- অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প
- বেস্ট রোমান্টিক গল্প
- নতুন রোমান্টিক গল্প
- অদ্ভুত প্রেমের গল্প
- রোমান্টিক প্রেমের ছোট গল্প
১.অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প
যূথির হানিমুন (১৮+ এলার্ট )
হঠাৎ করেই আজ যূথির বিয়েটা হয়ে গেল। যূথির বর তার চেয়ে গুনে গুনে সাত বছরের বড়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এপ্লাইড ফিজিক্সে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। এখন একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পড়ায়। যূথি বিয়েটা করতে চায়নি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হলো, তার এখনো লেখাপড়া শেষ হয়নি এবং ছেলেকে সে একদমই চেনে না। এই যুগে এসেও সম্পূর্ণ অচেনা অজানা কারো সাথে বাবা মা যে তাদের একমাত্র সন্তানকে বিয়ে দিতে পারে এটা যূথির কল্পনার বাইরে ছিল। যূথি প্রথমে কদিন খুব কান্নাকাটি করল। তারপর গোমড়া মুখে ছেলের সাথে পর পর দুই সপ্তাহ চাইনিজ খেয়েও এলো কিন্তু তার মন সায় দিল না। মাত্র দুইদিনের দেখাতে কারো সাথে সারাজীবন পার করার মত এত বড় সিদ্ধান্ত যূথির পক্ষে নেয়া সম্ভব ছিল না। যাই হোক, তার ভাগ্যে হয়ত এই ছেলের সাথে বিয়ে লেখা ছিল বলেই আজ বিকেলে যূথির বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়েটা হয়েছে যূথিদের এলাকার-ই একটি কমিউনিটি সেন্টারে। বিয়ের পর খাওয়াদাওয়া শেষে অতিথিরা একে একে বিদায় নিলেন। এবার যূথির বিদায় নেবার পালা। সহনীয় মাত্রায় কান্নাকাটি করে যূথি যখন বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তখন অদ্ভুৎ এক ঘটনা ঘটল। যূথির বর রাজন গম্ভীর গলায় ঘোষনা করল, সে তার সদ্য বিয়ে করা বৌকে নিয়ে তার বাবা-মার বাড়িতে যাবে না। কমিউনিটি সেন্টার থেকে যূথিকে নিয়ে সে সরাসরি নিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে উঠবে। যূথি ভাসা ভাসা শুনেছিল বটে তার বর নাকি বাবা মার বাড়ি ঢাকা হওয়া সত্ত্বেও দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ঢাকাতেই নিজের মত করে আলাদা থাকে। রাজনেরও কোনো ভাই বোন নেই। যূথির মত বাবা মার একমাত্র সন্তান। শুরুতে যূথি খুব একটা পাত্তা দেয়নি। তবে এখন বেশ অবাক হলো। যূথি ভেবেছিল, অন্তত আজকের দিন হয়ত রাজনের সাথে সে তার বাবা মার ওখানেই উঠবে। রাজনের বাবা, মাও ছেলের কথায় অবাক হলেন।
রাজনের মা সবার সামনে বলেই ফেললেন, কী সব কথা বলছিস রাজন! আজ নতুন বৌকে নিয়ে ওই বাড়িতে যাবি কিরে! আজ আমাদের ওখানে চল। ওটা তো তোরও বাড়ি। তাছাড়া বাড়ি ভর্তি কত আত্মীয় স্বজন আছে। তোর মামা, খালারা সবাই এসেছেন। ওইখানে তোদের বাসর ঘর সাজানো হয়েছে। তাছাড়া কাল আবার তোদের বৌভাতের অনুষ্ঠান রয়েছে!
যূথির বর মুখ গোজ করে দাঁড়িয়ে রইল। বোঝায় যাচ্ছে মায়ের কথা তার পছন্দ হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজনেরই জয় হলো। সে যূথিকে নিয়ে একা একাই নিজের ফ্ল্যাটে হাজির হলো।
এতদিন এই ফ্ল্যাটে রাজন একা একা কাটালেও এখানে আসার পর যূথি বেশ অবাক হলো। সাধারণত ব্যাচেলর ছেলেদের বাসা এত গোছানো থাকে না। অথচ রাজনের পুরো ফ্ল্যাটটা ছবির মত করে সাজানো। কোথাও এক কণা ধুলোর চিহ্ন নেই। মনে হচ্ছে কেউ যেন একটু আগেই পানি দিয়ে পুরো আসবাবগুলো ধুয়ে মুছে রেখে গেছে।
– যূথি তুমি কি আমার উপর খুব রাগ করেছ?
যূথি রাজনের দিকে ফিরল। বিয়ের পর এই প্রথম রাজন তাকে সরাসরি কিছু বলল। এখানে আসার পুরো সময়টা সে আপন মনে ড্রাইভিং করেছে। যূথিও গাড়িতে চুপচাপ বসেছিল। যূথি স্বাভাবিক ভাবে বলল, কেন বলুন তো?
– তোমাকে আজ রাতে এই ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছি এই কারনে?
– রাগ করিনি তবে অবাক হয়েছি।
– কিছু মনে করো না প্লিজ। বিয়ের পরে কিছু ব্যাপার আছে যেগুলো আমার খুব-ই বিরক্ত লাগে। এই যেমন, আজ তুমি যদি বাবা মার ওখানে যেতে তবে কাল ভোর হতে না হতেই আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশী গুলো আমাদের বাড়িতে জড়ো হত। বৌ ভালো হয়েছে নাকি মন্দ হয়েছে, সে কালো নাকি ফর্সা এগুলো নিয়ে আলোচনা করত। আর বিয়ের পরদিন সকালে নতুন বৌ, জামাই বাসরর ঘর থেকে বের হওয়ার পর ভীষণ অস্বস্তিকর একটা সিচুয়েশন হয় যেটা আমার কাছে খুব-ই বিরক্তিকর।
– এতকিছু আপনি জানলেন কীভাবে?
– আমার বন্ধুর বিয়েতে দেখেছি।
যূথি ঠোট ওল্টালো। এই যুগে এসে যে মানুষটা নিজে সম্পুর্ণ অচেনা একটা মেয়ের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে রাজি হয় তার কাছে এমন আধুনিক চিন্তাধারার গল্প আশা করা যায় না।
যূথির দিকে তাকিয়ে রাজন কী বুঝলো কে জানে। নরম গলায় বলল, তুমি যাও ফ্রেস হয়ে এসো। আজ বোধহয় ভালোমত কিছু খেতেও পারোনি। আমারও বিরিয়ানি, রোস্ট তেমন একটা রোচে না। তুমি ফ্রেস হয়ে এলে দুজন মিলে একসাথে আরাম করে খাব। যূথি বিয়ের ভারী কাপড় ছেড়ে সুতি একটা শাড়ি পরে যতক্ষনে ডাইনিং রুমে এলো ততক্ষণে টেবিলে পারিপাটি করে খাবার সাজানো হয়েছে। মেনু খুব সাধারন। মুরগির মাংস ভুনা, আলু ভর্তা আর করল্লা ভাজি। খাবারগুলো দেখে যূথির মনে হলো, তার আসলেই ভীষণ খিদে পেয়েছে এবং এই মুহুর্তে এর চেয়ে ভালো খাবার তার জন্য আর কিছু হতে পারত না। খাবার টেবিলে বসে যূথি অবাক হয়ে বলল, এসব কে রান্না করেছে?
