ বাবাকে হেন তেন বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করে রাজি হয়ে গেলেন। এই চার-পাঁচটি দিন আমার জন্য নরকীয় একটা সময় ছিলো। এই পাঁচদিনেও উনি আমার সাথে একটি কথাও বলেন নি। বাবার সাথে টুকটাক কথা বলেই দরজায় ছিটকানি দিতেন। খাওয়ার সময় বাবার সাথে খেয়ে নিয়ে আবারও একই কাজ। ব্যাপারটা ক্রমেই আমার কাছে চরম অসহ্যকর হয়ে উঠছিলো।
ধৈর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে উনার সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টাও করি কিন্তু বরাবরের মতোই ব্যর্থ হই। উনি আমাকে পাত্তা দিলে তো? আমি কোনো কাজে উনার সামনে গেলেও রাগে শক্ত হয়ে বসে থাকতেন উনি। আমি বুঝতাম কিন্তু রাগের কারণটাই বুঝতে পারতাম না। অবশেষে আজ মা-মামানি সবাই ফিরে এসেছেন। সাথে শুভ্রর মাথায় এক নতুন ভাব উদয় হয়েছে। উনার কথা হলো এখন লকডাউন ছেড়েছে সো উনি চট্টগ্রাম চলে যাবেন। তা নিয়েই গম্ভীর আলোচনা চলছে আমাদের বাসায়। মামানি কাঁদু কাঁদু কন্ঠে বলছেন,
— কি বলছিস এসব? চট্টগ্রাম যাবি মানে কি? এখন তো ভার্সিটি অফ। তাহলে কেন যাবি? আর ১১ তারিখের পর হয়তো আবারও লকডাউন শুরু হবে। দেশের এই পরিস্থিতিতে ওখানে তোকে যেতে দিবো না আমি।
— সরি আম্মু! বাট আমি যখন বলেছি যাবো মানে যাবো। দেটস ইট! আর ১১ তারিখের পর লকডাউন শুরু হলে আমি ওখানেই থাকবো।
মামানি এবার কেঁদেই দিলেন। মামু-আব্বু হাজার বুঝিয়েও কোনো কাজ হলো না। কালকের টিকেট কেটেছেন জানিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেলেন উনি। আমি শুধু গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম। আমার জন্য এতোকিছু হচ্ছে ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। কিন্তু রাগটা কেন? সেদিন সারাদিন চিন্তা-ভাবনা করার পরও কিছুই মাথায় এলো না আমার। সন্ধ্যার দিকে মামানি ফোন দিয়ে বললেন,
— রোদু মা?
— আসসালামু আলাইকুম মামানি।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম, রোদু তুই একটু শুভ্রকে বোঝা না। দেশের যে পরিস্থিতি এই অবস্থায় ওখানে যাওয়া কতোটা রিস্ক তুই তো বুঝতে পারছিস। ওকে একটু বোঝা না, মা।
আমি দুঃখী দুঃখী গলায় বললাম,
— তোমাদের কথায় তো শুনছে না। সেখানে আমি ছোট মানুষ আমার কথা শুনবে নাকি? পরে দেখা যাবে ধরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে।
মামানি ধমক দিয়ে বললেন,
— একদম বাজে কথা বলবি না রোদু। এটা মজা করার সময়? আমি জানি ও তোর কথা শুনবে। তুই এটলিস্ট চেষ্টা তো করবি।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম, “হ্যাঁ তাই তো। তুমি প্ল্যান করো আর তোমার সেই রগচটা ছেলে রাগের মাথায় আমাকে ছাদ থেকে ছুঁড়ে মারুক। মারবে তো আমায় তোমার তো কিছু না। ” কিন্তু মুখে বললাম,
— আচ্ছা। আমি বলে দেখবো মামানি।
— বলে দেখবি মানে কি? এখনই বলতে হবে। তুই আমাদের বাসায় চলে আয়। তোর মা কে আমি বলছি। জলদি আয়।
আমি কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলেন মামানি। যে ছেলে গত দু সপ্তাহ যাবৎ আমার সাথে কথা বলছেন না সে নাকি আমার কথায় চট্টগ্রাম যাওয়া ক্যান্সেল করে দিবেন। অবিশ্বাস্য! আমার বুক চিঁড়ে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আলমারি থেকে জামা বের করতে গিয়েই শুভ্র ভাইয়ের দেওয়া শাড়িটা চোখে পড়লো। কি ভেবে শাড়িটা পড়ে নিলাম। হালকা সাজুগুজু করে বের হতেই পড়লাম আরেক ঝামেলায়। আম্মু!!!! ভয়ে আমার বুক তখন ধুকপুক ধুকপুক করছে। আম্মু আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। গম্ভীর মুখে বললেন,
— এই শাড়ি কোথায় পেলি?
