রোদ শুভ্রর প্রেমকথন পর্ব ২৫
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা
১৩.
“বিয়ে” —– বিয়ে শব্দটাই আমার কাছে এক্সাইটিং সাউন্ড করে। আমাকে ঘিরে সবাই ছুটাছুটি করছে , সাজুগুজু করছে ভাবতেই অসম্ভব রকম আনন্দ লাগে। আগামীকাল মিথি আপুর বিয়ে। অনুষ্ঠান নয়। শুধুই কাবিন। বাড়িতে মিথি আপুর দাদুর বাড়ির লোকেরাও এসেছে প্রচুর। যার ফলে তৈরি হয়েছে থাকা সংক্রান্ত সমস্যা। আমার আম্মু মেয়েদের নিয়ে খুবই সেনসিটিভ।
এদিক-ওদিক ছেলেরা দৌড়াদৌড়ি করবে আর মেয়েরা ফ্লোরে বেসামাল শুয়ে থাকবে? না, কক্ষনো না। তাই আম্মুর কড়া আদেশ যুবতী মেয়েদের থাকতে হবে মামানিদের বাসায়। সেই সুবাদে, আমি, রাফিয়া, আপু আর মিহি আপুর থাকার ব্যবস্থা হলো মামানির বাসায়। সকালেই বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই শরীরটা হালকা গরম। চোখ-মুখ দিয়ে যেন অসুস্থতা ভরা গন্ধ বেরুচ্ছে। মেহমানদের আপ্যায়ন করার মাঝ পথেই চোখ গরম করে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন আম্মু। জোর করে খাবার গিলিয়ে টেবলেট খাইয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,
—” রাফিয়াকে নিয়ে তোর মামানিদের বাসায় যা। গিয়েই ঘুমিয়ে পড়বি। টেবলেট খাওয়ার পর ঘুমটা জরুরি। ঘুম থেকে উঠে দেখবি জ্বর নেই। আর একবারও যেন এদিক ওদিক দৌড়াতে না দেখি। যা…জলদি যা…।”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম —- ৭ঃ৪০। এই সন্ধ্যায় ঘুমানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। তবে মামানির বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে শতভাগ। কে জানে শুভ্র ভাইয়ের জ্বর কমলো কি না? চুলগুলো দু’হাতে মুঠো করে হাতখোপা করতেই একরকম লাফিয়ে রুমে ঢুকলো রাফিয়া। আমার থেকে শুভ্র ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার আগ্রহটা ওরই দ্বিগুণ। আমি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা হাতে নিয়ে বললাম,
—“চল।”
মামানিদের বাসায় এসে কলিংবেল চাপার আগেই দরজা খুললেন মামু। আমাদের দেখে হেসে বললেন,
—” রোদুমনি কেমন আছে?”
আমি হালকা হেসে বললাম,
—” রোদুমনি ভালো আছে।”
মামু হেসে রাফিয়ার দিকে তাকালেন,
—” ভালো আছো রাফিয়া?”
—” জ্বি আংকেল। ভালো আছি।”
মামুকে পাশ কাটিয়ে ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
—” কোথাও যাচ্ছো মামু?”
—” তোদের বাসাতেই যাচ্ছিলাম। তোর বাবার সাথে একটু কাজ ছিলো। তুই কি অসুস্থ নাকি রে রোদমা?চোখ-মুখ কেমন শুকনো লাগছে। ”
—” না মামু। অসুস্থ নই তবে তোমার বোনের বকা শুনতে শুনতে আরেকটু হলেই অসুস্থ হয়ে যেতাম। তোমার বোনটা কি মারাত্মক মহিলা মামু। এনিওয়ে, মামানি কই?”