– আমি।
– কখন করলেন এত রান্না?
– তোমাকে বিয়ে করতে যাবার আগে।
যূথি বুঝল, খুব সাধারন চিন্তাধারার একটা মানুষের সাথে তার বিয়ে হয়নি। তার সাথে বিয়ে হয়েছে, এমন একজন মানুষের সাথে যিনি শুধু চিন্তাতেই আধুনিক নন, নিজের মাঝে সেই চিন্তা গুলো খুব ভালো মত ধারনও করেন এবং সেই ভাবে চলাফেরাও করেন।
রাতটা খুব স্বাভাবিক ভাবে কেটে গেল। যূথিকে নিজের বেডরুম ছেড়ে দিয়ে গেস্ট রুমে ঘুমুতে যাবার আগে রাজন নরম গলায় বলল, তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও। তোমাকে আমি বিরক্ত করব না। তোমার যেদিন মনে হবে আমার কাছাকাছি আসা যায়, আমার সাথে এক বিছানা শেয়ার করা যায় সেদিন আমাকে নিঃসঙ্কোচে জানাবে, কেমন?
এরপর ঝড়ের বেগে বেশ ক’টা দিন কেটে গেল। যুথি এ কদিনে বুঝল অন্তত রাতের সময়টুকু রাজন নিজের মত করে সময় কাটানোর ব্যাপারে অবসেসড্। ক’টাদিন বৌভাতের অনুষ্ঠান, আত্মীয় স্বজনের এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি, দাওয়াত এসব মিলিয়ে দিনগুলো ঝড়ের বেগে কেটে যাচ্ছিল বটে কিন্তু রাতের সময়টুকু রাজন যূথিকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরত। যূথিরও অবশ্য বিষয়টা খুব ভালো লাগত। বিয়ের পর অন্য সব মেয়েদের মত তাকেও নতুন পরিবেশে শ্বশুর শাশুড়ির সাথে মানিয়ে চলতে হচ্ছে বটে তবে কোথায় যেন রাজন যূথির জন্য একটা খোলা বারান্দা রেখে দিয়েছে যেখানে সে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারে, নিজের মত করে বাঁচতে পারে।
বিয়ের কারনে রাজন সাত দিন ছুটি নিয়েছিল। বিয়ের পরদিন থেকেই সবাই রাজন আর যূথিকে বলছিল, তারা যেন এই সুযোগে হানিমুনটা সেরে আসে। ভিন্ন দেশে না হোক অন্তত কক্সবাজার কিংবা রাঙামাটি তো ঘুরে আসায় যায়। সুযোগমত রাজন যূথিকে বলেছিল, কী যেতে চাও হানিমুনে?
যূথি কোনো উত্তর দেয়নি। উত্তর দিবে কী মনমতো কোনো জবাব সে খুঁজে পায়নি। যূথিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে রাজন নিজেই বলেছিল, আমার মনে হয় তুমি আগে আমার সাথে সহজ হও, আমাদের মাঝে ভাব ভালোবাসা না হোক অন্তত বন্ধুটুকু হোক তারপর নাহয় আমরা হানিমুনে যাব। এরপর হানিমুনের বিষয়টা ওখানেই চাপা পড়ে গিয়েছিল।
রাজনের ছুটি শেষ হবার পরেরদিন থেকেই দুজনের জীবনের কর্ম ব্যস্ততা শুরু হলো। অফিসে যাওয়ার আগে রাজন নিজেই নাস্তার আয়োজন করল।
যূথি নরম গলায় বলল, একজন মেইড রাখলেই তো পারেন?
– এতদিন রাখি নাই কারন একা ছিলাম। এখন রাখব।
– আমি কিন্তু রান্না কিছু পারি না।
– তোমার কোনো চিন্তা নেই। আমি সব পারি।
– বারে! আপনি রান্না করবেন আর আমি মেয়ে হয়ে বসে বসে খাব নাকি?
– এখানে পুরুষ বা মহিলার কোনো বিষয় নেই যূথি, আমার মনে হয় প্রতিটি কাজই সবার জানা দরকার। ধরো, আজ সকালে আমার ভীষণ পরোটা খেতে ইচ্ছে করছ, এখন আমি যদি পরোটা যদি বানাতে না পারি তাহলে আমার কিন্তু তোমার কিংবা আমার মায়ের নিদেনপক্ষে মেইডের উপর ভরসা করে থাকতে হবে। আর যদি পারি তাহলে কোনো ব্যাপার নয়। চাইলেই নিজের চাওয়া যে কোনো সময় পূরণ করা সম্ভব।
রাজনের কথায় যূথি ভীষণ মুগ্ধ হলো। এভাবে সে বিষয়গুলো কখোনো ভেবে দেখেনি। যূথি নিজেই অবাক হয়ে দেখল, ক্যাম্পাসের পুরো সময়টা সে তার বান্ধবীদের সামনে রাজনের গল্প করে কাটাল। ক’দিনের মাঝেই ইউটিউব দেখে সে মজার মজার রান্না শিখল। তারা বাসায় কোনো মেইড রাখেনি। দুজন মিলে ভাগ করে সংসারের কাজগুলো সেরে নেয়। সন্ধ্যার পর দুজনেই নিয়ম করে পড়তে বসে। রাজন পি এইচ ডি করছে। সে তার থিসিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে আর দুই মাস পর যূথির অনার্স পরীক্ষা। সেও কোমর বেধে পড়াশোনা করছে।
এর মাঝে এলো বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই মহেন্দ্রক্ষন। আজ তাদের বাসায় রাজনের পুরোনো কিছু বন্ধুরা এসেছে। এদের মাঝে তিনজন নারীও আছেন। পরিকল্পনা হলো, সন্ধ্যায় একসাথে একটা সিনেমা দেখে রাতে সবাই ডিনার সেরে যে যার মত বাসায় ফিরবে। রান্না নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। খাবার সব অনলাইন থেকে অর্ডার দেয়া হয়েছে। সিনেমা দেখার সময় রাজনের সব বন্ধুদের গল্পে গল্পে যুথীর জানা হলো, এদের মাঝে তন্বী নামের মেয়েটি নাকি রাজনকে খুব পছন্দ করত। রাজনের সাথে কোনোভাবে সম্পর্ক না হওয়ার কারনে মেয়েটি প্রবাসী একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে এবং সামনে মাসেই সে ছেলেটার সাথে পাকাপাকি ভাবে কানাডায় সেটেল্ড হচ্ছে । মেয়েটি নাকি রাজনের চেয়ে চার বছরের ছোট। যূথি মিনমিন করে জিজ্ঞেস করেছিল, রাজনের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল, কীভাবে?