আমি কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
— আ আসলে মা। কি হয়েছে বলো তো? আজ না সোহার জন্মদিন। সকাল থেকে ফোন করে জ্বালাচ্ছিলো। তুমি তো বাসা থেকে বের হতে মানা করছো তাই ভেবেছিলাম যাবো না। কিন্তু মামানি ফোন দিয়ে ওই বাসায় যেতে বললো তাই ভাবলাম সোহার সাথেও দেখা করে যাই। ওর বাসা তো রাস্তাতেই পড়ে। আর আশু, হ্যাপি সবাই এসেছে। যাই??
মা কিছু বললেন না। আমি হাফ ছেঁড়ে বেঁচে দৌঁড়ে বেরিয়ে এলাম। নয়তো আবারও শাড়ির কথা জিগ্যেস করলে কি বলতাম আমি? কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। মামুর বাসায় যাওয়ার পর দরজা খুলেই মামানিও তার অসম্ভব সুন্দর মুখ থেকে এই ভয়ানক প্রশ্নটাই করলেন,
— রোদু, এই শাড়ি কবে কিনলি? দারুন হয়েছে তো। তোর মার পছন্দ আছে বলতে হবে।
আমি আবারও আগের উত্তরটাই কপি পেষ্ট করে দিয়ে বললাম,
— শুভ্র ভাইয়া কোথায়?
— শুভ্র তো ছাদে।
— ও আচ্ছা। আমি দেখা করে আসছি।
মামানি হঠাৎ আমার হাত টেনে ধরে বললেন,
— তুইই শেষ ভরসা মা। ওকে একটু রাজি করিয়ে নিস। রাজি করাতে পারলে তুই যা চাবি তাই দিবো তোকে, প্রমিজ।
আমি হাসলাম। মামানির হাতে হাত রেখে বলে উঠলাম,
— যদি ছাদ থেকে জীবন নিয়ে ফিরতে পারি তবেই না চাইবো। তোমার যা ছেলে…
আমার কথায় মামানি হেসে উঠলেন। বললেন,
— এই! এভাবে বলবি না। আমার ছেলে রগচটা হলেও এতোটাও রাগী নয় যে তোর গায়ে হাত তুলবে। ও তোকে এটলিস্ট কিচ্ছু করবে না।
আমি হেসে বললাম,
— না করলেই ভালো। আল্লাহ ভরসা।
মামানি হাসলেন। আমি চুপচাপ ছাদের দিকে হাঁটা দিলাম। সিঁড়ির একধাপ থেকে আরেক ধাপে পা রাখছি আর আমার মন বলছে, “রোদ দৌঁড় দে, ওখানে বিপদ সঙ্কেত ঝুলছে রে। যাস নে, যাস নে।” মনের কথা না শুনেও যেতে হলো আমায়। ছাঁদের দরজায় দাঁড়িয়ে বার কয়েক জোরে শ্বাস টেনে নিয়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি উল্টোদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছেন। উনার গায়ে সাদা টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট। আমি উনার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো আমার।
যা যা বলবো ভেবেছিলাম সবকিছুই যেন অগোছালো হয়ে গেলো। অথচ শুভ্র ভাই আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি, ছাঁদে পা রাখতেই উনি বুঝে গিয়েছিলেন যে আমি এসেছি তবু একটুও নড়াচড়া করেন নি উনি। আমার পায়ের পায়েলের শব্দটা নাকি একদমই অন্যরকম। সেই শব্দ নাকি রোদু রোদু বলেই কানে বাজে উনার। যদিও কথাগুলো ফাসকা আলাপ বলেই মনে হয় আমার তবুও কিভাবে যেন বুঝে যান উনি। সব কথা এলোমেলো করে ফেলে হুট করেই বলে ফেললাম আমি,
— সরি!
শুভ্র ভাই এতোক্ষণ সামনে তাকিয়ে ছিলেন। এবার অন্যদিকে মুখ ঘুরালেন। আমিও কম যাই নি। অন্যপাশে দৌঁড়ে গিয়ে উনার মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
— আবারও সরি!