মামু হাসলেন। হাতে একটা কাগজের ফাইল তোলে নিয়ে বললেন,
—” শুভ্রর রুমে আছে হয়তো। ছেলের ক্লাস নিচ্ছে। দু’দুটো সপ্তাহ ধরে জ্বরে পুড়ছে তবু শিক্ষা হয় না। কাল রাতেও ১০৪° জ্বর ছিলো। সকালে একটু কমেছিলো কিন্তু মহাশয় ঘন্টাময় বৃষ্টিতে ভিজে আবারও কাহিনী বাঁধিয়েছেন। তোরা বাচ্চারা যে কেন বুঝিস না আমাদের! আচ্ছা, আমি যাচ্ছি। দরজাটা লাগিয়ে দে মা।”
মামু বেরিয়ে যেতেই দরজা লক করে শুভ্র ভাইয়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম দু’জনে। মনের মাঝে বিন্দু বিন্দু খারাপ লাগাগুলো যেন প্রতিটি পদক্ষেপেই পাহাড় রূপ ধারন করছে। দু’জনেই নিঃশব্দে শুভ্র ভাইয়ের রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। দু’জনের মুখেই দুঃখী দুঃখী ভাব। আর যায় হোক, শুভ্র ভাই তো আমাদের জন্যই বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন। ইশ! বেচারা। শুভ্র ভাই মামনির কোমর জড়িয়ে পেটে মুখ লুকিয়ে বসে আছেন চুপচাপ। থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে উনার শরীর। মামানি দাঁড়িয়ে থেকেই থমথমে মুখে ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আমি আর রাফিয়া একে অপরের দিকে তাকালাম। সাথে সাথেই শুভ্র ভাইয়ের মৃদু কন্ঠ ভেসে এলো,
—” আমি আর পারছি না আম্মু। সহ্যের সীমাটা ভেঙে যাচ্ছে। তুমি হয় আমার মনটা পিষে ফেলো নয় আমায় ছেড়ে দাও….”
শুভ্র ভাই আরো কিছু বলতেন তার আগেই রাফিয়া জোরে-সোরে বলে উঠলো,
—” এমা! শুভ্র ভাইয়া কি কাঁদছেন?”
রাফিয়ার কন্ঠ কানে যেতেই থেমে গেলেন শুভ্র ভাই। আমাদের দিকে না তাকিয়েই ওঠে চলে গেলেন বারান্দায়। আমি রাফিয়ার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই অপরাধী গলায় বলে উঠলো রাফিয়া,
—” বিশ্বাস কর! আস্তে বলতে গিয়ে ভুল করে জোরে বলে ফেলছি। আল্লাহ কসম।”
আমি কিছু বললাম না। চোখ ফিরিয়ে মামানির দিকে তাকালাম। মামানি আমাকে দেখে খানিক চমকালেন। ঠোঁটে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বললেন,
—“রোদুমনি? কখন এলি?”
আমি হেসে বললাম,
—” এই মাত্র।”
রাফিয়া অনুযোগের সুরে বললো,
—” ওর জন্য আমাকেও আসতে হলো। জেঠীমনি জোর করে পাঠালেন। ও বাড়ি সবাই কতো মজা করছিলো। কিন্তু কি আর করা? রোদের জ্বর হয়েছে আর আমি বসে বসে মজা করবো তা তো হয় না। তাই এলাম… ওকে জেঠিমনি এখানে এসেই ঘুমোতে বলেছেন।”
মামানি অবাক হয়ে বললেন,
—” তোরও জ্বর?শুভ্ররও তো জ্বর।”
আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম,
—” আমার জ্বর নেই মামানি। শরীরটা হালকা গরম এই যা।”
মামানি গালে হালকা চাপড় দিয়ে বললেন,
—” বেশ। তোরা দাঁড়া আমি বিছানা রেডি করে দিচ্ছি।”
মামানি চলে যেতেই ঘরময় ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো রাফিয়া। ঠোঁট উল্টে বললো,
—” শুভ্র ভাইয়ের রুমটা কি গোছানো রে রোদ। উনার বউয়ের তো কোনো কাজই করা লাগবে না শুধু রোমান্স ছাড়া। তাছাড়া বান্দা যে হট বউয়ের অন্যদিকে মন থাকবে বলেও মনে হয় না।”
আমি কপাল কুঁচকে বললাম,
—” ছিহ!তোর মুখে সবসময়ই অশ্লীল কথাবার্তা। নিজের মুখ সামলা। উনি তোর বড়।”
রাফিয়া ভেংচি কেটে বললো,
—“এখানে অশ্লীল কথার কি দেখলি বল? আমি খাঁটি সত্য বলেছি। উনি যদি কাঁদায় মাখামাখি হয়ে থাকে তাহলেও কি মনে হবে জানিস? মনে হবে, ইশশ! কাঁদাগুলো আগে কেনা মাখান নি উনি? এটিটিউট ইজ আ বিগ ম্যাটার….”