রাজন যূথির প্রশ্ন হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, আরে বন্ধুত্বের মাঝে আবার বয়সের প্রশ্ন আসে নাকি!
রাজনের বন্ধুরা সবাই একে একে বিদায় নিল। সবাই চলে যেতেই যূথি মাথা ধরেছে বলে নিজের বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়ল। রাজন একটা বাম নিয়ে এসে বলল, খুব মাথা ব্যথা? আমি কপালে বাম লাগিয়ে দেই? ভালো লাগবে তোমার।
– লাগবে না আমার।
– গরম লাগছে তোমার? এসির টেমপারেচারটা একটু কমিয়ে দেই?
– এই ঘরের এসিটা নষ্ট। ঘর ভালোমত ঠান্ডা হয় না।
রাজন অবাক হয়ে বলল, বিয়ের আগে এই ঘরে ঘুমাতাম বলে এই ঘরেই আমি ভালো এসিটা লাগিয়েছি। অথচ এই ঘরের এসি ঠান্ডা হচ্ছে না!
– ভালো নাকি মন্দ আমি জানি না। এই ঘরে আমার গরম লাগে।
– তবে আমার ঘরে যাবে?
– হুম।
– ঠিক আছে তবে তাই হোক। তুমি আজ আমার ঘরেই ঘুমাও। আমি নাহয় এই ঘরে ঘুমাচ্ছি।
– আপনি এই ঘরে ঘুমাবেন কীভাবে? ঘরটা তো গরম।
রাজন একটু হেসে বলল, তবে কি আজ আমরা এক ঘরে এক বিছনাতেই ঘুমাবো?
যূথি বালিশে মুখ গুজে বলল, আমার কাছে শোয়া আপনার বারণ বুঝি?
বাম বামের মত পড়ে রইল। মাথা ব্যথাটাও যেন এক নিমিষে পালিয়ে গেল। ঘরটাও আর পরিবর্তন করা হলো না। তীব্র রমনের শেষে যূথি যখন আদুরে বিড়ালের মত রাজনের গায়ের সাথে লেপ্টে রইল তখন রাজন যূথির চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
– কী?
– আজ আমি ইচ্ছে করেই তন্বীকে দাওয়াত দিয়ে এখানে আনিয়েছি। ওর সাথে আমার তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। আর রাতুলকেও বলেছি সে যেন ইচ্ছে করে তোমার সামনে তন্বীর বিষয়গুলো তোলে।
যূথি অবাক হয়ে বলল, কেন? আমার সাথে কেন এমন করলেন আপনি?
– কারন আমি আর পারছিলাম না। তোমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে আমি এটাও বুঝেছিলাম যে, তুমিও আমাকে সহজে মুখ ফুটে কিছু বলবে না। তাই আমাদের কাছাকাছি আসার জন্য তোমার এই ইমোশোনাল ব্রেকডাউনটা ভীষণ দরকার ছিল।
যূথি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, আপনি কী খারাপ!
– তুমি খুশী হওনি বলো?
যূথি চোখ বুজে বলল, হয়েছি। খুব খুশী হয়েছি।
– তবে চলো আমাদের হানিমুনটা এবার সেরে নিই।
– বারে আমার ক্লাস, আপনার ভার্সিটি এগুলোর কী হবে?
– সাতদিনে এমন কোনো ক্ষতি হবে না যূথি! তবে তুমি বিশ্বাস করো এমন সাতদিন আমাদের জীবনে আর কখনো ফিরে আসবে না।
যূথি কথা বলার আর কোনো সুযোগ পেল না। ততক্ষণে রাজনের ঠোঁট আবার যূথির ঠোঁটে ডুবে গিয়েছে।
*সমাপ্ত*
…………………………..
………………………………………
দুঃস্বপ্ন
সুন্দরী একটা মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর জানতে পারলাম এই মেয়ে আমার সাবেক প্রেমিকার ছোট বোন। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। এইডা আমি কি করছি।
এর বড় বোনের জ্বালায় পাগল হয়ে দুই মাস আগে পাবনা থেকে ছাড়া পাইছি। আবার যদি এই মেয়ের সাথে আমার প্রেয় হয়। তাহলে ডাক্তার বলছে “এবার মাথার গন্ডগোল হলে। আমি তাহলে সারাজীবনের জন্য পাগল হয়ে যাবো”।
হঠাৎ দেখি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন। ফোনের ওপাশ থেকে কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না এটাই আমার সেই সাবেক প্রেমিকা।
সে চিৎকার দিয়ে বললো “তোর মতো একটা ছাগলের সাথে প্রেম করে আমার জীবন শেষ। আর সেই তোর সাথে প্রেম করে আমার ছোট বোনের জীবন শেষ হতে দিবো”?
ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না আমার। এমন সময় হঠাৎ করে আব্বার একটা মহান বাণী মনে পড়লো, আব্বা কইছে বিপদে সব সময় সাহস রাখবি। আমি বুকে সাহস এনে বললাম “কও কি! ঐ সুন্দরী মেয়েটা তোমার ছোট বোন? কিভাবে সম্ভব”! সে বললো, কিভাবে সম্ভব মানে? আমি আমতাআমতা করে বললাম, “না মানে তোমার গায়ের রংয়ের সাথে ওর রঙ যায় না”।
সাবেক প্রেমিকা বললো “তুই এইডা কি কইলি? আমার গায়ের রঙ নিয়ে খোটা দিলি? অই তুই চিনস আমারে? আমি কিন্তু সামীম ওসমানের এলাকার লোক। তোর লাশ যদি শীতলক্ষ্যা নদীর মধ্যে না ডুবাইছি তাইলে আমার নাম শিলা না”।
মনে মনে তিনবার বিপদের দোয়া পড়ে বুকে ফু দিলাম। খুব মনে আছে একবার রমযান মাসে দিনের বেলায় কি যেন একটা কথায় উত্তেজিত হয়ে ফোনে শিলাকে চুম্মা দিছিলাম বলে সে রমযান পরে আমাকে ৩০ টা রোযা করাইছিল। এইবারে তার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিছি। সেই সাথে শরীর নিয়েও খোটা দিছি। আল্লাহ জানে কপালে কি আছে।
ভয়ে ফোন কেটে দিয়ে ভাবলাম বাসা থেকে আর বের হবো না। কপালে যা হবার হবে। এই মেয়ের সাথে এখান থেকেই সব শেষ।
আমি এখন খুব ভদ্র ছেলে। বাসা থেকে বের হইনা। ঘরেই নামাজ কালাম পড়ি। আম্মা কয়েল আনতে দিলেও আমি বাসা থেকে বের হইনা। ছোট ভাইকে পাঠায় দেই৷ বলা যায় না। শিলা যদি সত্যি সত্যি আমাকে মেরে ফেলে।
কি যেন একটা কাজে একটু জন্য বের হইছি।হঠাৎ পিছন থেকে একটা রুমাল দিয়ে কে যেন নাক চেপে ধরলো। তারপর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা। মুখের মধ্যে একটা কাপড় ঢুকানো। হাত পা একটু এদিকওদিক করার ব্যবস্থা নেই। বুঝলাম মৃত্যু খুব কাছে। সামনে তাকিয়ে দেখি শিলা সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইয়া বড় একটা চাকু নিয়ে। ১০০ পাওয়ারের লাইটের আলো সেই চাকুর উপর পরে চকচক করছে। শিলা সেই চালু নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো, হারামজাদা তুই আমার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দেস। আর আমার গায়ের রঙ নিয়ে মজা নেস৷ আজকেই তোর জীবনের শেষ দিন। সাথে সাথে চাকুটা আমার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো। মনে হলো আমি মরে গেছি। এখানেই আমার জীবনের শেষ।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে বুঝতে চেষ্টা করলাম আমি জান্নাতে, না জাহান্নামে। যতটুকু মনে আছে জাহান্নামে শুধু আগুন আর আগুন। কিন্তু আমার আশেপাশে কোনো আগুন নেই অথচ আমি চোখের সামনে একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। শাড়ি পরে ঝাটা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম জান্নাতে ঝাটার দরকার কি? আর এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন। আচ্ছা এটা জান্নাতের হুর নয় তো? আচ্ছা দেখিতো অর্ডার করে, কথা শুনে নাকি।
মেয়েটাকে বললাম “এই যাও আমার জন্য ছাগলের দুধের চা নিয়ে আসো”। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো ” ভাইজান আমি ছাগলের দুধ পামু কই”? আমি মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বললাম ” এই তুমি কোথায় পাবা সেটা আমি কিভাবে জানি, তুমি যেখান থেকে পারো এনে দেও”। মেয়েটা হঠাৎ ও আল্লাহ ও আল্লাহ করে বলে উঠলো “চাচিমা ভাই আবার পাগল হয়ে গেছে।আসেন দেখেন ভাই এসব কি উল্টাপাল্টা বলতেছে। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন”।
হঠাৎ দেখি আম্মা আমার সামনে। আম্মাকে দেখে কইলাম “আম্মা আপনিও জান্নাত পাইছেন? আপনি মরলেন কবে? আব্বা জান্নাত পায়নাই? আব্বাকে দেখতেছি না যে ? নাকি আব্বা এখনো মরেনাই”?
দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দেওয়ার পর আম্মা কইলো” চাইয়া দেখ এইটা জান্নাত না, দুনিয়া। আর আমি এখনো মরিনাই”। আম্মারে কইলাম “তাইলে আমার সামনে শাড়ি পরে ঝাটা হাতে দাঁড়িয়ে আছে এইটা হুর না”? আম্মা আরো দুইটা থাপ্পড় দিয়ে কইলো ” এইটা আমাদের নতুন কাজের মেয়ে সুরমা। তোর রুম পরিষ্কার করতে আসছে”।
মনে মনে কইলাম ” তার মানে আমি মরিনাই, স্বপ্ন দেখছি”।
আম্মা চিৎকার করে আব্বাকে ডেকে কইলো, পাবনার হটলাইনে কল দিয়ে তারাতাড়ি কও এম্বুলেন্স পাঠাইতে। পোলা আমার আবার গেছে”।
দুঃস্বপ্ন
রিফাত আহমেদ
২.বেস্ট রোমান্টিক গল্প
গার্লফ্রেন্ড কে কিডন্যাপ করতে গিয়ে ভুলে তার ষাট বছরের দাদীকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছি। রাতের অন্ধকারে কি বোঝা যায় কোনটা বুড়ি আর কোনটা যুবতী মেয়ে?
সকালবেলা কাজের ছেলের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ও হাতে করে একটা পেপার নিয়ে এসেছে আমাকে কিছু একটা দেখাতে। খুব বিরক্তি নিয়ে বললাম ” কি দেখাবি বল? ও বলল “ভাইয়া আপনার আর একটা বুড়ির ছবি পেপারে এসেছে। পড়ে দেখুন কি লিখেছে? আমি তাড়াহুড়ো করে ওর হাত থেকে পেপার কেড়ে নিলাম। দেখি পত্রিকার প্রথম পাতার নিচে লিখা ” প্রেমের টানে ষাট বছরের বুড়িকে কিডন্যাপ করেছে বাইশ বছরের এক যুবক ” নিচে আমার আর একটা বুড়ির ছবি দেওয়া।