উনি আবারও মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকালেন। আমারও জেদ চেপে গেলো। ছাঁদের রেলিং-এ রাখা উনার ডানহাতটা টেনে সরিয়ে উনার সামনে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আবারও উনার হাতটা রেলিং এর উপর রেখে দিলাম। এমন একটা কান্ড করার পরও উনি আমার দিকে তাকালেন না। এমন একটা ভাব করলেন যেন সব স্বাভাবিক। আমি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে হাসি হাসি মুখে বললাম,
— কালো শাড়িতে আমায় কেমন লাগছে বলুন তো? আপু তো বলছিলো আমাকে নাকি অসম্ভব মায়াবতী লাগছে।
উনি এবার আমার দিকে তাকালেন। একনজর দেখে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— একদম পেত্নী লাগছে। চাঁদের আলোতে পেত্নী।
আমি হেসে উঠলাম। বুঝতে পারলাম রাগটা একটু কমের দিকে আসছে। আমি মৃদু গলায় বললাম,
— রাগ করে আছেন?
কথাটা শুনে উনি চলে যেতে নিলেই টি-শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁড় করালাম আমি। এক হাত উনার কাঁধে রেখে অন্যহাতে উনার চুলগুলো এলোমেলো করতে করতে বললাম,
— একদম নড়াচড়া না। আমি না বলা পর্যন্ত এখান থেকে যাওয়ার চেষ্টা করলে খবর আছে। আচ্ছা? বলুন না, রাগের কারণটা না বললে বুঝবো কিভাবে?
উনি আমার ব্যবহারে কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর ভ্রু কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে দুই হাতে রেলিং এর সাথে চেপে ধরলেন। আমি ভেবেছিলাম, এই বুঝি দিন শেষ হলো আমার। নিশ্চয় ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলবেন। কিন্তু না, উনি তেমন কিছু করলেন না। রাগী গলায় বললেন,
— শাড়ি কি আমি তোকে গুছিয়ে রাখার জন্য দিয়েছি? ঈদের দিন পড়িস নি কেন?
উনার কথা শুনে আমি হতবাক। এই সামান্য একটা কারনে এতো কাহিনি করলেন উনি। ভাবা যায়? আমি বিস্মিত কন্ঠে বললাম,
— এইটুকুর জন্য?
উনি অভিমানী গলায় বললেন,
— এটা এইটুকু? তোর কোনো ধারনা আছে কতো কষ্ট করে কতো দোকান ঘুরে ঘুরে শাড়িটা কিনেছি আমি। লকডাউনের আগের লাস্ট দু’মাসের টিউশনির টাকা তোর এই শাড়ির পেছনে গিয়েছে। অথচ তুই গুরুত্বই দিলি না।
আমি কিছুক্ষণ বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসি চেপে বলে উঠলাম,
— আচ্ছা সরি। তাছাড়া আমি কিভাবে পড়তাম বলুন? সবাই যদি জিগ্যেস করতো শাড়ি কোথায় পেলাম তখন? ছি! কি বিশ্রী অবস্থা হতো।
উনি আগের মতোই মুখ ফুলিয়ে বললেন,
— হলে হতো।
আমি হাসলাম। উনার হাত সরিয়ে উনার সামনে থেকে সরে পাশে দাঁড়িয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। একটু চুপ থেকে বললাম,
— কাল নাকি চট্টগ্রাম যাচ্ছেন?
উনি সামনের দিকে তাকিয়েই বললেন,
— না যাচ্ছি না। এখন আর যেতে ইচ্ছে করছে না। যাওয়াটা কি বেশি জরুরী?
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
— আপনার যাওয়া জরুরি কিনা জানি না তবে আমার বাসায় যাওয়াটা খুব জরুরি। প্রায় সাড়ে আট বাজে।
কথাটা বলে নিচের দিকে হাঁটা দিতেই পেছন থেকে বলে উঠলেন উনি,
— দাঁড়া। একা যাবি না আমি দিয়ে আসছি….
নিচে নেমে মামানির সাথে দেখা হতেই মামানি জিগ্যেস করলো রাজি হয়েছে কি না। আমি চোখের ইশারায় “হ্যা” বুঝাতেই মামানি ঝাঁপটে ধরলেন আমায়। হাসিমুখে বললেন,
— আমি বলেছিলাম না? তোর কথা নিশ্চয় শুনবে। এবার মিললো তো?
আমি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে বিস্মিত কন্ঠে বললেন শুভ্র ভাই,
— আম্মু? এসব তোমার প্ল্যান ছিলো? তাই তো বলি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হয় কিভাবে!
কথাটা বলেই আমার দিকে রাগী চোখে তাকালেন। উনার চোখদুটো যেন চিৎকার করে বলছে, “আজ তোর খবর আছে রোদ, ইউ আর গন !” উফফ! লাস্ট মোমেন্টে এসে আবারও ফেসে গেলাম আমি। অথচ প্ল্যানিং অফিসার আমার মামানি কি সুখের হাসি হাসছেন। অসহ্য!!
…….……..
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/