আমি অসহায় গলায় বললাম,
—” প্লিজ বইন ৷ চুপ যা, উনি বারান্দায়।”
রাফিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বারান্দার দিকে উঁকি দিলো। দাঁত বের করে হেসে বললো,
—” পোলা তো নয় সে তো আগুনের ঘোলা রে! রোদ রে? বিশ্বাস কর, এই পোলায় যদি কয় রাফিয়া তুমি দুনিয়া ছেড়ে দাও তাহলেও আমি এক পায়ে রাজি। ইশশ! এত্তো কিউট কেন? যা করে সব কিউট কিউট লাগে। এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তাতেও যেন কিউট কিউট ভাব। উফফ!”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
—” তোর দুনিয়ার সব ছেলেকে দেখলেই এমন ফিলিংস হয়। এটা নতুন কিছু নয়। ট্রাই সামথিং নিউ।”
রাফিয়া টেবিলের উপর থেকে একটা ডায়েরি তুলে নিয়ে পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
—” তোর মামাতো ভাইই তো নিউ প্যাকেজ রে। নিউ ব্র্যান্ড, নিউ…. ”
এটুকু বলেই থেমে গেলো রাফিয়া। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হাতের ইশারায় ডাকলো আমায়। আমি ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যেতেই ফিসফিস করে বললো,
—” রোদ রে, আমাদের হিরো তো দেখি প্রথম থেকেই কারো প্রেমে হাবুডুবু,সাঁতার,ডুব সবই দিচ্ছে রে।”
এটুকু বলেই থামলো রাফিয়া। ভীষণ উৎসাহ নিয়ে ফিসফিস করে পড়তে লাগলো ডায়েরীর সেই কালো লেখা —
” এই শ্যামলতা,
এখনো কি রেগে আছো আমার ওপর? নাকি অভিমান করেছো? আমার অনেকগুলো অভিযোগ জমা হয়ে আছে শ্যামলতা, অনেক! তোমার উপর, মায়ের উপর, সবার উপর। আমার যে কতো কষ্ট হয় তা কি তুমি জানো? জানো না। কখনো জানতে চাও-ও না। কিন্তু কেন চাও না?
একটা বার আমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারো না কেন? আমি তোমার কাছে আসছি না, কথা বলছি না, ভালোবাসছি না তবুও তুমি নির্বিকার। আমার কাছে না আসাটা কেন তোমাকে ভাবাবে না? কেন চোখের আড়ালে থেকেও তোমাকে একটিবার শুধু একটিবারও দেখতে পাবো না?আমি এড়িয়ে গেলেও তুমি কেন এড়িয়ে যাবে আমায়? কেন? ” মাকে চাই নাকি তোমাকে?” এই প্রশ্নটা খুব জঘন্য শ্যামলতা। কিন্তু সেই জঘন্য প্রশ্নটা একবারও বুঝতে চাও না তুমি। বুঝতে চাও না আমাকেও। আমার যে তোমার হাসিটা সহ্য হচ্ছে না।
কেন এতোটা শক্ত থাকবে তুমি? আমি নেই জেনেও কেন হাসবে তুমি? কেন আগের মতোই চলবে? একটুও অগোছালো হয়ে পড়বে না কেন? আজ বিশ বিশটা দিন হতে চললো দেখি না তোমায়। গায়ে প্রচন্ড জ্বর অথচ একটা বার শুধু একটা বার আমার কাছে এলে না তুমি। ছেলের চিন্তায় দু’দিন যাবৎ ঘুমোচ্ছে না মা। অথচ, কি আশ্চর্য! উনি আমার জ্বরের কারণটাই ধরতে পারছেন না। এই জ্বর তো জ্বর নয় তোমারই উত্তাপ তা কি করে বুঝাবো তাকে? কিভাবে?….. ”
এটুকু পড়তেই হালকা শব্দে চোখ তুলে তাকালাম দু’জন। শুভ্র ভাই পকেটে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। সিল্কি চুলে ঢেকে থাকা কপালের নিচটাতে একজোড়া রক্ত লাল চোখ তাকিয়ে আছে নির্বিকার। আমি আর রাফিয়া একে অপরের দিকে তাকালাম। রাফিয়া ঢোক গিলে নিয়ে খুব সাবধানে ডায়েরিটা টেবিলে রাখলো। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে আমার ডানহাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ভয়মাখা গলায় বললো,
—” সসসরি ভাইয়া।”
শুভ্র ভাই কিছু বললেন না। আগের মতোই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। কি করবো বুঝতে না পেরে দু’জনেই একদৌড়ে বেরিয়ে এলাম। নিজেদের রুমে গিয়ে বসতেই দুঃখী দুঃখী গলায় বলে উঠলো রাফিয়া,
—” কষ্টে প্রাণটা ফেঁটে যাচ্ছে রে। আমার ক্রাশটা অলরেডি বাঁকা হয়ে আছে। কোন হারামজাদির প্রেমে পড়ছে আল্লাহ জানে। হে খোদা! ”
আমি রাগী গলায় বললাম,
—” এতো ঢং কেন করছিস রাফিয়া? তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে? বয়ফ্রেন্ড থাকা অবস্থায় অন্যের দিকে নজর দেস। শেইমলেস।”
—” এই? বয়ফ্রেন্ড থাকলেই যে অন্যের দিকে তাকানো যাবে না কে বললো তোকে? আর অন্যকেউ আর শুভ্র ভাইয়া কি এক হলো নাকি? শুভ্র ভাইয়ের জন্য তো হাজারটা বয়ফ্রেন্ড কোরবান। বুঝিস না কেন? ক্রাশ ইজ ক্রাশ। আহা!”