তাড়াতাড়ি ফোন খুলে আমার কুখ্যাত বন্ধুদের ফোন দিলাম। ওরাই বলেছিল “ছকিনাকে কিডন্যাপ করা ওদের বাম হাতের কাজ। বন্ধুর জন্য যদি এটুকুই না করতে পারে তাহলে বন্ধু কিসের”। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আক্কাস বলে উঠলো ” বন্ধু তুই আসবি কখন। ভাবীতো এখনো ঘুমাচ্ছে । আর শোন ভাবীকে একদম হালাল উপায়ে কিডন্যাপ করেছি। আমাদের সাথে কিডন্যাপ করার সময় রুমাও ছিল। ও নিজে হাতে ভাবীর মুখ বেঁধে বোরখা পরে দিয়েছে। তারপর বাকি কাজ আমরা করেছি। তুই আসবি বলে এখনো বোরখা খুলিনি। তুই তাড়াতাড়ি আয়”। আমি এপাশ থেকে নায়ক মান্নার কন্ঠে বলে উঠলাম ” ঐ হারামিরা, তোরা কাকে তুলে নিয়ে এসেছিস ভালো করে দেখ। তোদের ভাবী এখন বাপের বাড়িতে বসে কার্টুন দেখছে। আর তোরা তুলে এনেছিস ওর ষাট বছরের দাদীকে”। ওপাশ থেকেই ফোনের লাইন কেটে গেলো।
সাথেসাথে ফোনে একটা মেসেজ এলো। চেক করে দেখি ছকিনার মায়ের নাম্বার থেকে মেসেজ। ও লিখেছে ” কাল রাতে বাবা আমাকে আমার ঘরে ঘুমাতে দেয়নি। আমি আম্মার সাথে ঘুমিয়েছিলাম। আর বাবা রাতে আম্মার ফোন কেড়ে নিয়েছিল বলে তোমাকে খবরটা দিতে পারিনি। প্লিজ তুমি কিছু একটা করো নাহলে আব্বা আমাকে দুইদিনের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিবে”।
দৌড়ে গেলাম ছকিনার দাদীকে যেখানে কিডন্যাপ করে রাখা হয়েছে সেখানে। দেখি বুড়ি বসে বসে ফোন টিপছে। আমাকে দেখেই বলল ” ওই তোর ফোনে নেট আছে? আমি আমতাআমতা করে বললাম ” না , আমার বাসায় ওয়াইফাই আছে”। দাদী ঠাস করে আমার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল” কি রকম ছোট মাপের কিডন্যাপার তোরা যে তোদের এখানে ওয়াইফাই নাই”। পাশে তাকিয়ে দেখি আক্কাসও গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না। আমার আগে ওর গালেও থাপ্পড় পড়েছে। দুজনা চোখাচোখি করছি এমন সময় দাদী বলে উঠলো ” তাড়াতাড়ি তোরা আমাকে নেট কিনে দে”। আমি তাড়াহুড়ো করে নেট কিনে আমার ফোন দাদীর হাতে দিয়ে বললাম এই নিন দাদী আমার ফোন”। দাদী আবার ঠাস করে আমার নরম গালে থাপ্পড় দিয়ে বলল ” ওই, তুই আমাকে দাদী বললি কেন? আমি কি দেখতে দাদীর মতন? বয়স একটু হয়েছে এই যা, এছাড়া এখনো আমাকে যুবক ছেলেপেলে ফেসবুকে মেসেজ দেয়। আমার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে। তুই কোন সাহসে দাদী বললি বল”? আমি ভয়েভয়ে বললাম ” তাহলে আপনাকে কি বলবো? দাদী এবার খুশিখুশি মুখে বলল ” আমাকে নারগিস বলে ডাকবি। ওটা আমার ডাক নাম। আর তোরা সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়া, একটা সেল্ফি তুলবো। বুড়ির থাপ্পড়ের ভয়ে সবাই পাশে এসে দাঁড়ালাম। বুড়ি সেল্ফি তুলে আমার হাতে দিয়ে বলল ক্যাপশন লিখ ‘অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে সেল্ফিবন্দী হলাম। কেমন হয়েছে কমেন্টে জানান “। বুড়ির কথামতো ক্যাপশন লিখে দিলাম।
দুইদিনেই বুঝে গেলাম। এইটা আমার প্রেমিকার বাবার প্লানিং। উনি ইচ্ছে করেই উনার মাকে কিডন্যাপ করার ব্যবস্থা করেছে সেই রাতে। আমাদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার জন্য।
রান্না করি আমি আর বুড়ি ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপশন লিখে ” বন্ধুরা অনেকদিন পর নিজে হাতে রান্না করলাম, খাবারের স্বাদ কেমন হয়েছে কমেন্ট জানাও”। এই দুইদিনে বুড়ি আমাদের জ্বালিয়ে শেষ দিয়েছে। এতবার করে বললাম ” চলো নারগিস তোমাকে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসি”। বুড়ি বলে কিনা ঐ বাড়িতে আর কখনো যাবে না। সারাজীবন আমার সাথে থাকবে । আমি মনে মনে বলি দুইদিনে তোমার পা টিপে দিয়ে আমার হাত ফুলে গেছে। সারাজীবন পা টিপে নেওয়ার ধান্ধা তোমার।
সেইদিন রাতে আবার বুড়িকে কিডন্যাপ করলাম। কিডন্যাপ করে উনার বাড়িতে রেখে আসলাম। সকালবেলা উঠে দেখি বুড়ির মেসেজ ” মজনু, তুমি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলে? তুমি কি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারোনি? আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি মজনু। আমি সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে ছুটে আসতে চাই মজনু। আমি জানি এই সমাজ আমাদের মেনে নিবে না। তাই তুমি যদি চাও তাহলে তোমাকে নিয়ে আমি মঙ্গল গ্রহে চলে যাবো। সেখানে তুমি ধান চাষ করবে আর আমি তোমার জন্য মজার মজার সব খাবার রান্না করবো।
আমাদের অনেক গুলো বাচ্চাকাচ্চা হবে। ওরা তোমাকে আব্বা আব্বা বলে ডাকবে। আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো। আমি আসছি তোমার বাড়িতে মজনু, তুমি থেকো “।
বুড়ির মেসেজ পড়ে মাথা ভোঁ ভোঁ করতে লাগলো। দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। কখন যে বুড়ি এসে বলে” চলো হানিমুনে যাই”।
কিডন্যাপ
রিফাত আহমেদ
৩.নতুন রোমান্টিক গল্প
টিউশনির টাকা দিয়ে আশার জন্য কেনা শাড়িটা আম্মার ভয়ে লুকিয়ে রেখেছি। আম্মা আমার রুমে ঢুকলেই বুকের মধ্যে হার্টবিট বেড়ে যায়। কখন যে আম্মার কাছে ধরা খাই আল্লাহ জানে। আর এই কথা যদি কোনোভাবে আব্বার কানে যায় তাহলে আর রক্ষা নেই। আব্বাকে আমি যমদূতের মতন ভয় পাই। সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললে এখনো ভয়ে পা কাঁপে। আর আব্বা যদি জেনে যায়।আমি একটা মেয়ের জন্য শাড়ি কিনেছি তাহলে যে কি করবে আমাকে। ভেবেই বুকের ভেতরটা শুকিয়ে যায়। এমনিতেই আমি বেকার ছেলে।এখনো কোনো চাকরি জুটাতে পারিনি। তাই বাবার হোটেলে খেয়ে কোনোমতে টিউশনির টাকা দিয়ে হাত খরচটা চালিয়ে নেই।
আশা আমার গার্লফ্রেন্ড। কয়েকদিন পর ওর জন্মদিন। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ওর জন্মদিনে ওকে একটা নীল শাড়ি দিবো। হঠাৎ মাসের আগেই টিউশনির টাকা পেয়ে গেছি বলে আগেভাগে শাড়ি কিনে রেখে দিয়েছি। আমি আবার কাছে টাকা রাখতে পারিনা। কখন যে টাকা খরচ করে ফেলি। এই ভয়ও মনে মনে ছিল।
আম্মা সচরাচর আমার রুমে আসে না। কিন্তু শাড়ি কেনার পর থেকে মনে হয় আমার রুমে আম্মার আনাগোনা বেড়ে গেছে। আম্মা রুমে ঢুকলে মনে মনে আমি বিপদের দোয়া পড়ি। আল্লাহ আম্মা যেন আমার ওয়ারড্রোবে হাত না দেয়। যেই আমি ঘুম থেকে উঠার পর জীবনে বিছানা গোছাই না। সেই আমি ঘুম থেকেই উঠেই আগে বিছানা গোছাই। যেন আম্মার এই রুমে আসা না হয়। সকাল বিকাল রুম ঝাড়ু দেই। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করি সময় যেন দ্রুত কেটে যায়। আশার জন্মদিন যেন তাড়াতাড়ি আসে।
আজ আশার জন্মদিন। সকালবেলাই ওর সাথে দেখা করে ওর হাতে শাড়ি তুলে দিয়েছি। বলেছি যেন বাসায় গিয়ে শাড়ি পরে আমাকে ছবি পাঠায়। কিন্তু এক ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার ছবি পাঠানোর কোনো নাম নেই। বারবার ফোন দিচ্ছি রিসিভও করছে না। মেয়েটার এই বদ অভ্যাসটা গেলো না। কেউ ফোন না রিসিভ করলে আমার প্রচন্ড রাগ হয়। আশাকে ফোন দিচ্ছি এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। আম্মা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো ” রোজ, দরজা খুলে দে। আমি রান্না বসিয়েছি”। বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু উপায় না দেখে গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলে দেখি আশা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখার সাথে সাথে আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। আমি আমতা আমতা করে বললাম “তুমি”। ও কোনো কথা না বলেই সরাসরি বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো। আমি বললাম ” এই করো কি তুমি? আম্মা রান্না ঘরে আছে। যদি তোমাকে দেখে ফেলে তাহলে আমার বাবার নাম ভুলিয়ে দিবে।” এবার আশাই বলে উঠলো ” আমি ইচ্ছে করে আসিনি। তোমার আম্মাই আমাকে আসতে বলেছে।” আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি এই মেয়ে! আম্মা ওকে আসতে বলেছে। আমি বললাম “আম্মা তোমাকে চেনে কিভাবে?” ও এবার ওর ব্যাগের মধ্যে থেকে একটা চিঠি বের করে আমার হাতে দিলো। আমি চিঠির ভাঁজ খুলে পড়া শুরু করলাম।
ডিয়ার ভবিষ্যৎ বউমা,
আমার ছোট হারামজাদা পোলার কাছে থেকে জানলাম আমার বড় হারামজাদা পোলার প্রেমিকার সামনে জন্মদিন। এইজন্য সে নাকি টিউশনির টাকা দিয়ে শাড়ি কিনেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যখন ওর ওয়ারড্রোবে সত্যি শাড়ি খুঁজে পেলাম। তখন আর অবিশ্বাস করিনি।
বাংলাদেশে আর কোনো ছেলে পাওনাই?আমার এই রামছাগল মার্কা ছেলেটাকে পছন্দ করলা! আমার ছেলের মতো এমন জন্মের অলস মার্কা মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনাই। আজ ২৫ বছর ধরে এই রামছাগল আমাকে জ্বালাচ্ছে। তুমি মনে মনে ভাবছ ওর বয়স ২৪? আরে এক বছর যে পেটে ছিল ওইটা ধরবা না? তখন তো কম জ্বালাই নাই।
ওর কাপড়ের দিকে খেলায় করছিলা? বছরে একবার কাপড় ধোয় কিনা সন্দেহ। আর এখনো তো ওর ছোটবেলার বদ অভ্যাস যায়নি। মাঝেমধ্যে বিছানায় হিসু করে। তুমি কও? এইটা কোনো কথা? জিজ্ঞাস করলে বলে কি “এটা নাকি ওর ছোটবেলার প্রিয় অভ্যাস। তাই সব ত্যাগ করলেও এই অভ্যাস ছাড়তে পারবে না”। কিন্তু আমি তো জানি আসল ঘটনা। ও আসলে ভূতে ভয় পায়। তাই রাতে ভয়ে বাথরুমে না গিয়ে বিছানায়……… ।
সবথেকে বড় কথা আমার ছেলে যে প্রেম করতে পারে এইটাই আমার বিশ্বাস হয়নি প্রথমে। যে ছেলে আমার সামনে মাথা নিচু করে কথা বলে সেই ছেলে যে মেয়েদের সাথে মিশতে পারবে এটা কখনো ভাবিনি। যখন শুনলাম ও তোমার সাথে প্রেম করে। তখনি তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। সত্যি কথা বলতে ছেলের আমার হাজার দোষ থাকলেও ওর মনটা অনেক ভালো । ও কখনো মানুষ ঠকাবে না। এই বিশ্বাস রাখতে পারো।
তোমার সাথে যোগাযোগ করার তো কোনো বুদ্ধি নাই। আর আমার যে ছেলে, ওকে বললে জীবনে তোমাকে বাসায় আনবে না। তাই তোমার জন্য কেনা শাড়িটার মধ্যে চিঠিটা দিয়ে দিলাম। জন্মদিনের দিন অবশ্যই আমাদের বাসায় আসবে। তোমার জন্য মজার মজার সব রান্না করে রাখবো। আর হ্যাঁ, তুমি যে আমাদের বাসায় আসবে সেটা আমার ছেলেকে যেন আগেভাগে বলো না।
ইতি
তোমার হবু শ্বাশুড়ি।
চিঠি পড়ে আশার দিকে তাকিয়ে আছি। এমন সময় আবার কে যেন কলিংবেল টিপলো। চিঠিটা আশার হাতে দিয়ে দরজা খুলে দেখি আব্বা। হাতে দুইটা নতুন ঝাড়ু। আব্বার হাতে ঝাড়ু দেখেই দৌড়ে আমার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আজ আর রক্ষা নাই। ইচ্ছেমত একটার পর একটা কাপড় পরতে লাগলাম। যেন ঝাড়ুর বারি কম লাগে শরীরে। মনে মনে গুনতে লাগলাম আব্বার এটা কততম ঝাড়ুর বারি। ওপাশ থেকে আম্মা দরজা ধাক্কাচ্ছে আর আমি কাপড় পরেই চলেছি।