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
—” উহুম রাফিয়া বেপ্পি। ক্রাশ ইজ নট ক্রাশ, ক্রাশ ইকুয়ালটু বাঁশ। যা এখন তোকে খাওয়াবো আমি। বেয়াদপ।”
________________
রাত একটার দিকে হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো আমার। ফোনটা হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম পানি খাবো বলে। পানি খেয়ে ভেসিনের উপর ফোন আর মাথার কাটাঁটা রেখে চুলগুলো হাতখোপা করলাম। চোখে-মুখে পানি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই মনে হলো পেছনে কেউ আছে। ভয়ে শ্বাস আটকে চরম সাহস নিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম। ভেবেছিলাম ভয়ানক মুখশ্রীর কিছু একটা দেখে জ্ঞান হারাবো। কিন্তু আমাকে মানসিক স্বস্তি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র ভাই। আমার চোখে-মুখেই ঘুরে বেড়াচ্ছে তার নীরব দৃষ্টি। উনার এই দৃষ্টি বেশিক্ষন সহ্য হলো না আমার। উনাকে পাশ কাটিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। উনি পেছন থেকে মৃদু গলায় বললেন,
—” চুলের কাঁটাটা?”
আমি একপা পিছিয়ে উনার দিকে না তাকিয়েই পেছন দিকে হাত বাড়ালাম। উনি খুব ভদ্রভাবে কাঁটাটা তুলে দিলেন আমার হাতে। আবারও পা বাড়ানোর আগেই বলে উঠলেন উনি,
—” ফোনটা?”
এবারও যথারীতি হাত বাড়ালাম আমি। ফোন নিয়ে তাড়াহুড়ো করে সামনে পা বাড়াতেই আবারও বলে উঠলেন উনি,
—” আমার উত্তাপটা?”
আমি প্রথমে বুঝতে না পেরে আগের মতোই হাত বাড়ালাম। খানিকবাদেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি মৃদু হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই মামু আর মামানির কন্ঠ শুনা গেল। মামু বলছেন,
—” গেলো কই? এখানেই তো ছিলো!”
আমি গলা বাড়িয়ে বললাম,
—” কি খুঁজছো মামু?”
ততক্ষণে মামু-মামানি দু’জনেই ডাইনিং রুমে এসে দাঁড়িয়েছেন। মামানি চেয়ারে হাত রেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
—” ইঁদুর।”
মামু-মামানির চিৎকারে রাফিয়াও এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। হয়তো না ঘুমিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলো এতোক্ষণ। আমি অবাক হয়ে কয়েকপা এগিয়ে গিয়ে বললাম,
—” কি? চারতলায় ইঁদুর?”
এটুকু বলে নিচের দিকে তাকাতেই দেখি আমার পা থেকে দু আঙ্গুল দূরেই মাঝারি আকারের এক ইঁদুর। হঠাৎ চোখে পড়ায় চমকে গিয়ে লাফিয়ে উঠলাম। চিৎকারের সাথে সাথে দু- তিনটা লাফ দিতেই শুভ্র ভাইয়ের পায়ের উপর গিয়ে পড়লাম। উনার পায়ে পা লাগতেই ছোট্ট করে “উহ্” শব্দ করলেন উনি। মামু-মামানি ইঁদুর মারতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই ডানহাতে কোমর চেপে ধরলেন উনি। আমি অবাক চোখে তাকাতেই মৃদু গলায় বললেন,
—” এভাবে লাফালে পড়ে গিয়ে নির্ঘাত কোমর ভেঙবে রোদপাখি।”
কথাটা শেষ করে আমাকে আরো একদফা অবাক করে দিয়ে বামগালে হালকা ঠোঁটে চুমু এঁকে দিলেন উনি। চুমু দিয়েই চোখের পলকে দু-তিনহাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। মামু-মামানি ইঁদুরের পিছু নিয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটতেই রাফিয়া চোখ বড় বড় করে আমার দিকে দৌঁড়ে এসে বললো,
—” আমি কিছু দেখলাম।”
আমি তখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বার কয়েক চোখ পিটপিট করে ঘোর ধরা গলায় বললাম,
—” কি দেখলি?”