হঠাৎ ওপাশ থেকে আম্মাই বলে উঠলো ” রোজ, দরজা খোল বাবা। ওরে ভয় পাসনে। এসব তো তোর বাবার প্ল্যানিং”।
প্ল্যানিং
রিফাত আহমেদ
৪. অদ্ভুত প্রেমের গল্প
বাইরে রোমান্টিক ওয়েদার অথচ বউয়ের সাথে ঝগড়া চলে তিনদিন থেকে। মানে যাকে বলে আলাদা বিছানায় ঘুমানো টাইপ ঝগড়া । সকাল থেকে খুব চেষ্টা করছি কিভাবে ক্লোজআপ কাছে আসা গল্পের মতো বউয়ের কাছে আসা যায়। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।
সকাল সকালেই বউয়ের পছন্দের পাঙ্গাশ মাছ আর সাথে গরুর মাংস কিন্না আনছিলাম বাজার থেকে। ভাবলাম পছন্দের খাবার খেয়ে বউয়ের মুড সুইং করবে কিন্তু কাজ হয়নি। দুপুরে খাইতে বসে দেখি আলু ভর্তা আর ডাল রান্না করা। মনে মনে বুঝলাম আমার দিক থেকে গ্রীন সিগনাল দিলেও বউয়ের দিক থেকে রেড সিগনাল আসছে। চুপচাপ ভাত খেয়ে সহ্য করে গেলাম।
দুপুরবেলা শুয়ে শুয়ে ভাবছি কিভাবে বউয়ের মন গলানো যায়। আচ্ছা মাথাব্যথার ভান ধরলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। উহ অহ করছি আর মাথায় হাত দিচ্ছি। অথচ বউয়ের এই রুমে আসার কোনো নাম নেই। আগে একটা টু শব্দ করলেই বউ দেখতাম ছুটে আসতো। আর আজ কোনো লক্ষণ ই নাই। ভাণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলাম। একটুপর দেখি বউ কোথায় থেকে ছুটে এসে একটা বাঘমার্কা মলম কপালে চোখে ঘষে দিয়েই পাশের রুমে চলে গেলো।
ওরে আল্লাহ সেটা মলম না অন্যকিছু। চোখে কপালে আগুনের মতো জ্বলতে লাগলো। চুপচাপ দরজা লাগিয়ে দিয়ে বাথরুম গিয়ে ধুয়ে আসলাম। মনে মনে মলম কোম্পানির চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম।
বউ পাগল বন্ধু রুদ্রকে কল দিয়ে ঘটনা সব খুলে বললাম। রুদ্র বললো এটা কোনো ব্যাপার ই না। ভাবীর জন্য দুই তিনটা শাড়ি কিনেদে। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। সাথেসাথেই বাইরে বের হয়ে দুইটা শাড়ি কিনে এনে ডাইনিং টেবিলে রেখে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন বউ আসবে। এসে বলবে আরে এই সময় শাড়ির কি দরকার ছিল। কিন্তু না বউয়ের কোনো গ্রীন সিগনালের লক্ষণ ই নাই।
রাতে খেয়েদেয়ে চুপচাপ বসে আছি। বউ পাশের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। কোনোকিছুই ভালো লাগছে না বলে ভাবলাম প্রিয় বন্ধু আরমান কে ফোন দেই৷ কিন্তু চারপাঁচবার কল দিয়েও ও ফোন ধরলো না৷ ভাবলাম যতক্ষণ ফোন রিসিভ করবে না ততক্ষণ ফোন দিয়েই যাবো।
২৫-২৬ বার কল দেয়ার পর ওপাশ থেকে আরমান ফোন ধরে বলে উঠলো ” ঐ শালা তুই ওয়েদার বুঝিস না? এই টাইমে কেউ এতবার ফোন দেয়। তোদের জ্বালায় কি বউয়ের সাথে একটু একা নিরিবিলি সময় কাটাতে পারবো না”। বন্ধুর কথা শুনে ফোন কেটে দিলাম।
একা একা শুয়ে আছি ঘুম ধরছে না। বাইরে টিপটপ বৃষ্টি হয়। মনে মনে ওয়েদার কে গালি দিতে লাগলাম। ঝগড়াঝাটির সময় এমন ওয়েদার হওয়া লাগে! ইসস আগেভাগেই যদি এই ওয়েদার আপডেট জানতাম তাহলে বউয়ের সাথে জীবনে ঝগড়া করতাম না।
টিভি ছেড়ে দিয়ে একটা ভূতের ছবি দেখতে লাগলাম। হঠাৎ ই মনে হলো” আরে আমার বউ না ভূতের ভয় করে”। দিলাম টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে। একটু পর দেখি বউ আস্ত আস্তে রুমের ঢুকে সোজা বুকের মধ্যে।
ভূতের ছবি গুলাও না। শুধু ভয় দেখায় না। কাছেও আনে।
কাছে আসার গল্প
রিফাত আহমেদ
5.রোমান্টিক প্রেমের ছোট গল্প
আমি শুধু মরলেই হয়, তুমি তো গুনে গুনে সাতদিনের মধ্যে বিয়ে করে নতুন বৌ ঘরে আনবে।
কী করে বুঝলে?
না বোঝার কী আছে? তোমার মত পুরুষ মানুষ আমার খুব চেনা।
তাই বুঝি?
এই শোনো, এমন করে মুচকি মুচকি হাসবে না। বিয়ের কথা শুনে মনে খুব ফূর্তি লেগে গেল, তাই না?
তুমিই তো বললে বিয়ের কথা। এই বয়সে বিয়ের কথা শুনে মনটা কেমন যেন করে উঠল। তোমাকে বিয়ে করলাম সেই বারো বছর হয়ে গেল। ওহ, শোনো, সাতদিনের জন্য আটার রুটি বানিয়ে ফ্রিজে রেখে যেতে ভুলবে না কিন্তু। তুমি মরার পরে বিয়ে করতে তো সাতদিন লাগবে। এই সাতদিন সকালে রুটি ছাড়া আমার চলবে কী করে?
রান্না ঘরে নতুন বটিটা দেখছো। গতকাল বুয়াকে দিয়ে এই বটি কিনে আনিয়েছি।
বিয়ের মধ্যে আবার এই বটি কেন?
‘আমি মরার আগে তোমারে এই বটি দিয়ে কুপিয়ে যাব।
পারবে কোপাতে?
বিথী চুপ করে আছে। অনেকক্ষণ, অনেকক্ষণ এবং অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল বিথী। আমি তাকিয়ে আছি বিথীর দিকে। হঠাৎ করে বিথী কেমন শান্ত হয়ে গেল। আমি আবার বললাম, কী ব্যাপার বিয়ের আয়োজনে ভাটা পড়ল?
বিথী খুব সিরিয়াস। খুব। কেমন একটা করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা আমার ছেলে দুইটার কী হবে?
আমিও একটু সিরিয়াস হলাম। দেখি বিথী কী করে। আমি নিজের ভেতর ভালোবাসা লুকিয়ে একটু কঠিন সুরে বললাম, কী আর হবে। তাদের জন্য নতুন মা নিয়ে আসব। নতুন মায়ের কাছে খুব ভালো থাকবে।
আমার বড় ছেলেটা তো একটুও ঝাল খেতে পারে না। ফোরে পড়া অতটুকু ছেলে ঝাল খাবে কেমন করে বলো?
আরে, ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আস্তে আস্তে শিখে নিবে।
আচ্ছা তুমি তো রোজ দিন ধোয়া স্যান্ডো গেঞ্জি পরো।
তো?
ধুর, কেমন বিশ্রী একটা গন্ধ হয় তুমি জানো? ঘামের গন্ধমাখা সেই গেঞ্জি তুমি বুঝি গায়ে দিতে পারবে?
এই নিয়ে তুমি না ভাবলে চলবে।
তোমার তো খুব কষ্ট হবে। নতুন বৌ প্রতিদিন ধুয়ে দিবে তো?
আমার স্যান্ডো গেঞ্জি নিয়ে তোমার এত চিন্তা কেন? নতুন বৌ ধুয়ে না দিলে তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।
বিথী এবার খুব মায়া নিয়ে বলল, মনে আছে আধোয়া গেঞ্জি গায়ে দিয়ে একবার কেমন চুলকানি হলো! সেই চুলকানিতে সারারাত না ঘুমিয়ে কেমনটা না করলে তুমি।
বিথীর কথায় আমি দূর্বল হয়ে পড়ছি। আমি নিজেকে আরেকটু শক্ত করলাম। এই নিয়ে বিথীর সাথে আরো কিছূক্ষণ গল্প করতে ইচ্ছে করছে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে খুব কঠিন করে বললাম, হলে হবে। আমি আছি বিয়ে নিয়ে আর তুমি চুলকানি।
বিথী এবার একটু অভিমান করেই বলল, তোমার শরীরের যে অবস্থা! গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা উঠলে তো হুশ থাকে না। তখন তো এই বউ ছাড়া উপায় থাকে না। এই করো, সেই করো। সব এই বিথী। তখন তো বিথী ছাড়া কোনো শব্দ মুখে আসে না।
আমি বললাম, নতুন বৌ আসলে সেও এমন করে সেবা যত্ন করবে।
বিথী এবার একটা হাসি দিয়ে বলল, সব ঠিক আছে মানলাম কিন্তু সরিষার তেল দিয়ে কালো জিরার ভর্তা? তুমিই তো বলো এই ভর্তা পৃথিবীর আর কেউ পারবে না। আর ওই মসুর ডাল রান্না? কে করবে শুনি এমন করে মসুর ডাল?
আমি বললাম, রাখো তোমার ওসব। নতুন বৌ এনে ট্রেনিং দিব, ট্রেনিং। বুঝলে। সবকিছু ট্রেনিং দিয়ে শিখিয়ে দিব। ট্রেনিং দিলে এই বিথীর চেয়ে হাজার গুন ভালো রান্না হবে।
বিথী এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, আমার অতটুকু বাচ্চা। ছোট ছেলেটা তো রোজ সকালে একটু পায়েস খেতে চায়। অন্য কেউ এসব করবে বুঝি?
আরে পায়েস না করলে অন্য কিছু করবে।
না, না, না। আমার ছেলেটার যে পায়েসই লাগবে।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখব তখন।
বিথী এবার ভীষণ সিরিয়াস হয়ে বলল, তুমি সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলবে? আমার ছেলে দুইটার জন্য একটুও মায়া হবে না। ছোট ছেলেটা যে তোমাকে ছাড়া মাঝরাতে বাথরুমে যেতে চায় না। এত ভীতু ছেলে। আমার ছেলেটা যদি একা একা কাঁদে? তুমি বিয়ে করলে এই ছেলে দুইটার যে খুব কষ্ট হবে।
বিথীর এবার সত্যি সত্যি কাঁদছে। পানিতে টলমল করছে চোখ দুটি। আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে লুকিয়ে চোখের ভেতর জমে থাকা পানি একবার মুছে নিল। এই দৃশ্য দেখে আমার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। বিথীর সাথে মজা করতে গিয়ে নিজেই কেমন যেন হয়ে গেলাম। আমি বিথীর কাছে গিয়ে বললাম, ধুর । তুমি ঠিক ফাজলামিও বোঝো না। এত সহজে তোমাকে মরতে দিলে তো। তাছাড়া এই তুমি চলে গেলে হবে কেমন করে বলো? আমরা বাপ-ছেলে তোমাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পেরেছি বলো?
বিথী আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদছে। আমি জানি এই সংসার, এই মায়া, এই ভালোবাসা ভয়ানক একটা জিনিস। সময় যেতে যেতে বিথী, আমি এবং আমরা এই সংসারে মায়া এবং ভালোবাসায় স্বার্থহীনভাবে জড়িয়ে পড়ি। এই ভালোবাসা জুড়ে সবসময় কেমন একটা ভয় জড়িয়ে থাকে। এই যেমন বিথীর ভেতরে ভয়। হ্যাঁ, আমি জানি বিথীর মাঝে সব সময় একটা ভয় কাজ করে। ভয়টা হলো, সে না থাকলে তার ছেলে দুইটার কী হবে? পৃথিবীতে আর কেউ নেই এই সন্তান দুটিকে তার মত করে আগলে রাখবে। এই আমিও রাখতে পারব কী না তা নিয়ে খুব ভয় তার। প্রচলিত এই সমাজ সংসারের অনেক পরিবারের এমন করুণ দৃশ্য হয়তো সে দেখেছে বা গল্প শুনেছে। এই কারণেই হয়তো আরো বেশি উদগ্রীব হয় বিথী। তার ভেতর জমে থাকা সব অভিশঙ্কা এই সন্তানগুলো নিয়ে। আমি বুঝতে পারি দিন দিন এই সংসারের মানুষগুলোকে আমাদের নিজের চেয়ে বেশি মূল্যবান হয়ে উঠে।
এই ভয় শুধু কি বিথীর? এই ভয় যে আমারো। আমার ভেতর উদগ্রীবতা জন্মে, এই আমি না থাকলে স্ত্রী, সন্তান আর পরিবারের কী হবে? এই আমি না থাকলে সন্তানগুলো কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? রোজদিন গলা জড়িয়ে ধরে এটা সেটা আবদার করা প্রিয় সন্তানগুলো তখন কার কাছে গিয়ে আবদার করে বলবে………
সত্যি, এমন করে ভাবতেই নিজের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠে। গলা শুকিয়ে যায়। আমারো তো ভাবনা আসে, শঙ্কা হয় যে, আমার কিছু হয়ে গেলে এই বিথী আমার প্রিয় এই সন্তানগুলোকে আগলে রাখবে তো? নাকি অন্য কারো সংসারে গিয়ে…..
সত্যি এই সংসার, এই সম্পর্ক প্রচন্ড মায়া আর ভালোবাসার। একটু একটু করে এই মায়া আর ভালোবাসার সমুদ্রটা বিস্তৃত হতে থাকে। এই বিস্তৃতি আমাদের ভেতর একটু একটু করে একটা ভয় তৈরী করে ফেলে। হারানোর ভয়, হারিয়ে যাবার ভয়।
হারানোর ভয়, হারিয়ে যাবার ভয় নিয়েও আমি, বিথী, আমরা ভালোবাসা আর মায়া দিয়ে জড়িয়ে থাকতে চাই প্রিয় মানুষগুলোর মাঝে।
—হারানোর ভয়
——রুহুল আমিন