রাফিয়া একবার শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালো। উনি গম্ভীর মুখে মামানিদের কাজ-কর্ম দেখছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই দুনিয়াতে “ইঁদুর” নামক প্রাণীটা ব্যতিত অন্যকিছুর অস্তিত্ব নেই। উনার ভাবসাব দেখে রাফিয়া কনফিউজড হয়ে বললো,
—” শুভ্র ভাইয়া তোকে…”
আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
—” কি?”
শুভ্র ভাই অতিভদ্র ছেলের মতো বললেন,
—” কোনো সমস্যা রাফিয়া? আমায় ডাকলে মনে হলো।”
আমি আর রাফিয়া দুজনেই একসাথে মাথা নাড়লাম। ইঁদুর মারতে ব্যর্থ হয়ে মামু-মামানি ব্যর্থতার শিষ তুলে নিজেদের রুমে ঢুকে গেলেন। তাদের পিছু পিছু শুভ্র ভাইও গেলেন। আর আমরা দু’জন হ্যাবলাকান্তর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম দু’জনের চোখে-মুখেই চরম হতাশা। সেই হতাশা নিয়েই বলে উঠলো রাফিয়া,
—” আমি হয়তো ভুল দেখিছি রে রোদু।”
আমিও হতাশ গলায় বললাম,
—“ওহ!”
_______________
[ প্রেমকথন নিয়ে কিছু কথাঃ
অনেকেই বলছেন দু-পর্বে শেষ করলেও রেগুলার দিয়ে দু-পর্বে শেষ করে দিন গল্পটা। আবার অনেকে বলছেন রেগুলার দিন প্লিজ। আবার অনেকে বলছেন অনেক বড় করুন।
দেখুন, প্রেমকথনগুলো হলো সারপ্রাইজিং পার্ট। এটা আমি অনেক আগেই শুরু করেছি। যারা আমার পুরাতন পাঠক তারা জানেন যে “প্রেমকথন” টা কোনো রেগুলার গল্প নয়। এর নেক্সটও হয় না আবার শেষও হয় না। লেখকরা সবসময়ই পাঠকদের জন্য লিখে। কিন্তু কিছু কিছু লেখা আছে যেগুলো লেখক নিজের জন্য লিখে। নিজেকে হালকা করতে লিখে। প্রেমকথনটা অনেকটাই তাই।
এটা আমি নিজের জন্য লিখি। যখন আমার মন খুব ভালো থাকে বা খুব খারাপ থাকে তখনই প্রেমকথনগুলো লিখি আমি। এটা কোনো ধারাবাহিক স্টোরি নয় যে প্রতিদিন দিবো। এটা আমার মনের সাথে কানেক্টেট। আমি আবারও বলছি এটা কোনো গল্প নয়। এটার শুরু আছে কিন্তু শেষটা নির্ধারিত নয়। আমি যতদিন আছি প্রেমকথনটাও থাকবে। আমার ভালো লাগার অংশ হিসেবে মাঝে মাঝে “অনুগল্প” হিসেবে আপনাদের সামনে আসবে, সবসময় বা রেগুলারলি নয়। হয়তো সপ্তাহে বা মাসে একটা/দুটো পার্ট হিসেবে। এর থেকে বেশি কখনোই নয়।
আমি জানি আপনারা নিজেদের ইমোশন থেকে , ভালো লাগা থেকে বার বার রিকুয়েষ্ট করেন। কিন্তু, সেই রিকুয়েষ্ট আমার পক্ষে রাখা সম্ভব নয়। আমি জোর করে কোনোকিছু লিখতে পারবো না। আমি আগে যেমন হঠাৎ হঠাৎ লিখতাম ঠিক সেভাবেই লিখবো। কারণ এটা আমার ভালো লাগার একমাত্র খোরাক। অন্যান্য গল্পের মতো নিষ্প্রাণ গল্পগুচ্ছ নয়। সকলের জন্য একরাশ ভালোবাসা। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
[বিঃদ্রঃ এটা যেমন গল্প নয় ঠিক তেমনি বাস্তবও নয়। শুধুই লেখিকার কল্পনা মাত্র। এই বিষয় নিয়ে কোনো কমেন্ট করবেন না প্লিজ।]
#রোদবালিকা
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/rodsuvro/